রহস্যেঘেরা শহর চট্টগ্রাম,পর্ব-৪
লেখক-শাহ্রিয়ার আবিদ
তাহলে এবার সত্যি সত্যি চট্টগ্রাম শহর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে তার বদলে বাংলাদেশের মানচিত্রে যুক্ত হচ্ছে চট্টগ্রামের দ্বিগুণ আয়তনের অন্য আরেক শহর ! আর চট্টগ্রাম বাংলাদেশ নামক লাল-সবুজের অংশ থেকে বাদ পড়ছে৷ যুক্ত হয়ে যাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে!
অন্তত পক্ষে আমার মোবাইলের মেসেজটা দেখে আমি এটা আন্দাজ করতে পারছি৷
আজ রাতেই নাকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে হঠাৎ করে জানানো হলো, ‘ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছেন। তার মূল লক্ষ্য হলো বিধ্বস্থ শহর চট্টগ্রাম পরিদর্শন করবেন। ‘
এবার পুরো বিষয়টা আমার মাথায় ঢুকলো৷ বর্তমানে ধরতে গেলে ক্ষমতাধর ব্যাক্তি গুলোর প্রথম সারির একজন হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর তার মতো একজন ব্যাক্তি বাংলাদেশ সফরে আসছে সেটা জানানো হলো হঠাৎ করে। আর ঠিক এ সময়ের একটা দিন আগে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছেন বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের একটা দল৷ তাই কিছুদিন আগে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের আয়তন বৃদ্ধি পাবে৷ তারমানে বাংলাদেশ সরকার চট্টগ্রাম শহরের বদলে আরেকটি শহর নিয়ে নিচ্ছে যা চট্টগ্রাম শহর থেকে আয়তনে বড়। হয়তো অনেকটা গোছালো হবে, সাজানো হবে৷ চট্টগ্রামের মতো বিধ্বস্ত হবে না৷ সরকার বাংলাদেশের নাগরিকদের মঙ্গলের কথা ভেবেই এমন করছে৷ তার জায়গায় আমি থাকলে হয়তো তাই করতাম নাগরিকদের কথা ভেবে৷
.
.
তবে আমি পুরো বিষয়টা বুঝে গিয়েছি, গত কয়েকদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ সেনাবাহিনী চট্টগ্রাম শহরে এসেছে। আর তার প্রধান কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট আসবে সেটা ঘিরে৷ বিষয়টা একপ্রকারে ভালো হলেও আমার মতো সব হারিয়ে স্মৃতিটুকু নিয়ে আঁকড়ে বেঁচে থাকা মানুষদের জন্য৷ সরকার সব চিন্তা করেই সঠিক স্বীদ্ধান্ত নিয়েছে। বিধ্বস্ত শহর পূণর্নিমাণ করতে প্রচুর টাকার প্রয়োজন৷ বলতে গেলে “শ কয়েক লক্ষ কোটি” টাকার প্রয়োজন। তারচেয়ে এ টাকা দিয়ে চট্টগ্রামের দ্বিগুণ আয়তনের পাওয়া শহরের উপর অর্ধেক টাকা ইনভেস্ট করলে অনেক উন্নত মানের শহর হবে৷ আর বাকি অর্ধেক টাকা দিয়ে এ দেশের তৃণমূল মানুষদের বন্টন করে দিলে বাংলাদেশ পৌঁছোবে অনন্য মাত্রায়৷
.
যাই হোক এসব আমার ভাবার বিষয় না। আমার আরো অনেক কাজ বাকি এ শহরে। একটা নোটবুক বের করে কয়েকটা লাইন লিখলাম।
‘ চট্টগ্রাম শহর আমার জাল, আর বাংলাদেশ আমার পুকুর। জাল ছেড়ে বের হলেও পুকুর তো ছাড়বো না৷ ‘
এ-ই লাইনটা লিখলাম আমি আমার অফিসের উদ্দেশ্যে। লিখাটার ছবি তুলে ছবিটা মেইল করো দিলাম৷ লিখাটা লিখেছি আমি সাংকেতিক ভাষায় আর সেই সাংকেতিক ভাষা শুধু মাত্র ‘এস আই এল’ এর এজেন্টরা বুঝতে পারে৷
আর এ সাংকেতিক ভাষায় লিখার কারণ কখনো ধরা পড়ে গেলেও কেউ যেন কিছু বুঝতে না পারে, তাই ‘ এস আই এল’ এজেন্টরা এমন সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করে।
.
.
দুপুরের খাবারটা খুব দ্রুত বানিয়ে ফেললাম৷ আজকের ভেতর আমাকে সিলেট পৌঁছাতে হবে৷ সিলেটে আমার এক বন্ধুর বাড়ি, তার নিজস্ব একটা চা বাগান রয়েছে। জায়গাটা বেশ সুন্দর। একেবারে শিল্পীর তুলিতে আঁকালে যেমন হয়৷ বেশ কদিন ধরেই সেখানে যাওয়ার কথা থাকলেও যাওয়া হয়নি৷ তাই সেখানে যাবো আর থিতলি কে রেখে আসবো সাথে করে তার সব জিনিসপত্র৷ আমার নামের সবকিছু তার নামে উইল করে রাখা আছে। কোনো সমস্যা হবে না।
.
সামনে আমার জন্য যা অপেক্ষা করছে, হয়ত আমি বেঁচে নাও ফিরতে পারি মিশনটি থেকে৷ মিশনটি অফিসিয়ালি নয়, আমার নিজের!
প্লেনের টিকেট আমি অনলাইনে কেটে রেখেছি, বিকাল চারটায় ফ্লাইট। সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছি মিল্টন আর থিতলিও আমাকে করে সাহায্য করছে গোছাতে। দুজনেই বেশ উৎসাহের সাথেই কাজ করছে৷ দুজনে হয়তো এখনো জানে না আসলে কি হতে যাচ্ছে।
.
অবশেষ সবকিছু গুছাতে গুছাতে প্রায় আড়াইটার মতো হয়ে গেল৷ যতটা সম্ভব খেলাম, আমার খাওয়ার তেমন কোনো আগ্রহ নেই৷ আমার মনে হচ্ছে আমার মেয়ে যেন প্রতিটি মুহূর্তে আমার থেকে দূর হয়ে যাচ্ছে অনেক দূর থেকে বহুদূর। তারপরেও আমি কাউকে কিছু বুঝতে দিলাম না৷
.
খেয়াল করলাম মিল্টন তার মুখ দিয়ে একটা কাপড় নিয়ে এলো নীল রঙের । যেটা কোথাও বের হলে তাকে আমি পড়িয়ে দেই৷ সে আমার পায়ের কাছে এসে গা ঘেঁষতে লাগলো। তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম, গলা চুলকিয়ে দিলাম। বারবার মুখ দিয়ে কামড়ে ধরে রাখা কাপড়টা আমার দিকে এগিয়ে দিচ্ছে৷ কিন্তু আমার এটা বলতে খারাপ লাগছে, তাকে এখন আমাদের সাথে নিতে পারবো না। অবশ্য আমি সিলেট চলে আসার টিকেটও কেটে রেখেছি ৷
থিতলিকে আমার বন্ধুর বাসায় রেখে চলে আসবো ৷ তাই মিল্টনকে সাথে নিচ্ছি না৷ মিল্টন আমার দিকে তাকিয়ে আছে, সে কিছুটা বুঝতে পেরেছে তার আর যাওয়া হচ্ছে না৷
.
দুইটা পয়তাল্লিশের দিকে, বেরিয়ে পড়লাম বাবা- মেয়ে৷ আমার পা দুটো সামনে বাড়তে চাইছিল না৷ ইচ্ছে করছিল, থিতলিকে আবার ঘরে নিয়ে গিয়ে তার সাথে খেলতে, তার করা বায়নাগুলো পূরণ করতে৷
অবশেষে স্ট্রিং শক্ত হাতে ধরে রেঞ্জ রোভারটি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। থিতলি বেশ খুশি,
– আচ্ছা বাবা! আমরা কোথায় যাচ্ছি?
– আমরা, তোমার মাহিন আঙ্কেল এর ওখানে যাচ্ছি।
– ওখানে কি খুব সুন্দর?
– হ্যাঁ, খুব সুন্দর। ওখানে তোমার মতো একটা মেয়ে আছে৷ খুব ভালো নাচতে পারে৷
– ওহ্ কি মজা হবে! আমিও তার সাথে নাচতে পারবো।
– হ্যাঁ, তখন তোমাদের খুব সুন্দর দেখাবে৷
কথাগুলো বলতে বলতে, চোখ থেকে নোনা পানি গড়িয়ে পড়ল কয়েক ফোটা।
.
থিতলির ব্যাগ এ আমি একটা খাম ঢুকিয়ে দিলাম। সে কখনো ব্যাগটি খুললে পাবে৷ খামটির মধ্যে মিতুল, আমি আর থিতলির ছোট অবস্থায় থাকা পুরো পরিবারের ছবি৷ আর তার সাথে দুটো চিঠি দিয়েছি৷ দুটোই আমার লেখা চিঠি যেখানে তার জন্য সবকিছু লিখে দিয়েছি তার জন্য কোথায় কি রেখেছি সবকিছু। আমার পরিচয় তার মায়ের পরিচয় সবকিছু দিয়ে দিয়েছি৷ যাতে সে বড় হলে বলতে পারে তার পরিবার সম্পর্কে৷
.
এসব দেয়ার একটাই কারণ, আমি এমন কিছু তথ্য পেয়েছি যার খোঁজ আমি এতদিন করেছি!
চলবে….