অনুভূতির_কেন্দ্রবিন্দু_তুমি #পর্বঃ২০ #সুমাইয়া_সানজুম_ঐশী

#অনুভূতির_কেন্দ্রবিন্দু_তুমি
#পর্বঃ২০
#সুমাইয়া_সানজুম_ঐশী

হারিয়ে গিয়েছো কোথায় কখন,
একটুকু টেরও পাইনি
হারিয়ে যাওয়া প্রহরগুলো তোমার কাছে চাইনি(২)

কাছের তোমায় ঝাপসা দেখি
দূরের তুমি অদৃশ্য
আঁধার কালো মেঘের পাড়ে নির্বাসিত আমি(বাকিটা কাইন্ডলি নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন)

মনোমুগ্ধকর সুর। মনে হচ্ছে আমি তাহসানের গলায় গানটি শুনছি।কি সুন্দর করে গাইলেন তিনি। ঠিক ধরেছেন, গানটি আঁধারই গেয়েছেন। তার ফ্রেন্ড এর রিকোয়েস্ট তিনি ফেলতে পারেন নি। পুরো টা গান তিনি আমার দিকে চেয়ে গাইলেন।তার দুটি চোখে হয়তো কিছু লেখা ছিল কিন্তু তার সেই চোখের ভাষা পড়তে ব্য*র্থ হয়েছি আমি। হটাৎ সবাই নিচ থেকে চেচামেচির আওয়াজ শোনা গেল। সবাই দ্রুত নিচে নেমে গেল। গিয়ে যা দেখলাম তাতে আমরা সবাই হতবিহ্বল। বাসার নতুন কাজের আন্টি কোমড়ে হাত রেখে পাশের বাড়ির নীচ তলার ভাড়াটিয়াদের সাথে কোমড় বেধে ঝগ*ড়া করছে।

_তোয়ারার হত্তো বড় সাহস,গেটের দেয়ালের উফর উডিয়েরে অন্যের গাছের আম আর লেবু চু*রি হরোর,গাছ ইডিন তোয়ারার বাফের দিন্না না?জিগিন জিগিন চুরি হোরিও ফেরত দন লাগিবো নয়ত তোয়ারার বাড়ির জমিদারোর কাছে বিচার দিউম দে।

_আরে আমার ছেলেটা বাচ্চা। দু’একটা আম পেড়েছে তাতে এমন কি হয়েছে! আর ও তো প্রায়ই পাড়ে তাতে গাছের মালিকদের কোনো সম*স্যা হয় না। তারা তো ডাক দেয় না। তাহলে আপনি এমন করছেন কেনো? পাশের বাসার ভাড়াটিয়া মহিলা বললেন। তার কথা শুনে কাজের আন্টি যেন আরও ক্ষেপে উঠলেন। কড়াকড়ি ভাবে বললেন,

_তোয়ারা বাজি ভালা হতার মানুষ ন। পোলাপাইনরে লেহাপড়া না শিখাইয়েনে চু*রির শিক্কা দেওর। আবার বড়াই ওও করোর। আই বুজি গেয়ি তোয়ারার জমিদারের তুন বিচার দন লাগিবো অন।

এবার পাশের বাসার ভাড়াটিয়া মহিলা একটা ঝুড়িতে ৬টা লেবু আর ১০-১২টা আম হবে কাজের নতুন আন্টির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,

_তুমি অনেক খারা*প মানুষ, তোমার আগের কাজের মহিলাটা অনেক ভালো ছিল

_উচিত হইলে ব্যাক হা*রাপ।

আন্টিটা একথা বলে ঝুড়ি এনে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,

_তুমি নতুন বউ মানুষ তাই তোমার এখন এগুলো দরকার। নেও এগুলো নিয়া যাও(আমি আন্টির চট্টগ্রামের ভাষা বুঝি না তাই তিনি আমার সাথে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলেন)

তার কথা শুনে সবাই মিটিমিটি হাসছেন। আশ্চর্য এখানে হাসাহাসির করার কি আছে!তাই তাড়াতাড়ি ঝুড়ি টা নিয়ে রান্নাঘরের দিকে এগুলাম।

⭐⭐

পরের দিন,,আমি রুমের জিনিসপত্র গোছাচ্ছিলাম।তখনই উনার ফোনের রিংটোন বেজে উঠল।উনি ওয়াশরুমএ। রিসিভ করবো কি করবো না তা ভাবতে ভাবতে কল কেটে গেলো। পরবর্তী বার আবার রিংটোন বাজতেই আমি রিসিভ করলাম।

_আসসালামু আলাইকুম

_হ্যালো ম্যাম,আমি Chowdhury & Group company থেকে ম্যানেজার বলছি।মিস আলো রেজোয়ান চৌধুরী এখানের third floor এ প্রচুর ভাং*চুর করছে। দুইজন অলরেডি ইনজু*রড।অনুগ্রহ করে আপনারা উনাকে বাসায় নিয়ে যান।

আমি কিছু বলবো তার আগেই আঁধার বেড়িয়ে আসলো।

_কে কল দিয়েছে?

আমি কিছু না বলে তার দিকে ফোনটা এগিয়ে দিলাম।

_হ্যালো, কে বলছেন?

-…(ওপাশ থেকে কি বললো শুনতে পাইনি)

_ওকে আমি আসছি, আপনারা খেয়াল রাখুন ওর।এ কথা বলে তিনি বের হওয়ার জন্য প্রস্তুত হতেই আমি বললাম,

_আমিও যাবো আপনার সাথে।

_তুমি সেখানে গিয়ে কি করবে?আমি আলোকে নিয়েই চলে আসবো।তাছাড়া তোমার তৈরি হতেও সময় লাগবে। এতো সময় নেই।

_না প্লিজ আমি যাবো, আমার চিন্তা হচ্ছে আপুর জন্য।আমি ওখানে কিচ্ছু উল্টা পাল্টা করবো না।দয়া করে আমায় নিয়ে চলুন। আমি এভাবেই ঠিক আছি। তৈরি হওয়া লাগবে না। প্লিজ।

উনি কিছু একটা ভেবে বললেন,

_চলো

আমিও দ্রুত তার পিছু পিছু গাড়িতে উঠে বসলাম । আমার আলো আপুর জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে।যতদূর জানি ওই কোম্পানিতে আলো আপুর উডবি রবিন জব করেন। কিন্তু আলো আপু সেখানে ভাং*চুর কেনো করবেন! আবার শুনলাম সেখানে কয়েকজন নাকি injured। আলো আপু কেনো এমন করছে।রবিন ভাইয়া ঠিক আছে তো!এসব চিন্তার মাঝেই আমরা সেখানে পৌঁছে যাই।

আমি কোম্পানির নাম দেখেই বুঝেছি তাই উনি নামার আগেই তাড়াতাড়ি নেমে ভিতরে গেলাম।উনি পেছনে ডাকছিলেন। আমি না শুনেই তাড়াতাড়ি লিফটে যাবো তখনই দেখি কারেন্ট নেই তাই লিফট বন্ধ। তাই সিড়ি দিয়েই দ্রুত সেখানে পৌছালাম। সেখানে গিয়ে আমি স্তব্ধ!

রবিন ভাইয়ার মাথা থেকে র*ক্ত ঝরছে, পাশে আরো একজন মেয়ে আছে তার সেইম অবস্থা। আলো আপুকে আঁধারের বয়সি একজন পুরুষ ধরে রেখেছে। আপুর হাতে ফুলদানি রয়েছে।চোখ মুখ ফুলে আছে হয়তো কান্না করেছে।খুব বি*ধস্ত দেখাচ্ছে আপুকে। আমি গিয়ে আপুর সামনে দাড়ালাম। আপুকে ধরে রাখা লোকটা কে বললাম,

,_আপনি আপুকে এভাবে ধরে রেখেছেন কেনো, ছাড়ুন আপুকে।

লোকটি আমায় বললো,

_আপনি আলোর হাত থেকে ফুলদানি টা নিন।তারপর ছাড়ছি।

আমি আপুর হাত থেকে ফুলদানিটা নিয়ে নিলাম। এবার ওই লোকটা আপুকে ছেড়ে দিলো।আপু ছাড়া পাওয়া মাত্রই আমাকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলেন।

ততক্ষণে আঁধার ও আপুর কাছে এসেছেন। তিনি দাড়িয়েই সামনে থাকা লোকটাকে বললেন,

_ভোর! তুই এভাবে আলোকে আটকে রেখেছিলি কেন? আর তুই বিডিতে কখন এলি!!

লোকটা মুচকি হেসে বললেন,

_গত রোববার এসেছিলাম। আর হ্যাঁ তোর গুনধর বোনকে ধরে না রাখলে সে মি.রবিন আর মোনালিসা কে খু*ন করে নিজের জেলে যাওয়ার ব্যবস্থা করতো।ওকে সামলা।আই থিংক ও মানসিক ভাবে খুব হার্ট হয়েছে। সামলাতেই পারছিলো না কেঊ। আমি নিজেও হাপিয়ে গেছি। তাই বাধ্য হয়েই ধরে রেখেছিলাম এতক্ষণ।

তাদের কথাবার্তায় বুঝলাম এনারা একে অপরকে আগে থেকেই চিনে।এরমাঝেই খেয়াল করলাম আলো আপু গা ছেড়ে দিয়েছে। আমি তার ভার ধরে রাখতে পারছিলাম না। তাই আওয়াজ দিলাম,

_আপুউউ,,আঁধার দেখুন না,আপু সেন্সলেস হয়ে গেছে। ধরুন আপুকে।

আঁধার তাড়াতাড়ি আপুকে ধরলেন। ওই ভাইয়াটা আপুকে নিয়ে তার কেবিনে যেতে বললেন। আঁধার আপুকে কোলে তুলে নিয়ে কেবিনের ভিতরের সাইড সোফায় শুয়িয়ে দিলেন।আমি গ্লাস থেকে আপুর মুখে পানি ছিটাচ্ছি। কয়েকবার ছিটানোর পর আপুর জ্ঞান ফিরলো।আপু এবার আবারও আমায় জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলেন। আঁধার অনেক জিজ্ঞেস করেছে কি হয়েছে জানার জন্য কিন্তু আপুর কাছ থেকে কোনো উত্তর পায়নি তাই সামনে থাকা রবিন কলার ধরে ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলেন,

_আমার বোনের কি হয়েছে? ও এরকম কা*দছে কেন?তোমাদের মধ্যে কি নিয়ে ঝা*মেলা হয়েছে যে ও এভাবে কাদছে?বলো,

রবিন ভাইয়া মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছেন। কোনো উত্তর দিচ্ছেন না

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here