ক্রাশের বিয়ে (অনুগল্প❤️)
লেখনীতে: মায়া পরী
আজ মনটা বিষণ খারাপ।শুনলাম ক্রাশ নাকি জেনে গেছে তার জিএফ এর চুল আমি কেটেছি।বাড়িতে এসে বিচার ও দিয়েছে।গত ৩ বছর ধরে কত ঘুরলাম কিন্তু,একটু গুরুত্ব দিলো না।আমিও কম না! ক্রাশের বাডি যেয়ে বলে আসছি “আন্টি আপনার ছেলে আমাকে চুমু খেয়েছে”।ব্যাস! কোনো কথা নেই,বিনা নোটিশে আম্মু দুপুরের খাওয়া বন্ধ করে দিলো।সেই কষ্টে ছাদে দাঁড়িয়ে বেদনার গান গাইছি।একটু ওদিক এদি ফিরতেই দেখছি, ওমা!এতো ক্রাশ ওর জিএফ কে নিয়ে বাইকে করে ঘুরতে যাচ্ছে।রাগে শরীর কেপে উঠছে।ফ্লোরে তাকিয়ে বেশ বড়ই ইট পেলাম।কোনো কথা হবে না, শুধু চিল।৫ তলা ছাদ থেকে দিলাম মেরে।একদম যেয়ে লেগেছে পেত্নীর মাথায়।ওরে কি মজা লাগছে এখন।এবার গানের সুর একটু চ্যাঞ্জ করলাম।সারাদিন গেলো এভাবেই।রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি।পাশের ফ্ল্যাটে উকি দিচ্ছি।না ক্রাশ বারান্দায় নেই।মনটা আবার খারাপ হয়ে গেলো।একটু পর রুমে যাওয়ার জন্য সামনে ফিরতেই চেঁচিয়ে উঠলাম,
—-“আহহহহহহ!”
—-“একটা থাপ্পড় মারবো।চুপ! ”
ওতো আমার ক্রাশ।আমার মুখ চেপে ধরে আছে।উফফফ!কি যে রোমান্টিক সিন রে ভাই।হার্টবিট তরতর করে বাড়ছে আমার।সাদা টি- শার্ট গায়ে সেই লাগছে।আমি তো আবার ক্রাশ খেলাম।আমার লুক দেখে ক্রাশ আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলো।একটু গলা পরিষ্কার করে বলল,
—-“তুমি নিলার মাথা ফাটালে কেনো, আনিকা?”
আমি তো শুকনো ঢোগ গিলে বিড়বিড় করে বললাম,
—-“এই রে!দেখে নিয়েছে নাকি?”
ক্রাশ আবারো বলল,
—-“কথা বলছো না কেনো?জীবনেও ঠিক হবে না তাই না?”
আমি ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে বললাম,
—-“না গো প্রিয়,আমি এমনটা করতে পারি না।”
ক্রাশ আমার হাত চেপে ধরে খোলা বারান্দায় বাইরে ঝুলিয়ে ধরে।ভয়ে আমার দম গেলো।আমি চোখ খিঁচে একদমে বললাম,
—-“তুমি ওই কুত্তি নিয়ে বাইরে উঠলে কেনো?তাই আমার রাগ হয়েছে।আর মা ও দুপুরে খেতে দেয়নি।”
ক্রাশ আমার হাত ছেড়ে সোজা করে দাঁড়াল। আমি বুকে ফু দিয়ে নিলাম।ক্রাশ গাল ফুলিয়ে নিশ্বাস নিয়ে বলল,
—-“ভালোই হয়েছে খাওনি।যেই ভারি হচ্ছো দিন দিন।”
আমি নাক ফুলিয়ে বললাম,
—-“তোমার কুত্তি তো শুখাচ্ছে না?”
ক্রাশ মুখ বাকিয়ে বলল,
—-“কে বলেছে তোমাকে বলতে, আমি তোমাকে চুমু খেয়েছি?একদিক দিয়ে ভালোই করলে আনিকা।আমার আর নিলার বিয়ে ঠিক করেছে বাড়ি থেকে।”
কথাটা শুনেই বুক কেপে উঠলো আমার।এই রে, নিজের বিপদ কি নিজেই ডাকলাম?ক্রাশ হেসে ওর বারান্দায় যেতে নিলেই হাত ধরে টেনে আনি।দুহাত সামনে দিয়ে দাঁড়াই। ব্যস্ত হয়ে বললাম,
—-“বিয়ে মানে কি?কোনো বিয়ে হবে না প্রিয়।”
ক্রাশ মুচকি হেসে আমার গাল টেনে বলল,
—-“দেখা যাবে সোনা।”
ক্রাশ চলে গেলো আর আমি সারা রাত ধরে ভাবলাম ক্রাশের বিয়ে।কিছু একটা করতে হবে আমার।তার পর দুদিন ধরে চিন্তা করলাম।অবশেষে বুদ্ধি পেলাম।
খুব সুন্দর করে সাজানো বাড়ি।ভাবতেই মজা লাগে ক্রাশের বিয়ে।আমার খারাপ লাগে হুদাই টাকা নষ্ট হবে।আমার কি তাতে?রাত হলো, একটু পর বিয়ে।ক্রাশ বার বার আমাকে লক্ষ্য করছে। এতো সেজে গুঁজে আরামে আছি কিভাবে?তার ধারণায় আমি তুফান তুলে ফেলবো এখন।কিন্তু এমন কিছুই হচ্ছে না।রাত ৯টা বাজতেই খবর এলো ক্রাশের নিলা পালিয়েছে।তাও আবার এক্স এর সাথে।ওরে মজা কারে বলে!ক্রাশ সহ সবাই অবাক।সবাই যখন চিন্তায় শেষ ক্রাশ তখন আমার কাছে এসে রেগে বলল,
—-“সব তোমার কাজ তাই না,আনিকা?”
আমি কুল ভাব নিয়ে সোফায় বসে বললাম,
—-“না গো প্রিয়!আমি তো শুধু তোমার কুত্তি মানে নিলাকে বললাম আমি প্রেগন্যান্সি তাও তোমার বাচ্চার।ওর এক্স কে কল দিলাম আর বললাম নিলা তোমার জন্য সুইসাইড করবে।ওরা দুজন মিলে গেলো আর আপনি বেকুব হলেন।আমার যে কি মজা লাগছে না।আজ আমার “ক্রাশের বিয়ে”।”
প্রিয়ের বাবা লোক লজ্জায় আমাকে বলল,
—-“মা তোমার বাবা মাকে বলো, আমি তোমাকে প্রিয়ের বউ করতে চাই।”
আমি মনে মনে হেসে দুখি ভাব নিয়ে বললাম,
—-“কিন্তু প্রিয় আমাকে পছন্দ করে না আংকেল।”
আংকেল হুংকার দিয়ে বলল,
—-“ও করবে না ওর বাপ করবে।”
আমি তো মহা খুশি।অবশেষ হয়ে গেলো “ক্রাশের বিয়ে”।ক্রাশ আমার গাল ফুলিয়ে কবুল বলেছে।উফফফ দেখতে সেই লাগছে। বাসর করে বললাম,
—-“আজ আমার ক্রাশের বিয়ে।”☺️
সমাপ্তি😊