হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(১৯) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(১৯)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(৪৭)
ব্রিজের মাঝবরাবর এসে মানুষের ভির ঠেলে একদম সামনে চলে আসে তরু আর কুশল। ছেলেটির থেঁ*ত*লে যাওয়া বি*ভ*ৎ*স মুখশ্রী চোখে পড়া মাত্রই তরু “আহহহহ” বলে দু’হাতে দুই চোখ ঢেকে কুশলের বুকে মাথা রাখে। কুশল এক হাতে তরুকে জড়িয়ে ধরে এক দৃষ্টিতে রাস্তার উপর প*ড়ে থাকা ছেলেটির নি*থ*র শরীরের দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটির পরণের সাদা শার্ট র*ক্তে ভিজে লাল হয়ে গিয়েছে। পরক্ষণেই ছেলেটির হাতের দিকে লক্ষ্য করলে হাতে থাকা ঘড়িটা দেখামাত্র কুশল এর হা-পা থরথর করে কাঁ*প*তে শুরু করে। কুশল কাঁ*পা কাঁ*পা কন্ঠে বললো….

—“নি-নিল-নিলাদ্র!”

কুশলের মুখে নিলাদ্র নামটি শোনামাত্র তরুর বুকটা যেনো কেঁপে উঠে। তরু কুশলের বুক থেকে মাথা তুলে ওর চোখের দিকে তাকালে দেখে কুশলের দু’চোখ লাল হয়ে এসেছে। যেনো কুশলের এই দু’চোখ ফেঁ*টে অজস্র নোনাজল বেড়িয়ে আসতে চাইছে কিন্তু কোনো এক অজানা বাঁ*ধা*র কারণে আ*ট*কা পড়েছে।

কুশল তরুর হাত শক্ত করে ধরে নিলাদ্রের কাছে গিয়ে বসে চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকদের উদ্দেশ্য করে বলছে….

—“কেও একটু সাহায্য করুন, ও আমার ভাই। ওকে বাঁচাতে হবে দয়াকরে কেও ধরুন, ওকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।”

চারপাশে দাড়িয়ে থাকা লোকগুলোর কান পর্যন্ত যেনো কুশলের সাহায্যের ডাক পৌঁছাচ্ছে না। তরু ‘থ’ হয়ে বসে আছে কুশলের পাশে। ওর চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি ঝরছে। চারপাশে দাড়িয়ে থাকা লোকগুলোর মাঝে একজন আরেকজনকে কা*না*ঘু*ষো করে বলছে….

——‘কে না কে তাঁকে এভাবে স্পর্শ করা ঠিক হবে না।’

‘এ*ক্সি*ডে*ন্ট হয়েছে নাকি ষ*ড়*য*ন্ত্র করে মে*রে ফেলার চেষ্টা করেছে কে জানে? এখন যদি স্পর্শ করি তাহলে পুলিশ কে*স হয়ে যাবে। কে চায় এসব পুলিশি ঝা*মে*লা*য় স্বইচ্ছায় জড়াতে বাপু?’

‘চেহারার যে বি*শ্রী অবস্থা হয়েছে দেখেই তো শরীর গু*লি*য়ে আসছে একে ধরবে কে?’

‘এতো র*ক্ত*পা*ত হয়েছে এখনও বেঁচে আছে বলে তো মনে হয় না।’

‘শুনেছি এ*ক্সি*ডে*ন্ট, ফাঁ*সি হয়ে কারোর মৃ*ত্যু হলে তার আ*ত্না আমাদের চারপাশেই ঘুরে বেড়ায়। এসব অ*প*মৃ*ত্যু*র লা*শ আমরা স্পর্শ করতে পারবো না।’

লোকমুখে বলা কথাগুলো কুশল-তরুর কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে। তরু আর চুপ হয়ে বসে থাকতে পারে না। বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রাগ নিয়ে উচ্চস্বরে বললো….

—“ব্য*স যথেষ্ট বলেছেন আপনারা সবাই। হাতজোর করে অনুরোধ করছি, আপনাদের কোনো প্রকার সাহায্য করার দরকার নেই শুধু মুখ দিয়ে এইসব কথা বের করে নিজেদের নি*ম্ন মানসিকতা, শিক্ষা আর চিন্তা-ভাবনার প্রকাশ ঘটাবেন না। দোহাই লাগে….”

তরুনিমার কথাগুলো শোনামাত্র উপস্থিত সকলেই পুরোপুরি ভাবে নিরব হয়ে যায়। কিছুসময়ের মধ্যেই অনেকেই স্থান ত্যগ করতে শুরু করে ধীরে ধীরে। পরক্ষণেই তরু কুশলকে উদ্দেশ্য করে বললো….

—“আপনি নিল ভাইয়ার কমোরের উপরের অংশটুকু ধরুন আমি পায়ের অংশটুকু ধরছি। দ্রুতই উনাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন, উনার কিচ্ছু হবে না।”

তরুর কথানুযায়ী কুশল নিলাদ্রের কমোরের উপরের অংশটুকু ধরে আর তরু পায়ের অংশটুকু। উপস্থিত মানুষরূপী একটা প্রাণীও ওদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসে না। শুধু নিরব হয়ে চেয়ে চেয়ে দেখে। কুশল আর তরু নিলাদ্রকে গাড়ির পিছনের সিটে শুইয়ে দেয়। অতঃপর ওরা দু’জনেই গাড়িতে উঠে বসে। কুশল গাড়ি স্টার্ট করে ঘুরিয়ে নিয়ে চালাতে শুরু করে শহরের দিকে।

(৪৮)
ডাক্তার খালেকুজ্জামানের বাসার ড্রয়িং রুমে আপাদমস্তক কালো হুডিতে ঢাকা একজন মানুষ পায়ের উপর পা তুলে সোফায় বসে আছে। হাত হাতের দুই আঙুলের মাঝে পি*স্ত*ল*টি ঘুরাচ্ছে। তার পাশে কালো হুডির আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে আরো একজন মানুষ। তার সামনে দু’হাত উপরে উঠিয়ে হাঁটু ভে*ঙে বসে আছেন খালেক, খালেকের স্ত্রী ও ২০ বছর বয়সী একজন মেয়ে। খালেকের স্ত্রী ও মেয়ের মাথায় পি*স্ত*ল ঠে*কি*য়ে রেখেছে কালো হুডি পরিহিত আরো দুইজন মানুষ। একটু নড়াচড়া করার চেষ্টা করলেই যেনো পিস্তল এ থাকা সবগুলো গু*লি তাদের তিনজনের মস্তিষ্কের এপাশ দিয়ে প্রবেশ করে ওপাশ দিয়ে বেড়িয়ে যাবে। ভ*য়ে থরথর করো কাঁ*প*ছে খালেক ও খালেকের পরিবার। সেইসময় খালেক ভ*য় মিশ্রিত কন্ঠে বললেন…..

—“আপনি তো বলেছিলেন আপনার কথানুযায়ী কাজ করলে আপনি আমার আর আমার পরিবারের কোনো ক্ষ*তি করবেন না। আমি তো আপনার কথানুযায়ীই সব কাজ করেছি। ঐ নিলাদ্র নামের ছেলেটা যখন আমার বাসায় এসেছিলো তখন সুযোগ বুঝে ওর কমোরে কড়া ডোজের ড্রা*গ*স ইনজেক্ট করে দিয়েছিলাম। তখন একে একে আপনারা আপনাদের আসল পরিচয় ও এতো বছরের লুকায়িত সব সত্য ওর সামনে তুলে ধরেছিলেন। নে*শা*র প্রভাব পড়ায় ছেলেটা সব জেনেও কিছু করে উঠার শক্তি পায় নি। পরমুহূর্তে ওর চ্যপ্টার পুরোপুরি ভাবে ক্লোজ করতে শহর থেকে অনেক দূরে মেইন রাস্তার উপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। আর ইচ্ছাকৃত ট্রাক এর সাথে ওর এ*ক্সি*ডে*ন্ট ও করিয়েছিলাম। আমি দেখেছি এ*ক্সি*ডে*ন্টে*র কারণে নিলাদ্রের মুখ পুরোপুরি ভাবে থেঁ*ত*লে গিয়েছিলো। আর এই লম্বা সময়ের এর মাঝে যে নিলাদ্র মা*রাও গিয়েছে সেই গ্যরান্টিও আমি দিচ্ছি। তাই আপনাদের সব সত্য ও আসল পরিচয় সে জেনে গিয়েছে সত্ত্বেও আপনাদের চি*ন্তা বা ভ*য় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। প্লিজ এবার আমাদের ছেড়ে দিন। আমরা এই দেশ ছেড়ে অনেক দূরে অন্য কোথাও চলে যাবো। কখনও আপনাদের কারোর ছায়াও আমাদের উপর পড়বে না এমন জায়গায় লুকিয়ে থাকবো আমি আমার পরিবারকে নিয়ে।”

সোফায় বসারত মানুষটি খালেকের দিকে পি*স্ত*ল তাঁক
করে বললো…
—“আপনাকে এতো বেশি কষ্ট করতে হবে না। সেই সুব্যবস্থা আমি নিজ হাত করছি। ওপারে নিজের পরিবারকে নিয়ে সুখে-শান্তিতে থাকবেন। আলবিদা…”

এই বলে মানুষটি খালেক বা তার পরিবারকে ২য় কোনো শব্দ উচ্চারণ করার সুযোগ না দিয়ে গু*লি করে। ৩টে গু*লি তিনজন মানুষের মস্তিষ্কের এপাশ দিয়ে প্রবেশ করে ওপাশ দিয়ে বেড়িয়ে যায়। মূহূর্তের মধ্যেই মেঝেতে লু*টিয়ে পড়ে খালেক, খালেকের স্ত্রী ও মেয়ের প্রাণ*হী*ন লা*শ গুলো।

(৪৯)
নিলাদ্রের পছন্দ করে দেওয়া সাদা সুতোর কারুকাজে তৈরি গাড় লাল রংয়ের শাড়ির সাথে ম্যচিং জুয়েলারি পড়ে, হাতে পায়ে আলতা দিয়ে, চুলগুলো খোঁপা করে খোঁপায় বেলিফুলের মালা লাগিয়ে, হালকা মেকআপ আর চোখে গাড় করে কাজল দিয়ে খুব সুন্দর ভাবে সেজেছে সন্ধ্যা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে শেষ আরেকবার দেখে নিয়ে সন্ধ্যা ওর রুম থেকে বের হয়। এরপর চারপাশ লক্ষ্য করে সকলের চোখ এড়িয়ে ছাদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাঁটতে শুরু করে। কিছুসময় পর ছাদে এসে পর পাশ থেকে আস্তে করে দরজা আটকে দেয় সন্ধ্যা। যদিও এতো রাতে কারোর ছাদে আসার চান্স নেই তবুও কোনো প্রকার রি*স্ক সন্ধ্যা নিতে চায় না। হাতে থাকা ফোনটা অন করে নিলাদ্রের নাম্বারে মেসেজ সেন্ড করে……

—“ছাদের দরজায় দাঁড়ানোর পর কোনো প্রকার শব্দ না করে আমাকে একবার কল দিবেন।”

অতঃপর সন্ধ্যা ছাদের ছোট ঘরে প্রবেশ করে সেখান থেকে আগের এনে রাখা একটা ডালা হাতে নিয়ে ছাদের মাঝবরাবর এসে হাঁটু ভাজ করে বসে পড়ে। ডালাটির উপর থেকে ঢাকনাটি সরিয়ে ভেতর রংবেরঙের অনেকগুলো সুগন্ধ ছড়ানো মেমবাতি আর দেশলাই বের করে। এরপর মোমবাতি গুলো লাভ শেইপ এ সাজিয়ে দেশলাইয়ের সাহায্যে জ্বালাতে শুরু করে। সবগুলো মোমবাতি জ্বালানো শেষ হলে মুহূর্তের মধ্যে পুরো পরিবেশে এক অন্যরকম সৌন্দর্যে মোড় বদলায়। মোমের সুঘ্রাণ পুরো পরিবেশকে সৌন্দর্যের উচ্চমাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে যেনো।

সন্ধ্যা মোম দিয়ে সাজানো লাভ সেইপ এর এক পার্শে বসে দূর আকাশের দিকে দৃষ্টি স্থির করতেই দেখে আজ পুরো আকাশ কেমন কালো মেঘে ছেয়ে আছে। আকাশজুড়ে একটা তারা দেখা যাচ্ছে না। আজ পূর্ণিমার ২য় দিন বলে মনেই হচ্ছে না সন্ধ্যার কাছে। সন্ধ্যা অভিমানী স্বরে বললো…..

—“আজকেই আকাশকে তার মন খারাপের কালো চাদর দিয়ে চাঁদ ও তারার সৌন্দর্যকে ঢেকে দিতে হলো? যদি এইমূহূর্তে বৃষ্টি এসে যায় তাহলে তো আমার এতো সুন্দর করে ছাদ সাজানোর দৃশ্য উনার দেখাই হবে না। কখন যে আসবে এই ডে*ভি*ল*টা! আরেকটা মেসেজ করে বরং বলি তাড়াতাড়ি চলে আসতে।”

এই কথা বলেই সন্ধ্যা ওর পাশ থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে নিলাদ্রকে মেসেজ সেন্ড করতে গিয়েও থেমে যায়। পরক্ষণেই মেসেজটা কা*ট করে সন্ধ্যা বললো….

—“বারবার মেসেজ করলে এখানে আসার পর সেটা নিয়েও আমাকে পঁ*চা*নি দিতে ছাড়বে না এই ব*জ্জা*ত*টা। থাক কোনো মেসেজ বা কল করবো না আমি। দেখি কখন আসার সময় হয় জনাবের। যদি আমাকে বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করিয়েছে তাহলে আসার পর প্রতি মিনিট হিসাব করে ওনাকে যদি কানে ধরে উঠাবসা না করিয়েছি তাহলে আমার নামও সন্ধ্যা চৌধুরী নয়। হুহহহহহহহহ…….”

এই বলে সন্ধ্যা দুই হাঁটু একত্র করে তার উপর থুতনি ঠেকিয়ে নিলাদ্রের আসার অপেক্ষা করতে শুরু করে।

চলবে ইনশাআল্লাহ…………….

(নিলাদ্রের এমন ক*রুণ অবস্থার জন্য পাঠকমহল হা*ই*পা*র হয়ে ব*কা দিয়ে আমার বাচ্চা মনে ক*ষ্ট দিবেন না 🥲। আমি আপনাদের সামনে ভালো কিছুই লিখে তুলে ধরার চেষ্টা করবো সবসময়। ভু*ল-ত্রু*টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আল্লাহ হাফেজ, আসসালামু আলাইকুম)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here