love is like a Cocktail,Part: 09
Writer: Abir Khan
জান্নাত খুব খুশি হয়ে যেই কিছু বলতে যাবে ওমনি হঠাৎ করে পিছন থেকে নেহাল এসে বলে,
– সরি জান্নাত তুমি এখন এই মুহূর্তে এখান থেকে যেতে পারবে না৷
নেহালের কথা শুনে জান্নাতের চেয়ে আবির বেশি অবাক হয়। জান্নাত জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
~ কেন?
– কারণ তুমি বাসায় গিয়ে কি করবে? ওখানে তোমার কেউ নেই। আর এতদিন কোন ছাত্রছাত্রীদের পড়াতেও যাও নি। তারা কি তোমাকে আর পড়াতে দিবে? দিবে না। তাহলে কিভাবে বাসা ভাড়া, খাবার খরচ এত কিছু চালাবে বলো? এখন তো আরো মাসের শেষ সময়। গেলেই তো ভাড়া গুনতে হবে৷ পারবে দিতে? তার চেয়ে এখানে কি ভালো আছো না?
জান্নাত চুপ হয়ে যায়। ও ভেবে দেখে নেহালের কথাগুলো সত্য। ও এখন গেলেতো অনেক ঝামেলায় পড়বে। কিন্তু তাই বলে আবিরের কাছে ও কিভাবে থাকবে? এটা তো স্বার্থপরতা হলো। জান্নাত মাথা নিচু করে মলিন মুখে বলে,
~ সে যাই হোক। কিন্তু এভাবে এখানে থাকাটা তো আমার ঠিক না৷ মানুষ কি ভাববে? একটা মেয়ে তার স্বার্থের জন্য এখানে পড়ে আছে! আমার খুব খারাপ লাগবে ভাইয়া৷ সরি।
আবির খুব খুশি হয়েছিল। ও ভেবেছে জান্নাত হয়তো এবার আর যাবে না৷ কিন্তু ওর কথা শুনে বুঝা যাচ্ছে ও যাবেই যাবে৷ আবিরের মাথাটা গরম হয়ে যায়। নেহাল কিছু বলতে নিলে আবির উঠে দাঁড়ায়। সাথে সাথে ও চুপ হয়ে যায়। জান্নাত পিছনে ঘুরে আবিরের দিকে তাকায়৷ ওকে দেখে বেশ রাগী মনে হচ্ছে। আবির অন্যদিকে ফিরে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
– নিলয় জান্নাতকে ওর বাসায় দিয়ে আয়৷ নেহাল তুই আপাতত তোর বাসায় যা। পরে আমি ডাক দিলে আসিস।
– আচ্ছা ভাই৷
আবির আর একমুহূর্ত না দাঁড়িয়ে উপরে ওর রুমে চলে যায়। জান্নাত স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। ও বুঝতে পারছে না আবির এরকম কেন করলো। আবির গেলে নেহাল জান্নাতের কাছে এসে বলে,
– শান্তি হলো এবার? দিলে তো ভাইকে কষ্ট। যাও এবার নিজের বাসায় গিয়ে পড়ে থাকো। যে তোমার জন্য এত কিছু করলো তার কাছে থাকলে এমন কি হতো? আসি। ভালো থেকো।
নেহালও চলে যায়। জান্নাত এবার বুঝতে পারে আবির আসলে চায় না ও যাক। কিন্তু কেন? জান্নাতও আবিরের পিছনে পিছনে ওর রুমে যায়। দেখে দরজা খোলা। ও একটা শুকনো কাশি দিয়ে ভিতরে যায়। গিয়ে দেখে আবির ওর সোফাতে বসে আছে গম্ভীর মুখে। খুব রাগী মনে হচ্ছে৷ জান্নাত আস্তে আস্তে ধীর পায়ে আবিরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আবির ওকে দেখে অন্যদিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
– আবার কি চাই? বিদায় নিতে এসেছো? নিতে হবে না৷ চলে যাও।
জান্নাত শুধু অবাক হচ্ছে আবিরের অভিমান দেখে৷ এত অভিমান! কিন্তু কেন? ও তো সামান্য একটা মেয়ে। ও গেলে এমন কি হবে? জান্নাত আস্তে করে বলে,
~ আমি চলে যাই আপনি তা চান না তাইনা?
– বুঝতেই যখন পারছো তাহলে জিজ্ঞেস কেন করছো?
~ কিন্তু আমার মতো সামান্য একটা মেয়ে আপনার কাছে থাকবে এটা কি ভালো দেখায়? আমার জন্য যদি আপনাকে কেউ কিছু বলে? আর কোন অধিকারে আমি এখানে থাকবো বলেন?
আবির এবার জান্নাতের দিকে ঘুরে তাকায়। জান্নাত আবিরের চোখের দিকে একবার তাকিয়ে ভয়ে চোখ নামিয়ে ফেলে। আবির ওর দিকে তাকিয়ে উঠে হেঁটে ওর সামনে এসে দাঁড়ায়। জান্নাত ভয়ে মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে আছে। আবির ওকে বলে,
– যাও আজ থেকে তুমি আমার পার্সোনাল সেক্রেটারি। মাসিক বেতন ১ লক্ষ টাকা। থাকা খাওয়া সব আমার সাথেই৷ বলো রাজি?
জান্নাত বাকরুদ্ধ হয়ে যায়৷ আবির যে ওকে রাখার জন্য এতটা অস্থির হয়ে আছে জান্নাত তা কল্পনাও করে নি। ও কিছু বলছে না দেখে আবির আবার বলে,
– যদি রাজি না থাকো তাহলে চলে যায়৷ আর কিছু বলতে হবে না। কোন জোর নেই তোমাকে। কারণ জোর করে কাউকে ধরে রাখা যায়।
কথা শেষ করেই আবির ওর রুমের জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। জান্নাত মুচকি একটা হাসি দিয়ে আবিরের কাছে এসে বলে,
~ আমার মতো একটা সামান্য মেয়ে যে আপনার কাছে এতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আমি কখনোই বুঝিনি। আপনি যেহেতু চান না আমি যাই তাহলে আমি থাকবো। তবে আপনার সেক্রেটারি হয়ে। আর কোন টাকা দিতে হবে না। তিন বেলা খাবার আর একটু থাকতে দিলেই হবে। আর কিছু চাই না৷
আবির এবার আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না। জান্নাতের কথায় ওর মাথাটা আগুন হয়ে যায়। ও ভীষণ রাগী ভাব নিয়ে ঘুরে জান্নাতকে ধরে একটান দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলে,
– কি শুরু করছো তুমি? সেই কখন থেকে নিজেকে সামান্য সামান্য বলে যাচ্ছো! তুমি মোটেও সামান্য না। তোমাকে কেন যেতে দিতে চাই না জানো? কারণ তুমি আবার আমার মতো একা হয়ে যাবা৷ এই শহরে একটা মেয়ে কখনোই একা থাকতে পারে না৷ হাজারটা জানোয়ারের নজর লাগে তার উপর। এসব জেনেও কিভাবে তোমাকে একা যেতে দেই আমি বলো? কিভাবে?
জান্নাত ভীতু চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে আর আবির রাগী চোখে। জান্নাতের কান্নাসিক্ত মুখখানা দেখে আবিরের রাগ নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। ও তাকিয়ে দেখে ও জান্নাতের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে আছে। জান্নাত ব্যথায় কাতরাচ্ছে কিন্তু কিছু বলছে না।আবির সাথে সাথে ওকে ছেড়ে দেয়৷ ছেড়ে দিতেই দেখে জান্নাতের সাদা ফরসা হাতে ওর পাঁচ আঙুলের ছাপ পড়ে গেছে রক্ত জমে। আবির এই দৃশ্য দেখে মুহূর্তেই নিজের টেম্পার হারিয়ে ফেলে। কি করেছে ও এটা! শেষমেশ অসহায় একটা মেয়েকে ও কষ্ট দিল, তাকে আঘাত করলো? আবির বড়ো বড়ো চোখে জান্নাতের হাতটা ধরে তাকিয়ে আছে৷ ওর নিজের উপর খুব রাগ উঠছে৷ ও যে হাত দিয়ে জান্নাতকে ব্যথা দিছে সে হাত দিয়ে দেয়ালে সমানে ঘুষি দিতে দিতে বলে,
– আমি শেষমেশ তোমাকে আঘাত করলাম! আজ এই হাত আমি রাখবোই না৷
জান্নাত এই ভয়ংকর দৃশ্য দেখে অসম্ভব ভয় পেয়ে যায়৷ ও জোরে একটা চিৎকার করে আবিরের হাত ধরে ওকে থামায়৷ আবিরের গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড়ও মেরে দেয়৷ আবির মার খেয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়। আর জান্নাত অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে,
~ আপনি কি পাগল হয়ে গিয়েছেন? কি করলেন এটা? আল্লাহ! রক্ত! আপনার হাত দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। এখন কি করবো আমি? আল্লাহ!
জান্নাত কাঁদতে কাঁদতে এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু না পেয়ে, ওর ওড়না খুলে আবিরের হাতে পেচাতে থাকে। ওকে খুব অস্থির লাগছে। পেচানো শেষ হলে আবির হঠাৎই ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়ে বলে,
– প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না৷ আমার পাশে কেউ নাই৷ আমি অনেক একা। প্লিজা আমাকে ছেড়ে যেও না৷
জান্নাত আবিরকে যত দেখছে তত অবাক হচ্ছে৷ ও কাঁদতে কাঁদতে অস্থির কণ্ঠে বলে,
~ যাবো না, যাবো না, যাবো না৷ প্রমিজ আমি যাবো না৷ আপনি দয়া করে শান্ত হন৷ আমাকে ছাড়ুন৷ আপনার হাতে মেডিসিন লাগাতে হবে।
– না ছাড়বো না তোমাকে আমি। তোমাকে আমার সাথে জড়িয়ে ধরলে আমি অনেক শান্তি অনুভব করি। বিশ্বাস করো আমার মনে হয় আমি আবার নতুন একটা জীবন শুরু করতে পারবো। আমি ছাড়বো না তোমাকে। তুমি নাহলে চলে যাবে৷
আবিরের কথাগুলো বাচ্চাদের মতো হলেও ওর কথার মাঝে অজানা রহস্য আর একরাশ কষ্ট জান্নাত অনুভব করে। কিন্তু কি সেই রহস্য আর কষ্ট তা ও জানে না। জানতে হলে আবিরকে ওর সামলাতে হবে। এত বড়ো একটা সেলেব্রিটি আসলেই এত একা কেন? কেউ তার পাশে নেই কেন? জান্নাতের সত্যিই সব জানতে ইচ্ছা করছে৷ ও বলে উঠে,
~ আমি কোথাও যাবো না। প্রমিজ আমি যাবো।
– সারাজীবন থাকবে?
~ হ্যাঁ থাকবো। এখন একটু সময় দেন আমাকে। নাহলে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন।
আবির জান্নাতকে ছাড়ে। ও ছাড়া পেয়ে জিজ্ঞেস করে,
~ মেডিকিট আছে আপনার রুমে?
– হুম। আলমারিতে। তুমি বসো আমি এনে দিচ্ছি।
আবির আলমারি থেকে মেডিকিট এনে জান্নাতের কাছে দেয়। জান্নাত দ্রুত আবিরকে বসিয়ে দিয়ে অস্থির হয়ে আবিরের হাতের ট্রিটমেন্ট শুরু করে। ও যে ওড়না ছাড়া বসে কাজ করছে তা ওর খেয়ালই নেই। কাজ শেষ হলে জান্নাত আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ আর কখনো এমন পাগলামি করবেন না প্লিজ। কত গুলো রক্ত পড়েছে দেখেন৷ আমার সাদা ওড়নাটা লাল হয়ে গিয়েছে রক্তে।
জান্নাত দেখে আবির চোখ বন্ধ করে মাথা অন্যদিকে করে তাকিয়ে আছে। ও আবার অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
~ একি! আপনি চোখ বন্ধ করে অন্যদিকে ফিরে আছেন কেন?
– এমনিই।
~ প্লিজ বলুন? আপনি কি রাগ করেছেন আমি আপনাকে মেরেছি বলে? তাহলে আপনিও আমাকে মেরে প্রতিশোধ নিন৷ তাও রাগ করবেন না প্লিজ।
আবির বলে,
– আহ! তুমি ওড়না ছাড়া আছো তাই আমি চোখ বন্ধ করে অন্যদিকে তাকিয়ে আছি। এটাও বুঝো না৷
জান্নাত নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে, হ্যাঁ আসলেই ওর বুকে কিছু নেই৷ আবির চাইলে অনেক কিছু দেখতে পারতো এতক্ষণে। কিন্তু ও সেটা না করে চোখ বন্ধ করে অন্যদিকে তাকিয়ে ছিল! এত ভালো আবির? জান্নাতের মনে অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করে আবিরকে নিয়ে৷ আবিরের জন্য ওর সম্মান অনেক গুণ বেড়ে যায়৷ কিন্তু এখন ওকে নিজেকে ঢাকতে হবে৷ তাই ও দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে ওর ব্যাগ থেকে একটা ওড়না নিয়ে সোজা ওয়াশরুমের সামনে গিয়ে বলে,
~ আমি ওয়াশরুমে যাচ্ছি, আপনি এবার চোখ খুলতে পারেন৷
বলেই জান্নাত ওয়াশরুমে চলে যায়। আর আবির আস্তে করে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে সত্যিই জান্নাত নেই। এবার ও ওর হাতের দিকে তাকায়। জান্নাত খুব সুন্দর করে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। আবির এখন ওর হাতটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে, ও এটা কি করলো? এভাবে একটা মেয়ের সাথে! ওর ভাবতেই খুব খারাপ লাগছে৷ আবির শুধু ভাবছে ও কিভাবে এখন জান্নাতকে মুখ দেখাবে? এদিকে ফ্লোরে রক্ত দেখে আবির নিলয়কে ডাক দিয়ে দ্রুত এগুলো পরিষ্কার করতে বলে। নিলয় আবিরকে জখম দেখে অবাক হয়ে যায় আর জিজ্ঞেস করে, স্যার কি হয়েছে? স্যার কি হয়েছে? কিন্তু আবির কিছু বলে না৷ নিলয় জানে আর প্রশ্ন করা ঠিক হবে না৷ তাই ও দ্রুত ফ্লোর পরিষ্কার করে জান্নাতের রক্তাক্ত ওড়নাটাও সাথে করে নিয়ে চলে যায়৷ নিলয় রুম থেকে বের হতেই জান্নাত বের হয়। বাইরে এসে দেখে পুরো রুম পরিষ্কার। শুধু ওয়ালটায় একটু রক্ত লেগে আছে। জান্নাত দেখে আবির চুপচাপ রুমের এককোণায় বসে আছে৷ জান্নাত ওকে দেখে বুঝতে পারে আবির ওর কাজে অনুতপ্ত। জান্নাতের কানে আবিরের একটু আগে বলা প্রতিটি কথা এখনো স্পষ্ট ভাসছে৷ আবিরের স্পর্শ এখনো ওর শরীরে লেগে আছে। জান্নাত তা অনুভব করতে পারছে৷ ও আস্তে আস্তে হেঁটে আবিরের পিছনে এসে দাঁড়ায়। আবির ওকে অনুভব করে বলে,
– আমি অনেক দুঃখিত আমার আচরণের জন্য। তুমি হয়তো আর এখানে থাকতে চাইবে না৷ যাও চলে যাও। আমার মতো একটা খারাপ মানুষের কাছে কেউই থাকবে না৷ চলে যাও তুমি। (খুব কষ্ট নিয়ে কথাগুলো আবির বলল)
জান্নাত আবিরের কথাশুনে বুঝতে পারে আবির খুব কষ্ট পেয়েছে এমন আচরণ করে। ওকে এত কষ্টে দেখে জান্নাতেরও কষ্ট হচ্ছে৷ ও চায় আবির হাসিখুশি থাকুক। কিন্তু কিভাবে এখন ও আবিরকে স্বাভাবিক করবে? হঠাৎই জান্নাতের মাথায় আবিরের একটা কথা মনে পড়ে। একটু আগেই আবির সেটা বলেছে। এই একটা রাস্তাই হয়তো আবিরকে একদম স্বাভাবিক করে দিবে৷ কিন্তু এই রাস্তাটা কঠিন জান্নাতের জন্য৷ ও পারবে কিনা জানে না৷ তাও আবির ওর জন্য নিজেকে আঘাত করেছে। তাই এটুকু তো ও করতেই পারে৷ জান্নাত আর কিছু না ভেবে আবিরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আবির মাথা নিচু করে আছে৷ জান্নাত বলে,
~ দাঁড়ান।
আবির মাথা তুলে ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে,
– কি বললে?
~ দাঁড়াতে বলেছি দাঁড়ান৷
আবির কথা না বাড়িয়ে দাঁড়ায়। ও ভাবে জান্নাত হয়তো ওকে আরেকটা থাপ্পড় দিয়ে যাবে৷ কিন্তু আবির দাঁড়াতেই জান্নাত ওকে সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে ওর…
চলবে..?