#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না #সাদিয়া_জাহান_উম্মি #পর্বঃ৩৯

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩৯
রাত গভীর হয়েছে।সেই রাতের গভীরতাকে হার মানিয়ে ঝকঝক শব্দ তুলে ছুটে চলেছে রেলগাড়ি।ট্রেনের প্রায় সকলেই ঘুমিয়ে পরেছে।শুধু ঘুম নেই রিধি আর ইহানের চোখে।দুজনে নিশ্চুপ বসে আছে একে-অপরের পাশে।কতো শতো কথা একে-অপরকে বলতে চায়।কিন্তু চাইলেও বলতে পারছে নাহ।অদৃশ্য কোনো দেয়াল তৈরি হয়ে আছে ওদের মধ্যে।আর সেটা হলো জড়তার দেয়াল।কেউ কারো জড়তা কাটিয়ে উঠতে পারছে নাহ।রিধি হাশফাশ করছে।ভালোবাসার মানুষটার পাশে বসেছে।তার সান্নিধ্যে আছে সে।দূরত্ব মাত্র কয়েক ইঞ্চি।কিন্তু তারপরেও রিধি মন তো জানে তাদের মাঝে যোজন যোজন দূরত্ব।এই দূরত্ব ঠিক কবে বিলীন হবে?কে জানে?আদৌ এই দূরত্ব কোনোদিন শেষ হবে?দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিধি।মনের এই দহন সে কাকে বোঝাবে?কাকে দেখাবে?অন্তরটা জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে।ভালোবাসায় এতো জ্বালা জানলে পাশে বসা নিষ্ঠুর লোকটাকে মনের মাঝে জায়গা দিতো না।কিন্তু আদৌ কি তা পারে যায়?মন যে কারো আয়ত্বে থাকে না।অজান্তেই এই মন কখন কাকে তার মাঝে জায়গা দিয়ে দেয় কেউ বুঝতেও পারে না।রিধি চোখজোড়া জ্বালা করছে। লাল হয়ে এসেছে চোখজোড়া। একটু কাঁদতে পারলে বোধহয় ভালো লাগতো।কিন্তু তাও যে করতে পারবে না।এদিকে রিধিকে এমন অস্থিরতার মাঝে দেখে ইহান অনেকক্ষণ যাবতই কিছু বলতে চাইছে।কিন্তু বলার সাহস পাচ্ছে না।কিন্তু এইবার মনকে দমিয়ে রাখতে পারলো না।নিস্তব্ধতাকে ছিন্ন করে ইহান বলে উঠে,’ রিধি?কোনো সমস্যা হচ্ছে তোমার?শরীর খারাপ লাগছে?’

হঠাৎ ইহানের কণ্ঠ এমন নিস্তব্ধ রাতের মাঝে শুনতে বেশ ভয়ানক লেগেছিলো। তাইতো রিধি ভয় পেয়ে যায়।চমকে উঠে ও।রিধিকে ভয় পেতে দেখে ইহান এইবার কণ্ঠস্বর নম্র করে বলে,’ ভয় পাচ্ছ কেন?এটা আমি ইহান।’

রিধি জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করল।পরিমুহূর্তে শান্ত কণ্ঠে বলে,’ নাহ আসলে হঠাৎ কথা বলেছেন তো তাই ওই একটু আরকি।’

‘ তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?’

রিধি ইহানের প্রশ্ন শুনে ছোট্টো কণ্ঠে উত্তর দেয়,’ নাহ।’

ইহানের ব্যাকুল কণ্ঠস্বর,’ তাহলে এমন হাশফাশ করছ কেন?সমস্যা হলে আমাকে বলতে পারো।’

ইহানের কথায় রিধির যেন রাগ লাগল।ইহানের এমন ব্যবহার তার মনের আঘাতটাকে খুচিয়ে আরও রক্তাক্ত করে দিয়েছে যেন।লোকটা বলছে তাকে সমস্যা হলে জানাতে।আরে তার প্রধান সমস্যা তো এই লোকটা।যাকে ভালোবেসে প্রতিমুহূর্তে ধুকে ধুকে মরছে সে।না পারছে এই লোকটাকে ভুলে যেতে আর না পারছে নিজেকে শেষ করে দিতে।রিধি তাচ্ছিল্যভরা স্বরে বলে উঠল,’ আমার সমস্যার কথা বললে তার সমাধান আদৌ আপনি কোনোদিন দিতে পারবেন?’

ইহান কাতর গলায় বলে,’ একবার বলে তো দেখো।’

রিধি তাচ্ছিল্য হেসে বলে,’ যে সমস্যার সমাধান দিতে পারবেন না কোনোদিন। তা বলেই বা কি হবে?’

রিধির প্রতিটা কথার মানে বুঝতে পারছে ইহান।রিধির কথাগুলো তীরের মতো বুকে গিয়ে বিধছে।মেয়েটাকে এতোটাই কষ্ট দিয়ে ফেলেছে ও যে মেয়েটা এখন তাকে তাচ্ছিল্যভরে করে কথা বলছে।অভিমান করে প্রেমময়ী মনটা ঢেকে ফেলেছে অভিমানের চাঁদরে। ইহান ঠান্ডা স্বরে রিধিকে বলল,’ যদি বলি তোমার সব সমস্যার সমাধান আমার কাছে আছে।’

চমকে যায় রিধি ইহানের কথায়।চোখ বড়ো বড়ো করে ইহানের দিকে তাকালো।একেবারে স্পষ্টভাবে ইহানের চোখে চোখ রাখল রিধি।তাকাতেই বুকটা ধ্বক করে উঠল।ইহানের শান্ত চোখজোড়া আজ অন্যকিছুই বলছে।অন্যকিছু ফিল করছে রিধি।যেটার অপেক্ষা রিধি এতোগুলো দিন যাবত করে এসেছে।তবে কি ইহানও ওকে? নাহ, নাহ এটা কিভাবে হবে?ইহান তো ওর দিকে ভালোভাবে তাকায়ই না।কিন্তু মানুষের চোখের ভাষা কি কখনও মিথ্যে হয়?নাহ মিথ্যে হয় না।রিধিও তো ভালোবাসে।তাই অন্যজনের চোখের গভীরে ভালোবাসা সে বুঝতে পারে।রিধি কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।বুকটা ধরাস ধরাস করছে।রিধি যা ভাবছে তা যদি সত্যি হয় তবে রিধি কি করবে?হাত পা কাঁপছে রিধির।গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।যন্ত্রণা হচ্ছে বুকের মাঝে।মনের অস্থিরতা কিছুতেই কমাতে পারছে না।রিধির কাঁপাকাঁপি করতে দেখে ইহান বলে উঠল,’ কি হয়েছে বলছ না কেন?আর কাঁপছ কেন?’

রিধি এক হাত দ্বারা ওর অপরহাত চেপে ধরে।অস্থিরতা নিয়েই থেমে থেমে বলে,’ আপ..আপনি আর আমার দিকে তাকাবেন নাহ।’

ইহান হাসল। সে বুঝতে পারছে রিধির অস্থিরতা।মেয়েটা তাহলে ওর চোখের ভাষা পড়তে পেরেছে।বুঝতে সক্ষম হয়েছে যে ইহানও ওকে ভালোবাসে।ইহান হেসে বলে,’ কেন তাকাবো নাহ?’
‘ আমি বলেছি তাই তাকাবেন না।’
‘ আচ্ছা।’

রিধি করুন চোখে ইহানের দিকে তাকালো।ইহান এখন অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।রিধির মন খারাপ হলো।সে বলল আর লোকটা মেনে নিলো?এমন কেন লোকটা?কেন রিধিকে বুঝে না?রিধির মনের অস্থিরতা, ব্যাকুলতা যে তাকে ঘিরেই একটুও কি বুঝে নাহ?

‘ আমি সবটাই বুঝি।আর সব জানি।’

আকস্মিক ইহানের কথায় রিধি অবাক হয়ে যায়।চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যায় ওর।কিসের কথা বলছে লোকটা?ও তো মনে মনে বলেছে সব।তবে কি লোকটা ওর মনের কথা শুনতে পারে না-কি?রিধি অবাক কণ্ঠে বলে,’ কি বুঝেন?আর কি জানার কথা বলছেন?’

ইহান রহস্যময় হেসে বলে,’ তুমি যা বুঝাতে চাও সব বুঝি।আর তুমি যা জানাতে চাও সব জানি।’

রিধি হতভম্ব বাকরুদ্ধ।বলে কি লোকটা?লজ্জায় রিধির গাল ভাড় হয়ে আসে।কিছুক্ষণ ছটফট করে বলে,’ আমার ঘুম আসছে।আমি ঘুমাবো।’

এই বলে রিধি গায়ের চাঁদরটা দিয়ে পুরো মুখ ঢেকে সিটে হেলান দিয়ে দেয়।এদিকে রিধির কান্ডে নিস্তব্ধে হাসে ইহান।লজ্জায় মেয়েটা চাঁদরের নিচে লুকিয়েছে।

______________
এদিকে রিধি আর ইহানের মতোই আরেকজনের চোখে ঘুম নেই।সে আর কেউ না রুদ্রিক।তার ঘুম যে এক ঘুমকুমারি নিয়ে গিয়েছে।যে বুকের মাঝে নিশ্চিন্তে,শান্তিতে ঘুমিয়ে।তার চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।রুদ্রিক বুকের মাঝে আগুন জ্বলছে।মস্তিষ্কের মধ্যে নিষিদ্ধ ইচ্ছেরা কিলবিল করছে।বুকের মাঝে ঘুমিয়ে থাকা মেয়েটাকে গভীরভাবে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।রুদ্রিক ফের তাকালো অথৈয়ের দিকে। মেয়েটা কিভাবে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।যেন সে কিচ্ছু করেনি।ট্রেনের জানালা খোলা সেখান থেকেই হু হু করে ছুটন্ত বাতাস এসে ছুঁয়ে দিচ্ছে অথৈয়ের চোখ, নাক, মুখ।বাতাসের দাপটে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে অথৈয়ের চুল।সেই সাথে এলোমেলো হয়ে গেল অথৈয়ের গায়ে জড়ানো ওড়না।সেখানে চোখ যেতেই শুকনো ঢোক গিলল রুদ্রিক।এই মেয়েটা নির্ঘাত তাকে পাগল করে ছাড়বে।দিশেহারা রুদ্রিক।দ্রুততার সাথে অথৈয়ের ওড়নাটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টায় লেগে পরলো।এদিকে বাতাসের দাপটে অথৈয়ের ছোট্টো নরম দেহখানা যেন ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে।রুদ্রিকের হাত অথৈয়ের বাহুতে স্পর্শ করতেই রুদ্রিক দেখে অথৈয়ের শরীর বরফের মতো ঠান্ডা।রুদ্রিক অথৈকে বুকে নিয়েই অতি সাবধানে সিটের নিচ থেকে ব্যাগ বের করল।সেখান থেকে একটা চাঁদর বের করল।অবশ্য ওর বেশ কষ্ট হয়েছে।চাঁদরটা নিজের গায়ে আর অথৈয়ের গায়ে ভালোভাবে জড়িয়ে দিলো।দুহাতে ভালোভাবে অথৈকে আঁকড়ে ধরে।আরও গভীরভাবে বুকের মাঝে মিশিয়ে নিলো। এদিকে উষ্ণতা পেয়ে অথৈ যেন নিজ থেকেই রুদ্রিকের বক্ষস্থলের মাঝে আরও লেপ্টে যেতে চাইছে।আদুরে বিড়াল ছানার ন্যায় গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে রুদ্রিকের বুকে।রুদ্রিক কিছুক্ষণ গভীর নয়নে অথৈকে দেখল।পর পর ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলো।এদিকে গায়ে কাথা জড়ানোর ফলে অথৈয়ের প্রথমে বেশ ভালোই লাগছিলো।কিন্তু এখন কেন যেন গরম লাগছে।ভ্যাপসা গরম।অথৈয়ের আবার অনেক গরম বেশি।সে গরম একদমই সহ্য করতে পারে না।তার উপর গায়ে মোটা কাপড়ের চাঁদর।ছটফটিয়ে উঠল অথৈ। কিন্তু বিন্দুমাত্র নড়তে পারলো না রুদ্রিকের শক্তপোক্ত বাধনের মধ্যে।আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায় অথৈ। তাকাতেই রুদ্রিকের ঘুমন্ত মুখটা নজরে আসে ওর।কি সুন্দর নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে লোকটা। আর ওকেও নিজের বুকের মাঝে আগলে রেখেছে কি সুন্দরভাবে।ঘুমের মাঝেও কেউ কাউকে এতোটা শক্ত করে ধরে রাখতে পারে?যেন ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবে।অথৈয়ের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে।ঘুমন্ত্র রুদ্রিককে দেখে মনের মাঝে দুষ্টু চিন্তারা এসে হানা দিচ্ছে।অথৈয়ের চোখজোড়া গভীরভাবে রুদ্রিকের সর্ব মুখশ্রী দেখতে ব্যস্ত।হঠাৎ নজর আটকে যায় রুদ্রিকের থুতনীর খাঁজে কালো কুচকুচে তিলটার উপর।এই তিলটা অনেক আগেই অথৈ খেয়াল করেছিলো।অনেক ইচ্ছে ছিলো রুদ্রিকের এই তিলটা একটুখানি ছুঁয়ে দেওয়ার।কিন্তু জাগ্রত রুদ্রিকের সামনে এই কাজ অথৈ কোনোদিনও করতে পারবে না।লজ্জায় ও মরেই যাবে।কিন্তু আজ আর সুযোগটা হাত ছাড়া করতে চাইছে না অথৈ৷ তাই মনের বাসনা পূর্ণ করে নিলো।হাত বাড়িয়ে আলতো করে ছুঁয়ে দিলো ঘুমন্ত রুদ্রিকের তিলটা।ছুঁয়ে নিজেই কেঁপে উঠল।আরও একটা ভয়ানক কাজ করে বসল অথৈ।মাথাটা উঁচিয়ে রুদ্রিকের সেই তিলে টুপ করে একটা চুমু খেয়ে বসল।চুমু দিয়ে নিজেই হতভম্ব অথৈ। ও এটা কিভাবে করল? এই সাহস কিভাবে করতে পারল ও? ভাজ্ঞিস লোকটা ঘুমোচ্ছে।যদি জাগ্রত থাকতো তাহলে নিশ্চয়ই এই একটা চুমুর বদলে রুদ্রিক যে ঠিক কি করত ওর সাথে।তা ভাবতেই লজ্জায় শক্ত হয়ে যায় অথৈ। শুভ্র গালজোড়ায় ছেঁয়ে যায় লালাভ আভা।নিজের কাজকর্মে নিজেই লজ্জায় শেষ।দ্রুত মুখ লুকিয়ে ফেলল রুদ্রিকের বক্ষস্থলে।গরমের কথা ভুলে গেলো।লজ্জা ঢাকতে নিজেই চাঁদর দিয়ে ওর গোটা দেহটা চাঁদরে মুড়িয়ে নিলো।এদিকে অথৈ নিজেকে লুকোতেই। ঘুমু ঘুমু চোখজোড়া মেলে হালকা করে তাকায় রুদ্রিক।ওর ঠোঁটের কোণে খেলে যাচ্ছে তৃপ্তির হাসি।ওর অথৈ আজ নিজ থেকে ওকে ছুঁয়েছে।চুমু খেয়েছে ওকে।ভাবতেই মনের মাজে আলাদা ভালোলাগা কাজ করছে।ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে এই একটা চুমুর বিনিময়ে চুমুর বর্ষনে ভিজিয়ে দিতে।মূলত রুদ্রিক পুরোপুরি ঘুমোয়নি।মাত্র চোখটা লেগে আসছিলো।অথৈয়ের নড়াচড়ায় ঘুমটা ভেঙে যায় ওর।কিন্তু তাও চোখ খোলেনি।কিন্তু কেন খোলেনি তা সে জানে না।তবে ভালোই করেছে খোলেনি।নাহলে অথৈয়ের ঠোঁটের ছোঁয়া কি এতো সহজে পেতো।অথৈয়ের হাতের স্পর্শ পেয়ে ওর শরীরের যেন কারেন্ট বয়ে যাচ্ছিলো।আর মেয়েটা যখন চুমু খেলো।সেই অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নাহ।রুদ্রিক অথৈকে বুঝতে দিলো না ও যে সব টের পেয়েছে।হৃদয়ের গভীর থেকে অথৈকে অনুভব করেছে।নাহলে যে মেয়েটা লজ্জায় মরেই যাবে।তখন আর ভুলেও ওর কাছে আসবে না।রুদ্রিক তো চায় অথৈ তাকে আদর করুক।খুব করে তার ভালোবাসামাখা ছোঁয়াগুলো দিক।ঠিক আজকের মতো।তাইতো আজ কিছু বলল না অথৈকে।তবে একেবারেই যে ছেড়ে দিবে তা নয়। একবার শুধু গন্তব্যে পৌছাক।এরপর মেয়েটাকে উষ্ণ ভালোবাসাময় স্পর্শে কাতর করে তবেই ছাড়বে।

#চলবে___________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন। ছোটো হওয়ার জন্যে দুঃখিত।প্রচন্ড বৃষ্টি,ঝড় হচ্ছে।কারেন্ট নেই।ফোনে চার্জ নেই। তাই বড়ো করে লিখতে পারিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here