অবিশ্বাস,পর্বঃঅন্তিম

অবিশ্বাস,পর্বঃঅন্তিম
লেখকঃরনি হাসান

উপস্থিত সজীব নিলয় লোকটির দিকে তাকাল, আর আমি খাবার খাওয়া বাদ দিয়ে লোকটির দিকে তাকাতেই চোখ যেনো কপালে উঠে গেলো, কেন না ওই লোক আর অন্য কেউ নই আমার জন্মদাতা পিতা, যার সঙ্গে রাগ করে ৩ তিন বছর আগে নিজের বাসা ছেড়ে এই ঢাকায় চলে আসি, আজ ৩ বছর পর বাবাকে দেখে অল্প সময়ে দ্রুত চোখজোড়াতে অশ্রু কনা এসে ভিড় করল, নিজেকে সংযত রেখে বললাম ” বাবা কেমন আছো_?

বাবা নিজের অশ্রু কনা দুই হাতে আড়ালে করে কান্না জড়িত কন্ঠে বলল, বাবার উপর এত রাগ করে কেমনে এতদিন থাকলে পারলি হ্যা, একটুও আমার কথা মনে পড়ল না,

–“সরি বাবা, আমি আসলে তোমাদের মাঝে অশান্তির কারণ হতে চাইনি, এরজন্য নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছি,

–“বাবার কাছে ছেলে কখনো অশান্তির কারণ হই না। সেদিন রাগে মাথায় কথাটা তোকে বলছিলাম, ভাবেনি আমার কথাগুলো তোর মনে এতটা আঘাত করবে, ৩ বছর ধরে তোকে কত জায়গায় খুজেছি কোথায় তোর সন্ধান পাইনি, আজ এভাবে দেখা মিলে যাবে তা আমার বিশ্বাস ওই হচ্ছে না

সেদিন নিলয় সজীব সঙ্গে রেস্টুরেন্টে না গেলে হইত বাবার সঙ্গে দেখাই হতো না,যে সৎ মার আচরণে আমি বেশি বিরক্ত হতাম সময় সাপেক্ষে সে অনেকটাই পালটে গেছে, এখন তার কথাবার্তা শুনলে মনে হই, যে সে আমার

আপন মা, পরিশেষে আমার ছন্নছাড়া জীবন পুনরায় আলোকিত হলো, তিন বছর আগে যখন নিজ বাসা ত্যাগ করে , তখন ভেবেই নিয়েছিলাম, যে নিজ বাসায় আর ফিরা হবে না, নিজ বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় যখন এক বছর থাকলাম তখন পুরোপুরি বুঝে নিয়েছিলাম যে সারাজীবন আমাকে এভাবে কাটাতে হবে, তা আর থাকতে হলো না। সেদিন রেস্টুরেন্ট থেকে বাবা আমার কোনো কথা না শুনে আমাকে আবার গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে যায়, যদি ও প্রথমে আমি যেতে চাইনি, পরক্ষণে বাবার ইমোশন দেখে তার কথা আর ফেলতে পারিনি, তার সঙ্গে গ্রামে আসতে হয়েছে,

বাড়িতে এসে রিয়ার স্মৃতি গুলো ভুলতে চেষ্টা করি, কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য বাধনের কারনে, রিয়াকে ভুলতে পারছিলাম না, মনে হচ্ছে সব রাগ ক্রোধ ভুলে গিয়ে রিয়াকে আপন করে, পরক্ষণে ভাবি, আমি কি রিয়াকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবো _? রিয়া কি আমাকে ছাড়া ভালো আছে_? হইত ভালো নেই, আনমনে ভাবছি হঠাৎ কেনো জানি রিয়ার ফোন নাম্বার টা ব্ল্যাকলিস্ট থেকে ছাড়ানো ইচ্ছা জাগ্রত হলো, পকেটে থেকে ফোন বের করে প্রথমে ওর নাম্বার ব্লকলিস্ট ছাড়ালাম তারপর ফেসবুকে গিয়ে ও ব্লকলিস্ট ছাড়িয়ে নিলাম-

কিছুক্ষন পরেই রিয়া অভিমান মিশ্রিত মেসেজ পাঠালো” হঠাৎ কি ভেবে ব্লকলিস্ট থেকে ছাড়িয়ে নিলে হুম, আমার প্রতি তোমার খুব তো রাগ তাই না_? রিয়ার রিপ্লাই কিছু লিখলাম না, ও আমার নিশ্চুপ থাকা দেখে এক সঙ্গে চার পাচটা করে মেসেজ পাঠালো, উত্তর শুধু লিখলাম ” রিয়া তুমি কি আমাকে ছাড়া ভালো আছো_?

কান্নার রিয়াক্ট যুক্ত করে লিখলো” নাহ, তারপর ওই মেসেজিং শুরু

–“দেখলে তো অবিশ্বাস করার কারনে আমাদের মাঝে কতটা দুরুত্ব সৃষ্টি হয়েছে

–“হুম, তুমি চাইলে তো আবার দুরুত্ব নিমিষেই কমিয়ে দিতে পারো, কি সম্ভব না_?

–“সম্ভব কিন্তু তোমাকে দ্বিতীয়বারের মতো গার্লফ্রেন্ড হিসাবে কাছে নেওয়া আগ্রহটা আর হচ্ছে না, তবে এবার গার্লফ্রেন্ড হিসাবে নই, নিজের বউ করে ঘরে নিতে চাই,_?

রিয়া মেসেজ টি সিন করে অনেকগুলা লাভ রিয়াক্ট সেন্ট করল, তার সঙ্গে লিখলো,

–“সত্যিই বলছো, আমার তো বিশ্বাস ওই হচ্ছে না

–“কি আবার অবিশ্বাস করছো (রেগে)

–“না মানে তুমি তো আমার সঙ্গে যোগাযোগ ওই রাখোনি, ইভেন আজ ২ মাস পর ব্লগ লিস্ট থেকে আনব্লগ করলে, তারপর আচমকা এতবড় সারপ্রাইজ দিবা, তা আমি কল্পনা ও করেনি, আচ্ছা আমার জন্য কি তোমার একটু ও খারাপ লাগানি _?

–“লাগলেও কিছু করার ছিলো না,

–“কেনো_?

–“কারন তোমার প্রতি রাগটা আমার অনেক বেশি আঁকড়ে ছিলো যার দারুণ তোমার কথা মনে পড়লেও সেই রাগ ক্রোধকে কেন্দ্র করে তোমার কথা ভুলতে হইছে

–“এখনো আমার প্রতি আগের মতোই রাগ আছে, নাকি কিছুটা কমেছে হুম

–“হুম এখনো একটু আছে, তবে বিয়ের পর সেটা ও কমে যাবে (হেসে)

রিয়ার সঙ্গে এক দুই কথায় হাসি ঠাট্টায় মনটা কেমন জানি আগেকার মতো ফুরফুরে ভালো হয়ে গেলো, রিলেশন টা ঠিক হয়ে গেলো, রিয়াকে ভুলতে অনেক চেষ্টা করছি, কিন্তু তার স্মৃতিগুলো ভুলতে পারছিলাম না, ভালোবাসার প্রিয় মানুষটার কাছে রাগ অভিমান হবে ঠিকই ওই। কিন্তু সেটা দীর্ঘদিন থাকবে না, প্রথমে তো ভেবে নিয়েছিলাম রিয়াকে আপন করে নিবো তো দুরের বিষয়, তার সঙ্গে কথায় বলবো না, কিন্তু সময় সাপেক্ষে ভালোবাসার মানুষ প্রতি রাগ অভিমান কমে যেতে বাধ্য হলো,

আবার এইদিকে বাবার উপর রাগটাও শেষ, সবমিলিয়ে এখন ভালোই আছি, আগে তো মাঝেমধ্যে নিজের ছন্নছাড়া জীবন নিয়ে দুঃখ কষ্ট হত, ভাবতাম আমার জীবন টা কেন এমন হলো, এর থেকে ভালো হতে পারত, এসব কথা নিজেই নিজেই বিরবির করতাম, তখন আমার একাকিত্ব সময়ে রিয়া এসে নানান রকমের কথা বলে শান্তনা দিতে, গম্ভীর মুখে হাসি ফুটানোর চেষ্টা করত, রিয়া সব দিক থেকে আমার জন্য পারফ্যাক্ট ছিলো, কিন্তু মাঝখানে অবিশ্বাস করে ভুল বুঝল, তারপর এসব ঘটনা ঘটে গেলো, যাই হক এখন এসব বলে কোনো লাভ নেই,

দেখা যাক বাবাকে আমার বিয়ে করা ব্যাপারে কি বলে ” পকেট থেকে ফোন বের করে, রিয়ার হাসি উজ্জ্বল একটা ফোটো বের করে বাবাকে দেখালাম, বাবা কিছুক্ষন গম্ভীর থেকে বলল” এই মেয়েকে তুই ভালোবাসিস_?

আমি নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলাম, আমার হ্যাঁ সূচক জবাব শুনে বাবা গম্ভীর কণ্ঠে বলল, এ মেয়েকে বিয়ে করার প্রয়োজন নেই, আমার চেনা জানা অনেক মেয়ে দেখাশোনা আছে, তোর সম্মতি পেলেই বিয়ের ব্যাপারে আগাবো,

বাবার এমন গম্ভীর সুর আর রিয়াকে রিজেক্ট করার বিষয়টা মনে প্রচন্ডভাবে আঘাত করল, মন খারাপ নিয়ে ওখান থেকে প্রস্থান করবো, পিছন থেকে বাবা বলে উঠলো

–“কোথায় যাচ্ছিস দাড়া

–“হুম বলো (মন খারাপ নিয়ে)

–“যার ফোটো দেখালি, তার সঙ্গে তোর কতদিনের সম্পর্ক_?

–“বলে লাভ কি, ছেলে বউ হিসাবে তো পছন্দ ওই করলা না ( মন খারাপ নিয়ে)

–“ধুর পাগল ছেলে, আমি তোকে একটু বাজিয়ে দেখছিলাম যে রিজেক্ট করলে কেমন রিয়াক্ট করিস, তবে যাই হক মেয়েটাকে আমার বউমা হিসাবে বড্ড পছন্দ হয়েছে (বাবা এক গাল হেসে)

–“বাবা সত্যিই বলছো (খুশিতে আত্মহারা হয়ে)

–“হ্যা সত্যিই, তুই বরং ওদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ করিয়ে

ব্যস তারপর রিয়া বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিলাম, এক সপ্তাহ পর রিয়ার পরিবারে সবাই এসে আমাদের অবস্থান দেখে নিলো, আমাকে তো আগে থেকে চিনতো, দেখাশোনার পর্ব শেষে, দুই পরিবারের কেউ বিয়েতে অমত পোষণ করেনি, জমজমাট ভাবেই রিয়াকে বিয়ে করি, রিয়াকে নিয়ে এখন ভালোই সুখে শান্ততে আছি, আপনারা সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন আল্লাহ হাফেজ

____________ সমাপ্ত ____________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here