অশরীরী?নাকি সাইকো?পার্ট:০২( শেষ পর্ব)
লেখক- Riaz Hossain imran
তখনি কিছু পুলিশ এসে আমার কলার চেপে ধরেন। গালে দু একটা থাপ্পড় মেরে সোজা বাসার সামনে এনে নামিয়ে দেয়।হুমকিও দিয়ে গেছে,আর যেনো না বের হই। এরাও পারে বটে। আমি বের না হয়ে যাবো কোথায়। এর রহস্য যে আমাকে জানতেই হবে। যদি আমিই না জানি,তবে আমার পাঠকরা কিভাবে জানবে। আবার বেরিয়ে পড়লাম।আমাকে জানতেই হবে,কে সে? অশরীরী? নাকি সাইকো?।
খানিকটা পথ পার করে চলে আসলাম একটা চায়ের দোকানে। সব দোকান বন্ধ।কিন্তু এই বৃদ্ধ লোকটির দোকান খোলা দেখে বেশ অবাক হলাম। ধীর পায়ে হেটে উনার কাছে গিয়ে বললাম,
– কি চাচা, প্রানের ভয় নেই?
– না বাবা, বৃদ্ধকালে কিসের ভয়।
– রঙের দুনিয়া ছাড়ার খুব ইচ্ছে?
– তা তো অনেক আগেই মরে গেছে বাবা।
– কেনো?
– তোমাকে বলে কি হবে।
– আরে বলুন, আপনার ছেলে মনে করে বলতে পারেন।
– তবে বলবো?
– হুম বলুন।
– আমার একটা মেয়ে আছে। ওর নাম প্রিয়া।
– বাহহ,ভালো নাম।তারপর?
– পড়ালেখায় খুব চঞ্চল ছিলো সে।আমাকে খুব ভালোবাসে। আমি বাসায় না ফেরা অব্দি তো খাবেই না সে।ওর মা মারা যায়,তার জন্মের তিন বছর পর। ছোট বেলা থেকে তাকে আমি মানুষ করে তুললেও,ওর জ্ঞান হবার পর থেকে, আমাকেই সে দেখাশুনা করে। ওর একটা অভ্যাস ছিলো, যদি কোনো কারণে আমার মন খারাপ থাকতো,তো আমার গাল টেনে সে বলতো,” আমার বুইড়া কলিজার আব্বু “। তখনি আমার রাগ ভেঙে যেতো।
– হাহাহা, খুব ভাল মেয়ে তো আপনার? আপনার কপাল খুব ভাল।
– হুম,কিন্তু তা আর আমার কপালে সইতে পারেনি। গত ৪ মাস আগে সে মারা যায়।
– What..? ( কথাটা শুনে মুখের মুচকি হাসিটা হারিয়ে ফেললাম)
– জ্বী, ও নাকি একটা ছেলেকে পছন্দ করতো।অথচ আমি জানতাম না। ওর মৃত্যুর পর সব কিছু শুনলাম।
– কিন্তু মৃত্যু হলো কিভাবে
– কিছু নরপশু আমার মেয়েটাকে.. ( আর কথা বলতে পারেনি উনি। চোখে হাত দিয়ে কান্না করতে থাকে।)
– জ্বী চাচা বুঝেছি। খুব খারাপ হয়েছে আপনার মেয়ের সাথে। পুলিশ করেনি কিছু?
– হুম করেছে। ১ মাস জেল খেটে আবার সবাই মুক্ত হয়ে যায়। কি আর করবো বলো? বাসায় থাকলে মেয়েটিকে বড্ড অনুভব করি। তাই দোকান খুলে বসে থাকি সারাদিন।
– মন খারাপ করবেন না। নিয়তি হয়তো এইটাই ছিলো। আচ্ছা গেলাম চাচা। পরে কথা হবে।
– ঠিক আছে।
সমাজটা আজ শেষের দিকে। ভালোবাসা নামক শব্দটা তার অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলছে ধীরে ধীরে ।তবুও শুদ্ধ কিছু ভালোবাসার কারণে হয়তো,টিকে আছে সমাজটা। যাইহোক, আমি চায়ের দোকানটা ত্যাগ করে কিছুদূর চলে এলাম। শন করে চোখের সামনে দিয়ে কিছু একটা গেছে মনে হলো। হুট করেই দাঁড়িয়ে যাই আমি। কিছু বুঝার আগেই কি ঘটলো কে জানে। তবে সন্দেহ হলো সেই সাইকো কে নিয়ে। সে গেলো নাতো? তবে গেলো কোথায়, এতো গতিতে গেলো বা কিভাবে। মাথাটা ঝিম ধরে যাচ্ছে। এদিকে সারাটা দিন বাহিরে হেটে বেড়ালাম। সে শন করে যাওয়া ঘটনা ছাড়া কিছুই দেখিনি। বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নেমে গেলো।খাবারেরও কোনো খোজ পাইনি। পাবার কথাও না,সব তো বন্ধ।মনে হচ্ছে,শহরটায় আমি একাই আছি।
সন্ধ্যা ৭ টায় ফিরে এলাম বাসায়। রহস্য তো বের করতে পারিনি। তবে কি, ক্লান্ত শরীরটা আগে ঠিক করা দরকার। কিচিং রুমে মুড়ি ডিব্বাটাও খালি। না খেয়ে থাকার অভ্যাস অনেক আগ থেকেই আছে, তাই অতটা বোরিং ফীল করার কিছুই নেই।
তখনি কানে একটা শব্দ আসলো। চিৎকার এর শব্দ। কোনো মেয়ে যখন চেঁচিয়ে চিৎকার করে,তখন এভাবেই আওয়াজ হয়।তবে চিৎকার দিচ্ছে কোথা থেকে। বারান্দায় এসে দেখলাম রাস্তা ফাকা।কিন্তু চিৎকার তো শুনছি, বুঝতে পারছিনা আওয়াজটা আসছে কোথা থেকে। বারান্দা থেকে আবার দৌড়ে এসে দরজা খুললাম, মনে পড়লো ক্যামেরার কথা।একটা মিনি ক্যামেরা আছে আমার। যদি কিছু রেকর্ড করতে পারি,তবে তো অনেক কিছু হবে।আবার এসে ক্যামেরাটা নিয়ে, নিজের শার্টের বোতামে লাগালাম,এরপর চলে আসি দরজার বাহিরে। ৩য় তলা থেকে নামতে বেশি লেট হবেনা। দেখা যাক,কি হচ্ছে নিছে। অনেক স্পিডে নেমে এলাম নিছে।ঘড়িতে সময় ৮ টার কাছাকাছি। তবে মনে হচ্ছে রাত ৩ টা বাজতেছে। চারপাশ যেনো শুনশান হয়ে গেলো।এ নিস্তব্ধতার মাঝেই তেড়ে আসছে সে মেয়ের চিৎকার। নিছে এসে ছুটাছুটি করছি এদিক সেদিক। কয়েকটা গলি পার করেই ব্রেক কসলাম। দুপাশে খাড়া হয়ে আছে বিশাল বড় বড় বিল্ডিং। একটা ১০০ পাওয়ারি লাইটের আলোয় শুধু গলির পথ দেখা যাচ্ছে। এদিকে আমি দাঁড়িয়ে আছি চার গলির মাঝখানে। আর আমার থেকে ১৫-২০ হাত সামনে দাঁড়িয়ে আছে কালো শার্ট,প্যান্ট,জ্যাকেট, চশমা পড়া সে লোক। এসেছি রহস্য খুঁজতে, কিন্তু মৃত্যুর ভয় পাচ্ছি এখন। লোকটির এক হাতে তলোয়ার, অন্য হাতে একটা মেয়ের মন্ডু( মাথার চুল ধরে আছে)।
আমার দিকে তাকিয়ে উনি একটা হাসি দিলো। খুবই ভয়ংকর সে হাসি। উনার দাতগুলো রক্তে লাল হয়ে আছে।বুকের ধুকধুকানি উঠে যায় আমার। উপরওয়ালা রক্ষা করবে ভেবে মনে সাহস আনলাম।আগে শার্টের বোতামে থাকা ক্যামেরাটা অন করি।এরপর ভয়ের দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম।
– ক….ক..কে আপনি। এ..এ এতো গুলা মা..মানুষ মারছেন কেক.. কেক.. কেনো?
– পবিত্রতা রক্ষা করা যাদের দায়িত্ব, তারা করছে তার অপব্যবহার। এ তাদের শাস্তি। ( প্রচন্ড মোটা উনার গলার স্বর।ভয়ংকর কন্ঠে উত্তরটা দেন উনি)
– কেনো? কিক.. কি করেছে এরা?
– পরকীয়া
– এর জন্য শাস্তি মৃত্যু?
আমার আর কোনো কথার জবাব দেয়নি সে। চোখের সামনেই মিশে যায় হাওয়ায়। এমন ঘটনা কখনো দেখিনি।একটা মানুষ চোখের সামনে অদৃশ্য হলো কিভাবে। ধ্যাত..আমিও বা কি ভাবছি,সে তো মানুষ নয়,হতেই পারে।
ফিরে এলাম বাসায়। ল্যাপটপে ক্যামেরাটা কানেক্ট করে ভিডিওটা অন করলাম।সব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।কিন্তু উনার অদৃশ্য হওয়ার দৃশ্যটা রেকর্ড হয়নি।এর আগেই ভিডিও ঝিরঝির করতে লাগলো। যাইহোক, রহস্যটা এখন বুঝলাম।পরকীয়া করা ছেলে মেয়েদের উপরেই এই সাইকো,না না,সাইকো না,অশরীরী হবে।কিন্তু অশরীরীকে ক্যামেরা বন্ধি করা যায়? সে যাইহোক, তাতে কি,তিনি এইটাই বুঝাচ্ছেন, পরকীয়া করা যাবেনা।মানছি সে কোনো অলৌকিক শক্তির মালিক।কিন্তু উনার কাজটা তো সঠিক। সেইজন্য হয়তো সব লাশের কাছে পাওয়া যায় কনডম।আর তিনি এইটাই সবাইকে বুঝাতে চাইতেন যে, তাদের মৃত্যু, তাদেরি জন্য হয়েছে। অন্যায়কারী ওরা।
তবে ভাবছি অন্য কথা।এভাবে কতোদিন? মানুষ তো সতর্ক হতে হবে।উপায় এখন একটাই,ভিডিওটা আপলোড করা।
যে কথা সেই কাজ।আপলোড দিয়ে দিছি। ২ ঘন্টা পর দেখলাম ১৬৩৮৪৫ ভিউয়ার, ৯৮৯৭৬ টা শেয়ার।রাতের ভিতর ভাইরাল হয়ে গেলো ভিডিও। তখনি দরজায় কারো নক দেওয়ার শব্দ।হার্টবিট বেড়ে যায় আমার।ভিডিও ছাড়ার অপরাধে সে আমার মাথা ফেলবে নাতো….?
নাহহ,দরজা তো খোলা যাবেনা।কিন্তু সে লোক না হয়ে যদি অন্য কেও হয় ভেবে দরজার সামনে যাই। ছিদ্র দিয়ে আগে চেক করে নেওয়া দরকার। যেই আমি দরজার ছিদ্রে চোখ লাগালাম,দেখলাম দরজার ওপাশে অশরীরী, না সাইকো,আরেহ না অশরীরী, হুরর সে যাইহোক, তিনি দাঁড়িয়ে আছে।
ধুপ করে নিজে নিজে পড়ে গেলাম ফ্লোরে।
হামাগুড়ি দিয়ে উল্টো চলে আসি বারান্দায়।চিৎকার দিতে মন চাচ্ছে,তবে দিয়েও বা কি হবে।কেও তো দরজাটা পর্যন্ত খোলবেনা। বারান্দায় এসে নিজে নিজে কান্না করছি,আর ভাবছি,আমি তো পরকীয়া করিনি।আমার কাছে এলো কেন।তখনি পাশ থেকে কেও বলল,
– ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ( কথাটা শুনেই বাম দিকে তাকালাম।একি! লোকটা এখানে আসলো কিভাবে)
– আমি কিছু করিনি ভাই।জাস্ট সবাইকে সতর্ক করার জন্য ভিডিও আপলোড দিছি।সত্যিই আমার কোনো দোষ নেই।
– ধন্যবাদ। তোমার জন্য আজ থেকে সবাই সতর্ক হবে।কেও আর পরকীয়ায় লিপ্ত হবেনা। মিথিলাকে শেষ করেই আমি চলে যাবো। আর পাবেনা আমাকে।
– মিথিলা কি করেছে?( উনি কিছু বলার আগেই আবার বললাম?)
– ওও বুঝেছি বুঝেছি।ওকে, তারমানে ওর পরে আর কেও খুন হবেনা।
– হুম।
– আচ্ছা? একটা প্রশ্ন করি?
– করো?
– আপনি সাইকো? নাকি অশরীরী,?
– কেনো? জেনে কি করবে।
– আমার পাঠিকা আর পাঠকদের ঘুম হারাম হয়ে যাবে তাহলে।বলুন না।
– তুমি যেটা নাম দিবে আমার,সেটাই। তবে এইটাই মনে রাখবা,অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কেও না কেও এসে যায়। কেও সাইকো,কেও অশরীরী, আবার কেও মানুষ হয়ে।
– হুম বুঝেছি।
– আমিও গেলাম। তবে আমি আবার ফিরে আসবো সেদিন,যেদিন আবার সবাই লিপ্ত হবে পরকীয়ায়।
বলেই উনি চলে যায়। মিথিলার ভিডু পরে দেখা যাবে। এতক্ষণ যেটা নতুন ভিডিও করলাম,সেটা আপলোড করা লাগবে আগে ( ক্যামেরা অন ছিলো)
ক্যাপশনে উনার নাম দুইটাই হবে, অশরীরী সাইকো।
কিন্তু সে কি আর আসবে? এ অশরীরী সাইকো কি আবার একদিন শুরু করবে? তার খুনাখুনি? হয়তোবা। বলে তো গেছেই, আবার পরকীয়া শুরু হলে আসবে। জানিনা,ততদিন বেচে থাকতে পারবো কিনা।যদি নাও থাকি,তবে পরের ভিডিও করবে আমার ছেলে। যদি কপালে বউ জুটে আরকি।
সমাপ্ত