হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(২৬) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(২৬)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(৬৭)
তমিজ তালুকদার ও তাহির, তালুকদার ভিলার মূল দরজার সামনে এসে দাঁড়াতেই তমিজ তালুকদারের স্ত্রী রেবেকা তালুকদার হাসিমুখে তাহিরের সামনে এসে দাঁড়ায়। অতঃপর রেবেকা হাত দিয়ে ইশারা করতেই ২জন কম বয়সী কাজের মেয়ে লাল চাদরে ঢাকা দুইটা ট্রে হাতে নিয়ে রেবেকার হাতের দুইপাশে এসে মাথানিচু করে দাড়ায়। রেবেকা দুইহাত দিয়া একসাথে ট্রে দু’টোর উপর থেকে লাল কাপড়টি সরাতেই সেখানে ১হাজার টাকার নতুন নোটের অনেকগুলো বা*ন্ডি*ল দেখা যায়। রেবেকা দুইহাতে দুইটা টাকার বান্ডিল তুলে তাহিরের সামনে ঘুরাতে ঘুরাতে বললেন….

—“আমার ছেলের উপর থেকে সব শ*ত্রু*র ন*জ*র কেটে যাক। আয় বাবু এবার ভিতরে আয়।”

তাহির গম্ভীর মুখশ্রী নিয়েই তালুকদার ভিলার ভিতরে প্রবেশ করে সেখানে একমুহূর্ত না দাঁড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হয়। রেবেকা কাজের মেয়ে দু’টিকে উদ্দেশ্য করে বললেন…

—“এতো বছর পর আমার একমাত্র ছেলের বাড়িতে ফেরার খুশিতে এই টাকা গুলো পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানো গরিব-মিসকিনদের দান করার ব্যবস্থা করো তোমরা।”

রেবেকা ড্রয়িংরুমে এসে দাঁড়াতেই তমিজকে শান্ত স্বরে বললেন….
—“কি দরকার ছিলো তোমার ছেলের রুমের ডেকোরেশন পরিবর্তন করার! বাড়িতে ঢোকামাত্র সরাসরি নিজের রুমে চলে গিয়েছে তাহির। সম্পূর্ণ পরিবেশ ভিষণ শান্ত হয়ে আছে মানে একটু পর বড় কোনো তা*ন্ড*ব শুরু হবে এটা তারই আভাস দিচ্ছে।”

রেবেকা সোফায় বসে সোফার পাশে রাখা সাইড টেবিলের উপর থেকে পানের বাক্সটা হাতে নিয়ে বাক্সটি খুলে একটা পান তৈরি করতে করতে বললেন….

—“যেই মেয়ের জন্য পাঁচ পাঁচটি বছর আমার ছেলে আমার থেকে দূরে থেকেছে। জেলখানায় অতি ক*ষ্টে*র সাথে প্রতিটি সেকেন্ড পাড় করেছে সেই মেয়ের শতশত ছবি দিয়ে আমার ছেলের রুম সাজানো দেখলে কোন মায়ের তা সহ্য হবে বলো! আমার মনে হয় তাহিরের এখন ঐ মেয়ের কথা মনে নেই। তাই ঐ মেয়ের কোনো চিহ্ন আমি ওর আশেপাশে রাখি নি।”

—“তোমার মনে হচ্ছে তাহির ওকে ভুলে গিয়েছে! তোমাকে অবাক করে দেওয়ার মতো একটা কথা বলি। জেলখানা থেকে বের হওয়া মাত্র তোমার ছেলে আমাকে বলেছে তার জানপাখিকে দেখার জন্য তার মন ভিষণ ব্যকুল হয়ে আছে। আর কালকে তাহির যাবে ঐ মেয়ের সাথে দেখা করতে ওর বাসায় সেটাও বলেছে।”

তমিজ আর রেবেকার কথপোকথনের মাঝেই দোতলায় তাহিরের রুম থেকে ভাং*চু*র করার আওয়াজ ভে*সে আসতে শুরু হয়। তমিজ আর রেবেকা সোফা ছেড়ে উঠে দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে যেতে শুরু করে। তমিজ বললেন….

—“যেটার ভ*য় পেয়েছিলাম সেটাই হলো। এখন এই পা*গ*ল ছেলেকে সামলে রাখাটাই দু*ষ্ক*র হয়ে দাঁড়াবে।”

(৬৮)
সন্ধ্যার কেবিনের বাহিরে রাখা চেয়ারে বসে আছে তরুনিমা। সেইসময় কুশল সেখানে এসে তরুর পাশে বসে শান্ত স্বরে বললো…

—“আগামীকাল সকালে সন্ধ্যাকে রিলিজ দিয়ে দিবে। তোমাদের বাসায় রেখে বিকালে আমাকে গ্রামে যেতে হবে।”

তরু কুশলের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো…
—“গ্রামে যেতে হবে কেনো?”

—“সেদিন যেই কাজের জন্য গ্রামে যাবো ঠিক করেছিলাম মাঝখানে এসব স*ম*স্যা হওয়ায় সেই কাজটা তো করা হলো না। তাই কাল গ্রামে যেতে হবে। কয়েকদিন গ্রামে থেকে জমে থাকা কাজগুলো শেষ করে তারপর শহরে ব্যক করবো।”

—“আমিও আপনার সাথে গ্রামে যেতে চাই।”

—“তুমি আমার সাথে গেলে সন্ধ্যার খেয়াল কে রাখবে! ও তো এখনও পুরোপুরি ভাবে সুস্থ হয়ে উঠে নি।”

—“তাহলে সন্ধ্যাকেও আমাদের সাথে গ্রামে নিয়ে চলুন। গ্রামের মনোমুগ্ধকর পরিবেশের মাঝে কয়েকটা দিন কাটালে সন্ধ্যার ও পুরোপুরি ভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে বেশি সময় লাগবে না।”

কুশল কিছুসময় নিরব থাকার পর বললো….
—“ঠিক আছে, যেও তাহলে তোমরা আমার সাথে গ্রামে।”

(৬৯)
তমিজ আর রেবেকা তাহিরের রুমের মূল দরজার সামনে এসে দাড়াতেই দেখলেন তাহির রুমে থাকা সব আসবাবপত্র ভে*ঙে*চু*ড়ে রুমের দূ*রা*বস্থা করে ফেলেছে। তমিজের দৃষ্টি তাহিরের বাম হাতের উপর পড়লে দেখতে পায় একটা বড় ধাঁ*রা*লো কাঁ’চ মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে রাখায় তাহিরের হাত কে*টে র*ক্ত ঝরঝর করে মেঝেতে পড়ছে। তাহির ওর বাবা-মাকে দেখামাত্র রাগ নিয়ে উচ্চস্বরে বললো….

—“আমার রুমের ডেকোরেশন পরিবর্তন করার এতো বড় সাহস কে করেছে!”

তাহিরের উচ্চস্বরে বলা কথাটুকু শোনামাত্র ভ*য়ে কেঁ*পে উঠেন তমিজ ও রেবেকা দু’জনেই। তমিজ শুকনো ঢো*ক গিলে বললেন….

—“মাথা ঠান্ডা কর বেটা। আসলে অনেক বছর ধরে তোর রুমটা বন্ধ ছিলো তাই সার্ভেন্টরা রুম পরিষ্কার করতে গিয়ে হয়তো পুরোনো সব জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলেছে।”

তাহির ওর বাবা-মায়ের সামনে এসে দাঁড়িয়ে তাদের উপর অ*গ্নী*দৃষ্টি স্থির করে রাগে হি*স*হি*সি*য়ে বললো….
—“১ঘন্টা সময় দিলাম। এর ভিতর আমার রুমের ডিকোরেশন আগে যেমন ছিলো ঠিক তেমনই যেনো করা হয়। আমার জানপাখির প্রতিটা ছবি যেখানে যেভাবে টাঙানো ছিলো সেখানে সেভাবেই যেনো রাখা হয়। নয়তো আমি পুরো তালুকদার ভিলায় আ*গু*ন লাগিয়ে দিবো।”

এই বলে তাহির ওর হাতে থাকা কাঁচের টুকরোটি দেওয়ালের উপর ছুঁ*ড়ে মে*রে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
রেবেরা তাহিরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে হ*তা*শা*র দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মাত্র। অতঃপর তমিজ ৭-৮জন সার্ভেন্টকে দ্রুত তাহিরের রুম পরিষ্কার করে আগের মতো ডেকোরেশন করে দিতে বললেন।

(৭০)
রূপগঞ্জ গ্রামে খান ভিলায় ড্রয়িংরুমের সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে বড় খানের ছোট ছেলে মুবিন খান। মুবিন খানের অন্যপাশে রাখা সোফায় বসে আছেন রূপগঞ্জ গ্রামের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন। মুবিন খানের আশেপাশে ব*ন্দু*ক হাতে দাঁড়িয়ে আছেন গাড় বেগুনী পোশাকধারী ৫-৭ জন গার্ডস। মুবিন খান আমজাদের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো…

—“কি ব্যপার চেয়ারম্যান হঠাৎ আমার বাসায় কি মনে করে আসলেন?”

আমজাদ হোসেন বললেন….
—“ছোট খান…আপনার কাছে একটা আর্জি নিয়ে আসছি।”

—“আর্জি! কি ধরণের আর্জি বলুন শুনি।”

—“মেম্বার এর ছেলে যে গত সপ্তাহে গ্রামের এক চাষীর মেয়েকে ধ্ব*র্ষ*ণ করে হ/ত্যা করার চেষ্টা করেছিলো তার বিচার বৈঠকখানা আগামী পড়শু বসাবেন বলেছিলেন কুশল চৌধুরী। আমি চাই এই বিচার বৈঠকখানা যেকোনো ভাবে ভে*স্তে দিতে। আর আমার এই আর্জি আপনি ব্যতিত কেও পূরণ করতে পারবে না।”

—“মেম্বার এর ছেলের বিচার বৈঠকখানা ভে*স্তে দিয়া আপনার লাভ কি চেয়ারম্যান?”

—“কারণ মেম্বার এর ছেলে একা ঐ চাষীর মেয়েকে ধ্ব*র্ষ*ণ করে নি। মেম্বার এর ছেলের সাথে আমার একমাত্র ছেলে আরিফ ও ছিলো। পড়শু যখন বিচার বৈঠকখানা বসবো তখন তো মেম্বার এর ছেলে নিজের দো*ষে*র বোঝা হালকা করতে আমার ছেলের নামও তুলবো। তখন আমার ছেলেরেও তো ছাইড়া কথা বলবে না কুশল চৌধুরী। পুরো গ্রামের সামনে আমার মান-সম্মান ধু/লি*সাৎ হইয়া যাবে। এমনকি আমি আমার চেয়ারম্যান এর ক্ষমতাও হা*রায় ফেলতে পারি। যা আমি কখনও হা*রাতে চাই না ছোট খান।”

আমজাদ হোসেনের কথাগুলো শোনার পর স্বশব্দে হেসে উঠেন মুবিন খান। পরক্ষণেই হাসি থামিলে বললেন….

—“এমন ছেলেকে তো বাহবা জানানো উচিত চেয়ারম্যান। দিনের শুরুতে ছেলে বনে-বা*দা*ড়ে ঘুরে গরীব মেয়েদের ধ্ব*র্ষ*ণ করে মজা নিবে আর দিনশেষে ছেলের বাবা ছেলেরে শা*স্তি*র হাত থেকে বাঁচানোর আর্জি নিয়ে আমার দোরগোড়ায় হাজির হবে।”

—“আমার ছেলের বয়স কম ছোট খান। ভু*লে একটা কাজ করে ফেলেছে। আমার সম্মান আর আমার ছেলেকে শা*স্তি*র হাত থেকে বাঁচানোর একটা ব্যবস্থা করুন দয়াকরে। এর বদলে আপনি যা চাইবেন আমি তাই দিতে প্রস্তুত আছি।”

মুবিন খান বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বাঁকা হেসে বললেন….
—“বিচার করার জন্য বিচার বৈঠকখানায় যদি কুশল চৌধুরী স্বয়ং উপস্থিত না থাকে তাহলে সেই বিচার কি হবে চেয়ারম্যান?”

চেয়ারম্যান মুবিন খানের কথার ভাঁজ বুঝতে পেরে বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন….
—“জ্বি না, ছোট খান। কুশল চৌধুরীর বিচার বৈঠকখানায় উপস্থিত না হওয়ার ব্যবস্থা আপনি করলে সেই বিচার বৈঠকখানা ভে*স্তে দেওয়া আমার বাঁ হাতের কাজ হবে।”

—“তাহলে আপনি এবার নিশ্চিন্ত মন নিয়ে নিজের বাড়িতে চলে যান। যথাসময়ে আপনার আর্জি জনিত কাজও সম্পন্ন হবে।”

অতঃপর চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খান ভিলা থেকে বেড়িয়ে যায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ………..:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here