#ধূসর_শ্রাবণ💚 #লেখিকা:#তানজিল_মীম💚 #পর্ব-১২+১৩

#ধূসর_শ্রাবণ💚
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💚
#পর্ব-১২+১৩
________________

হিয়াকে জড়িয়ে ধরে চুপচাপ ঘুমিয়ে আছে নির্মল। চোখে মুখে একদম শান্ত ভাব তাঁর। কপালের সামনে থাকা ছোট ছোট চুলগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এদিক সেদিক। কপালের বাম দিকটায় সাদা ব্যান্ডেজটা ওপরটা লালচে হয়ে আছে। গাড়ির জানালা খোলা থাকায় আকাশ পথ বেয়ে আসছে মৃদু বাতাস সেই বাতাসে উড়ছে নির্মল হিয়ার দুজনেরই মাথার চুল। যদিও হিয়ার দৃষ্টি বর্তমানে নির্মলের মুখের দিকে। মানুষটা ঘুমিয়ে থাকলে একদম বাচ্চাদের মতো নিষ্পাপ লাগে। কে বলবে এই মানুষটা খুব রাগী। হিয়া আনমনেই নিজের হাতটা দিয়ে স্পর্শ করলো নির্মলের ব্যান্ডেজ করা কপালটায়। কতটা জানি কেটে গেছে? হিয়ার হাতের স্পর্শ পেতেই হাল্কা নড়ে চড়ে উঠলো নির্মল। সাথে সাথে দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে অন্যদিকে তাকালো হিয়া। সে ভাবলো হয়তো নির্মল উঠেছে কিন্তু না নির্মল ওঠে নি হাল্কা নড়ে আবারো ঘুম দিয়েছে গভীর।’

সময় যাচ্ছিল দু’মিনিট তিনমিনিট করে সময় কাটছিল। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে আসছে। এবার হিয়া নড়েচড়ে উঠলো, অনেকক্ষন হয়ে গেছে এবার বাড়ি যাওয়া দরকার তাঁর। কিন্তু নির্মলের তো এখনো ঘুম ভাঙার নাম গন্ধও নেই এখন কি করবে হিয়া? একবার ডাকবে? যদি রেগে যায়। কিন্তু এভাবে তো বসে থাকাও যাচ্ছে না। হিয়া অনেকক্ষণ ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিলো এবার ডাকবে সে নির্মলকে। শান্ত স্বরেই বললো হিয়া,

‘ নির্মল শুনছেন, এবার উঠুন। আমাকে যে যেতে হবে?’

হিয়ার কথার প্রতি উওরে কিছুই বললো না নির্মল। এমনকি নড়লো না। এবার হিয়া আর একটু জোরে শব্দ করে বললো,

‘ নির্মল শুনছেন?’

এবার হাল্কা নড়েচড়ে উঠলো নির্মল। তবে চোখ খুললো না। হিয়া ভেবে পাচ্ছে না এখন কি করবে সে এদিকে সময় চলে যাচ্ছে? বাবা বাড়ি গেলে নির্ঘাত তাঁকে মেরেই ফেলবে। এমনিতেও বাবাকে কিছু না বলে চলে এসেছে সে। বাড়ির ঢুকলেই হাজারটা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে তাঁকে। কিন্তু এই নির্মলের যে ঘুমই ভাঙছে না। এবার কি করবে? হিয়া আর একবার ডাকতে নিলো নির্মলকে। এবার নির্মল উঠলো,চোখ খুলেই হিয়ার মায়াবী ফেসটা দেখে আনমনেই হাসলো সে। তারপর হিয়ার কোল থেকে মাথা সরিয়ে তাড়াতাড়ি শোয়া থেকে উঠে বসলো। তারপর আশপাশ তাকিয়ে বললো,

‘ কটা বাজে হিয়া?’

হিয়া তাঁর মোবাইলের স্কিনটা অন করে বললো,

‘ সাড়ে চারটে।’

সাথে সাথে চোখ বড় বড় করে বললো নির্মল,

‘ কি বলছো আমি এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম আমায় আরো আগে ডাকবে না।’

প্রতি উওরে খুব শান্ত গলায় বললো হিয়া,

‘ ডেকেছিলাম তো আপনি তো উঠছিলেন না।’

হিয়ার কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ করে রইলো নির্মল। তারপর চটজলদি গাড়ির পিছনের সিট থেকে বেরিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসলো সে। হিয়াও গাড়ি থেকে নেমে বসেছে নির্মলের পাশের সিটে। নির্মল তক্ষৎনাত গাড়ি স্ট্যার্ট দিলো নিমিষেই। কিছুক্ষনের নীরবতা চললো দুজনের মধ্যে। হঠাৎই সেই নীরবতার দড়ি ছিন্ন করে বলে উঠল হিয়া,

‘ এক্সিডেন্টটা কি করে হলো?’

এতক্ষণ পর হিয়ার কথা শুনে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো নির্মল হিয়ার মুখের দিকে। তারপর বললো,

‘ জানি না।’

নির্মলের কথা শুনে বিস্ময় ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো হিয়া,

‘ জানেন না মানে।’

প্রতি উওরে প্রসঙ্গ পাল্টে বলে উঠল নির্মল,

‘ শুনলাম আজ নাকি তোমাকে দেখতে এসেছিল তা ছেলে পছন্দ হয়েছে বুঝি?’

নির্মলের কথা শুনে হকচকিয়ে উঠল হিয়া। চোখে মুখে বিস্ময়ের ছাপ দিয়ে বললো,

‘ তাঁর মানে আপনি সবটা জানতেন।’

হিয়ার কথা শুনে সোজাসাপ্টা জবাব নির্মলের,

‘ না জানার কি আছে?’

এবার বেশ খটকা লাগলো হিয়ার। ভ্রু-কুচকে বললো সে,

‘ আপনি কি তাদের সাথে ঝামেলা করেছেন, নির্মল?’

উওরে হাসলো নির্মল। তারপর বললো,

‘ ওনাদের সাথে আমি ঝামেলা করবো কেন?’

‘ আপনি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছেন নির্মল? বলুন না প্লিজ।’ (বেশ আগ্রহ নিয়ে)

‘ আশ্চর্য! যখন কিছু হয় নি তাহলে বলবো কি।’

‘ 😒😒😒

‘ ওভাবে তাকিও না প্রেমে পড়ে যাবো কিন্তু?’

‘ আপনি একটা যাচ্ছে তাই।’

উওরে আবারও হাসলো নির্মল। নির্মলের হাসি দেখে মুখ ভাড় করে বসে রইলো হিয়া গাড়িতে। হিয়ার কান্ডে হেঁসেই বলে উঠল নির্মল,

‘ দিন দিন তুমি খুব সাহসী হয়ে উঠছো হিয়া। বেশি কিছু করি নি সত্যি বলছি শুধু গাড়ির টায়ারটা রোহানকে (নির্মলের ফ্রেন্ড) দিয়ে ফাটিয়ে দিয়েছি।’

নির্মলের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে বললো হিয়া,

‘ কি?’

‘ বেশি জোরে চেঁচিয়েও না।’

‘ ওদের না আসার আসল কারনটা না হয় বুঝলাম কিন্তু আপনার এই অবস্থা হলো কি করে।’

হিয়ার কথা শুনে স্বাভাবিক গলাতেই বললো নির্মল,

‘ তোমার ওপর রাগ করে? কাঁচের গ্লাস চেপে ধরে হাতটা কেটে ফেলেছি আর কপালটা দেয়ালের সাথে বারি দিয়ে।’

নির্মলের কথা শুনে এবার হিয়ার চক্ষু বেরিয়ে আসার উপক্রম। অবাক হয়েই বললো সে,

‘ আপনি কি একটা সাইকো? এইভাবে কেউ নিজেকে আঘাত করে।’

‘ তুমি আমার যন্ত্রণাটা বুঝবে না, বুঝলে হয়তো এমন করতে না।’

নির্মলের কথা শুনে বেশ খারাপ লাগলো হিয়ার। নির্মলের কথার প্রতি উওর হিসেবে কি বলবে সেটাই বুঝতে পারছে না সে। আবারও নিস্তব্ধতা এসে ঘিরে ধরলো তাদের। আর সেই নিস্তব্ধতা এসে থামলো নির্মলের বলা একটা কথার মাঝে,

‘ তোমার মাঝেই আমি আমার মানসিক শান্তি খুঁজে পাই, আবার তোমাতেই মানসিক যন্ত্রনা আমার? তবে ভুল করেও ভেবো না তোমায় কোনো মূল্যে ছাড়ছি আমি। আমার মাঝেই সুখ তোমার না হয় ভয়ংকর যন্ত্রণা।’

নির্মলের কথা শুনে কিছু বলে না হিয়া। শুধু নির্বিকার হয়ে চেয়ে রয় নির্মলের পানে। লোকটার শান্ত গলাও কেমন ভয়ংকর লাগলো হিয়ার।’

______

গভীর রাত! ঘঁড়িতে একটা ছাড়িয়ে দু’টোর কাঁটায় ছুঁই ছুঁই। রুমের মধ্যে পায়চারি করছে বর্ষা। কারন শুভ্র এখনো বাড়ি ফেরে নি। বাহিরে মুসল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে যাঁর দরুন বেশ ভয় ভয় লাগছে বর্ষার। বার বার প্রার্থনা করছে শুভ্র যেন তাড়াতাড়ি চলে আসে। সেই সন্ধ্যা রাত থেকে বৃষ্টি হচ্ছে থামার কোনো নাম গন্ধ নেই। ভয়ে শরীর কাঁপাকাঁপির অবস্থা তাঁর। আজ শুভ্র কেন এত লেট করছে এটাই বুঝতে পারছে না বর্ষা। লন্ডনে আসার পর আজই এত বৃষ্টি হচ্ছে। বেশ কয়েকবার শুভ্রকে কলও করেছিল বর্ষা কিন্তু প্রত্যেকবারই সেটা নট রিচেবেল বলছে। টেনশনে টেনশনে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে বর্ষার। এমন সময় বাড়ির কলিং বেলটা বিকট শব্দে বেজে উঠল। আচমকা এমনটা হওয়াতে বুক সমেত কেঁপে উঠল বর্ষার। তক্ষৎনাত নিজেকে সামলে নিয়ে দৌড়ে গেল দরজার কাছে। দরজা খুলতেই শুভ্রের ভিজে একাকার হয়ে যাওয়ার অবস্থা দেখে বললো বর্ষা,

‘ আজ এত দেরি কেন করলেন?’

উওরে শুভ্র জড়ালো গলায় বললো,

‘ অফিসে একটু কাজ ছিল।’

‘ একটা ফোন তো করতে পারতেন আমি সেই কখন থেকে আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।’

উওরে ভাঙা গলায় বললো শুভ্র,

‘ আমার খুব ক্লান্ত লাগছে বর্ষা, বাকি কথা কাল বলবো?’

‘ আপনি কিছু খাবেন না আমি খাবার গরম করে আনছি আপনি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন।’

বর্ষার কথার পাল্টা উওর হিসেবে কিছুই বললো না শুভ্র। নীরবে এগিয়ে গেল সে তাঁর রুমের দিকে। অত্যাধিক হারে বৃষ্টিতে ভেজার জন্য চোখ মুখ জ্বলছে শুভ্রের। মাথাটাও ভাড় হয়ে আছে। হয়তো আজ তাঁর জ্বর আসবে। সচরাচর বৃষ্টিতে ভেজে না শুভ্র, বৃষ্টি জিনিসটাকে অতোটাও পছন্দ করে না সে। কারন হাল্কা একটু বৃষ্টিতে ভিজলেই তাঁর জ্বর আসে। আজ এক প্রকার বাধ্য হয়েই বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে তাঁকে।’

রুমে ঢুকে শুভ্রকে কাঁথা জড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে বেশ হতাশ হয়েই হাতে আনা খাবারগুলো টেবিলে রাখলো বর্ষা। শুভ্রের টেনশনে সে নিজেও কিছু খায় নি। কিন্তু এখন শুভ্রকে ঘুমিয়ে পড়তে দেখে নিরাশ হলো বর্ষা। একবার ভাবলো শুভ্রকে ডাকবে,শুভ্র কি খেয়ে এসেছে নাকি না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে। বললো তো অফিসে ছিল তাহলে বোধহয় না খেয়েই এসেছে? নানান কিছু ভেবে বর্ষা সিদ্ধান্ত নিলো ডাকবে সে শুভ্রকে। এক বুক সাহস নিয়ে জোরে নিশ্বাস ফেলে বললো বর্ষা,

‘ শুনছেন আপনি কি কিছু খাবেন না নাকি না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লেন?’

উওরে কোনো হেলদোল করলো না শুভ্র। শুভ্রকে চুপচাপ দেখে গায়ে হাত দিয়ে বসলো বর্ষা। সাথে সাথে চমকে উঠলো সে। হতাশ হয়েই বললো বর্ষা,

‘ আপনার তো জ্বর এসেছে শুভ্র?’

#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]

#TanjiL_Mim♥️

#ধূসর_শ্রাবণ💚
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💚
#পর্ব-১৩
________________

আতংকিত চেহারা নিয়ে বসে আছে বর্ষা শুভ্রের পাশে। কি করবে না করবে কিছুই যেন বুঝতে পারছে না সে। এত রাতে কাউকে ডেকে হেল্প চাইবে তাও পারছে না। বর্ষা এইসব বিষয়ে বরাবরই ভিতু টাইপের। এর আগেও বাংলাদেশে বসে শুভ্রের জ্বর এসেছিল। দু’দিন তো শুভ্রের হুসই ছিল না। বর্ষাসহ বাড়ির সবাই আতংকিত ছিল তখন। কিন্তু বর্ষার মা, শুভ্রের মায়ের সেবায় সেবার ঠিক হয়ে গিয়েছিল শুভ্র। বর্ষা শুধু দূর থেকেই সেগুলো দেখেছিল। বর্ষা কিছুক্ষন চুপ থেকে শুভ্রের কপালে হাত রাখলো, আগের চেয়েও গরম লাগছে বেশি। বর্ষা আর দেরি না করে চটজলদি চলে যায় ওয়াশরুমের দিকে। তারপর বালতি আর মগ নিয়ে এসে শুভ্রকে সুন্দর মতো শুয়ে দিয়ে পানি দিতে লাগলো মাথায়। ঘড়ির কাঁটায় তখন প্রায় আড়াইটে ছাঁড়িয়ে তিনটের কাছাকাছি। আজ রাতে আর খাওয়া হবে না হয়তো কারো। বাহির এখনো মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে মনে হয় না আজ রাতে আর থামবে।’

সূর্য্যিমামার তীব্র আলো তখন। রাত ফুঁড়িয়ে সকাল হয়ে গেছে অনেক আগেই। জানালার কার্নিশ বেয়ে সাদা পর্দা ভেদ করে আসছে সূর্য্যিমামার তীব্র আলো। সেই আলো এসে পড়ছে বর্ষার মুখে। সারারাত শুভ্রের মাথায় পানি আর জলপট্টি দিয়ে প্রায় সকাল সকাল হওয়া ভাব এমন সময় ঘুমিয়েছে সে। তাও বিছানায় নয় খাটে মাথা দিয়ে নিচে বসে বসে। তার পাশেই কাঁথা মুড়ি দিয়ে বেঘোরে ঘুমিয়ে আছে শুভ্র। জ্বরের ঘোরে সে হয়তো বুঝতেও পারে নি কেউ তাঁর জন্য সারারাত জেগে ছিল। আচমকাই এলার্ম-ঘড়িটার ঝনঝন শব্দে বেজে উঠতেই ঘুম ভাঙলো বর্ষার। তক্ষৎনাত এলার্ম ঘড়িটা হাতে নিয়ে বন্ধ করে দিলো। তারপর তাকালো সে আশেপাশে। চোখ দুটো জ্বলছে অল্প স্বল্প। বর্ষা কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থেকে তাকালো শুভ্রের মুখের দিকে। ফর্সা মুখটা লালচে হয়ে আছে। শুভ্র বর্ষার চেয়ে ফর্সা। চুলগুলোও অসম্ভব সুন্দর আর সিল্কি। শুভ্রের চোখ দুটোকে ভীষণ ভালো লাগে বর্ষার কখনো প্রকাশ করা হয় নি। কিন্তু লাগে। মাঝে মাঝে তো শুভ্রকে বলতে ইচ্ছে করে বর্ষার,

‘ আপনার চোখ দুটো এত সুন্দর কেন বলুন তো আমি বারে বারে প্রেমে পড়ে যাই।’

বর্ষা চাইলেও এই কথাগুলো বলে উঠতে পারে না শুভ্রকে। কেন পারে না এটা সে নিজেও জানে না। এখন তো তারা বিবাহিত এখন তো পারা উচিত। কিন্তু পারে না ভীষণ ভয় হয় বর্ষার। যদি বকে তখন। তপ্ত নিশ্বাস ফেলে শুভ্রের কপালে হাত রাখলো বর্ষা না জ্বর এখনও কমে নি। বর্ষা চটজলদি চলে যায় নিচের রুমে ডাক্তারকে কল করতে হবে। কাল অনেক রাত সাথে বৃষ্টি থাকায় কল করা হয় নি আর কিন্তু এখন করবে সে।’

সকাল প্রায় সাড়ে দশটার কাছাকাছি। ডাক্তার শুভ্রকে দেখছে, এই ডাক্তার শুভ্রের পূর্ব পরিচিত। শুভ্র কখনো অসুস্থ হলে একেই দেখায়। বর্ষা জানতো না কিন্তু ডাইরিতে ডাক্তার আক্কেল লেখা নাম্বার দেখে চটজলদি কল করে ফেলে সে। কাল কাজ করার সময় এই ডাইরি আর নাম্বারটা দেখছিল বর্ষা। তবে সে ভাবে নি আজ সকালেই কাজে লেগে যাবে তাঁর। ডাক্তার কিছুক্ষন শুভ্রকে দেখে কিছু ঔষধের নাম লিখে চলে যায়। বর্ষাও এগিয়ে দেয় ডাক্তারকে। শুভ্র তখন চুপচাপ বসে ছিল মাত্র। তেমন কোনো কথা বলে নি। ডাক্তার যেতেই আবারো কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে শুভ্র। বড্ড খারাপ লাগছে শরীর। বর্ষা তাদের বাড়ির দারোয়ানের হাতে ঔষধ লেখা কাগজটা গচিয়ে চটজলদি চলে আসে রুমে। শুভ্রের জন্য সুপ বানাতে হবে।’

যেই ভাবা সেই কাজ। কয়েক মিনিটের মধ্যে গরম গরম সুপ তৈরি করে বাটিতে নিয়ে এগিয়ে চললো বর্ষা শুভ্রের রুমের দিকে। এরই মাঝে কলিংবেলটা বেজে উঠল বর্ষা বুঝতে পেরেছে দারোয়ান ঔষধ নিয়ে এসেছে। বর্ষা সুপের বাটিটাকে টি-টেবিলের ওপর রেখে এগিয়ে যায় দরজার দিকে। তারপর সত্যি সত্যি দারোয়ানকে দেখে মুচকি হেঁসে ঔষধগুলো নিয়ে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে দরজা আঁটকে দিলো আবার।’

তারপর সুপ আর ঔষধের প্যাকেটটা নিয়ে এগিয়ে চললো সে শুভ্রের রুমের দিকে। শুভ্র চুপচাপ শুয়ে ছিল তখন হঠাৎই বর্ষার ভয়েস ভেসে আসলো কানে সে বললো,

‘ শুনছেন এই সুপটা খেয়ে নিন, তারপর ঔষধও তো খেতে হবে।’

শুভ্র শুনলো ঠিকই কিন্তু শরীর নাড়িয়ে ঘুরতে ইচ্ছে করছে না মোটেও। শুভ্রের হেলদোল না দেখে আবারো বললো বর্ষা,

‘ আমার কথা কি আপনি শুনতে পাচ্ছেন?’

এবার বিরক্ত হলো শুভ্র। ইচ্ছে না থাকা সত্বেও ঘুরলো সে। হাল্কা জড়ালো গলায় বললো,

‘ আমার খেতে ইচ্ছে করছে না, বর্ষা?

‘ এভাবে বলবেন না, না খেলে ঔষধ কি করে খাবেন বলুন।’

উওরে কিছুক্ষন চুপ থাকলো শুভ্র। তারপর আস্তে আস্তে শোয়া থেকে উঠে বসলো সে। কিন্তু বসতেই মাথাটা যেন ঘুরে উঠলো তাঁর। যা দেখে শুভ্রের পিঠের পিছনে বালিশ দিয়ে আধশোয়া হয়ে বসালো বর্ষা। তারপর বললো,

‘ এভাবে বসলে আপনার খারাপ লাগবে না।’

প্রতি উওরে কিছু বলে না শুভ্র শুধু চেয়ে রয় বর্ষার পানে। বর্ষা এগিয়ে দেয় সুপের বাটিটা যদিও তার ইচ্ছে ছিল শুভ্রকে খাইয়ে দেয়ার কিন্তু সাহসে কুলাচ্ছে না। শুভ্র সুপের বাটিটা হাতে নেয় ঠিকই কিন্তু চামচ ধরে খেয়ে পারছে না। শরীরের সমস্ত শক্তি যেন কোথায় হারিয়ে গেছে তাঁর। শুভ্রের কাজ দেখে বর্ষা কিছুক্ষন চুপ থেকে একবুক সাহস নিয়ে বলে,

‘ আমি কি আপনায় খাইয়ে দিবো?’

বর্ষার কথা শুনে শুভ্রও মাথা নাড়ায় যা দেখে বর্ষা খুশি হয়ে সুপের বাটিটা হাতে নিয়ে ফু দিয়ে খাওয়াতে থাকে শুভ্রকে। শুভ্রও বর্ষার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে আস্তে আস্তে খেতে থাকে সুপটা। বর্ষার ভিতর থেকে একটা ভালো লাগা কাজ করছে, জীবনে প্রথমবার শুভ্রের সেবা করার সুযোগ পেয়েছে, নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছে বিষয়টা সত্যি আকাশের চাঁদ পাওয়ার মতো আনন্দ দিচ্ছে বর্ষাকে। আনমনেই ঠোঁটের কোনে হাসি জমলো বর্ষার। বর্ষার মিটমিটে হাসি দেখে বলে উঠল শুভ্র,

‘ তুমি হাসছো কেন?’

সাথে সাথে চমকে উঠলো বর্ষা। হাল্কা থমকানো ভাব আসলো চেহারায়। বর্ষা সেই থমকানো ভাব নিয়ে বললো,

‘ কই না তো।’

প্রতি উওরে পাল্টা আর কিছু বললো না শুভ্র। অন্যসময় হলে হয়তো বলতো কিন্তু এখন ভালো লাগছে না।’

কিছুক্ষনের মধ্যেই শুভ্রকে অর্ধেকের বেশি সুপ খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিলো বর্ষা। আরো খাওয়াতে চেয়েছিল কিন্তু শুভ্র খেতে চাই নি। বর্ষাও আর জোর করে নি।’

সারাদিনের মতো খুঁটিনাটি কাজ আর শুভ্রের সেবা করেই কেটে গেল বর্ষার।’

রাত প্রায় বারোটার কাছাকাছি। আজ আবারো লন্ডনের শহর কাঁপিয়ে বৃষ্টি নেমেছে। বিদুৎ চমকাচ্ছে ঘন ঘন। যার দরুন ভীষণই ভয় লাগছে বর্ষার। তারওপর শুভ্রের জ্বর। সব মিলিয়ে বিচ্ছিরি একটা পরিস্থিতি। ভয়ের চোটে ঠিকভাবে রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না বর্ষা। এত ভয় কেন হচ্ছে এটাই যেন বুঝতে পারছে না বর্ষা। এতবড় বাড়িতে শুধুমাত্র সে আর শুভ্র থাকে। আর এখন তো শুভ্র উপরের রুমে আর বর্ষা নিচের রুমে। শুভ্রকে খাইয়ে ঔষধ দিয়েছে অনেক আগেই। এখন শুধু এটো বাসনগুলো ধুতে এসেছিল বর্ষা। হয়তো এত রাতে এসে ভুলই করেছে। যদিও খুব বেশি বাসন নয়। এমন সময় হঠাৎই বিকট শব্দে বিদুৎ চমকালো সাথে সাথে রুহু সমেত কেঁপে উঠল বর্ষার। বর্ষা তাড়াতাড়ি তাঁর কাজ শেষ করে এক প্রকার দৌড়ে চলে গেল শুভ্রের রুমে। শুভ্র তখন ঘুমিয়ে ছিল। জ্বর কমে ছিল একটু। বর্ষা জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলে তাকিয়ে রইলো শুভ্রের মুখের দিকে। ভাগ্যিস ঘুমিয়ে আছে না হলে তাঁর মতো এত বড় ডিঙ্গি মেয়েকে দৌড়াতে দেখে হাসিতে হাসিতে লুটিয়ে পড়তো যেন। বর্ষা চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পড়লো শুভ্রের পাশ দিয়ে। আজ খুব ভয় লাগছে তাঁর। নিজের বাড়ি থাকলে এতক্ষণে মাকে জড়িয়ে ধরে চিটপটাং হয়ে ঘুমিয়ে পড়তো বর্ষা কিন্তু এখন?’ শুভ্রকে জড়িয়ে ধরা আর ক্যারেন্টের সুইচের ভিতর যেচে আঙুল ঢুকিয়ে দেওয়া যেন একই বিষয়। বিছানায় কিছুক্ষন এপাশ ওপাশ করে চোখ বুঁজিয়ে ফেললো বর্ষা। এরই মধ্যে আবারো আকাশ পথ বেয়ে বিদ্যুৎ চমকালো, সাথে বিকট শব্দ আসতেই ভয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো বর্ষা। কাঁদো কাঁদো ফেস নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো সে,

‘ এমন করো কেন দেখো না আমি ভয় পাই।’

প্রতি উওরে আকাশ মামা আবারো চেঁচিয়ে উঠলো। যার দরুন কান চেপে ধরলো বর্ষা। ভীষণভাবে কান্না পাচ্ছে তাঁর। বর্ষা ছলছল চোখে শুভ্রের দিকে তাকালো। ভীষনভাবে চেঁচিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে তার,

‘ শুনছেন আমার ভীষণ ভয় লাগছে, আমি আপনায় জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে চাই।’

কিন্তু কথাগুলো মুখ দিয়ে আর বের হয় না বর্ষার। ঠোঁট পর্যন্তই আঁটকে রয়। আর শুভ্র সে তো জ্বরের চাপে চুপচাপ ঘুমিয়ে থাকে মাত্র।’

______

আজ আবার পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে হিয়াকে। তবে আগের বার যারা আসতে চেয়েছিল তাঁরা নয় অন্য কেউ। আজও লাল টুকটুকে রঙের শাড়ি পড়ে বসে আছে হিয়া। বিরক্ত লাগছে তাঁর। তাঁর সামনেই একজন ভদ্রলোক আর একজন ভদ্রমহিলা বসে আছে। আর ওদের দুজনের মাঝখানে বসে আছে দাঁত উঁচা ভুড়িওয়ালা একটা ছেলে। মিটমিটে হাসছে ছেলেটা। হিয়ার ইচ্ছে করছে ছেলেটার দাঁতের মধ্যে গুঁড়ো মরিচ দিয়ে দিতে। ভুতুম একটা। হিয়া শুরুতে ভেবেছিল আজও হয়তো নির্মল কোনোভাবে এই পাত্রপক্ষের আসা আটকাবে। কিন্তু আটকায় নি। এতে যেন অবাকের পাশাপাশি খারাপও লেগেছে হিয়ার। হঠাৎই সামনে বসে থাকা ভদ্রমহিলা বলে উঠল,

‘ আমার ছেলে কিন্তু খুব ভালো একদম মা পাগলা মা যা বলে তাই শোনে।’

উওরে হাসে হিয়ার বাবা আর হিয়া মনে মনে বলে,

‘ এতই যখন মা পাগল তাহলে বিয়ের করার কি দরকার মায়ের আঁচল ধরে বসে থাকলেই তো হয়। ‘যত্তসব আজাইরা লোকজন’

আচমকাই হিয়ার ভাবনার মাঝে ছেলের মা প্রশ্ন করে বসলো হিয়াকে,

‘ তা মা তুমি রান্নাবান্না করতে পারো তো?’

এমন সময় এন্ট্রি মারলো আমাদের গল্পের হিরো নির্মল। চোখের চশমাকে খুব স্টাইল মেরে ঠিক করে এগিয়ে আসতে আসতে বলে উঠল সে,

‘ কেন বিয়ের পর বউকে দিয়ে রেস্টুরেন্ট চালানোর ইচ্ছে আছে নাকি?’

সাথে সাথে উপস্থিত সবাই পিছন ঘুরে তাকালো। আর হিয়ার তো চক্ষু বেরিয়ে আসার উপক্রম। অবাক হয়েই বললো সে,

‘ এ, এখানে কেন এসেছে?’😳

#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here