3 Star,পর্ব-০৪,৫
Ariyana Nur
পর্ব-০৪
সেদিনের পর কেটে গেছে কয়েকটি দিন।নুর এখন পুরো সুস্থ।এতোদিন সিথি আর রাহা ওকে স্কুলে যেতে দেয় নি।
তাদের কথা স্কুলে গেলে নুর দুষ্টুমি করে আবার অসুস্থ হয়ে যাবে।তাই নুরকে যেতে দেয়নি।
নুরেরও ঘরে বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না।দু’বোনকে অনেক কস্ট করে রাজি করিয়েছে স্কুলে যাওয়ার জন্য।তারাও শর্ত দিয়ে তারপরে রাজি হয়েছে।নুর ও ভালো মেয়ের মতো সব মেনে নিয়েছে।
রাহা:নুর তারাতারি ওঠ।তুই না আজ স্কুলে যাবি।তোর কি সেই খেয়াল আছে?
নুর:আপু ৫মিনিট
রাহা:ওই তোর ৫মিনিট শেষ হয় না।
নুর:বললাম তো ৫মিনিট
রাহা:তোর চেয়ে নুহাকে ঘুম থেকে উঠানো সহজ।তোর জন্য সিথিই ঠিক আছে।
নুর:তুমি আমার সব কিছু গুছিয়ে দাও আমি উঠছি।
রাহা:ওকে তারাতারি ওঠ।
সিথি:মা….তারাতারি খাবার দাও।আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
মিসেস খান:প্রতিদিন তারাহুরো না করে আগে উঠতে পারো না তাহলেই তো হয়।
সিথি:তুমি আগে ডাকোনি কেন?ডাকলে তো দেরি হতো না।
মিসেস খান:হুম এখন সব দোষ আমার।
সিথি:তা নয় কি
মিসেস খান :তুই যাওয়ার সময় নুর কে নামিয়ে দিয়ে যাস। নুরের মনে হয় এতোখনে হয়ে গেছে।রাহা ওনেক আগেই ওর খাবার নিয়ে গেছে।
সিথি:ঠিক আছে।মা.. বাবা কোথায়?
মিসেস খান:তোর বাবার আজকে দরকারি কাজ আছে তাই আরো আনেক আগে চলে গেছে।
সিথি:ও।নুরকে ডাক দাও আমার হয়ে গেছে।
মিসেস খান :তুই বস আমি দেখছি।
সিথি:নুর তোর স্কুলে যেমন আমি দিয়ে গেলাম ঠিক আমি নিয়ে যাব।একা বাসায় যাবি না।আর যাবার সময় এই দিক দিয়ে ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যাব।
নুর:ঠিক আছে।না করলে তো আর শুনবে না। ওকে বাই।
সিথি:বাই
নুর ক্লাসে গিয়ে চুপ করে এক কোনায় বসে রয়েছে।কেননা তার দুই বান্দরনী এখন পযর্ন্ত আসে নি।
একটু পরে এক জন মেয়ে নুর কে এসে জরিয়ে ধরলো।
নুর :ঐ তোর আসার সময় হইছে এখন না।
আরেকটায় কই মরছে নি।
নারে বোইন মরে নাই।তুই এখন বল কেমন আছোত?
আমি ভালো আছি।এতোদিন খারাপ ছিলাম তোদের দুইটারে কয়টা লাগাম তারপরে যদি শান্তি পাই।
আমরা কি করলাম!
তোমরা কি করছো!না….
আপুরে ফোন দিছে কে?একটুর জন্য বাইচা গেছি।আপুরা যদি জান তো না তাহলে আমারে যে কি করতো!!!
বিশ্বাস কর আমরা আপুরে ফোন দেই নাই।আমার ফোনতো আমি আনি না।আর অরিরেতো ফোন দেয়ই নাই।
তাহলে আপুরে বলল কে?ঐ ভালো কথা ঐ ডাক্তার ঐ দিন কই থিকা টপকাইছিল?
আমি কি জানি
ডাক্তাররেতো আমি দেইখা নিমু।আর ঐ বাদরগুলো মেয়েদের আর বিরক্ত করছে?
নারে তোর ঔষধে ভালো হইয়া গেছে।
ঐ তুই আজকে ডাক্তার এর কাছে যাবি না?
না।জানোছ তানুঐ ডাক্তাররে আমারে ব্লাকমেইল করে?
কি……তোরে।কেমনে কি?
নুর তারপরে ওকে সব বলল।
আপনাদেরকে তো নুরের দুই বান্দরনী সরি… বান্ধবীর পরিচয় দেইনি।তানহা আর অরিন নুরের জানের জান দোস।নুর ওদেরকে ছোট করে তানু আর অরি বলে ডাকে।আর ওদের কথা শুনে একটু কৌতুহল লাগছে ঐ দিন কি হয়েছিল।
নুরের জিদ আর রাগ একটু বেশি।তা তার পরিবারের সবাই জানে। কিন্তু আন্যায় দেখলে সে চুপ করে থাকে না। শাস্তি সে তাকে দিবেই।হোক সেটা ছলে বলে কৌশলে।আথবা দু চারটা লাগিয়ে।নুর মারামারি চুপিচুপি ওর এক ফ্রেন্ড এর বাবার কাছ থেকে শিখেছে।যাতে সে নিজেকে আর আন্যকে সেভ করতে পারে।আর তা ওর পরিবারের লোক জানে না।
সেদিন কিছু বখাটে ছেলে ফাকা রাস্তায় মেয়েদের বিরক্ত করছিল।যা দেখে নুরের মাথা গরম হয়ে যায়।আর তাদের সাথেই মারামারি করে হাতে আর কপালে কেটে যায়।মান ঐ রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখে নুর মারামারি করছে।আর ওর হাত আর কপাল থেকে রক্ত পরছে।তাই মান নুরকে প্রথমে ভালো মতো বলে ওর সাথে যাওয়ার জন্য কিন্তু নুর তো নুর ডাক্তার এর কথা শুনলে যতো বাহানা।তারপরে মান নুরকে অজ্ঞান করে নিয়ে যায়।আর সিথিকে কল করে জানিয়ে দেয়।
তানু:নুর আমার না মাথা ঘুরাইতাছে তোর কথা শুইননা।
আর কইছনা দেখিছ কি করি আমি তার।
ঐ আজকে কি ক্লাস করবিনা।
হুম করতেতো হইবো কতোদিন পরে আসলাম।
হুম..চল
এদিকে সিথির স্কুল থেকে কল করে জানিয়েছে আজ টিচারদের একটা মিটিং আছে। সিথি তারাতারি করে স্কুুলের গেট দিয়ে ধোকার সময় হোচট খেয়ে পরে যায় আর হাতের আনেক খানি ছিলে যায়।সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই। সিথি মিটিং রুমে গিয়ে দেখে সবাই এসে গেছে।একটু পর মিটিং শুরু হবে।
সিথি:যাক বাবা মিটিং শুরু হয় নি। আমি তো মনে করেছিলাম মিটিং শুরু হয়ে গেছে।এতোখন তো হাতের ব্যথার কথা ভুলে গেছিলাম।মিটিং শুরু হয়ে গেছে মনে করে তো একটু কান্নাও করতে পারলাম না।থাক সমস্যা নাই পরে একসাথে বেশি কান্না করলেই হবে।(মনে মনে)
সিথি মনে মনে এসব ভাবছে এমন সময় পিয়ন আসলো আর জানালো যে মিটিং আধা ঘন্টা পর শুরু হবে।
আর পিনসিপাল ম্যাম সিথিকে ডেকেছে।সিথি পিয়নের সাথেই ম্যাম এর রুমের সামনে গেল।
পিয়ন: আপনি ভিতরে যান।ম্যাম ভিতরে আছে।
সিথি ভিতরে গিয়ে দেখে ম্যাম নাই।তাই সিথি বের হয়ে যেতে নিলেই কেউ একজন পিছন থেকে ওর হাত ধরে।সিথি সাথে সাথেই পিছনে তাকায় আর সামনের মানুষটি দেখে আবাক হয়ে যায়।
সিথি:তু….তুমি
চলবে,
3 Star,পর্ব-৫
Ariyana Nur
সিথি:তু…..তুমি!
আমি তো বিশ্বাস করতে পারছিনা তোমার সাথে আবার দেখা হবে।তুমি না বাহিরে চলে গেছিলে পড়ালেখার জন্য?
উফ…এতো উওর এক সাথে কি করে দিব।
ঠিক আছে আগে বল এখানে কি করে?
পিনসিপাল ম্যাম আমার মা।
কি ম্যাম তোমার মা!
হুম।। মা আজকে স্কুলে আসার পর অসুস্থ হয়ে যায় তাই মা কে দেখতে আসি আর তোমাকে দেখি। তাই ভাবলাম একটা সারপ্রাইজ দেই।কেমন লগল হু…..
ওনেক ভালো।এখন বলো ম্যাম কেমন আছে?
আগের চেয়ে ভালো। কিন্তু তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? তুমি কি অসুস্থ?
না না আমি ঠিক আছি।
তুই ওর যে হাতে ধরেছিস সেখানে ও ব্যথা পেয়েছে।
পিছন থেকে এ কথাটি বলে একজন ভিতরে আসলো।
…..ও তুমি তা তুমি কি করে জানলে?
…..তা তোর জানতে হবে না।
……সিথি তুমি কি করে ব্যথা পেলে?
সিথি:তারা তুমি সুধু সুধু চিন্তা করছো আমি ঠিক আছি।
তারা:সিথি ও হচ্ছে আমার কাজিন ডা:মানান।আর ভাই ও হচ্ছে আমার ফ্রেন্ড সিথি।
মান:তোর পরিচয় পর্ব শেষ এবার সর ওর হাত দেখতে দে আমায়।
তারা:দেখ না করল কে?
সিথি:তারা আমি ঠিক আছি।
তারা:আরে চিন্তা কর না।ইনি হাতুরে ডাক্তার না।হাতুরে ডাক্তার হলে কি আমি মার জন্য তাকে নিয়ে আসতাম।
মান:তুই চুপ কর।এই যে মিস: বসেন।
সিথি:বললাম তো আমি ঠিক আছি।
মান: আরেকটা কথা বললে কানের নিচে দিব।চুপ চাপ বস।
সিথি আর কোন কথা না বারিয়ে চুপ করে বসে রইল আর মান ওর হাতে মলম লাগাতে লাগল।তারা দাড়িয়ে য়ে মুচকি হাসছে।
মান: জিবনেও ঠিক হবে না তুমি?এতোটা কেয়ারলেস কেন? হোচট খেয়ে ব্যথা পেলে আগে মানুষ ব্যথার জায়গা দেখে।আর ইনি চারোপাশে দেখে কেউ দেখেছে কি না।
সিথি:তারা তোর ভাইকে বল চুপ থাকতে।বেশি কথা আমার পছন্দ না।
মান: তুমি তারাকে বলছো কেন আমাকে বল।নাকি গুনডী পানা ছেড়ে দিয়েছ?মনেতো হয় না।দেখতে হবে না কার বোন
এই কথা শুনে সিথির মাথা গরম হয়ে যায়। সিথি মানের কলার ধরে বলে, আমাকে বলেন ভালো কথা আমার বোনদের কেউ কিছু বললে আমি তাদের ছেড়ে দেই না।এই বলে মানের কলার ছেড়ে দেয়।
আর কি বললেন গুনডী,,,
তা তো আনেক আগেই ছেড়ে ছিলাম এক বেইমান, চিটার,বাটপার,সার্থপর এর কারণে।এখন মনে হচ্ছে আমি তখন ভুল ছিলাম।
তারা:ভুল তোমার ছিল না।ভুল ছিল আমার।
তারার কথা শুনে সিথি আবাক হয়ে বলে মানে!!!
তারা:হুম ভুল আমার ছিল।তুমি তো জানই না ভাইয়া আমার চাচাতো ভাই। ভাইয়া তোমাকে পছন্দ করতো তা আমি জানতাম না।একদিন আমি ভাইয়া তোমার ছবি দেখে আমার ফোনে আর জিগ্গেস করে তোমার কথা তারপর আমি তোমার কথা সব বলি।তুমি আমার ফ্রেন্ড আমারা এক সাথে পড়ি।
তারপর ভাইয়াকে বলি জানো ভাইয়া ওকে না আমি তোমার বউ করে আমার ভাবি বানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দেখ তুমি তোমার ফ্রেন্ড কে পছন্দ কর আর সিথিও কাউকে পছন্দ করে।আমার কথা শুনে ভাইয়া আনেকটা ঘাবরে গিয়ে জিগ্গেস করলো ছেলেটার নাম কি?কোথায় থাকে?আমি বললাম কোথায় থাকে তা জানিনা শুধু ওর মুখে নাম শুনেছি কি জানি,কি জানি ওহ্যা মনে পরেছে ডি.এম।আমার মুখে এই নাম সুনে ভাইয়া চলে যায় সেখান থেকে।
তারপর থেকে ভাইয়া আমাদের কারো সাথে বেশি যোগাযোগ করে না।পরে একদিন ভাইয়ার ফোনের ওয়ালপেপারে তোমার ছবি দেখে ভাইয়াকে জিগ্গেস করলে ভাইয়া আমাকে সব বলে।আর ভাইয়া শেষ যেদিন তোমার সাথে কথা বলেছিল সেদিন তুমি ওকে ডি.এম বলে ডেকেছিলে।আমার গাধা ভাই পরে খেয়াল করেছে। তারপরে ও তোমার রাগ ভাংগার আনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি।
সিথি:মাথা মোটা দেখছি কিন্তু এই গাধার মতো দেখি নাই।আমার এখন মনে হচ্ছে ডি. এম না বলে গাধা,গর্ধব,মাথা মোটা বলা দরকার ছিল।এই মাথা নিয়ে ডাক্তারী পাশ কেমনে করেছে আল্লাহ্ জানে।
মান:তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো।
সিথি:এগুলো যদি অপমান হয় ঐদিন কি ছিল মি:মানান খান?
এই বলে সিথি চলে যায়।
চলবে,