3 Star,পর্ব-১০,১১

3 Star,পর্ব-১০,১১
Ariyana Nur

রেস্টুরেন্ট এর বাহিরে সবাই দাঁড়িয়ে আছে।একটু পরে মাগরিবের আযান দিবে।আনেক ক্ষন ধরে মান সিথি আর নুরকে বলছে যে,ও ওদের বাসায় ড্রপ করে দিবে।কিন্তু তাদের এক কথা তারা একা যাবে।তাই মান পরাজিত হয়ে ওদের জন‍্য সি এন জি ঠিক করতে গেল।আর তালাভ মূর্তি মত এক কোনারে দাঁড়িয়ে আছে।একটু পর মান সি এন জি নিয়ে আসে।যেই তারা সি এন জি তে ওঠতে যাবে এমন সময় একটা বাইক এসে থামে ওদের সামনে।

…..আরে সিথি যে কেমন আছ?কত দিন পর তোমাকে দেখলাম!!!

সিথি:জ্বি ভালো।আপনি ভালো আছেন ভাইয়া।
সিথির মুখে ভাইয়া ডাক শুনে লোকটার মুখ ছোট হয়ে গেল।
লোকটা কিছু বলবে তার আগেই নুর বলল

নুর:রকি ভাইয়া কেমন আছেন?

রকি:এটা নুর না কত বড় হয়ে গেছ।আমি তোমাকে খেয়াল করি নি।

নুর:তোর আপুর দিক থেকে চোখ সরলেতো খেয়াল করবি।আর আমি বড় হব না আমাকে কি ছোট থাকতেই বলেন নাকি।(বির বির করে)

রকি:নুর আপু কিছু বললে???

নুর:না কিছু না।

রকি:তো বাড়ির সবাই কেমন আছে?তুমি নাকি অসুস্থ ছিলে বোন?জানো আপু আমি না অনেক চেষ্টা করেছি তোমাকে দেখতে যাওয়ার জন‍্য।কিন্তু কাজের জন‍্য পারি নি।তুমি রাগ করনিত আপ্পি??

নুর এদিকে পরছে ফেসাদে।মুখের উপর কিছু বলতেও পারছেনা আবার সয‍্যও করতে পারতাছেনা।
নুর:হুহ..ঢং দেখলে আর বাচি না।আমার আপুকে পটাইতে না পেরে আসছে আমার জন‍্য দরদ দেখাতে আপুর সামনে।যাতে আমার আপু ইমপ্রেস হয়।কারন সে ভালো করেই জানে আমি আমার বোনদের কলিজা।বোন,আপু,আপ্পি আরো কত কিছু….ঢং তুমি তো আর জানোনা আমি তোমাকে দুই চোখেও দেখতে পারি না।
আমারে এতো বার আপু না বইলা নিজের বোনকে বলতে পারেন না।(মনে মনে)

(বি:দ্র:আমার সাথেও এমন হয়েছে😂)

সিথি:ও ঠিক আছে ভাইয়া।কিছু মনে না করলে প্লিজ একটা পানির বোতল এনে দিবেন।

রকি:কেন দিব না।আমি এক্ষনি যাচ্ছি এই বলে রকি চলে গেল।

সিথি:আপদ বিদায় করেছি তারাতারি গাড়িতে ওঠ।এইটারে দেখলে আমার মন চায় মাথাটা ফাটাইয়া দেই। আত্মীয় দেখে বেশি কিছু বলতেও পারি না।

নুর:এভাবে বল না আপু শুননে সে দিলে চোট পাবে।দেখনা আমার সাথে কত সুন্দর করে কথা বলে।
এই বলে দুবোন একসাথে জোরে হেসে দেয়।

মান আর তালাভ ওদের কাহিনী দেখে হা করে তাকিয়ে রইল।

চলবে,

3 Star,পর্ব-১১
Ariyana Nur

সকাল থেকে নুরের মন খারাপ।কেননা আজ সিথিকে মানের পরিবার দেখতে আসবে।মিসেস: খান আর রাহা সকাল থেকে নানা কাজে ব‍্যস্ত। আর এদিকে সিথি সে তো নাকে তেল দিয়ে ঘুমচ্ছে।একদিন বন্ধ পেলে সিথি আর নুরকে কে পায়।তাদের বন্ধের দিন কখন যে দুপুর হয় তার খবর থাকে না।থাকবে কিভাবে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কি কেউ বলতে পারে দুপুর কখন হয়েছে। কিন্তু আজ নুর সকালেই উঠে গেছে ওর মা ওকে দিয়ে এটা সেটা কাজ করাচ্ছে।আর বেচারী রাগে ফুলে কলাগাছ হচ্ছে।নুর ডয়িং রুম গোছাচ্ছে আর একা একাই বির বির করছে……

দেখতে আসবে বড় বোনকে আর সব কাজ করতে হবে আমার। ধুর ভালো লাগে না।কেন যে ছোট হতে গেলাম। আল্লাহ্ কেন তুমি আমাকে বড় বানালে না তাহলে আমি সবার উপর হুকুম চালাতে পারতাম।ধুর কেন যে ছোট হলাম!!মনে হয় আল্লাহ্ ভুল করে আমার যায়গায় সিথি আপুকে পাঠিয়ে দিয়েছে। নুর কাজ করছে আর একা একাই বকর বকর করছে।

নুহা এসে ওর কতগুলো খেলনা মেঝেতে ছরিয়ে ছিটিয়ে খেলতে শুরু করল। কিন্তু নুরের সেদিকে কোন খেয়াল নেই। ও ওর হাতের কাজ শেষ করে পিছনে তাকিয়ে নুহা বলে দিল এক চিৎকার……

নুহা কানে হাত দিয়ে বলল…..

—কি হয়েছে এভাবে চিৎকার করছো কেন??আমি কি তোমার মত বয়রা নাকি??

নুর কোমরে হাত দিয়ে বলল…..

—-কি বললি…..আমি বয়রা……
তুই বয়রা তোর চাচারা বয়রা তোর চৌদ্দ গুষ্টি বয়রা।আর তুই এখানে ময়লা করলি কেন??

নুহাও সিথির মত কোমরে হাত দিয়ে বলল….
ঐ তুমি চোখে দেখ না আমি আবার ময়লা কই করলাম!!আমি তো এখানে খেলতেছি।তোমার চশমা পরে নাও তাহলে ভালো দেখতে পারবে।

—-সারা বাড়িতে তোর খেলার জন্য এই জায়গাই পাইছো না।আমি কত কষ্ট করে গোছালাম আর তুই নষ্ট করে দিলি।আর
কি বললি…..
আমি চোখে দেখি না??দাড়া তুই তোর একদিন তো আমার একদিন।

নুহাকে আর কে পায় সে তো ভো দৌড়।নুর ও নুহার পিছনে ছুটলো।

________________________

এদিকে মান কলের উপর কল দিচ্ছে তালাভ কে। কিন্তু তার কল রিসিভ করার কোন খবর নেই।একটু পর তালাভ মানকে কল দিল।মান কল রিসিভ করে কিছু বলবে তার আগেই তালাভ ঘুম জরানো কন্ঠে বলল….

—সরি রে।ঘুমিয়ে ছিলাম।তাই ফোন ধরতে পারি নি।

—-ঐ কয়টা বাজে এখন তরি তুই ঘুমাচ্ছিস। রাতে কি চুরি করতে গেছিলি??

—আরে ভাই অনেক রাতে ঘুমিয়েছি তাই।

—-কেন রাতে কি হয়েছিল??তোর শরীর ঠিক আছে তো??

—হুম আমি ঠিক আছি।মনে হয় পেশার হাই হয়ে গেছিল।এখন ঠিক আছি।এখন বল কেন ফোন দিচ্ছিস??কোন তো মনে হয় কারন আছে??

—ঐ তুই কি বলতে চাচ্ছিস আমি তোকে ফোন দেই না??

—–আরে তুই রাগ করছিস কেন আমি কি বলেছি তুই ফোন দিস না। কিন্তু ডিউটি বাদ দিয়ে এই টাইমে দিস না।তাই আরকি বললাম….

—-হয়েছে আর কিছু তোর বলতে হবে না।কাজের কথা শোন… আজ বিকেলে সিথিকে আমরা দেখতে যাব।সাথে তুইও যাবি।

—-আরে আমি ওখানে গিয়ে কি করব??তুই যা না ভাই আমাকে কেন টানছিস।তোদের ওখানে আমি গিয়ে কি করব।

মান এবার ধমক দিয়ে বলল….
আমি বলেছি তুই যাবি ব‍্যস যাবি।আমি তোর কোন মতামত শুনতে চাই না।আমার লাইফে কোন শুভ দিনে তুই থাকবিনা তা হয় না।আমি তোর আর কথা শুনতে চাই না।এই বলে মান ফোন রেখে দিল।

তারাভ এক ধ‍্যনে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে…
আসলেই মানের মত বন্ধু পাওয়া ভাগ‍্যের ব‍্যপার।মান ওর বন্ধু,ভাই দুটোই।একজনের আরেক জনকে ছাড়া যেন চলেই না।

______________________

নুহা গিয়ে ওর নানুর পিছনে লুকালো আর বলল…..

নানু দেখ তোমার মেয়ে আমাকে মারতে আসছে কিছু কর…

মিসেস খান:ঐ নুর কি হয়েছে তোর??এভাবে ওর সাথে দৌরাচ্ছিস কেন??তোকে না আমি কাজ করতে বলেছি??

নুর:দৌরাচ্ছি কি আর সাধে তোমার এই বিচ্ছু নাতনী আমার গুছানো ঘর ময়লা করে দিয়েছে।

নুহা:নানু মনি মিথ্যা কথা বলছে আমি ময়লা করি নি। সত্যি…

নুর: ঐ তুই আবার কথা কস।তোরে তো আমি…..

মিসেস খান:নুর যা তো এখান থেকে।তুই তোর কাজ কর এমনি অনেক কাজ আর জ্বালাস না।

রাহা নুহার কান টেনে মিসেস খানের পিছন থেকে বের করে বলল…..

—-তুমি কিছু করনি না।তাহলে খেলনা কে ছরিয়ে রেখেছে।আমি মাএ দেখে আসলাম। মিথ্যা বলবেনা….
আর মনিকে জ্বালাতে ভালো লাগে হুম……

নুহা:আম্মু আমার লাগছে….কান ছাড়ো তাহলে বলব…

রাহা নুরের কান ছেড়ে দিল।আর নুহা কান ঢলতে ঢলতে বলল…..
—-দেখ নানু তোমার মেয়ে আমার কানের কি অবস্থা করল।আর আমার মনিকে জ্বালাতে অনেক অনেক ভালো লাগে….
এই বলে ভৌ দৌড়।

নুর:তরেরে পাজি মেয়ে দাড়া তুই।এই বলে নুর আবার নুহার পিছে ছুটলো….
রাহা আর মিসেস খান ওদের কাহিনী দেখে হাসছে।

রাহা:পাগলগুলো…

মিসেস খান:তা আর বলতে…..

______________________________

সিথি বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।এমন সময় ওর শরীরে পানি পড়ায় লাফ দিয়ে ওঠে।ওঠে দেখে নুর আর নুহা দাঁড়িয়ে আছে।দুইজনের হাতেই পানির গ্লাস। সিথির আর বুঝতে সমস্যা হল না যে একটু আগে কি হয়েছে।সিথি ওদের দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলল…..
—ঐ সমস্যা কি তোদের??আমার আরামের ঘুম ভাংলি কেন??

নুর:তুমি তো পরে পরে ঘুমাচ্ছ।আর তোমাকে কত ডাকলাম। তোমার তো ওঠার নাম নাই তাই এমন করলাম।জান সকাল থেকে কত কাজ করেছি??

সিথি:তোকে কাজ করতে কে বলেছে??তুই ও ঘুমা আমাকেও ঘুমাতে দে।

নুহা:তুমি এবার ঘুমালে তোমার উপর বালতি ভরে পানি ফেলব।কি মনি আমি ঠিক বলেছিনা??

নুর:একদম ঠিক বলেছিস।
এই বলে ওরা দুজন হাই ফাই করল।

সিথি:তোরা আমার উপর বালতি ভরে পানি ফেলবি।তরেড়ে দাড়া তোরা।তোদের দুটোকে আমি…….

নুর আর নুহাকে কে পায় তারা তো ভৌ দৌড়…….

দৌড়ে এসে নুর আর নুহা নুরের বেডে ঠাস করে শুয়ে পরল।নুহা হাপাতে হাপাতে বলল…..

—–মনি আমরা মনে হয় জেরি হয়ে গেছি।

—–কেন বলতো তোর এটা মনে হয়???

—-দেখনা সকাল থেকে শুধু জেরির মত দৌড়ানি খাচ্ছি।তাই আর কি বললাম।শুধু সবাই দৌড়ানি দিতে পারে।কেউ একটু চকলেট দিতে পারে না।

নুর মুখ ফুলিয়ে এমন ভাবে কথাটা বলল…
যা দেখে নুর বিছানায় হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here