#অনুভূতির_কেন্দ্রবিন্দু_তুমি
#পর্বঃ২৩
#সুমাইয়া_সানজুম_ঐশী
“কিন্তু তোমার পায়ে কাচের টুকরো ঢুকলো কীভাবে আর কপালই বা ফা*টালে কীভাবে? ”
_তোরা ওকে এভাবে জোঁকের মমতো ধরে বসে আছিস কেন? ওর জ্ঞান ফিরেছে আমাকে বলিস নি কেন!সবগুলো গল্পের আসর বসাইছিস।ও যে এখন পর্যন্ত কিছু খায় নি বেয়া*ক্কেল গুলোর খবর নাই।আঁধার আমার কাছে না গেলে তো জানতেই পারতাম না। বের হহ তোরা।
মায়ের কড়া কথাগুলোতে তারা তিনজন বেড ছেড়ে সোফায় জায়গা দখল করে নিল।মা এসে আমার পাশে বসলেন।মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন
_কেমন লাগছে এখন? আর পা কাট*লো কিভাবে?
_ফ্রেম ফ্লোরে পড়ে ভে*ঙে গেছিলো হয়তো। আমি বেখেয়ালিতে না দেখে পা’রা দিয়ে দিয়েছি।তখন কপালে কিছু র সাথে লেগেছিলো।
_এতো বেখেয়ালি হলে মেয়েদের চলে না মা। নিজের কি অবস্থা হয়েছে দেখেছো!দেখি হা করো,আবার মেডিসিন নিতে হবে। তাড়াতাড়ি
আমার খাওয়ার মাঝেই আঁধার রুমে ঢুকলেন। মা তাকে দেখেই বললেন
_তোমার খাবার এখানে পাঠানোর ব্যবস্থা করবো নাকি নিচে যাবে?নাকি আজকে উপোস থাকার ইচ্ছে আছে!বুড়ি বয়সে আমাকে আর কতো জালাবা তোমরা!
_তুমি নিচে খাবার রেডি করো।আমি শাওয়ার নিয়ে নিচে আসছি।
এ কথা বলে তিনি ওয়াশরুমে দরজা লাগিয়ে দিলেন।
সন্ধ্যার পর নিচ থেকে অনেক শোরগোলের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। আমার ওয়াশরুম যাওয়া প্রয়োজন কিন্তু রুমের আশেপাশে কেউ নেই যে আমাকে একটু ধরে নিয়ে যাবে।অনেক সময় পার হয়ে গেছে কিন্তু কারো দেখা নেই।তাই নিজেই চেষ্টা করে উঠলাম। ডান পা টা নাড়ার শক্তি পাচ্ছি না। তারপরও একপায়ের উপর ভর দিয়ে আগানোর চেষ্টা করতেই কাটা জায়গায় প্রচন্ড ব্যথা লেগে পরে যেতে নিলেই একখানা শক্তপোক্ত হাত আমার কোমড় আগলে ধরলো। আমি চোখমুখ খিচে রয়েছি। পায়ের তালু থেকে আবার ব্লি*ডিং হওয়া শুরু হয়েছে। তখনই সেই চিরচেনা গম্ভীর গলার স্বর শুনতে পেলাম,
_তোমার কি একটুও আক্কে*ল জ্ঞান নেই!কাটা পা নিয়ে ফ্লোরে নেমেছো কেন।আমি না ধরলে তো এক্ষুনি পড়ে যেতে।দেখো ব্যান্ডেজ থেকে আবার র*ক্ত গড়াচ্ছে।
আমাকে ধরা অবস্থায় বললেন আঁধার
_আপনাকে ধরতে বলিনি আমি।পড়লে পড়তাম। দেখি ছাড়ুন আমাকে আমি ওয়াশরুমে যাবো।
সে আমার কথার পাত্তা না দিয়ে আমায় ধরে বেডে বসিয়ে দিলেন। পায়ের ব্যান্ডেজ চেঞ্জ করে কোলে তুলে নিলেন। আমি হক*চকিয়ে উঠলাম। নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে বললাম,
_আরে আমাকে ধরে নিলেই তো হতো। নামান।আপনার এরকম ডং আমার বি*রক্ত লাগছে। প্লিজ নামান আমাকে
সে পুনরায় আমাকে অগ্রাহ্য করে ওয়াশরুমের সামনে এনে আমরা নামিয়ে দিয়ে বললেন
_মহারানী আপনাকে যেহেতু আমি ফেলেছি তাই সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আমার এরকম ডং আপনার বিরক্তি লাগলেও সহ্য করতে হবে।
আমি তো নিজে নিজেই পড়েছি আর উনি ভাবছেন তার ধা*ক্কায় পড়েছি।তাই অনু*শোচনা হচ্ছে তার!
_দেখুন আমি আপনার ধাক্কা*য় পড়িনি। নিজের দোষেই পড়ছি তাই আপনার এতো দয়া দেখানো লাগবে না। এ কথা বলেই আমি ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে দিলাম।
বের হয়ে দেখি এখনো তিনি দাড়িয়ে আছেন। তাই বললাম,
_আমাকে ধরে নিয়ে চলুন। আসমানে তোলা লাগবে না।
কিন্তু এই বনমোরগের তো ঘাড়ের সব-কয়টা রগই ত্যাড়া। আবার আমায় শূন্যে তুলেই বিছানায় বসিয়ে দিলেন।
_তোমায় আসমানে তুলি নি,কোলে নিয়েছি।পায়ের ব্যান্ডেজ মাত্র লাগিয়েছি বেশিক্ষণ হাটলে আবার ব্লিডিং হবে।তাই আর নিচে নামার দরকার নেই। নিচে মেহমান আছে তাই মা আসবে না এই রুমে। রোজা খাবার নিয়ে আসলে দয়া করে খেয়ে নিবেন, মহারাণী।
এ কথা বলে তিনি নিচে চলে গেলেন।
____
_পিচ্চি জানো তোমার জন্য আমার আফসোস হচ্ছে তুমি আলোর বরকে দেখতে পেলে না!ছেলে সেই!
মানে কি! আলো আপুর বর কোথা থেকে আসছে! তাই রোজা আপু কে জিজ্ঞেস করলাম,
_আলো আপুর বর কোথা থেকে আসছে। ওই রবিন না ববিন জেলে।
আমার কথা শুনে হেসেই রোজা আপু বললেন,
_আরে ওই হা*রামজাদা না।আজকে আলোকে দেখতে এসেছে।তুমি ছেলের বাবাকে চিনো।তোমাদের ভাসিটির প্রিন্সিপাল এর ছেলে।মামা আর ভাইয়ার নাকি পরিচিত তাই একেবারে বিয়ের ডেইট ফিক্সড করে গেছে তারা।বিয়ে সাত দিন পরে।ঘরোয়া ভাবে এখন বিয়ে হবে। আলোর এক্সাম এর পর রিসিপশন হবে। ততদিন আলো এখানেই থাকবে। আজ আংটি বদল ও হয়ে গেছে।
_আলো আপু রাজি হয়েছে?এতো তাড়াতাড়ি সব কীভাবে হলো?
_আরে হবে না কেনো রাজি!মামার কথার উপর ধ্রুব ভাইয়া কথা বলতে পারে না আর আলো তো দুধভাত। তাছাড়া ছেলে ভালো,শিক্ষিত, বিশ্বাসযোগ্য।নিজের ডিজাইন হাউজ আছে, দুটো কোম্পানির ওনার তাই আলো র না করার রাস্তা নেই।আমাকে ভাত খাইয়ে দিতে দিতেই বললেন রোজা আপু
আমিও চিন্তা মুক্ত হলাম। আগের টার মতো অন্তত চরি*ত্রহীন পুরুষ নয়।loyal মানুষের সাথে কুড়েঘরে থেকেও শান্তি আছে।আপুর মানসিক কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে।
আমি টিভি দেখার কথা বলে রোজা আপুর সাহায্যে সোফায় এলাম। রোজা আপু আমার সামনে মেডিসিন আর পানি দিয়ে চলে গেছেন। আমিও খেয়ে সোফায় শুয়ে পরলাম। বিছানায় উনার পাশে ঘুমানোর কোনো প্রয়োজন নেই। কতদিন পর তার রাস্তা আর আমার রাস্তা পুরোপুরি আলাদা। তাই এতো আদিক্ষেতা মোটেও আমার ভালো লাগছে না। তার প্রতি মায়া বাড়িয়ে লাভ নাই। পরে তাকে ছাড়া থাকতে আমার কষ্ট হবে।
___
আঁধারের আজ ভীষণ ব্যস্ততা। প্রিন্সিপাল স্যার এর আসার কথা সে জানতো কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি তারা বিয়ের ডেইট ফিক্সড করবে তা তার ধারণার বাহিরে ছিলো। যার দরুন তাকে আজ থেকেই কাজের চাপ সামলাতে হচ্ছে।রাতের খাবার পাট চুকিয়ে সে রুমে এসে দেখে ঐশী সোফায় ঘুমাচ্ছে। এতে তার মেজাজ বিগড়ে গেল।
_এই মেয়ে জীবনে ও শোধ*রাবে না। মানা করার পরও ত্যাড়ামি করবেই। দিন দিন সাহস তার লম্বাই হচ্ছে।ইচ্ছে তো করছে থাপড়ে দাত ফেলে দিতে।কাটা পা নিয়ে লাফালাফি করতেই হবে।
আঁধার গিয়ে ঐশীর পা চেক করে দেখে ঠিক আছে। রক্ত চোয়াচ্ছে না।তাই সে সাতপাঁচ না ভেবে কোলে তুলে নিলো।
ঘুমের মধ্যেই মনে হচ্ছে আমি শূন্যে ভাসছি।চোখ মেলে হত-বিহবলতার চূড়ান্ত পযার্য়ের চলে গেলাম।কিছু বুঝে ওঠার আগেই আঁধার কে নিজের খুব কাছে আবিষ্কার করলাম। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি,খাড়া নাক,পুরু ঠোঁটের সেই সুদর্শন পুরুষ কে সজ্ঞানে নিজের এতো কাছে দেখে অযাচিত চিন্তা ভাবনা নিজের মস্তিষ্কে বাসা বাধলো। নিজেকে সংযতচিত্তে কিছু বলতে যাবো তার আমায় বিছানায় রেখে বললেন,
_তোমার সাহস কি করে হয় এতো ত্যারা*মো করার। আমার কথা অগ্রাহ্য করছো।তোমায় সোজা কি করে করতে হয় তা এই আঁধার রেজোয়ান চৌধুরীর খুব ভালো করে জানা আছে।
দাতে দাত খিচে সে কথা গুলো বললেন। এমন রে*গে কথা বলার আগা মাথা কিছুই খুঁজে পেলাম না। তাই কোনো রকম জিহবা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললাম,
_আমাকে এখনে এনেছেন কেনো!আমি সোফায় ঘুমাবো।এতো দিন যখন সোফায় ঘুমানো তে আপনার সমস্যা হয়নি তবে আজও হবে না
।এইকথা বলে আমি উঠতে যাবো তার আগেই তিনি বিছানায় আমাকে চেপে ধরলেন। কালক্রমে আমি অবাক হওয়াটাও ভুলে যাচ্ছি।আমাদের মাঝের দূরত্ব ক্ষীণ হয়ে এলো।আমার জেদ,রাগ সব এক অজানা অনুভূতিতে রুপান্তর হলো। তার সেই রাগা*ন্বিত দৃষ্টির সাথে আমার দৃষ্টি বিনিময় হলো। চোখে চোখ রেখেই বললেন
_তুমি এখন থেকে এখানেই ঘুমাবে। বিছানা থেকে নামলে পরের পা টাও আমি ভে*ঙে দেব।
#চলবে