love is like a Cocktail,Part: 07
Writer: Abir Khan
জান্নাত অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে। কপাল ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। এদিক দিয়ে আরমান খানের গুন্ডারা দৌড়ে আসছে ওকে মারতে৷ কিন্তু হঠাৎই সবাই দাঁড়িয়ে যায়। কারণ যে গাড়িটার সামনে জান্নাত পড়েছে সেটা আর কেউ নয় কিং এর। হঠাৎ কিং এর জি ওয়াগান গাড়ি থেকে ডেড সাইরেন বেজে উঠে। যেটা একমাত্র কিং এর গাড়ির হর্ণ। সাইরেন শুনে আশেপাশের সব মানুষ থরথর করে কাঁপতে থাকতে থাকে ভয়ে। অনেকে তো ভয়ে পালাচ্ছে। কিং এর পিছনের গাড়িগুলো থেকে ওর লোকেরা আর্মস সহ বেড়িয়ে আসে৷ এসে কিং এর জন্য গাড়ির দরজা খুলে দেয়। এবার কিং গাড়ি থেকে নামে। সেই মুখে গোল্ডেন মাস্ক আর পরনে ডার্ক কালারের ব্ল্যাক স্যুট আর প্যান্ট। কিং গাড়ি থেকে নেমে জান্নাতের দিকে একবার তাকিয়ে আরমানের লোকদের দিকে তাকায়। ব্যাস কাজ শেষ। ওরা ভয়ে অস্র ফেলে প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে পালাতে থাকে। এবার কিং জান্নাতের কাছে যায়। ও এখনো জানে না এটা যে জান্নাত। কিং দ্রুত জান্নাতের কাছে গিয়ে ওকে ঘুরাতেই দেখে এটা জান্নাত। এবার কিং না আবির জেগে উঠে। ও ভীষণ অবাক হয় জান্নাতকে এভাবে দেখে৷ আর সাথে প্রচন্ড রাগ আর খারাপ লাগে ওকে এভাবে দেখে৷ আবির আর একমুহূর্ত সময় নষ্ট না করে জান্নাতকে কোলে তুলে ওকে নিয়ে সোজা ওর বাসায় চলে আসে। আসার পথে ওরা ওদের সিক্রেট বেইস থেকে গাড়ি পরিবর্তন করে আবিরের নরমাল গাড়িতে করে জান্নাতকে ওর বাসায় নিয়ে আসে। আসার আগে রিয়াদকে খবর দিয়ে দেয় আবির। রিয়াদ ট্রিটমেন্ট এর জন্য যা যা প্রয়োজন সেসব নিয়ে আবিরের বাসায় চলে আসে। তারপর দ্রুত জান্নাতের ট্রিটমেন্ট করে ওকে মেডিসিন দিয়ে দেয়। আবির পুরো সময়টা জুড়ে জান্নাতের কাছেই ছিল। ও ঠিক বুঝতে পারছে না, এত গুলো গুন্ডা কেন জান্নাতের মতো মেয়ের পিছনে পড়ে আছে। রিয়াদ আবিরকে জিজ্ঞেস করে,
– দোস্ত মেয়েটা কে? আর ওর এ অবস্থা হলো কিভাবে?
– হঠাৎ কোথা থেকে যেন এসে আমার গাড়ির সামনে পড়ে৷ ভাগ্য ভালো নিলয় সময় মতো ব্রেক কষেছিল। কিন্তু একটু একটু ধাক্কা লেগে পড়ে এ অবস্থা।
– ওহ! আচ্ছা চিন্তা করিস না। ভয়ের কিছু নাই। বেশি জোরে আঘাত পায় নি। মেয়েটা বোধহয় ভয়েই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল।
– হুম৷ ওর হুশ আসবে কখন?
– তিন থেকে চার ঘন্টার মধ্যে আসার কথা। না আসলে আমাকে খবর দিস৷
– আচ্ছা।
– তাহলে যাই আমি।
– আচ্ছা৷
রিয়াদ যেতে গিয়েও আবার আবিরের কাছে এসে বলে,
– তুই কি মেয়েটাকে চিনিস?
– কেন!
– না মানে অপরিচিত একটা মেয়েকে তো তুই কখনো বাসায় আনিস না৷ আবার তার উপর তোর নিজের মাস্টার বেড রুমে ওকে এনেছিস। তাই জিজ্ঞেস করলাম।
– হুম তোর ধারণা ঠিক। আমি ওকে চিনি৷ আমার হাতে যে গুলি লেগেছিল ওই তো আমাকে সাহায্য করেছিল।
– ওওও। আচ্ছা ওর খেয়াল রাখিস। কোন সমস্যা হলে কল দিস।
– হুম।
রিয়াদ বিদায় নিয়ে চলে যায়। জান্নাত আবিরের মাস্টার বেডে শুয়ে আছে। আবির পাশের সোফাটায় হেলান দিয়ে জান্নাতের ব্যান্ডেজ করা মুখখানার দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে, ভাগ্যের কি খেলা, যে মেয়েটা একসময় ওর জীবন বাচিঁয়েছিল আজ সেই ওর কাছে নিজের জীবন বাঁচাতে চলে আসে। আজ আবির মানে কিং না থাকলে হয়তো জান্নাতের জীবনটাই এতক্ষণে শেষ হয়ে যেত। মাঝে মাঝে আবিরের মনে হয়, এ শহরে একটা কিং আসলেই থাকা উচিৎ। রাত এখন প্রায় ১১ নাগাদ বাজে । আবির জান্নাতের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যেন সোফাতেই হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘড়ির কাটা ঘুরতে ঘুরতে রাত এখন তিনটা বাজে৷ হঠাৎই জান্নাত জোরে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে,
~ প্লিজ কেউ আমাকে বাঁচান৷ ওরা আমাকে মেরে ফেলবে৷ কেউ বাঁচান আমাকেএএএএ……
আবিরের সাথে সাথে ঘুম ভেঙে যায়। ও দেখে জান্নাত হুশে এসে ভয়ে আবোল তাবোল বলছে। ও মুহূর্তেই জান্নাতের কাছে গিয়ে ওর পাশে বসে ওর হাতটা শক্ত করে ধরে ওকে বলে,
– শান্ত হও জান্নাত শান্ত হও। আর ভয় নেই। কেউ তোমাকে মারতে পারবে না আর। এই যে আমি আছি।
জান্নাত আবিরকে দেখে একদম চুপ হয়ে যায়। ও মলিন মুখখানা নিয়ে আবিরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আবির ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
– আর ভয় নেই৷ তোমাকে আর কেউ কিছু করবে না।
জান্নাত এবার নিঃশব্দে অঝোরে কেঁদে দেয় আবিরের দিকে তাকিয়ে থেকে। আবির কি করবে ঠিক বুঝতে পারছে না৷ এরকম পরিস্থিতিতে ও আগে কখনো পড়ে নি৷ তাই অজান্তেই ও জান্নাতকে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে মাথার পিছনে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। আর বলতে থাকে,
– প্লিজ এভাবে কান্না করো না৷ তুমি এমনিই অসুস্থ। শান্ত হও৷ আর ভয় নেই৷
জান্নাত কিভাবে যেন আস্তে আস্তে শান্ত হয়৷ শত হলেও আবিরের কাছে ও। জান্নাত আস্তে আস্তে কান্না থামিয়ে আবিরকে ছেড়ে আশেপাশে তাকিয়ে বলে,
~ আমি কোথায়?
– তুমি এখন আমার বাসার বেড রুমে৷
জান্নাত অবাক হয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে থাকে৷ তারপর একটু ভেবে বলে,
~ কিন্তু আমি আপনার বাসায় আসলাম কিভাবে? আমার পিছনে তো অনেক গুলো গুন্ডা পড়েছিল।
– হুম কিন্তু তুমি আমার গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাও। কপালে একটু আঘাতও পাও। তারপর কিভাবে যেন অজ্ঞান হয়ে যাও৷ আমি দ্রুত তোমাকে আমার গাড়িতে তুলে বাসায় নিয়ে আসি গুন্ডাগুলো ধরার আগে৷
জান্নাত মাথায় হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকে। ওর খুব ভয় করছে, খুব খারাপ লাগছে। এই অল্প সময়ে ওর জীবনে যে এত বড়ো বড়ো ঝড় আসবে ও কখনো কল্পনাও করে নি। কিন্তু শেষমেশ যে সেই আবিরের কাছেই ওর ঠাই হবে তা জান্নাত ভাবে নি। জীবনটা কত অদ্ভুত! একের পর এক সারপ্রাইজ। প্রথম হৃদয়ের ধোকা, তারপর এই গুন্ডা আর এখন এই আবির। আবির কোন কিছু না বলেই হঠাৎ ওকে ধরে শুইয়ে দেয়৷ তারপর বলে,
– বলেছি তো আর ভয় নেই৷ এখন চুপচাপ ঘুমাও। সকালে সব কথা হবে৷ অনেক প্রশ্ন আছে তোমার কাছে আমার।
– আমি সকালে আমার বাসায় যাবো। (আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল)
– সরি। সেটা আর হবে না৷ তোমাকে এখানেই থাকতে হবে৷ কারণ তুমি এখান থেকে বের হলে ওই গুন্ডা গুলো আবার নিশ্চিত অ্যাটাক করবে৷ সো আপাতত ওই বাসার কথা ভুলে যাও। আমার লোকেরা বাড়িওয়ালার সাথে গিয়ে কথা বলে আসবে৷ তুমি কোন চিন্তা করো না৷
জান্নাত স্তব্ধ হয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর মাথায় এখন একটাই প্রশ্ন খুব ঘুরপাক খাচ্ছে৷ আর সেটা হলো,
~ আচ্ছা আপনি এত বড়ো একটা মানুষ কিন্তু আমার জন্য এতকিছু কেন করছেন? কেন আমার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিলেন?
আবির জান্নাতের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
– সেদিন আমি কি জিজ্ঞেস করেছিলাম তুমি কেন আমার এত সেবা করছো?
জান্নাত ওর উত্তর পেয়ে যায়৷ আবির আবার বলে,
– এত কিছু না ভেবে চুপচাপ ঘুমাও। সকালে কথা হবে৷
~ জি৷
আবির ওর রুমের বারান্দায় চলে যায়। গিয়ে নিলয়কে ফোন দিয়ে বলে,
– ওই গুন্ডা গুলো কার লোক ছিল খবর লাগা।
– ওকে স্যার।
কল রেখে আবির আকাশের পানে তাকিয়ে দেখে বেশ সুন্দর একটা চাঁদ উঠেছে। পুরো নিস্তব্ধ শহরটা চাঁদের আলোতে আলোকিত হয়ে আছে ওর সামনে। এই নিস্তব্ধ শহরটার কিং ও৷ কিন্তু ও কত একা। ওর পাশে কেউ নেই৷ এই শহরটাই ওকে একা করেছে। আবির কখনো চায় নি এরকমটা৷ আবির চেয়েছিল এসব ছেড়ে মাইশাকে ওর এই পাশে নিয়ে জ্যোৎস্না রাতটা উপভোগ করবে৷ ওকে খুব খুব ভালবাসবে৷ কিন্তু তার কিছুই হলো না। আবির ভেবেছিল ওর পোড়া হৃদয়টাকে মাইশা ভালবাসা দিয়ে আবার ভালো করে দিবে৷ কিন্তু ও তো আরো একদম শেষ করে দিল। ওর ভিতরের আগুনটা আবার জ্বালিয়ে দিয়ে গেল মাইশা। আবির শক্ত করে ওর বারান্দার রেলিংটা ধরে আছে। এ শহরের এই নিস্তব্ধতা ওর হাতেই শেষ হবে। এরপর আবির একসময় রুমে এসে সোফাতে ঘুমিয়ে পড়ে।
অন্যদিকে আরমান খানের কাছে ওর গুন্ডারা গিয়ে হাপাতে হাপাতে বলে,
– স্যার এই মেয়েটারে কিং নিয়া গেছে। তার গাড়ির সাথে ধাক্কা খাইছে মেয়েটা। জানি না বাইচা আছে কিনা৷ আমরা দেখছি রাস্তা পড়াছিল।
– হায়! হায়! এহন তো আরো ঝামেলা। কিং তো ১০০% তোগো খোঁজ লাগাইবো। যদি জানে এই কাজ আমার লোকের তাইলে আমার কি হইবো? ওই ফাইটের প্রস্তুতি নে৷ কিং যে কোন সময় আইতে পারে।
– আচ্ছা স্যার৷ আই আয়৷
পরদিন সকালে,
এখন সকাল ১১ টার মতো বাজে৷ আবির আর জান্নাত ঘুম। এদিকে আবিরের বাসায় বেল পড়ে। নিলয় সিসি ক্যামেরায় দেখে নেহাল এসেছে৷ ও দ্রুত দরজা খুলে দেয়৷ নেহাল বাসার ভিতরে ঢুকে বলে,
– ভাই কই?
– স্যার তো ঘুমাচ্ছেন৷
– কি! এত সকাল পর্যন্ত? অসুস্থ নাকি?
– না না, আসলে একটা কাহানী হয়েছে গত রাতে৷
– কি কাহানী তাড়াতাড়ি খুলে বলো।
– আসলে কাল রাতে….
নিলয় নেহালকে সব খুলে বলে। ও সবটা শুনে ভ্রুকুচকে উপরে আবিরের রুমে চলে আসে। এসে নক দেয়। দুই তিনটা নক দিতেই আবিরের ঘুম ভাঙে। আবির ঘুমাতুর চোখে উঠে মনিটরে দেখে নেহাল দাঁড়িয়ে আছে। সাথে নিলয়ও আছে। আবির জান্নাতের দিকে একবার তাকিয়ে দেখে সব ঠিক আছে। ও আরামে ঘুমাচ্ছে। তারপর আবির দরজা খুলে দেয়। নেহাল কোন কথা না বলে সোজা জান্নাতের কাছে চলে যায়৷ আবির আর নিলয় বোকা হয়ে যায়৷। আবিরও নেহালের কাছে এসে বলে,
– কি রে কি হইছে?
– ভাই এই তো সেই মেয়েটা যাকে আমি আরমানের ছেলের কাছ থেকে বাচিঁয়েছিলাম। তার মানে আরমান খান ওকে মারতে গতকাল গুন্ডা পাঠিয়ে ছিল।
নেহালের কথা শুনে আবির জান্নাতের দিকে তাকায়। ওর মাসুম মুখখানা দেখে আরমানের উপর আবিরের প্রচন্ড রাগ উঠে যায়৷ ওর চোখ গুলো লাল টকটকে হয়ে আছে৷ জান্নাতের উপর দিয়ে কি পরিমাণ ঝড় গিয়েছে এখন আবির তা স্পষ্ট বুঝতে পারছে। ও শুধু নিলয়ের দিকে তাকায়। নিলয় বলে উঠে,
– বুঝে গেছি স্যার৷ আমরা রেডি৷
কিন্তু নেহাল মাঝ দিয়ে বলে উঠে,
– না ভাই এবার আপনি না আমি যাবো৷ আমার বোনটার উপর এভাবে ও কিভাবে অ্যাটাক করায়! আমি ওকে শেষ করবো। আপনি বোনের সাথে থাকেন৷ ওকে আপনার প্রয়োজন।
নেহালের কথা শুনে আবির জান্নাতের দিকে তাকায়। আসলেই ঠিক বলেছে ও৷ আবির গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
– নিলয় নেহালের যেন কিছু না হয়৷
– জি স্যার৷
– ভাই আপনি আমাকে নিয়া চিন্তা করছেন?
– হুম। তুই তো আমার ভাইয়ের মতো। সাবধানে কাজ করিস।
– আপনে অনেক ভালো ভাই। অনেক ভালো। কোন চিন্তা করবেন না৷ চল নিলয়, আরমান এবার শেষ। শালা অনেক জ্বালাইছে আর না। চল।
নেহাল আর নিলয় চলে যায়৷ আবির জান্নাতের দিকে তাকিয়ে থাকে। ওর খুব খারাপ লাগছে৷ সবাই চলে গেলে জান্নাত আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায়। আবির চিন্তায় পড়ে যায় যে জান্নাত আবার কিছু শুনলো নাকি! আবির ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে….
চলবে…?