মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া #লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_৯

#মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া
#লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৯
রাদিবের সাথে বিয়ে ভাঙার সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। মীরার দিনগুলো তার প্রত্যাহিক রুটিনেই চলছে। বাড়িতে ফোন করলেই ‘কবে দেশে জব নিবে’ এই প্রশ্নই করতে থাকে। এর জবাব নেই মীরার কাছে। ভালো জব সে পাচ্ছে কিন্তু এখনটার মতো রিসার্চ ফেসিলিটি পাচ্ছে না। এই জবটা তার মাস্টার্সের রিসার্চ ফ্যাকাল্টি সাজেস্ট করেছিল। তাই এত জলদি সিদ্ধান্তে যেতে রাজি হচ্ছে না।

মীরার বাবা রফিক তালুকদার বিকেলে ব্যালকনিতে বসে পেপার পড়ছেন। নিধি এসে তার শ্বশুরকে চা দিয়ে যায়। চিনি ছাড়া রংচা খান তিনি। শ্বশুরকে চা দিয়ে ব্যালকনি থেকে যেতেই নিধির কানে কলিংবেলের শব্দ ভেসে আসে। সে চটপটির মা*খাচ্ছিল। মৃদুলাকে কার্টুন দেখতে দেখে ডাক দেয়,

“মৃদু। এদিকে আসো তো, মা। দরজাটা খুলে দাও তো।”

মৃদুলা ছুটে এসে দরজা খুলে দিলো। অতঃপর বাহিরে দাঁড়ানো লোকটাকে দেখে মুখ বাঁকালো। নিধি প্রশ্ন ছুড়ে,
“কে এসেছে?”

“ফুপ্পির জন্য আ*বোলতা*বোল ছেলে ধরে আনা লোকটা!”

মৃদুলার এহেনো সম্বোধনে দরজার বাহিরে দাঁড়ানো ঘটক লোকটা ভড়কে গেলেন। নিধি থতমত খেয়ে ফের বলে,
“মৃদু, এভাবে বলে না। যাও তুমি কার্টুন দেখো।”

মৃদুলা মুখ ভে*ঙচি দিয়ে ছুটে চলে গেল। নিধি মাথায় ওড়না টেনে সদর দরজায় কাছে আসে। তারপর জোরপূর্বক হাসি টেনে বলে,
“ওর কথায় কিছু মনে করবেন না। বাচ্চা মানুষ। আপনি ভেতরে আসুন। বাবা ড্রয়িংরুমের বারান্দায় আছেন।”

ঘটক লোকটা সামান্য ইতস্তত করে ভেতরে ঢুকে ড্রয়িংরুমের বারান্দায় চলে গেলেন। তারপর রফিক তালুকদারকে লম্বা করে সালাম দিয়ে সামনের চেয়ারটাতে বসলো। রফিক তালুকদার ভ্রুকুটি করলেন। হাতের পেপারটা ভাজ করে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে শুধালেন,

“হঠাৎ কোনো বলা-কওয়া ছাড়া যে আসলেন?”

ঘটক লোকটা দেঁতো হেসে বলেন,
“আপনি আর কিছু জানাইলেন না। তাই নিজেই আসলাম।”

রফিক তালুকদার বললেন,
“প্রত্যকবার তো কিছু না কিছু গড়বড় করেন। এবার কী নিয়ে এসেছেন?”

লোকটা সামান্য দমে গেলেন। ফের দ্বিগুণ উৎসাহ যুগিয়ে বললেন,
“এবার একটা পাত্রের খোঁজ পেয়েছি। ছেলের আগের একটা বিয়ে ছিল। কিন্তু বউটা ভালো পড়েনি, বলে ছেড়ে দিয়েছে। অনেক ভালো জব করে ছেলে। মাসে এক লাখের মতো ইনকাম। ছেলেদের নিজস্ব….. ”

রফিক তালুকদার হাত উঁচিয়ে ঘটককে থামতে বললেন। অতঃপর ক্রুদ্ধ স্বরে বললেন,
“এতদিন তাও অবিবাহিত ছেলেদের লিস্ট এনেছিলেন। আর আজকে কী-না এক বিবাহিত ছেলের সম্বন্ধ এনেছেন?”

ঘটক খানিক কাঁচুমাচু স্বরে বললেন,
“আপনার মেয়ে তো বলল সে বিবাহিত লোক, এক বাচ্চার বাপ হলেও বিয়ে করতেও রাজি!”

রফিক তালুকদার এবার উঠে দাঁড়ালেন। হাতে থাকা ভাজ করা পেপার সবেগে ছুড়ে মা*রলেন। ফের একই স্বরে বললেন,
“আজেবাজে কথা বলবেন না। আপনাকে আমার মেয়ের জন্য পাত্র খুঁজতে হবে না। বেরিয়ে যান।”

ঘটকও উঠে দাঁড়ালেন। তিনি কটাক্ষ করে বললেন,
“নিজের মাইয়ারে আগে জিজ্ঞাসা করেন। কার ঘর ভাইঙা নিজেরটা বাঁধানোর স্বপ্ন দেখতাছে? রাদিব ছেলেটা পাত্র হিসেবে ভালোই ছিল। তারে আপনার মাইয়াই এইসব বলছে।”

তারপর ঘটক দ্রুত পায়ে প্রস্থান করে। রফিক তালুকদার হতবাক হয়ে কিয়ৎক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন। তারপর স্বর উঁচু করে নিজের স্ত্রীকে ডাকলেন। মীরার মা মিসেস মলি জাহান আসরের নামাজ পড়ে সবে শুয়ে ছিলেন। আরেকটু পর হাঁটতে বেরোবেন। হঠাৎ স্বামীর ক্রদ্ধ কণ্ঠস্বরে বিচলিত হয়ে উঠে বসলেন। তড়িঘড়ি করে সেখানে গেলেন। রফিক তালুকদার খানিক চোটপাট করলেন। ফের বললেন,

“মেয়েকে কল করো। কাকে কী বলে বেড়াচ্ছে?”

“তুমি রাগ করছ কেন? ঘটক তো কত কিছুই বলে। আর রাদিবের কর্মকাণ্ড তো সবটাই দেখেছি।”

“আমি কিছু শুনতে চাই না। তাকে দেশে ফিরতে হবে।”

এই বলে রফিক তালুকদার হনহনিয়ে চলে গেলেন। মিসেস মলি জাহান কপালে হাত দিয়ে বসে পড়লেন। অতঃপর নিজের কপালের দোষ গাইতে লাগলেন!

_______

প্রতি মাসে একবার করে ফ্রিশার রুটিন চেকআপের জন্য শেহজাদকে হসপিটালে আসতে হয়। জন্ম থেকেই ফ্রিশার হার্ট দুর্বল। হার্টে ফুটো। চেকআপ করিয়ে ইমিডিয়েট রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের সামনে বসে আছে শেহজাদ। ফ্রিশা ডাক্তার টেবিলের পেপারওয়েট নিয়ে খেলা করছে। ডাক্তার হাসিমুখে বললেন,

“মেডিসিন কন্টিনিউ করছে। এখনও কোনো প্রবলেম নেই। তবে ও-কে মানসিক চাপ দিবেন না।”

“ডাক্তার, সার্জারি লাগবে?”

“এখনও না। ছোটো আ*র্টারিয়াল সে*প্টাল ডি*ফেক্ট তো। আপনাআপনি সেড়ে যায়। ছোটো বাচ্চা তারওপর। নিয়ম মেনে চললেই হবে।”

“থ্যাংকিউ ডাক্তার।”

শেহজাদ উঠে ডাক্তারের সাথে হ্যান্ডশ্যাক করে ফ্রিশাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। ফ্রিশা হসপিটালের করিডোরে হাঁটতে হাঁটতে বলে,
“ডোন বি টেনসড, বাবা। অ্যাই ওন্ট লিভ ইউ।”

শেহজাদ হালকা হাসে। তার মেয়ে সময়ের আগে কতোকিছু বুঝতে শিখেছে। মা হারা সন্তানরা একটু বেশি বুঝদার হয় কী-না! হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠলো দুজনে। ফ্রিশা আনমনে বাহিরের দিকে চেয়ে থেকে বলে,
“আমার মম ফিরে আসবে না, বাবা? অ্যাই মিস হার।”

শেহজাদ জবাব দিতে পারে না। কী জবাব দিবে? ইদানীং মেয়েটা তার কেমন মুষড়ে পড়েছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে চুপচাপ ড্রাইভ করতে থাকে।

_____

জিনিয়া হুট করে মীরাকে মেসেজ দিয়ে বলে,
“মীরু? তোর মাস্টার্সের সিজিপিএ কতো?”

মীরা কিঞ্চিত ভাবুক হয়। হঠাৎ বান্ধবী তার সিজিপিএ নিয়ে পড়লো কেন? তৎক্ষণাৎ জিনিয়া হোয়াটসএপে কল দিয়ে বসলো। জিনিয়া ফের একই প্রশ্ন শুধালে মীরা সন্দিহান হয়ে জবাব দেয়,
“৩.৮৭। কিন্তু কেন?”

“অনার্সেরও তো কাছাকাছি ছিল তাই না?”

“হ্যাঁ, ৩.৮১ ছিল। কিন্তু কেন?”

জিনিয়া এবার বিপুল উৎসাহ নিয়ে বলে,
“ভার্সিটির ফ্যাকাল্টি হবি?”

মীরা পুরো হাঁ হয়ে গেল। ফের শুধালো,
“কী বলছিস তুই?”

“হ্যাঁ রে। একটা বি ক্যাটাগরির প্রাইভেট ভার্সিটির সার্কুলার দেখলাম। ৩.৮ হলেই এপ্লাই করা যাবে। তুই ট্রাই করতে পারিস। তুই তো খুব সুন্দর করে বুঝাতে পারিস। আমার কত প্রবলেম সলভ করে দিয়েছিস।”

মীরা পাত্তা দিলো না। বলল,
“এজন্য আমি ফ্যাকাল্টি হবো! আমার সবসময় রিসার্চের ইচ্ছে।”

জিনিয়া অবাক কণ্ঠে বলে,
“ফ্যাকাল্টিরা রিসার্চ করে না? পা* গলের মতো কথা বলিস না। এতে আরও ভালো হবে। তুই এখনি সিভি পাঠিয়ে দে। আর শনিবারের ফ্লাইটে চলে আয়। আজ বৃহস্পতিবার। রবিবার তো এমনিতেই তোদের ছুটি।”

মীরা বলল,
“আমি ভেবে নেই।”

“কোনো ভাবাভাবির কিছু নেই। এখুনি সিভি পাঠাবি। সময় নেই দোস্ত। একটা ভার্সিটির লেকচারার হতে পারা কতো ভাগ্যের জানিস? জলদি কর। আমার যদি তোর মতো সিজি থাকতো তবে আমি কখন সিভি পাঠিয়ে বসে থাকতাম!”

“আচ্ছা দেখছি।”

“এতো দেখতে হবে না। আমি তোকে লিংক পাঠাচ্ছি। তুই এখনি পাঠাবি। রেফারেন্সের জন্য আকবর স্যারকে নক কর। স্যার তো অনার্সে তোর রিসার্চ ফ্যাকাল্টি ছিলেন।”

জিনিয়া খুব উৎসাহিত কিন্তু হঠাৎই আকবর স্যারের নাম শুনে মীরা চমকে ওঠে। স্যারকে নক করতে সে ইতস্তত করছে। কিন্তু জিনিয়ার জোরাজুরিতে বাধ্য হয়। জিনিয়া সবসময় নাছোড়বান্দা। নিজে যা বলবে তা করিয়েই ছাড়বে। মীরা অবশেষে মেইল করে থামলো। জিনিয়াও ইতোমধ্যে কল ডিসকানেক্ট করেছে। রাইমা বাহিরে গিয়েছিল। ওর কী একটা দরকার ছিল। রাইমা এসে এক গাদা চকলেট ছড়িয়ে বলল,

“নে মীরু। কতোগুলো চকলেট।”

মীরা ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কে দিলো?”

“তোর কুঞ্জদা। দিল্লিতে এসেছে। কী-সের অফিসের কাজে বলল। একটা হোটেলে ওঠেছে। দুই-তিন দিন থাকবে বলল। হুট করে বলল বেরোতে। তুই ওয়াশরুমে ছিলি বলে না বলেই চলে গিয়েছিলাম।”

“ওহ।”

মীরা একটা কিটক্যাট নিয়ে আনমনে খোসা ফেলে খাচ্ছে। দৃষ্টিতে কোনো নড়ন নেই। মীরার অবিচল দৃষ্টি দেখে রাইমা শুধায়,
“তোর আবার কী হয়েছে? চকলেট খাচ্ছিস কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে উচ্ছে খাচ্ছিস!”

মীরার সম্বিৎ ফিরলো। সে প্রত্যুত্তর করলো,
“না। কিছু না।”

“তাহলে স্মাইল কর বেব।”

রাইমা খুব খুশিমনে চকলেট খাচ্ছে। মীরা ওর দিকে চেয়ে ভাবছে, কী করে কথাটা বলবে?

চলবে ইনশাআল্লাহ,

ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here