ভালোবাসার_রং_মিছিল💚 #লেখিকা_ইশা_আহমেদ #পর্ব_২৭

#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা_ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২৭

অর্ষা বাড়িতে নিঃশব্দে ঢুকে।আশেপাশে তাকিয়ে দেখে নেয় কেউ আছে কিনা।কাউকে না দেখে দরজা লাগিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে।রুমের সামনে আসতেই কেউ টেনে ছাদে নিয়ে আসে।রুশানকে দেখে অর্ষার তো অবস্থা খারাপ।এই পোলা যদি তাকে দেখে নেয় ইরহামের সাথে তাহলে তো শেষ সে।

—“কিরে বরকে ছাড়া এক মুহুর্তও থাকতে পারছিস না যে এতো রাতে চলে এসেছে রোমান্স করতে”

—“রুশাইন্নার বাচ্চা চুপ থাক।ইরহাম স্যার শুধু আমায় দেখতে এসেছিলেন আর কিছুই না”

—“হ্যা হ্যা তাই তো।দেখতে এসেই তো জড়িয়ে ধরে আবার ঠোঁ….টে চু…..মু খায় তাই না”

অর্ষা রুশানকে মা>রতে মা>রতে বলে,,,

—“চুপ কর বে>য়াদব বড় বোনকে এইসব বলতে লজ্জা করে না”

—“তোকে আমি বড় বোন মানি নাকি যে এই সব বলতে লজ্জা করবে তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড বুঝেছিস।আর আমি তাকেই কথাগুলো বলেছি”

অর্ষা রুশানকে আরো কতগুলো থাপ্পড় মেরে চলে যায়।রুশান হো হো করে হেসে ওঠে।অর্ষা পেছন থেকে রুশানের হাসির শব্দ শুনে লজ্জা পায়।ও এই ভয়টাই পাচ্ছিল।সেই ভ>য়টাই সত্যি হলো।রুশান দেখেই ফেললো।কালকে ভার্সিটিতে গিয়ে যে বন্ধুমহলকে বলে সবাই একসাথে খেপাবে তা বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে অর্ষা।

৫৯.

সকাল সকাল ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য বের হয় রুশান অর্ষা।ইরহাম আসতে চেয়েছিলো কিন্তু অর্ষা মানা করেছে।অর্ষা রুশান ভার্সিটিতে আসতেই উশা নাইম মুহিব বলে উঠলো,,,

—“দেখেছিস আমাদের অর্ষাও এখন মাঝরাতে বরের সাথে রাস্তায় রোমান্স করে”

অর্ষার বুঝতে বাকি নেই কে এইগুলো বলেছে।পাশ ফিরে চোখ ঘুরিয়ে রুশানের দিকে তাকাতেই রুশান বোকা বোকা হাসি দেয়।অর্ষা ছুট লাগায় রুশানের পিছনে।রুশানও দৌড় লাগায়।ওকে আর পায় কে।অর্ষা দৌড়াতে দৌড়াতে ইরহামের সামনে এসে পরে।ইরহামের দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হেসে বলে,,,

—“আসসালামু আলাইকুম স্যার”

ইরহাম গম্ভীর কন্ঠে বলে,,

—“ওয়ালাইকুম আসসালাম”

অর্ষা পাশ কাটিয়ে চলে যায়।ইরহামও এক পলক পিছনে ফিরে নিজের কাজে চলে যায়।অর্ষা হয়তো খেয়াল করেনি ইরহামের শক্ত মুখশ্রী।অর্ষা রুশানকে দৌড় করিয়ে আবার এক জায়গায় আসে।বেচারা রুশানের অবস্থা খারাপ।ক্লাস করে সবাই বাইরে বের হয়।অথৈ আজকে ভার্সিটিতে এসেছে।অথৈয়ের ভাব সাভ ভালো লাগেনি রুশানের।ক্যাম্পাসে আসতেই অথৈ এক কান্ড ঘটিয়ে ফেললো।

রুশানকে সবার সামনে প্রপোজ করে বসলো।রুশানের মেজাজ তো গরম হয়ে গিয়েছে।অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায় অথৈয়ের দিকে।রুশান শক্ত কন্ঠে বলে ওঠে,,,

—“উঠে দাঁড়া”

অথৈ ভাবে রুশান হয়তো তার প্রপোজাল গ্রহন করবে।কিন্তু হলো উল্টো রুশান নিজেকে সামলে শান্ত কন্ঠেই বলল,,,

—“আমি তোকে ভালোবাসি না।এরপর থেকে এমন ফালতু কাজ করার আগে দশবার ভাববি।তোকে ফ্রেন্ড বা বোনের নজরে দেখি। এর থেকে বেশি কিছু বানাতে পারবো না।”

অথৈ রুশানের হাত ধরে ফেলে।হাত ধরে আকুতি মিনতি করে বলে,,,

—“রুশান আমি তোকে সত্যি ভালোবাসি বিশ্বাস কর।অনেক ভালোবাসি আমি তোকে প্লিজ ফেরাস না।আমি বাঁচবো না তোকে ছাড়া”

রুশানের রাগ তিরতির করে বেড়ে যায়।ঝাড়া মেরে সরিয়ে দিয়ে রাগি কন্ঠ বলে,,,

—“তোকে বললাম না ভালোবাসি না আমি তোকে তারপরও এমন করছিস কেনো?আর তার থেকে বড় কথা আমি একজনকে ভালোবাসি ভীষণ ভালোবাসি”

অথৈ রেগে রুশানের কলার চেপে ধরে বলে,,,

—“তুই অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারিস না তুই শুধু আমার আর কারো না”

রুশান না পেরে অথৈকে ছাড়িয়ে থাপ্পড় মারে।রুশান এমনিতেও অথৈকে পছন্দ করে না তার উপর এই সব আজাইরা,ফালতু বকবক করছে।রুশান চিল্লিয়ে বলে,,,,

—“অনেক সহ্য করেছি তোর ফালতু কথা।নেক্সট টাইম যেনো তোকে আমার আশেপাশে না দেখি”

রুশান রেগে চলে যায়।মুহিব উশা,নাইম অর্ষা চারজন হতভম্ব হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে।অথৈ ভরা ক্যাম্পাসে নিজের অপমান সহ্য করতে না পেরে কাঁদতে কাঁদতে চলে যায়।অর্ষাও রুশানকে খোঁজার জন্য বেরিয়ে পরে।রুশানকে সব জায়গায় খুঁজে ভার্সিটির পেছনে আসে।পেছনে এসে দেখে রুশান বসে আছে।

—“কিরে তুই তো এইভাবে কখনো রাগিস না তাহলে কেনো এইভাবে রেগেছিস রুশান”

—“অর্ষা কথা বলিস না যা এখান থেকে”

—“রুশান কি হয়েছে বল আমাকে কেনো হুট করে রেগে গেলি কারণটা তো বলবি নাকি?”

—“ও তোর ক্ষতি করতে চেয়েছে অনেকবার অর্ষা শুধু তোর জন্য কিছু বলিনি।আজকে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি তাই ওতো কথা বলে দিয়েছি”

—“তবুও তুই এটা ঠিক করিসনি রুশান”

রুশান রেগে অর্ষার দিকে তাকায়।চোখ মুখ শক্ত করে বলে,,,

—“নিজের ভালোটা বুঝতে শেখ।কে তোর ভালো চায় আর কে তোর খারাপ চায় এটা বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ”

রুশান চলে যায়।অর্ষা রুশানের যাওয়ার পানে হা করে তাকিয়ে থাকে।এরপর নিজেও ভার্সিটির সামনে আসে।দুইটা ক্লাস করেছে আজকে।আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস নেই অর্ষাদের।মুহিব অর্না,উশা নাইম সবাই ঘুরতে গিয়েছে যার যার মতো।আর রুশান তো রেগে কোথায় চলে গেলো।ইরহাম অর্ষাকে মেসেজ করে অপেক্ষা করতে বলেছে।সে জন্যই দাঁড়িয়ে আছে।

তার ভেতরেই একজন এসে অর্ষার চোখ ধরে।অর্ষা ভয় পেয়ে কে কে করতে থাকে।লোকটা চোখ ছেড়ে সামনে এসে দাঁড়াতেই অর্ষার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে।আনন্দে প্রফুল্ল হয়ে উঠে বলে,,,,

—“আরে তিশাম ভাইয়া কেমন আছো?দেশে কবে আসলে”

—“দেশে এসেছও গতকাল।আমি তো বেশ ভালো আছি ছোট পাখি তুমি কেমন আছো?”

—“আমিও ভালো আছি তিশাম ভাইয়া।তুমি এখনো আমাকে ছোট পাখি বলে ডাকবে আমি তো বড় হয়ে গিয়েছি এখন অনেক”

তিশাম হেসে বলে,,,

—“তুমি আমার কাছে সারা জীবন ছোট পাখি হয়েই থাকবে।রুশান কোথায় ও আজ আসেনি”

—“এসেছিলো কিন্তু একটু রাগ করে চলে গিয়েছে”

তিশামের ফোনে কল আসে।জরুরি কল থাকায় অর্ষাকে বাই বলে চলে যায়।তিশাম অর্ষার বাবার ফ্রেন্ডের ছেলে।ছোট বেলা থেকেই চিনে তিশামকে।ইরহাম দূর থেকে এগুলো দেখছিলো আর রাগে ফুঁস ছিলো।ইরহাম ধুপধাপ করে অর্ষার সামনে এসে ওকে গাড়িতে বসিয়ে দেয়।অর্ষা ইরহামকে দেখে ভয় পেয়ে যায়।চোখদুটো র’ক্তবর্ন ধারণ করেছে।

কপালের রগ ফুলে গিয়েছে।ইরহাম অনেক জোরে গাড়ি চালাচ্ছে।অর্ষা ভয় পেয়ে বলে,,,

—“আপনি এতো জোরে কেনো গাড়ি চালাচ্ছেন?”

ইরহাম নিশ্চুপ। কথা বলে না।গাড়ি থামায় তাদের বাংলো বাড়ির সামনে এসে।গারি থেকে নেমে অর্ষাকে কোলে তুলে নিয়ে আসে।অর্ষা বুঝতে পারে না।ইরহামের রেগে যাওয়ার কারণ।অর্ষাকে রুমে নিয়ে এসে দরজা আটকে তার দিকে এগোতে থাকে।অর্ষার ইরহামকে ঠিক লাগছে না।

—“ই…রহাম আপনি এমন করছেন কেনো?কি হয়েছে বলুন”

ইরহাম অর্ষাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে।অর্ষা ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে।ইরহামের সেদিকে খেয়াল নেই।অর্ষার বাহু চেপে ধরে বলে,,,

—“ওই ছেলেটা কে ছিলো?”

অর্ষা বুঝে উঠতে পারে না ইরহাম কোন ছেলের কথা বলছে।তাই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ইরহামের দিকে।ইরহাম উত্তর না পেয়ে অর্ষাকে বিছানায় ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে বলে,,,

—“তোমার সাথে অন্য কোনো ছেলেকে আমি সহ্য করতে পারি না।ওই ছেলেটা কেনো তোমাকে স্পর্শ করলো,হুয়াই?”

অর্ষা বিছানা থেকে উঠে এসে ইরহামের সামনে দাঁড়িয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলে,,,

—“আপনি আগে শান্ত হন।আমি পুরোটা খুলে বলছি আপনায়।”

ইরহাম কষ্ট করেও নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না।চোখের সামনে ছেলেটার সাথে হেসে হেসে কথা বলার দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠছে।ইরহাম অর্ষাকে টেনে নিজের কাছে এনে ঠোঁটে পাগলের মতো চুমু খেতে থাকে।অর্ষার হৃৎস্পন্দন জোরে জোরে লাফাচ্ছে।অর্ষার হাইটে ছোটখাটো হওয়ায় টাল সামলাতে কষ্ট হচ্ছে।ইরহাম অর্ষাকে নিয়ে বিছানায় বসে পরে।অর্ষা ইরহামের থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলেও ইরহাম শক্ত করে আঁকড়ে ধরে অর্ষার ঠোঁট।নিজের সব রাগ অর্ষার ঠোঁটে ঝেড়ে ছেড়ে দেয় অর্ষাকে।

অর্ষা চোখ বন্ধ করে নেয় লজ্জায়।ইরহাম শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,,,

—“ওই ছেলেটা কে ছিলো বউ”

—“ওই ছেলেটা আমার বাবার বন্ধুর ছেলে হয়”

—“অর্ষা আমি তোমায় অন্য কোনো ছেলের সাথে সহ্য করতে পারি না।তুমি অন্য কোনো ছেলের সাথে কথা বলবে না প্লিজ।ওই ছেলেটা তোমায় স্পর্শ কেনো করলো বউ”

—“আপনি আমায় বিশ্বাস করতে পারেন প্রমিক পুরুষ আমি আপনি ব্যতিত অন্য পুরুষের নিকট যাবো না আজ থেকে”

—“প্রমিক পুরুষ বাহ বেশ লাগলো বউ তোমার মুখে ডাকটা শুনে।”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here