ছায়া হয়ে থাকবো পাশে,Part_07
Ariyana Nur
–ঠিক কথা বলেছো তো।এখন কি হবে সাইফকে বলবে কে???আমি কিন্তু পারবো না বাবা।তোমার ছেলের যে রাগ।তার পর তার রাগ ভাঙ্গাতেই আমার খবর হয়ে যাবে।
—কি নিয়ে এতো কথা হচ্ছে???
কথাটা পিছন থেকে একজন বলে সামনে আসলো।তিনি এসেই মিঃচৌধুরী আর মিসেস চৌধুরীর মাঝে বসে পড়ল।লোকটি আর কেউ না নীলাভ।
মিসেস চৌধুরী নীলাভ কে সব বলতেই ও বলল…..
–আমি থাকতে কেন এতো চিন্তা করছো???
মিঃচৌধুরী নীলাভের কপালে হাত রেখে বলল….
—বাপ তুই ঠিক আছিস???সেধে সেধে সিংহের গুহাড় যেতে চাচ্ছিস???
মিসেস চৌধুরী বিরক্ত হয়ে বলল….
—আহ তুমি থামো তো।
তারপর নীলাভের দিকে জিগ্গেসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল….
—বাবা তুই পারবি তো???
নীলাভ মিসেস চৌধুরীর কাধে হাত রেখে বলল….
—তোমার দোয়া আমার সাথে থাকলে আমি চাদেগিয়েও আলু চাষ করতে পারবো।(ভাব নিয়ে)
মিসেস চৌধুরী নীলাভের দিকে কপাল ভাজ করে তাকাতেই নীলাভ শুকনো ঢোক গিলে বলল….
—ভুল ডায়লগ দিয়ে ফেলেছি???এভাবে তাকিয়ে রয়েছো কেনো???(বেবি ফেস করে)
—আমার দোয়া সাথে থাকলে তুই চাদে গিয়ে আলু চাষ করবি???(রাগি গলায়)
নীলাভ মিসেস চৌধুরীকে এক হাতে জরিয়ে ধরে বলল….
—আমার কথার মানে হচ্ছে তোমার দোয়া সাথে থাকলে আমি অসার্ধ্য সাধন করতে পারবো।
মিসেস চৌধুরী নীলাভের হাতে একটা চাপর মেরে বলল…
—পাজি ছেলে।মাথার মধ্যে শুধু শয়তানী বুদ্ধি ঘুরপাক করে।
মিঃচৌধুরীঃ আপনাদের মা ছেলের কথা হলে এবার কাজের কাথাই আসি।তা তুমি কিভাবে ওকে রাজি করাবে সেটা তোমার ব্যপার।তুমি শুধু ওকে রাজি করাও বাকিটা আমি দেখে নিব।
নীলাভঃতা তুমি বড় পাপা আমার উপর ছেড়ে দাও।কিন্তু তার আগে তো মেয়েটাকে আমার দেখতে হবে।
—ঠিক আছে মেয়েটার সব ডিটেল্স আমি তোমাকে দিব।
—ঠিক আছে।সব হয়ে যাবে।কিন্তু তার আগে আমাকেও তো দেখতে হবে মেয়েটাকে।আমার ভাবি হবার কতটুকু উপযুক্ত।
🌨🌨🌨🌨🌨
রাতের বেলা নুহা মাথায় হাত দিয়ে শুয়ে রয়েছে।মাথা তার প্রচণ্ড ব্যথা করছে।মনে হচ্ছে মাথা ছিড়ে যাচ্ছে।ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে একটু পর পর নিজের হাত দিয়ে চুল মুষ্টি বদ্ধ করে টানছে।
আশু দুধের গ্লাস আর ঔষধ এনে নুহার সামনে বসে বলল….
—আপি ঔষধটা খেয়ে নাও।ব্যাথা কমে যাবে।
নুহা পিটপিট করে তাকিয়ে বলল….
— ঔষধ কোথায় পেলি তুই???ঔষধ তো ঘরে ছিলো না???
—যেখানে পাবার পেয়েছি।বেশি কথা বলো না তো।তার আগে দুধটা খেয়ে নাও।
—ইয়াক…
আমি দুধ খাব না।এমনি মাথা ব্যাথা করছে আর এই দুধ খেলে নিরঘাত বমি করে দিব।
আশু রাগি গলায় বলল….
—রাখ তোমার ঢং।তা না হলে একবারে টাকলা একটা ছেলে ধরে এনে বিয়ে দিয়ে দিব।চুপচাপ এটা শেষ কর।
—দেখ পিচ্ছি….
পিচ্ছি আছিস পিচ্ছিই থাক।বেশি বড় হতে হবে না। দুধের গ্লাস সরা আর ঔষধ টা দে।এমনি ব্যাথায় মাথা ছিড়ে পরে যাচ্ছে।
আশু রেগে বলল….
—আমি তো ভুলে গিয়েছিলাম তুমি সোজা কথার মানুষ না।তোমাকে কি ভাবে খাওয়াতে হয় তা আমার জানা আছে।
—আহ চুপ থাক তো।ঔষধ দিলে দে না দিলে সর সামনের থেকে।
আশু কোন কথা না বলে নুহাকে জোর করে দুধ আর ঔষধ খাইয়ে দিল।নুহাও আশুর কাছে হার মেনে দুধ খেয়ে নিল।
আশু নুহাকে ঠিকমত শুইয়ে দিয়ে লাইট অফ করে ওর মাথার কাছে বসে মাথায় হাত বুলাতে লাগল।
নুহা চোখ বন্ধ করেই বলল….
—ঘুমা তুই।মাথায় হাত বুলাতে হবে না।ঔষধ খেয়েছি এভাবেই সেরে যাবে।
—উফ্ আপি এতো কথা কেন বল তো।চুপচাপ ঘুমাও তুমি।
নুহা মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে রাখল।আশুর এই ছোট ছোট কেয়ার,শাষন ওর ভীষন ভালো লাগে।তখন ওর মনে হয় ওই ছোট আর আশু ওর বড় বোন।
রাতের আকাশে তারারা মিটমিট করে জ্বলছে।তাদের সাথে মিলে চাদ মামা তার আলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে চারোপাশে।
নীলাভ অনেকক্ষন ধরে সাইফ এর রুমে ঘুরিমুরি করছে।সাইফকে কিছু বলতে গিয়েও থেমে যাচ্ছে।সাইফ দেখেও না দেখার ভান করে ল্যাপটবে দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে কাজ করছে।
সাইফ কাজ শেষ করে ল্যাপটব রেখে বেডে এসে বসে বলল…
—কি বলতে চাচ্ছিস তাড়াতাড়ি বল।আমি ঘুমোব।সকালে অফিস আছে।
নীলাভ উল্টো রাগ দেখিয়ে বলল….
—তুমি যখন জানতে আমি কিছু বলতে এসেছি তাহলে এতোক্ষন কাজ করছিলে কেন???আমার কথাটা শুনে কি কাজ করা যেত না।
—তোর ঐ ফালতু কথা শুনলে এমনেই মাথা হ্যাৎ হয়ে যায়।তখন আর কাজ মন দিয়ে করা যায় না।তাই আগে কাজ শেষ করে তোর কথা শুনতে চাচ্ছি।এখন কি বলবি???না কি আমি ঘুমোব???
নীলাভ রেগে বলল….
—সারাদিন তো এই পার,কাজ আর ঘুম।এই ছাড়া আর কিই বা করতে পারো।
সাইফ ভ্রু কুচকে বলল….
—আজ তোর চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে কোন ঘাপলা আছে।কাহিনী কি বলতো???
নীলাভ সরাসরি বলে দিল….
—আমার ভাবি লাগবে।
নীলাভের কথা শুনে সাইফও সোজাসুজি উওর দিল….
— পেয়ে যাবি।
সাইফ এর কথা শুনে নীলাভ কতক্ষন হ্যাৎ হয়ে থেকে অবাক হয়ে বলল….
—কি বললে তুমি???তুমি আমাকে ভাবি এনে দিবে???
সাইফ বিরক্ত হয়ে বলল…
—এতে অবাক হওয়ার কি আছে।ভাবি চেয়েছিস পেয়ে যাবি।
নীলাভ খুশি হয়ে বলল….
—তাহলে আমরা মেয়ে দেখা শুরু করি।
—আপনাকে পাকামো করে মেয়ে দেখতে হবে না।
—তাহলে কি মেয়ে ঠিক করা আছে???পছন্দের কেউ আছে নাকি???(ভ্রু নাচিয়ে)
সাইফ বেডে হেলান দিয়ে বসে আনমনে বলতে লাগল….
—পছন্দ কি না জানি না।কিন্তু তার ঐ চোখ দেখার পর থেকে আমি যেন কেমন ঘোরের মধ্যে আছি।না চাইতেও সব সময় চোখের সামনে তার ঐ মায়বী চোখ দুটোই ভেসে উঠছে।কেন তা আমি নিজেও বুঝতে পারছি না।তার চোখ দেখেই কল্পনাতে তার চেহারা আকতে থাকি।তখন এক মায়াবী পরির চেহারা আমার চোখের সামনে ভেসে আসে।যখন তাকে সরাসরি দেখি তখন সে আমার কল্পনার চাইতেও বেশি মায়াবী।
এদিকে সাইফ এর কথা শুনে নীলাভের জ্ঞান হারাবার অবস্থা হয়ে গেলো।কেননা সাইফ এর মত একজন লোক নিজের ফিলিংস কারো সাথে সেয়ার করছে।এটাও হবার ছিলো।
🌨🌨🌨🌨🌨
সাইফ সকাল সকাল তাড়াহুড়ো করে অফিসে যাওয়ার জন্য বাসার থেকে বেড় হল।তার আজ একটা জরুরী মিটিং আছে।কিন্তু সারা রাত তার মায়াবী পরির কথা ভাবতে গিয়ে রাতে ঠিকমত ঘুমোতে পারেনি।আর তাই সকালে উঠতে দেরি হয়ে গেছে।উঠেই তাড়াহুড়ো করে অফিসের জন্য রেডি হয়ে বের হয়ে গেলো।
সাইফ তাড়াতাড়ি অফিসে পৌছাবার জন্য মেন রোড দিয়ে না গিয়ে অন্য গলি দিয়ে গাড়ি ঢুকালো।যাতে অফিসে তাড়াতাড়ি পৌছাতে পারে।হঠাৎ তার গাড়ির সামনে একটা মেয়ে চলে আসলো।সাইফ তাড়াতাড়ি করে গাড়ির থামালো।কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।মেয়েটা গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে পরে গেলো।সাইফ রেগে মেগে গাড়ির থেকে নামলো মেয়েটাকে কয়েকটা কথা শুনানোর জন্য।এতো বড় রাস্তা থাকতে কেন রাস্তার মাঝদিয়ে হাটছে।সাইফ মেয়েটার সামনে গিয়ে কিছু বলার আগেই মেয়েটাকে দেখে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।কেননা…..
চলবে….