#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না #সাদিয়া_জাহান_উম্মি #পর্বঃ২৬

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২৬
রুদ্রিকের বক্ষে লেপ্টে আছে অথৈ। এখনও সে থেমে থেমে কেঁপে উঠছে।সে এখনও ঠিকঠাকভাবে স্বাভাবিক হতে পারছে না।রুদ্রিকের হঠাৎ দেওয়া ভালোবাসার স্পর্শগুলো তার রন্দ্রে রন্দ্রে প্রকট আকারের ভূমিকম্পের রূপ নিয়েছিলো।এখনও সেই ভূমিকম্পের রেশ রয়ে গিয়েছে।রুদ্রিক অথৈয়ের এমন নাঁজেহাল অবস্থা দেখে হাসল।তার এই একটুখানি স্পর্শে মেয়েটার এমন অবস্থা।যখন সে মেয়েটাকে নিয়ে ভালোবাসার সাগরে তলিয়ে যাবে।সুখময় যন্ত্রনায় ভড়িয়ে তুলবে মেয়েটাকে।তখন মনে হয় মেয়েটাকে আর খুঁজেও পাওয়া যাবে না।রুদ্রিক হুট করে কোলে তুলে নিলো।অথৈ কিছুই বলল না।চুপচাপ রইলো।রুদ্রিক ওকে নিয়ে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো।অথৈয়ের ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে নিলো।তারপর অথৈকে খাইয়ে দিলো। পানি পান করে অথৈ একটু স্বাভাবিক হলো।রুদ্রিক এইবার তার দুষ্টু চাহনী অথৈয়ের দিকে ছুঁড়ে মেরে বলে,’ এই এইটুকুতে এই অবস্থা?বাসর রাতে তো তোমাকে আর খুঁজেও পাওয়া যাবে না।’

অথৈয়ের শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেল।লোকটা যে এমন অসভ্য হয়েছে।মুখে কিছুই আটকায় না।লজ্জায় গালদুটো ফুলেফেঁপে উঠেছে ওর।মুখ ফুলিয়ে বলে,’ আপনি আপনার অসভ্য কথাবার্তা বন্ধ করুন।নাহলে কিন্তু ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।’

রুদ্রিক ধীর আওয়াজে বলে,’ তাহলে বলো তো।অভিমানিনীর অভিমান কি আমি ভাঙাতে পেরেছি?নাকি তার অভিমান ভাঙাতে আরও আদর লাগবে তার?’

অথৈ রুদ্রিকের এমন লাগামহীন কথাবার্তায় উঠে দাঁড়ালো।চেঁচিয়ে বলল,’ চরম অসভ্য লোক।এতোটা নির্লজ্জ কেউ কিভাবে হতে পারে?’

রুদ্রিক পকেটে দুহাত গুজে।নির্বিকার ভঙিতে দাঁড়িয়ে বলে,’ সব পুরুষেরাই নিজেদের বউদের কাছে নির্লজ্জই হয়।আর পুরুষদের লজ্জা পেতে নেই। লজ্জা তো নারীদের ভূষণ।আর আমি যদি লজ্জা পাই।তাহলে আমাদের বাচ্চা কাচ্চা’রা পৃথিবীর আলো দেখবে কিভাবে?’

অথৈ হা করে তাকিয়ে রইলো।এখনও বউ সেঁজে তার বাড়িই যেতে পারলো না।আর এই লোক বাচ্চা কাচ্চা পর্যন্ত চলে গিয়েছে?

অথৈকে হা করে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুদ্রিক ঠোঁটের কোণ প্রসারিত করল।তীর্জক স্বরে বলে,’ আই নো আই আম সো হ্যান্ডসাম।আর এভাবে তাকালে তো আমার লজ্জা লাগে।’

বিষ্ময়ে অথৈয়ের ভ্রুদ্বয় কপালে উঠে গেল।অবাক কণ্ঠে বলে,’ আপনি না একটু আগে বললেন আপনার লজ্জা নেই। আপনি লজ্জা পান নাহ?তো এখন আবার বলছেন আমি তাকালে আপনি লজ্জা পান?’

রুদ্রিক বড়ো বড়ো পা ফেলে অথৈয়ের কাছে আসল।ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে বলে,’ আর কথা বলো না তো।এখন চলো আমার সাথে।’
‘ আরেহ! কিন্তু কোথায় যাবো?সেটা তো বলুন?’
‘ তোমার বন্ধুদের বলেছিলাম।তোমার অভিমান ভাঙাতে পারলে তাদের ট্রিট দিবো আমি।সো সেখানেই যাচ্ছি আমরা।’

রুদ্রিকের কথায় অথৈ চোখ ছোটো ছোটো করে তাকিয়ে বলে,’ তার মানে ওরাও আপনাকে হ্যাল্প করেছে তাই না?’

রুদ্রিক কিছু না বলে শুধু হাসি দিলো।যা বোঝার বুঝে ফেলেছে অথৈ। ওর বন্ধুদেরও বশ করে নিয়েছে এই লোক।অথৈ মুখ ফুলিয়ে রুদ্রিকের সাথে হাটতে লাগল।আর রুদ্রিক হাসছে অথৈয়ের কান্ডে।
__________
ফার্স্ট ইয়ার,ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট এর ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আহিদ।স্যার ক্লাসরুমে ক্লাস নিচ্ছেন।আহিদ জানালা দিয়ে উঁকিঝুকি দিচ্ছে।অবশেষে অনেক কষ্টে সেই কাঙ্খিত মুখটা দেখতে পেলো।মাইশা ক্লাসরুমের লাস্টের আগের বেঞ্চে বসে আছে।খুব মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করছে সে।যেমন আশেপাশের কোনো কিছুরই খেয়াল তার নেই।আহিদের অস্থির হৃদয়টা এতোক্ষণে শান্ত হলো।অশান্ত মনটা শান্ত হয়ে গেল নিমিষেই। এতোক্ষন মনের মাঝে যেই শূন্যতা অনুভব করছিলো সে।এখন তা বিন্দুমাত্র অনুভব করছে না।এ কেমন অনুভূতি?এ কিসের মাঝে ফেসে গেল সে? কেন এরকম লাগে তার?তবে কি সে প্রেমে পরে গেল মেয়েটার?ভালোবেসে ফেলল মেয়েটাকে?কিন্তু এক দেখাতেই কি কাউকে ভালোবাসা যায়?হ্যা, যায়তো! যাবে না কেন?নাহলে কি ‘লাভ এট ফার্স্ট সাইট ‘ বলে কি কিছু থাকত? থাকত না।ভেবেই হাসল আহিদ।পর পর আবার মুখের হাসিটা হারিয়ে গেল।সে তো ভালোবেসে ফেলেছে মেয়েটাকে।কিন্তু আদৌ কি কোনোদিন এই মাইশা নামের মেয়েটা ভালোবাসা পাবে কোনোদিন?নাহ, এতোকিছু ভেবে তো আর ভালোবাসা যায় না।ভালোবাসা হলো স্নিগ্ধ,পবিত্র একটা অনুভূতি।ভালোবাসলেই যে ভালোবাসা পেতে হবে এমন কোনো কারন নেই।এক তরফা ভালোবাসাগুলোও অনেক সুন্দর হয়।তবে হ্যা,আহিদ নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবে মাইশার মনেও তার জন্যে অনুভূতি সৃষ্টি করানোর জন্যে।ভেবেই মুচঁকি হেসে সরে গেল সে।থাকুক মেয়েটা ক্লাস করছে।এখন আর জ্বালাতন করবে না। সে আপাততো ব্যস্ত।এখন তাকে যেতে হবে রেস্টুরেন্টে।রুদ্রিক তাদের ট্রিট দিবে।মেয়েটাকে দেখে নিয়েছে।শান্তি পেয়েছে এতেই হবে।বাকিটা না হয় পরে করা যাবে।
__________
পিহু আর প্রিয়ান ভার্সিটির মাঠ দিয়ে হাটছে।পিহু প্রায় একপ্রকার লাফিয়ে লাফিয়ে হাটছে।প্রিয়ান দু একবার বারণ করেছে ওকে।কিন্তু কে শুনে কার কথা?পিহু তার মতো করেই চলেছে। এভাবে হঠাৎ করে প্লাজোর সাথে পা বাজিয়ে পরে যেতে নিতেই।মৃদ্যু চিৎকার করে উঠল পিহু। ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।কিন্তু অনুভব করল কেউ তার কোমড় আঁকড়ে ধরেছে।তাকে পরতে পরতে বাঁচিয়ে নিয়েছে।পিহু পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো।চোখ মেলে তাকাতেই প্রিয়ানের রাগি মুখশ্রী দেখতে পেল।রক্তচক্ষু নিয়ে সে তাকিয়ে পিহুর দিকে।রুদ্রিক সজোড়ে টেনে পিহুকে সোজা করে দাঁড় করালো। এতে ব্যথা পেয়েও পিহু মুখ ফুটে কিছুই বলল না। চুপসে দাঁড়িয়ে রইলো প্রিয়ানের সামনে।যেভাবে তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে একদম।প্রিয়ান রাগি স্বরে বলে,’ ইঁদুরের মতো ছুটাছুটি না করলে তোর ভালো লাগে না?কতোবারনা করেছি তোকে?শুনেছিস আমার কথা?এখন আমি যদি না ধরতাম তাহলে তো পরে হাড্ডি-গুড্ডি সব ভেঙ্গে বসে থাকতি।মনে তো চাচ্ছে থাপড়িয়ে গাল ফাটিয়ে দেই।’

পিহু প্রিয়ানের রাগি স্বরের কথাগুলো শুনে মুখ ফোলালো।মিনমিন করে বলে,’ এভাবে বলছিস কেন? আমি কি ইচ্ছে করে পরে যেতে নিয়েছিলাম না-কি?’
‘ তুই তো ইচ্ছে করে কিছুই করিস না।এইযে আমাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দিচ্ছিস।সেটাও তো তুই ইচ্ছে করে করিস না তাই না?’

পিহু অবাক হলো প্রিয়ানের কথায়।সেভাবেই বলে,’ মানে?আমি আবার তোকে কি করলাম?’

প্রিয়ান কিছু বলতে নিয়েও থেমে গেলো।কপালে আঙুল ঘষে নিজের রাগটাকে দমন করার চেষ্টা করল।অনেক কষ্টে নিজের রাগিটা সামলিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,’ তুই তো কিছুই জানিস না। একেবারে মাসুম বাচ্চা।এখন আমার মুখের দিকে না তাকিয়ে চল।এই রিধিটাও যে কোথায় মরতে চলে গিয়েছে কে জানে?মেজাজটা একেবারে খারাপের চরম পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।এই মেয়েগুলো এক একটা প্যারা।কিভাবে যে এদের সামলায় মানুষ।’

কথাটা শেষ করে প্রিয়ানের চোখ পিহুর দিকে যায়।দেখে পিহু রাগি চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।প্রিয়ান তাকাতেই পিহু রাগি গলায় বলে,’ মেয়েরা এক একটা প্যারা তাই নাহ? আমি প্যারা?তো আমার সাথে বন্ধুত্ব করেছিস কেন?অথৈ আর রিধির সাথে কেন করেছিস বন্ধুত্ব?থাক তুই তোর মতো।আর আসবি না আমার সাথে কথা বলতে।বান্দরের জাতের সবচেয়ে বলদ বান্দর কোথাকার।’

এসব বলেই পিহু হনহন করে চলে গেল। এইদিকে নিজের কথায় প্রিয়ান নিজেই যে এতো বাজেভাবে ফেঁসে যাবে ভাবেনি।এখন এই রাগের রানিকে কিভাবে শান্ত করবে সে?রেগে তো একেবারে বোম হয়ে আছে।তবে রাগি পিহুকে দেখতে অনেক ভালো লাগে প্রিয়ানের।রাগি রাগি ওই চোখের চাহনীটা একেবারে বুকের বা পাশে গিয়ে লাগে।পিহুর জায়গাটা যে ওর মনের মধ্যে একটু ভিন্ন।মানে স্পেশাল তা সে বেশ বুঝতে পেরেছে প্রিয়ান।শুধু অপেক্ষায় আছে নিজের মনের অনুভূতি ঠিকঠাক বুঝে উঠার জন্যে।ওর মন ঠিক কি চায় তা ভালোভাবে জেনে নেওয়ার জন্যে।তবে পিহুকে যে এখন সে বন্ধুত্বের থেকেও বেশি কিছু মনে করে তা বেশ বুঝেছে সে।তার সহ্য হয় না পিহু সে বাদে অন্য কোনো ছেলের সাথে কথা বললে।রাগ লাগে তার প্রচন্ড রাগ।মন চায় চারপাশ সেই রাগের তেজে ঝলসে দিতে।তাই তো সেদিন নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে পিহুর সাথে বাজে ব্যবহার করেছিলো।তবে এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। দেখা যাক সময় তাদের কোথায় নিয়ে দাঁড় করায়।কথাগুলো নিজ মনে ভেবেই মুচঁকি হাসল প্রিয়ান। পর পর ছুটে চলে গেল রাগি পিহুর রাগ ভাঙানোর জন্যে।

#চলবে___________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন।গতকাল দেয়নি।আজ দেওয়ার কথা দিয়েছি।তাই ঈদের দিন ব্যস্ত থাকার পরেও আমার দেওয়া কথা রেখেছি।ছোটো হয়েছে জানি।একটু মানিয়ে নিন।ঈদের কয়েকদিন ব্যস্ততায় কাটবে।জানেনই তো মেহমান’রা আসবে।এমতাবস্থায় বড়ো করে লিখা হয়ে উঠবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here