Crush Villain,পর্ব ০৬

Crush Villain,পর্ব ০৬
লাবিবা ওয়াহিদ

আমার পায়ে নিশি আপু অতি যত্নে মালিশ করে দিচ্ছেন। আমি এতোবার তাকে থামানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু সে শুনলো না। এদিকে আমি লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছি আমার সিনিয়র হয়েও যেভাবে পা ধরেছে! নিশি আপু হেসে বলে,”কিছু হবে না সানিয়া এমন অনেকেরই চেকআপ করেছি তাই এটা আমার জন্য তেমন কিছু না।”

আমি আর কথা বাড়ালাম না। বেশ আরাম লাগছে পায়ের ব্যথাটা কমেছে। নিশি আপুকে যেমনটা ভেবেছিলাম তিনি তার বিপরীত। এর মাঝে আয়াফ, নীল, যাহির আর তিনয় চলে এসেছে। আয়াফকে দেখেই আমার মাথাটা গরম হয়ে গেলো। আয়াফ আমার দিকে একপলক তাকিয়ে নিশি আপুকে বলে,”ওর পা কেমন এখন?”

– এখন ঠিক আছে, হঠাৎ অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার কারণে এমন হয়েছে।

আয়াফ কিছু বললো না। আমি বলি,”এখানে কি দরদ দেখাতে আসছেন? নাকি আমার কষ্ট দেখে হাসতে এসেছেন?”

আয়াফ কিছু বললো না। বলা যায় কোনো প্রয়োজনবোধ করলো না। আয়াফের এমন এটিটিউড দেখে গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। আশেপাশে গোয়াল ঘর থাকলে গরুর সাথে বেধে রাখতাম শালা লম্পট, ভিলেইন! ক্যান যে এর উপ্রে ক্রাশ খাইতে গেলাম ধুর।

হেঁটে হেঁটে বাসায় যাচ্ছি। এখন পায়ের ব্যথা নেই বললেই চলে। হাঁটছি আর আনমনে ভাবছি আয়াফের কথা। তার চেহারা না চাইতেও বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠে, তাকে আলাদাভাবে ফিল করি। কিন্তু এসব ফিলিং এর মানে কি বুঝিনা! তার সাথে তো আমার সাপে নেউলের সম্পর্ক, সেখানে অন্য চিন্তাভাবনা আসে কোথা থেকে,? ধুর আমি হয়তো বেশি বেশি-ই ভাবছি। সানিয়া মাথা ঠান্ডা কর আর প্লান কর ওই বজ্জাতকে কি করে শায়েস্তা করবি।

এসবই ভাবছিলাম হঠাৎ কিছুদূরে মিথিলা আর তার বান্ধুবিদের একসাথে কিসব বলতে শুনলাম। যখন মিথিলার মুখে আমার নাম শুনলাম, ইগনোর করে যেতে পারলাম না। মিথিলার আশেপাশেই ঘাপটি মেরে দাঁড়ালাম এবং শোনার চেষ্টা করলাম মিথিলা ঠিক কি বলছে!

– বুঝেছিস দোস্ত! সানিয়া ক্লাসে টপ স্টুডেন্ট। ওর এমন চুপচাপ ভাব, রূপ দেখলে গা পিত্তি জ্বলে উঠতো। সেদিন যখন আড়ি পেতে শুনলাম সানিয়া আয়াফের জন্য চিঠি লিখছে আলিজার তরফ থেকে তখনই আয়াফের কানে এমন বিষ ঢুকাই যে সে পরেরদিন এসেই নিজের একশন পার্ট সেরে ফেলে। হাহা আহারে বেচারা! মুখ টা দেখার মতো ছিলো। আমি ওই সিন মনে করলে তো এখনো প্রচ্চুর হাসি। এবার সানিয়া বুঝবে মজা।

বলতে বলতেই মিথিলা চলে গেলো। এদিকে আমি এসব শুনে হা হয়ে আছি। এর মানে কি এসবটাই মিথিলার সাজানো প্লান ছিলো? ছিহ একটা মেয়ে এভাবে নিচে নামতে পারে আমার জানা ছিলো না। আরে বইন তোরে তো আমি কোনোকালেই চিনতাম না সেখানে তুই আমার সাথে শোত্রামি শুরু করছিস! দাঁড়া না সামনে যে পরিক্ষা আসছে সেটায় তোর কি হাল করি দেখতে পাবি।

ভাবতেই ভাবতেই বাসায় চলে গেলাম।

ক্যাম্পাসে সকলে মিলে আড্ডা দিচ্ছে কিন্তু মানিশা আনমনে কিছু একটা ভাবছে। মানিশাকে আনমনে দেখে তিনয় বলে,”কিরে কি এতো ভাবছিস?”

মানিশা কিছু বলতে নিতেই দূরে দেখতে পেলো আবরাব চোখের মোটা ফ্রেমের চশমা ঠিক করতে করতে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। মানিশা আবরারের দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে বলে,”আচ্ছা এই ছেলেটা কে? আগে তো কখনো দেখিনি!”

যাহির ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলে,”ওও মন্টু। ও তো আমাদের ক্লাসের-ই!”

– মন্টু মানে?(ভ্রু কুচকে)

– আরে ছেলেতা প্রচুর বোকা তাই আমরা মন্টু বলে ডাকি। ওর আসল নাম আবরার!

– ওহ!(জেনেও না জানার ভান ধরে)

– কেন রে হঠাৎ ওরে নিয়ে পরলি তুই?(নিশি)

– হ্যাঁ… ইয়ে মানে না দেখলাম তো তাই বললাম।

– ওকে ওকে এই টপিক বাদ এখন আমার ইউটিউব চ্যানেলের ব্যবস্থা করতে হবে তাও করবে আমাদের আয়াফ!

আয়াফের বিরক্তি ধরে করলো কারণ সে জানে এখন নীল তাকে কি বলবে। আয়াফ শুনেও না শোনার ভান ধরে যেতে নিলে নীল এসে আয়াফকে আটকায় এবং বলে,”নোপ বেইব এতো সহজে তোমায় ছাড়বো না। আজ লাইভে তুমি আমাদের সাথে আসবাই নয়তো…”

বলেই ভিলেনি হাসি দেয়। আয়াফ বিরক্ত হয়ে বলে,”নয়তো কি হ্যাঁ? কি করবি তুই আমায়!”

যাহির বলে,”যা করার তাই করবো!”

– দেখা দেখি কি কি করতে পারিস!

নীল আয়াফের দিকে একপলক তাকিয়ে আয়াফের মায়ের কাছে কল দেয়। আয়াফের মা বলে,”হ্যালো!”

– হ্যালো আন্টি আসসালামু ওয়ালাইকুম। আন্টি আমি নীল বলছি।

– ওয়ালাইকুম আসসালাম। হ্যাঁ বলো সান কি বলবে।

আয়াফের দিকে একবার তাকিয়ে বলতে শুরু করে,”আন্টি আপনার ছেলেকে এতো করে বললাম যাতে আনাদের সাথে গান গায় কিন্তু না সে বলছে সে নাকি গা…..”

বলার আগেই আয়াফ নীলের মুখ চেপে ধরে এবং তার মাকে বলে,”মা তুমি টেনশন নিও না আমি ওদের সাথেই আছি!”

বলেই কল কেটে দেয়। এদিকে আয়াফের মা “হ্যালো” হ্যালো” করতেই থাকে। আয়াফ রেগে বলে,”ওই পাগল তোর মাথার কি তার সব ছিড়সে? মাকে কিসব আবিজাবি বলতে নিচ্ছিলি তুই?”

– তোর সাথে থাকতে থাকতে পাগল হয়েছি আর কি এখন বল গান গাইবি নাকি এইসব করবো। এখন তো বুঝে গেছিস সাবসক্রাইবের জন্য আমি ঠিক কি কি করতে পারি হুম?(ভিলেইনি হাসি দিয়ে)

আয়াফ শত চেষ্টা করেও আর পারলো না তার বন্ধুদের হাত থেকে রক্ষা পেতে। তাই আর কি করার রাজি হয়ে গেলো। আয়াফ রাজি হতেই সবাই মিলে রওনা হলো চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বিচে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।

এইদিকে আমি তো বেশ খুশি কারণ ভার্সিটি থেকে এসেই শুনি আম্মুরা কি কাজে যেনো নানুবাড়ি যাবে। আমি পারিনা নাচি জোরে জোরে হিহি কতো মজা হবে ঘুরতে পারবো মজা করতে পারবো উফফ আমি সেইরকম এক্সাইটেড! দুইদিনের জন্য যাবো তাই ফ্রেশ হয়েই শুরু করি গোছগাছ। জোহান দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,”আরে বইন আস্তে আমরা কেউ তোর শশুড়বাড়ি যাচ্ছি না!”

– শশুড়বাড়ি গেলেও তোর মতো বজ্জাত ভাইরে কোনোকালেই নিবো না!

জোহান আমার মাথায় গাট্টি মেরে পালালো। এদিকে আমি রাগে গোছগাছ ছেড়ে জোহানের পিছে ছুটি। শালা ইতর বজ্জাত সবসময় জ্বালিয়ে খাবে। আমাদের দৌড়াতে দেখে মা আমাকে আর জোহানকে থামিয়ে বলে,”উফফ থাম আর কতো এমন লাগবি বল তো? দেখিস না কিছুক্ষণ পর এমনি জার্নি করবো আর এখন এভাবে ছুটছিস? বলি তোরা কি কোনোদিন ভালো হবি না?”

আমি হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম,”সেটা তোমার ছেলেকে বলো, কেন সারাদিন আমার পিছে লাগবে হ্যাঁ?”

– ঠিক আছে বুঝলাম এখন যা নিজের রুমে গিয়ে গুছিয়ে তারপর রেডি হ। খেয়ে তো বেরোতে হবে নাকি? চট্টগ্রাম কি মুখের কথা?

আমি আর কিছু না বলে রুমে চলে আসলাম। খাওয়া-দাওয়া সেরেই বেরিয়ে পড়লাম চট্টগ্রমের উদ্দেশ্যে। কিন্তু বিপত্তি হলো আমাকে নিয়ে। ক্লান্তি, গরম আর র্দুবলতায় মাথা চক্কর দিয়ে উঠে এবং খুব বমি হয়। যার ফলে যা খেয়েছি সব বেরিয়ে গেছে। বাবা তাড়াতাড়ি একটা পিল খাওয়ায়, আমি সাধারণত বমিটমি করি না কিন্তু আজ এমন কেন হলো বুঝতে পারলাম না।

লম্বা জার্নির শেষে নানুবাড়ি এসে পৌঁছালাম। কিন্ত আমার আধমরা অবস্থা। ডাক্তার আনতে চেয়েছিলো কিন্তু আমি না করে দেই। কোনরকমে রুমে গিয়ে একটা লম্বা ঘুম দেই।

রাত ৮ঃ৩০ মিনিটে গিয়ে ঘুম ভাঙে। ঘুম থেকে উঠার পর ফুরফুরে লাগছে এবং সুস্থবোধ করছি। এখন বুঝলাম গাড়িতে চাটনি খাওয়ায় আমার এমন খারাপ অবস্থা হয়েছিলো। খাওয়া-দাওয়া সেরে আমার মামাতো ভাই মাহিদকে বললাম পতেঙ্গায় নিয়ে যায়। রাতে পতেঙ্গা বিচের সৌর্ন্দয যেনো আরও বেড়ে যায়। মাহিদ ভাই প্রথমে রাজি না হলে তার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলি, “তু্‌ই আমাকে নিয়ে যাবি নাকি মুনতাহা আপুর কথা সবাইকে বলে দিবো?”

– নারে আমার মা বলা লাগবে না এতো চেতিস কেন আমি কি একবারও বলেছি নিয়ে যাবো না?

– আমার সুইট ভাই!

– হুম হইসে তেল মারা অফ কর আর দয়া করে রেডি হয়ে আয়!

আমি মুচকি হেসে রুমে চলে আসি। আমি আসতেই মাহিদ ভাই বিড়বিড় করে বলে,”কেন যে মুনতাহার কথা এই বিপদটারে বলতে গেলাম! এখন
তো নিজেই ফেসে গেলাম।”

আমি আর ভাইয়া বেরিয়ে পড়ি। আমাদের সাথে জোহান আসতে চেয়েছিলো কিন্তু আমি আনিনি। উল্টো আচ্ছামতো পচিয়ে এসেছি।

অবশেষে পতেঙ্গা আসতে পেরেছি কিন্তু এখানে এমন কিছু আশা করিনি।

চলবে!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here