#অনুভূতির_কেন্দ্রবিন্দু_তুমি
#পর্বঃ০৪
#সুমাইয়া_সানজুম_ঐশী
স্মৃতি নামক ডাইরিটার কিছু পাতা জ্বা*লিয়ে দিলে হয়তো আমরা প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারতাম।
আঁধার এ কথা টা বলে ঘাসের উপর বসে পড়লো।
সন্ধ্যার কিছুক্ষন পর।আঁধার বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বারান্দা থেকে সেই স্মৃতি জোড়ানো ডাইরিটা নিয়েই বের হয়েছিল।মাগরিবের নামাজ শেষে সে এলো তার সেই পুরনো পছন্দের জায়গা টায়।অনেক দিন পর আবার আশা হলো এখানে।কতশত স্বপ্ন দেখেছিলো সে তার স্বর্ণলতা কে নিয়ে অথচ সব ভে*ঙে গেলো।তার স্বর্ণলতা গত একবছর ধরে অন্যের ঘর করছে। অথচ সে তাকে ভুলতে পারছে না। সে তার ডায়েরিটার লেখা গুলোতে ভীষণ ভাবে আকৃ*ষ্ট হয়েছিলো, সাথে অপরিচিত সেই মানবীর প্রতিও আকৃ*ষ্ট হয়েছিলো। তার মনে পড়লো কিভাবে সে স্বর্ণলতার ডাইরিটা পেয়েছিলো
ফ্ল্যাশব্যাক,
বছর দেড়েক আগে একদিন আঁধার সি.আর. বি তে ফ্রেন্ডসরা মিলে ঘুরতে গিয়েছিলো।সেখানে গিয়ে সে প্রচুর বিরক্ত হলো কারণ, সেখানে এতো জোড়ায় জোড়ায় জিএফ-বিএফ ছিলো বলার মতো না।সব স্কুল কলেজের ড্রেস-আপে। তবে কিছু সংখ্যক ফ্রেন্ড সার্কেলও ছিলো তারাও কলেজ ফাঁ*কি দিয়ে এখানে আড্ডা দেয়ার জন্য এসেছে।
আঁধার ও তার বন্ধুরা কিছুক্ষণ সেখানে কথা বলল, তারপর তারা আড্ডার অন্য আসর রেস্টুরেন্টে গিয়ে দিবে তাই সেখান থেকে সবাই বের হলো। আঁধার গাড়িতে উঠতে খেয়াল করলো তার পায়ের ধারে একটা ডায়েরি পড়া।সে এতটা পাত্তা না দিয়ে যাবে কিন্তু তার চোখ আটকে গেছে কয়েকটা অক্ষর দিয়ে গড়া একটি অ*স্পষ্ট নামের দিকে। সে কৌতূহ*লবশত ডাইরিটা হাতে নিয়ে নামের উপর পড়ে থাকা ধূলিকণা হাত দিয়ে ঝেড়ে ফেলতেই নামটা স্পষ্ট হলো। কেনো যেন সে ডাইরিটার প্রতি একটা আলাদা টান অনুভব করলো। তাই সে ডাইরিটা নিয়েই ড্রাইভিং সিটে বসলো। ডাইরিটা সোজা করে রাখায় নামটা পাশের সিটে তার ফ্রেন্ড আদি এর নজরে পড়ায় সে বললো,
-কিরে ভাই তুই কবে থেকে মেয়েদের জিনিস পত্র নিয়ে ঘোরা ফেরা করছিস?এই স্বর্ণলতাটা কে ভাই?এই তুই লুকিয়ে বিয়ে টিয়ে করে ফেলিস নি তো!আংকেল -আন্টি জানে বাসায়?ধ্রুব সিরিয়াসলি তুই তাদের কে ধো*কা দিচ্ছিস না তো?
ড্রাইভিং অফ করে আঁধার তাকিয়ে দেখে তার ফ্রেন্ডস রা সবাই শক*ড তাই কটমট দৃষ্টিতে বললো,
-আমি বিয়ে অনেক আগেই করেছি। আমার দশ হালি বাচ্চা-কাচ্চা আছে। তাদের নিয়ে মা-বাবাকে সারপ্রাইজ দিবো তাই জানাই নাই এখনো।এবার হ্যাপি?নাকি আরও কিছু অ্যাড করবো? ডা*ফার কোথাকার! এটা সি,আর,বি থেকে আসার সময় রাস্তায় পাইছি।নামটা ভালো লাগছে তাই ভাবলাম যার ডায়েরি তারে ফেরত দিবো।
-শুধু কি নাম ভালো লাগছে! নামের মালিককে ভালো লাগে নি?এটাও ভাবা যায় তোর তাও আবার কোনো মেয়ের প্রতি ভালোলাগা কাজ করছে!যে কিনা প্রেম এর নাম শুনলে দশ মাইল দূর দিয়ে হাটে!সিরিয়াসলি!
আদির কথাতে তে সবাই মিটিমিটি হাসছে । আঁধার তার ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে আর কোনো প্রতি*ক্রি*য়া না দেখিয়ে ড্রাইভিং এ মন দিলো
সেদিন রাতে আঁধার নিজের সব কাজ ফেলে ডায়েরি টা নিয়ে বসলো।প্রথম কয়েকটা পেইজে কিছুটা বি*ষা*দময় ছন্দ লিখা।আরো কয়েকটি পাতা উল্টানোর পর সে একটি চিঠি লেখা দেখলো
প্রিয়,
আমার এখন পর্যন্ত না খুঁ*জে পাওয়া বর।অবাক হচ্ছেন এই সম্মোধন শুনে।হবারই কথা।কারণ আপনাকে আমি এখনো খুঁজেই পাইনি। আপনি হয়তো পিপিলিকার পিঠে সফর করে আমায় বউ করে নিতে আসছেন তাই তো তী*ব্র অপেক্ষায় আছি। শুনুন আমার না খুঁজে পাওয়া বর মশাই আপনার এই কা*লচে চেহারার বউটার কিন্ত অনেক শখ। আর এই শখগুলোকে বাস্তবে পরিণত আপনিই করবেন।যেখানে আমার বয়সি মেয়েরা প্রেম নিয়ে ব্য*স্ত সেখানে আমি আপনার অপেক্ষায় তি*ক্ত। জানেন,আমার না খুব ইচ্ছে বিয়ের পর বরের সাথে প্রেম করার তাই তো আপনার জন্য আজকের প্রোপোজটাও রিজেক্ট করলাম।এই যে এতো এতো অপেক্ষা করাচ্ছেন এটা কিন্তু ঠিক না বর মশাই।জানেন আজ আপনাকে আমার শখগুলো ভীষণ ভাবে জানাতে ইচ্ছে করছে, তাই জানিয়েই ফেলি।
আমার ব্যক্তিগত পুরুষ আপনি না আপনার রুমটা ব্লাক আর ব্লু সেইড এ সাজাবেন। বেড সাইডের টি টেবিলে একগুচ্ছ রজনীগন্ধা রাখবেন যাতে তার সুবাস পুরো ঘরজুড়ে থাকে। আপনার বেলকনির সাথে অবশ্যই কাঠগোলাপ গাছ থাকবে।একটা বুকশেলফ রাখবেন যাতে আমি মন খারা*প কাটিয়ে উঠতে পারি।জানেন তো আজ না আমার মন ভীষণ খারাপ।একটা ব্যক্তিগত মানুষের ভীষণ অভাববোধ করছি।একটু ভালোথাকার, একটুখানি শান্তির খুব অভাবে আছি।
আপাতত আপনাকে আজ এতোটুকুই লিখলাম।
স্বর্ণলতা
আঁধার এরকম আরোও এগারোটা চিঠি পড়লো ডায়েরিতে। কেনো যেন তার সেই মেয়েটার শখ অনুযায়ী ঘর সাজাতে ইচ্ছে করছে,তার শখগুলো বাস্তবে পরিণত করতে ইচ্ছে হচ্ছে।সেই লতাময়ী মানবীকে একপলক দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে।তবে কি সে তার লেখার ভীষণভাবে প্রেমে পড়েছে! সে ডাইরিতে খুজে একটি নাম্বার পেল। ভাবলো ডায়েরি ফেরত দেওয়ার কথা। তাই সেই নাম্বার এ কল দিলো। পঞ্চমবারে কলটা রিসিভ হলো। ঘুম জোড়ানো কন্ঠে সেই সেই মানবী বলল,
-সায়মু,এতো কল দিচ্ছিস কেনো?আমি ঘুমাচ্ছি তো। সকালে কলেজ এ দেখা হবে তখন যা বলার বলিস বোন।যা ঘুমা।
আঁধার কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সেই মানবী কল কেটে দিলো।আঁধার এর ইচ্ছে হলো সেই মানবী কে পাশে বসিয়ে তার কন্ঠ আজীবন ধরে শুনতে।নেশালো কন্ঠ তার একদম ডাইরির লিখা গুলোর মতো ।আঁধারের ও আর ইচ্ছে করলো না সেই মানবীর ঘুম ভাং*তে। তাই সে এসএমএস করলো সেই নাম্বারে,
-এতো সুমধুর কন্ঠ শুনিয়ে অন্যের ঘুম কে-ড়ে নেওয়া ঠিক নয়।এটা কিন্তু ভ*য়াবহ অ*পরাধ, স্বর্ণলতা।আপনার কন্ঠ ঠিক আপনার ডাইরির প্রতি পৃষ্ঠার মতো বিমোহিত কর।আপনার লেখা পত্র গুলোর প্রাপক হওয়ার স্বাদ জেগেছে মনে।একপলক দেখার তৃষ্ণা জেগেছে চোখের। ভেবেছিলাম ডায়রি ফেরত দিবো কিন্তু এখন তো সেই ইচ্ছে রংবদল করেছে।কি করি, বলেন তো?
আঁধারের করা এসএমএসের উত্তর সকল বেলায় পেয়েছে সে,
-কারো পারমিশন ছাড়া তার ব্যক্তিগত জিনিস পড়া ঠিক নয়।আই হোপ আপনি আমার ডায়েরি টা ফেরত দিবেন।আমার খুব যত্নের জিনিস এটা।ফেরত পেলে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।
আঁধার রিপ্লাই দিলো,
-যদি না দেই?
পরবর্তীতে আঁধারের কাছে আবার রিপ্লাই এলো-
-আপনি প্লিজ ক*ষ্ট করে আগামীকাল সকাল ১০টা থেকে ২টার মধ্যে নাসিরাবাদ মহিলা কলেজ এর গেইটের সামনে ডাইরি টা নিয়ে আসবেন। তারপর দারোয়ান চাচার কাছে ডাইরিটা রেখে কল দিয়েন আমি নিয়ে নিবো।
-ওকে…শিওর আপনি আসবেন?
-হ্যা
আঁধার মনে মনে ভীষণ অস্থির কারণ সে আগামীকাল সেই মানবীর দেখা পাবে।তাদের পরিচয় হবে। ধীরে ধীরে সে কালচে চেহারার মানবীর মনে জায়গা করে নিবে। এসব ভাবতে ভাবতেই সে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য রেডি হলো।
সেদিন সকালে আঁধার কলেজ এর সামনে গিয়েছিল।কিন্তু সে দারোয়ান এর কাছে ডাইরিটা দেয় নি। গেইটের পাশে দাড়িয়ে ছিল সেই মানবীকে একপলক দেখার জন্য। কল দেওয়ার পর, সে শুনলো একটি মেয়ে এসে গেইটে দারোয়ান এর কাছে ডাইরির ব্যাপার এ জিজ্ঞেস করছে। সে মেয়েটাকে ভালো করে লক্ষ্য করলো কিন্তু স্বর্ণলতার সাথে তার কোনো মিল পেল না। কারণ মেয়েটা এতোটাই ফর্সা ছিলো যে তার চেহারায় কালচে ভাবের কোনো প্র*তিফলন দেখা যায় নি।
আঁধার সেদিন আবারও তার সঙ্গে ডায়েরিটা নিয়েই বাড়ি ফিরলো। সন্ধ্যায় তার ফোন এ সেই নাম্বার থেকে পুনরায় একটা এসএমএস আসলো..
চলবে 🙂