ছায়া হয়ে থাকবো পাশে,Part_08
Ariyana Nur
সাইফ মেয়েটার সামনে গিয়ে কিছু বলার আগেই মেয়েটাকে দেখে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।কেননা সামনে মেয়েটি বসে বসে হাত ধরে ঠোট উল্টিয়ে পুরো বাচ্চাদের মত করে কান্না করছে আর কি যেন বিরবির করছে।সাইফ মেয়েটাকে দেখে ঘোরের মধ্যে চলে গেল।ওর মনে হচ্ছে ওর সামনে ওর মায়াবী পরি বসে বসে ঠোট উল্টিয়ে বাচ্চাদের মত কান্না করছে।সাইফ কোন কিছু না বলে এক ধ্যানে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইল।
মেয়েটি কিছুক্ষন ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করে ভ্যা ভ্যা করে কান্না করতে লাগলো।মেয়েটির কান্নার শব্দে সাইফ ঘোরের থেকে বের হয়ে মেয়েটির দিকে ভালোমত তাকিয়ে দেখল মেয়েটির পরনে স্কুলের ইউনিফ্রম ,সামনে দু’বেনী ,কাধে স্কুল ব্যাগ ঝুলালো।সাইফ ঘোর থেকে বের হয়ে হতাশ হয়ে একটা নিশ্বাস ছাড়ে।কেননা সে প্রথমে মনে করেছিল এটা তার মায়াবী পরি।কিন্তু ভালোমত মেয়েটার দিকে তাকিয়ে নিরাশ হয়ে গেল।এটা তার মায়াবী পরি নয়।কিন্তু তার পরেও ঠোটের কোনে হাসি চলে আসলো।
(যারা বলেছিলেন নুহা তাদের জন্য এক জগ ঠান্ডা পানির সমবেদনা)
সাইফ মেয়েটার সামনে হাটু গেড়ে বসে বলল….
—তুমি ঠিক আছো???কোথাও লেগেছে তোমার???
মেয়েটি ফুপিয়ে কান্না করতে করতে বলল….
— আমার ঘড়ি আমার ঘড়ি…..
মেয়েটির কথা শুনে সাইফ ওর হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে কতটুকু জায়গা ছিলে গেছে।সেখান থেকে রক্ত বের হচ্ছে।কিন্তু মেয়েটি সেদিকে না তাকিয়ে হাতের ঘড়ি উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখছে আর কান্না করছে।
সাইফ উওেজিত হয়ে বলল….
—আরে তোমার হাত থেকে তো রক্ত বের হচ্ছে।
সাইফের কথায় মেয়েটি সাইফের দিকে না তাকিয়ে ঘড়ি দিকে তাকিয়ে রাগি গলায় বলল….
—আপনার জন্য আমার ঘড়িটা নষ্ট হয়ে গেছে।আমার নতুন ঘড়ি…..
এই বলে সে আবার বাচ্চাদের মত ঠোট উল্টিয়ে কান্না করতে লাগলো।
সাইফ মেয়েটার কাহিনী দেখে মনে মনে হেসে নরম শুরে বলল….
—পিচ্ছি তোমার হাত থেকে তো রক্ত পরছে।
মেয়েটি কান্নারত অবস্থায় কপালে ভাজ ফেলে বলল….
—আপনি আমাকে পিচ্ছি কেন বলছেন???আমি মোটেও পিচ্ছি না।আমার নাম আশু।আশু বলে ডাকলেই খুশি হব।
—ওকে আশু বলেই ডাকব পিচ্ছি।
আবার লোকটার মুখে পিচ্ছি শুনে আশু লোকটার দিকে তাকাতেই ওর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।কিছু না বলে উঠতে গিয়ে পরে যেতে নিলেই সাইফ ওর হাত ধরে উঠতে সাহায্য করল।আশু মাথা নিচু করে চলে যেতে নিলেই সাইফ আশুর হাত ধরে কোন কথা না বলে গাড়ির কাছে নিয়ে গেল।গাড়ির থেকে ফাষ্টটেড বক্স বের করে প্রথমে আশুর হাতের রক্ত গুলো পরিষ্কার করে।তারপর মলম লাগাতে লাগল।
মলম লাগানো শেষ হলে আশু চলে যেতে নিলেই সাইফ আশুর পথ আটকিয়ে বলল….
—কেউ যদি নিজের থেকে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় তাহলে আমার দোষটা কোথায়???
—……….
—এতো রাগ???কেউ আমার সাথে কথাও বলবে না???
—………
সাইফ হতাশ হয়ে বলল….
—কি আর করার কেউ কথা না বললে তার জন্য যে চকলেট এনেছিলাম তা অন্য কাউকে দিয়ে দিব।
আশু এবার ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলল….
—লাগবে না কারো চকলেট আমার।আমি কে হই কারো???
সাইফ মুচকি হেসে গম্ভীর হয়ে বলল….
—কেউ মনে হয় ভুলে গেছে আমি কে???আর আমার রাগ কতটা???
আশু রাগ দেখিয়ে বলল….
—রাখো তোমার রাগ।তোমার ঐ রাগকে এই আশু ভয় পায় না।মিঃবাংলাদেশের মত ভেনিস হয়ে এখন এসেছে রাগ দেখাতে।
সাইফ অবাক হয়ে বলল….
—মিঃ ইন্ডিয়া শুনেছি মিঃ বাংলাদেশ কি???
—সেটা তোমার মাথায় ঢুকবে না।এসব পাজি মানুষদের মাথায় ঢোকে না।
—তুই আমাকে পাজি বলছিস???
আশু কোন কথা না বলে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করেই যাচ্ছে।
সাইফ জানে এর কান্না কি ভাবে থামবে তাই সে নিচু স্বরে বলল….
—আই এম সরি পিচ্ছি।
সাইফ সরি বলল🤭তাও আবার আশুকে 🙄
ব্যপারটা হজম হচ্ছে না তাই তো।থাক আমিই ক্লিয়ার করে দিচ্ছি।সাইফ আশুকে আরো আগের থেকেই চিনে।আশুর ফ্রেন্ড তুলি এর বার্ডডে তে সাইফ এর সাথে আশুর পরিচয়।সাইফ আশুর ফ্রেন্ড তুলির ভাইয়ার বন্ধু।সাইফ তুলিকে নিজের বোনের মত মনে করে।আশুর সাথে পরিচয় হবার পর আস্তে আস্তে আশুকেও নিজের বোনের আসনে বসিয়ে ফেলেছে।আর আশু সে তো সাইফ কে ভাই হিসেবে না পেয়ে পেয়েছে।সবার সাথে গম্ভীর হয়ে থাকলেও সাইফ আশু আর নীলাভের কাছে একজন মজার মানুষ, বেষ্ট ভাই আর ফ্রেন্ড।সবার কাছের সিংহ এই দুজনের কাছে এসে ভেজা বেড়াল হয়ে যায়।
সাইফ শুধু আশুকে চিনে।আর জানে ওর পরিবারে কে কে আছে।আশু কোথায় থাকে,বাবা কি করে কিছুই ও জানে না।একবার সাইফ ওর বাসার ঠিকানা,ফোন নাম্বার চেয়েছিল আশু মানা করার পর আর কখনো চায়নি।সাইফ সব সময় ওর স্কুলে এসে ওর সাথে দেখা করে যায়।এছাড়া আর কোন যোগাযোগ হয় না।বেশ কিছুদিন যাবৎ সাইফ এর কাজের চাপ বাড়াতে সাইফ আশুর সাথে যোগাযোগ করতে পারে নি।তাই আশু রাগ করে বসে আছে।তারপরেও মাঝে একদিন সাইফ সময় করে গিয়েছিল দেখা করতে কিন্তু আশু রাগ করে যোগাযোগ করে নি।
(আমার মনে হয় সাইফ আর আশুর ব্যপারটা সবার কাছে ক্লিয়ার হয়েছে)
🌨🌨🌨🌨🌨
নুহা কলেজ শেষ করে রাস্তায় এসে রিকশার জন্য ওয়েট করছে।কিন্তু একটা রিকশাও পাচ্ছে না।নুহা বিরক্ত হয়ে মুখের মধ্যে বিরক্তের ছাপ ঝুলিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগল।আর মনে মনে বলল….
—ক্লাস শেষ হলে কি সব রিকশা ওয়ালা শশুর বাড়ি জামাই আদর খেতে চলে যায়।বুঝিনা এমনি কত রিকশা এখানে বসে থাকে।আর যখন বাড়ি যাওয়ার সময় হয় তখন একটাও পাইনা।
নীলাভ অনেকক্ষন ধরে নুহাকে পর্যবেক্ষণ করছে।সে মিঃ চৌধুরীর থেকে খবর নিয়ে এখানে এসেছে।নুহার ছবি দেখার কারনে তাকে চিনতে বেশি সময় লাগেনি।তাছাড়া সে এখানে আসার আগেই তার লোক দিয়ে নুহার খবর নিয়ে রেখেছে।নীলাভ নুহার সাথে কথা বলতে যেতে চাইলে তার বন্ধু সাজিব তাকে আটকিয়ে বলে….
—তুই থাম।মেয়েদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তা তোর থেকে আমি ভালো জানি।
—বেশি কেচাল করিস না।আমি এমনিই তার সাথে একটু কথা বলবো।আর আমি তাকে পটাটে আসি নি।
—তুই কেমন রে আমি কথা বলতে চাচ্ছি তুই দিচ্ছিস না।এই আমি তোর জন্য ২ঘন্টা ধরে এই মেয়েটার জন্য এখানে পরে রইলাম।
সাজিবের জোড়াজুড়িতে নীলাভ বাধ্য হয়ে ওকে পাঠালো নুহার সাথে কথা বলতে।
সাজিব নুহার সামনে এসে বলল….
—হাই।
নুহা ভদ্রতার খাতিরে সাজিবকে সালাম দিয়ে আবার আশেপাশে রিকশা খুজতে লাগলো।
সাজিব সালামের উওর দিয়ে বলল….
—কেমন আছো ভাবি???
নুহা এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখল সামনে কেউ নেই।তাই সাজিবকে কে প্রশ্ন করলো….
—আমাকে কিছু বলছেন???
সাজিব মুখে হাসি ঝুলিয়ে বলল….
—তুমি ছাড়া এখানে কেউ আছে ভাবি???
নুহা কপালে ভাজ ফেলে বলল…..
—দেখুন ভাইয়া আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে আমি আপনার ভাবি না।
—ভাবি হওনি তবে হতে কতক্ষন।আমি কিন্তু তোমার বড় তারপরেও তোমাকে ভাবি বলেই ডাকব।সাজিব তার কথার ঝুলি খুলে এটা সেটা বলতে লাগল।
নুহা এবার বিরক্ত হয়েও মুখে হাসি ঝুলিয়ে বলল….
—ও এ ব্যপার।তা নেক্সট টাইম আমার সাথে দেখা করার আগে আপনার ভাইকে নিয়ে আসবেন কেমন।আমারও তো দেখতে হবে তাকে।সে তার ভাইয়ের মত উল্লুক বা উজবুক।
কথাটা বলে দেরি না করে নুহা হাটা ধরলো।আর এদিকে সাজিব নুহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগল নুহা কি বলে গেলো।নুহা একটু সামনে যেতেই রিকশা পেয়ে তাতে উঠে চলে গেলো।আর এদিকে সাজিব এখনো নুহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
নুহা চলে যেতেই নীলাভ এসে সাজিবের সামনে দাড়ালো।নীলাভ একটু দূরেই দাড়িয়ে ছিল।যার কারনে নুহা আর সাজিবের সব কথা সে শুনেছে।
নীলাভ কে দেখে সাজিব নুহার যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে বলল…..
—এটা কি হল!!আমাকে উল্লুক বানিয়ে চলে গেল!!!
নীলাভ ওর মাথায় গাট্টা মেরে রাগি গলায় বলল….
—গাধা কোথাকার।একটা মেয়েকে এভাবে এসে ভাবি ডাকবি তোকে উল্লুক বলবে না তো কি বলবে।ভাগ্য ভালো তোর ভাবি তোকে জুতা পেটা করেনি।তার যায়গায় অন্য মেনে হলে আমি সিউর তোর এই চেহারার তেরোটা বাজিয়ে দিত।
সাজিব অসহায় ফেস করে বলল….
—তুই এটা আমাকে বলতে পারলি???
—চুপ কর তুই।২ঘন্টা দাড়িয়ে থেকে তোর জন্য কোন কথাই বলতে পারলাম না।(রাগি গলায়)
—এখন সব দোষ আমার (অসহায় ফেস করে)
নীলাভ চোখ রাঙ্গিয়ে বলল….
—আরেকটা কথা বললে তোকে কি করবো নিজেও জানি না।
সাজিব আর কোন কথা না বলে চুপ করে দাড়িয়ে রইল।
🌨🌨🌨🌨🌨
মিঃ খান নিজের কেবিনে বসে এক মনে একটা ফাইল এর দিকে তাকিয়ে গভীর ভাবে তা পর্যবেক্ষণ করছে।হঠাৎ তার দরজায় নক পরতেই সে মাথা না উঠিয়ে বলল….
—কামিং…..
দরজার বাহিরের মানুষটা ভিতরে এসে মিঃখান কে এক মনে কাজ করতে দেখে হাতে তালি দিতে লাগল।মিঃ খান মাথা উঠিয়ে সামনের মানুটাকে দেখে তার চেহারার রং পাল্টে গেল।
চলবে
(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।কে আসতে পারে মিঃ খান এর অফিসে। ধন্যবাদ)