১৪ বছর বয়সে (অনুগল্প)

১৪ বছর বয়সে (অনুগল্প)
নন্দিনী_চৌধুরী

মাত্র ১৪ বছর বয়সে নিজের থেকে ১২বছরের বড় একজনের সাথে আমার বিয়ে হয়ে যায়।হ্যা মাত্র ১৪বছরে।যে বয়সটা মাত্র আমার কৈশরে পা দেওয়ার বয়স।সেই বয়সেটাতেই আমাকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় তাও নিজের থেকে ১২বছরের বড় একজনের সাথে।

গরিব ঘরের মেয়ে আমি।বাবা সামান্য দিনমজুর।তিন ভাই বোন দাদি আর মা বাবাকে নিয়েই আমাদের সংসার।আমি আমার ভাই বোনদের মধ্যে সবার বড়।এরপর আমার ভাই তারপর আমার ছোট বোন।পড়াশুনায় ভালো বলে স্কুলের স্যারেরা বিনেপয়সাত পড়ার সুযোগ দিয়েছিলেন।আমি ক্লাস নাইনে উঠেছিলাম মাত্র।আমার বিয়ে ঠিক হবার এক সপ্তাহ আগে। একদিন রাতে খাবার খাওয়ার সময় বাবা দাদিকে বলছিলেন,,,

এক সপ্তাহ আগের রাতে,,,

মা সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে।বাবা ভাত মাখাতে মাখাতে দাদিকে বললো,

বাবা:জানো মা একখান ঘটনা ঘইটা গেছে।
দাদি:কি বাজান।কি ঘটনা ঘটছে?
বাবা:ওইযে আমাগো পাশের গ্রামের ফরিদ মিয়া আছেনা।হেতো হের পোলার লইজ্ঞা মাইয়া খুঁজতাছিলো।আমাগো আব্দুলায় করছে কি জানো আমাগো কুসুমের ছবি দেহাইছে হেরে।এহন হের তো কুসুমরে পছন্দ হইছে।কইতাছে সামনের সপ্তাহে কুসুমরে দেখতে আইবো।
দাদি:এডাতো খুশির কতা বাজান।হুনছি হেরা মেল্লা বড়লোক।আমাগো কুসুমরে পছন্দ করছে মানে আমাগো কুসুম তো এহন রাজরানী হইয়া যাইবো।
বাবা:কিন্তু আম্মা।কুসুমতো ছোড ওরে এহোনি বিয়া কেম্নে দিমু?
দাদি:আরে ছোড তো কি হইছে।দুধের পোলাপানতো আর না।হুন বাজান এই সুযোগ বার বার আইবোনা।দেখ তোর আরো দুইটা পোলাপান আছে।কুসুম রে অই বাড়িত বিয়া দিত ফারলে তোর টাহা পয়সার সমস্যা দূর হইবো।আমি কই তুই এই সমন্ধ পাকা হইরা ফেল।
আম্মা:কিন্তু আম্মা কুসুম মাত্র চৌদ্দ বছর।এতূডু মাইয়া কেম্নে সংসার করবো।সংসার করাতো মুহের কতানা।
দাদি:তুমি চুপ করোতো বউ।মাইয়া ছোড ছোড কইরা চিল্লাও ক্যা।আরে তুমার মাইয়ার সময় আমাগো দুইডা তিনডা পোলাপান আছিলো।আর তুমার মাইয়ার তো হপায় বিয়া হইতাছে।আর মাইয়া ঘরে থুইয়া করবা কি।পড়ালেহা এতো কইরা কি হইবো।হেইতো জামাইয়ের ঘরত যাইয়া রান্নাদন লাগবই।তার চেয়ে এহোনি দিয়া দেও বিয়া।তার উফর মাইয়ার গায়ের রং ভালা।এহন কত কুত্তারলাহান পোলাপান থাহে রাস্তাঘাটত।কোনো এক্কান ঘটনা ঘইট্টা যাওয়ার আগে।মাইয়া বিয়া কইরা পার করোন ভালা।
দাদির কথা শুনে মা আর কোনো কথা বলেনি।এর এক সপ্তাহ পর আমাকে দেখতে আশা হলো।ছেলেপক্ষ্যের আমাকে পছন্দ হয়ে গেছে।বিয়ে দিন ঠিক হলো আগামি বুধবার।রাতে আমি মায়ের কাছে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলি,

মা আমি বিয়া করমুনা।আমি পড়ালেহা করমু।ওমা তুমি আব্বারে কৌ না আমি অহন বিয়া করমুনা।
মা:তোর দাদি যহন রাজী তহন এই বিয়া কেউ ঠেকাইতে পারবোনা।তোর বাপেও রাজী।তুই আর অমত হরিস না মা।আর তোর বাপে কইছে বিয়ার পরেও তোরে হেরা পড়ালেহা করাইবো।তুই আর না হরিস না।

সব দিক দিয়ে আশা আলো বন্ধ থাকায় না চাইতেও বিয়ের পিড়ীতে বসতে হলো।বিয়ের সময় আমার বাবার বাড়ি থেকে কিছুই আমাকে দেয়নি।আমার শশুড়বাড়ির লোকরা নাকি কিছুই চায়নি।আমার বিয়ের কথা শুনে অনেকেই বাবাকে না করেছিলো।কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।ধার্য্য করা দিনেই বিয়ে হয়ে গেলো আমার।বিদায়ের সময় অনেক কান্না করছিলাম।আপন মানুষগুলোকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি।

শশুড়বাড়িতে পা রাখতে না রাখতেই শাশুড়ির হুংকার পেলাম।তিনি চিল্লায়ে চিল্লায়ে বলছেন,

শাশুড়ি মা:ফকিন্নির বাচ্চা বিয়া করিয়ে নিয়ে আসছো।একটা সোনাদানা টাকা নিজের সাথে আনেনায়।আমার ওমন রাজপুত্রের মতো পোলার লগে এরকম নিচু জাতের মাইয়া তুমি কেম্নে বিয়া করাইলা।
শশুড় আব্বা:তুমি এখন এসব কথা বাদ দিয়া যাও নতুন বউরে বরণ কইরা ঘরে তুলো সাবেরের মা।
শাশুড়ি মা অনিচ্ছাকৃত আমাকে বরণ করে ঘরে তুললেন।আমাকে দুইজন মেয়ে মিলে বাসর ঘরে বসিয়ে দিয়ে গেলো।আমার মনে হাজার রকমের ভয় কাজ করছিলো।স্বামী নামক মানুষটারে ঠিক মতো এখনো দেখিনাই।ভাবনার মাঝে ঘরে কেউ আসলো।বুজলাম আমার সদ্য বিয়ে করা স্বামী আসছে।তিনি খাটের কাছে আসতে আমি নেমে তারে সালাম করলাম।আসার আগে মা বার বার বলে দিছে।স্বামী বাসর ঘরে আসতেই তাকে সালাম করতে।আমিও সালাম করে তার থেকে দূরে দাঁড়ালাম।আমার স্বামী মাথার পাগড়িটা খুলে খাটে বসে আমাকে বললেন,

সাবের:নাম কি?
আমি:কুসুম।
সাবের:কোন ক্লাসে পড়ো?
আমি:ক্লাস নাইন।
সাবের:তুমি কি জানো আমি তোমার ১২বছরের বড়।
আমি:জ্বী।
সাবের:তাইলে বিয়া করতে রাজী হইলা কেন?
আমি:আব্বা দাদি করতে বলছে তাই।আপনে কেন করলেন বিয়া।আপনে তো জানতেন আমি ছোড আপনেরতন।
সাবের:হুম জানতাম।কিন্তু তোমারে দেইক্ষা ভালো লাগছে।তাই আর না করিনাই।

তার কথা শুনে আর কিছুই বলিনা,বলিনাই বললে ভুল হবে বলার সুযোগ পাইনাই।তার আগেই সে নিজের মাঝে আমাকে টেনে নিলো।বিয়ের প্রথম রাতেই হায়নার মতো আচরম করলো আমার লগে।বয়স একে কম তার উপর তার অত্যাচার নিতে না পাইরা অজ্ঞান হয়ে যাই।ভোরে জ্ঞান আসে তখন নিজের দিকে তাকিয়ে নিজের লজ্জা লাগছে।আসতে করে কোনো রকম উঠে শাড়ি গায়ে দিয়ে গোসলখানায় গিয়া গোসল করি।শরীর ব্যাথায় অবস ছিলো।সকালে ননদ আইসা নিচে নিয়ে গেলো।শাশুড়ির আমাকে একদম সয্য হইতোনা।শশুড়ের আমাকে অনেক পছন্দ ছিলো।বিয়ের পরেরদিন থেকেই শাশুড়ির গাল মন্দ খেয়েই দিন যেতো।আমার বাবা বিয়েতে কিছু না দিলেও কয়েকটা শাড়ি দিছিলো তা সব আমার ননদ নিয়ে নেয়।আমার ননদ ও আমাকে পছন্দ করতোনা।এভাবেই যেতে লাগলো সময়।সকাল হতে শাশুড়ির মাইর বকা খেতাম আর রাত হলে স্বামীর বিছানায় ভোগের বস্তু হতাম।আমার স্বামী কোনোদিন কামনা ছাড়া আমার দিকে ফিরা তাকায় নাই।কোনোদিন আইসা দুইটা ভালোবাসার কথাও বলে নাই।আমার শশুড়দের নিজেদের কাপড়ের বিশাল ব্যবসা ছিলো।তাই আমার স্বামীর বাহিরে কাজ করতে হইতোনা।বাপের লোগে কাপড়ের ব্যবসা করতো।

দিন যত যেতে লাগলো অত্যাচার ততো বাড়তে লাগলো।আগে শাশুড়ির মাইর খেতাম এখম স্বামীও গায়ে হাত তুলে।আমার শাশুড়ি আমার নামে অভিযোগ দিলেই সে আমাকে মারতো।একবার ও শত্য মিথ্যা যাচাই করতোনা।আমাকেও কিছু বলার সুযোগ দিতোনা।আমার শশুড় এসবের বিরোধিতা করতো কিন্তু তার কথা কেউ শুনতোনা।

গরিব ঘরের বলে প্রত্যেক বেলায় খোটা শুনতে হতো।বাড়িতে হাজার ভালো কিছু রান্না হলেও আমার কপালে জুটতো ডাল ভাত।পাড়াপ্রতিবেশিই সবাই আমাকে নিচু জাত বলে অপমান করতো।

১৪বছর বয়সে যেখানে আমার বই খাতা নিয়ে পড়ার কথা ছিলো সেখানে আমি রান্না ঘরে হাত পুড়িয়ে রান্না করি।যেই বয়সটা আমার হাসি খেলার বয়স ছিলো সেই বয়সটাতে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে গেলো।আমি আমাদের ঘরের জানালা দিয়ে দেখতাম কত মেয়েরা স্কুলে যায়।তাদের দেখে আফসোস হতো।আমিওতো এভাবে স্কুলে যেতে পারতাম যদিনা আমাকে আমার বাবা বিয়ে না দিতো।একদিন সাহস করে স্বামীকে আমাকে পড়ানোর কথা বলছিলাম সেদিন সে আমাকে অনেক মারে আর বলে ঘরের বউয়ের কিসের পড়ালেখা।মাইয়া মানুষ ঘরে থাকবি কাম করবি।পইড়া কি বা**** উদ্ধার করবি।সেদিনের পর আর তাকে এই কথা বলার সাহস করিনাই।বাবার বাড়িতেও যাইতে দিতোনা আমাকে।বিয়ের পর ২বার গেছিলাম।তখন মাকে দাদিকে সব বলি দাদি সব শুনে বলে,

দাদি:”মাইয়্যা মানইষের একটু মানাইয়া চলতে হয় সংসারে।সংসার করতে হইলে এরকম একটু হইবোই।মানাইয়া চলেই সব ঠিক হইবো।”

এরপর আর কিছুই বলিনাই।মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।দেখতে দেখতে বিয়ের ১০মাস হয়ে গেলো।এর মাঝে ঘটলো এক দুর্ঘটনা।আমার শশুড় আব্বা ইন্তেকাল করলেন।শশুড় আব্বার চলে যাওয়ার পর আরো কষ্ট পাই।পুরা বাসায় এক মাত্র উনিই আমাকে আদর করতেন।শশুড় আব্বার যাওয়ার পর অত্যাচার আরো বাড়লো।আমার ননদ শাশুড়ি মিলে আমাকে অনেক অত্যাচার করতে লাগলো।আমার শরীলের সব জায়গায় মাইরের দাগ ছিলো।এতো অত্যাচার সয্য করে রোজ রাতে স্বামী নামক হায়মার অত্যাচার ও সয্য করতে হইতো।বিয়ের এতোদিনেও অনার থেকে ভালোবাসা পাইনাই।যাও পাইছি রাতের আন্ধারে বিছানায় ওনারে সুখ দিয়া।এভাবেই সব চলতে থাকে।এরপর একদিন আমি বুজতে পারি আমি মা হমু।আমার মধ্য একটা পরান আছে।এই খবর শোনার পর আমার শাশুড়ি একদম সোজা বলে দিছে।তার একটা নাতী চাই।বংশের বাত্তি নাকি নাতী।বাচ্চা পেটে নিয়াও কাজ করতাম।কোনো ফুরসত ছিলোনা।কিন্তু একটা ভালো দিক ছিলো।স্বামীর বিছানায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে হতোনা।বাচ্চা পেটে আইছে শুনার পর থেইক্কা আমার স্বামী কেমন হইয়া গেলো।রাইত কইরা বাসায় আসতো।আমি কোনো কিছু জিজ্ঞেশ করলে উত্তর দিতোনা।দেখতে দেখতে বাচ্চা প্রসবের সময় এসে পরে।একদিন সকালে অনেক প্রসব ব্যাথা উঠে।পাশের বাসার দায়ীমা আর কয়েমজন মহিলা এসে বাসায় বাচ্চা প্রসব করায়।আমার বয়স কম থাকায় অনেক রক্তক্ষরন হয়।তবে আল্লাহ বাঁচিয়ে দেন আমাকে আর আমার সন্তানকে।কিন্তু ভাগ্যে আরো কষ্ট ছিলো দেখে ছেলের জায়গায় হইলো মেয়ে।মেয়ে হয়েছে শুনে সবার মুখ কালো হয়ে যায়।শাশুড়িতো শুনা মাত্র গালিগালাজ শুরু করে দেয়।বাচ্চার প্রসবের পর শরীর খুব খারাপ ছিলো।কিন্তু সেদিকে শাশুড়ির কোনো খেয়াল ছিলোনাহ।বাড়ির কাজ সব করতে হতো সেই শরীরে।মাইয়াটারে পর্যন্ত ঠিক ভাবে খাওয়াতে পারতাম না।এর মধ্য আমি জানতে পারি আমার স্বামী পরোকীয়ায় জরিতো।যার সাথে পরোকীয়া করতো সেই মাইয়া তার বাড়ির লোকজন নিয়া এই বাড়িতে আইসা আমার স্বামীর নামের এই অভীযোগ দেয়।আমার স্বামী তার স্বীকার করে।এরপর বিচার অনুযায়ী বিয়ে করাইয়া দেওয়া হইলো তাগো।সতীনের সংসার করা শুরু করতে হইলো।আমার মাইয়া যে হইছে তাকে একবার ও ঠিক মতো দেখে নাই।আমার শাশুড়িও আমার মেয়েটাকে বুকে আগলে নেয়নাই।

দেখতে দেখতে আমার মেয়ের ৫মাস বয়স যখন তখন শুনলাম আমার স্বামীর ২য় বউয়ের বাচ্চা পেটে।আমার শাশুড়ির তাকে সেকি যত্ন।আর যত্ন করবে না কেন।কত ধনী ঘরের মাইয়া।অনেক টাকা পয়সা গহনা নিয়া এই বাড়ি আসছে।আর আমি,এই বাড়ির সবার ঝী গীরি করি।তবুও মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে এখানে পড়ে আছি।আর যাবো কই।যাওয়ার জায়গাতো নাই।বাপের বাড়ি সাফ বলে দিছে স্বমীর সাথে বিচ্ছেদ করলে তাদের কাছে জায়গা হবেনা।আর আমার মতো অসিক্ষিত মেয়ে একা কই যাবে।তাইতো মাটি কামড়ে পরে আছি এখানে।

একদিন রাতে আমার ঘরের দরজায় কেউ কড়া দেয়।মেয়ে আমার তখন দুধ খেয়ে ঘুম।আমি উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখি আমার স্বামী দাঁড়ানো।তাকে দেখে দরজা থেকে সরে আসলাম।সে রুমে ডুকে দরজা বন্ধ করে দিলো।

আমি তার দিকে তাকিয়ে বলি,

আপনি এতো রাতে এই রুমে কেন?
সাবের:কেন আমার স্ত্রীর রুমে আমার আশা কি নিষেধ নাকি।
আমি:স্ত্রী।১বছর পর মনে হইলো আমি আপনের স্ত্রী।
সাবের:দেখো যা হইছে তার জন্য আমি মাফ চাচ্ছি।আসো আমরা আবার সব আগের মতো ঠিক করে নেই।

বলেই উনি আমার কাছে আসতে নিলেন।আমি অনাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলি,

চরিত্রহীনা পুরুষ খবরদার আমারে ছুবিনা।তোর মতো স্বামী আমি চাইনা।তুই কি মনে করছস আমি বুজিনা।তুই কেন আইছস এখানে।তুই আইছস তোর শরীলের খুদা মিটাইতে।যহন আমার পেডে বাচ্চা আইলো তহন তোর শরীলের খিদা মিটাইতে অই মাইয়ার কাছে গেছিলি।আর এহন ওর পেডে বাচ্চা আইছে দেইখা আমার কাছে আইছস।তোর মতো পুরুষের মুখে থু মারা উচিত।তোরা তো পুরুষ নামের কলঙ্ক। তোর একটা মাইয়া হইছে তুই তার খোজ ও নেস নাই।কতডা পাষান তুই।তোর সংসার আর আমি করমুনা।দরকার বলে দেহ বেইচ্চা মাইয়া বড় করমু।

জানিনা আমার আজকে কি হইছিলো কিন্তু মনের সব রাগ ঝেরেদিলাম।আমার কথা শুনে সে রাগে চোখ লাল করে আমার চুলের মুঠি ধরে ইচ্ছা মতো কত গুলা মাইর দিলো।আমি চুপ করে মাইর গুলো সয্য করলাম।মাইরের সাথে অকথ্য ভাষায় গালীগালাজ করতে থাকে।একটা সময় থামলেন তিনি।মেয়ে এতো শব্দে ঘুম থেকে জেগে যায়।আমি তাড়াতাড়ি মেয়েকে কলে নেই।কিন্তু তার মাঝে সে আমার চুলের মুঠি ধরে বাড়ির বাহিরে ধাক্কা মেরে বের করে দেয়।এতো চেঁচামেচির শব্দ শুনে শাশুড়ি ননদ আর তার ২য় বউ বাহিরে আসে।তিনি তখন চিল্লায়ে বলে,

হারামজাদী তোর কত বড় সাহস তুই আমার মুখে মুখে তর্ক করস।যা দেহ বেইচ্চা মাইয়া বড় করবি কইলিনা।যা এখন তাই কর।দেহ বেইচ্চা মাইয়া বড় করিস।তোর মতো জংলা আমার ঘরে জায়গা নাই।
মুখের উপরে দরজা বন্ধ করে দিলো সে।

তারপর আপনি কিভাবে মেয়েকে নিয়ে এতো দূর আসলেন?

রিপোর্টার প্রশ্নটা করলো কুসুমকে।কুসুম চশমাটা খুলে চোখের পানি গুলো মুছে নেয়।তারপর চশমা আবার চোখে দিয়ে বলে,

কুসুম:মেয়েকে নিয়ে অতো রাতে কোথায় যাবো বুজতে পারছিলাম না।তাই রাতটা একটা মসজিদের সামনে কাটিয়ে দেই।সেই মসজিদে নামাজ পড়তে এসে ভোরে আমার সাথে দেখা হয় আমার স্কুলের প্রিন্সিপালের সাথে।তিনি আমাকে দেখে চিনতে পারে।আমাকে এখানে দেখে কারন জানতে চাইলে আমি তাকে সব বলি।সব শুনে সে অনেক কষ্ট পেয়েছিলো।সেও চায়নি আমার বিয়ে হোক এতো অল্প বয়সে।তারপর সে আমাকে তার সাথে করে ঢাকা নিয়ে আসে।ঢাকায় এসে একটা মহিলা এঞ্জিওতে আমাকে আর আমার মেয়েকে আশ্রয় দেয়।আমি সেখান থেকে কাপড়ের গার্মেন্টসে কাজ শুরু করি।মেয়েকে আসতে আসতে বড় করতে থাকি।দেখতে দেখতে কাজ করে করে টাকা জমিয়ে নিজের কাপড়ের ব্যবসা শুরু করি।রাতারাতী তা সফল হতে থাকে।আর দেখতে দেখতে আমি এই আজকের আপনাদের কুসুম গ্রুপ ওফ কম্পানির মালিক কুসুম।

রিপোর্টারঃএতো কিছুর পর আপনার পরিবার আপনার সাথে যোগাযোগ করেনি?
কুসুমঃনা আমি তাদের সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তাদের মতে আমি খারাপ মেয়ে।যে স্বামীর সাথে মানিয়ে নিতে পারিনি।তাদের মতে আমি অন্য কারো হাত ধরে চলে আসছি।আজ এতোগুলো বছরেও তারা আমার সাথে আর যোগাযোগ করেনি।
রিপোর্টারঃআপনি কি আমাদের দর্শকের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চান?

কুসুমঃহ্যা বলতে চাই।আপনারা যারা মেয়ের বাবা মা আমাকে দেখছেন তাদের কাছে আমার বিষেষ অনুরোধ,নিজের মেয়েকে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেবেননা।তার জীবনটা অল্প বয়সে নষ্ট করবেননা।যেই বয়স তর পড়াশুনা খেলাধুলার সেই বয়সে তার ঘাড়ে সংসার নামক ভোজা চাপিয়ে দেবেন না।মেয়েকে পড়াশুনা করে মানুষ করুন।তাকে বুজুন।তার ইচ্ছা গুলোকেও প্রধান্য দিন।

রিপোর্টারঃআপনার নিজের কি আরোও কিছু বলার আছে ম্যাম?
কুসুমঃহ্যা আমি শেষ কিছু বলতে চাই,,,আমি কিন্তু ২য়বার আর বিয়ে করিনি।আমি আমার মেয়েকে নিয়েই এই জীবন পার করছি।আমি ধন্যবাদ দিচ্ছি মেয়ের বাবাকে কারন সে না থাকলে কোথায় পেতাম আমি আয়রাকে আর কোথায় হতো ওকে বড় করার চ্যালেঞ্জ।আমি কিন্তু দেহ বিক্রি করে আমার মেয়েকে এতো বড় করিনি।পরিশ্রম করে আজ আমার মেয়েকে আমি এখানে নিয়ে এসেছি।আমার মেয়ে আজ ১৪ বছরে পা দিয়েছে।আমি কিন্তু তাকে এখনো পড়াশুনা করাচ্ছি।সে এখন ক্লাস নাইনে উঠেছে।আরো বড় হবে সে।আমি চাইনা আমি ১৪ বছর বয়সে যা সয্য করেছি তা আমার মেয়ে সয্য করুক।১৪ বছর বয়সে আমার জীবনটা রঙিন থাকার কথা ছিলো।কিন্তুব আমার জীবন কালো মেঘে ডেকে গেছিলো।আমি আমার মেয়েকে কিন্তু মাইয়্যা মানুষ নয় একজন সফল মানুষ হিসাবে বড় করছি।

অনুষ্টানে থাকা সবাই কুসুমের জীবন কাহীনি শুনে চুপ করে ছিলো।কেউ কেউ বা কেঁদেছিলো।অনুষ্টান শেষ করে কুসুম মেয়েকে নিয়ে গাড়িতে উঠে।চোখের চমশমাটা খুলে নিজ মনে বলতে লাগলো।

“১৪বছর বয়সে জীবন রঙিন হয়নি তো কি হয়েছে”
“এখন নিজের জীবনের পাশাপাশি মেয়ের জীবন রঙিন করছি”
“১৪বছর বয়সে মেয়েকে ঠেলে দেইনি অন্ধকারে।”

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here