#প্রেমের_অগ্নি
#পর্ব_০২_০৩
#অধির_রায়
০২
সকলের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে প্রীতি৷ সে আজ সকলের ঘৃণার পাত্রী৷ যে প্রীতিকে অফিসের সকলে ভালোবাসার চোখে দেখতো, আজ সেই প্রীতি ভালোবাসার যোগ্য নয়৷ যাকে ম্যাম বলতে পাগল ছিল, আজ সে নির্লজ্জ মেয়েতে পরিণত হয়েছে।প্রীতির চোখ থেকে অনবরত অশ্রুর ধারা বয়ে যাচ্ছে৷
প্রেম অফিসে এসে সবাইকে হল রুমে ডাকে৷ সকলের সামনে একটা ভিডিও ক্লিপ উন্মোচন করে। যেখানে দেখানো হয়েছে প্রীতি প্রেমের মাথায় গুলি রেখে তাকে বাধ্য করেছে বিয়ে করতে৷ শুধু তাই নয় প্রীতি নিজের পোশাক নিজেই ছিঁড়ে চিৎকার করতে থাকে৷ সেজন্য প্রেম বাধ্য হয়ে প্রীতিকে বিয়ে করে৷
প্রীতি চোখের জল মুছে নিজের হারানো স্মৃতি জড়ানো কেবিনে প্রবেশ করে। প্রেম প্রীতির চেয়ার বসে টেবিলের উপর পা রেখেছে৷ যা দেখে প্রীতির মন অনেকটা ভেঙে যায়৷
প্রীতি হাতজোড় করে,
“প্লিজ প্রেম এমন করবেন না৷ এটা আমার মা বাবার স্বপ্ন ছিল৷ তাদের স্বপ্নকে এভাবে অসম্মান করবেন না৷ আমার বাবা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এ অফিস বানিয়েছেন। আমাকে যত ইচ্ছা অপমান করেন৷ আমি কিছু মনে করবো না৷”
.
প্রেম চেয়ার থেকে উঠে,
“আমার সুইটহার্ট সুন্দরী বউটা কান্না করছে৷ তুমি কান্না করলে আমার কষ্ট হয়৷ দয়া করে কান্না করো না সুইটহার্ট ৷”
.
প্রীতি কাঁদো কাঁদো স্বরে,
“আমি আপনার কাছে কিছু চাইনা। এটাই আমার শেষ চাওয়া এবং শেষ অনুরোধ।শুধু একটা অনুরোধ করবো”
.
প্রেম একুরিয়ামের উপর হাত রেখে,
“কি কথা? আমার সুইটহার্টের কথা কি আমি ফেলতে পারি? যতই হোক তুমি আমার রক্ষিতা।”
.
“আমি জানি না আমি কি অন্যায় করেছি? যার জন্য সৃষ্টিকর্তা আমার মা বাবাকে আমার কাছ থেকে কেঁড়ে নিয়েছেন৷ সৃষ্টি কর্তা আমাকে অনাথ করে দিয়েছেন। এখন আমার প্রোপার্টি কেঁড়েও নিয়েছেন৷ আমার মা বাবার কোন স্মৃতি আমার কাছে আর নেই৷ আমার বাবার এই কেবিনটাই আমার সব ছিল৷ আমি চাই আপনি এই কেবিনটা ইউস করবেন না৷ চিরকালের জন্য এই কেবিন বন্ধ করে দিবেন৷ তার বিনিময়ে আমি আপনার জীবন থেকে বহুদূরে চলে যাব৷ কোনদিন কোন দাবী নিয়ে আপনার সামনে আসবো না৷”
প্রীতি কথা বলার সময় গাল আটকে আসছিল। তবুও অনেক কষ্টে কথাগুলো বলে৷ চোখের জল আর বাঁধ মানছে না৷ প্রীতি প্রেমের কোন জবাব না জেনে হনহন করে বেরিয়ে যায়৷ কেননা প্রীতি জানে প্রেম তার এই কথা রাখবে৷
.
কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে প্রেম পিছন ফিরে দেখতে পাই প্রীতি কেবিনে নেই৷ দ্বার খোলা৷ যা দেখে বুঝা যাচ্ছে সে এখান থেকে চলে গেছে। প্রেমের মনে তখন অনু সূচনা বোধ জেগে উঠে। এক সাথে এত বড় ধাক্কা দেওয়া ঠিক হয়নি। প্রেম বাহিরে এসে প্রীতির খুঁজ করে সব জায়গায়। কিন্তু কোথাও প্রীতিকে খুঁজে পাই না৷ সিসি ক্যামেরা দেখে নিশ্চিত হয় প্রীতি চলে গেছে৷ প্রেম সময় নষ্ট না করে বাড়িতে চলে আসে। দ্বার খোলে ডাইনিং রুমে পা রাখতেই দেখতে পাই প্রীতি দুইটা ফুটো নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। চুলগুলো এলোমেলো, কান্না করার জন্য চোখ মুখে ফুলে ফেপে আছে৷
.
গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে,
“প্রীতি কোথায় যাচ্ছো? তুমি আমার বাড়ি থেকে কি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছো?”
.
ছলছল দৃষ্টিতে প্রেমের দিকে তাকিয়ে,
“আমি আপনার বাড়ি থেকে কিছু চুরি করিনি৷ আমি শুধু..।”
.
তুমি শুধু কি? এই ফুটো দু’টোর মাঝে কি লুকিয়ে রেখেছো?
.
প্রীতি কোমল করুন স্বরে,
“আমাকে বিশ্বাস করেন৷ আমি কিছু লুকিয়ে রাখিনি৷ আমি শুধু আমার মা আর বাবার দু’টো অ্যালবাম নিয়ে যাচ্ছি৷”
.
প্রেম অবাক হয়ে,
“তুমি কোথায় যাচ্ছো! আর এগুলো দিয়ে কি করবে?”
.
আমি আর কোনদিন আপনার জীবনে ফিরে আসবো না৷ প্রীতি রায় চৌধুরী তার কথা রাখতে জানে৷ আমার কোন কিছুর উপর লোভ নেই৷ এই অ্যালবাম দু’টো ছাড়া৷
.
মানলাম তুমি চলে যাচ্ছো। তোমার হাতে তো এখন কিছুই নেই৷ তুমি চলবে কিভাবে?
.
সৃষ্টিকর্তা আমাকে যেহেতু এই পথে নিয়ে এসেছেন, তিনিই ঠিক করে রেখেছেন আমার অন্ন৷ সৃষ্টিকর্তা কারো অন্ন কেঁড়ে নেন না৷ কেউ এই পৃথিবীতে না খেয়ে মারা যায় না৷ তেমনি আমিও না খেয়ে মারা যাব না৷
.
প্রেম অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“বেশি হয়ে যাচ্ছে প্রীতি। তুমি এই বাড়ি থেকে এক পাও বাহিরে রাখতে পারবে না৷”
.
প্রীতি মুচকি হেঁসে,
“হাঁসালেন৷ যার কোন অস্তিত্ব নেই তাকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করাটা ঠিক হচ্ছে না৷ তার থেকে রাস্তার কুকুরকে ডেকে নিয়ে আসেন৷ তাদেরও আশ্রয়ের প্রয়োজন আছে৷ মানুষকে তো ভালোবাসতে কোনদিন পারেননি৷ একটু কুকুরে ভালোবাসেন৷”
.
প্রেম রাগে গজগজ করে বলল,
“প্রীতি আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিও না। তোমাকে বারণ করা হয়েছে এই বাড়ি থেকে যেতে৷”
.
সত্যি বলতে আমার এই বাড়িতে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। আবার চলে যেতেও কষ্ট হচ্ছে৷ কতই না স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই বাড়িতে৷ যায় হোক আর কোনদিন কাউকে এভাবে ঠকাবেন না৷ ঠকিয়ে কেউ কোনদিন বড় হতে পারে না৷ আপনি যেদিন ঠকবেন সেদিন বুঝবেন ঠকানোর যন্ত্রণা।
.
প্রীতি তার বাবার মায়ের অ্যালবামে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে সারা বাড়ি পুনরায় চোখ বুলিয়ে নেয়৷ প্রীতি চৌকাঠে পা রাখতেই প্রেম প্রীতির হাত ধরে ডাইনিং রুমের ফ্লোরে ফেলে দেয়৷
.
প্রেম অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“তুমি মনে হয় ভুলে গেছো৷ সরকারের হিসাব মতে তুমি আমার রক্ষিতা৷ সো এক বছর না হলে তুমি এই বাড়ি থেকে বের হতে পারবে না৷”
.
প্রীতি কষ্ট করে দাঁড়িয়ে,
“মি. প্রীতি নিশাঙ্ক। আমি আপনার মতো কাঁচা খেলোয়াড় না৷ আমি ইচ্ছা করলে আমার সমস্ত প্রোপার্টি আবার নিজের নামে ফিরিয়ে নিতে পারতান৷ আপনার থেকে এসব বিষয়ে আমার জ্ঞান একটু হলেও বেশি আছে৷ আপনার দলিলে লেখা আছে আমি আপনাকে দুই দিন আগে সমস্ত প্রোপার্টি লিখে দিয়েছে। আমি যদি ভুমি অফিসে উইথড্র দাবি করতান তাহলে ফিরিয়ে পেতাম৷ কিন্তু আমি ওইটা দাবী না করে কোর্টে ডিভোর্সের দাবী করেছি৷ আমাদের কোর্টে দেখা হবে৷ যদিও আমাদের বিয়ে হয়নি৷”
.
প্রীতির কথা শুনে প্রেমের খুব রাগ হয়৷ প্রীতি আবার চলে যেতে নিলে প্রেম প্রীতির হাত ধরে টানতে টানতে রুমে নিয়ে যায়৷
.
প্রেম ক্ষেপে বলে উঠে,
“প্রীতি ম্যাম৷ তুমি আমার রক্ষিতা৷ সো আমার থেকে দূরে যেতে পারবে না৷ তুমি আমার থেকে পালানোর জন্য এমন নাটক করছো৷ আর হ্যাঁ এখন তোমার বিরুদ্ধে প্রমাণ খুঁজতে হবে না৷ অফিসের সবাই তোমাকে ঘৃণা করে৷ যাকে যা বলবো তাই করবে৷”
.
প্রীতি কান্না করে,
“দয়া করে আমাকে যেতে দেন৷ আমি তো আপনার কোন ক্ষতি করিনি৷ তাহলে কেন আমাকে এত শাস্তি দিচ্ছেন৷ আমার কাছ থেকে সবকিছু কেঁড়ে নিলেন৷ এখন আবার কি চান?”
.
সুইটহার্ট আমি তোমাকে চাই৷ তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না৷
.
ব্যাস। আপনার ওই নোংরা মুখে আমার নাম তুলবেন না৷ আমি একদম এইসব বিশ্বাস করি না৷ অনেক মেয়ে আছে। তাদের মাঝে কাউকে জীবন সঙ্গী বানিয়ে নিবেন৷
.
ঠাস করে কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল প্রীতির গালে। অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“তোর ডানা গজিয়েছে। তোর ডানা যদি আমি না ছাড়ছি আমি প্রেম নয়৷”
.
প্রেম প্রীতিকে রুমে বন্ধি করে অফিসে চলে যায়৷ প্রীতি তার মা বাবার অ্যালবাম জড়িয়ে ধরে কান্না করে ঘুমিয়ে পড়ে।
_________
রাতে প্রেমের ডাক শুনে প্রীতির ঘুম ভাঙে। প্রীতি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে প্রেম তার সামনে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে৷
.
প্রীতি ঘুম ঘুম নয়নে,
“এখন আবার কি চান আমার কাছ থেকে? আপনি কেন আমার পিছনে পড়ে আছেন৷”
.
সুইটহার্ট তোমাকে আমি কষ্ট দিতে চাইনা৷ কিন্তু কি করবো? তুমি এখান থেকে চলে যাব৷ তাই তো তোমার জন্য একটা সুখবর নিয়ে আসলাম।
.
প্রীতি চোখ রাঙিয়ে,
“আবার আপনি কি চাব আমার কাছ থেকে? আমার আর কিছু বাকি নেই৷”
.
প্রেম প্রীতির চারিপাশে রাউন্ড করে,
“সুইটহার্ট তুমি যদি এই বাড়ি থেকে চলে যাও তাহলে তোমার তিল তিল করে গড়ে উঠা ‘প্রীতি নিবাস’ আমি ভেঙে দিব৷”
.
প্রীতি চিৎকার করে,
“কি! আপনি এতোগুলো অসহায় মানুষের কাছ থেকে আশ্রয় কেড়ে নিবেন৷ তারা কি দোষ করেছে? দয়া করে তাদেরকে আশ্রম থেকে বের করে লদিবেন না৷”
.
একটা শর্তে আমি এমন কোন কাজ করবো না৷ আমার শর্তে রাজি হলে আমি সিদ্ধান্ত পাল্টে নিব৷
.
প্রীতি মাথা নিচু করে,
“আমি আপনার সব শর্তে রাজি আছি৷ তাও তাদের কোন ক্ষতি করবেন না৷ এতটা অমানুষ হবেন না৷”
.
এইতো ভালো মেয়ে। তাহলে কথা দাও তুমি এই বাড়ি থেকে যাবে না৷ তুমি সারাজীবন আমার রক্ষিতা হয়ে এই বাড়িতে থাকবে৷
.
রক্ষিতা নাম শুনে প্রীতি আবারও ভয় পেয়ে যায়৷ তবুও প্রীতি কোন উপায় না পেয়ে প্রেমের শর্তে রাজি হয়ে যায়।
_______
রান্নাঘরে প্রীতি রান্না করছে৷ এমন সময় প্রীতির ফোনপ ফোন আসে৷ প্রীতি কিছু না বলে ফোন রিসিভ করে। অপর পাশ থেকে বলে উঠে,
“প্রীতি রায় চৌধুরী তোমার দিন শেষ। তোমাকে পথে নামিয়েছি৷ এখন দেখো তোমার কি অবস্থা করে। তুমি দগ্ধে দগ্ধে মারা যাবে৷ কিন্তু নিজের জীবন শেষ করতে পারবে না৷ তোমার চারপাশে কাউকে পাবে না৷”
প্রীতি কিছু বলতে নিবে ঠিক তখনই ফোন কেটে দেয়৷ প্রীতি চোখ বন্ধ করে শপথ নেয়,
“আমি প্রীতি রায় চৌধুরী, আজ ইশ্বরের নামে শপথ নিচ্ছি৷ আমি এই সমস্যার সাথে মোকাবেলা করবো। প্রেম আর এই অজানা শত্রুকে বুঝিয়ে দিব প্রীতি রায় চৌধুরী কখনো হারতে শিখেনি৷”
চলবে…….
ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
#প্রেমের_অগ্নি
#পর্ব_০৩
#অধির_রায়
প্রীতিনকোন রকম রান্না করে।সারাদিন কিছু না খাওয়ার জন্য ভীষণ ক্ষুধা লাগছে। ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে প্রীতি রান্নার পর পরই খেয়ে নেয়৷ প্রেমের জন্য খাবার নিয়ে রুমে আসে৷ এসে দেখে প্রেম রুমে নেই। বেলকনিতে নেই। কোথায় যেতে পারে। ঝর্নার জলের শব্দে প্রীতি বুঝতে পারে প্রেম শাওয়ার নিচ্ছে।প্রীতি ওয়াসরুমের দ্বার বাহিরে থেকে বন্ধ করে দেয়৷
প্রেমের ফোন নিয়ে অনেকক্ষণ থেকে ঘাটাঘাটি করে যাচ্ছে৷ কিন্তু কোন প্রমাণ পাচ্ছে না৷ সন্দেহ জনক কোন ফোন নাম্বারও পাচ্ছে না৷ প্রেমের মা বাবা ফোন নাম্বার খুঁজেই চলছে৷ কোন প্রমাণ না পেয়ে প্রীতি ফোন গ্যালারিতে যায়৷ কিন্তু ফোন গ্যালারি লক করা৷ অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়৷ ফোন যথাস্থানে রেখে প্রীতি ওয়াসরুমের দরজা খুলে দেয়৷
প্রেম ওয়াসরুম থেকে এসে দেখতে পাই প্রীতি সোফায় ঘুমিয়ে আছে৷ একদম নিষ্পাপ মেয়ের মতো। প্রীতিকে আলতো করে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছা করছিল৷ কিন্তু প্রীতির দিকে ঘৃণার চোখে তাকিয়ে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
প্রীতি ঘুম থেকে উঠে রাতের আঁধারে অফিসে চলে আসে৷ দারোয়ানের সাথে ভালো যোগাযোগ থাকার জন্য প্রীতিকে কোন কষ্ট করতে হয়নি৷ শুধু প্রীতি আসেনি। প্রীতিকে সাহায্য করার জন্য প্রীতির এক ফ্রেন্ড তার সাথে এসেছে। প্রীতি দারোয়ানকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়৷
.
দাড়ানোন কাকা সান্ত্বনা দিয়ে,
“মামুনি কান্না করো না৷ আমি তোমাকে বিশ্বাস করি৷ তুমি কখনও এমন কাজ করতে পারো না৷ এসব ভিডিও এডিট করে বানিয়েছে৷ তুমি কখনো কাউকে বিয়ে করার জন্য জোর করবে না৷ ”
.
প্রীতি নিজেকে সামলিয়ে,
“কাকা আপনাকে আমার হয়ে একটা কাজ করে দিতে হবে৷ আপনি তো এই অফিসের জন্য সব কিছু করতে পারেন৷ ড্যাড আপনাকে খুব বিশ্বাস করতো।”
.
মামুনি তোমার কি সাহায্য লাগবে? আমাকে নির্ধিদ্বায় বলতে পারো ৷ আমি জানি তোমার পিছনে অনেক শত্রু উঠে পড়ে লেগেছে৷ তোমাকে সব সময় সচেতন থাকতে হবে৷ বিশেষ করে প্রেমের কাছ থেকে দূরে দূরে থাকবে হবে৷
.
হ্যাঁ কাকাই। এর পিছনে শুধু প্রেম দায়ী নয়। প্রেম ছাড়া আরও একজন আছে। যে আমাকে সর্বশান্ত করে দিয়েছে৷ প্রেম কাদের সাথে হাত মিলিয়েছে তা আমাকে জানতে হবে৷
.
মামুনি তোমাকে একটা কথা বলার ছিল। যা তোমাকে তোমার শত্রুদের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করবে৷
.
হুম বলেন।
.
মামুনি আমাদের পিছনের গেইট দিয়ে বর্তমানে প্রায় বিভিন্ন মাল পাচার করা হয়৷ আমাদের পিছনের দারোয়ান দেখেলে খুব সমস্যা হবে৷ ভিতরে চলো৷ তোমাকে সব খুলে বলছি৷
.
প্রীতি অবাক হয়ে,
“কি বলছেন কাকাই! কে এসব কাজ করছে৷ কে রাতের আঁধারে গোডাউন থেকে মাল বের করে নিয়ে যাচ্ছে৷”
.
মামুনি তোমার কাছের মানুষই তোমার শত্রু৷ তুমি কাছের মানুষদের কাছ থেকে দূরে দূরে থাকবে৷
.
কাকাই আমার কাছের বলতে আমার মা বাবা ছিল৷ তারা কার এক্সিডেন গত হয়েছেন৷ বর্তামানে আমার কাছের মানুষ বলতে কিছুই নেই৷
.
মামুনি চারপাশে চোখ রাখো তাহলে সব জানতে পারবে৷
.
কাকাই আমার হাতে একদম সময় নেই৷ আমাকে এখনই স্টোর রুমে যেতে হবে৷ আমি দেখতে চাই কে আমার শত্রু৷ আমি সব শত্রুদের গোড়া থেকে তুলে ফেলবো। নাকি এই শত্রু আমার ড্যাডের সময় থেকে।
.
প্রীতি সময় নষ্ট না করে স্টোর রুমে চলে যায়৷ পুরোনো সব ফাইল বের করে একে একে দেখতে থাকে। কিন্তু কোন কিছুইতেই সন্দেহ জনক কিছু পাইনি৷ হতাশ হয়ে ফিরে আসতে নিলেই প্রীতি পায়ে চোট পায়৷ পায়ে হাত দিয়ে নিচে বসতেই একটা ফাইলে প্রীতির চোখ আটকে যায়৷ ফাইল বেশ কিছুটা নতুন৷ প্রীতি ফাইল খোলে দেখতে পাই বিভিন্ন ডিজাইন৷ সেসব ডিজাইন তার ড্যাড রিজেক্ট করেছে। সব থেকে বড় বিষয় হলো ফাইলের মাঝে অনেক টাকা৷ প্রীতি কিছু না ভেবে ফাইলটা নিয়ে বাড়িতে চলে আসে৷
_______
সকালে মুখে জল পড়তেই প্রীতি উঠে জেগে৷ চোখ নেলে তাকিয়ে দেখে প্রেম তার সামনে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে আছে।
.
প্রতি ভয়ে ভয়ে বলে,
“দেখন আমার সাথে কিছু করবেন না৷ এভারের মতো আমাকে ক্ষমা করে দেন৷”
.
প্রেম অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখো। এখন সকাল ছয়টা বাজে। আমি কি অফিসে হাওয়া খেয়ে যাব৷”
.
প্রীতি কিছু একটা ভেবে,
“প্লিজ রাগ করবেন না। আমি আপনার জন্য খাবার এখনই বানিয়ে দিচ্ছি৷”
.
প্রীতি প্রেমের সামনে এমন ভাব দেখালো যেন প্রীতি প্রেমকে খুব ভয় পাই৷ প্রীতির সামনে প্রেম নয় বরং যমরাজ দাঁড়িয়ে ছিল।
প্রীতি রান্না ঘরে এসে কাকে যেন ফোন দেয়৷ প্রীতি ফিসফিস করে বলে,
প্রেম একটু পর বাড়ি থেকে বের হবে। আমি প্রেমের প্রতিটি কাজ কর্মের হিসাব চাই৷’
.
অপর পাশ থেকে বলল,
“তুমি কিছু চিন্তা করো না৷ আমি তোমার পাশে সব সময় আছি৷ এখন শুধু তোমার যুদ্ধ নয়৷ বর্তমানে আমার যুদ্ধেও পরিণত হয়েছে৷”
.
প্রেম অফিসের জন্য বের হবে৷ কিন্তু প্রেম কিছুতেই ট্রাই ঠিক করে বাঁধতে পারছে না৷ প্রীতি বসে বসে সব দেখছিল৷ প্রীতি প্রেমের ট্রাইয়ে হাত দিয়ে প্রেমের ট্রাই বাঁধতে সাহায্য করে৷
.
আচমকা প্রীতি প্রেমকে সাহায্য করতে আসায় প্রেম অনেকটা ঘাবড়ে যায়৷ প্রেম প্রীতিকে আজ প্রথম থেকে দেখছে৷ মনের মাঝে এক অজানা ভালোবাসার অনুভূতি বয়ে যাচ্ছে৷ পরিবেশটা পাল্টে দিচ্ছে৷ প্রেম প্রীতিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। প্রীতির মায়া ভরা চোখে প্রেমের ঘোর লেগে যায়৷
.
ট্রাই বাঁধা শেষ হলেই প্রীতি প্রেমের কাছ থেকে সরে আসতে নিয়েই প্রীতি পড়ে যেতে নেয়৷ কিন্তু তার আগেই প্রেম প্রীতিকে ধরে ফেলে৷ প্রেম প্রীতির নরম কোমল উদরে হাত রেখে প্রীতিকে নিজের কাছে নিয়ে আসে৷ প্রীতির সারা দেহে বিদ্যুৎ বয়ে যায়৷ প্রেম অপলক দৃষ্টিতে প্রীতির দিকে তাকিয়ে আছে৷ প্রীতি আমতা আমতা করে,
.
“কি করছেন টা কি? প্লিজ আমাকে ছেড়ে দেন৷ আমার অস্বস্তি হচ্ছে৷”
.
প্রীতির কথাতে প্রেমের ঘোর কাটে৷ প্রেম প্রীতিকে দাঁড় না করিয়েই প্রীতির কোমর থেকে হাত সরিয়ে দেয়৷ প্রীতি ফ্লোরে পড়ে যায়৷ প্রেমের পায়ের সাথে প্রীতির পা লাগতেই প্রেম নিজেকে সামলাতে না পেরে প্রীতির উপর পড়ে যায়৷ প্রেমের ঠোঁট জোড়া প্রীতির ঠোঁটের সাথে লেগে যায়৷
.
প্রেম নেশা ভরা কন্ঠে,
“এখানেই যদি সময় থমকে যেত৷ এভাবে সারাজীবন তোনার পাশে থাকতে পারলে৷ মায়া পরী তোমার মাঝে কি আছে? যা আমাকে তোমার কাছে চৌম্বকের মতো টানে।”
.
প্রীতি নীচে পড়ার কারণে সে কিছুটা ব্যথা পায়৷ প্রীতি প্রেমকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“ব্যাস! আপনার মুখ থেকে আর একটা কথা শুনতে চাই না৷ লজ্জা করে না একটা মেয়ের সাথে এমন ব্যবহার করতে। তাকে একা পেয়ে তার সাথে ফ্লট করতে ।”
.
প্রেম ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ,
“মুখে লাগাম দিয়ে কথা বল প্রীতি৷ আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই তোমার সাথে ফ্লট করার৷”
.
মি. প্রেম নিশাঙ্ক। তাহলে এসব কথা কোন এলিয়েন এসে বলে গেল। কে বললো ভালোবাসার কথা৷ আপনি যদি ভেবে থাকেন আমি আপনাকে ভালোবাসি৷ তাহলে ভুল ভেবেছেন৷ আমার মনে আপনার জন্য কোন ভালোবাসা নেই৷ আমার মনে আপনার জন্য আছে শুধু ঘৃণা৷
.
আমিও তোমার মতো দুই টাকার থ্রাড ক্লাস মেয়েকে ভালোবাসবো কোনদিনও ভেবো না।
.
প্রীতি মুচকি হেঁসে,
বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ‘দুই দিনের বৈরাগী ভারেকে বলে অন্না৷’ আপনি দুর্নীতি করে এসব তাশের ঘর নিজের করে নিয়েছেন৷ সবকিছু যেদিন হারাবেন সেদিন বুঝবেন৷”
.
প্রেম অট্টহাসি দিয়ে,
“আমাকে হারাতে পারবে এমন কারোর এখনো জন্ম হয়নি৷ আমাকে হারাতে সুইটহার্ট তোমাকে আরও সাত বার জন্ম নিতে হবে৷”
.
আপনি এখন পড়লে ব্যথা কম পাবেন৷ আরও উঁচুতে উঠেন৷ আপনাকে উঁচু থেকে ফেলে দিতে কেউ এসে গেছে৷ যখন উচু থেকে পড়বেন তখন এসব কোন কথা খাটবে না৷
.
প্রীতির কথায় প্রেম অনেকটা রেগে যায়। প্রেম রাগে গজগজ করতে থাকে৷ প্রীতিকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে৷ অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“আমি প্রেম নিশাঙ্ক৷ আমাকে কেউ হারাতে পারবে না৷ আমার পথে যে আসবে আমি তাকেই এই দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিব৷”
.
প্রীতি প্রেমের এমন রুপ দেখে ভীষণ ভয় পায়৷ চোখ দু’টো রক্ত বর্ণ ডাগর হয়ে আছে৷ চোখ থেকে লাভা বেরিয়ে আসছে৷ সেই লাভায় প্রীতিকে পুড়িয়ে দিবে৷ প্রীতি নিজের ভয়কে জয় করে,
.
“আপনার অফিসের লেট হয়ে যাচ্ছে৷ আপনি অফিসে যান। আমি কখনো এমন কথা বলবো না৷”
.
প্রেম অফিসে যাওয়ার সময় বাহির থেকে মেইন গেটের দরজা লক করে যায়৷ যেন প্রীতি বাহিরে বের হতে না পারে৷ প্রীতি নিজের মা বাবার ছবির দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
“তোমাদের প্রীতিকে এভাবে কেউ বন্দী করে রাখতে পারবে না৷ প্রীতি আর থেমে নেই৷ আমি তোমাদের হারানো সব ফিরিয়ে আনবো।”
চলবে….
ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।