Crush Villain,পর্ব ০৯
লাবিবা ওয়াহিদ
সানিয়া ভার্সিটি এসেই এদিক সেদিক রোজা আর আলিজা খুঁজতে লাগে। কই ভাবলো এতোদিন পর ভার্সিটি এসে আলিজা আর রোজাকে চমকে দিবে তা না দুজনের একজনেরও টিকিটাও খুঁজে পাচ্ছে না। আনমনে হাঁটছে এমন সময়ই কারো সাথে খুব জোরে ধাক্কা খায়।
– উফ আল্লাহ গো কোন কানা রে?
বলেই সামনে তাকাতেই দেখলো আয়াফ। আয়াফকে দেখতেই সানিয়া বরফ হয়ে গেলো।
—
মুনতাহার আজ ডিসচার্জ হয়েছে তাই তাকে বাসায় দিয়েই আমি ডিরেক্ট ভার্সিটি চলে আসি। নীলদের খুঁজছিলাম হঠাৎ কোনো মেয়ের সাথে ধাক্কা খাই। কিছু বলতে নিবো তার দেখি সানিয়া। আজ একটা মেজেন্ডা কালারের কুর্তি পড়েছে সাথে মেজেন্ডা কালাকের হিজাব। দেখতে অপসী লাগছে আজ। এতোদিন আয়াফ সানিয়াকে ঠিকমতো দেখেনি কিন্তু আজ ভালোভাবে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। সত্যি মেয়েটা এতোটাও খারাপ দেখতে না। তবে একটু বেশি-ই বাচাল টাইপ। ধুর আমি এসব কি ভাবছি উলটা পালটা। উফফফ!
ভেবেই রাগ উঠে গেলো আমার।
– এই মেয়ে চোখে দেখতে পাওনা?
– আমি নাহয় দেখতে পাইনা আপনি দেখেন না? চোখের মণিগুলো কি পকেটে লুকিয়ে রাখেন?
– একদম বাজে কথা বলবে না!
– ওকে বললাম না বাট আপনি আমাকে সরি বলবেন!
– ওয়াট! আমি কেন তোমায় সরি বলতে যাবো আজব!
– বলবেনই তো এইযে আমাকে ধাক্কা দিয়েছেন।
– আমি না তুমি দিয়েছো সো সরি তুমি বলবা!
– এএএএহ কোন মিরজাফর আসছে রে যে তারে আমি সরি বলবো?
– মাইন্ড ইউর লেঙ্গুয়েজ ইডিয়েট!(চোখ রাঙিয়ে)
– হ্যাঁ কথায় কথায় তো শুধু চোখ গরম আর ধমকাতেই পারেন। আঙ্কেল-আন্টি কি আপনার জম্মের পর মধু খাওয়ায় নাই?
– ওয়াট দ্যা…(রেগে বোম হয়ে)
– স~রি বলেন!
– নেভার! সাইড দেও আমি ওইদিকে যাবো।
বলেই সানিয়ার পাশ কেটে যেতে নিলাম ওমনি আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।
– সরি না বললে আপনাকেও ছাড়ছি না।
আয়াফ রেগে সানিয়াকে হাত দিয়ে সরিয়ে বলে,”সবসময় বাড়াবাড়ি করা ভালো না!”
বলেই চলে গেলো।
—
আমি হ্যাবলার মতো আয়াফের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। কি বললো সে আমি বাড়াবাড়ি করি আমি?? নিজে বুঝি তুলসিপাতা এএএএহ! তোরে তো আমি টাইট দিয়েই ছাড়বো হুহ!
বলেই অন্যদিকে চলে গেলাম।
★
মুনতাহা ফোনটা নিয়ে মাহিদকে কল দিলো। সাথে সাথেই রিসিভ হলো যেনো সে মুনতাহার ফোনেরই অপেক্ষায় ছিলো। মুনতাহা কিছু বলার আগেই মাহিদ বলতে শুরু করে,”কোথায় ছিলে তুমি হ্যাঁ ৩টা দিন ধরে ফোন কেন বন্ধ ছিলো? কই ছিলে..” এমন আরও প্রশ্ন করতে লাগে। মুনতাহা হেসে বলে,”আহা এভাবে একসাথে এতোগুলো প্রশ্ন করলে কোনটা ছেড়ে কোনটার উত্তর দিবো বলো তো?”
– আমি এতোকিছু জানিনা আমার প্রশ্নের উত্তর দেও ব্যাস!
– আচ্ছা দিবো তবে এক শর্তে!
– শর্ত?
– হুম শর্ত।
– প্লিজ ফাইজলামি অফ করো মন মেজাজ ভালো নেই।
– আহা আমার কথা টা তো শুনো। শর্ত হলো সবটা শুনে আমায় বকতে পারবে না।
– জাস্ট শাট আপ! অকাজ করলে বকবো না?
– দেখো মাহিদ আমি সিক তাই এভাবে চেঁচিয়ো না মাথা পেইন হয়।
সাথে সাথে মাহিদ থমকে যায় আর নরম গলায় বলে,”কি হয়েছে?”
মুনতাহা আমতা আমতা করে সবটা খুলে বলে। সব শুনে মাহিদের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পরে। তার অজান্তে এতোকিছু হয়ে গেলো আর সে কিছুই জানলো না।
– আগে কেন জানাওনি?
– জানানোর মতো অবস্থায় ছিলাম না সবাই সবসময় আমার ধারেকাছেই থাকতো। আর মাথায় কিছুটা চোট পাওয়ায় ফোনের স্ক্রিনে তাকাতে পারতাম না।
– এখন কেমন আছো?
– হুম ভালো!(কি ব্যাপার স্যারের গলা এমন লাগছে কেন? নিশ্চয়ই প্রচুর রেগে আছে শুধু আমি অসুস্থ বলে কিছু বলতে পারছে না। আহারে আমার কিউটি পিউটি টাহ! প্রব্লেম নেই সুস্থ হই তারপর তোমার রাগ ভাঙ্গিয়ে দিবো আমি হুম!)
দুজনের মাঝে কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজ করলো। নিরবতা ভেঙে মাহিদ রাগিস্বরে বলে,”ফের যদি রাস্তায় ফোন চালিয়েছো তো তোমায় আমি নিজেই সেই রাস্তায় মেরে ফেলে আসবো!”
বলেই মাহিদ কল কেটে দেয়। মাহিদের এই থ্রেড শুনে মুনতাহা ফোন রেখে হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে। সত্যি ছেলেটা বড্ড পাগল!
★
রোজা, আলিজা আর আমি মিলে ফোন টিপছি হঠাৎ চোখের সামনে একটা ওয়ার্ড আসলো “Xoss”! এটা আবার কি? চোস নাকি এক্সোস? এই ওয়ার্ড তো কোনোকালেই শুনিনাই! আলিজাকে বলি,” আচ্ছা আলিজা এই এক্সোস কি?”
আলিজা হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি ভ্রু কুচকে বলি,”কি হলো? এলিয়েন দেখলি নাকি এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?”
– এক্সোস আবার কি?
– দেখসোস আমিও এইটাই জানতাম। দেখ এই ক্ষেত গুলা ছবিতে “Xoss” (এক্সোস) লিখে রাখসে গর্ধব!
বলেই ফোনটা এগিয়ে দুজনকে দেখালাম। রোজা আর আলিজা একে অপরের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করে ফিক করে হেসে দিলো!
– আরে কি হলো হাসছিস কেন আজিব তোহ!
– বইন ওইটা এক্সোস না ওইটা জোস!(হাসতে হাসতে)
– ওয়ায়াট!! “Joss” রে “Xoss” লিখলো কোন খুশিতে?
– আরে স্টাইল করে “J” এর জায়গায় “X” দেয়।
হাহা স্টাইল করতে আসছে হায়রে! এইগুলারে আলুরদম খাওয়ানো উচিত নোবেল হিসেবে। রোজা উঠতে নিলেই আমি ওকে বসিয়ে বলি,”কিরে কই যাচ্ছিস?”
– ভাইয়াকে প্র্যাক্টিক্যাল খাতা গুলো দিতে।
– ভাইয়া মানে কোন ভাইয়া?(ভ্রু কুচকে)
– আরে আয়াফ ভাই!
– ওও আচ্ছা তোর এতো ভাইয়া ভাইয়া বইলা দরদ উতলায় পরে ক্যান? ওয় তোর কোন জনমের ভাই? আমি তো জানতাম ওয় পরিবারের একমাত্র ছেলে।
– একচুয়ালি আমার বাবা ওদের বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড। ছোট থেকেই আমি ওদের কাছে বড় হয়েছি ওদের বাসায় যাওয়া আসাও হয়েছে অনেক। ওরাও প্রায় আসতো সেই থেকে আয়াফ ভাইয়ের সাথে একটা সম্পর্ক গড়ে উঠে।
– ওওও তাহলে এই ব্যাপার আগে কেন জানালি না?
– ওই এমনি-ই আর কি। আচ্ছা আমি নাহয় যাই হুম?
বলেই যেতে নিলো আমি আটকে বলি,”এই আমাদের না এখন ক্লাস আছে এখন গিয়ে কাজ নেই।”
– কিন্তু ভাইয়ার তো এখনই লাগবে।
– আমি দিয়ে আসছি আমায় দে।
আলিজা বলে,”তুই ক্লাস করবি না?”
– নাহ এমনেই ৩দিন ওই টাকলা স্যারের ক্লাসে এটেন্ড করিনাই আজ গেলে আমায় শুকনো মরিচের মতো তেলে ভাজবে। কালকেই যাবো আজ আর না।
– কালকে তপ আরও ৪দিন হবে তাহলে?
– ওইটা আমি মেনেজ করে নিবো!
– তো আজও তো তুই মেনেক করতে পারিস!
– না রে আজ মুড নাই কালই যা করার করবো এখন আর কথা বাড়াবি না।
– ওও ওকে তাহলে তুই-ই গিয়ে দিয়ে আসিস কেমন?
বলেই ব্যাগ থেকে প্র্যাকটিক্যাল গুলো আমার হাতে দিয়ে দুইজন চলে গেলো ক্লাসে। আর আমি সেখানেই দাঁত কেলিয়ে বসে আছি। এবার আয়াফ চান্দু তুমার কি হবে? তুমি তো এবার পাক্কা ঘুঙুর ডুঙুর ঠুস!
ভেবেই বিশ্বজয়ের হাসি দিলাম। তারপর প্র্যাকটিক্যাল গুলো সামনে রেখে ব্যাগ থেকে মার্কারপেন বের করলাম। তারপর প্র্যাকটিক্যাল খাতায় শুরু হলো আমার এনাইম ডিজাইন আঁকা। ইচ্ছামতো দাগিয়ে লাস্টে একটা কথা লিখলাম যেটায় আমি নিজেই হেসে কুটিকুটি!
ব্যাগ কাধে নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম আর হাতে প্র্যাকটিক্যাল গুলো নিলাম। প্র্যাকটিক্যালের খাতার দিকে তাকাতেই মুখ টিপে হাসলাম তারপর চলে গেলাম বিল্ডিং এর দিকে।
আয়াফ ক্লাসের বাইরে পায়চারি করছে আর বারবার হাতঘড়ি দেখছে। ক্লাস প্রায় শুরু হয়ে গেছে কিন্তু এখনো রোজার প্র্যাকটিক্যাল গুলো নিয়ে আসার খবর নেই। বারবার করে বলে দিয়েছিলো যেনো তাড়াতাড়ি আয়াফকে প্র্যাকটিক্যাল গুলো দিয়ে যায় তা আর হলো কই? এভাবে কিছুক্ষণ পায়চারি করতে করতে দেখলো একটা মেয়ে আয়াফের দিকেই দৌড়ে আসছে। আয়াফ ভ্রু কুচকে তাকালো। কিছুটা কাছে আসতেই দেখলো এটা আর কেউ না সানিয়া আর তার হাতে আয়াফের প্র্যাকটিক্যাল খাতা! আয়াফ নিজে কয়েককদম এগিয়ে যায়। সানিয়া আয়াফের সামনে এসে দু হাতে হাটু ধরে হাঁপাতে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,”আ আ আপনার প্রে প্রে প্র্যাকটিক্যাল!”
সানিয়ার হা থেকে একপ্রকার কেড়ে নিয়ে বলে,”রোজা কোথায় তুমি কেন আসছো?”
– ও একটু বিজি তাই আমাকে দিয়ে পাঠিয়েছে।
আয়াফ আর সেখানে সময় নষ্ট না করে ক্লাসে ঢুকে গেলো। এদিকে সানিয়া একটা ভিলেনি হাসি দেয়।
আয়াফ ক্লাসে ঢুকে প্র্যাকটিক্যালের খাতাগুলো জমা দিয়ে নিজের জায়গায় গিয়ে বসে আর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। অবশেষে ঠিক সময়ে এসে পৌঁছেছে সে৷ ম্যাডাম নাকের ডগায় চশমা টা রেখে ভিলেনদের মতো চোখ গরিয়ে তাকালো আয়াফের দিকে আর হাতে অন্যান্য স্টুডেন্টদের প্র্যাকটিক্যাল চেক করছে। তারপর আবার চোখ সরিয়ে প্র্যাকটিক্যাল চেক করায় মনোযোগী হলো। এই ম্যামের চাহনী এমন যে কারোরই আত্মা কেঁপে উঠে। কিছুক্ষণ পর আয়াফের প্র্যাকটিক্যাল খুলতেই তার চোখদুটো রসোগোল্লার মতো হয়ে যায়। চোখ বড় বড় করে সে একের পর এক পৃষ্ঠা উল্টাতে থাকে। আয়াফ বুঝলো না এমন কেন করছে? শেষের পৃষ্ঠা দেখতেই ম্যাম হুংকার ছেড়ে বলে,”আয়াফ!!”
আয়াফ সাথে সাথে একপ্রকার লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। হকচকিয়ে বলে,”জজজজ্বী ম্যাম?”
– এগুলা কি?
– কোনগুলা ম্যাম?(ভ্রু কুচকে)
– ইয়ার্কি হচ্ছে না, ফাজলামো হচ্ছে আমার সাথে? এগুলা কি প্র্যাকটিক্যাল নাকি বাচ্চাদের এনাইম!
– ওয়ায়াট!! এ কি করে সম্ভব?
ম্যাম খুবই শক্ত গলায় বলে,”শেষের গুলা পড়ে শুনাও!”
– বাট ম্যাম…
– আই সে রিড ইট!
চলবে!!!