হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস #পর্ব_০৬ #মোহনা_হক

#হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস
#পর্ব_০৬
#মোহনা_হক

‘দু থেকে তিনবার বলার পর রুয়াত রাজি হলো আয়াজের কথায়। হুমকিও দেওয়া হয়েছিলো মেয়েটাকে। ইচ্ছে না থাকার পরও আয়াজের কপালের ঘাম মুছে দিলো। মানুষটা কে ভয় পায় রুয়াত। আর যখন কাজটি করছিলো না কথার সাথে সাথে তখন ধমক দিয়েছে আয়াজ। নিজের মান সম্মানের কথা ভেবে রাজি হলো। সামনে একজন ড্রাইভার আছে
কিন্তু সে খেয়াল নেই মানুষটার। ‘

‘বিরক্তসুরে আয়াজ বললো-‘
-‘কথার সাথে সাথে কাজ করতে চাও না কেনো? কি সমস্যা তোমার?’

‘রুয়াত মুখটা ঘুরিয়ে জানালার কাচের কাছে নিয়ে গেলো। তার এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে কাচটা সরিয়ে দিলে ভালো লাগতো। এরকম বদ্ধ গাড়িতে উঠতে মন চায় না তার। বাহিরের বাতাস আসলে মনটা ফুরফুরে হয়ে যেতো। কিন্তু এখন তো বলা যাবে না। বলবেও বা কি করে?’

‘রুয়াত উত্তর দিচ্ছে না দেখে আয়াজ আবারও গলা ছাড়লো।’
-‘কানে ও কি শুনতে পাও না তুমি?’

‘আচমকা এই কথা শোনায় রুয়াতের চোখ বড় হয়ে গেলো। আয়াজের দিকে ফিরলো সে। মানুষটার চোখ মুখে বিরক্তিকর ছাপ স্পষ্ট। ‘

-‘জ্বী আমি কানে শুনতে পাই।’

-‘তাহলে উত্তর দিলে না কেনো? ‘

-‘দুঃখিত।’

‘আয়াজ মানলো না। রুয়াতের হাত চেপে ধরে বললো-‘
-‘আমার রাগ চরম পর্যায়ে তুলে দুঃখিত বলবেন? একদম মেরে গুম করে দিবো এমন করলে। ভালোভাবে কথা বলছি দেখে গা’য়ে লাগছে না?’

‘রুয়াত একটু খিঁচে বসলো। মাইর কে চরম ভয় পায় সে। আর এই লোকের কথাকে তো যমের মতো ভয় পায়।’

-‘পরেরবার থেকে আর এমন করবো না।’

‘আয়াজ হেসে দিলো। বোকাসোকা মেয়ের বোকা বোকা কথা। এই প্রথম আয়াজের হাসির সাথে পরিচত রুয়াত। তার মনে হলো এটা সবচেয়ে সুন্দর হাসি। রুয়াতের এরূপ চেয়ে থাকা দেখে আয়াজ হাসি বন্ধ করে দিলো।’

-‘মনে থাকে যেনো।’

‘রুয়াত জ্বী বললো। কিন্তু তার মনের কৌতূহল দূর হচ্ছে না। কোথায় যাচ্ছে সেটাই তো জানা হলো না। দেরি হলে তো তার মা চিন্তা করবে। কখনো কি কলেজ ছুটির পর কোথায় গিয়েছে নাকি। আজ নিশ্চিত তার মায়ের হাতে মা’ই’র খাওয়া লাগবে। এবার রুয়াত সাহস করে বলেই দিলো।’

-‘আমাকে কোঁথায় নিয়ে যাচ্ছেন?’

‘আয়াজ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো রুয়াতের দিকে।’
-‘তুমি কি একা যাচ্ছো নাকি? আমিও তো যাচ্ছি দেখছো না।’

-‘দেখেছি। কিন্তু কোঁথায়?’

-‘আপাতত চুপ থাকো। গেলেই দেখতে পাবে।’

‘রুয়াত চুপ হয়ে রইলো। কথাটি খারাপ লাগলো তার। কিন্তু কিছু বললো না। শুধু চুপ করে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো। গাড়ি ছুটে যাচ্ছে আপন মনে। তার নিজ গন্তব্যের দিকে। আশেপাশের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। সেদিকটায় মন তার। কিছু সময় বাদে গাড়ির কাচ খুলে দিলো আয়াজ। অবাক হয়ে পাশের মানুষটার দিকে তাকালো রুয়াত। লোকটি তাকাচ্ছে না। সিটে মাথা হেলিয়ে দিয়ে চুপ করে আছে। আবার তৎক্ষনাত চোখটা সরিয়ে ফেললো। এক চিলতে হাসি ফুঁটে ওঠলো। এখন আর খারাপ লাগছে না তার। বাহিরের ঠান্ডা বাতাস গাড়িতে ঢুকছে। মনে শান্তি শান্তি অনুভব হচ্ছে।
প্রেয়সীর হাসি খেয়াল করেছে আয়াজ। পাশে এক সুন্দরী রমণী বসে আছে। তাও আবার হাতে হাত রেখে। আর কি লাগে তার! হোক না হাত রাখাটা একজনের ইচ্ছায়। ভালো লাগাটাই হচ্ছে আসল কথা। এমন সুন্দর মুহুর্ত বারবার পেতে চায়।’

‘গাড়ি থামলো একটা লেকের সামনে। যা শহর থেকে খানিকটা দূরে। প্রেয়সীর সাথে সময় কাটানোর জন্য ভালো একটা জায়গা মনে হয়েছে আয়াজের। তাই এখানেই নিয়ে আসলো। গাড়ি থেকে নামলো। কিন্তু রুয়াত বসে আছে। সে নামছে না। আয়াজ চায় মেয়েটার সামনে রাগ না দেখাতে কিন্তু এমন কাজ কর্মে না চাইতেও রাগ চলে আসে।’

-‘তোমাকে আমি এখন কোলে করে নামাবো না সো নিজ ইচ্ছায় বের হয়ে আসো।’

‘রুয়াত লজ্জা পেলো। অচেনা জায়গায় বেশ অস্বস্থি হয় তার। তাই নামছিলো না।’
‘রুয়াত নামার পর হাতটা ধরলো আয়াজ। রুয়াত তাকালো আয়াজের দিকে। আয়াজ আজ সাদা রঙের পাঞ্জাবী পড়েছে। তাই রুয়াতের কলেজের ইউনিফর্মের সাথে মিলে গিয়েছে। জায়গাটা অচেনা আবার এসেছে এই অবস্থায়। একটুও ভালো লাগছে না তার। এখানে বেশি মানুষ না থাকায় ভালো হয়েছে নাহলে আজ তার ই’জ্জ’ত চলে যেতো।’

‘লেকের ভিতরেই একটা রেস্টুরেন্ট আছে। সেখানে সোজা ঢুকে পড়লো। কিন্তু রুয়াত অবাক। তার বোন, জাফরি, আর জিজু বসে আছে। তাদের সামনের চেয়ারে আয়াজ বসে পড়লো। তার বোন যে এখানে আসবে বা থাকতে পারে সে মোটেও ভাবতে পারেনি। বোনের কাছে এভাবে ধরা খেয়ে ভীষণ লজ্জিত। আয়াজ রুয়াতের হাত ধরে টান দিয়ে বসালো তার পাশের চেয়ারে।’

‘ইনিমা একটু মজা নেওয়ার জন্য বললো-‘
-‘রুয়াত চিনতে পেরেছিস আমায়?’

‘রুয়াত মাথা নাড়লো। কিন্তু আয়াজের রাগ হলো। ইনিমার উদ্দেশ্যে বললো-‘
-‘দেখেছেন ভাবি মুখে কথা বলেনি। ওর সমস্যাট কি সেটাই ধরতে পারলাম না। সব সময় ইশারা। আমার কপালে আসলেই জুটেছে একটা।’

‘ইনিমা কিছু বললো না। তার বোনের যে এ স্বভাব আছে সেটা ভালো করেই জানে। তাই সে চুপ থাকলো। এর মাঝে আরহাম উত্তর দিলো।’

-‘আমার শালীকা অনেক ভালো। অন্তত তোর থেকে হাজার গুণে ভালো আছে। ‘

‘আয়াজ তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো-‘
-‘তাই! ভাবি আপনি না আপনার পাশের এই আধ পাগলটা কে সহ্য করতে পারেন না?’

‘লজ্জায় আরহামের মুখটা কালো হয়ে গেলো। ভাইয়ের সাথে ভাইয়ের এরূপ তফাৎ। আয়াজের পাশে থাকা রুয়াত ফিক করে হেসে দিলো। ইনিমা তো কথায় সম্মতি দিয়ে দিয়েছে। পাশ ফিরে আয়াজ একবার তার প্রেয়সী কে দেখে নিলো। হাসছে মেয়েটা।’

‘আরহাম আর লজ্জা সইতে না পেরে বললো-‘
-‘আমি আধ পাগল এখন হইনি রে বোকা বিয়ের পর পাগল হয়েছি। তুইও আমার মতো পাগল হবি। তাই আগে আগেই শুভকামনা জানিয়ে রাখলাম।’

-‘ বিয়ের পর তোমার শালীকা পাগল হবে, আমি না।’

-‘হয়েছে সেটা দেখতেই পাবো। কিছু ওর্ডার দে। তোদের জন্য এতক্ষণ বসেছিলাম।’

‘আয়াজ ওর্ডার করলো না। ইনিমা কে এ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হলো। আয়াজ জাফরির সাথে খেলতে ব্যস্ত। একবার জড়িয়ে ধরছে তো আবার চুমু দিচ্ছে। রুয়াত তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। যা মনেহয়
আয়াজ ছোট্ট বাচ্চাদের খুব আদর করে। আর জাফরিও তার একমাত্র চাচ্চুর সাথে খেলছে। জাফরি এক একটা প্রশ্ন করছে আর আয়াজ উত্তর দিচ্ছে।’

-‘আয়াজ ইকরামুল তাহের নাকি এবার এমপি পদে দাঁড়াবে আদোও কি কথাটা সত্যি?’

‘আরহামের কথায় সবাই তাকালো তার দিকে। শান্ত কন্ঠে আয়াজ বললো-‘
-‘হ্যাঁ। ‘

-‘তুই ও তো এমপি পদে দাঁড়বি। তাহলে?’

-‘সমস্যা কোঁথায়?’

-‘তুই এভাবে শান্ত হয়ে বসে আছিস কিভাবে?’

‘আরহামের কথায় বিরক্ত হলো আয়াজ।’
-‘এখন কি অশান্ত হয়ে বসে থাকবো?’

‘আরহাম বুঝলো না আয়াজের এরূপ শান্ত হয়ে বসে থাকার কারণ।’

-‘তুই কি মারামারি করবি এবার?’

‘আয়াজ একবার রুয়াতের দিকে তাকালো। মেয়েটার মুখটা ছোট হয়ে এসেছে। পাঞ্জাবীর কলার একটু টেনেটুনে বললো-‘

-‘সে যদি ওরকম কিছু করে তখন ভেবে দেখবো। আর করলে মারামারির জন্য একটুও হাত কাঁপবে না।’

-‘কিছু ভেবেছিস ইলেকশন নিয়ে?’

-‘এখনো অনেক সময় আছে ভেবে দেখার।’

‘আরহাম কথা বাড়ালো না। তার ভাই অতাত্ত্বিক সাহসী। নাহলে কি আর এরকম প্রফেশনে টিকে আছে! আয়জের সুনাম বেশি তাই জিতার সম্ভাবনা ও বেশি৷
রুয়াতের মনটা একদম ছোট হয়ে এলো। দুশ্চিন্তায় ভালো লাগছে না। কিছুদিন এই বিষয়টা ভুলে গেলেও আবার নাড়া দিচ্ছে মনের ভিতর। রুয়াতের কাছে রাজনীতি মানে মরামারি ,খুন, হানাহানী। এর ভালো কিছু আছে বলে মনে হয় না তার। আয়াজের ও তার ভবিষ্যৎ কি? কেমন হবে আসলে? একটু একটু করে মেনে নেওয়া শুরু করেছে সে। যদি এর আগেই তার বিশ্বাস ভরসা সব ভেঙে যায়? তাহলে? ‘

‘খাওয়া শেষ করে আরহাম আর ইনিমা হাঁটছে। রুয়াতের কোলে জাফরি বসে আছে। আর আয়াজ কথা বলছে ফোনে। হঠাৎ আয়াজ রুয়াতের হাতটা ধরলো। রুয়াত আয়াজের দিকে তাকালো। হাতের উল্টো পিঠ তার অধর বরাবর রাখলো। যার কারণে আয়াজ কথা বললে বারংবার স্পর্শ হয় হাতে। মুখ বুজে সহ্য করে নিলো রুয়াত।’

‘আয়াজের কথা বলা শেষে ফোন কেটে দিলো। রুয়াতের কোল থেকে জাফরি কে এনে তার কোলে বসালো। কিন্তু রুয়াতের হাত ছাড়লো না।’

‘জাফরির মাথার চুলগুলো ঠিক করে দিতে দিতে বললো-‘

-‘জাফরি তুমি কাকে বেশি ভালোবাসো? আমায় না তোমার মিম্মিম কে?’

‘রুয়াত খুব আগ্রহী হয়ে তাকিয়ে আছে জাফরির দিকে। নিশ্চয়ই জাফরি তার নাম বলবে না তার চাচ্চুর সামনে। কারণ আয়াজ জাফরিকেই বেশি আদর করে।’

‘জাফরি হেসে দিয়ে বললো-‘
-‘দুজনকেই ভালোবাসি। ‘

‘আয়াজ জড়িয়ে ধরে বসে রইলো বাচ্চাটা কে। এই কথা আয়াজ জাফরিকে আগেই শিখিয়েছে। বলা হয়েছে তার মিম্মিমের সামনে জিগ্যেস করলে বলবে দু’জনকেই। কোনো কারণেই তার প্রেয়সীর মনটা ছোট করবে না সে।’

‘জাফরি দৌড়ে চলে গেলো তার বাবা মায়ের কাছে। আয়াজ তার হাত একটা হাত রুয়াতের কাঁধে রাখলো।’

-‘কতো চুপ থাকতে পারো তুমি?’

‘রুয়াতের থেকে কোনো রেসপন্স পেলো না। আবার ও বললো-‘
-‘কথা বলো। ‘

-‘জ্বী।’

-‘আর কিছু বলতে পারো না? শুধু জ্বী জ্বী।’

‘রুয়াত অস্পষ্ট স্বরে বললো-‘
-‘কি বলবো?’

‘আয়াজ রুয়াতের কাঁধে নিজের মাথাটা ফেলে বললো-‘
-‘তুমি তোমার অধর আমার গালে ছুঁয়ে দিয়ে শুধু বলবে আমি আপনাকে ভালোবাসি। শুধু আপনাকেই।’

‘রুয়াতের আর সহ্য হলো না আয়জের মাথাটা সরিয়ে দিলো।’

-‘এসব ভালো লাগছে না।’

‘আয়াজ হেসে দিলো। রুয়াতের গালে আলতো করে অধর ছুঁয়ে দিয়ে বললো-‘
-‘বলেছিলাম তুমি আমায় তোমার ভয়ংকর প্রেমিক হিসেবে দেখবে। এটা ছিলো আমার দেওয়া তোমাকে প্রথম ভালোবাসা। ‘

#চলবে…
[আসসালামু আলাইকুম। ব্যস্ততার কারণে পার্টটা একটু ছোট হয়েছে। সামনে তো ঈদ বুঝতেই পারছেন। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here