রহস্যেঘেরা শহর চট্টগ্রাম,পর্ব-৩
লেখক-শাহ্রিয়ার আবিদ
রিভলভার পেছনের হাতে লুকিয়ে রেখে দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম। এরকম ঠিক মাঝ দুপুরের সময়টাতে আমার বাসায় তো কারো আসার কথা নই। তাই একটু সাবধানতা অবলম্বন করছি৷ মিল্টন আর থিতলি উপরের তলায় থিতলির কামরাতে। দরজা খোলার আগে ছোট্ট দরজার ছিদ্রটাতে একবার উঁকি দিলাম৷
উঁকি দিতেই চোখে পড়ল,
মাঝ বয়সী এক লোক, ঘন কালো চুলগুলো মনে হচ্ছে তেলে চুপসিয়ে আঁচড়েছে৷ তারপর দেখা গেল তেলতেলে কপাল, গায়ের রংটা উজ্জ্বল শ্যামলা। তার বুকপকেটে রাখা আইডি কার্ডটি আমার নজর এড়ালো না।
রিভলবার ধরা হাতটা শক্ত করলাম, যেকোনো মুহূর্তে এর ব্যবহার হতে পারে৷
.
এক হাতপ দরজা খুলতে লাগলাম, অপর হাতপ রিভলবার ধরে আছি৷ দরজা খুলে দিতেই, লোকটি আমার দিকে তাকিয়ে কর্কশ গলায় বলল ,
– “আপনার নাম কি ইমরান? ”
ইমরান আমার ছদ্ম নাম
-“হ্যাঁ। আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না? ” পাল্টা প্রশ্ন করেই বসলাম।
– 031489. kc q
লোকটি সাবলীল ভাষায় কিছু কি ওয়ার্ড বলল৷ এ কি ওয়ার্ড গুলো আমার অফিস থেকে আমার জন্য ব্যবহৃত কি ওয়ার্ড। কোনো গোপন জরুরি তথ্য দিতে৷ তার কয়েক মুহূর্ত পরে আমার হাত ঘড়িতে একটা মেসেজ আসলো৷ নিশ্চিত হলাম লোকটি অফিস থেকেই এসেছে৷ দরজা ঠেলে ভেতরে আসার পথ করে দিতেই সে ভেতরে ঢুকে গেল৷ আশপাশটা দেখে নিলাম আরেকবার৷
.
– আপনি ঠিক আজ সন্ধ্যা ৭:৩৫ মিনিটে প্রেস ক্লাবের সামনে আসবেন৷ ওখানে আমি থাকবো৷ আর আমি নিজস্ব কিছু স্পাই এর মাধ্যমে জানতে পেরেছি, প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রামে আসার মূল লক্ষ্য!
লোকটির কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম হঠাৎ থেমে যাওয়ায় মনোযোগ ক্ষুন্ন হলো।
– আসল উদ্দেশ্যটি কি?
লোকটি আমার কান মুখ লাগিয়ে বলল,
– তিনি এখানে গোপনে কারো সাথে বৈঠক করার কথা আঁচ করতে পেরেছে। আমার স্পাইরা প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম ভ্রমণের রুটিন সিডিউলে প্রায় পাঁচ ঘন্টা সময় মিসিং! এটিও জানিয়েছে, পুরো চট্টগ্রাম শহরটা বাংলাদেশের নতুন মানচিত্রে নেই! এর মানে বুঝতে পারছেন নিশ্চয় আপনি।
– কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিলাম এ বিষয়টা কয়েকদিন আগে থেকেই। এটা যদি বাস্তবে রুপ নেই তাহলে তো খুব ভয়াবহ রকমের খারাপ অবস্থা হবে৷
-কিন্তু আমি চিন্তা করছি, মিসিং পাঁচ ঘন্টা নিয়ে৷ যা খুব গোপনে রাখা হয়েছে৷ এ-ই মিটিং সম্পর্কে দুই তিনজন ছাড়া অন্য কেউ জানে না৷ খুব সিক্রেট ভাবে রাখা হয়েছে মিটিং টি।
– আমার মতে এই মিটিং টার উপর নির্ভর করছে৷ চট্টগ্রামের ভবিষ্যৎ!
-আপনি ঠিকই বলেছেন। আর আপনাকে কি করতে হবে বুঝতেই পেরেছেন নিশ্চয়ই!
মাথা নেড়ে সাঈ দিলাম৷
– ঠিক আছে আমি তাহলে আসি।
– কিছু খেয়ে গেলে ভালো লাগতো।
– অন্যসময় আসলে খেয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ ভাবিকেতো দেখলাম না৷
– আমাদের মধ্যে কিছু ব্যাক্তিগত সমস্যা হওয়ায়, আপাতত সে বাপের বাড়িতে গিয়েছে৷
কথাগুলো বলতে কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু যতোই কষ্ট হোক কেন সত্যটা তাদের বলা যাবে না। আমি আদৌও ঠিক জানি না সে কোথায় আছে? সে মানুষটায় আমার কাছে পুরোপুরি ধোঁয়াশার মতো৷
লোকটি চলে গেল৷ আমি হাতের রিভলবার টা চট করে রেখে দিলাম। দেখলাম উপর থেকে থিতলি আর মিল্টন নামছে।
– লোকটা কে বাবা?
– তোমার খেলা কি শেষ? গোসল করেছো?
প্রসঙ্গ বদলে ফেললাম। আমি চাই না, আমার মেয়ে এসব জানুক ৷ আমি চেষ্টা করি তাকে সবসময় এসব থেকে দূরে রাখতে।
– হ্যাঁ, শেষ। আমার আজ গোসল করতে ইচ্ছে করছে না৷
– কেন? আজ গোসল কেন করবে না৷ গোসল করে ফেল তাহলে ভালো লাগবে৷
– না, আমার ভালো লাগছে না আজ৷
হাঁটু গেড়ে তার সামনে বসলাম৷ দুহাত দিয়ে ধরে কাছে টেনে নিয়ে এসে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– গোসল করে ফেলো ভালো লাগবে তোমার৷
– আমার গোসল করতে ইচ্ছে করছে না৷
– কেন তোমার কি ভালো লাগছে না৷
– না।
– কি হয়েছে আমাকে বলো।
চুপ করে থাকল থিতলি। নিচের দিকে তাকিয়ে পা একটার উপর আরেকটা ঘষতে লাগল৷ এ কাজটা সাধারণত সে তখনই করে, যখন আমাকে কিছু বলতে পারে না আবার সে জিনিসটা করতেও পারে না । পা দুটো লাল হয়ে গেল তার৷
– কোনো কারণে মন খারাপ?
এখনো কিছু বলল না৷ অবশেষে আমার দিকে তাকালো। খেয়াল করলাম চোখের কোণে পানি জমেছে তার৷ ছোট্ট মায়াভরা মুখটা দেখতে পুরোটা তার মায়ের মতো। ছোট্ট ছোট্ট আওয়াজ করে বলল,
– আমার জন্মদিনে তুমি বলেছিলে তোমার কাজ শেষ হলে আমাকে বেড়াতে নিয়ে যাবে।
বোঝে ফেলেছে সে, এ রকম অজ্ঞাত কেউ এসে খবর দেয়ার মানে আমাকে আবার কোনো কারণে কাজে জড়িয়ে পড়তে হবে৷ নিজের কাছে নিজেই ছোট হয়ে গেলাম। প্রায় দুই মাসের মতো হয়েছে, তাকে বেড়াতে নিয়ে যাবো বলেছি কিন্তু এখনো নিয়ে যাই নি৷
– ওয়াদা করছি এ কাজটা শেষ হলে তোমাকে বেড়াতে নিয়ে খুব একটা সুন্দর জায়গায়৷ তোমার খুব পছন্দ হবে জায়গাটা৷
– সত্যি!
থিতলি খুশি হয়েও আবার সেটা মুহূর্তেই মিলিয়ে গেল৷
– তুমি এরকম প্রতিবারই বলো, কিন্তু কখনো নিয়ে যাওনি৷
– “এবার সত্যি নিয়ে যাবো৷ কাজটা শেষ হওয়া মাত্রই তুমি আর আমি দুজনে বেড়াতে যাবো। ”
থিতলি খুশি মনে নাচতে নাচতে গোসল করতে চলে গেল৷
.
মিল্টন পাশ থেকে “ঘেউ ঘেউ” করে উঠল আমার দিকে তাকিয়ে ,
– “ঠিক আছে তোকেও সাথে নিবো। তাহলে আমরা দুজন নই তিনজন যাবো৷ ”
মিল্টনের দিকে তাকিয়ে বললাম। সে আবার
– “ঘেউ ঘেউ” করে উঠল,
– ” হ্যাঁ, খুব সুন্দর জায়গায়। ”
– “ঘেউ ঘেউ। ”
– “আমি এখন কেমনে বলবো, ওখানে অন্য কুকুর থাকবে কি না!”
– “ঘেউ ঘেউ।”
– “কিহ্ ওখানে কুকুর না থাকলে তুই যাবি না! ”
– ” ঘেউ ঘেউ। ”
– ” কি বললি, মেয়ে কুকুর থাকলে তোর জন্য ভালো হবে। ”
– “ঘেউ ঘেউ। ”
– ” শয়তান কোথাকার, তোর মতি গতি ভালো ঠেকছে না আমার কাছে! ”
– “ঘেউ ঘেউ। ”
– ” তুই বলছিস, আমার মতিগতি ভালো ঠেকছে না যে তোর কাছে, আমি কি করলাম। ”
– ” ঘেউ ঘেউ। ”
– ” না এবার চিটিং করবো না, সত্যি নিয়ে যাবো। ”
– “ঘেউ ঘেউ। ”
– ” হয়েছে তোর আর পাকনা হতে হবে না৷ ”
– “ঘেউ ঘেউ। ”
– ” ঠিক আছে আমি তোর কাছে হার মানলাম। তোর মতিগতি ঠিক আছে। এবার আমি যাই, তোর সাথে বকবক করার মতো আমার হাতে সময় নেই৷ রান্না করতে হবে৷ আর তোকে বিস্কিট দিচ্ছি চুপচাপ করে খাঁ। ”
– ” ঘেউ ঘেউ। ”
– ” বিস্কুট আওয়াজ করে খেতে ভালো লাগে তোর৷ এটা কোন ধরনের ভালোলাগা, আবার৷ ”
– ” ঘেউ ঘেউ। ”
– ” হ্যাঁ, ছোট বাচ্চারা এভাবে আওয়াজ করেই খাই কারণ তারা ভালোভাবে খেতে জানে না তাই। তুই তো আর ছোট না। বুড়ো হয়ে গিয়েছিস৷ ”
– ” ঘেউ ঘেউ। ”
– ” কিহ্, তুই বড়ো না যুবক৷ মজা পেলাম,হাহা..”
– ” ঘেউ ঘেউ। ”
– ” না মোটেও না৷ আমাকে দেখতে কি বুরো মনে হয়। একটু না হয় খোছা খোছা দাঁড়ি ওঠেছে তাতে কি৷ তুই একবার আমার মেভবুক থেকে ঘুরে আসিছ। তারপর দেখবি আমার ফলোয়ার কতো। এখনো মেয়েরা আমার উপর ক্রাশ খাই । তুই বলিস আমি নাকি বুড়ো! ”
– ” ঘেউ ঘেউ। ”
– ” কি বললি আমি এডিট করে ছবি ছাড়ি! আর তুই মেভবুক চিনিস না। মেভবুক হলো বাংলাদেশি সফটওয়্যার কোম্পানির একটি এপস্ যা ফেইসবুকের মতো, কিছুটা বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়৷ তুই এসব জেনে কি করবি। তোর তো আরও একাউন্ট নেই।”
– ” ঘেউ ঘেউ। ”
– ” তুইও একাউন্ট খুলবি! আর তোর ও ফলোয়ার বানাবি! তুই তো বেশ মজার মজার কথা বলিস আজকাল। ”
– ” ঘেউ ঘেউ । ”
– ” ‘এমাজিং মোমেন্ট’ এটা কি আবার? ”
– ” ঘেউ ঘেউ। ”
– ” ইউটিউব চ্যানেল, ওখানে থেকে শিখেছিস ভালো৷ তো সাবস্ক্রাইব, লাইক, কমেন্ট কিছু করেছিলি। ওহ্, আমি তো ভুলেই গিয়েছি তুই তো আবার এগুলো পারিস না৷ ”
আমার পকেটে থাকা মোবাইল খেপে উঠল৷ মোবাইল ভাইব্রেশন মোড়ে রেখেছিলাম, মেসেজ এসেছে বোধ হয়।
মোবাইল বের করে চেক করতেই, আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গিয়েছে! আমি তো কেমন যেন ঘোরের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছি!
চলবে….