Crush Villain,পর্ব ০৮
লাবিবা ওয়াহিদ
আয়াফ হাই স্পিডে ড্রাইভ করছে রেগে। তার চোখের সামনে বারবার সানিয়াকে টেনে নিয়ে যাওয়া ঘটনাটা ফিরে ফিরে আসছে।
-“মেয়েটাকে তো ভালো ভেবেছিলাম কিন্তু সেই মেয়ে কিনা অন্য একটা ছেলের সাথে এভাবে… নাহ নাহ নাহ আমি ডোন্ট কেয়ার, আই ডোন্ট কেয়ার। বাট যতো এর থেকে দূরে থাকতে চাইছি ততো কেন মনে পরছে উফফফফ আয়াফ কান্ট্রোল ইউরসেল্ফ এভ্রিথিং ইজ ফাইন!”
এসব ভেবেই নিজেকে সামলে নেয়ার চেষ্টা করে আর স্পিড লো করতে থাকে আস্তে আস্তে। দূরে দেখলো একটা মেয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হচ্ছে। আয়াফ হর্ন দিলো কিন্তু মেয়েটার কোনোদিকে খেয়াল নেই। এদিকে আয়াফও গাড়ি ব্রেক করতে পারছে না। অনেক ট্রাই করছে আর মেয়েটাকেও হর্ন দিচ্ছে কিন্তু তার কোনোদিকেই খেয়াল নেই।
শেষে আয়াফের গাড়ি মেয়েটার সামনে আসতেই কষিয়ে ব্রেক করে আর মেয়েটাও গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যায়। আয়াফ চটজলদি গাড়ি থেকে নামে এবং দেখে মেয়েটা রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে। আয়াফের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরে। দৌড়ে মেয়েটার কাছে যায় এবং তার মাথা নিজের কোলে রেখে গালে হালকা চড় কয়েকবার দিয়ে জিজ্ঞেস করে, “হেই আর ইউ ওকে?হেই টক টু মি! উফফ শিট ড্যাম ইট! মেয়েটা তো সেন্সলেস হয়ে গেছে নাহ এখানে বসে থাকলে হবে না যতো দ্রুত সম্ভব ট্রিটমেন্ট করাতে হবে।”
বলেই আয়াফ মেয়েটাকে কোলে নিয়ে গাড়িতে তুলে তারপর বড় প্রাইভেট একটা হসপিটালে নিয়ে গিয়ে ট্রিটমেন্ট শুরু করায়। আয়াফ ফোন করে নিজের বন্ধুদের খবর দেয়। তারপর ফোন করে নিজের বাবাকে। আরাভ জুরাইজ ফোন রিসিভ করে বলে,”আরে আয়াফ এই অসময়ে কল দিলি যে?”
– ডেড ইমারজেন্সি!
– হ্যাঁ বল, কিছু কি হয়েছে?
– Actually Dad someone made an accident with my car!
– What! আমায় এড্রেস দে আমি এখনই আসছি। আর তার ফেমিলির কাউকে জানানোর ব্যবস্থা কর ইমিডিয়েটলি!
– ওকে ডেড। আর এড্রেস ********
– Okay! I will Coming!
বলেই আরাভ জুরাইজ কল কেটে দেয়। আয়াফ নিজের ফোন পকেটে ঢুকিয়ে আরেক পকেট থেকে মেয়েটার ফোন বের করে। ফোনটা ছিটকে পিরায় সুইচড অফ হয়ে যায়। অন করতেই দেখলো “Baba” নাম থেকে কয়েকটা কল এসেছে। আয়াফ দেরি না করে সেই নাম্বারেই কল দিলো। রিং হতেই সাথে সাথে রিসিভ হলো এবং ওপাশ থেক পুরুষ কন্ঠে কেউ উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে,”মুনতাহা মা কি হয়েছে তোর তখন কিসের আওয়াজ হয়েছিলো? কিরে চুপ করে আছিস কেন কিছু তো বল!”
তখনই আয়াফের সব বন্ধুরা এসে হাজির হয়। আয়াফ তাদের দিকে একবার তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বকে,”আংকেল আপনার মেয়ে এক্সিডেন্ট করেছে ইমিডিয়েটলি ***** হসপিটালে আসুন।”
বলেই কেটে দিলো আয়াফ। তার সামনে কোন মুখে কথা বলবে? তার জন্যই যে এই দুর্ঘটনা। নীল আয়াফের কাধে হাত থেকে বলে,”কিভাবে হলো?”
আয়াফ সবটা খুলে বললো। মানিশা ব্লে,”ওকে টেনশন নিস না তোর এখানে কোনো চুল নেই।”
– বাট…
– হ্যাঁ মানিশা ঠিক বলেছে ইয়ার তোর কোনো দোষ নেই মেয়েটাই তো ধ্যান দেয়নি তার আশেপাশে কি হচ্ছে।(যাহির)
– হ্যাঁ তাও ঠিক… কিন্তু নিজের কাছে বেশ অপরাধী ফিল হচ্ছে গাইস আই কান্ট কান্ট্রোল মাইসেল্ফ!
– রিলেক্স ইয়ার এভ্রিথিং ইজ ফাইন। তোর গায়ে রক্ত লেগে আছে বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয় আমরা এখানেই আছি।
– না আমি এখান থেকে যাবো না।
– বোঝার চেষ্টা কর এগুলো বদলিয়ে আসতে তো বেশি সময় লাগবে না ইভেন এই হসপিটাল থেকে তোর বাসাও কাছে তাড়াতাড়ি-ই চলে আসতে পারবি বেশি সময় লাগবে না।(নিশি)
– ডেড?
– আমরা আছি কি করতে আংকেলের সাথে আমরা কথা বে নিবো।
– ওকে ফাইন আই উইল বি ব্যাক।
বলেই আয়াফ বাসায় চলে গেলো এর মাঝে আরাভ জুরাইজ চলে আসে। নীলরা সবাই বুঝিয়ে বলতেই আরাভ জুরাইজ ডাক্তারের সাথে কথা বলতে লাগে।
★
রাতে আমি নানুর কোলে চোখ বুজে চুপটি করে শুয়ে আছি আর নানু আমার মাথায় খুব যত্ন করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। নানুকে বলি,”ও নানু তোমাকে এতোবার করে বলি তবুও তুমি কেন আমাদের সাথে ঢাকায় থাকো না বলো তো?”
– পাগলি! এই বাসা ছেড়ে কোথাও থাকতে পারিনা। তোর নানাভাইয়ের শেষ স্মৃতি এই বাড়িটা এটা ছেড়ে কোথাও ভালো লাগে না।
– হুম বুঝলাম! কোনো এককালে আমার নানাভাই তোমার মতো সুন্দরিকে কি দিয়ে জাদু করেছে যে সারাক্ষণ তাকে নিয়েই ভাবনায় বিভোর থাকো সেটাই অজানা রয়ে গেলো।
আমার কথায় নানু খিটখিটিয়ে হেসে দেয়। তারপর হাসতে হাসতে বলে,”একবার বিয়ে কর সংসার কর তখন বুঝবি কেমন লাগে!”
– হাহ হয়েছে হয়েছে আর বিয়ে টিয়ে আমি করছি না আমি তো তোমার সাথেই থাকবো সারাজীবন কুমারী হয়ে।
– তা তো থাকবি-ই এক বছর প…
বলেই থেমে গেলো নানু। আমি চোখ খুলে নানুর দিকে তাকিয়ে বলি,”কি বললা? এক বছর পর কি? পুরোটা বলো মাঝে দিয়ে আটকালে কেন অদ্ভুত!!”
আমার কথায় নানু আমতা আমতা করতে লাগলো হঠাৎ-ই দরজা দিয়ে খেয়াল গেকো মাহিদ ভাইয়া কেমন উত্তেজিত হয়ে একবার পায়চারি করছে তো আবার শিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে। ব্যাপার কি? হঠাৎ এমন দৌড়াদৌড়ি করছে কেন? কোনো সমস্যা হলো নাকি? আপাতত নানুর ব্যাপার টা সাইডে ফেলে মাহিদ ভাইকে নিয়ে ভাবা শুরু হলো আমার। নানুকে বলি,”কিগো তোমার ওই আদরের নাতি এমন ভ্যাড়ার মতো লাফাচ্ছে কেন?”
– আমি কি করে জানবো?
– তাইতো হুদাই তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম এখন ঘুমাও বুড়ো বয়সে এতো রাত অব্দি জেগে থাকা ঠিক না।
নানু যেনো আমার কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। সানিয়াই তো বললো সারারাত গল্প করবে এখন আবার এই কথা? মানুষে বলে বুড়ো বয়সে মানুষের ভিমরতি হয় এখন তো দেখছি যুয়ান বয়সেও মানুষের ভিমরতির শেষ নাই।
আমি লাইট অফ করে দিয়ে উপরে উঠে সোজা গেলাম মাহিদ ভাইয়ার রুমে। কিন্তু ভাইয়া রুমে নেই এর মানে নিশ্চয়ই ছাদে গিয়েছে। বেশি কিছু না ভেবে ছাদে দৌড়ে গেলাম এবং গিয়ে দেখি ভাইয়া ছাদের এপাশ থেকে ওপাশ বারবার হেঁটে যাচ্ছে আর ফোনে কাউকে ট্রাই করছে। চেহারায় চিন্তা আর ভয় স্পষ্ট। আমি গিয়ে ভাইয়ার কাধে হাত রাখলাম। ভাইয়া কিছুটা অবাক হয়ে পিছে তাকায় তারপর আমাকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। আমি বকি,”মুনতাহা আপুর সাথে কিছু হয়েছে?”
– হঠাৎ এই কথা বলছিস যে?
– উত্তেজিত লাগছে তোকে তাই।
মাহিদ ভাইয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,”তেমন কিছু না ওর ফোন সুইচড অফ অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করছি পাচ্ছি না!”
– কেন?
– জানিনা। টেনশন হচ্ছে অনেক ইয়ার! কিছু হলো না তো ওর?
– চিন্তা করিস না কিছুই হয়নি। হয়তো কোনো সমস্যা হয়েছে?
– সমস্যা হলে তো আমায় বলতো। কখনোই হুট করে এভাবে নিখোঁজ হয়না।
– আচ্ছা বুঝলাম ঘরে গিয়ে ঘুমা সকালে উঠে দেখবি মুনতাহা আপু তোকে মর্নিং উইশ করে একটা কিসসিও দিয়ে ফেলেছে!(হেসে)
– আমি এখন ফান মুডে নেই সানিয়া যা গিয়ে ঘুমা আমায় একা থাকতে দে।
আমি কথা বাড়ালাম না শুধু অবাক হয়ে দেখছি ভাইয়াকে একটা ছেলে একটা মেয়েকে কতোটা ভালোবাসতে পারে যে সামান্য ফোনে পাচ্ছে না বলে এতোটা টেনসড! সত্যি-ই মুনতাহা আপু অনেক লাকি আমার ভাইটার মতো একজন পেয়েছে। আল্লাহ যেনো ওদের আলাদা না করে। কিন্তু আমার জীবনে এমন পাগল কবে আসবে? ওহ সানিয়া কুল তোর এখনো লাইফ এঞ্জয় করা বাকি!
এসব ভাবতে ভাবতেই রুমে চলে আসি। ফোন হাতে নিতেই অবাক হয়ে গেলাম। ফেসবুক পুরো ভরা আয়াফদের কংগ্রেস দিয়ে। কিন্তু কেন ব্যাপার কি? অনেক ঘেটে অবশেষে জানলাম আয়াফদের ইউটিউব চ্যানেলে ২ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইব ডান। ওয়াও ইটস এ বিগ নিউজ। বাট এইটা তো নীল ভাইয়ার চ্যালেন যতোটুকু জানি! যাইহোক ইউটিউবে গিয়ে খুঁজি।
ফেসবুক থেকে বেরিয়ে ইউটিউবে ঢুকে পরি। ইউটিউবে ঢুকতেই সেদিনের লাইভটা হোম পেইজে চলে আসে। ও এম জি এর ভিউয়ার্স প্রায় ১৫ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে? চ্যানেলের নাম “ANZT Ltd” (এএনজেট্টি লিমিটেড) এর মানে তাদের পুরো ফ্রেন্ডসার্কেলের এই চ্যানেল। কিন্তু এতো বড় খুশির সংবাদ হওয়ার পরেও ওদের কোনো পোস্ট বা এক্টিভিটি নেই কেন? 1 Million Subscribe যখন কমপ্লিট হয়েছিলো ২দিন লাগিয়ে কতো কি করেছে আর এখন কোনো কিছু করছে না সামান্য একটা ক্যাপশন অব্দি আপলোডও করলো না? কে জানে!
আয়াফদের ভিডিও দেখতে দেখতেই আমি ঘুমিয়ে পরি। এদিকে মাহিদ ভেবে যাচ্ছে মুনতাহাকে। চোখ বুজে আকাশের দিকে তাকিয়ে মুনতাহাকে ফিল করার চেষ্টা করছে। মুনতাহার প্রতিটা পাগলামি, মুনতাহার হাসি, গাল ফুলানো সবটাই চোখের সামনে ভেসে উঠছে। মাহিদ রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে চোখ খুললো তারপর মোবাইল হাতে নিয়ে মুনতাহার সাথে তোলা ছবিগুলা দেখতে লাগে৷ তাদের অনেক মোমেন্ট ক্যামেরাবন্দি। কিছু কিছু ছবি দেখে মাহিদ নিজের অজান্তেই হেসে দেয়। কিছুক্ষণ ছবি দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তারপর ফোন রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলে,”তুমি কোথায় মুনতাহা?”
★
রাত ২টায় মুনতাহার সেন্স ফিরে। পিটপিট করে চোখ খুলে চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নেয় এবং বোঝার চেষ্টা করে সে এখন কোথায় আছে। সে দেখলো তার মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো আর দুই হাতেই ক্যানেল লাগানো। মাথা কেমন ব্যথা করছে সাথে হাত, পা আর বাম কাধ থেকে ঘাড় অব্দি অসহ্যকর ব্যথা। বলা যায় পুরো শরীরেই ব্যথা অনুভব করলো। কিছুক্ষণ একটা নার্স এসে দেখলো মুনতাহার সেন্স ফিরেছে তখনই সে আর দেরি না করে বাইরে এসে সবাইকে জানায় যে “পেশেন্টের সেন্স ফিরেছে।” বাহিরে নীল, আয়াফ, তিনয়, আরাভ জুরাইজ আর মুনতাহার বাবা-মা ছিলেন। এ-কথা শুনতেই মুনতাহার মা-বাবা ছুটে গেলেন মেয়ের কাছে এবং ভালোমন্দ কথা জিজ্ঞেস করতে থাকে।
আয়াফ তার বাবার দিকে তাকায়। আরাভ চোখ দিয়ে আশস্ত দেয়।
পরদিন,,
মুনতাহার মা মুনতাহাকে স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছে। মুনতাহা হঠাৎ-ই প্রশ্ন করে উঠে,”আচ্ছা মা আমাকে এখানে কে এডমিট করেছে?”
মুনতাহার মা স্যুপ খাইয়ে দিতে দিতে বলে,”আয়াফ নামের একটা ছেলে। সেই তোকে হসপিটালে আনা থেকে শুরু করে তোর ট্রিটমেন্টের ফিসহ যাবতীয় সমস্যা ওয়ি দেখেছে।”
– ওহ।
কিছুক্ষণ পর খাইয়ে চলে গেলো মুনতাহার মা। মুনতাহা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এবং ভাবতে থাকে মাহিদের কথা। না জানি মাহিদ কেমন আছে এখন কি অবস্থায় আছে। মুনতাহার ভাবনার মাঝেই আয়াফ এসে দরজায় নক করে বলে,”আসতে পারি।”
মুনতাহা চট করে দরজার দিকে তাকালো এবং অবাক হয়ে গেলো! “আয়াফ” দ্যা ক্রাশবয় তার সামনে? সে কি স্বপ্ন দেখছে। মুনতাহা আমতা আমতা করে বলে,”জজজজ্বী ভাইয়া আসুন বাট আপনি এখান্ব কি করছেন?”
– তোমাকে তো আমি-ই এখানে এনেছি।(কেবিনে ঢুকতে ঢুকতে)
– ওও এর মানে গাড়ি আপনার ছিলো?
– হুম।
এভাবে অনেকক্ষণ দুজন কথা বললো। দুইজনই বেশ ক্লোজ হয়ে গেলো। তাদের একটা সম্পর্ক গড়ে উঠলো আর সেই সম্পর্কের নতুন নাম হলো “ভাইবোন!” এভাবেই দুইদিন কেটে যায়।
চলবে!!!