#প্রাণেশ্বরী #Writer_Asfiya_Islam_Jannat #পর্ব-১১

#প্রাণেশ্বরী
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
#পর্ব-১১

খামখেয়ালি ভাবনার মত লালচে-ধূসর মেঘবালিকাদের আনাগোনা, গোধুলির আলো মিইয়ে আসছে পশ্চিমাকাশে। আঁধারের আগমন ঘটছে উজ্জ্বল নক্ষত্রদের প্রদর্শন করতে। কৃত্রিম আলোয় টিমটিম করছে যান্ত্রিক নগরী৷ রাস্তার ধার ঘেঁষে চলছে যানবাহনের সেনাবাহিনী। ব্যস্ততা সব উপচে পড়ছে যেন। মাগরিবের আযানের পর পরই প্রাণ আর জেসিকা বের হয়েছে গুলশান-১ এর জন্য। যাওয়ার পথে জেসিকা অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে বিষয়টা কি? হঠাৎ তারা শপিংয়ে যাচ্ছে কেন? সে তো সহজতর শপিং করে না, দরকার পড়লেও অনলাইনে অর্ডার করে নেয়। আজ তাহলে? প্রাণ কোনটারই সোজা উত্তর দেয়নি, শুধু বলেছে ধৈর্য ধরতে। সে বলবে, আগে শপিং করা হোক। জেসিকাও শেষে হাল ছেড়ে মুখ ফুলিয়ে বসেছিল৷ মিনিট খানেক অতিবাহিত হওয়ার পর তারা এসে পৌঁছায় ঢাকার ওয়েল নোন ব্রান্ড ‘প্রেম’স কালেকশন’-এর সামনে। প্রাণ গাড়ি থেকে নামতেই জেসিকাও তার পিছে পিছে নেমে পড়ে। ভিতরে ঢুকে প্রাণ নিজের মত জামা দেখতে থাকে, জেসিকাও এদিক-সেদিক ঘুরে নিজের পছন্দ অনুযায়ী প্রাণকে পরামর্শ দিতে থাকে৷ প্রায় ঘন্টাখানেক যাচাই-বাছাই করার পর প্রাণের কয়েকটা জামা মনে ধরে। সেগুলো ট্রায়াল দিয়ে নিজের ফিটিংস বুঝে একটা স্টাফকে প্যাক করতে বলে দেয় প্রাণ। সামনের সোফায় জেসিকার পাশে এসে বসতেই জেসিকা বলে উঠে, “এবার তো শপিং-ও শেষ তোর। এখন বল উপলক্ষটা কি? পেটে ইঁদুর দৌড়াদৌড়ি করছে খবরটা জানার জন্য।”

প্রাণ একদম শীতল কন্ঠে বলে, “এত অধৈর্য্য হওয়ার দরকার নেই বলছি আমি।”

জেসিকা এবার তুমুল আগ্রহ নিয়ে প্রাণের পাণে তাকায়, “বল! বল!”

প্রাণ হালকা হেসে বলে, “নেক্সট উইকে ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল শুরু জানিসই তো, সে সাথে এওয়ার্ড ফাংশনও আছে। তা আমার করা প্রথম মুভি ‘নীলচে তারা’ এবার বেস্ট মুভি এবং আমাকে বেস্ট অ্যাক্ট্রেস আওয়ার্ডসের জন্য নমিনেট করা হয়েছে। কালই ইমেইল এসেছে।”

জেসিকা বুদ্ধিভ্রষ্ট,বিমূড়,বিক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো প্রাণের দিকে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে বিষয়টা সে হজম করতে পারেনি। দেহভঙ্গি তার স্থির,নি’সা’ড় কিন্তু মন? পুরোই উলোটপালোট। প্রাণ জেসিকার বাহুতে হাত রেখে বলে, “কি হলো?”

জেসিকা বোধশক্তি ফিরে পেল। আঁখিপল্লব বৃহৎ আকৃতির করে তাকালো প্রাণের দিকে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করল, “আর ইউ ফর রিয়েল?”

প্রাণ আশ্বস্ত কন্ঠে বলে, “হ্যাঁ,সত্যি!”

সে কোন কিছুর জন্য নোমিনেট হয়নি অথচ প্রাণ দুই জায়গায় হয়ে গেল? সে তো আদৌ এসবের যোগ্য না, তাহলে কিভাবে? জেসিকার মনে এসব প্রশ্ন উঁকি দিলেও সম্মুখে বলল, “কংগ্রেস! এত ভালো খবর তুই আমাকে এখন জানালি? দ্যাট ইজ নট ফেয়ার।”

কথাগুলো একটু খুশি হওয়ার ভাণ করে বললেও ভিতরে ভিতরে রা’গ’দ্বে’ষে ফেটে পড়ছিল জেসিকা। দৃষ্টিতে প্রতিহিংসার প্রতিবিম্ব স্পষ্ট। প্রাণ সেই দৃষ্টি উপলব্ধি করতে পেরে অন্তঃকরণের আনাচ-কানাচ পরিপূর্ণ হলো অবজ্ঞায়। কেন যে আগে এই দৃষ্টির অর্থ বুঝতে পারেনি, সব তো স্বচ্ছ জলের ন্যায় পরিষ্কারই ছিল। কপটতা এই মেয়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, সত্যতার কি দেখতে পেয়েছিল সে? কিভাবে এই কয়েকটা বছর তাকে নিজের বেস্টফ্রেন্ডের মর্যাদা দিয়ে আসলো সে? কিভাবে? প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রাণ খুঁজে পায় না। লম্বা একটা নিঃশ্বাস ফেলে প্রাণ হেসে বলে, “নয়নকেও বলিনি এখনো,তোকেই প্রথম জানাচ্ছি।”

জেসিকা প্রাণকে জড়িয়ে ধরে বলে, “আমি অনেক খুশি তোর সাকসেসের জন্য। অনেক মানে অনেক। আর এই উপলক্ষে আজকে ডিনারের ট্রিট আমার পক্ষ থেকে। চল!”

প্রাণ বলে, “আরেহ না এসবের দরকার নেই।”

জেসিকা অতি আদর্শ বান্ধুবীর ভূমিকা পালন করে বলে, “এটা কোন কথা না। তুই যাবি আমার সাথে আর এটাই ফাইনাল।”

প্রাণ দ্বিরুক্তি করলো না, রাজি হয়ে গেল জেসিকার প্রস্তাবে। ড্রেস সব চলে আসতেই প্রাণ হিসাব-নিকাশের পর্ব চুকিয়ে বেরিয়ে পড়লো জেসিকার সাথে।

_____________

“তোর শুট কেমন গেল? বললি না যে?”

ছন্দ গার্লিক ব্রেডে কামড় বসিয়ে বলে, “আমার হাতে ব্যাটের বারি না খেতে চাইলে শুটের কথা উঠাস না জিহান। নাইলে তোর যে এই হ্যান্ডসাম চেহেরা আছে না, যার উপর লক্ষ মেয়েরা ক্রাশড তার নকশাই উড়িয়ে দিব আমি।”

জিহান বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আরেহ মামা করলামটা কি? এভাবে রাগছিস কেন?”

“রাগবো না তো কি ধরে তোরে আমি চুমু দিব? কার সাথে আমাকে শুট করতে পাঠিয়েছিলি আল্লাহ জানে। আগামাথাই বুঝিই না আমি তার।”

জিহান ভ্রু কুটি কুঞ্চিত করে বলে, “কার কথা বলছিস? প্রাণের?”

ছন্দ ব্রেড দাঁতের তলায় পি’ষে বলে, “নাইলে আর কার? অদ্ভুত ক্যারেক্টর একটা। চোখের পলক ফেলতে দেরি আমার কিন্তু তার মুড চেঞ্জ করতে দেরি নেই। সে সাথে এত অ্যারোগেন্ট। দুদণ্ড যদি স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারি।”

জিহান হেসে উঠে বলে, “তুই ভুল বুঝছিস। প্রাণ এতটা অ্যারোগেন্ট না, ওর স্বভাবই এমন। একদম চুপচাপ,শান্ত। চাপা স্বভাবেরও বলতে পারিস বা ইন্ট্রোভার্ট। কাজ ব্যতীত সহজতর কথা বলতে চায় না। যদিও বা আগে মোটামুটি টুকটাক কথা বলতো, এখন তাও বলে না। কি হয়েছে কে জানে।”

ছন্দ ব্যঙ্গ করে বলল, “হ্যাঁ! হ্যাঁ! খুব ভালো!”

জিহান হেসে বলে, “বিশ্বাস কর, সত্যি ভালো। আমি কাজ করেছি ওর সাথে আমি জানবো না? অন্যসব অ্যাক্ট্রেসদের তুলনায় ওর সাথে কাজ করে শান্তি আছে। কোন প্রকার ন্যাকামি নেই ওর, ডিমান্ডও নেই। প্রচন্ড সিরিয়াস,পাংচুয়াল আর হ্যাল্পফুল। যেকোন বিষয় হোক বা তুই শুটের মাঝে কোথাও আটকে গেলে নিজ থেকে এসে হ্যাল্প করবে তোকে।”

শেষের কথাটা শুনে ছন্দ দ্বিরুক্তি করলো না। কেন না, সেই কথার সত্যতা সে নিজেও পেয়েছে। জিহান স্প্যাগেটি মুখে পুরে নিয়ে পুনরায় বলে উঠে, “ওর ব্যাপারে একটা ফান ফ্যাক্ট বলি শুনি। ডিরেক্টর নিহাল শিকদারের নাম শুনেছিস নিশ্চয়ই? প্রাণ যে তার বড় মেয়ে তা আমরা ওর ডেবিউ করার আগপর্যন্ত জানতামই না। শুধু জানতাম তার একটা ছোট মেয়ে আছে, পিউ নামের।”

ছন্দ কন্ঠ এবার বেশ কৌতূহলী শোনায়, “এটা আবার হাইড থাকল কিভাবে? আমি যতটুকু জানি এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রির ইট-পাথরের খবরও পাপাজারিদের থেকে আড়াল রাখা যায় না। তারা ঠিক পাহাড় খুড়ে পিঁপড়েও বের করে ফেলে।”

“সম্ভব কিভাবে হয়েছে তা জানি না। তবে শুরু থেকেই আমি প্রাণকে নিজের প্রোফাইল লো রাখতে দেখেছি। প্রাণ সবসময় নিজের পার্সোনাল লাইফ মিডিয়া থেকে হাইড করে চলে। এমনকি ওই তোর সামনে থাকলেও বুঝতে পারবি না ও পরবর্তীতে কি করতে চলেছে। শি ইজ লাইক আ মিস্ট্রি।”

ছন্দ আনমনে বলে উঠে, “আসলেই!”

জিহান ছন্দকে বাজানোর জন্য বলে, “কি আসলেই?”

ছন্দ সম্বুদ্ধ ফেরত পেতেই হকচকিয়ে বলে উঠে, “কি আবার কি? আজাইরা প্রশ্ন করবি না তো। আর তুই মীরজাফর হলি কবে? আমার বেস্টফ্রেন্ড হয়ে ওই নায়িকার পক্ষ নিচ্ছিস মানে কি? কিছু চলছে নাকি?”

নিজেকে ফেঁসে যেতে দেখে জিহান আঁতকে উঠে, “আস্তাগফিরুল্লাহ দোস্ত! কিসব নাউজুবিল্লাহ মার্কা কথা? ওকে নিয়ে কিছু ভাবাও আমার জন্য পাপ। মিশা যদি এসব শুনে ভাই আমাকে ধরে জুতাবে। তার উপর……”

জিহান নিজের কথা শেষ করার পূর্বেই তার দৃষ্টি যায় এন্ট্রেন্সের দিকে। প্রাণকে প্রবেশ করতে দেখে সে বলে উঠে, “প্রাণ!”

সম্মোধনটা শুনে ছন্দ চোখ তুলে তাকায়। জিহানের দৃষ্টি অনুসরণ করে পিছনে তাকাতেই তুষার শুভ্রে আচ্ছাদিত রমণীর দিকে আটকে যায়। চুলগুলো উঁচু করে বাঁধা হলেও সামনের দিক চুলগুলো কাটা কপাল জুড়ে খেলা করে চলেছে। মুখশ্রীর অর্ধেক জুড়ে হালকা রঙের একটি মাস্ক পরিহিত। ছন্দ দৃষ্টি সরিয়ে সামনে তাকায়। প্রাণ আর জেসিকা খালি আসনের খোঁজে ওয়েটারের পিছু পিছু এদিকটায় আসায় জিহান বলে উঠে, “হেই প্রাণ! কেমন আছো?”

কেউ তাকে ডেকে উঠতেই প্রাণ থমকায়৷ শীতল দৃষ্টিতে পাশ ফিরে তাকায়, জিহানকে দেখতে পেয়ে সে মন্থর কন্ঠে বলে, “আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি?”

জিহান কিছু বলার পূর্বেই জেসিকা বলে উঠে, “অহ মাই গড! ফায়াজ তুরহান ছন্দ, এম আই ড্রিমিং ওর হোয়াট?”

জেসিকার উৎফুল্লে ভরা কন্ঠ শুনে প্রাণ নজর ঘুরায়। পাশেই ছন্দকে দেখতে পেয়ে দৃষ্টি সরু হয়ে আসে৷ ছন্দ হেসে বলে, “আপনি চিনেন আমায়?”

জেসিকা আপ্লূত কন্ঠে বলে, “আপনাকে কে না চিনে? ইউ আর দ্যা স্টার এন্ড প্রাইড অফ আওয়ার ন্যাশনাল টিম। লাস্ট কয়েক ম্যাচ দেখেছি আমি, দুর্দান্ত খেলেন আপনি।”

ছন্দ প্রাণের দিকে একঝলক তাকিয়ে বলে, “ধন্যবাদ।”

“একটা সেলফি নিতে পারি আপনার সাথে?”

ছন্দ এবার অস্বস্তিতে পড়ে যেন। নাকচ করার সাধ্য না থাকায় অগত্যা সে জেসিকার সাথে ছবি তুলে নিল একটা। অতঃপর জেসিকা জিহানের দিকে তাকিয়ে বলল, “সরি জিহান! তখন ছন্দকে দেখে একটু বেশি এক্সাইটেড হয়ে গিয়েছিলাম তাই তোমার দিকে অ্যাটেনশন দিতে পারি নি। কিছু মনে কর না প্লিজ। তা কেমন আছো?”

প্রত্যুত্তরে জিহান হেসে বলে, “কোন সমস্যা নেই জেসিকা। আমি ভালোই আছি।”

জেসিকা একবার ছন্দের দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি আর ছন্দ একসাথে যে? তোমরা কি পূর্ব পরিচিত?”

জিহান বলে, “হ্যাঁ! আমরা দুইজন ছোটবেলার বন্ধু।”

“অহ আচ্ছা। তাই তো বলি।”

জিহান ছোট করে “হু!” বলে। ছন্দ প্রাণের উদ্দেশ্য বলে উঠে, “হ্যালো মিস. ল্যা.. প্রাণ। নাইস টু মিট ইউ এগেইন।”

প্রাণ নিজের মাস্কটা খুলে সৌজন্যমূলক হাসি ঝুলিয়ে বলে, “সেম হিয়ার।”

অতঃপর দুইজন নীরব হতেই জিহান প্রাণের দিক তাকিয়ে বলে, “ডিনার করতে এসেছ নিশ্চয়ই? ওয়ানা জ’য়ে’ন আস?”

প্রাণ সরল কন্ঠে বলে, “আজ না, অন্য আরেকদিন।”

জিহান জোর কন্ঠে বলে, “আরেহ বসো না। আই ইন্সিস্ট।”

প্রাণ কিছু বলার পূর্বেই জেসিকা বলে উঠে, “তুমি এত জোর দিয়ে বলছ তাহলে না কিভাবে করি?”

জেসিকার সম্মতি পেয়ে জিহান তাদের আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। প্রাণ বিরক্তির সহিত একবার জেসিকার দিকে তাকিয়ে আনমনে ভয়ানক কিছু শব্দ আওড়ে নিল। এতটা হ্যাং’লা স্বভাব প্রাণের একদমই পছন্দ নয়। আর অন্যের প্রাইভেসি এভাবে নষ্ট করার মানেই হয় না। জেসিকা কি কোন আক্কেল-জ্ঞান নেই নাকি? আজিব! এখন হ্যাঁ বলে দেওয়ায় প্রাণ চেয়ে কিছু বলতে পারছে না। তীব্র অস্বস্তি কাজ করা সত্ত্বেও একপ্রকার বাধ্য হয়ে তাকে তাদের সাথেই বসতে হলো। সকলেই কিছুটা ফ্রি হয়ে কথায় মশগুল হলেও প্রাণ নিস্তব্ধতা বুজিয়ে রেখে খাবার আসার পর তাতে মনোযোগী হলো। জেসিকা তো অনবরত কথা বলেই চলেছে। যদিও বা কথার ছলে নিজেকেই হাইলাইট করছে বেশি। ছন্দ খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে প্রাণের দিকে তাকাচ্ছে বার বার। এতটুকু সময় যতটুকু বুঝেছে প্রাণ আসলেই অন্তর্মুখী। পেটে বোমা ফেলেও হয়তো বা তার মুখ দিয়ে কথা বের করানো যাবে কি-না বেশ সন্দেহ।
এর মাঝে জেসিকা বলে উঠে, “ছন্দ আপনি কি মুভি,ড্রামা দেখেন না?”

ছন্দ হেসে বলে, “তেমন একটা না। সময় হয় না আসলে।”

জেসিকা বলে, “অহ আচ্ছা৷”

জিহান জিজ্ঞেস করে, “প্রাণ তুমি ক্রিকেট দেখো?”

প্রাণ কা’টা চামচ ঘোরাতে ঘোরাতে বলে, “এককালে দেখতাম আরকি৷ এখন আর দেখি না।”

জিহান স্মিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, “এখন না দেখার কারণ?”

প্রাণের নির্লিপ্ত কন্ঠ, “কিছু মানুষের অপগমের পাশাপাশি জীবনচরিত,অভ্যাস বদলে যায়। উপরন্তু এখন খেলাধুলা বোরিং লাগে।”

ছন্দ প্রাণের পাণে নিষ্পলক চাহনি নিক্ষেপ করে। তার বুঝতে দেরিনি প্রথম উক্তি ভাটা দিতেই দ্বিতীয় উক্তির প্রয়োগ করেছে প্রাণ। এমন নিখুঁত গুছানো-সাজানো কথা বুনার ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ ছন্দ খুব কমই দেখেছে।
এদিকে জিহান বিষয়টা ধরতে না পেরে মুখ টিপে হেসে বলে, “ন্যাশনালের টিমের ক্যাপ্টেনের সামনে বসে বলছো ক্রিকেট বোরিং লাগে। তোমার সাহস আছে মানতে হবে৷”

প্রাণ দূর্লভ হাসে তবে কিছু বলে না। এদিকে ছন্দ জিহানের দিকে রো’ষা’ন’ল দৃষ্টিতে তাকাতেই জিহান ছন্দকে খোঁ’চা মারার উদ্দেশ্যে প্রাণকে পুনরায় জিজ্ঞেস করে, “ছন্দের ম্যাচ দেখেছ কখনো?”

প্রাণ মাথা তুলে ছন্দের পাণে দৃষ্টি বুলিয়ে জিহানের দিকে তাকিয়ে বলে, “নাহ! তবে শুনেছি বেশ ভালো খেলেন তিনি।”

ছন্দ প্রাণের দিকে তাকায়। প্রাণ তখনও ভাবলেশহীন। জেসিকা মাঝ দিয়ে নিজেই বলা শুরু করে সে কত খেলা দেখে। তার জীবন কেমন,কত কাজ করে। মূলত প্রিভ্যালেজ পাওয়ার যত চেষ্টা তার। ঘন্টা খানেক পর খাওয়া শেষে প্রাণ,জেসিকা জিহান ও ছন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে পড়ে। প্রাণ যেতেই ছন্দ আনমনে বিরবির করে উঠে, “ইউ আর কুয়াইট ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার মিস. ল্যাভেন্ডার।”

____________

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে ক্লান্তি ভরা শরীর নিয়ে বিছানায় এলিয়ে দেয় প্রাণ। ফোন হাতে নিয়ে কাউকে কিছু বার্তা পাঠিয়ে পাশে রেখে দেয় সে-টা। কিয়ৎক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ডেস্কটপ থেকে ল্যাপটপ নিয়ে এসে বসে সে। চৈতিকে কয়েক ইমেইল সেন্ট করতে বলেছিল সে, সেগুলোই চেক দিতে বসেছে এখন। মিনিট ত্রিশের মত অতিবাহিত হতেই আশা বেগম আসেন তার রুমে। হাতে তেলের বোতল। তিনি প্রাণের থেকে ল্যাপটপ নিয়ে বজ্রাহত কন্ঠে বলেন, “সারাক্ষণ কাজ আর কাজ। একটু তো বিশ্রাম দে নিজের শরীরকে। তুইও মানুষই, কোন যন্ত্র না।”

প্রাণ হেসে বলে, “মাঝে মধ্যে তোমার ধ’ম’ক শুনতেই এক্সট্রা কাজ করি। তোমার ধ’ম’কেও না আদুরে আদুরে ভাব আছে।”

প্রাণের কথা শুনে আশা বেগম না হেসে পারেন না। ছোট থেকেই এমন করে আসছে মেয়েটা। তিনি প্রাণের পাশে এসে বলে, “এত সুন্দর চুলের কি হাল করেছিস। যত্নশীল কবে হবি তুই নিজের প্রতি?”

প্রাণ বিরাগপূর্ণ কন্ঠে বলে, “যত্ন নিয়ে আর কি হবে যেখানে আত্মাটাই মৃ’ত।”

আশা বেগম দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলেন, “তোর জন্য নিশ্চয়ই এমন কেউ আসবে যে তোকে আবার বাঁচতে শিখাবে। যত্ন নিতে শিখাবে। দেখে নিস।”

প্রাণ তাচ্ছিল্যের সহিত বলে, “এটা রূপকথা না আশামা, বাস্তবতা। যার আনাচ-কানাচ কটপতায় ভরা।”

আশা বেগম কথা বাড়ালেন না। প্রাণকে টেনে সামনে বসিয়ে মাথায় তেলের মালিশ করে দিতে থাকলেন।

____________

বহমান স্রোতে সাথে অতিক্রান্ত হয়ে গেল দু’দিন। সায়াহ্নের সময় তখন, প্রাণ নিজের রুমে ইজি চেয়ারে বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিল। এমন সময় ঘর কাঁপিয়ে তার মুঠোফোনটি বেজে উঠে। প্রাণ একবার ফোনের উজ্জ্বল পর্দায় চোখ বুলিয়ে ফোনটা ধরে, “হ্যাঁ বল। এনি আপডেটস?”

অপরপাশ থেকে কেউ বলে উঠল, “আপনি যেমনটা ধারণা করেছিলেন ঠিক তেমনটাই হয়েছে।”

প্রাণ বোধহয় এমনই কিছু একটা শোনার আশায় ছিল। তার মানে তার চালবাজি ভুল হয়নি, শিকার ফন্দিতে ফেঁসে গিয়েছে, “ভালো তো। তা তোমার কাজ কতদূর?

“কাজ হয়ে গিয়েছে ম্যাম।”

প্রাণ বিস্তৃত হেসে বলে, “প্রুফ সব কালেক্ট করেছ না ঠিক মত?”

“অল ইজ ডান ম্যাম। আমি রাতের মধ্যেই সব আপনাকে ইমেইলে পাঠিয়ে দিব, নিশ্চিন্তে থাকুন।”

“অনেক ভালো কাজ করেছ। থ্যাংকিউ!”

“ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবেন না। এটা আমার দায়িত্ব ছিল।”

প্রাণ কিয়ৎক্ষণ সময় নিয়ে বলে,”আচ্ছা কাল এসো, সামনা-সামনি কথা হবে নে।”

“জি আচ্ছা। এখন রাখছি।”

প্রাণ কথা না বাড়িয়ে কল কেটে দেয়। ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি। সে পিছনের দিকে মাথা হেলিয়ে দিয়ে আঁখিপল্লব এক করে ফেলে। তার অপেক্ষার খুব দ্রুতই অবসান হতে চলেছে, সব মিথ্যে,ছল’নাময় সম্পর্ক থেকে এবার তার মুক্ত হওয়ার পালা।

#চলবে

[বিঃদ্রঃ
১-গত পর্বে অনেকেরই প্রশ্ন ছিল, প্রাণ কিভাবে একজন অভিনেত্রী হয়ে ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেনকে চিনে না?
আমি কিন্তু এখানে একবারও উল্লেখ করেনি প্রাণ ছন্দকে বা ছন্দ প্রাণকে চিনে না বা এমন কিছু। যতটুকু পাঠকদের প্রকাশ্যে আসার দরকার ততটুকুই আমি ভারসাম্য বুজিয়ে রেখে লিখছি৷ আস্তে আস্তে সবই জানতে পারবেন, ধৈর্য ধরুন।

২- অনেকের প্রশ্ন ছন্দ ক্রিকেট রেখে অভিনয় কেন করছে?
স্বাভাবিকভাবে সকল খ্যাতি পাওয়া ক্রিকেটাররা টুকটাক অ্যাডভারটাইজিং করে থাকে। এটা নতুন কিছু না। ছন্দের বেলায়ও সেম।]

[কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here