#সুখ_পাখি #Ayrah_Rahman #part:–27

#সুখ_পাখি
#Ayrah_Rahman
#part:–27

অটির সামনে আরুর পরিবারের সবাই চিন্তিত হয়ে বসে আছে,,

গত ৩ ঘন্টা যাবত আরুর অপারেসন চলছে,,আরুকে অটিতে ঢুকানো পর থেকে এর মধ্যে ডাক্তার বাইরে আসেনি,,শুধু মিনিট দশেক পর পর নার্স রা এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে,, তবুও কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে কিছু ই বলতে পারছেনা,,এদিকে আরুর মায়ের অবস্থা শোচনীয়, উনি এই পর্যন্ত ২ বার জ্ঞান হারিয়ে ছেন।
হসপিটালের বারান্দায় তরু পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে,,সবকিছু কেমন জানি ঘোলাটে লাগছে তার কাছে। পিছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে তরু পিছনে তাকায়,, দেখে তার বাবা দাড়িয়ে,, তরু নিজের চোখের কোনায় লেগে থাকা পানি টুকু মুছে বাবার দিকে ফিরে,,,

— কিরে মা একা একা এখানে দাড়িয়ে আছিস যে?

— কিছু না বাবা,,এমনি ভালো লাগছে না…

— চল খেয়ে নিবি,,সকাল থেকে কিছু খাস নি,,

— তুমি কি কিছু খেয়েছো? মা ও তো কিছু খাইনি( আবেগি কন্ঠে)

— নারে মা আমার মেয়ে টা এভাবে হাসপাতালের বেডে মরা বাচার সাথে লড়াই করছে আর আমি বাবা হয়ে কিছু ই তো করতে পারছি না

বলেই মাহমুদ রাহমান নিজের চোখের কোনায় লেগে থাকা পানি মুছে বড় মেয়ে বুকে ঝরিয়ে নিলেন,,অজানা আশঙ্কায় তার বুক ধরফর করছে,,তরুও সব কিছু বাদ দিয়ে বাবার বুকের সাথে মিশে আছে,,

মিসেস আয়েশা কে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে তিনি এখন ঘুমাচ্ছেন,,,

— চল মা,, গিয়ে একটু চেয়ারে বস,,

— হুৃ চলো…

বলেই তরু আর তার বাবা অটির সামনে রাখা চেয়ারে বসলো…

বাবার কাঁধে মাথা রেখে তরু চোখ বন্ধ করে,,

হঠাৎ করে অটির লাইট অফ হয়ে যায়,,
ডাক্তার বেরিয়ে আসে,,

তরু আর তার বাবা ডাক্তারের সামনে যায়,,,

— ডাক্তার আমার মেয়ের কি অবস্থা?

— আসলে মিস্টার রাহমান আমরা আমাদের যথা সাধ্য চেষ্টা করেছি বাকিটা ওপর ওয়ালার হাতে।

— কি বলছেন ডাক্তার আমার মেয়ে? ( কান্না করে)

— ভেঙে পরবেন না,, আসলে ওর মাথায় আঘাত টা একটু বেশিই লেগেছে,,পিছন সাইড টা অনেকটাই ক্ষত হয়েছে,, হয়তো ওর স্মৃতি র ওপর প্রভাব ফেলতে পারে কিংবা অন্য কিছু ও হতে পারে।

–আপনারা কি কিছুই করতে পারবেন না?

— বললাম তো আমরা আমাদের যথা সাধ্য চেষ্টা করেছি।ওর জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত কিছুই বলতে পারছি না আমরা।

— ওর জ্ঞান কখন আসবে?

– ৪৮ ঘন্টা যাবার আগে কিছু ই বলতে পারছি না,, সরি বলেই ডাক্তার সেখান থেকে চলে যায়,,

তরু ধপ করে চেয়ারে বসে যায়,,,

তার হাসি খুশি বোন টা নিমিষেই নিস্তেজ হয়ে গেলো,,এমন তো হবার কথা নয়,,কাল রাতেও তো দুই বোন কত ঝগড়া করলো,,কত হাসি খুশি ছিলো ওর বোন,,মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে কি থেকে কি হয়ে গেলো,,

বিকেলেও তো কত হাসি খুশি হয়ে মুনের সাথে বের হলো,,হঠাৎ কি হলো যে এক্সিডেন্ট করলো তাও এভাবে,,

এমন সময় তরু দেখতে পেলো মুন আর তার বাবা এই দিকেই আসছে,,,

— কি ব্যপার ভাই? আরুর কি অবস্থা?

— ডাক্তার বলল আল্লাহ ভরসা,,কি থেকে যে কি হয়ে গেলো ( দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে)

তরু একটা শ্বাস ছেড়ে মুন কে বলে..

— মুন তুমি একটু আমার সাথে এসো তো
— আচ্ছা,,

তরু আর মুন বারান্দার এক সাইডে চলে আসে,,

– আছা মুন কি হয়েছিলো? আরুর এমন হলো কিভাবে,,রাস্তা পার হতে গিয়ে?

— না না তরুপু….

— তাহলে?

— আসলে হয়েছিলো কি………..( মুন তরু কে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সব ঘটনা খুলে বলে)

— ওহ আচ্ছা,, ধন্যবাদ তোমাকে মুন… চলো ওই দিকে যায়,,,

বলেই তরু আর মুন সামনে চলে গেলো…

_____________________

পরের দিন….

আরুর এখনো জ্ঞান ফিরে নি,,মিসেস আয়েশা আরুর শিয়রে বসে আছে,,তিনি এত শক্ত মনের মানুষ হয়েও মেয়ের এই অবস্থা য় ভেঙে পরেছেন,,তরু একটু দুরে দাঁড়িয়ে মায়ের দিকেই তাকিয়ে আছে,,

মেয়েটার মাথায় পুরো ব্যন্ডেজ করা,,দেখতে কেমন অসহায় লাগছে,,তরুর বুক ফেটে কান্না আসছে,,তরু মনে মনে ভাবতে লাগলো,, যার জন্য তার বোনের এই অবস্থা তাকে আর কখনো তরু ক্ষমা করবে না আর আরুকেও এই শহরে রাখা যাবে না,,বাবাকে বুঝিয়ে অন্য শহরে যেতে হবে,,

তরু মোবাইল হাতে নিয়ে বাইরে বের হলো,,,অভ্রের নাম্বারে বার কয়েক রিং হবার পর অভ্র ফোন পিক করলো,,,

— কি হলো তরু? কাল থেকে কোন খোজ নেই কিছু কি হয়েছে? ফোন দিচ্ছি ফোন ধরো না..

– নাহ কিছু হয়নি,,তুমি একটু আমার সাথে দেখা করতে পারবে অভ্র,,কোন একটা কফি সপে,,

— হঠাৎ? কিছু কি হয়েছে তরু?

— না তো কিছু হয় নি এমনি,,আচ্ছা আমি তোমাকে লোকেশন মেসেজ করছি,,,

— আচ্ছা..

তরু অভ্র কে লোকেশন মেসেজ করে নিজেও তার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়,,,

—শালিক,, কিছু বলছো না কেন? আর তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?

অভ্রের কথায় তরু নিজ ভাবনা থেকে বের হয়ে আসলো,,,

— হুম? কিছু বলছো?

— বললাম হঠাৎ তোমার কি হলো? এমন লাগছে কেন?

— নাহ কিছু না,, আচ্ছা অভ্র তুমি অনিল হায়দার কে চেনো?

— অনিল হায়দার? না তো নাম শুনছি বলেও তো মনে হচ্ছে না..

— সত্যি ই চেনো না?

— না বাবা চিনি না। কেন বলো তো? তুমি চেনো?

— ওহ,,তোমার বাবার নাম কি অভ্র?

— আমার বাবা তো মিনহাজ হায়দার,, কেন বলো তো?
— আমি যত টুকু জানি বা তথ্য সংগ্রহ করেছি তাতে স্পষ্ট বোঝা যায় তোমার বাবা আর অনিল হায়দার মানুষ একই,,এবং……

–এবং?

— এবং তোমার বাবা নারী পাচার ও মাদক ব্যবসার সাথে জরিত রয়েছে…

— তরুওওও( রেগে) তুমি কি বলছো তুমি বুঝতে পারছো? তুমি কার সম্পর্কে কথা বলছো তুমি বুঝতে পারছো?

— হ্যা আমি জেনে বুঝেই কথা বলছি,, অভ্র
— তরু( রেগে তরুর গায়ে হাত তুলতে গিয়ে হাত থেমে যায়)

তরু অবাক দৃষ্টিতে অভ্রের দিকে তাকিয়ে রইলো…

— তুমি মেয়ে বলে আজ তুমি ছাড়া পেয়ে গেলে তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে আজ কি হাল করতাম তা শুধু আমি জানি,,আমার বাবাকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলার পরিনাম তখন টের পেতা,,আমি সাবধান করে দিলাম ফের যেন আমার বাবা কে নিয়ে এমন কথা না শুনি,,,তাহলে মেয়ে বলে ছেড়ে দেবো না,,

বলেই অভ্র চলে যেতে নিলে তরু বলে উঠে,,,

— যে ভুল আপনি আজ করলেন মিস্টার অভ্র সে ভুল আপনার ঠিক একদিন বুঝতে পারবেন কিন্তু আফসোস সেদিন এই আমি থাকব না,,আর সবসময় চোখ কান খোলা রাখবেন তাহলে সময় আপনাকে ঠিক জায়গায় পৌঁছে দেবে,,আসি,,,,

আর হে এই মিথ্যাবাদীকে আর কখনো আপনার দেখতে হবে না,,,

বলেই তরু চোখ মুছতে মুছতে বের হয়ে গেছে,,,

আজ অভ্রের ব্যবহারে ভীষণ কষ্ট এবং অভিমান হয়েছে,,,

অভিমান বড্ড খারাপ জিনিস,,……..

[ দেরি হয় বলে সবাই খালি আমাকে বকে🥺পিলিজ কেউ বকা দিয়েন না🥺পরে আমি কান্না করমু🥺🥺]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here