#ধূসর_শ্রাবণ💚
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💚
#পর্ব-০৭
________________
ভয়ে জড়সড় হয়ে তাকিয়ে আছে হিয়া সামনের ছেলেটির মুখের দিকে সে ভাবে নি এই মুহূর্তে তাঁর সামনে নির্মল দাঁড়িয়ে থাকবে। হিয়া অস্পষ্টনীয় ভাবে তার মুখ ধারা উচ্চারন করলো ‘উম উম’। হিয়ার কথা শুনে ওর মুখের আরো একবার তাকিয়ে বেশ ভাবনাহীন ভাবেই বললো নির্মল,
‘ কি বললে তুমি?’
উওরে আবারো উম উম উচ্চারন করলো হিয়া যার অর্থ আমার মুখের ওপর থেকে আপনার হাত সরান। হিয়ার এবারের প্রতিধ্বনি শুনে নির্মল বুঝতে পেরে চটজলদি নিজের হাতটা সরিয়ে বললো,
‘ হুম এখন বলো?’
সঙ্গে সঙ্গে তেলেবেগুনে এক হয়ে রাগী কন্ঠ নিয়ে জোরে নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে বললো হিয়া,
‘ আপনি কি পাগল এইভাবে কেউ কারো মুখ চেপে ধরে থাকে নাকি আর একটু হলেই তো জানটা বেরিয়ে যাচ্ছিল।’
হিয়ার কথা শুনে নির্মল কিছুটা হতাশ হয়ে বললো,
‘ খুব বেশি কষ্ট পেয়েছো?’
‘ 😒😒😒
‘ ওভাবে তাকাবে না?’
‘ আপনি মানুষটা তো ভাড়ি অদ্ভুত আর এতরাতে এখানে কি করছেন?’
‘ কি করছি মানি তোমার জন্যই তো আসা লাগলো যাইহোক রিকশায় ওঠো নি কেন? সেই তো কুকুরের ভয়ে দৌড়ানি দেওয়া লাগলো।’
‘ দেখুন বেশি বাজে বকবেন না আমি একদমই ভয় পাই নি।’
‘ হা তা তো তোমার চোখ দেখেই বুঝতে পারছি। তোমরা মেয়েরা না কেমন যেন একটা জিনিসে ভয় পাও সেটা সহজে শিকার করতে চাও না।’
‘ আপনার কথা বলা শেষ হলে বলুন আমি বাড়ি যাবো।’
‘ হুম জানি তো, দাঁড়িয়ে আছো কেন যাও?’
বলেই হিয়ার সামনে থেকে সরে আসলো নির্মল। নির্মলকে সরতে দেখে হিয়া মিটমিট চোখে আশেপাশে তাকালো কুকুরটা আগের ন্যায় সে যে রাস্তা দিয়ে যাবে সেখানেই বসে আছে। যেটা দেখে হিয়া শুকনো ঢোক গিললো। হিয়ার কান্ডে হাসলো নির্মল তারপর গম্ভীর কণ্ঠ নিয়েই বললো সে,
‘ কি হলো এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেন যাও বাড়ি?’
নির্মলের কথা শুনে হাল্কা কেঁপে উঠল হিয়া তক্ষৎনাত নিজেকে সামলে নিয়ে বললো সে,
‘ এমন করছেন কেন?’
‘ আমি কি করছি যা করার সব তো তুমি করেছো।’
‘ আমি কি করেছি?’
হিয়ার এবারের কথা শুনে বেশ সিরিয়াসভাবেই হিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো নির্মল,
‘ তুমিই তো করেছো সবকিছু আমার হৃদয়টাকে ক্ষনে ক্ষনে আঘাত করছো কারনে অকারণেই বার বার।’
নির্মলের কথা নির্বিকার ভঙ্গিতে নির্মলের দিকে তাকালো হিয়া। হিয়াকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে আবারো বললো নির্মল,
‘ আমায় কি একবার ভালোবাসা যায় না প্রিয়দর্শিনী?’ আমি কি সত্যি খুব খারাপ?’
নির্মলের এবারের কথা শুনে বেশ অবাক হয়েই তাকালো হিয়া নির্মলের মুখের দিকে। দু’জনের চোখাচোখি হলো খুব, দুজনেই তাকিয়ে দু’জনের পানে। নির্মলের চোখ তো অনেক কিছু বলছে কিন্তু সেই চোখের ভাষা কি হিয়া বুঝতে পারছে হয়তো পারছে হয়তো না। রাতের আকাশের তাঁরারা ঝলমল করছে আজ, অন্ধকারের আড়ালে লুকিয়ে থাকা গাছেরাও নড়ছে ভীষণ। গা ছমছম করা হিম শীতল কি ঠান্ডা বাতাস।’
____
কাঁধে কারো মাথার ভাড় অনুভব হতেই ঘুম ভেঙে যায় শুভ্রের। এখনো আকাশের বুকে মেঘেদের মাঝে ভাসছে তাঁরা। শুভ্র আনমনেই তাকালো পাশ ফিরে, বর্ষার ঘুমন্ত মুখটা সবার আগে চোখে পড়লো তাঁর। ফর্সা মুখ, হাল্কা মেকাপ,মুখে মায়া মায়া একটা ভাব, বর্ষার চোখের পাপড়িগুলো বেশ বড় সাথে ঘন। যে জিনিসটা আজ প্রথম খেয়াল করলো শুভ্র। বর্ষার ফেসে একটা বাচ্চা বাচ্চা ভাব আছে যার দরুন তাঁকে বেশ ইনোসেন্ট ইনোসেন্ট লাগে। আনমনেই হাসলো শুভ্র। হঠাৎই নিজের ডান হাতের দিকে চোখ গেল শুভ্রের কেউ একজন তাঁর হাতে বেন্ডেজ করে দিয়েছে। শুভ্র বুঝতে পেরেছে তাঁর ঘুমের সুযোগ নিয়ে এই মেয়েটা অত্যাধিক হারের সাহসীকতা দেখিয়েছে। না চাইতেও আবারো হাসলো শুভ্র। আনমনেই ভাবলো,
‘ মেয়েটা ওতোটাও খারাপ না।’
তপ্ত নিশ্বাস ফেললো শুভ্র। তাকালো সে তাদের পাশে থাকা জানালার দিকে। বাংলাদেশের রাত কাটিয়ে এসেছে অনেক দূরে। যদিও সামনের জায়গাগুলো শুভ্রের জন্য নতুন কিছু নয় কিন্তু বর্ষার জন্য একদমই নতুন পরিবেশ, নতুন মানব নতুন হাওয়া, নতুন সব মুখ। শুভ্র বর্ষার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ তুমি কি পারবে আমার সাথে মানিয়ে নিতে অপ্রিয় ঘুমকুমারি?’
প্রতি উওরে হাল্কা নড়ে চড়ে উঠলো বর্ষা তবে কিছু বললো না শুভ্রের হাত জড়িয়ে ধরেই ঘুমিয়ে পড়লো আবার। শুভ্রও প্রথমে একটু ঘাবড়ে গেলেও পরক্ষণেই বর্ষাকে ঘুমিয়ে পড়তে দেখে সামলে নিলো নিজেকে।”
‘
লন্ডনের এয়ারপোর্ট ছাড়িয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য গাড়ি করে পাড়ি জমাচ্ছে শুভ্র আর বর্ষা। সামনে ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে আর পিছন সিটে পাশাপাশি বসে শুভ্র বর্ষা। বর্ষার দৃষ্টি বাহিরে, সুন্দর মিশ্রন মোলায়েম রাস্তা। লন্ডনর এই রাস্তা আর লন্ডনের প্রকৃতি দেখতেই যেন ব্যস্ত বর্ষা। সারি সারি রঙিন গাছপালা, ধবধবে সাদা রঙের মানুষ সাথে রঙবেরঙের যানবাহন।
‘ অতঃপর বলতে না বলতেই কয়েক ঘন্টার মাঝে চলে গেল তাঁরা তাদের নিজেদের গন্তব্যের কাছে।’
এক বিশাল আলিসান বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্র আর বর্ষা। ডুপ্লেট ছাঁদওয়ালা বিশাল এক বাড়ি রঙটা সাদা, যার চারদিকটা রঙিন থাইগ্রাস সমৃদ্ধ, বাড়িটার ডানদিকেই রয়েছে এক বিশাল সুইমিংপুল। বাড়িটা বিশাল মাঠের মাঝ বরাবর তৈরি যার চারদিকেই রয়েছে সবুজ ঘাসের মাঝে অল্প স্বল্প গাছপালা। বর্ষা পুরো জায়গাটায় চোখ বুলালো একবার বেশ লেগেছে তাঁর বাড়িটার। শুভ্র গাড়ি থেকে নেমে নিজেদের ব্যাগপত্রগুলো বের করে বর্ষাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ চলো।’
উওরে বর্ষাও মাথা নাড়িয়ে চললো শুভ্রের পিছু পিছু।’
বিকেল ৫ঃ০০টা….
চুপচাপ বসে আছে বর্ষা ভালো লাগছে না কিছু একদম চুপচাপ আর নিরিবিলি সবটা। সকাল থেকেই সবকিছুই নিরিবিলি আর নিস্তব্ধ। শুভ্রও বাড়িতে নেই এখন এমন সময় বর্ষার ফোনটা বেজে উঠল উপরে মায়ের নাম্বার দেখে মুহূর্তেই চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো তাঁর। তক্ষৎনাত খুশি মনে বললো,
‘ হ্যালো মা কেমন আছো?’
মেয়ের কন্ঠ শুনে অপরপাশে বর্ষার মা খুশি মনে বললো,
‘ হুম ভালো তুই মা?’
এরপর দুজনের মধ্যে হলো কিছুক্ষন কথোপকথন!’
______
আকাশটা হাল্কা হাল্কা মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আছে। হয়তো বৃষ্টি হবে হয়তো না। বাতাসের প্রলাপে টেবিল জুড়ে থাকা সমস্ত খাতাপত্রগুলো উড়ছে বারংবার। জানালা জুড়ে থাকা সাদা পর্দাগুলোও উড়ে চলছে খুব। বেলকনিতে থাকা ছোট ছোট গাছের পাতারাও মৃদু বাতাসে উড়ছে ভীষণ। এসবের ভিড়েই বিছানায় উল্টো হয়ে শুয়ে আছে হিয়া। পায়ে থাকা পায়েলটাও শব্দ করছে কিছুক্ষন পর পর। সাদা রঙের ডাইরিটা মুখোমুখি চোখ রেখে কিছু একটা ভাবছে হিয়া। কিন্তু যতবারই কিছু না কিছু ভাবতে যাচ্ছে তখনই নির্মলের বলা কাল রাতের কথাটা কানে বাজছে হিয়ার। আনমনেই ভাবলো সে,
‘ আচ্ছা সত্যি কি নির্মলকে ভালোবাসা যায় না? মানুষটা তো এমনিতে খারাপ নয়। একটু মারপিট করে ঠিকই কিন্তু মনটা তো ভীষণ ভালো।’
চোখ বন্ধ করে ফেললো হিয়া। হুট করে নির্মল নামের মানুষটা মাথায় কেন চেপে বসলো এটাই সে বুঝলো না!’
#চলবে…
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে। আই এক্সট্রিমলি সরি গাইস আজকের পার্টটা খুবই ছোট হয়েছে আমি জানি। সারাদিন প্রচুর বিজি ছিলাম, ভেবেছিলাম আজ গল্প দিবো না কিন্তু কালও দেই নি তাই দিলাম। ইনশাআল্লাহ আগামী পর্বগুলো বড় করেই দিবো। আর হ্যাঁ সবাইকে ‘ঈদ মোবারক’]
#TanjiL_Mim♥️