ছায়া হয়ে থাকবো পাশে,Part_05
Ariyana Nur
সূর্য ঠিক মাথার উপরে জ্বলজ্বল করছে।চারোদিকে তার রশ্নি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।তার পরেও অন্য দিনের তুলনায় আজ সূর্যের তাপ অনেকটা কম।সাথে হালকা মৃদু বাতাস বইছে।নুহা গাড়িতে বসে গাড়ির জানালা খুলে চোখ বন্ধ করে রাগ কমানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু কিছুতেই তার রাগ কমছে না।মাথার মধ্যে শুধু একটু আগের ঘটনাই ঘুরপাক খাচ্ছে।
ফ্লাসব্যাক…..
তখন নুহার কথার মধ্যে বা হাত ঢুকানোর জন্য নুহা বিরক্ত হয়ে লোকটাকে দু’চার কথা শুনানোর জন্য ঘুরে দাড়াতেই সামনের মানুষটাকে দেখে তার চেহারার রং পাল্টে গেলো।
কেননা সামনে সাইফ দাড়িয়ে আছে।নুহা কিছু বলতে নিয়েও থেমে যায়।কেননা এটা তার বাবার অফিস।এখানে ঝামেলা করলে সম্যসা আছে।তাই সে নিজের রাগকে কন্টল করে চুপ করে রইল।
সাইফ কে দেখে সামনের লোকটি উঠে এসে বলল….
—মিঃখান এই হচ্ছে আমার বড় ছেলে সাইফ চৌধুরী।
মিঃখান সাইফ এর সাথে হাত মিলিয়ে বলল….
—কেমন আছো ইয়াং ম্যান???
সাইফঃজ্বি আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আঙ্কেল।আপনি কেমন আছেন???
মিঃখানঃআমিও আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি।এখন আরো বেশি ভালো হয়ে গেছি কেননা আমার মা চলে এসেছে আমার কাছে।মিঃচৌধুরী আপনার সাথে তো পরিচয় করানো হয়নি।এই হল আমার মা,বড় মেয়ে নুহা।
নুহাঃ আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।
মিঃচৌধুরীঃওয়ালাইকুম আসসালাম।কেমন আছো মা??
নুহাঃআলহামদুলিল্লাহ ভালো।আপনি???
মিঃচৌধুরীঃ আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো মা।
সাইফ নুহার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রয়েছে।কেননা কন্ঠটা তার কেমন চেনা চেনা লাগছে।কিন্তু মেলাতে পারছে না।পারবে কিভাবে সেদিন তো নুহার হিজাব দিয়ে মুখ ঢাকা ছিলো।আজ ও হিজাব পরেছে কিন্তু মুখ ঢাকা না।আসলে হিজাব দিয়ে মুখ ঢাকাই ছিলো কিন্তু মিঃখান এর কেবিনে ঢুকার পর খুলে ফেলেছে।
নুহা সাইফ এর এখান থেকে কেটে পরার জন্য বলল….
—বাবা তুমি কিন্তু মিটিং টা শেষ করেই বাড়িতে চলে যাবে।মনে থাকে যেন।আর বাড়িতে গিয়ে আমাকে কল দিবে।
—ঠিক আছে মা মনে থাকবে।
—আসছি আমি।
—তা কোথায় যাবি এখন???
—বাড়িতে।
—ঠিক আছে সাবধানে যাস।
নুহা কথা বলতে বলতে হিজাব দিয়ে মুখ লাগিয়ে সাইফ এর পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই সাইফ বলল….
— রাস্তা-ঘাটে যারা অন্ধের মত হাটে তাদের হাই পাওয়ারের চশমা পড়া উচিত।
(হিজাব দিয়ে মুখ ঢাকাতেই নুহার চোখ দেখে সাইফ এর আর চিনতে একটুও ভুল হলো না এটা কে।কেননা এই চোখ দুটো যে তাকে আজকাল বড্ড ডিস্টাব করছে)
কথাটা যে সাইফ নুহাকে বলেছে তা আর তার বুঝতে বাকি রইল না।নুহা সাইফের কথা শুনে থেমে গিয়ে মুচকি হেসে বলল….
—চশমা ছাড়াও অন্ধরা রাস্তায় একা হাটতে পারে।দরকার পরলে কারো সাহায্য নিবে।কিন্তু যাদের মাথা মোটা,গিলু নেই তাদের তো কেউ আর সাহায্য করতে আসবে না।
সাইফ রেগে বলল….
—আপনি আবার আমাকে মাথা মোটা বলছেন???
নুহা অবাক হওয়ার ভান করে বলল….
—আল্লাহ্ আপনি কানের ডাঃ দেখাননি???
—আপনি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছেন???সামনে বড়রা আছে ভালো ভাবে কথা বলুন।
—খোচা মেরে কথা বলার আগে মনে ছিল না সামনে বড়রা আছে।
ব্যাস হয়ে গেলো।লেগে গেলো দুজনের মধ্যে টম এন্ড জেরি যুদ্ধ।এদিকে মিঃখান আর মিঃ চৌধুরী তাদের ছেলেমেয়েদের ঝগড়া দেখছে।তাদের ছেলেমেয়ে যে এভাবে বাচ্চাদের মত গলায় পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে পারে তা তাদের জানা ছিলো না।তারা একে আপরের মুখের দিকে তাকিয়ে আবার ওদের ঝগড়া দেখতে লাগলো।ওদের থামার নাম গন্ধ না পেয়ে মিঃ চৌধুরী একটু জোরে বলল….
—সাইফ কি হচ্ছে???তুমি নুহা মামনির সাথে এভাবে কথা বলছো কেনো???আর এমন বাচ্চাদের মত ঝগড়া করছো কেন???
নুহা মনে মনে শয়তানী হেসে কাদো কাদো হয়ে বলল….
—আঙ্কেল জানেন সেদিন রাস্তায় না আপনার ছেলে আমাকে শুধু শুধু বকেছে।যা নয় তাই বলেছে।নুহা তারপরে সেদিনের সব ঘটনা বলল।
সব শুনে মিঃচৌধুরী গম্ভীর হয়ে বলল….
—সাইফ কাজটা কিন্তু তুমি ঠিক করোনি।তুমি নুহা মামুনিকে সরি বল।
সাইফ চেচিয়ে বলল….
—হোয়াট…..
আমি সরি বলব তাও আবার এই মিসঃ অন্ধকে।কখনই না।
নুহাঃদেখলেন আঙ্কেল আমাকে অন্ধ বলছে।
সাইফঃবাচ্চাদের মত বাবার কাছে নালিশ করছো কেন।সাহস থাকলে যা বলার আমাকে বল।
নুহাঃ আমার সাহস বড়াবড়ই একটু বেশি মিঃতাউরা।
সাইফঃ এই তুমি কি বললে আমাকে মিঃ তাউরা।হোয়াট তাউরা।
নুহাঃউফ এ দেখি তাউরাও চিনে না।আমি এখন আপনাকে অতো চেনাতে পারবো না।শুধু তাউরার একটা গুন বলে দিচ্ছি যে নাকি সারাদিন শুধু ক্যেচ ক্যেচ করে।মানুষের মাথা ….
মিঃ খানঃনুহা কি হচ্ছে এসব।তুমি এমন বাচ্চাদের মত ঝগড়া করছো কেন??
নুহাঃবাবা আমি তো….
মিঃ খানঃ কোন কথা নয় সাইফ কে সরি বল।
মিঃ চৌধুরীঃ সাইফ তুমিও নুহা মাকে সরি বল।
দুজন দুজনের বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে রাগ করে মুখ ঘুরিয়ে রইল।ওরা কিছু না বলে চুপ করে দাড়িয়ে আছে।মিঃ চৌধুরী জানে তার ছেলে দুনিয়া উল্টিয়ে গেলেও সরি বলবে না।তাই সে বলল….
—তোমাদের ঝামেলা তোমরা মিটিয়ে নিও।এখন কাজের কাজ করা যাক।
মিঃ চৌধুরীর কথা শুনে নুহা তাদেরকে বাই বলে চলে গেলো।আর সাইফ তার হাতের ফাইলটা তার বাবার হাতে দিয়ে চলে গেলো।
মিঃচৌধুরী মিঃ খান এর সাথে একটা ডিল সাইন করতে এখানে এসেছিলো।কিন্তু সে একটা ফাইল ভুলে তার কেবিনেই রেখে এসেছিলো।তিনি ফোন করে বললেই সাইফ সেই ফাইল নিয়ে এখানে চলে আসে।ফাইল ও দেয়া হবে আর কাজের ব্যপারের কিছু তথ্যও জানতে পারবে।কিন্তু এদিকে ফাইল দিতে এসে কাজের “ক”হলো না।উল্টো আরো কেচাল হয়ে গেলো।
ওরা দুজন চলে যেতেই মিঃ খান আর মিঃ চৌধুরী একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল।
মিঃখানঃ কিছুক্ষনের জন্য মনে হয়েছিল আমাদের ছেলেমেয়েগুলো ছোট হয়ে গেছে।
মিঃচৌধুরীঃ ঠিক বলেছেন।আমারও তাই মনে হচ্ছিল।আমার ছেলে যে এমন ঝগড়া করতে পারে তা আমার জানা ছিলো না।
—আমি তো জানি আমার মেয়ে একটু দুষ্ট।কিন্তু এভাবে যে ঝগড়া করতে পারে তা আমারও জানা ছিলো না।
—আচ্ছা আপনার মেয়ের কি বিয়ে হয়ে গেছে??
—না।আমার মেয়ে পড়াশুনা করছে।
—না আসলে ও বলল বাড়িতে যাচ্ছে আবার আপনাকে বলল বাড়িতে গিয়ে জানাতে।তাই আর কি জিগ্যেস করলাম।
মিঃখান কিছু না বলে চুপ করে বসে রইল।মিঃ চৌধুরী তাকে চুপ করে থাকতে দেখে বলল….
—তো আমরা ডিলের ব্যপারে কথা শুরু করি।
—হ্যা অবশ্যই।
মিঃ চৌধুরী ডিল ফাইনাল করে চলে যেতেই মিঃখান টেবিলের ডয়ার থেকে একটা ছবি ফ্রেম বের করে তার দিকে অপলাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।যেখানে আসফিয়া বেগম আশুকে এক হাত দিয়ে কোলে নিয়ে আরেক হাত দিয়ে নুহাকে ধরে মুচকি হেসে দাড়িয়ে রয়েছে।মিঃ খান ছবিটার উপর হাত বুলিয়ে র্দীঘ একটা নিশ্বাস ফেলে বলল….
—আর চার,পাচটা সংসারের মত কেন আমাদের সংসারটা হলো না???কেন সব এভাবে নষ্ট করলে তুমি???
চলবে…..