নীলাম্বরে_জোছনা #নুসাইবা_ইভানা #পর্ব-৯

#নীলাম্বরে_জোছনা
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-৯

হসপিটালের করিডোরে অপেক্ষা করছে আরহাম। অপারেশন থিয়েটারে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে মিফতাজ। আরহাম ইতিমধ্যে মাহমুদ সাহেবকে কল করেছে। তারও এসে পরবেন হয়তো কিছু সময়ের মধ্যে।
দিশা বেগম এসেই কান্নাকাটি জুড়ে দিলেন। মাহমুদ সাহেব দিশা বেগমকে বললেন, দিশা নিজেকে সামলাও এখন প্রার্থনা করার সময়। বিপদে ধৈর্য হারা হলে চলে না।
দিশা বেগম মাহমুদ সাহেবকে জড়িয়ে ধরে বলে, এসব কিছু ওই মেয়ের জন্য হয়েছে।ওই মেয়েই আমার ছেলের জন্য কাল হয়োছে। আমি কি করবো বলো কিভাবে বাঁচবো!আমার তো এই একটাই ছেলে।

আরহাম কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। কি থেকে কি হয়ে গেলো সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে।

মানহা ফ্লোরে বসে বেডের উপর মাথা রেখ গভীর চিন্তায় মগ্ন। তার এতো সুন্দর জীবন কিভাবে নরকে পরিনত হলো!মানহা রুনা বেগমকে মামিমা ডাকতো। নিজের মেয়ের মতই আগলে রাখতো মানহাকে। একটা মূহুর্ত কয়েক মিনিট সময়ে সব শেষ হয়ে গেলো। মিফতাজের সাথে মানহার পরিচয়টা হয়ে ছিলো কাকতালীয় ভাবো। পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব তারপর ভালোবাসা সব মিলিয়ে দুটো বছর কেটে গেছেে।কিন্তু সব হিসেবে সব সমীকরণ বদলে যায় সেদিন রাজুকে মিফতাজের সাথে দেখে।এই তো মাস খানেক আগের ঘটনা। মানহা আর মিফতাজ শপিংমলে গিয়েছিল। হুট করেই মিফতাজ মানহাকে রেখে কোথাও একটা চলে গেলো। মানহা এই দোকান সে দোকান ঘুরতে ঘুরতে হুট করে দু’টো মানুষের উপর দৃষ্টি আটকে যায়। তৎক্ষনাৎ নিজের হাত দিয়ে পরনের কুর্তি আকড়ে ধরে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে। সোজা শপিংমল থেকে বেরিয়ে চলে আসে। নিজের রুমে এসে ওয়াশরুমে চলে যায়। শাওয়ারের নিচে বসে পরে। চিৎকার করে বলে,যদি তুমি জড়িত থাকো কোন ভাবে এসবের সাথে আমি কখনো তোমাকে ক্ষমা করবো না শাস্তি তোমাকে পেতে হবে তাজ পেতেই হবে! এতো সহজে ছাড়বো না অপরাধীদের। খানিক বাদে আবার নিজেই বলে, হয়তো আমি বেশি ভাবছি হতে পারে অন্য ভাবে পরিচিতি এসবে তাজের কোন হাত নেই। আমার ধারণা ভুল হতে পারে! কিন্তু আমাকে খোঁজ নিতে হবে নিতেই হবে!
ঘন্টা খানিক সাওয়ার নিয়ে বের হয়ে সেদিন থেকে নজর দারি করা শুরু করে মিফতাজের উপর। দিন যত যেতে থাকে প্রমাণ সব মিফতাজের বিরুদ্ধে যেতে থাকে। মানহা যখন বুঝতে পারে মিফতাজ নিজেই দায়ী। তখন পুরোপুরি ভেঙে পরে৷ কিন্তু সেটা নিজের মধ্যে রেখে নিজেকে সামলে মিফতাজকে শাস্তি দেয়ার অন্য পথ বেছে নেয়।
যদিও সে শাস্তি মানহা নিজেই ভোগ করছে বেশি। সব শেষ। এভাবে সবটা শেষ না হলেও পারতো।
এতো মানুষ থাকতে সেই অপরাধীর তালিকায় মিফতাজকে কেন থাকতে হলো। কেন? এই কেনোর উত্তর কি জানা আছে কারো?

এতো বছর পর সেই পরিচিত কন্ঠ শুনে এক মূহুর্তের জন্য মনে হলো আদুরীর শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। পিছু ফিরে মানুষটার দিকে একবার দেখবে সেই শক্তিটুকু নেই। নিজেকে সামলানোর বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে। নাজিয়া দৌঁড়ে এসে আদিকে জড়িয়ে ধরে বলে, মামু।

অহনা বলল, এখন কি দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি ভেতরেও আসবি!

আদি আরো দু’কদম সামনে বাড়লো। আদির হার্ট বিট হুট করেই বেড়ে যাচ্ছে। এমন কেন হচ্ছে বুঝতে পারছে না আদি!

আদুরী সামনের দিকে ফিরবে তার আগেই ইতু বলে মামুনি পানি খাবো পানি দাও।
আদুরী টেলিব থেকে পানির গ্লাসে করে পানি এনে ইতুর মুখের সামনে ধরলো।

আদির দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো আদুরীর দিকে। বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। হাতে থাকা ব্যাগটা শক্ত করে ধরলো। দৃষ্টি ঘুরিয়ে অহনার স্থান পর্যপেক্ষণ করলো। অহনা কিচেনে।
আদি হাত দিয়ে শার্টের দুটো বাটন খুলে নিলো। আরো দু’কদম সামনে এগিয়ে নিম্ন স্বরে বলে,আদুরী।

‘আদির মুখে এতো বছর পর আদুরী ডাকটা যেনো বজ্র পাতের ন্যায় শোনালো। হাত থেকে কাঁচের গ্লাসটা পরে শব্দ করে টু’ক’রো টু’ক’রো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রইলো।

অহনা কিচেন থেকে আওয়াজ দিলো কি ভাঙলো আবার নাজ!
নাজ বলল আম্মু গ্লাস ভেঙে গেছে ম্যামের হাত থেকে পরে।
অহনা আর কিছু বললো না।

আদুরী উঠে দাঁড়ালে এতোক্ষণ ইতুকে পানি পান করাচ্ছিলো।

আদুরী সামনে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলে,মিসেস আদুরী।
আদির হৃদয়ে এই কথাটুকু বজ্রপাতের মত আঘাত করলো। তবুও হেসে বলে,মনে হয় ভালোই আছো?

– কেউ হয়তো চেয়েছিল খারাপ থাকি কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

– মেয়েটা তোমার?
– কি মনে হয়?
– বড্ড মিষ্টি মেয়ে, নাম কি?
– সেসব আপনার না জানলেও চলবে।
আদি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে,আমি কেমন আছি জিজ্ঞেস করবে না!

আদুরী কিছু না বলে কিচেনে চলে গেলো। কিচেন থেকে ঝাড়ু আর বেলচা এনে কাঁচের টুকরো গুলো উঠিয়ে নিয়ে ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিলো।

আদি ততক্ষণে রুমে চলে গেছে।বুকের ভেতর তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে। আচ্ছা আদুরী ভালো আছে এটা দেখে আমি খুশি কেন হতে পারলাম না। আনমনে আবার নিজেই বলে,ভালোবাসার মানুষটা আমাকে ছেড়ে সুখে আছে এটা মেনে নেয়া কঠিন। কিন্তু আমি নিজেই যাকে ধোঁকা দিয়ে ছেড়ে গেছি। তার কাছ থেকে অন্য কিছু আশা করাটা ভুল। তুমি আমাকে ছেড়ে ভালো আছো এই কথাটা এখন থেকে আমাকে ভিষণ পোড়াবে।আমি তোমার চোখে এক যুগ পরেও আমাকে না পাওয়ার আক্ষেপ আমাকে হারানো যন্ত্রণা দেখতে চাই। আমি বড্ড স্বার্থপর আদুরী বড্ড বেশিই স্বার্থপর।

আদুরী, আদি ফ্রেশ হয়ে বাহিরে আসার আগেই খেয়ে বের হয়ে যায়। রাস্তায় নেমে রিকশা ডেকে উঠে পরে মন পাঁজরে ঝড় উঠেছে তা কি থামবে সহজে।ভালোবাসা ছাড়লেও যে ভালোবাসি ছাড়া যায় না।

আদি খাবার টেবিলে বসে এদিক সেদিক তাকিয়ে আদুরীকে খুঁজচ্ছে।
অহনা বললো কি রে কিছু লাগবে?
নাজিয়া বলল,মামা মনে হয় ম্যামকে খুঁজচ্ছে তাইনা মামা?
-তুই কি আদুরীকে চিনিস নাকি!

-হ্যা আম্মু চেনেই তো? মামা তো কত সুন্দর করে ম্যামকে জিজ্ঞেস করলো কেমন আছো। কিন্তু ম্যাম মামাকে জিজ্ঞেস করেনি। তাই মামা আবার বললো আমাকে জিজ্ঞেস করবে না। ম্যাম কিছুই বললো না। তাই হয়তো ম্যামকে খুঁজচ্ছে।

অহনা কিছু বলবে,তার আগেই আদি বলে, আমি এসব নিয়ে এখন কথা বলতে চাইছি না আপা।আদির খেয়াল ছিলো না নাজিয়া যে তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো।
অহনা আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। এতো বছর পর এসেছে তাই আর ঘাটলো না। পরে জেনে নেয়া যাবে।


রতন সাহেব থানায় এসে একটা মিসিং ডায়রী করলেন। এভাবে তো আর বসে থাকা যায় না। একটা রাত একটা দিন চলে যেয়ে আরেকটা রাতের আগমন ঘটেছে। তবুও মেয়েটার কোন খোঁজ পাওয়া গেলো না। কি অবস্থায় আছে বেঁচে আছে নাকি! এসব ভাবলে চোখ ভরে উঠে। ভঙ্গ হৃদয় নিয়ে বের হলেন থানা থেকে। একটা রিকশা ডেকে উঠে পরলেন রিকশায়। বেশি সময় ত্রিশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে দেখে আদুরী আর রুনা বেগম আয়াতকে ধরে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে। রতন সাহেব দ্রুত আসলেন অস্থির কন্ঠ জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে?
– সেসব পরে শুনবে আগে দ্রুত আমার মেয়েটাকে হসপিটালে নেয়ার ব্যাবস্থা করো। রতন সাহেব আয়াতকে কোলে তুলে নিলেন। কাছাকাছি একটা ক্লিনিকে নিলেন। সেখানকার ডাক্টার বললো, এখানে হবে না ওনাকে কোন বড় মেডিকেলে নিয়ে যান। অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে ইমিডিয়েটলি অপারেশন করাতে হবে।
এম্বুলেন্সে করে আয়াতকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হলো। একি হসপিটালে দুটো’ মানুষ মৃত্যুর সাথে লড়ে যাচ্ছে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here