অনিমন্ত্রিত_প্রেমনদী #দ্বিতীয়_অধ্যায় #পর্ব_০৮ #জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা

#অনিমন্ত্রিত_প্রেমনদী
#দ্বিতীয়_অধ্যায়
#পর্ব_০৮
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা

(কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ)

কোলাহলহীন একেবারে শান্ত পরিবেশ। মিঠুর চোখের দিকে তাকিয়ে নজর সরাতে পারলোনা রামি। ভেতরে কিছু হারানোর আ*ত*ঙ্ক তা*ড়া করে বেড়াচ্ছে। অথচ মিঠুর দৃষ্টি স্বচ্ছ। হ্যাঁ, না কিছুই বলছেনা। অবশেষে অরুর মতামতের উপর সকল সিদ্ধান্ত ন্যস্ত করে আয়েশা সুলতানা বাসায় চলে এলেন ছেলে-বউদের নিয়ে। রাতে খেতে গিয়ে রামি খেতে পারলো না। কী আশ্চর্য! ঘুমটাও হারিয়ে গিয়েছে। বুকের ভেতর ছটফটানো ভাব। ছাদে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। বাতাসটাও আজ গায়ে লাগছেনা। তার চোখজোড়া চাতক পাখির মতো মিঠু ফেরার অপেক্ষায় রইলো।
গাড়ির শব্দ পেয়ে নেচে নেমে গেল রামি। মিঠু বাসার ভেতর ঢোকার আগেই তার ডাক পড়লো। পেছন ঘুরে রামিকে আবিষ্কার করতেই গম্ভীর হয়ে গেল। ভারী গলায় বলল,
“কিছু বলবি?”

“হ্যাঁ।”
রামি প্রচুর নার্ভাস।

“কী বলবি বল।”

রামি আকস্মিক বলে বসলো,
“তোর আপত্তি থাকলে আমি মাকে না করে দেব।”

মিঠু জিজ্ঞেস করলো,
“কোন ব্যাপারে?”

“অরুর ব্যাপারে।”

মিঠু সরাসরি রামির চোখে তাকালো। শান্ত গলায় বলল,
“যদি বলি আমার মত নেই!”

রামি ভড়কে গেল। এমন একটা কথা সে বলে ফেলেছে। এখন না চাইতেও মিঠুকে ধরে রাখতে পিছু হটতে হবে। মোদ্দা কথা যেকোন একজনকে তার স্যাক্রিফাইস করতেই হবে। হয় মিঠু অথবা অরু।
রামির চুপ করে থাকা দেখে মিঠু ধীর স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
“খুব পছন্দ করিস?”

রামি জবাব দিতে পারে না। তার স্পষ্ট চোখের ভাষা বুঝে মিঠু আলতো হাসে। অতঃপর খোঁচা দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে হিসহিসিয়ে বলল,
“তবে মনে রাখিস, আমার বোনের চোখে পানি আমায় ভুলিয়ে দেবে তুই আমার বন্ধু।”

রামির অধর কোন প্রসারিত হলো। উজ্জ্বল হাসিতে মেতে উঠে বলল,
“তারমানে আমি অনুমতি পাচ্ছি?”

মিঠু সামনে এগোতে এগোতে মিটিমিটি হেসে বলল,
“মনে আছে? বলেছিলি আমার বোনকে বিয়ে দিলে ফোন গিফট করবি?”

রামি বিরস গলায় বলল,
“আগে তোর বোনকে হ্যাঁ বলতে দে। যা বা*জি*গ*র তোরা। আমি শিওর তোর বোন আমাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাবে!”

মিঠু বলল,
“পি*স্ত*ল চালানোর প্রশিক্ষণটাও দিয়ে দেব ভাবছি। এদিকওদিক করলেই খু*লি উড়িয়ে দেবে।
তাছাড়া আগে থেকেই সাবধান করে দিচ্ছি তোকে! আমার সাথে কোন কিছু নিয়ে বনিবনা না হলেই অরু আমার পছন্দের জামাকাপড় দিয়ে ঘর মোছার কাজ করে। তোর জিনিসপত্র সামলে রাখিস।”

রামি বিড়বিড় করে বলল,“জিনিস কী সামলে রাখবো? আমার মনটাই যে চু*রি করে ইচ্ছেমতো ফুটবল খেলছে।”
ভেতরটা একেবারে হালকা হয়ে গেল মিঠুর সাথে কথা বলে। এবার অনায়াসে ঘুম চোখে ধরা দেবে। আগামীকাল থেকে অরুর চিন্তায় দিন পার করা যাবে।

★★★

আজ ক্লাস টেস্ট ছিল। গোসল সেরে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো অরু। মাথাটা ধরেছে ভালোভাবে। চা খেতে পারলে ভালো হতো। ওর রুমমেট এখনো ফেরেনি। নিজেরও উঠতে ইচ্ছে করছেনা। সাইলেন্ট ফোন বিপ বিপ শব্দে কেঁপে উঠলো। অরু ধরলো না। কয়োকবার রিং হওয়ার পর ফোন হাতে নিয়েই কানে চেপে ধরলো। ওপাশ থেকে তরী বলল,
“এতক্ষণ কোথায় ছিলি?”

“গরুর ঘাস কে*টে*ছি। একটু পর গরু চরাতে যাবো।”

তরীর চাপা হাসির শব্দ শোনা গেল। বলল,
“মনে হচ্ছে সারাজীবন তোকে গরুই চরাতে হবে। একেবারে পার্মানেন্ট রাখাল বালিকা হয়ে যাবি। আফসোস হচ্ছে আমার!”

“ঝেড়ে কাশো তো।”

“তোর যে আবারও বিয়ের সমন্ধ এসেছে, সে খবর রেখেছিস?”

“খবর রাখার কী দরকার? মাত্রই কী সুন্দর খবর পেয়ে গেলাম তোমার কাছে। তা গরুটা কোন গোয়ালের?”

“আমাদের নিজস্ব গোয়ালেরই গরু।”

অরুর সন্দেহ এবার মজবুত হলো। আমাদের গোয়ালের গরু বলতে কাকে বোঝাতে পারে তা আন্দাজ করে নিল। তাছাড়া সেদিন রামির কথাবার্তায় কিছু একটার গন্ধ পেয়েছিল অরু। তবে ব্যাপারটা নিয়ে পরে আর ভেবে দেখেনি। সাবধানী গলায় শুধালো,
“গরুর নাম কী?”

“ গরুর নাম রামি। রং চিনতে অসুবিধা হলে সেটাও বলে দিচ্ছি।”

অরু যা ভেবেছিল তাই। অরুকে আবিরের বাসা থেকে দেখতে আসার পর থেকেই রামির আচরণ লক্ষ করেছে সে। পুরোপুরি শিওর না হলেও খানিকটা আন্দাজ করে নিয়েছে রামির হাবভাব। অরু বলল,
“গরু নিজ থেকেই তোমাদের বলেছে?”

“হ্যাঁ, কেন গরু তোর পছন্দ হয়নি?”

“আমার মাথাব্যথা করছে আপু। পরে জানাবো।”

অরু খট করে লাইন কে*টে দিয়ে ম*রা*র মতো পড়ে রইলো। আপাতত নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করলোনা।

★★

তরী ফোন রেখে রামির দিকে তাকালো। বেচারার চেহারা দেখার মতো। ফোন স্পিকারে ছিল। মূলত অরুর মতামত জানার জন্য তার উৎকণ্ঠা থেকেই তরী অরুকে ফোন দিয়েছিল। কার্যসিদ্ধি তো হলোই না। উল্টো দু-বোনের আলোচনায় ঠিকই গরু হয়েছে।
গমগমে গলায় বলল,
“অরু ইচ্ছে করেই লাইন কে*টে দিল। এখনই জানিয়ে দিলে কী সমস্যা? ”

তরী মিটিমিটি হেসে বলল,
“অনেক বড়ো সমস্যা। গরু মানুষ করা কি যেন-তেন কাজ না-কি? তারও তো ভাবতে হবে, গরুর দায়িত্ব নেবে কি নেবে না!”

রামি চোখ ছোটো করে বলল
“আমাকে কোনদিক থেকে গরু মনে হয়?”

তরী মুখে হাত রেখে হাসি আড়াল করার চেষ্টা করলো। বলল,
“এতদিন গরু ছিলি না। তবে দু’দিন যাবত সত্যিই গরু মনে হচ্ছে।”

রামি ফোঁসফোঁস করে তরীর ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো। তার ধারণা সব দো*ষ অরুর। মেয়েটার বদৌলতেই আজ তার গরুর মতো অবস্থা। মেয়েটা তার মনে ঘন্টা না বাজালে কি আর এতকিছু হতো? ভয়*ঙ্কর রকম মেজাজ খা*রা*পে*র মাঝেও অরুর প্রতি তার প্রেম পাচ্ছে। কী যন্ত্রণা!

★★★

সুহা এখন সুস্থ। আজ অফিস না থাকায় বাসায় রইলো। অবনি অবশ্য বিকেলে বের হওয়ার কথা বলেছিল। সুহা যাবে কি যাবেনা দ্বিধাদ্বন্দে কে*টে গেল দুই ঘন্টা। অতঃপর অবনির অনবরত ফোন, মেসেজ পেয়ে সিদ্ধান্ত নিলো বিকেলে বের হবে। আপাতত রান্না করার ইচ্ছেটাও নেই। কয়েকদিন অসুস্থ থাকায় ঘরের এলোমেলো অবস্থা। যেকেউ এসে দেখলে চিড়িয়াখানা বলতে দ্বিধা করবেনা। সুহা কফি করে লেগে পড়লো কাজে। সবটা গুছিয়ে, ঘর পরিষ্কার করতে করতে দুপুর হয়ে গেল। শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ায় গোসল করেই ঘুমিয়ে পড়লো। ঘুম ভাঙলো কলিংবেলের শব্দে। ওড়না গায়ে জড়িয়ে ঘুমঘুম চোখে দরজা খুলে দিতেই অবনি তাকে ঠে*লে ভেতরে ঢুকে পড়লো। ঝাঁঝালো স্বরে বলল,
“এতবার কল দিলাম, তুই দেখলি না? এতক্ষণ কীসের ঘুম ঘুমিয়েছিস?”

সুহা অবনির প্রশ্নের জবাব দিলোনা। বলল,
“কফি খেলে বানিয়ে নে। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

অবনি কিচেনে ঢুকে নিজের জন্য এক কাপ কফি বানিয়ে বের হলো। ততক্ষণে সুহা ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে। শাড়ি হাতে নিতেই অবনি তা সরিয়ে একটা থ্রিপিস ধরিয়ে দিল। বলল,
“আর কত শাড়ি পরে নিজেকে বিবাহিত প্রমাণ করবি? এবার নিজেকে নিয়ে ভাব।”

সুহা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“কী ভাববো? আমি যা করেছি, এই মুখ নিয়ে কীভাবে মুভ অন করবো? আমার কর্মকাণ্ডের জন্য পরিবার আমায় ত্যাগ করেছে। আমি নিজেই সাহস পাইনা আর। এভাবেই ভালো আছি আমি। কোন পিছুটান নেই।”

অবনি নরম গলায় বলল,“ঠিক আছে। এখন আর মন খা*রা*প করতে হবে না। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে।”

সুহা তৈরি হয়ে নিতেই দুজন বেরিয়ে পড়লো। বেরিয়ে সুহা আশ্চর্য হলো! অবনি তাকে সম্পর্কে বেঁধে দিতে চাইছে। অবনির বয়ফ্রেন্ডের সাথে একটি ছেলে এসেছে। ছেলেটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেই কৌশলে তাকে নিয়ে এসেছে। অবনির বয়ফ্রেন্ডের সামনে তো আর কিছু বলা যায়না, তাই চুপচাপ সবটা হজম করে নিলো সুহা। যেকোনো প্রশ্নের জবাবই কঠিন গলায় দিচ্ছে। অবনি পরিস্থিতি ঘুরিয়ে দিতে বলে উঠে,
“সুহার আজ মন খা*রা*প। তাই একটু শক্ত কথা বলছে। কিছু মনে করো না তোমরা।”

সুহা কাঠকাঠ সুরে জবাব দিলো,
“আমি এমনই। এতে কোন মি*থ্যে নেই।”

অবনি বুঝলো আজ তার রক্ষে নেই। ভীষণ ক্ষেপেছে সুহা। কতদিন একা থাকবে মেয়েটা? তাকে নিয়ে চিন্তা থেকেই অবনির এই সিদ্ধান্ত। বয়ফ্রেন্ডকে বিদায় দিয়ে উঠে দাঁড়ালো অবনি। সুহা আগে আগেই বেরিয়ে গিয়েছে।

মিঠু একটা সিক্রেট কাজের ইনফরমেশন নিতেই এখানে এসেছিল। তার দলবল নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ই সুহাকে নজরে পড়লো। একা একাই ধুপধাপ পা ফেলে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসছে। চেহারার অবস্থা বলে দিচ্ছে সে ভীষণ রেগে আছে। কাছাকাছি আসতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল। পেছন থেকে অবনি ডাকছে। তার সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে এখন নেই। দেখা যাবে রাগের মাথায় কিছু একটা বলে বসলো, যেটাতে অবনি খুব কষ্ট পাবে। তাকে এড়িয়ে যেতেই মিঠুকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আমাকে বাসায় পৌঁছে দিতে পারবেন? যদি সময় থাকে!”

মিঠু একবার পেছনের মেয়েটাকে দেখছে একবার সুহাকে। হয়তো পেছনের মেয়েটাকে এড়িয়ে যেতে চাইছে সুহা। তাই বলল,
“উঠুন। পৌঁছে দিচ্ছি।”

সুহা ঝটপট গাড়ির পেছনের সিটে গিয়ে বসলো। অবনি বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলো। গাড়ি কিছুদূর যেতেই সুহা বলল,
“আমাকে নামিয়ে দিন।”

মিঠু বাইরে তাকিয়ে দেখলো সুহার বাসা এখনো আসেনি। ভুরু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো
“এখানে?”

“জি।”

রিয়াজ সামনের সিট থেকেই জিজ্ঞেস করলো,
“আপু একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”

“জি।”

“আপনি বলেছিলেন আপনি বিবাহিত। কিন্তু আপনিতো বিয়েই করেন নি। তাহলে মি*থ্যে কেন বললেন? কথা ঘোরাবেন না, আমি কিন্তু আপনার সম্পর্কে সবটা খোঁজখবর নিয়ে ফেলেছি।”

সুহা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“গাড়ি থামাতে হবে না। আমি বাসার সামনেই নামবো।”

মিঠু খুব একটা আগ্রহ দেখালোনা। তার চোখ ফোনের স্ক্রিনে আবদ্ধ। কোন একটা নিউজ নিয়ে ব্যস্ত সে।
রিয়াজের কৌতুহল বেশি। আজ যে করেই হোক সুহার কাছ থেকে সবটা জেনে নেবে। সে কেন পরিবারের সাথে থাকছে না, কেন বিবাহিত পরিচয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে?

#চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here