#সুখ_পাখি
#Ayrah_Rahman
#Extra part
বিকেলে….
আরু দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ছাদে যায়,, বিকেলের ঠান্ডা বাতাসে নিজেকে হালকা করলে,,
কিছু দিনের ঘটনায় তার মনে যে এক অ’দৃশ্য চাপ পড়েছে তার থেকে মন টা হালকা করতে,,,
বিকেল তখন ৫টা কি ৬ টা প’শ্চিম আকাশে সূর্য টা ডুবতে বসেছে চার দিকে লাল আভায় ভরে গেছে,,
পাখিরা ডানা মেলে নিজ নিজ গৃহে ফিরে যাচ্ছে,,, প্রকৃতি কত মনোরম!
এসব ভাবতে ভাবতে দুরে কোন এক গাছের দিকে তার নজর যায়,,
সেখানে দুটি হলুদ রঙের পাখি বসে আছে।
দুর থেকে দেখে মনে হচ্ছে তারা সুখ দুঃখের গ’ল্প করছে,
কখনো এক পাখি আরেক পাখিকে ঠোঁ’ট দিয়ে টোকা দিচ্ছে তো কখনো
এক ডাল থেকে আরেক ডালে চলে যাচ্ছে,,,
হঠাৎ আরুর কাধে কারো হাতের স্প;র্শে আরু চ’মকে উঠে,,
পিছনে তাকিয়ে দেখে তরু দাড়িয়ে আছে হাতে দু কাপ কফি,,,
কফি থেকে ধো’য়া উঠছে,,
তরু কফির কাপ টা আরুর হাতে দিয়ে বলে,,
তরুঃ– কিরে বাবুই,, এই অসময়ে ছাদে কি করিস,,
আরুঃ- কিছু না,, এমনি দেখছিলাম চার পাশ,,
তরুঃ– আজান দিয়ে দিবে,, চল নিচে যায়,,
আরু কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলল,,
আরুঃ- নাহ বনু,,আরেকটু থাক,, ভালোই লাগছে,,
বলেই আরু আবার সেই গাছের দিকে তাকালো,,
দেখে সেখানে এখনো পাখি দুটির খুনসুটি চলছে,,,
আরুঃ- আপুই দেখে,,ওই যে দুরের যে পাখি দুটি গাছের ডালে বসে আছে,,দেখতো,কত সুন্দর লাগছে,,হলুদ র’ঙের পাখি
তরুঃ– কোথায়?
আরুঃ- ওই যে,, আমার হাতের সোজা তাকাও,,
বলেই আরু হাত দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করলো,,
আরুঃ- দেখেছো?
তরুঃ– হুম দেখেছি,, সুন্দর তো,,মনে হচ্ছে এক জোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা বলেই তরু মুচকি হাসলো
তরুর সাথে সাথে আরুও খানিক টা হাসলো,,
ততক্ষণে তাদের কফিও শেষ,,
চারদিক থেকে আজানের সুর শোনা যাচ্ছে,,
তরুঃ– এই যে আজান দিয়ে দিয়েছে চলে আয়,,
আরুঃ- আপু তুই যা,,আমি আসছি,
তরুঃ– আচ্ছা তবে আয়,,কিন্তু দেরি করিস না,,
বলেই তরু চলে যায়,,,,
আরু আর কিছু ক্ষন থেকে সেও চলে যায় রুমে,
নিজের ঘরে গিয়ে ওযু করে নামাজ পড়ে বিছানায় বসা মাত্র ই মোবাইলে টোং করে একটা শব্দ হলো,,
বিছানায় তাকিয়ে খুজতে থাকি মোবাইল টা কোথায় রাখলাম,
, টেবিলে তাকিয়ে দেখি সেখানে মোবাইল টা অবহেলিত বস্তুর মতো পরে আছে,,,
আর কিছু না ভেবে মোবাইলের লক খুলে দেখে দিশার মেসেজ,
শা*লী এমন খ*চ্চরের খ*চ্চর,, একটা ফোন দিলে তার টাকা বেশি কাটবো তাই মেসেজ দেই,,তাও পুরোটা বলে না,, অর্ধেক বলে আর অর্ধেক রেখে দেই,, যেন আরু তা জানার জন্য ফোন দেই,,আরু নিয়ত করলো আজ যত কিছুই হোক ফোন দিবে না,,
আর কিছু না ভেবে আরু মেসেজ টা অপেন করলো,,
,যা ভাবছিল তাই,,হাফ লিখছে আর হাফ লিখে নাই,,
মেসেজে লেখা…
“”জানুওও কাল তাড়াতাড়ি কলেজ যেতে হবে আর একজন তোকে……..””
জাস্ট এত টুকুই,,
মেজাজ টা চরম ভাবে খারাপ হচ্ছে,,,,
আরু তো ফোন দেবে না এটা ফুল এন্ড ফাইনাল,,
এবার যা কিছু ই হোক না কেন,,
আর কিছু না ভেবে বাইরে বের হয়,
আরু,নিচ থেকে চেচামেচি র আওয়াজ আসছে,, উপর থেকে দেখি নিচে কারা যেন আসছে,,
আর কিছুই না ভেবে নিচে গেলো,,গিয়ে দেখে একজন মাঝ বয়সি মহিলা আর তার ছেলে,,
আরু দেখা মাত্রই আরুর মা তাকে ডেকে নিজের কাছে নিয়ে যায়,,
আয়েশাঃ– ভাবি,,এই হলো আমার ছোট মেয়ে,, এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেবে।
আরুও কিছু না বলে ওই আন্টির দিকে তাকিয়ে একটা ফেক হাসি দিলো,,
আন্টি ঃ– মাশাআল্লাহ,, ভাবি আপনার মেয়েতো অনেক সুন্দর দেখতে ঠিক আপনার মতো,,
এসো মা এসো আমার কাছে এসে বসো,,দেখি একটু তোমাকে,
ততক্ষণে আরু একটা জিনিস খেয়াল করলো,,
ওই আন্টির পাশে বসে থাকা ছেলেটা ডেবডেব করে আরুর দিকে তাকিয়ে আছে,,
যা আরুর কাছে মোটেও ভালো লাগছে না,,আর ওই আন্টিটা আরুর মায়ের লতাপাতার আ’ত্মীয় মানে দূরঃসম্পর্কের আত্মীয়,,
আরু আর কিছু না বলে ওই আ’ন্টির পাশে গিয়ে বসে,,
আন্টি ঃ– তা মামুনি,,তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে?( আরুকে উদ্দেশ্য করে)
আরুঃ- জি আলহামদুলিল্লাহ,,
আন্টি ঃ– ওই যে আমার ছেলে রিহান,,এবার ঢাকা ভার্সিটি তে ইংরেজি তে পড়ছে,,ভালো স্টুডেন্ট,,
আরুঃ- ওহ….
আরুর জা’স্ট বি’রক্ত লাগছে,,কোন মতে এখান থেকে কেটে পড়লে বাঁচে,,
আরুঃ- আম্মু আমার পড়া আছে,,আমি যাই!
বলেই সে নিজের রুমে চলে গেলো,, গিয়ে ঠা’স করে দরজা লাগিয়ে ঠু’স করে বিছানায় শুয়ে পরলো,,
আরুঃ– ওফফ জোড় বাঁচান বাচছি,,
বালিশের তলায় থেকে মোবাইল নিয়ে অন করে দেখে আননোন নাম্বার থেকে ১৯+ মিসডকল,,
আরুঃ- ওমা,,কার এতো দরকার পরছে আমাকে,,দুর যার দরকার সেই আবার দিবে নে,, আমার এতো ঠেকা পড়সে না,, মনে মনে কথা টা বলেই সে যেই ফোন টা রাখতে যাবে অমনি আবার কল,,
আরু আর কালবিলম্ব না করেই ফোন টা রিসিভ করে কানে লাগাই,,
ফোন কানে নিবার সাথে সাথে ই কারো তী’ব্র ধমকে আরুর অন্তর আত্মা কেপে উঠে,,
আরু ভালো করে ভয়েজ টা শুনেও চিনতে পারছে না
,,,
এই ফাজিল মেয়ে কয়টা কল করছি তোমায়,, কোথায় ছিলে তুমি,ফোন কাছে রাখবা না তো মোবাইলের দরকার কি তোমার,,দরকারের সময় পাওয়া যায় না,,বে*দ্দপ মেয়ে,,
আরুঃ- আরে মশায় কে বলুন তো আপনি,, হুদাই ষাঁড়ের মতো চি*ল্লাচ্ছেন,,
শুভ্র ঃ– আমি ষাঁড়ের মতো চিল্লাচ্ছি?( রেগে)
আরুঃ- তা নয় তো কি,, চিনি না জানিনা,,হুদাই,,
শুভ্র ঃ– চিনো না তুমি আমায়? কাল আসো তুমি কলেজে,, তোমার অবস্থা আমি দেখাচ্ছি,,
আরুঃ- ককককে আপনি?( তোতলানো গলায়)
শুভ্র ঃ– আমি তোমার লিডার,,শুভ্র খান..
আরুঃ- সসসরি স্যার( তোতলানো গলায়)
শুভ্র ঃ– কাল আসো শুধু তার পর দেখাচ্ছি।
বলেই শুভ্র ফোন কেটে দেই,,,
আরু কান থেকে ফোন টা নামিয়ে ভয়ে ঢোক গিলে,, আল্লাহ জানে কাল তার কপালে কি আছে……
______________________________
কাল সকালে…..
আরু তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে তাড়াতাড়ি করে কলেজের উদ্দেশ্যে বের হয়,
রাস্তায় যাবার পর বেশ অনেকক্ষণ অ’পেক্ষা করছে কিন্তু কোন রিকশার দেখা নেই,,,
হঠাৎ পিছন থেকে কারো ডাকে আরু পিছনে তাকায়,,
পিছনে তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে দাড়ানো,,দেখতে বেশ ভালোই,,
তবে আরু সেটাকে গুরুত্ব না দিয়ে চোখ গুলো ছোট ছোট করে ছেলেটির দিকে তাকায়,,
ছেলেটিঃ– হাই আমি রিহান,,রিহান শিকদার
আরুঃ- তো আমি কি করতে পারি,,,
আরুর এমন উত্তরে ছেলেটা বেয় চমকে যায়!!
রিহানঃ– না মানে,, আপনার নাম টা তো জানা হলো না,,আপনার নাম টা কি?
আরুঃ- এখানে কি নামের এড দেওয়া হচ্ছে যে আমাকে আমার নাম সবাই কে বলে বেরাতে হবে?
রিহানঃ– না সেটা না,,,আচ্ছা নাম না বলতে চাইলে ঠিক আছে,,কিন্তু আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন?
আরুঃ- কেন,, আপনি কি কোন দেশের প্রধান মন্ত্রী?
রিহানঃ– না তো
আরুঃ- তাহলে কি নায়ক বা গায়ক?
রিহানঃ– তাও না
আরুঃ- তাহলে কি কোন সেলেব্রিটি?
রিহানঃ– নাহ,,কিন্তু…
আরুঃ- তাহলে আমি আপনাকে কেন চিনবো? কোন যুক্তিতে চিনবো বলে আপনার মনে হয়?
রিহানঃ– না মানে কাল তো আমি আর আমার মা আপনার বাসায় গিয়ে ছিলাম,,তাই বলছিলাম
আরুঃ- আমার বাসায় গিয়েছেন?
রিহানঃ– জি!
আরুঃ- একচুয়াল্লি বাসাটা আমার নয় আমার বাবার আর আপনি কিংবা আপনার মা মানে আন্টি আমার কোন আত্মীয় নয় আমার মায়ের,,তাই এখানে আমি আপনাকে চেনার কোন প্রশ্নই আসে না,,
সো সাইড দেন আমি কলেজে যাবো,,
বলেই আরু হারা শুরু করলো,,,
আর রিহান সেখানে বোকার মতো কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে মনে মনে বলল,,
রিহানঃ– মেয়েটার অভার এটিটিউড,,বাট আই লাইক ইট!!!
মনে মনে কথাটা বলেই সে একটা মুচকি হাসলো,,,
___________
কলেজে…..
চলবে……