#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৯)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)
(১৮)
তরুনিমা চৌধুরী মেনশনের ভিতরে নিজেদের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে। ফ্রেশ হয়ে সাধারণ একটা থ্রি-পিস পড়ে এখন অনেকটাই আরামদায়ক অনুভূতি কাজ করছে তরুর মাঝে। ওভাবেই কিছুসময় বসে থাকার পর তরুনিমা ভাবে……
—“গতকাল রাতেই এমন একটা সিনক্রিয়েট হলো। চৌধুরী বাড়ির সদস্যরা তো শুধু খুটিয়ে খুটিয়ে আমার দো*ষ খুঁজতেই ব্যস্ত থাকেন। সুযোগ পেলেই সিকদার বংশের শিক্ষার দিকে আঙুল উঠান। এখন যে আমি আগে আগেই রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলাম এটা নিয়েও কোনো কথা শুনতে হবে না তো আবার! খা*রু*শ*টা তো বড় মুখ নিয়ে বললো ‘আমার চলে আসা নিয়ে বাসার কেও কিছু বলবে না, আমি যেনো চিন্তা না করি। যদি কেও কিছু বলতে আসে তাহলে তিনি নাকি তা বুঝে নিবেন।’ তবুও তো মনের মাঝে স্বস্তি পাচ্ছি না। তাহলে এখন কি আমার আবারও নিচে যাওয়া উচিত! কিন্তু এমন সাধারণ পোশাকে নিচে গেলে যদি সেটা নিয়েও কথা শুনতে হয়! উফহহহ চিন্তায় চিন্তায় আমার মাথাটা ন*ষ্ট না হয়ে যায়। যাকগে যা হওয়ার হবে, আমি এভাবেই বরং আরেকবার নিচ থেকে ঘুরে আসি। যদি দেখি উনি পুরো পরিবেশটা সামলে নিয়েছেন, তখন এসে পুরোপুরি ভাবে বিশ্রাম করবো।”
যেই ভাবনা সেই কাজ। তরুনিমা বিছানা থেকে নেমে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে কপালের মাঝ বরাবর হালকা কালো রংয়ের একটা টিপ দেয়, ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক দেয় আর কানে ছোট সাইজের একজোড়া ঝুমকো পড়ে। খোঁপা খুলে দিতেই চুলগুলো কমোর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। অতঃপর চুলগুলো চিরুনি করে নিয়ে ওড়নাটা ভালোভাবে শরীরে জড়িয়ে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পরে বাহিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
চৌধুরী মেনশনের মূল দরজা দিয়ে বের হয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে তরুনিমা। সেইসময় তরুনিমার জুতা কিছুর সাথে বেজে যাওয়ায় সে হো*চ*ট খেয়ে মাটিতে পড়ে গিয়ে ব্য*থা*য় ‘আহহহ’ শব্দ উচ্চারণ করে।
তরুনিমার থেকে কিছুটা দূরে উল্টোঘুরে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিলো ২৬-২৭ বছর বয়সী একজন সুদর্শন পুরুষ। তরুনিমার কন্ঠস্বর তার কান পর্যন্ত পৌঁছাতেই সে পিছন ঘুরে তরুনিমার দিকে তাকাতেই দেখে তরু পা ধরে মাটিতে বসে আছে। লোকটি ফোন কেটে দিয়ে তৎক্ষণাৎ তরুনিমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন…..
—“আপনি ঠিক আছেন তো ম্যম?”
অপরিচিত কোনো পুরুষ কন্ঠ কর্ণপাত হতেই তরুনিমা চোখ তুলে তাকায় তার দিকে। লোকটির শরীরের রং অতিরিক্ত ফর্সা ছিলো, মুখে হালকা চাপ দাঁড়ি, চোখে চশমা, পরণে কালো রংয়ের শার্ট আর প্যন্ট ছিলো। সবমিলিয়ে লোকটিকে যথেষ্ট সুদর্শন লাগছিলো। তরুনিমা লোকটির দিক থেকে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো…..
—“জ্বি, আমি ঠিক আছি।”
লোকটি তরুনিমার সামনে হাঁটু ভাজ করে বসে ওর পায়ের দিকে লক্ষ্য করতেই দেখে তরুর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল কে*টে র*ক্ত ঝরছে। লোকটি অস্থির কন্ঠে বললেন…..
—“আপনার পায়ের আঙুল তো কে*টে গিয়ে অনেক র*ক্ত ঝরছে তাহলে আপনি আমাকে মি*থ্যা কেনো বলছেন?”
তরুনিমা লোকটির প্রশ্নে কিছুটা বিরক্তি নিয়েই বললো….
—“দেখছেন ই যখন পা কে*টে র*ক্ত ঝরছে তাহলে আবার আমি ঠিক আছি কি না এমন প্রশ্ন করে নিজের আ*হা*ম্ম*কি রূপ প্রকাশ করছেন কেনো?”
তরুনিমা এমন ত্য*ড়া প্রতিত্তোরে লোকটি সত্যিই যেনো আ*হা*ম্ম*ক হয়ে যায়। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন…..
—“যেভাবে র*ক্ত ঝরছে এক্ষুণি এই র*ক্ত পড়া বন্ধ না করলে ক্ষ*ত স্থানটিতে ইনফে*ক*শন হয়ে যাবে।”
—“সে বিষয়ে আপনার না ভাবলেও চলবে।”
—“আমি পেশায় একজন ডাক্তার। তাই আপনার এইটুকু সাহায্য আমি খুব ভালো ভাবেই করতে পারবো।”
তরু নিজের হাতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। ডান পায়ের বৃদ্ধা আঙুলটিতে বেশ গভীর ক্ষ*ত হওয়ায় তরু সেই পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারছে না। চেহেরায় কিছুটা কুঁচকানো ভাব ফুটিয়ে তরুনিমা বিরক্তির স্বরে বললো…
—“আমি তো একটা বারের জন্যও আপনাকে বলি নি আমার আপনার সাহায্যের প্রয়োজন। সুন্দরী মেয়ে দেখলেই আপনাদের ছেলেদের মনে লাড্ডু ফুটতে শুরু করে তাই না! আগ বাড়িয়ে সাহায্য করার এতোই যখন ইচ্ছে তখন কোনো সিংগেল, অবিবাহিত মেয়ের সাহায্য করিয়েন এতে আপনার লাভ হলেও হতে পারে। আমি বিবাহিত মেয়ে তাই আমাকে সাহায্য করার মাধ্যমে ফ্লাটিং করার চেষ্টা করে কোনো লাভ হবে না আপনার।”
তরুনিমার মুখে এমন কথা শুনে লোকটির মুখ অটোমেটিক হা হয়ে যায়। এইমূহূর্তে লোকটির কি প্রতিত্তোর করা উচিত তা তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না। কুশল কিছু প্রয়োজনে এদিকেই আসছিলো সেইসময় সে ওর সামনে তরুনিমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। তরুর সামনে এখনও ঐ লোকটি হাঁটু ভাজ করে বসে আছে। কুশল ওর ভ্রু যুগল কিন্ঞ্চিত কুঁচকে নিয়ে ওদের দিকে অগ্রসর হয়। পরক্ষণেই লোকটির পিছনে এসে দাড়িয়ে কুশল শান্ত স্বরে তরুকে প্রশ্ন করলো….
—“তরুনিমা তোমাকে তো বিশ্রাম করার জন্য আমি ভিতরে পাঠিয়েছিলাম তাহলে তুমি এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো? আর কে এই লোকটি?”
কুশলের কন্ঠ কর্ণপাত হতেই তরুনিমা কুশলের দিকে তাকায়। মাটিতে বসারত ঐ লোকটিও ঘাড় ঘুরিয়ে কুশলকে দেখা মাত্র বললো….
—“আরে দোস্ত তুই….!”
এই বলে লোকটি উঠে দাঁড়ায় কুশল ও তখন ভালো ভাবে লোকটিকে দেখে চিন্তে পেরে তাকে জড়িয়ে ধরে। তরুনিমা অবাক দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। পরক্ষণেই ওরা একে অপরকে ছেড়ে দিয়ে পাশাপাশি দাড়ায়। কুশল হাসিমুখে বললো…..
—“দীর্ঘ ৪ বছর পর আমেরিকা থেকে দেশে ফিরলি। আমাকে আগে জানালেই তো পারতিস। এয়ারপোর্ট থেকে তোকে রিসিভ করতে পারতাম।”
লোকটি বললেন…..
—“ভেবেছিলাম তোকে না জানিয়েই দেশে ফিরবো আর তোকে সারপ্রাইজ দিবো। কিন্তু দেশে এসে তো আমি নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেলাম। আমাকে না জানিয়েই বিয়ে করে নিলি! আজ আবার তোর বিয়ের রিসেপশন। বাহ বাহ, এই হলো আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের কাজের নমুনা।”
কুশল ওর ঠোঁটের কোনে স্মিত হাসি ফুটিয়ে তরুনিমার দিকে তাকিয়ে বললো….
—“পরিস্থিতির বিপাকে পরে বিয়ে করতে হয়েছে। তোকে পরে সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলবো।”
—“ঠিক আছে। এখন আগে আমার ভাবীর সাথে আমায় পরিচয় করিয়ে দে।”
বেশ কিছুসময় ধরে দাড়িয়ে থাকার কারণে তরুনিমার ক্ষ*ত স্থানে য*ন্ত্র*ণা করতে শুরু করেছে। তাই ও ব্যথায় আবারও মুখ দিয়ে ‘আহহহহ’ শব্দ বের করে। কুশল তরুর দিকে তাকিয়ে বললো…..
—“কি হয়েছে তোমার?”
কুশলের বন্ধু তরুর দিকে তাকিয়ে বললো…..
—“ওহহহ সিট…..তোর সাথে কথা বলতে গিয়ে তো আমি ওনার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। আরে দেখ না উনি ওনার ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলে আঘাত পেয়েছেন। সেই জায়গাটি কে*টে গিয়ে র*ক্ত ঝরতে শুরু করেছে।”
ওনার কথা শুনে কুশল দ্রুত তরুর কাছে এসে বললো….
—“আরে আঘাত পেয়েছো সেই কথা আমাকে আগে বলবে তো!”
কুশল তরুর পায়ের কাছে বসে ওর পা স্পর্শ করতে নিলে তরু দ্রুততার স্বরে বললো…
—“আরে কি করছেন! আপনি আমার পা ধরছেন কেনো?”
কুশল দেখে তরুর পায়ের ক্ষ*তস্থানে এখন র*ক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করেছে। সে উঠে দাড়িয়ে কোনো প্রতিত্তুর না করেই তরুকে নিজের পাজাকোলে তুলে নেয়। কুশলের এমন কাজে তরু যেনো হতবুদ্ধি হয়ে যায়। তরুকে কোলে নিয়োই কুশল দ্রুত পায়ে চৌধুরী মেনশনের ভিতরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাটা ধরে। পরক্ষণেই তরুনিমা নিজের পরিস্থিতি বুঝতে পেরে বললো…..
—“এই আপনি আবার আমায় কোলে নিয়েছেন! আপনার সাহস দেখে তো আমি রিতীমত অবাক না হয়ে পারছি না। নামান বল…..”
কুশল ধমকের স্বরে বললো……
—“চুপ….একদম চুপ…আর একটা শব্দ এই মুহূর্তে যদি তুমি তোমার মুখ থেকে বের করেছো তাহলে তোমায় মাথার উপর তুলে আ’ছা*ড় মা*র’বো।”
কুশলের ধমকের স্বরে বলা কথা শুনে তরু একেবারে নিরব হয়ে যায়। কুশল রাগী স্বরে বললো…
—“চোখ সবসময় কপালে উঠিয়ে রেখে চলাফেরা করো তুমি তাই না! সবসময় কোনো না কোনো ভাবে আঘাত পেতেই হয় তোমায়। এতো বেশি দায়িত্বঙ্গানহীন হয়ে থাকে কি করে কোনো মানুষ এটা ভেবে তো আমিই রিতীমত অবাক না হয়ে পারছি না।”
চলবে ইনশাআল্লাহ……….