#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না #সাদিয়া_জাহান_উম্মি #পর্বঃ৪৯

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৪৯
হাসপাতালের করিডোরে কেউ বসে আছে।কেউ বা দাঁড়িয়ে আছে।হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেলো।কেউ যেন বুঝতেই পারল না।তখন কথা বলার মাঝে অনিক হঠাৎ করেই বুকে হাত চেপে মাটিতে বসে পরে।সবাই রুদ্রিক আর ইহান ওকে ধরতেই রুদ্রিকের কোলে অনিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।তৎক্ষনাত অনিককে নিয়ে ওরা হাসপাতালে চলে আসে।ইহান অনিকের বাবা মা’কে ছেলের এই অবস্থা সম্পর্কে জানালে অনিকের বাবা দ্রুত হাসপাতালে চলে আসেন।অনিকের মা তো অনিকের মা তো ছেলের অবস্থা শুনেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন।তাই তিনি আসতে পারেননি।এদিকে সিয়া স্তব্ধ হয়ে বসে আছে।দৃষ্টি তার মেঝেতে নিবদ্ধ।কি হলো এটা?কেন হলো?ও তো এমনটা চায়নি।তবে ওর কারনেই আজ অনিকের এই অবস্থা?হ্যা ওর জন্যেই তো।ওই তো আজ অনিকের এই অবস্থার জন্যে অপরাধি।এতোটা কঠোর ও না হলেও পারতো।অনিক ওর কাছে বার বার করে ক্ষমা চেয়েছে।তাও নিষ্ঠুর ও মনকে পাথরে পরিনত করে রেখেছিলো।নাহলে অনিকের বলা প্রতিটা কথা এতোটাই করুন ছিলো যে যে কোনো মানুষের হৃদয় গলে যাবে।ও এতো পাষাণ হলো কি করে?যেই মানুষটাকে নিজের সবটা দিয়ে ও ভালোবাসে।তাকে এতোটা কষ্ট দিলো কি করে?অনিকের ওই অবস্থার কথা চিন্তা করতেই যেন সিয়ার নিশ্বাস আটকে আসছে।কিন্তু ওই বা কি করত?একটা মেয়ের কাছে তার আত্মসম্মানবোধ যে কি তা বলে বোঝানো সম্ভব না।সিয়া যে ওদের সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার কোনো চেষ্টা করেনি।এই দোষ তো কেউ দিতে পারবে না। কোনোদিন পারবে না।সিয়া কতোবার অনিকের কাছে গিয়েছিলো।পাগলের মতো বলেছিলো অনিককে ওর কাছে ফিরে আসতে।আজ অনিক যেভাবে বলেছিলো ঠিক সেইভাবেই বলেছিলো।কিন্তু অনিক কি করেছিলো?তার প্রেমিকাকে নিয়ে ওকে যা নয় তাই বলে অপমান করেছিলো।তারপরেও সিয়া সব ভুলে ওর কাছে গিয়েছিলো।অনিক যা বলবে তাই করতে চেয়েছিলো।অনিককে যখন জড়িয়ে ধরে ওর ভালোবাসার কথা বলছিলো।ওর কাছে ফিরে আসার কথা বলছিলো।তখন অনিক ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছিলো।সিয়া অনেক ব্যথা পেয়েছিলো। ওর হাত ছুলে গিয়ে রক্ত ঝরছিলো।তাও অনিক ফিরিয়েও তাকায়নি সেদিন।এইতো অপমান আর লাঞ্চনা সহ্য করার পর এই দুনিয়াতে কি কোনো মেয়ে আছে?যে আবার ফিরে যেতো অনিকের কাছে?নিজের আত্মসম্মানবোধ খুইয়ে আবার সম্পর্কে জড়াতে?অন্যসব মেয়ে হলে সেদিনের অপমানের পর আত্মহত্যা করত।ও নিজেও করেছিলো।কিন্তু ওর ভাগ্যে হয়তো অন্যকিছুই লিখা ছিলো।তাই তো বেঁচে ফিরে এসেছিলো।ওর আত্মহত্যার কথা শুনেও অনিক একবারও আসেনি ওকে দেখতে।এই এতোসব কিছু কি একনিমিষেই ভুলে যাওয়া যায়?তাও তো ভুলতে চেয়েছিলো।কিন্তু সেদিন মেঘালয়ে অনিক আবারও ওকে অপমান করে।
সিয়া আর কি করবে?সিয়া এখন মন চাচ্ছে মরে যেতে।ও মরে গেলেই বোধহয় এইসব কিছু বন্ধ হয়ে যাবে।ওএ ভাগ্যটাই খারাপ।নাহলে দুনিয়াতে ওর সাথেই কেন এসব হবে?আর সহ্য করতে পারল না সিয়া।দুহাতে মুখ ঢেকে বুক ভাঙ্গা কান্নায় ভেঙে পরল।সিয়া এহেন কান্নায় যেন সবাই চমকে উঠল।সে কি আর্তনাদ সিয়ার।রুদ্রিক দ্রুত সিয়ার কাছে যায়।সিয়াকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে।রুদ্রিক সিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,’ হুশ,কাঁদছিস কেন?একদম কাঁদবি না।অনিক ঠিক হয়ে যাবে।কিচ্ছু হবে না ওর।’

সিয়া হাউমাউ করে কেঁদে বলছে,’ কেন রুদ্রিক?কেন আমার সাথেই এমন হয়?আমি তো কারও ক্ষতি করিনি কোনোদিন।তবে আমার সাথেই কেন?অনিক আমাকে চায়নি।আমি এতোবার ভালোবাসার দোহাই দিয়ে ওর কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু ও তো আমার ভালোবাসার কোনো দাম দেয়নি।তবে আজ কেন ও আবার আমার কাছে ভালোবাসার কথা বলতে আসল।কি জন্যে আসল?আজ কেন নিজেকে এতোটা কষ্ট দিচ্ছে।আমি তো সরে এসেছিলাম রুদ্রিক।ও যাতে সুখে থাকে তাই সরে গিয়েছিলাম ওর জীবন থেকে।তুই তো জানিস বল?তুই তো জানিস ওর জন্যে আমি কি না কি করেছি।নিজেকে কতোটা ছ্যাছড়া বানিয়ে দিয়েছিলাম।শুধুমাত্র ওকে ভালোবেসে।তবে আজ কেন ও নিজের এই অবস্থা বানালো।’

রুদ্রিক বলল,’ তোর কোনো দোষ নেই।তুই যা করেছিস ঠিক করেছিস।তাই নিজেকে একটুও দোষারোপ করিস না।।তবে আমি শুধু একটা কথাই বলব।সেদিন যেই অনিক তোর ভালোবাসাকে অপমান করে তোকে ফিরিয়ে দিয়েছিলো।সেই অনিক আর নেই।অনিক বদলে গেছে।তুই যেমনটা চাইতি।ঠিক তেমনটাই আজকের অনিক।যে তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে।যেমনটা তুই ভালোবাসিস অনিককে।আজ দেখ তোর প্রত্যাখান ও সহ্য করতে না পেরে হার্ট স্ট্রোক করেছে।তাহলে বুঝ ঠিক কতোটা ভালোবাসে তোকে ও।কিন্তু তবুও আমরা কেউ তোকে কোনো কিছুতে জোড় করব না।তোর মন যা চায় তুই তাই করবি।তোর সিদ্ধান্তই আমরা মেনে নিবো।কারন জোড় করে কিছু হয় না।দেখা যাবে আমাদের কথায় আর জোড়াজুড়িতে তুই অনিককে মেনে নিলি।কিন্তু মন থেকে তো আর মানতে পারলি না।তা দিয়ে কি হবে?দিনশেষে তোরা দুজনের একজনও শান্তিতে থাকতে পারবি না।তাই বলব তোর মন যা চায় তুই তাই কর।আমরা আগেও ছিলাম তোদের পাশে,এখনও আছি আর ভবিষত্যেও থাকব।’

সিয়া কিছুই বলছে না শুধু কাঁদছে।এমন সময় রুদ্রিকের মুঠোফোনটা শব্দ করে বেজে উঠল।রুদ্রিক মারিয়াকে চোখের ইশারায় সিয়াকে সামলাতে বলল।রুদ্রিক উঠে যেতেই মারিয়া এসে আগলে নিলো সিয়াকে।
রুদ্রিক একপলক সিয়ার দিকে তাকিয়ে কলটা রিসিভ করল।অথৈ ফোন করেছে।অপাশ থেকে অথৈ সালাম দিলো।রুদ্রিকও সালামের জবাব নিলো।রুদ্রিকের গলার কণ্ঠটা কেমন যেন শোনালো অথৈয়ের কাছে।অথৈ প্রশ্ন করল,’ হ্যালো?শুনছেন?আজ তো অনিক ভাইয়া আর সিয়া আপুকে প্যাচ-আপ করানোর উদ্দেশ্যে আপনারা গিয়েছিলেন।তো কাজটা কি হয়েছে?’

রুদ্রিক চুপ করে থাকল।কি জবাব দিবে ও?রুদ্রিকের কোনো সারাশব্দ না পেয়ে।অথৈ ফের বলে,’ কি হলো বলছেন না কেন?’

রুদ্রিক এইবার আর চুপ রইলো না।অত্যন্ত শান্ত কণ্ঠে বলে উঠে,’ অনিক হার্ট স্ট্রোক করে করেছে।ওকে নিয়ে আমরা হাসপাতালে এসেছি।ডাক্তার এখনও বের হয়নি।তাই আপাততো কিছু বলতে পারছি না।’

রুদ্রিক যে এহেন একটা কথা বলবে অথৈ ভাবতেও পারেনি।ও যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারলো না।অথৈ কাঁপা গলায় বলে উঠে,’ কি বলছেন এসব?অনিক ভাইয়া….’

অথৈয়ের যেন গলা ধরে আসল।খবরটা শুনে ওর নিজেরই তো কতো কষ্ট হচ্ছে।না জানি রুদ্রিক ঠিক কতোটা কষ্টে আছে।অথৈ নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,’ কোন হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছেন?ঠিকানা দিন।আমি আসছি।’

রুদ্রিক অথৈয়ের কথা শুনে রেগে গেলো।পাগল নাকি এই মেয়ে?এখন বাজে রাত নয়টা।অথৈদের বাসা থেকে হাসপাতাল বেশ দূরে।আসতে আসতে কমপক্ষে চল্লিশ মিনিট তো লাগবেই।রুদ্রিক ধমকে উঠল,’ মাথা ঠিক আছে তোমার?এতো রাতে তোমার আসা লাগবে না।রাত নয়টা বাজে।কতো বড়ো সাহস এতোদূরে একা আসবে।’

অথৈ বলে,’ একা আসব না তো।সত্যি বলছি।আহিদকে নিয়ে আসব।প্রমিস। প্লিজ না করবেন না। আমি আসতে চাই।’

রুদ্রিক হার মানলো শেষমেষ অথৈয়ের জোড়াজুড়িতে।রুদ্রিকের অনুমতি পেয়ে অথৈ দ্রুত আহিদকে ফোন করে।বিষয়টা বিস্তারিতভাবে বুঝিয়ে বলে।আহিদের মাধ্যমে পিহুও জেনে যায়। পিহুও আসতে চায়।আহিদ ওকে বারণ করে।এমনিতেই হাসপাতালে অনেক মানুষ।আর ভীড় করা ঠিক হবে না।পিহুও বুঝে তাই ও আর গেলো না।তারপর আহিদ দ্রুতই অথৈকে নিতে চলে আসে।অথৈ পিক করে নিয়ে ঝটপট অথৈকে নিয়ে চলে আসে।অথৈ রুদ্রিকের থেকে সব আগেই জেনে নিয়েছিলো।অনিককে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।কয়তালায়।তাই আর সমস্যা হয়নি।অথৈ আর আহিদ গিয়ে দেখে সেখানে রুদ্রিকের বন্ধুমহলের সবাই আছে।অথৈ আর আহিদ এগিয়ে যায়।সিয়াকে কাঁদতে দেখে অথৈয়ের কান্না পায়।ও সিয়ার কাছে গিয়ে।সিয়ার পায়ের কাছে বসে পরে। ভেজা কণ্ঠে বলে,’ আপু?কেঁদো না প্লিজ।অনিক ভাইয়া ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু তুমি এভাবে কাঁদলে তো অসুস্থ হয়ে যাবে।তুমি অসুস্থ হয়ে গেলে অনিক ভাইয়া অনেক কষ্ট পাবে।প্লিজ আর কেঁদো না।’

সিয়া অথৈ কণ্ঠ শুনে। সোজা হয়ে বসে।অথৈ গালে হাত রেখে কান্নাভেজা কণ্ঠে বলে,’ তুমি এতো রাতে আসতে গেলে কেন?’

অথৈ সিয়ার হাত ধরে বলে,’ আমি নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি আপু।আমার কথা বাদ দেও।তুমি আর কেঁদো না প্লিজ।আমারও কিন্তু কান্না পাচ্ছে আপু।প্লিজ আপু।’

অথৈ সিয়ার ভেজা দু চোখ দুহাতে মুছে দিলো।সিয়ার যেন হৃদয় জুড়িয়ে গেলো।অথৈকে যেন নিজের ছোটো বোন মনে হচ্ছে।যে বড়ো বোনের কান্না দেখে বলছে,’ আপু তুমি কাঁদলে, আমিও কাঁদব।’

সিয়া মাথা দোলালো।
‘ আচ্ছা কাঁদব না।’

ওদের আলাপের মাঝেই ডাক্তার বেরিয়ে আসে। সিয়া দৌড়ে যায় ডাক্তারের কাছে।অনিকের বাবা অস্থির হয়ে বলতে লাগলেন,’ ডাক্তার সাহেব।আমার ছেলে?আমার ছেলে কেমন আছে?বলুন না ডাক্তার সাহেব?’

ডাক্তার সাহেব শান্ত কণ্ঠে বলে,’ একটুর জন্যে তিনি অনেক বড়ো ক্ষতির থেকে বেঁচে ফিরেছেন।তিনি কিন্তু অনেক গুরুতরভাবে হার্ট স্ট্রোক করেছেন।যা অতিরিক্ত মানুষিক চাপের কারনে হয়ে থাকে।তিনি দীর্ঘদিন যাবত মানুষিক অশান্তিতে ভুগছেন।কোনো কিছু নিয়ে প্রচন্ড ডিপ্রেসড ছিলেন।আর সেই কারনেই আজ উনার এই অবস্থা।আপনারা তাকে সঠিক সময়ে তাকে হাসপাতালে এনেছেন।তাই উনি এখন ঠিক আছে।তবে উনাকে এই মানুষিক চাপ থেকে সরিয়ে আনতে হবে।এমন চলতে থাকলে উনি আবারও হার্ট স্ট্রোক করতে পারেন।যতোটা সম্ভব উনাকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করবেন।আশা করি তাহলে আর সমস্যা হবে না।আপাততো তিনি ঘুমোচ্ছেন।তিনি জাগলে তখন দেখা করতে পারবেন। তবে সবাই না।মাত্র দুজন।তাও আলাদা আলাদাভাবে যাবেন।উনার প্রচুর বিশ্রামের প্রয়োজন।’

বিস্তারিতভাবে সব বলে ডাক্তার চলে গেলেন।সবটা শুনে যেন সিয়ার মনে হলো কেউ ওর ক’লিজা বরাবর ধা’রালো ছু’রি দ্বারা আঘাত করেছে।এতোটা তীব্র যন্ত্রনা অনুভব করল।ডাক্তার যা যা বলল তাতে স্পষ্টভাবেই সিয়া বুঝতে পেরেছে।অনিক এতোদিন খুব তীব্র মানুষিক যন্ত্রণা ভোগ করেছে।সিয়া জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগল।হঠাৎ ওর হাতজোড়ায় কারো হাতের স্পর্শ পেতেই সিয়া চোখ তুলে তাকায়।তাকাতেই দেখতে পায় অনিকের বাবাকে।যে ভেজা ভেজা চোখে সিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।সিয়া অবাক হলো অনিকের বাবার কাছে।কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই অনিকের বাবা কান্নাভেজা গলায় বললেন,’ আমি সব জানি মা।সব জানি।আমার ছেলেটা তোমার সাথে বড়ো অন্যায় করেছে মা।এর বিনিময়ে ক্ষমাও চাওয়া যাবে না।কিন্তু মা আমি তো বাবা বলো।সন্তান হাজার অন্যায় করুক।বাবা, মা কখনও নিজের সন্তানকে দূরে ঠেলে দিতে পারে না।আমার ছেলেটা ভালো নেই।একদম ভালো নেই।আমি আর ওর মা প্রতিনিয়ত ওকে গুমড়ে গুমড়ে মর‍তে দেখেছি।প্রতিনিয়ত নিজেকে তিলে তিলে শেষ হতে দেখেছি।মা আমার ছেলেটা বাঁচবে না।ও তোমাকে অনেক ভালোবাসে মা।তুমি আমার ছেলেটাকে ফিরিয়ে দিও না।তাহলে ওকে আর আমরা বাঁচাতে পারব না।আমার একটাই সন্তান।ওর কিছু হলে আমি আর ওর মা’ও ম’রে যাবো।তুমি আমার অনিককে মেনে নেও। এই বাবা তোমার কাছে আমার ছেলের জীবন ভিক্ষে চাইছি মা।আমার ছেলেটাকে বাঁচিয়ে দেও।’

সিয়া অনিকের বাবার এহেন কান্ডে স্তব্ধ হয়ে যায়।দ্রুত হাত সরিয়ে এনে বলে,’ ছি ছি আংকেল আপনি আমার বাবার বয়সি।আপনি এসব কি বলছেন?এসব বলে আমাকে ছোটো করবেন না আংকেল।’

‘ আমি আর কি করব বলো তাহলে?এছাড়া আমার করার কিছু নেই।’

সিয়া কেঁদে ফেলে।এই এতো এতো যন্ত্রনা আর সহ্য করা যাচ্ছে না।সিয়া বলে,’ আমিও ওকে ভালোবাসি।অনেক ভালোবাসি।ওর এই অবস্থা আমি মেনে নিতে পারছি না।আমি আর ওকে কষ্ট দিবো না।সত্যি বলছি।আমি সব ভুলে যাবো সব।সমাজ আমাকে আত্মসম্মানহীন বলুক।অনেক তো হলো।ওর জীবনের বিনিময়ে আমার আত্মসম্মান বড়ো হয়ে যায়নি।যাকে ভালোবাসি তার জন্যে সব ত্যাগ করতে পারব। ওকে সুস্থ হয়ে গেলে।আমরা সব ঠিক করে নিবো।আমার পক্ষে আর সম্ভব না এসব নেওয়া।আমি একটা স্বাভাবিক জীবন চাই।যেই জীবনে আজকের অনিকটার মতোই অনিক চাই আমি।যেই অনিক আমাকে অনেক ভালোবাসে।আর সেই অনিককেই আমি ভালোবাসি।’

সিয়া নিজের মনের কথাটাই মেনে নিলো।কি হবে আর?এই এতো এতো যুদ্ধ করে৷ নিজেকে কষ্ট দিয়ে কি হবে?শেষ মেষ আজ অনিকের এই অবস্থা।যাকে ভালোবাসে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিবে কিভাবে আর?এটা কিছুতেই মানতে পারবে না।সবাই এতে যদি সিয়াকে খারাপ ভাবে।তো ভাবুক।

মারিয়া সিয়াকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিলো।তারপর সিয়াকে পানি খাইয়ে দিলো।সাফাত এসে সিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,’ তুই তোর মনের কথা শুনেছিস।এতে আমি এবং আমরা সবাই খুশি হয়েছি।শোন সিয়া,ভাগ্যে কার জন্যে কি লিখা থাকে তা আমরা কেউ জানি না।তবে মাঝে মাঝে নিজেদের কারনেই আমরা নিজেরা নিজেদের ভাগ্যকে নষ্ট করে ফেলি।তাই তো সবসময় বলা হয় ভেবে কাজ করো।আশা করি তুই ভেবেচিন্তেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিস। তোরা দুজনেই আমাদের বেষ্টফ্রেন্ড।তোদের কাউকেই আমরা হারাতেই চাই নাহ।মানুষের জীবনটাই কতোটুক বল?আজ আছি তো কাল নেই।যেটুকু সময় বেঁচে থাকি।সেটুকু সময় প্রাণ খুলে বাঁচতে পারাটাই সর্বসুখ।আমি বলছি তোর আজকের এই সিদ্ধান্তে তুই আর পস্তাবি না।সুখি হবি সিয়া। ‘

রুদ্রিক হালকা হেসে বলে,’ আর আমরা আছি তো।ওই অনিক সালা আবার তোকে কষ্ট দিলে ওর হাড়-গোড় ভেঙে দিবো।’

সিয়া কান্নাভেজা চোখেই হেসে ফেলল।সবাই সিয়াকে নানান কথা বলে ভড়সা দিলো।
প্রায় ঘন্টাখানিক পর খবর আসে অনিকের জ্ঞান ফিরেছে।সবাই যেন সস্তি পেলো এই কথাটা শুনে।অনিকের বাবা গেলেন আগে।তিনি ছেলের সাথে অল্পখানিক কথা বলেই বের হয়ে আসলেন।অনিকের বাবাও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন।বেচারা বয়স্ক মানুষ। এতোরাত পর্যন্ত এখানে থাকা ঠিক হবে না।তাই সবাই জোড় করে উনাকে রাজি করালেন বাড়িতে চলে যাবার জন্যে।তিনি সহজে রাজি হচ্ছিলেন না।সবার জোড়াজুড়িতে রাজি হলেন।এখন কে দিয়ে আসতে যাবে।আহিদ নিজেই আগ বাড়িয়ে বলে,’ আমাকে বাড়ি যেতে হবে রুদ্রিক ভাই। বাবা কাজের সূত্রে সিলেট গিয়েছেন।বাড়িতে মা আর পিহু একা।তাই আমি চাচ্ছিলাম বাড়ি চলে যেতে।আমিই নাহয় আংকেলকে তার বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আসব।’

রুদ্রিক বলে,’ তোমার কোনো সমস্যা হবে না তো?’

আহিদ হেসে বলে,’ আরে না না ভাই।আংকেল যেই ঠিকানা দিয়েছেন।সেই অনুযায়ী।আমার বাসার কয়েকটা বাসার পরেই উনার বাসা।আমি উনাকে নামিয়ে দিয়ে আবার ব্যাক চলে যাবো।এটুকুতে কিচ্ছু হবে না।’

ইহান সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে,’ তাহলে তো হলোই।তবে যাও আহিদ।সাবধানে যাও।’
‘ আচ্ছা আসি।’

আহিদ অনিকের বাবাকে নিয়ে চলে গেলো।সিয়া অনিকের সাথে দেখা করার ছটফট করছে।জ্ঞান ফিরে আসায় ডাক্তার অনিককে চেক-আপ করছে।একটু পর ডাক্তার চেক-আপ করে বেড়িয়ে আসল।জানালো অনিক এখন কোনো কথা বলতে পারে না।সাময়িক সময়ের জন্যে সে কথা বলতে পারবে না।তবে খুব দ্রুতই ঠিক হয়ে যাবে।এইতো দু,তিন সময় লাগবে।সিয়া কষ্ট পেলেও নিজেকে সামলে নিলো।ডাক্তার তো বলেছে যে অনিক ঠিক হয়ে যাবে।তাই আর কাঁদল না।সবাই সিয়াকে অনিকের কাছে যাওয়ার জন্যে বলল।সিয়া চলে গেলো অনিকের সাথে দেখা করতে।
এদিকে অথৈ সেদিকে তাকিয়ে চোখের কোনের জলটুকু মুছে নিলো।ভালোবাসা কি না পারে।এক নিমিষেই কেমন করে এতো বছরের রাগ,খোপ,অভিমান ভেঙে গুড়িয়ে দিলো।সত্যি ভালোবাসা সুন্দর, অদ্ভুত সুন্দর।
রুদ্রিক এসে পাশে দাঁড়ায় অথৈয়ের।অথৈ তাকায় রুদ্রিকের দিকে।রুদ্রিক অথৈয়ের হাতটা শক্ত করে আকঁড়ে ধরল।অথৈ মুচঁকি হাসল।রুদ্রিক বলল,’ আমাদের সম্পর্কে আমি কোনোদিন এমন দিন আসতে দিবো না প্রমিজ।তোমাকে কোনোদিন অসম্মান করব না।এমন কোনো কাজ করব না যাতে তুমি কষ্ট পাও।আর আমার থেকে দূরে চলে যাও।আমি এটা মানতে পারব না।’

অথৈ হালকা হেসে বলে,’ আমি জানি আপনি আমার সাথে সারাজীবন থাকবেন।এই যেমন এখন আছেন আমার কাছে,আমার পাশে।ঠিক এইভাবেই।আর আমিও প্রমিস করলাম।আপনি কষ্ট পাবেন এমন কোনো কাজ আমিও কোনোদিম করব না।আপনাকে সম্মান করব।মানে আমরা দুজন দুজনের কাছে কিচ্ছু লুকোবো না।সবটা সেয়ার করব। প্রমিস?’
‘ হুম প্রমিস।’

অথৈ হাসল।বিনিময়ে রুদ্রিকও হাসল।রুদ্রিক ফিসফিস করে বলল,’ এইভাবে আর থাকা যাবে না।আমি এতো বছর অপেক্ষা করতে পারব না অথৈ। তোমাকে সবসময়ের জন্যে আমার কাছে চাই। খুব করে, অনেক কাছে চাই।তাই খুব শীঘ্রই তোমাকে পার্মান্যান্টলি আমার বাড়িতে নিয়ে যাবো।আমার এক্সামটা শেষ হোক শুধু।অপেক্ষা আর কয়েকটা দিনের মাত্র।’

অথৈ প্রথমে অবাক হয়ে গিয়েছিলো রুদ্রিকের কথা শুনে।পরপর রুদ্রিকের প্রতিটা কথা মন থেকে অনুভব করেছে।যার ফলে ওর পুরো চেহারা রক্তিম আভায় ছেঁয়ে গেছে।আর রুদ্রিল মুগ্ধ হয়ে তা অবলোকন করেছে।

#চলবে_______________
সবাই তৈরি হয়ে যান।আগামী পর্ব না হলেও এর পরের পর্ব এই গল্পের ইতি টানব আমি।অপেক্ষার অবসান হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here