আরেকটি_বার #পর্বসংখ্যা_১৭ #Esrat_Ety

#আরেকটি_বার
#পর্বসংখ্যা_১৭
#Esrat_Ety

“মার্ডারার, রেপিস্ট।”

শব্দ দুটি উচ্চারণ করে ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে উর্বী।

উচ্ছাস উর্বীর গালদুটো হাত দিয়ে আগলে ধরে নরম গলায় বলে,”পালাতে চাও আমার থেকে?”

উর্বী নিজের হুশ ফিরে পায়।
সে দুহাত দিয়ে উচ্ছাসের হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে, কিন্তু উচ্ছাসের শক্তির কাছে সে অপারগ।

সে কাঁদছে, বাঁধভাঙা কান্না। উচ্ছাস উর্বীর কান্না উপেক্ষা করে বলতে থাকে,”ত্রিশের উর্বীকে ঠিক তেইশের উর্বীই লাগছে। একটুও বদলায়নি তোমার সৌন্দর্য।”

উর্বী কাঁদতে কাঁদতে হাঁপিয়ে ওঠে,উচ্ছাসকে কাঁপা গলায় বলে,”আমাকে ছেড়ে দাও তুমি দয়া করে। চলে যাও তুমি এখান থেকে। আমার জীবন থেকে।”

উচ্ছাস উর্বীর কথা শুনতেই সজোরে একটা থাপ্পড় মারে উর্বীর গালে, উর্বী চ’ড়ের ধাক্কা সইতে না পেরে মেঝেতে পরে যায়। সে সেখানেই চুপ করে পরে থাকে। তার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছে।

উচ্ছাস গিয়ে উর্বীর চুল মুঠি করে ধরে, দাঁতে দাঁত চেপে বলে,”টাকা চিনেছিস তুই! ফালতু মেয়ে, গোল্ড ডিগার। ছলনাময়ী।”

উর্বী কন্ঠে তেজ নিয়ে বলে,”হ্যা আমি তাই। তুমি চলে যাও এখান থেকে। আমাকে আমার মতো বাঁচতে দাও।”

উচ্ছাস এবার উর্বীর চুল ধরে টেনে তোলে। তারপর আরেকটা চ’ড় মে’রে দেয় উর্বীকে। উর্বী টাল সামলাতে না পেরে বিছানায় পরে।

উচ্ছাস এসে উর্বীকে বিছানার সাথে চে’পে ধরে।

“নিজের মতো বাচবি? তোর স্বামীকে নিয়ে? সে আর এজন্মে হচ্ছে না। তোর স্বামী ভেবে তোর দেবরকে ছু’ড়ি মেরেছিলাম জানিস? এবার তোর স্বামীকেই মা’রবো।”

উর্বী অবাক হয়ে দেখছে উচ্ছাসকে। সে বিশ্বাস করতে পারছে না, এটাই কি সেই উচ্ছাস! এসব কি শুনছে সে!

নিজেকে উচ্ছাসের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলতে থাকে,”ছিহঃ তুমি এত্তো নিচ! ছাড়ো আমাকে,ছেরে দাও তুমি। আমার ঘেন্না লাগছে তোমাকে। ঘেন্না করি তোমাকে আমি।”

উচ্ছাস হাসতে হাসতে বলে,
“ছেরে দেবো?

উর্বী দম নিতে পারছে না। গাল বেয়ে তার অঝোরে পানি ঝরছে।

উচ্ছাস নিশ্চুপ উর্বীকে কাঁদতে দেখে। এই মেয়েটার ওপর সে এতটা ক’ঠিন কি করে হচ্ছে! সে দুর্বল হয়ে পরতে চায়, কিন্তু না,তাকে দুর্বল হলে চলবে না।

উর্বী বলতে থাকে,”ঘৃণা করি তোমাকে শুধু। এটুকু কেন মেনে নিতে পারছো না।”
উচ্ছাস উর্বীর সে কথায় ভ্রুক্ষেপ না করে তার কপালে চুমু দিতে উদ্যত হয়। উর্বী তাকে বাধা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে,কেঁদে বলে ওঠে,”উচ্ছাস দোহাই লাগে তোমার,আমি এখন অন্য কারো স্ত্রী। এতটুকু বোঝার চেষ্টা করো।”

উচ্ছাস থেমে যায়, কিছুসময় উর্বীর দিকে তাকিয়ে থেকে উঠে বসে। উর্বী একই ভাবে পরে থাকে নিস্তেজ হয়ে। উচ্ছাস নরম গলায় বলতে থাকে,”ওটা কোনো বিয়ে না। ভুল করেছো। মাফ করেছি। এবার সব চুকিয়ে ফেলবে।”

“কি চুকিয়ে ফেলবো আমি?”
উর্বী চেঁ’চি’য়ে ওঠে।

_তালাক দেবে স্বামীকে।

_তোমার কথায়?

_হ্যা।

উর্বী উঠে বসে। চোখের পানি মুছে উচ্ছাসের দিকে তাকায়। মুহুর্তেই তার চোখে মুখে কাঠিন্যতা ছেয়ে যায়। কন্ঠে তেজ নিয়ে বলে,”দেবো না। কি করবে তুমি?”

উচ্ছাস হেসে ফেলে। হাসতে হাসতে চুপ হয়ে যায়। কোনো উত্তর দেবার প্রয়োজন মনে করে না সে।

_আমার স্বামীর কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা তুমি করবে না উচ্ছাস।
তেজী কন্ঠে বলে উর্বী।

উচ্ছাস আবারও হাসে, হাসি থামিয়ে বলে, “খুউব প্রেম না? খুউউউব প্রেম? বুড়ো স্বামী একেবারে মন ভরিয়ে দিয়েছে দেখছি!!”

উর্বী দুচোখ বন্ধ করে বলে,”ছিহ! কি চাও তুমি?”

_তোমার স্বামীকে তালাক দিয়ে আমার কাছে চলে আসবে। ব্যস এটুকুই।

_অসম্ভব!
উর্বী চেঁচিয়ে ওঠে।
_আমি কোনো রে’পি’স্ট,খুনীর কাছে ফিরবো না। ম’রে গেলেও না।

উচ্ছাস উর্বীর দিকে তাকায়। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে উর্বীর সামনে হাটু গেড়ে বসে উর্বীর চোখে চোখ রাখে। নরম কন্ঠে বলে,”রে’পিস্ট? উর্বী একটা ইন্সিডেন্ট দিয়ে তুমি আমার গোটা অনূভুতিকে জাজ করে ফেললে।”

উর্বী চুপ করে থেকে বলে ওঠে,”উচ্ছাস আটটা বছর ন’র’কযন্ত্রণা ভোগ করেছি। ম’রতে চেয়েও পারিনি ভীতু বলে। কিন্তু জানো,বর্তমানে কেন জানি খুব জীবনের প্রতি টান অনুভব করতে শুরু করেছি। এখন আমি একটু বাঁচতে চাই, তোমার থেকে বাঁচতে চাই। আমাকে একটু বাঁচতে দাও।”

উচ্ছাস উর্বীর পা ধরে,”এই উর্বী তুমি আমায় একটু দয়া করো উর্বী। মাফ করো আমায়। জানো আমার না কেউ নেই। জানো তো?”

উর্বী অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকে।

উচ্ছাস উর্বীর কোলে মাথা রাখে। বাচ্চাদের মতো নরম গলায় বলে,”আমি আর তোমাকে জালাতন করবো না উর্বী। তুমি যেভাবে চলতে বলবে আমি সেভাবে চলবো। একটা চাকরি নেবো। দুজনে সুন্দর একটা সংসার সাজাবো উর্বী। যা হয়েছে ভুলে যাও একটা দুঃস্বপ্ন ভেবে। তুমি ছাড়া আমাকে কেউ বোঝে না উর্বী। তুমিও যদি আমায় না বোঝো। আমি বড্ড অসহায়। আমাকে একটু শান্তি দাও না উর্বী। তোমার কাছে আমি ভিক্ষা চাইছি।”

উর্বী উচ্ছাসের মাথার দিকে তাকায়। তারপর বিছানার চাদর খামছে ধরে বসে থাকে।

***
মামুন বুঝতে পারছে না এতক্ষন ধরে উচ্ছাস ২০৪ নাম্বার রুমে কি করছে ! যাই হোক। গোটা রিসোর্ট ফাঁকা। টপকালে এখনই টপকাতে হবে।

রাওনাফ চুপচাপ বসে আছে। জাহাঙ্গীর এসে পাশে বসে। রাওনাফের দিকে তাকিয়ে বলে,
“কিরে। ভাবির খোজ নিয়েছিস ? মাথা ব্যাথা কমেছে?

_না,ফোন দিইনি। ঘুমাচ্ছে বোধ হয়,ঘুমাক।

জাহাঙ্গীর খুকখুক করে কাশে। রাওনাফ সেদিকে তাকায়, বলে,
“কি কিছু বলবি?”

_না মানে, সত্যি করে বলতো আমায়, ভাবীর সাথে তোর তেমন কোনো ইন্টিমেসি গড়ে ওঠেনি তাইনা?
রাওনাফ রেগে যায়,”আচ্ছা তোরা কি আমাদের দুজনকে নিয়ে গবেষণা করতেই এখানে এসেছিস? নিজেদের নিয়ে থাক না! যা গিয়ে ভাবীকে সময় দে।”

জাহাঙ্গীর ভয় পাওয়া গলায় বলে,”আচ্ছা এই বাদ দিলাম। প্লিজ রেগে যাস না। আমাদের চিন্তা হয় তো।”

রাওনাফ কিছু বলে না,ফোনের দিকে তাকায়। আধা ঘন্টার বেশি হয়ে গিয়েছে। উর্বী কি ঘুমাচ্ছে! ঘুমাচ্ছেই বোধ হয়। থাক ফোন দিয়ে কাজ নেই। রুমে আছে রুমে থাকুক। এখানে এলেই তো সবাই মিলে আবার বিরক্ত করা শুরু করবে।
***
উর্বী নীরব। উচ্ছাস তার কোল থেকে মাথা উঠিয়ে তার পাশে বসে, হাত দিয়ে উর্বীর দুই গাল ধরে বলে,”তুমি বলো,আমার কথা শুনবে না?।”
এক ঝটকায় উচ্ছাসের হাত সরিয়ে দেয়,”তুমি এই মুহুর্তে এখান থেকে চলে যাও। এক্ষুনি।”

উর্বীর ফোন বেজে উঠছে। রাওনাফ ফোন দিয়েছে। উর্বী ফোনটা রিসিভ করতে যায় কিন্তু উচ্ছাস ছিনিয়ে নেয় ফোন। চেঁচিয়ে উঠে উর্বীকে বলে, “তুমি আমাকে কঠিন হতে বাধ্য কোরো না উর্বী। বলো তুমি তোমার স্বামীকে তালাক দিয়ে আমার কাছে ফিরবে। তাহলে কিন্তু তোমার স্বামীরও কোনো ক্ষতি আমি করবো না।”

উর্বী চেঁচিয়ে ওঠে,”শর্ত দিচ্ছো তুমি আমায় ! শর্ত ! তারপর কি হবে? শর্ত অনুযায়ী তোমার সাথে শু’তে হবে? সারাজীবন তোমার রক্ষিতা হয়ে থাকতে হবে? যেমন টা তুমি চেয়েছিলে। কারন তোমার তো বিয়ে করে কাউকে স্বীকৃতি দেওয়ার মুরোদ নেই। আছে শুধু রে’ইপ করার।”

রাওনাফ ফোন দিয়েই যাচ্ছে। উচ্ছাস উর্বীকে ফোন ধরতে দিচ্ছে না। উর্বীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
“করবো বিয়ে তোমায়। সত্যিই বিয়ে হবে আমাদের। তুমি শুধু একবার রাজি হও।”

_মরে গেলেও না। কারন আমি বিবাহিতা, বিয়ে হয়ে গিয়েছে আমার এবং বিয়ে যদি নাও হতো তবুও একটা রে’পিস্টকে কখনোই বিয়ে করতাম না আমি।
চেঁচিয়ে বলে উর্বী। উচ্ছাস বলে,”রেপিস্ট কে বিয়ে করবে না? বুঝলাম। তবে এটা কোন বিয়েতে আটকে আছো তুমি? চাপিয়ে দেওয়া সম্পর্ক।

উর্বী হাসে,হাসতে হাসতেই বলে,”কোনটা চাপিয়ে দেওয়া সম্পর্ক? সজ্ঞানেই কবুল বলেছি আমি। আমি কবুল না বলতে চাইলে আমার ভাইয়ার সাধ্যি ছিলো না আমাকে দিয়ে কবুল বলানোর।
তুমি আমার সাথে বরাবর যা করেছো সেটা চাপিয়ে দেওয়া সম্পর্ক। আর তুমি ঠিক বলেছো, এই বিয়েটা করা একদিক থেকে ভুলই ছিলো আমার। সত্যিকার অর্থে ভুলটা হলো ঐ ভালো মানুষটাকে আমার এই জীবনের সাথে জড়িয়ে ফেলা। ওটাই একমাত্র ভুল। উচিৎ হয়নি আমার।

উচ্ছাস তাকিয়ে আছে। উর্বী বলতে থাকে,”আমার স্বামী ভুল না। যদিও আমি তাকে চাইনি। হয়তো আল্লাহ চেয়েছেন।”

_স্বামী?

_হ্যা। উনি আমার স্বামী। শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে হয়েছে আমাদের। ঐ অতটুকুই পবিত্রতা,সান্ত্বনা,স্বচ্ছতা আছে আমার জীবনে এখন পর্যন্ত, যে আমি কারো সাথে বৈধ সম্পর্কে আছি। আর কোথাও কোনো পবিত্রতা নেই আমার। তুমি থাকতে দাওনি। এবার অন্তত আমাকে মুক্তি দাও। সব শেষ। তুমি শেষ করেছো, আমি শেষ করেছি। জেল খেটেছো,জামিন পেয়েছো এখন একটা সুন্দর জীবনে ফিরে এসো। আমাকেও এই জীবনে থাকতে দাও যে জীবনে আমি অভ্যস্ত হয়ে উঠছি। দোহাই তোমার।

একনাগাড়ে কথাগুলো বলে উর্বী থামে, তারপর আবার কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে শুরু করে,”আর তুমি! তুমি অভিশাপ হয়েই থাকবে আমার জীবনে! যার আমার জীবনে আসার প্রয়োজন ছিলো কেবল আমার শরীর, জীবন নোংরা করতে। অন্য কোনো গুরুত্ব তুমি বহন করো না আমার জীবনে। জেনে নাও তুমি। আর ঐ বাচ্চাটা……”

থেমে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পরে উর্বী। অঝোর ধারায় কাঁদছে সে। শাড়ীর আঁচল দিয়ে মুখ চেপে ধরেছে। একটা গোঙানির মতো শব্দ বের হচ্ছে।

উচ্ছাস নরম গলায় বলে,”উর্বী। লাইফ সবাইকে সেকেন্ড চান্স দেয় না। আমাকে দিয়েছে। খুব একটা দেরি হয়নি। চলো এবার সংসার করি। আমি যা করেছি তার জন্য সত্যিই আমি অনুতপ্ত।”

_কিসের অনুতপ্ত? সেই এক প্রতিহিংসা, সেই আগের মতো আমার চুলের মুঠি ধরা, পাগলা কুত্তার মতো আচরণ করা। এসব তোমার অনুতাপ? একজনকে ছু’ড়ি মে’রে মারতে চেয়েছিলে ওটা অনুতাপ?

_এসব তোমার জন্য উর্বী। তুমি কেন কখনো বুঝতে পারো না।

_না আমি বুঝতে চাই না। কখনোই কিছু বুঝতে পারিনি, বুঝতে পারলে এসব কিছুই হতো না আমার সাথে। নিজের সাথে যা হয়েছে সবকিছু মেনে নিয়েছি। ওসব হবারই ছিলো। অদৃষ্টকে কেউ বদলাতে পারে না,আর সেটা নিজের দোষে হলে তো কথাই নেই। তবে ঐ উপরে যিনি আছেন তিনি আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, উর্বী তুমি যাকে নিজের জন্য পছন্দ করেছো আমি না চাইলে সেটা তোমার জীবন ধ্বংসের কারণই হবে। আমি যে তোমার জন্য অন্য কাউকে বেছে রেখেছি।

উচ্ছাস শীতল চোখে তাকিয়ে ছিলো ,রাগে ক্ষোভে আবারও উর্বীর চুলের মুঠি ধরে,উর্বী নিজেকে ছাড়াতে চায়। পারে না।

“খবরদার আমাকে রাগাস না। খবরদার ! নয়তো এখানে স্বামী স্ত্রী দুটোকে পু’তে রেখে দেবো।”

উর্বী অসহায়ের মতো উচ্ছাসের দিকে চায়।
“বাহহ! এইতো এলে আসল রুপে। এতক্ষন নরম গলায় নাটক করছিলে!”
উচ্ছাস দাঁত কিরমির করে বলে,”বল তালাক দিবি কি না স্বামীকে।”

_না। দেবো না।
তেজী কন্ঠে বলে ওঠে উর্বী।

তক্ষুনি কেউ দরজা ধাক্কাতে থাকে।
উচ্ছাস হেসে বলে,”ওই যে তোমার স্বামী এসেছে। এবার তোমার চোখের সামনেই ওটাকে শেষ করবো। তারপর জেলে যাবো।”

কথাটি বলেই উচ্ছাস প্যান্টের পকেট থেকে এক টান দিয়ে একটা রিভলবার বের করে। উর্বী শিউরে ওঠে। লাফ দিয়ে উচ্ছাসের সামনে দাঁড়ায়। তারপর উচ্ছাসের পা ধরে,”তোমার দোহাই লাগে ওনাকে কিছু করবে না। উচ্ছাস আমি দয়া চাইছি।”

উচ্ছাস নির্বিকার চিত্তে ধাক্কা দিয়ে উর্বীকে সরিয়ে দেয়। উর্বী মেঝেতে পরে গেলেও উঠে দাঁড়ায়। তার বুক থেকে শাড়ীর আঁচল পরে যায়। সে গিয়ে দরজা আটকে দাঁড়ায়,”না! তুমি এটা করতে পারো না উচ্ছাস।”
উচ্ছাস হাসে,”পারি।”
শব্দটা উচ্চারণ করে উচ্ছাস উর্বীর ঘাড় ধরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। তারপর দরজা খুলে দেয়।

***
রাওনাফ হাতের ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। এতবার কল করে নিজের কাছেই কেমন যেন লাগছে তার। কিন্তু উর্বী ফোন ধরেনি কেন! হয়তো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছে। ঘুমাক।

দরজা খুলেই উচ্ছাস দেখতে পায় মামুন দাঁড়িয়ে আছে তাদের দিকেই একটা রিভলবার তাক করা ‌।
মামুন একবার উচ্ছাসকে দেখে, একবার উর্বীকে দেখে ‌। উর্বী দ্রুত শাড়ির আঁচল দিয়ে নিজেকে জড়িয়ে নেয়।

মামুন বাকা হাসি দিয়ে বলে,”ও এই ব্যাপার! তুই এখানে নটি নিয়ে ফুর্তি করছিস। আমি ভেবেছি কি না কি!”

উচ্ছাস চেঁচিয়ে বলে,”মুখ সামলে কথা বল শু’য়ো’রের বাচ্চা নয়তো এখানেই পু’তে দেবো তোকে।”
_পুতবো তো তোকে আমি আজ। তোর এই নটিকে বল ম’রতে না চাইলে এখান থেকে দশ সেকেন্ডে কেটে পরতে।

উর্বী ভয়ে গুটিয়ে আছে। মামুন উর্বীর দিকে হায়েনার মতো তাকায়, যেনো চোখ দিয়ে গিলে খেতে চাচ্ছে।

উচ্ছাস চেঁচিয়ে ওঠে,”ওর থেকে চোখ নামা। চোখ গেলে দেবো তোর।”

মামুন এবার লাফ দিয়ে উর্বীকে ধরে, তারপর রিভলবার উর্বীর মাথায় ঠেকায়।
উচ্ছাস চেঁচিয়ে ওঠে,”ওর কিছু হলে আমি তোর বাপ মা সহ কবর দিয়ে দেবো তোকে কসম।”

মামুন হাসে,”বাহ! এতো প্রেম। তবে তো এটাকেই আগে মারবো।”
কথাটি মামুন শেষ করতে পারেনা, তার আগেই উচ্ছাসের রিভলবারের গুলি এসে তার গলা ভেদ করে চলে যায়।

মামুন মুখ থুবড়ে মাটি তে পরে যায়।
উর্বী মুখ ঢেকে বিকট চিতকার দিয়ে ওঠে।

পার্টিতে উচ্চ ভলিউমে মিউজিক বাজছে। কেউই শুনতে পায়না গুলির শব্দ, রাওনাফ শুনতে পায়না উর্বীর সে চিতকার।

রিসিপশনিস্ট মেয়েটি ঘাবড়ে যায়, গুলির শব্দ মনে হচ্ছে! সে ভয় পেয়ে রিসিপশনের এলার্ট বেল টিপতে থাকে।
রিসোর্টের কিছু কর্মী বাইরে থেকে ছুটে আসে। এরা সবাই ভয় পেয়েছে। এখন কি করবে ! আওয়াজটা চারতলা থেকে এসেছে। গিয়ে দেখবে? কিন্তু অযথা জীবনের ঝুকি নিয়ে লাভ কি,তারচে বরং পুলিশ কে ফোন দেওয়া যাক। একজন স্টাফ টেলিফোন লাইনের কাছে গিয়ে পুলিশ স্টেশনে ফোন লাগায়।

উর্বী কাঁপছে। সে কাঁপা কাঁপা গলায় বিরবির করছে,”মেরে দিলে।”
তার শরীর ভেঙে নিচে পরে যেতে চাইছে।

_আমি না মে’রে দিলে ও তোমাকে মেরে দিতো।

_তাই বলে তুমি!
উর্বী আর কিছু বলতে পারছে না। সে মাটিতে লুটিয়ে পরে।

উচ্ছাস গিয়ে উর্বীর হাত ধরে টেনে তোলার চেষ্টা করে আর বলে,”চলো। সময় নেই। এখানে এখন বিরাট ঝামেলা লেগে যাবে। তার আগে যেতে হবে।”
উর্বীর মাথা বনবন করছে। সে অসহায়ের মতো চারদিকে তাকাতে থাকে।

_কি হলো চলো।
ধ’ম’কে ওঠে উচ্ছাস।

_কোথায় যাবো আমি! একটা খুনীর সাথে কোথায় যাবো? তুমি একটা সাক্ষাৎ পি’শাচ।

_হ্যা আমি তাই‌।
কথাটি বলে উচ্ছাস উর্বীকে জোর করে তোলার চেষ্টা করছে। উর্বী নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে উচ্ছাসকে আটকাতে চায়।

উচ্ছাস উর্বীর চুলের মুঠি ধরে টেনে হিচরে রুম থেকে বের করার চেষ্টা করছে। উর্বী অনবরত উচ্ছাসের বুকে কিল চড় মারতে থাকে। তাতে উচ্ছাসের কোনো ভাবান্তর হয়না,তার বলিষ্ঠ শরীরে কোনো প্রভাব পরে না। সে উর্বীকে টানছে তো টানছেই।

সজীব দৌড়ে এসে বলে,”ভাই! কি করছেন আপনি!”

তারপর মামুনের লা’শ দেখেই মুখ চেপে ধরে। সে এই ভয়টাই পেয়েছিলো।

সজীব তোতলাতে তোতলাতে বলে,”ভাই, কি করছেন ভাই। ওকে ছাড়েন ভাই। নিচে পুলিশ আসছে হয়তো। আর দুই মিনিট দেরি করলে আপনি আমি দুজনেই শেষ। ওকে ছাড়েন ভাই,ওকে পরে দেখার মেলা সময় পাবেন।”

উচ্ছাস উর্বীর দিকে তাকিয়ে বলে,”কাজ টা ঠিক করলে না তুমি, একেবারেই ঠিক করলে না। এই জন্মে উচ্ছাসের ছায়া সরাতে পারবে না নিজের শরীর থেকে। আমি মরলে ভিন্ন কথা ‌”
উর্বী ঘোলাটে চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার শাড়ি এলোমেলো হয়ে আছে।

সজীব বলে,”ভাই এদিকে ইমার্জেন্সি এক্সিট আছে একটা। এদিকে আসেন।”
কথাটি বলে সজীব মামুনের লা’শের পকেট থেকে ফোন,মানিব্যাগ এবং আ’ই’ডিকার্ড নিয়ে নেয়।

উচ্ছাস উর্বীর দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকায়,তারপর সজীবের পিছু নেয়।

***
পার্টির মিউজিক অফ হয়ে যায়। এটা কিসের চেঁচামেচি হচ্ছে। সব গেস্টরা কৌতূহলী হয়ে একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে।
রিসোর্টের একজন স্টাফ দৌড়ে আসছে এদিকেই, সে চেঁচিয়ে বলছে,”চারতলায় গুলির আওয়াজ হয়েছে‌ । পুলিশ এসেছে পুলিশ। আপনারা সাবধানে থাকুন সবাই।”

সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কি বলছে এ!!

রাওনাফের বন্ধুরা হতবাক হয়ে রাওনাফের দিকে তাকায়। রাওনাফ তাদের দিকে একপলক তাকিয়ে একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে, তারপর প্রায় দৌড়ে রিসোর্টের দিকে যেতে থাকে। তার এতো ভয়
হচ্ছে কেনো! উর্বীর কথা ভেবে তার বুকে এতো ব্যাথা হচ্ছে কেনো !

বাকিরা সবাই তার পিছু নেয়।

রিসোর্টের লবিতে পুলিশ রাওনাফকে আটকায়।

_আপনি কোথায় যাচ্ছেন। আগে আমাদের দেখতে দিন বিষয়টা।

_উপরে আমার স্ত্রী একা রয়েছে। আমাকে যেতে দিন।
উৎকণ্ঠা নিয়ে বলে ওঠে রাওনাফ।

_আপনি অপেক্ষা করুন। আমরা দেখছি তো!

রাওনাফের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়,সে লোকটাকে ধাক্কা দিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে,
“বললাম না! আমার স্ত্রী আছে,আমাকে যেতে হবে!”

কনস্টেবল আর কিছু বলে না। রাওনাফ উপরে উঠতে থাকে। তিনজন কনস্টেবল তার পিছু নেয়।

উর্বী পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। তার শাড়ির আঁচল মাটিতে লুটিয়ে আছে। চুল এলোমেলো। শরীরে আঘাতের চিহ্ন।
তার পায়ের কাছে পরে আছে মামুনের লা’শ।

রাওনাফ রুমে ঢুকেই সে দৃশ্য দেখে “উর্বী” বলে চেচিয়ে ওঠে।

কনস্টেবল তিনজনও রুমে ঢোকে।
উর্বী রাওনাফের দিকে তাকায় না। সে যেনো কারো কথা শুনতে পাচ্ছে না।

কনস্টেবলের মধ্যে একজন বলে ওঠে,”ও মাই গড! লাশ!”

রাওনাফ ছুটে গিয়ে উর্বীর শাড়ির আঁচল উঠিয়ে তার গায়ে জরিয়ে দেয়। উর্বী চুপ হয়ে আছে।

রাওনাফ উর্বীর কাঁধ ধরে ধাক্কা দেয়,”উর্বী! ‌উর্বী!”

উর্বী যেনো আঁতকে উঠে রাওনাফের দিকে তাকায়।
রাওনাফ কি করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। কিভাবে উর্বীকে স্বাভাবিক করবে সে!

রাওনাফ কিছু বলে ওঠার আগেই উর্বী একটা বিকট চিৎকার দিয়ে রাওনাফকে জরিয়ে ধরে। সে কাঁদছে। ঠিকভাবে নিশ্বাস নিতে পারছে না। রাওনাফ বোকার মতো আশেপাশে তাকাচ্ছে। কয়েক মুহূর্ত পরে জড়তা কাটিয়ে উর্বীকে দুহাত দিয়ে আগলে ধরে। ধীরে ধীরে ডান হাত উর্বীর মাথায় রেখে অস্ফুট স্বরে বলে,”কাম ডাউন। সব ঠিক আছে! কিচ্ছু হয়নি।”

উর্বী শান্ত হয়না। সে রাওনাফের শার্ট খামচে ধরে কাঁদতে থাকে।

কনস্টেবল তিনজন কিসব বলাবলি করছে। রাওনাফ তা শোনে না। তার এই মেয়েটির জন্য উৎকণ্ঠা বেড়েই চলেছে।

চলমান…..

[ ওহহ নো! উচ্ছাসের সাথে উর্বীর রোমান্টিক পর্ব দিতে গিয়ে ভুলে রাওনাফের সাথে উর্বীর হালকা রোমান্টিক সিন দিয়ে ফেলেছি 🫨]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here