#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(২০)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)
(৫০)
ধীরে ধীরে রাত আরো গভীর হতে শুরু করেছে। সন্ধ্যা নিলাদ্রের আসার অপেক্ষার প্রহর গুণছে। সন্ধ্যা বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সময় দ্রুত পার করার জন্য পায়চারী করছে। পরক্ষণেই রাতের আকাশজুড়ে বিরাজ করা কালো মেঘের দলাগুলো একে-অপরের সাথে ঘ*র্ষ*ণ খেয়ে গ*র্জ*ন তুলতে শুরু করেছে। বাতাসের মাত্রাও ধীরে ধীরে বাড়ছে। ছাদের উপর সন্ধ্যার বানানো লাভ সেইপ এর মোমবাতি গুলোর মাঝে কিছু মোমবাতি নিভেও গিয়েছে ইতিমধ্যে। পরক্ষণেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামতে শুরু করে। সন্ধ্যা একঠায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টির পানিতে মোমবাতি গুলোকে নিভে যেতে দেখছে। নিলাদ্রের না আসার রাগে, অভিমানে নিজের সব সাজ দু’হাত দিয়ে মুছতে মুছতে বললো…..
—“আমার অপেক্ষার এমন প্রতিদান দিলেন তো আপনি! আজকের পর যদি আরও হাজারবার আমার কাছে নিজের ভালোবাসার দাবি নিয়ে আসেন তবুও আমি আপনাকে ভালোবাসবো না।”
সন্ধ্যার মুছে ফেলা সব সাজ বৃষ্টি পানিতে ধুয়ে গিয়েছি ইতিমধ্যে। অতঃপর সন্ধ্যা ছাদের দরজা খুলে দ্রুত পায়ে নিচে নিজের রুমে চলে যায়।
(৫১)
শহরের একটি বড় ক্লিনিক এর সামনে এসে গাড়ি থামায় কুশল। কুশলের কল পেয়ে সাদিক ও বেশ কয়েকজন গার্ডদের নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়। দ্রুততার সাথে গাড়ি থেকে নেমে ক্লিনিকের ভিতরে এসে রিসেপশনের কাছে এসে দাঁড়িয়ে সেখানে থাকা মহিলাটিকে বললো….
—“আমার ভাইয়ের এ*ক্সি*ডে*ন্ট হয়েছে। খুব খা*রাপ অবস্থা ওর। দ্রুত একটা স্ট্রেচারে করে ওকে ভিতরে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।”
মহিলাটি শান্ত স্বরে বললেন…
—“স্যার, এ*ক্সি*ডে*ন্ট এর পেশেন্টদের এভাবে সরাসরি
আমাদের ক্লিনিকে ভর্তি করাতে পারি না। প্রথমত পুলিশকে ইনফর্ম করতে হবে। তারা পুরো বিষয়টাকে তদন্ত করে দেখবে তারপর আমরা পেশেন্টকে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা ব্যবস্থা শুরু করা হবে।”
মহিলাটির মুখে এমন কথা শুনে কুশলের রাগ যেনো এবার মাথায় চড়ে বসেছে। কুশল ওর পকেট থেকে পি*স্ত*ল*টি বের করে মহিলাটির দিকে ধরে। সেইমূহূর্তে সাদিক গার্ডদের নিয়ে ক্লিনিকের ভিতর প্রবেশ করে সেখানে বসারত সকলের দিকে ব*ন্দু*ক ধরে। মহিলাটি সহ উপস্থিত সবাই ইতিমধ্যে ভয়ে চু*প*সে গিয়েছে যেনো। কুশল রাগ নিয়ে উচ্চস্বরে বললো….
—“আমার ভাই বাহিরে জীবন-মৃ*ত্যু*র সাথে ল*ড়াই করছে আর আপনারা আমাকে এখানে পুলিশি ফর্মালিটি পালন করতে বলছেন?এক্ষুণি আমার ভাইকে ভর্তি করিয়ে ওর চিকিৎসা শুরু করার ব্যবস্থা করুন নয়তো এই ক্লিনিক থেকে একটা মানুষকে আমি তার জীবন নিয়ে বের হতে দিবো না।”
মহিলাটি তৎক্ষনাৎ দু’জন পুরুষ নার্সকে ডেকে স্ট্রেচার নিয়ে বাহির থেকে নিলাদ্রকে আনার ব্যবস্থা করতে বলে। নার্স দু’জন দ্রুত স্ট্রেচার নিয়ে বাহিরে এসে নিলাদ্রকে স্ট্রেচারে করে ক্লিনিকের ভিতরে নিয়ে আসে। তরুনিমাও তাদের পিছন পিছন ভিতরে এসে দাঁড়ায়। নিলাদ্রের মুখের ক*রু*ণ অবস্থা দেখা মাত্র একজন মহিলা তার বাচ্চার চোখ হাত দিয়ে ঢেকে দেয়। যা কুশলের চোখ এড়ায় না। কুশল নিজের শার্ট খুলে নিলাদ্রের মুখ ঢেকে দেয়। কুশল মহিলাটিকে বললো…
—“ডাক্তার কোথায়?”
মহিলাটি ভী*ত কন্ঠে কিছু বলতে নিবেন সেইসময় একজন মধ্যবয়সের পুরুষ ডাক্তার সেখানে উপস্থিত হয়ে গার্ডদের হাতে ব*ন্দু*ক দেখে বললেন….
—“কি হচ্ছে এসব এখানে? আপনারা কারা?”
কুশল নিজের পি*স্ত*ল*টি নামিয়ে ডাক্তারটির দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো…
—“এখন পরিচয় দেওয়ার সময় আমার হাতে নেই। দ্রুত আমার ভাইয়ের চিকিৎসা শুরু করুন।”
ডাক্তারটি উচ্চস্বরে বললেন….
—“এটা ভদ্র মানুষদের চিকিৎসা করানোর জায়গা। এখানে এসব মা*স্তা*নী চলবে না। আমার ক্লিনিকে আমি এসব এলাও করবো না। বেড়িয়ে….. ”
ডাক্তারটি পুরো কথা শেষ করার আগেই কুশল রাগে ওর হাতে থাকা পি*স্ত*ল*টি দিয়ে নিচের দিকেই একবার গু*লি করে। গু*লি*র আঘাতে টাইলসের অনেকটা জায়গা ফে*টে যায়। কুশল শান্ত স্বরে বললো…
—“এক্ষুণি যদি আমার ভাইয়ের চিকিৎসা শুরু না করা হয় তাহলে এই পি*স্ত*লে থাকা বু*লে*ট গুলো আপনার শরীরের ঠিক কতোগুলো জায়গায় ছি*দ্র তৈরি করবে তা আপনি ভাবতেও পারবেন না।”
ডাক্তারটি ভী*ত কন্ঠে নার্স দুজন আর ঐ রিসেপশনের মহিলাটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন…..
—“এক্ষুণি পেশেন্টকে ও.টিতে নিয়ে চলো। আর ডাক্তার আকরাম কে কল করে আসতে বলো দ্রুত।”
তরুনিমা কুশলের কাছে এসে ওর হাত থেকে পি*স্ত*লটি নিয়ে সাদিককে দিয়ে বললো….
—“গার্ডদেরকে বাহিরে যেতে বলুন। সবাই অনেক ভ*য় পাচ্ছে।”
সাদিক তরুনিমার কথা শুনে কুশলের দিকে তাকালে তরু সাদিকের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাতে দাত পি*ষে বললো….
—“আমি আপনার স্যারের ওয়াইফ হই। আর আমি আপনাকে কিছু করতে বললে তখনও আপনার স্যারের এক্সট্রা পার্মিশন নিতে হবে নাকি?”
সাদিক দ্রুত কন্ঠে বললো….
—“জ্ব-জ্বি না ম্যডাম।”
এই বলে সাদিকে গার্ডদের ইশারা করে তাদের নিয়ে ক্লিনিকের মূল দরজা দিয়ে বেড়িয়ে যায়। ওরা চলে যেতেই উপস্থিত সবাই যেনো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। তরুনিমা কুশলের হাত ধরে অপারেশন থিয়েটারের সামনে এসে থাকা চেয়ারে ওকে বসিয়ে দিয়ে বললো….
—“চুপচাপ এখানে বসে থাকুন। আমি ভর্তির সব ফর্মালিটি পূরণ করে আসছি।”
তরু চলে যেতে নিলে কুশল তরুর হাত ধরে নেয়। তরু কুশলের দিকে ফিরে তাকাতেই দেখে কুশল ছলছল দৃষ্টি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। পরক্ষণেই কুশল কাঁ*পা কন্ঠে তরুকে বললো….
—“নি-নিল সুস্থ হয়ে যাবে তো তরু!”
কুশলের এমন অসহায় মুখশ্রী দেখে এই প্রথম তরুর বুকের ভিতরটা যেনো মো*চ*ড় দিয়ে উঠলো। নিলাদ্রের কথা চি*ন্তা করে তরুর নিজের মনেও যথেষ্ট ভ*য় কাজ করছে। তবুও তরু বাহির থেকে নিজেকে শ*ক্ত রেখে কুশলের হাতের উপর নিজের অন্যহাত রেখে বললো….
—“আপনি চি*ন্তা করবেন না। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুণ তিনি আমাদের নিরাশ করবেন না। নিলাদ্র ভাইয়া আবারও পুরোপুরি ভাবে সুস্থ হয়ে উঠবেন।”
কুশল তরুর হাত ছেড়ে দিয়ে বললো….
—“ইনশাআল্লাহ।”
অতঃপর তরু রিসেপশনের কাছে এসে ভর্তির সব ফর্মালিটি পূরণ করে কার্ড দ্বারা চিকিৎসার সম্পূর্ণ বিল পেমেন্টও করে দেয়। সেইসময় ডাক্তার আকরাম এসে ও.টির ভিতরে ঢুকতে নিলে কুশল তার হাত ধরে। ডাক্তার আকরাম অবাক হয়ে কিছু বলতে নিলে কুশল তার হাতের উপর কয়েকফোটা চোখের পানি ফেলে অনুরোধের স্বরে তাকে বললেন….
—“দয়াকরে আমার ভাই সমতুল্য বন্ধুকে বাঁচিয়ে দিন ডাক্তার। আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে হারাতে পারবো না।”
কুশলের অনুরোধে ডাক্তার তার অন্যহাত কুশলের কাঁধে রেখে বললেন….
—“আমরা আমাদের বেস্টটা দিয়ে চেষ্টা করবো তোমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে বাঁচানোর, বাবা। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো। জীবন বাঁচানোর একমাত্র শক্তিকর্তা তিনিই। আমরা তো শুধু অ*ছিলা মাত্র।”
এই বলে ডাক্তার আকরাম ও.টির ভিতরে চলে যান। কুশলও তৎক্ষনাৎ স্থান ত্যগ করে। এ*ক্সি*ডে*ন্ট ক্লিনিক থেকে পুলিশকে কল করায় পুলিশ সেখানে আসলে সাদিক পুলিশের দিকটা সম্পূর্ণ ভাবে সামলে নেয়। তরুনিমা ও.টির সামনে আসলে কুশলকে সেখানে দেখতে না পেয়ে বললো….
—“ইনি আবার কোথায় চলে গেলেন?”
তরুনিমা কুশলকে খুঁজতে শুরু করে। বেশ কিছুসময় ধরে খোঁজার পর ক্লিনিকের নামাজ ঘরের সামনে এসে দাঁড়াতেই দেখে কুশল সেখানে জায়নামাজে বসে আল্লাহর নিকট দু’হাত তুলে নিলাদ্রের সুস্থতা কামনা করে চোখের পানি ফেলছে আর প্রার্থনা করছে। তরুনিমা মুগ্ধ দৃষ্টি নিয়ে কুশলের দিকে তাকিয়ে থাকাবস্থাতেই বললো….
—“আজকাল তো এমন সত্যিকারের বন্ধুত্বের বন্ধন দেখাই যায় না। সবাই নিজ নিজ স্বা*র্থ হা*সিলের জন্য বন্ধুত্বের মতো সম্পর্ককে ব্যবহার করে। আর আপনি ওনার জীবন-মৃ*ত্যু*র সাথে ল*ড়াই করার মুহূর্তে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছেন। নিলাদ্র ভাইয়া ভিষণ ভাগ্যবান পুরুষ তাই হয়তো আপনার মতো একজন বন্ধু পেয়েছেন।”
তরুনিমা নামাজঘরের স্থান ত্যগ করে আবারও অপারেশন থিয়েটারের সামনে এসে সেখানে রাখা চেয়ারে বসে পরে। কিছুসময় পর ও.টির ভিতর থেকে একজন নার্স একটা ট্রে হাতে বেড়িয়ে আসে। তরুনিমাকে সেখানে বসে থাকতে দেখে নার্সটি বললেন…
—“আপনি পেশেন্টের আত্নীয় তো?”
—“জ্বী।”
—“এই ঘড়ি আর স্বর্ণের আংটি আমরা ওনার কাছে পেয়েছি এগুলো আপনি আপনার কাছে রেখে দিন।”
তরু সোগুলো নিয়ে নিজের কাছে রেখে নার্সকে প্রশ্ন করলো….
—“ভাইয়ার কি অবস্থা এখন!”
—“অপারেশন এখনও চলছে। ডাক্তার বের হলে তাকে জিঙ্গাসা করে পেশেন্টের অবস্থা সম্পর্কে জেনে নিয়েন।”
এই বলে নার্সটি আবারও ও.টির ভিতরে প্রবেশ করে। তরু নিলাদ্রের ঘড়িটা দেখে বুঝতে পারে এটা স্মার্ট ওয়াচ। এই ঘড়িতে সিম কার্ড, মেমোরি কার্ড এমনকি ক্যমেরাও সেটআপ করানো যায়। এক্সিডেন্টের কারণে ঘড়িটার উপরের গ্লাসটা ভে*ঙে গিয়েছে। তরুনিমা কিছু একটা ভেবে ঘড়িটার ভিতর থেকে সিম কার্ড আর মেমোরি কার্ডটি বের করে নিজের ফোনে সেট করে।
চলবে ইনশাআল্লাহ……….৷
ফলো মি 👉 Arian Chowdhury Kabbo