অনুরাগের_প্রহর #মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি #পর্ব_১৩

#অনুরাগের_প্রহর
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_১৩
_________________
বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে।শেহমীর মির্জা এক গাল হেসে বললেন,

-“যাক সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেল তাহলে!”

সেতারা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

-“হয় রে বাপ!শেষ বয়সে এইসব ঝামেলার তে শান্তি পাইলাম।”

ড্রয়িংরুমের একপাশে বসে তারা এইসব নিয়ে আলোচনা করছে।অন্যপাশ থেকে শেহরেয়ার বললো,

-“যাক সব ঝামেলা শেষ।আমরা তাহলে এইবার আনন্দে সময় কাটাতে পারবো।”

শুভ মুখ মলিন করে বললো,

-“কিন্তু বৃষ্টির জন্য তো বাইরে কোথাও যেতে পারলাম না আজকে!”

মেহরিন সবার জন্য চা নিয়ে এসে বললো,

-“আজকে না যেতে পারলে কি হয়েছে!কালকে যাবো আমরা।”

হামিদ পাশে থেকে বললো,

-“ভাবি ঠিকই বলছে।”

হঠাৎ শেহরেয়ারের মোবাইলে একটা কল আসলো।শেহরেয়ার মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো রিয়াদ কল করেছে।তাই সে মোবাইলটা নিয়ে বসা থেকে উঠে বাগানের দিকে চলে গেল।এই সুযোগে শুভর মাথায় একটা শয়তা*নি বুদ্ধি আসলো।সে হাসি দিয়ে বললো,

-“জানেন ভাবি ভাইয়া যে একটা মেয়েকে পছন্দ করতো!”

শুভর কথায় মেহরিন ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“কাকে?”

-“সেটা আপনি ভাইয়ার থেকে জেনে নিয়েন।”

হামিদ কিছু বলতে গেলে শুভ ইশারায় চুপ থাকতে বললো।মেহরিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

-“তা সেই মেয়ে এখন কোথায়?তাকে বিয়ে না করে আমাকে করলো কেনো?”

শুভ মুচকি হেসে বললো,

-“সেটাও আপনি ভাইয়ার থেকে শুনে নিয়েন।”

মেহরিনের অনেক রাগ হচ্ছে!তাও সে কিছু বললো না।একটু পরে শেহরেয়ার মোবাইলে কথা বলা শেষ করে আসতে মেহরিন সেখান থেকে চলে গেল।শেহরেয়ার বিষয়টা লক্ষ করলো।শুভর দিকে তাকিয়ে দেখলো সে মিটিমিটি হাসছে।শেহরেয়ার ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“শুভ তুই কি করেছিস?”

শুভ কিছু বলার আগে হামিদ বললো,

-“শুভ তোর সংসারে আগুন লাগানোর ব্যবস্থা করতেছে।”

শুভ হামিদের দিকে তাকিয়ে বললো,

-“হামিদ ভাইয়া,আমি তো তেমন কিছুই করিনি।”

শেহরেয়ার গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

-“তুই কি বলেছিস মেহরিনকে শুভ?”

-“এটাই যে তুমি একটা মেয়েকে পছন্দ করতে!”

শেহরেয়ার নিশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করে বললো,

-“এটা বলার কি দরকার ছিল?ও যেভাবে চলে গেল মনে হয় অনেক রেগে গেছে।”

শুভ হাসি দিয়ে বললো,

-“সমস্যা নাই তো।ভাবির রাগ ভাঙাও গিয়ে।”

শেহরেয়ার আর কিছু না বলে রুমের দিকে যেতে গিয়ে থেমে গেল।শেহরেয়ারকে থেমে যেতে দেখে শুভ বললো,

-“কি হলো ভাইয়া?”

শেহরেয়ার কোনো উত্তর না দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।সে দেখলো বৃষ্টি থেমে গেছে!সে সোজা ফুলের দোকানে গিয়ে এক তোড়া ফুল কিনে এনে রুমের দিকে গেল।গিয়ে দেখলো রুমের দরজা লাগানো।শেহরেয়ার দরজায় টোকা দিল।মেহরিন দরজা খুলতে ফুলের তোড়াটা মেহরিনের দিকে এগিয়ে দিয়ে শেহরেয়ার বললো,

-“তোমার মনের শহরকে রাঙাতে আমি একগুচ্ছ ফুল নিয়ে হাজির হলাম, প্রিয়তমা!.”

মেহরিন চোয়াল শক্ত করে ফুলের তোড়াটা নিয়ে রুমের ভিতরে চলে গেল।শেহরেয়ার মাথা চুলকাতে চুলকাতে বিড়বিড় করে বললো,

-“এখন কি করবো!”

শেহরেয়ার রুমের ভিতরে গিয়ে সোফায় বসলো।মেহরিন বিছানায় বসে বই পড়তে ব্যস্ত।দুজনের মাঝে নিরবতা!নিরবতা ভেঙে শেহরেয়ার বললো,

-“মেহরিন…..”

মেহরিন বইয়ের দিকে তাকিয়েই বললো,

-“তুমি নাকি কোন মেয়েকে ভালোবাসতে!”

মেহরিনের এমন প্রশ্নে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো শেহরেয়ার।তারপরে মৃদু হেসে বললো,

-“বাসতাম না!এখনো ভালোবাসি।”

শেহরেয়ারের কথায় বইয়ের দিক থেকে চোখ সরিয়ে তার দিকে তাকালো মেহরিন।মেহরিনের চোখ-মুখে রাগের ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে!তাও নিজেকে শান্ত রেখে বললো,

-“কে সে?”

শেহরেয়ার হেলান দিয়ে বসে বললো,

-“আমার হৃদয়ের মুগ্ধতা!”

মেহরিন বিরক্তি নিয়ে বললো,

-“হৃদয়ের মুগ্ধতা আবার কি?”

-“যার উপস্থিতিতে মুছে যায় সমস্ত মর্মযন্ত্রণা
সে হলো আমার হৃদয়ের মুগ্ধতা!”

মেহরিন চোয়াল শক্ত করে বললো,

-“শেহরেয়ার হেলানি করা বন্ধ করো!”

শেহরেয়ার মুচকি হেসে পা দোলাতে দোলাতে বললো,

-“তুমি দেখতে চাও তাকে?”

মেহরিন অবাক হয়ে বললো,

-“আমাকে দেখাবে তুমি?”

-“অবশ্যই।”

এই বলে শেহরেয়ার উঠে দাঁড়ালো।তারপরে মেহরিনের হাত টেনে তাকে দাঁড়া করিয়ে বললো,

-“তোমার চোখে কাপড় বাঁধতে হবে।”

-“কেনো?”

-“স্পেশাল মানুষকে দেখতে একটু তো কষ্ট করতে হবে।”

মেহরিন মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফেললো।শেহরেয়ার তার চোখে পট্টি বেঁধে তাকে আয়নার সামনে নিয়ে দাঁড়া করালো।মেহরিনের চোখ থেকে পট্টি খুলে বললো,

-“এই যে আমার হৃদয়ের মুগ্ধতা।”

মেহরিনের মুখ হাসি ফুটলো আয়নায় নিজেকে দেখে।সে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,

-“কিন্তু শুভ যে বললো!”

শেহরেয়ার মেহরিনকে তার দিকে ঘুরিয়ে বললো,

-“মজা করেছে।আমার জীবনে তোমার আগে কেউ ছিল না,আর তোমার পরেও কেউ আসবে না।ইট’স মাই প্রমিজ মেহরিন।”

মেহরিন শেহরেয়ারকে জড়িয়ে ধরে বললো,

-“এতো ভালোবাসো আমায়?”

-“নিজের চেয়েও বেশি!”

_________________________
মুনিয়া বসে বসে রায়ানের সাথে খেলা করছে।শুভ এসে মুনিয়ার পাশে বসে বললো,

-“এই যে মুনিয়া পাখি,কি খবর আপনার!”

মুনিয়া এক পলক শুভর দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো,

-“আপনাকে আমি বলেছি না আমি মুনিয়া।মুনিয়া পাখি না!”

-“কিন্তু আমি তো মুনিয়া পাখিই বলবো!”

হামিদ সেখানে এসে উপস্থিত হলো।মুনিয়া কিছু বলার আগে হামিদ বললো,

-“কেউ কোনো বিষয় নিয়ে বিরক্ত হলে সেটা না করাই ভালো শুভ।ও যখন বারণ করছে তাহলে তোমার ও-কে মুনিয়া পাখি বলার কি দরকার!”

শুভ গিয়ে আস্তে করে হামিদকে বললো,

-“ভালো লাগছে উনাকে হামিদ ভাইয়া।তাই মুনিয়া পাখি বলে ডাকতেছি।তুমি একটু সেটিং করিয়ে দেও না!প্লিজ ভাইয়া!”

হামিদ কিছু বলতে যাবে আবার শুভ বললো,

-“নিষেধ করো না প্লিজ।আমি রায়ানকে নিয়ে এখান থেকে যাচ্ছি।তুমি আমার নামে একটু প্রশংসা করো মুনিয়া পাখির কাছে।”

শুভ হাসি দিয়ে রায়ানকে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেল।হামিদ চোয়াল শক্ত করে তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে মুনিয়ার দিকে তাকালো।মুনিয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“উনি বিড়বিড় করে কি বললো আপনাকে?”

-“তার প্রশংসা তোমার কাছে করতে বলছে!”

হামিদের কথা শুনে মুনিয়া খিলখিল করে হেসে দিল।হামিদ কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে।মুনিয়া হাসি থামিয়ে বললো,

-“উনি আর মানুষ পেল না!”

হামিদ গিয়ে মুনিয়ার হাত ধরে বললো,

-“মুনিয়া আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি।তোমাকে দেখলে আমার এমন একটা অনুভূতি হয়,যা আর কাউকে দেখলে হয় না।আমার ভালোবাসা এভাবে প্রত্যাখ্যান করো না।বড্ড কষ্ট পাবো।আমি তোমাকে কোনো প্রকারেই হারাতে চাই না!”

মুনিয়া অপলক দৃষ্টিতে হামিদের দিকে তাকিয়ে আছে।সে লক্ষ করলো হামিদের চোখের কোণে পানি।সে বললো,

-“এতো বড় ছেলে আবার কাঁদে নাকি?”

-“আমার উত্তরটা তো পেলাম না।”

-“একটু সময় দেন।”

মুনিয়া হামিদের সামনে থেকে চলে গেল।হামিদ দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

__________________
সকাল বেলা নাস্তা শেষ করে সকলে ড্রয়িংরুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে।মেহরিন সবার মাঝে দাঁড়িয়ে বললো,

-“আমি আপনাদের সকলকে কিছু বলতে চাই।”

শেহমীর মির্জা বললো,

-“কি বলবে মা?”

-“রায়ানের আসল সত্য!আমি ভেবেছিলাম সবটা শুধু শেহরেয়ারকে বলবো।পরে ভেবে দেখলাম এটা সবার জানার দরকার।কারণ আপনারা ওর বিষয়ে তেমন কিছু না জেনেই ও-কে যেভাবে মেনে নিয়েছেন আমি তাতে খুবই খুশি হয়েছি।তাই ভাবলাম আপনাদের সত্যিটা বলা উচিত।”

#চলবে____

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here