#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
#পর্ব ১৭
সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে রান্না করছে আনাবিয়া। ইরানের জন্য স্পেশালি চিকেন এন্ড ভেজেট্যাব্লেস স্যুপ রান্না করছে। পাশেই দুজন ভৃত্য দাঁড়িয়ে আছে। এটা সেটা এগিয়ে দিচ্ছে তাকে। ফিমু নামের একজন ভৃত্যর সাথে বেশ ভাব আনাবিয়ার। মেয়েটা আনাবিয়ার কয়েক বছরের ছোট। মা মারা যাওয়ার পর অনেক ছোটকাল থেকে মেয়েটা এখানে থাকে। আনাবিয়ার ব্যক্তিগত সকল কাজ সে-ই করে। আনাবিয়া রান্না করতে করতে বলে,
-ফিমু কোনো স্মেল আসছে কী?
-জি ম্যাম। খুবই সুন্দর ঘ্রাণ আসছে।
-এখন তোমাদের স্যারের পছন্দ হলেই হলো।
-অবশ্যই হবে ম্যাম।
আনাবিয়া মলিন হাসে। ড্রইংরুম থেকে কারো উঁচু কণ্ঠস্বর শুনতেই ভ্রু কুঁচকে যায় আনাবিয়ার। ফিমুকে বলে,
-যাও তো দেখে এসো কে এসেছে।
-ঠিক আছে ম্যাম।
কিছু সময়ের মধ্যেই ফিরে আসে ফিমু। মাথা নিচু করে বলে,
-স্যারের বোন এসেছে।
আনাবিয়া বিরক্ত হলো। গায়ের কুকিং এপ্রোন খুলে একজন ভৃত্যর হাতে দিয়ে বলে,
-স্যুপটা দেখো আর হ্যাঁ স্যালেড বানাও দ্রুত।
আনাবিয়া কারো উত্তরের অপেক্ষা করল না। ঝটপট বেরিয়ে যায় রান্নাঘর থেকে। ধীর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে ড্রইংরুমে আসে। সোফায় বসে আছে তনুসফা আর জেসিকা। তনুসফার মুখে চিন্তার ছাপ। আনাবিয়াকে দেখে জেসিকা মৃদু হাসে। ভদ্রতার খাতিরে জিজ্ঞেস করে,
-ভালো আছেন মামী?
-হ্যাঁ একটু বেশিই ভালো আছি। তোমার কী খবর?
-জি ভালোই। শুনলাম মামু না কি অসুস্থ? তাই দেখতে আসলাম।
-রুমে তোমার মামু। আমি ডেকে নিয়ে আসছি।
তনুসফা একবারও আনাবিয়ার দিকে ফিরে তাকালো না। কতটা অহংকারি এই মহিলা! আনাবিয়া রুমে এসে দেখে ইরান উল্টো হয়ে ঘুমিয়ে আছে। মৃদু কণ্ঠে কয়েকবার ডাক দেয় ইরানকে। চোখ বন্ধ করেই ইরান বলে,
-বলুন ম্যাম শুনছি।
-আপনার প্রাণ প্রিয় বড় বোন এসেছে। দোয়েয়া করে একটু নিচে যেয়ে তার সাথে দেখা করে আসুন ইরান শেখ।
ইরান চমকিত হয়ে উঠে বসে। টি-শার্ট ঠিক করে বলে,
-আপা এসেছে?
-না। আপনার শত্রু এসেছে।
বিরক্তি নিয়ে দাঁতে দাঁত চিবিয়ে কথাটা বললো আনাবিয়া। ইরান বড় বড় পা ফেলে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। ইরানকে আসতে দেখে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায় তনুসফা। কাঁদো কাঁদো মুখে জড়িয়ে ধরে ভাইকে। ইরানও স্বাভাবিক ভাবেই বোনকে ধরে। তনুসফা নিজের পাশে বসায় ইরানকে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
-ভাই আমার, আমাকে এতোই পর করে দিয়েছিস? শরীরের কী অবস্থা হয়েছে! একটু ফোন করে বলিসও না আমাদের। আম্মা না বললে তো জানতেই পারতাম না।
-ঠিক আছি আমি।
-হ্যাঁ দেখতে পারছি কত ঠিক আছিস! এখনই আমাদের সাথে ঐ বাসায় যাবি তুই। এখানে তোকে একা রেখে যেতে পারব না আমি।
-একা কোথায়! আনাবিয়া তারপর তাজীব আছে আমার সাথে। এতো চিন্তা করবেন না।
-তুই শুধু ঐ মেয়ের নাম নিস না আমার সামনে ইরান। শুনলাম ও নাকি ওর খালার বাসায় ছিল বিকেলে বাসায় এসেছে? ঐ মেয়ে করবে তোর যত্ন!
-ও জানতো না আমি অসুস্থ। জানলে অবশ্যই চলে আসতো বাসায়।
-তোকে তো ও কালো জাদু করেছে। ওর খারাপ দিক কী আর তোর নজরে পরবে?
ইরান গম্ভীর মুখে বসে রইলো। আনাবিয়া আর নিচে আসেনি। তনুসফা ইরানের দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলে,
-আগামী শুক্রবার তোর ভাগ্নির বিয়ে। তাড়াহুড়ো করে তারিখ ঠিক করেছি। এখন ইসরাফও সুস্থ হয়েছে। তাই আর দেরি করতে চাচ্ছি না।
-হ্যাঁ ভালো করেছেন।
-তুই কাল ঐ বাসায় চলে আসবি। বিয়ের সব দায়িত্ব কিন্তু তোর ইরান।
-আমার দায়িত্ব আমি পালন করব। কিন্তু ঐ বাসায় যেতে পারব না আপা।
-মামু তুমি যদি বাসায় না আসো তাহলে আমি বিয়েই করব না। মাম্মা বিয়ে ক্যানসেল করে দেও।
ইরান ভাগ্নির দিকে তাকায়। হালকা হেসে বলে,
-হলুদের দিন সকালে আপনার মামীকে নিয়ে চলে আসবো আমি।
-না না কালই যেতে হবে।
-দেখো জেসিকা,
-কোনো দেখাদেখি নেই। নিজের একটা মাত্র ভাগ্নির জন্য এতটুকু করতে পারবি না? যদি ওকে একটুও ভালোবাসিস তাহলে কাল সকালেই ঐ বাসায় চলে আসবি।
-ইসরাফকে বাসায় কবে আনবেন?
-তিনদিন পর। ও রুমেই থাকবে চিন্তা নেই।
-ঠিক আছে। তবে আপনি আনাবিয়ার সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করতে পারবেন না আপা।
-আমি ওর সাথে খারাপ ব্যবহার কবে করলাম! দেখেছিস ঐ মেয়ে তোর মাথায় আমার নামে বিষ ঢুকায়।
-এইরকম কিছু না।
-আসবি তাহলে?
-আসবো।
-ঠিক আছে আমরা তাহলে এবার যাই। নিজের খেয়াল রাখ আর মেডিসিন ঠিক মতো নিবি। বুঝেছিস?
-হ্যাঁ আপা। আজ এখানে থেকে যান।
-না। বাসায় কাজ আছে।
-ঠিক আছে।
এতক্ষন দুতালার বারান্দায় দাঁড়িয়ে সবটাই লক্ষ্য করছিল আনাবিয়া। ইরান কেনো তনুসফার সামনে তার সাপোর্ট করল না? রাগে দুঃখে হাত মুঠো করে নেয় সে। ধপধপ পা ফেলে রুমে চলে যায়। ইরান রুমে প্রবেশ করে। আনাবিয়াকে বিছানায় বসে ফোন টিপতে দেখে বলে,
-তুমি আর নিচে আসলে না?
-কেনো যাবো? আপনার বোনের অপমান শুনতে?
-হঠাৎ বিয়ে হওয়ায় আপা তোমাকে পছন্দ করে না তাই কটু কথা বলে। ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে। সে বড় তুমিও একটু তাকে সম্মান করবে।
আনাবিয়ার মুখে রাগের আভাস কিন্তু দৃষ্টি ফোন নিবদ্ধ। কঠিন কণ্ঠে বলে,
-আপনার বোন, আপনি আপা আপা করতে করতে তার আগে পিছে ঘুরুন। আমার আবার সেল্ফ রেস্পেক্ট একটু বেশিই। তার আদরের ভাইকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করিনি আমি অথবা ভালোবেসেও বিয়ে করিনি। বরং সে নিজেই তার ভাইয়ের জন্য আমার বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।
-অল্প বিষয় রেগে যাচ্ছ না তুমি?
-ইরান আমি বুঝতে পারছি না আপনি সত্যি এতো ভোলাভালা নাকি আমার সামনে নাটক করছেন? তনুসফা শেখ যতটা ভালো সাজে ততটা ভালো নয় সে। তার মনে কিছু একটা প্ল্যান চলছে।
-শাটআপ আনাবিয়া। তোমার জন্যই আমি এই বাসায় শিফট হয়েছি। আপা শুধু আমার ভালো চায় তাই একটু এইরকম করে। কিছুদিন যাক সেও ভালো হয়ে যাবে।
-না সে ভালো হবে না। আপনার বোনের মনে কোনো প্ল্যান চলছে বুঝলেন আমার কথা মিলিয়ে নিয়েন।
ইরান কিছু বললো না। ডিভাইনে যেয়ে বসে পরে। আনাবিয়া কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। পারছে না সে ইরানকে গিলে খেয়ে ফেলে!
-কাল সকালে আমরা ঐ বাসায় যাচ্ছি। জেসিকার বিয়ে সামনের ফ্রাইডে।
ইরানের এই বাক্যটা আনাবিয়ার মাথায় আগুন ধরানোর জন্য যথেষ্ট ছিল। কষ্টে নিজের রাগ দমিয়ে বলে,
-ইউ গো।
-তুমিও যাবে।
-নোপ্। আমি যাবো না মানে যাবো না। ফাঙ্কশনে কারো কাজিন হয়ে ঘুরার সখ আমার একদম নেই। তাই আমি কিছুদিনের জন্য রাশিয়া যাবো।
এমনেই তো অসুস্থ শরীর। জ্বরের কারণে শরীর সহ মাথা গরম হয়ে আছে। তার ওপর আনাবিয়ার এইরকম তেড়ামি। রেগে ধমকের স্বরে বলে,
-যাও। যেখানে মন চায় সেখানে চলে যাও। আমার ভালোবাসা তো তোমার নজরে পরে না। আর না কখন পরবে। কিছুদিন কেনো! একবারের জন্যেই চলে যাও। জাস্ট গো।
আনাবিয়ার রাগ হলো। সে ইরানের থেকেও আরো উঁচু স্বরে বলে,
-আমার সাথে উঁচু আওয়াজে কথা বলবেন না ইরান। আপনার ধমকে আমি চুপসে যাবো এটা ভাবা আপনার বোকামি। আর আমারও ইচ্ছে নেই আপনার সাথে থাকার। সারাজীবনের জন্য চলে গেলে বাঁচি আমি।
বড় বড় কদম ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে যায় আনাবিয়া। ইরান সেদিকে তাকিয়ে হাতের সামনে রাখা কাঁচের গ্লাস নিচে ছুঁড়ে মারে। রাগে তপ্ত নিঃশাস নিতে থাকে।
___________________
অন্ধকারে আচ্ছন্ন রুম। বাহিরে তুলুম বেগে ঝড়তুফান হচ্ছে। খোলা জালানার পর্দা বেসামাল ভাবে উড়ছে। মাথা নিচু করে হাটু মুড়ে মেঝেতে বসে আছে আনাবিয়া। চোখ দিয়ে অনবরত কয়েক ঘন্টা ধরে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। মুখে কোনো শব্দ নেই কিন্তু মনের ভিতরে হাহাকার চলছে। তার বাবা মা মারা যাওয়ার পর আজ প্রথম এতো অসহায় হয়ে কান্না করছে সে। কেনো কাঁদছে আনাবিয়া নিজেও বুঝতে পারছে না। বেহায়া অশ্রুর দল আজ নির্লজ্জ হয়ে গিয়েছে। ইরানের ব্যবহারে একটু বেশিই কষ্ট পেয়েছে আনাবিয়া। এই ইরানের ভালোবাসা! তাকে সারাজীবনের জন্য চলে যেতে বললো! হতে পারে রেগে বলেছে। কিন্তু বলেছে তো! সে তো এমনেও চলে যেতে চেয়েছিল তাহলে এখন যখন ইরানও মত দিয়েছে তার কেনো কষ্ট হচ্ছে? কেনো তার বুকে এক অন্যরকম ব্যাথা অনুভব হচ্ছে?
ভাবনার মাঝেই তীব্র আওয়াজ করে আনাবিয়ার সেলফোন বেজে উঠে। চোখ মুছে আনাবিয়া ফোন হাতে নেয়। গম্ভীর হয়ে কল রিসিভ করে।
-হ্যাঁ খালামুনি বলো?
-তুই কল দিয়েছিলি মাত্রই? আমি তোর আঙ্কেলকে খাবার দিচ্ছিলাম।
আনাবিয়া নাক টানে। লাগাতার চোখ মুছার পরও চোখ দিয়ে বেহায়া অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। নিজেকে কোনোরকম সামলে বলে
-খালামুনি আমার পাসপোর্ট আর বাকি কাগজ তোমাদের বাসায় না?
-হ্যাঁ। তুই কী কাঁদছিস মা? কিছু হয়েছে? কেউ কিছু বলেছে?
-কিছু হয়নি। আমি রাশিয়া চলে যাবো।
-হঠাৎ কেনো? ইরান কিছু বললো না কি?
-নাথিং খালামুনি।
-আমি কিন্তু বলতে বলছি আনা?
-সে বলেছে আমাকে সারাজীবনের জন্য চলে যেতে।
-ইরান বলেছে?
আনাবিয়া চুপ হয়ে যায়। কিছুক্ষন সময় নিয়ে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলে,
-ইয়েস।
-তো তুই কাঁদছিস কেনো?
-আই রিয়েলি ডোন্ট নো হোয়ায় আই এম ক্রায়িং! আমার কী হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছি না খালামুনি। অনেক কষ্ট লাগছে আমার।
-রাগে বসে কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়াই ভালো। এখন মুখ ধোতো কর। ডিনার করে একটা ঘুম দে। সকালে এখানে চলে আয়।
-ওকে।
-উল্টাপাল্টা কিছু চিন্তা করবি না। কুল।
-ওকে। গুড নাইট।
-হ্যাঁ।
ফোন কিনারে রাখে আনাবিয়া। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। উদাসীন মনে বিছানায় যেয়ে শুয়ে পরে। পাশ ফিরে জালানার দিকে তাকায়। বর্ষণের তেজ একটু বেশিই। একদম তার মতো। তাহলে সে কী কোনোভাবে ইরানের প্রেমে পরে গেলো! ইরানকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমের দেশে পারি জমায় আনাবিয়া।
ইরানের মাথা শান্ত হলে শাওয়ার নিতে চলে যায়। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে তৈয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বেলকনিতে যায়। এতো জোরে বৃষ্টি দেখে একটু চিন্তিত হয় সে। বেলকনির দরজা লাগিয়ে দেয়। যদি আজ রাগে আবারও আনাবিয়া ছাদে বৃষ্টিতে ভিজতে চলে যায়! জ্ঞানশূন্য হয়ে তৈয়ালে ছুঁড়ে ফেলে রুম থেকে বের হয় ইরান। দ্রুত পায়ে হাঁটতে হাঁটতে নিচে আসে। ড্রইংরুম সম্পূর্ণ ফাঁকা। রান্নাঘরে দুইজন ভৃত্য কাজ করছে। ইরান তাঁদের দেখে জিজ্ঞেস করে,
-আপনাদের ম্যাম কোথায়?
-স্যার ম্যাম নিচতলার একদম ডানপাশের রুমে বসে আছে। আমরা ডিনারের জন্য ডাকতে গিয়েছিলাম। সে আসেনি। অনেক কান্না করছিল সে।
ইরান নিজ ব্যবহারে অনুতপ্ত হয়। দৌড়ে আনাবিয়া যে রুমে আছে সেখানে চলে যায়। অন্ধকারে হাতিয়ে হাতিয়ে বিছানার স্মুখীন পৌঁছায়। জালানা দিয়ে আসা মৃদু আলোয় আনাবিয়ার ফোলা চোখ মুখ দেখতে পেলো ইরান। জালানার গ্লাস লাগিয়ে আনাবিয়ার মাথার পাশে বসে। কিছুক্ষন আনাবিয়ার কোমল মুখশ্রী পানে চোখ স্থির করে। ঘোরে চলে যায় সে। আনাবিয়ার মুখের দিকে ঝুঁকে ফুঁ দেয়। একটু নড়েচড়ে আবারও ঘুমিয়ে যায় আনাবিয়া। ইরানের দুই ঠোঁট প্রসারিত হয়। আনাবিয়ার ললাটে থেকে নরম ছোঁয়ায় চুলগুলো সরিয়ে দেয়। ঘুমের মধ্যেই বিরক্তিতে কপাল কুঁচকায় আনাবিয়া। ইরান আবারও হাসে। কিছু সময় আনাবিয়ার অধরের দিকে তাকিয়ে থাকে। বাহিরে রোমান্টিক আবহাওয়া। মনের ভিতরে উথা*লপা*থাল ঝড়। এক নিষিদ্ধ স্পৃহা জাগে ইরানের মনে। ঢোক গিলে গলা ভিজিয়ে নেয়। চোখ বন্ধ করে নিজের পুরুষালি অধর ছুঁয়ে দেয় আনাবিয়ার ললাটে। আগামীকাল এক মাস হবে বিয়ের! এটাই তার স্বামী হিসেবে প্রথম স্পর্শ। ইরানের মুখে প্রাপ্তির হাসি উঁকি পেতে রয়েছে।
আচমকা চোখ খুলে ফেলে আনাবিয়া। অন্ধকারে নিজের ঠিক মুখের ওপরে অন্য একজনের অস্তিত্ব অনুভব করতেই কঠোর হয়ে উঠে তার মুখ। শোয়া অবস্থায়ই এক পায়ের সাহায্যে লা*ত্থি দেয় ইরানের বুকে। হঠাৎ আক্রমণে বিছানার নিচে পরে যায় ইরান। মৃদু আতর্নাদ করে উঠে সে। ইরানের কণ্ঠস্বর শুনে আনাবিয়া ঝটপট বিছানা থেকে নেমে বাতি জ্বালিয়ে দেয়। ইরান ততক্ষনে কোমর ধরে বিছানায় উঠে বসে। আনাবিয়াকে দেখে বলে,
-মেয়ে তুমি সাংঘাতিক! আজ নিজেই নিজেকে বিধবা করে দিতে আরেকটু হলে! উফফ এমনেই অসুস্থ আমি। কোথায় সেবা করবে কী আরো ব্যাথা দিচ্ছ!
আনাবিয়া মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। টু শব্দও করল না। ইরান বউয়ের অভিমান দেখে মুচকি হাসে। তাড়া দিয়ে বলে,
-আই এম হাঅ্যাংরি ডিয়ার।
-ভৃত্যদের বলেন তারা খাবার বেড়ে দিবে।
-আমার কোমর ব্যাথা করছে।
-ভৃত্যদের বলেন তারা মালিশ করে দিবে।
ইরান ক্ষেপে গেলো। আনাবিয়া তার সাথে ঘাড়তেরামি করছে! বাঁকা হেসে বলে,
-আমার ঘুম আসছে।
-রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।
-তোমাকে লাগবে।
-ভৃত্যরা আছে।
-এইরকম রোমান্টিক ওয়েদারে রোমান্স করার জন্য একজন লাগবে।
-ভৃত্যরা আছে।
-আমার একটি বেবিগার্ল লাগবে।
-ভৃত্যরা,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,।
আনাবিয়া আর কথা শেষ করতে পারল না। এতক্ষন রেগে অন্যমনস্ক হয়ে উত্তর দিচ্ছিলো। ইরানের শেষের উক্তি শুনতেই থমকে যায় সে। অগ্নিদৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়। রাগে কটমট করে বলে,
-ছি ছি! আপনাকে আমি ভালো ভেবেছিলাম! শ্যাম অন ইউ।
-কেনো এতক্ষন না ভৃত্য ভৃত্য বলছিলে? তো এবারও বলো ভৃত্যরা আমাকে আমার বেবিগার্ল দিবে?
-শাটআপ রাব্বিশ ম্যান! আমি তো কাল বা পরশুদিন চলে যাচ্ছি তাই বলছিলাম ভৃত্যরা তো আছেই আপনার সব কাজ করতে।
-ওয়েল। হোয়ায় আর ইউ ক্রায়িং?
-জাস্ট লিভ মি অ্যালোন।
-আগে আমাকে খাইয়ে দেও তারপর তুমি অ্যালোন হইও।
আনাবিয়া ইরানের কথায় তাজ্জব বনে যায়। ইরান আনাবিয়ার রিঅ্যাকশন দেখে শব্দ করে হেসে দেয়। কোনোরকম হাসি থামিয়ে বলে,
-আই মিন খাবার খাইয়ে দেও। ক্ষুদা লেগেছে।
আনাবিয়া কিছু না বলেই মুখ ফুলিয়ে বাহিরে আসে। ইরানও পিছু পিছু আসে। ডায়নিং টেবিলে বসে পরে দুজন। ইরান ভৃত্যদের বলে ঘুমিয়ে পরতে। তাই তারা সকলে চলে যায়। আনাবিয়া বিরক্ত হয়ে স্যুপ বেড়ে দেয় ইরানকে। ইরান কিছু একটা ভেবে বলে,
-খাইয়ে দেও এবার।
-হোয়াট? হোয়াট আর ইউ সেয়িং?
-এভাবে বড় বড় চোখ না দেখিয়ে ভদ্র ওয়াইফের মতো আমাকে নিজের একমাত্র হাসব্যান্ডকে খাইয়ে দেও।
-পারব না।
-ওকে। নো প্রবলেম। আমি ভৃত্যদের বলছি।
-কী বলবেন?
-নিজের হাসব্যান্ড ভেবে একটু যত্ন করে খাইয়ে দিতে।
আনাবিয়ার সহসা কী হলো দ্রুত করে ইরানের পাশের চেয়ারে বসে পরে। স্যুপ এর পেঁয়ালে নিজ হাতে নিয়ে সযত্নে খাইয়ে দিতে থাকে ইরানকে। ইরান খাচ্ছে আর আনাবিয়াকে দেখছে। আনাবিয়ার দৃষ্টি নিচের দিকে। ভুলেও একবার তাকাচ্ছে না ইরানের পানে।
-আমার দিকে তাকালে জেল হবে না ডিয়ার।
আনাবিয়া চুপ। ইরানের খাওয়া শেষ হলে সে জোর করে আনাবিয়াকেও খাইয়ে দেয়। খাওয়া দাওয়ার পর্ব ঠুকিয়ে আনাবিয়া কিছু না বলে পুনরায় সেই রুমে যেতে নেয়। ইরান তৎক্ষণাৎ আনাবিয়াকে কোলে তুলে নেয়। ভয় পেয়ে ইরানের কাঁধ চেপে ধরে আনাবিয়া। কঠিন কণ্ঠে বলে,
-নামা আমাকে। দ্রুত নামান ইরান।
ইরান সিঁড়ি দিয়ে ওপরে যেতে যেতে বলে,
-একবার ইরান তো একবার আপনি! হোয়ায়? শুধু ইরানই বলবে। তোমার মুখ থেকে ইরান নামটা শুনতে আমার কিন্তু বেশ লাগে।
-মাথা ফাঁটিয়ে দেবো বলে দিলাম। দ্রুত নামান।
-আমার এখন ঘুমের প্রয়োজন।
-আমাকে নামিয়ে আপনি ঘুমান।
-তোমাকে লাগবে আমার।
রুমে এসে আনাবিয়াকে বিছানায় শুয়ে দেয়। অতিদ্রুত দরজা লাগিয়ে বাতি নিভিয়ে ইরান বিছানায় উঠে আনাবিয়াকে আষ্টেপিষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। আনাবিয়া বিমূঢ় ইরানের কান্ডে।
-এভাবে ধরেছেন কেনো আমায়? মারার প্ল্যান করছেন জানো আরেকটা বিয়ে করতে পারেন?
-একজন দিয়েই আমার জীবন ছন্নছাড়া আরেকজন চাই না।
আনাবিয়া ছাড়া পাওয়ার জন্য ছোটাছুটি শুরু করেছে। ইরান আনাবিয়াকে সামলাতে না পেরে অন্ধকারে একটা অঘটন করে দেয়। শুধু অঘটন না মহাভারত অশুদ্ধ যেটাকে বলে! আনাবিয়াও একদম শান্ত। জানো মুহূর্তেই মূর্তি হয়ে গিয়েছে সে। মাত্রই ইরান আনাবিয়াকে শান্ত করতে নিজের অধর দিয়ে চেপে ধরে আনাবিয়ার নরম অধরজোড়া। এক মিনিট হওয়ার পূর্বেই ইরান ছেড়ে দেয় আনাবিয়াকে।
কিছুক্ষন আগের ঘটনা মনে পরতেই কিড়মিড়ে উঠে আনাবিয়ার সর্বাঙ্গ। জীবনের প্রথম চুম্বন তার! লি*পকি*স একটু বেশিই ঘৃণা করে আনাবিয়া। কেনো করে এটা তার অজানা। এখনও ওয়া*ক ওয়া*ক করতে করতে ইরানকে ছেড়ে বিছানায় উঠে বসে। ইরান তো নিজেই স্তব্ধ নিজের কান্ডে। তার ওপর আনাবিয়ার হাবভাব দেখে ভীত হয়ে যায় সে। মুখ ফুটে আনাবিয়াকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আনাবিয়া ব*মি করে তলিয়ে দেয় ইরানকে। শুধু একবার না। পর পর তিনবার করে জ্ঞান হারিয়ে ইরানের ওপরেই ঢলে পরে আনাবিয়া।
>>>>চলবে।
(এই পর্ব আমি লেখিনি। ভুতে এসে লেখে দিয়ে গিয়েছে। এতো রো*মা*ন্টিক মেহেক লিখতে পারে না। 🙃🙂)