হৃদপিন্ড,পর্ব-৩১,৩২

হৃদপিন্ড,পর্ব-৩১,৩২
জান্নাতুল নাঈমা
পর্ব-৩১

মুসকানকে রান্নাঘরে কাজ করতে দেখে নদী চেচামেচি শুরু করে দিলো।
নাজমা চৌধুরী এসে বললো,
— আরে রাগারাগি করিস না। দাদু ভাইয়ের খাবাড় বানাচ্ছে। তাঁর আবার গিন্নির হাতের খাবাড় ছাড়া মুখে খাবাড় রুচে না।

মুসকান বেশ লজ্জা পেয়ে গেলো।
কাজের মহিলা ফিরোজা খাতুন মুচকি হাসলো।
তা দেখে মুসকানের গাল দুটো লালে লাল হয়ে গেলো।

— ওহ! তা ঠিক আছে। ইমনের কাজ ছাড়া আর একটা কাজ ও মুসকান করবে না।
এতো বড় বাড়িতে কাজের লোকের অভাব নেই তাঁরাই সব করবে। ওর এখন সংসারের দায়িত্ব নেওয়ার কথা নয়। এখন ওর ঠিকভাবে পড়াশোনা করা উচিত।

— মামনি কাজ করতে আমার ভালোই লাগে।

— চুপ করো তুমি। তুমি এখনো ছোট এ বাড়ির সব থেকে ছোট সদস্য তুমি। তোমার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তোমার মামনি আছে। মামা আছে, ইমন রয়েছে।

মুসকান লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে কাজে মনোযোগ দিলো।
,
ডায়নিং টেবিলে সকলকেই একসাথে খেতে দিয়েছে।
মুসকান ইমনের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো নদী জোর করে তাঁকে ইমনের পাশের চেয়ারে বসিয়েছে।
সবাই এলেও ইভান, সাজিয়া,রিতিশা আসেনি।
ইভান ঘুমাচ্ছে, আর রিতিশা ব্যাগপএ গুছিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছে।
সাজিয়া পিছন পিছন আসছে আর বলছে,,,

— মা আমার কদিন পর অনুষ্ঠান এই কটাদিন না হয় থেকে যা।

— মামনি প্লিজ আমার খুব ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে।
এছাড়া নেক্সট উইকে আমি বাবা-মার কাছে ফিরে যাচ্ছি। যাওয়ার আগে দেখা করে যাবো।

সবাই ওদের দিকে চেয়ে আবার খেতে মনোযোগ দিলো।
ইয়াশফা বললো,– আপি আজি চলে যাচ্ছো।
প্লিজ আর কটা দিন থেকে যাও না। আমরা অনেক মজা করবো।

রিতিশা নিচে এসে দাঁড়ালো,,,
— হ্যাঁ তুই তো বলবিই তুই যে আমার নিজের বোনের থেকেও বেশী ভালোবাসিস। কিন্তু এ বাড়িতে অনেকেই চায় না আমি এখানে থাকি তাই চলে যাচ্ছি। কিন্তু আমি যাওয়ার আগে দেখা করে যাবো তোর সাথে সেই সাথে তোর বার্থ ডে গিফট টাও দিয়ে যাবো।

ইয়াশফা খাওয়া ছেড়ে ওঠে গিয়ে রিতিশাকে জরিয়ে ধরলো। রিতিশাও ইয়াশফাকে আদর করে কপালে চুমু খেলো।

— দাদী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো তা মেয়ে যাবে যখন কটা খেয়ে যাও।

রিতিশা দাদীর তাচ্ছিল্যের হাসি দেখে মনে মনে বললো,
— এই হাসি ফুরানোর দিন এলো বলে।
ইমন মুসকানের দিকে চেয়ে মনে মনে হাসলো।
সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলো রিতিশা।
,
ইমন রেডি হচ্ছে মুসকান তাঁর পাশেই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। গ্লাসে পানি এগিয়ে দিয়ে বললো,
— কাল একটু কলেজ যেতে হবে আপনি যাবেন সাথে?

ইমন পানিটা খেয়ে গ্লাস হাতে দিয়ে বললো,
— সময় হবে না।
ইমন বেরিয়ে গেলো মুসকান মুখটা ভাড় করে বসে রইলো।
,
ইয়ানা,ইয়াশফা, নিপ্রা, নিলয় বসে আড্ডা দিচ্ছে।
মুসকান ও নিচে নেমে এলো। অভ্র বাইরে ছিলো সেও চলে এলো। তাঁদের আড্ডা টাও বেশ,জমে ওঠলো।
ইয়াশফা এতোদিন মুসকান কে পছন্দ না করলেও
যখন থেকে শুনেছে মুসকান তাঁরই ফুপুর মেয়ে তখন থেকেই মুসকানের ওপর সব রাগ চলে গেছে।
ভাবী হিসেবে সেও মেনে নিয়েছে মুসকান কে।
ইয়াশফার আচরনে ইয়ানা,মুসকান দুজনই অবাক খুশিতে চোখে পানি এসে গেলো মুসকানের।

নাদী আর নাজমা চৌধুরী ড্রয়িং রুমে তাঁদের সকল ছেলেমেয়েদের একসাথে দেখে তৃপ্তি পেলো ভীষণ।

— ইভানটাই আলাদা হলো সকলের থেকে।
ছেলেটা তো আমাদেরই বংশধর। মায়ের কুশিক্ষার জন্য ছেলেটা আজ এমন হয়েছে। সব ভাই বোনরা যেখানে এক সেখানে ইভান কেনো আলাদা হবে।

নদীর আফসোস দেখে নাজমা চৌধুরী বললেন,

— তুই আফসোস করিস কেনো? দেখিস একদিন বৌমারও পতন হবে। বৌমাই আফসোস করবে ছেলেকে সুশিক্ষা দিতে না পারার জন্য।

— মা আমি চাই আমার ভাই, বোন,আমার ছেলেমেয়ে রা সারাজীবন একে অপরের পাশে থাকুক।
সকলের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে ওঠুক।

— তোর আমার চাওয়াতে কি হবে। যে জন্ম দিছে সেই তো ছেলেটার মন বিষিয়ে দিছে এই বিষ উপরওয়ালা ছাড়া কেউ তুলতে পারবে না।
,
সেদিনের সেই মারটা আজো ভুলতে পারেনি ইভান।
সেদিনের পর প্রতিটা রাত সে যন্ত্রণায় ছটফট করেছে। বাড়ির ড্রয়িং রুমে যন্ত্রণায়,সারারাত কাতরিয়েছে অথচ কেউ তাঁর পাশে আসেনি।
ইমন চৌধুরী যদি তাঁকে নিজের ভাই মনে করতো তাহলে এভাবে আঘাত করতে পারতো না।
সৎ ভাই সৎ ভাই ই হয় সে কোনদিন আপন হয় না।
বিছানায় বশে রাগে ফুঁসছে আর ভেবে যাচ্ছে ইভান।
আজো সে ঘুমাতে পারে নি সারারাত ছটফট করেছে। এই ছটফটানি থেকে বাঁচতেই সেদিনের কথা ভুলে থাকার জন্যই দেশের বাইরে চলে গিয়েছিলো। কিন্তু এ বাড়ি আসার পর মুসকান কে দেখো আবারো সেই যন্ত্রণা টা তীব্র হয়ে গেছে।
তাঁর বাবা-মা, বোন ছাড়া এ বাড়ির কেউ তাঁকে ভালোবাসে না। ঘরে, বাইরে সবাই শুধু ইমন ইমন করে। এখন এসেছে মুসকান।
ইমন, মুসকান। ইমন, মুসকান।
এই দুটো নাম আমি মুছে দিতে চাই।
ইয়েসস,,,সব ধ্বংস করে দিবো আমি।
একরামুল চৌধুরীর ছেলে শুধু ইমন চৌধুরী নয়।
ইভান ও অথচ ইভানের কোন অস্তিত্বই নেই।
মা ঠিক বলে সব ঐ ইমন চৌধুরীর কার্সাজি।
সব নিজে দখল করে নিচ্ছে এক সময় ঠিকই আমাদের ধূলিসাৎ করে দিবে।
আমি বেঁচে থাকতে এটা হতে দিবো না ইমন চৌধুরী।
তোমাকে হারানোর মন্ত্র একটাই, তোমাকে নিঃশ্বেস করার মন্ত্র একটাই তা হলো মুসকান কে আঘাত করা।
তুমি শুধু আমার ক্ষতি করো নি তুমি আমার আরেক বোনের জীবনও নষ্ট করেছো আর তাঁর শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে মি.ইমন চৌধুরী।
,
অফিস যেতে না যেতেই ইমনের পার্সোনাল এসিস্টেন্ট রিতিয়া হ্যান্ড ব্যাগ থেকে আয়না বের করে নিজেকে দেখে নিলো। সব ঠিকঠাক আছে দেখে নিয়েই ইমনের সামনে গিয়ে বললো,,,

— গুড মর্নিং স্যার।

— গুড মর্নিং।

ইমনের পিছন পিছন যেতে লাগলো রিতিয়া।
ইমনের মুখের এই গুড মর্নিং শোনার জন্যই সে এক ঘন্টা আগেই অফিস চলে আসে।
কোন ভাবেই এই জিনিসটা সে মিস করতে চায় না।
তাঁর ঘরে বউ থাকুক তাতে তাঁর কষ্ট নেই, সারাদিন যেটুকু সময় অফিসে ইমনের সঙ্গে থাকে এইটুকুতেই সে স্বর্গ সুখ পায়। শুধু মাএ ইমনের জন্যই নিজের বাবার এতোবড় বিজনেস রেখে এখানে পি এ হিসেবে জয়েন করেছে। ইমনের পার্সোনাল এসিস্টেন্ট সে যা নিয়ে তাঁর গর্বের সীমা নেই।
ব্যাক্তিগত জীবনে তাঁকে প্রত্যাখান করলেও বিজনেস জীবনে প্রত্যাখান করতে পারেনি ইমন।

ইমন গিয়ে নিজের চেয়ারো বসলো।
রিতিয়া বেশ খুশি হয়ে বললো,,,

— স্যার এবারেও তো আমরা সকল স্টার্ফ রা মিলে আপনাদের অনুষ্ঠানে যাচ্ছি তাইনা।

ইমন গম্ভীর চোখে চেয়ে বললো,

— বাবা সবাইকে ইনভাইটেশন কার্ড দিয়েছে।
সো অহেতুক কথা-বার্তা না বলে কাজে মন দিন।

রিতিয়ার হাসি মুখটা চুপসে গেলো।
নিজেকে ঠিক রেখে কাজে মন দিলো সে।
,
পুরো বাড়িতে শুরু হয়ে গেলো অনুষ্ঠানের তোরজোর। আগামীকালই অনুষ্ঠান ।
সকল আত্মীয় -স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীদের নিয়েই অনুষ্ঠিত হবে এই অনুষ্ঠান। বাংলা নববর্ষকে স্বাগত,জানাবে চৌধুরী পরিবার সহ আশে পাশের সকল পরিবারের সদস্যরাই।
বিশাল বড় বাড়ি হওয়া সত্বেও অসংখ্য মানুষের রমরমা শুরু হয়ে গেলে এ বাড়িতে পা ফেলার জো থাকে না।
ইমন এই দিন নিয়ে সুন্দর, রোমান্টিক কিছু পরিকল্পনা করে রেখেছে। যেহেতু কটা দিন সময় পেয়েছে তাই সেই দিনগুলো সে তাঁর মুগ্ধময়ীর মুগ্ধতায় ডুবে থাকতে চায়।
তাঁর চোখে তাঁর মুগ্ধময়ীর মরন দেখতে চায় খুব করে। কাউকে না জানিয়েই সে তাঁর বাড়িতে ব্যাবস্থা করে ফেলে, প্ল্যান,,, হুট করেই মুসকান কে নিয়ে উধাও হয়ে যাবে।

“কিছু প্ল্যান কারো জীবন থেকে অভিশাপ মুক্ত করে তো কারো জীবনে অভিশাপ বয়ে আনে”

ইমন নিজে গিয়ে চারজনের জন্য একি রকম ড্রেস কিনে নিয়ে এসেছে।
যেহেতু মুসকান সেলোয়ার-কামিজ ছাড়া অন্য ড্রেসআপ পড়ে না সেহেতু চারজনের জন্যই সেলোয়ার-কামিজ কিনে টেইলার্স থেকে বানিয়ে কমপ্লিট করে নিয়ে এসেছে। সাথে মুসকানের জন্য একটা পারপেল কালারের সিল্ক শাড়ীও কিনেছে যা সে সকলের আড়ালে নিজের কাছে রাখলো।
শাড়ীর সৌন্দর্যে তাঁর মুগ্ধময়ী কে একা দেখতে চায় সে।
,
ইয়ানা,ইয়াশফা,নিপ্রা , মুসকান চারজন একি ড্রেসআপে নিচে নেমে এলো।
হলুদ রঙের জরজেট থ্রিপিস পরিহিত চারজনকেই বেশ সুন্দর লাগছে।
ইমন চারজনকে দেখেই বাঁকা হাসলো।
চারজনের মধ্যে শুধু একজনের মাথায়ই কাপড় দেওয়া যাকে ঠিক পুতুলের মতো লাগছে।
“পুতুল বউ ” ইমনের মুগ্ধময়ী।
,
কিছুক্ষনের মধ্যেই অফিসের সকল সদস্যরাই চলে এলো। সকলেই ইমনের সাথে হ্যান্ডশেক করলো।
রিতিয়া ইমনকে দেখে আবারো ক্রাশ খেয়ে গেলো।
নিজের আবেগটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলো না।
উত্তেজনার বসে দৌড়ে গিয়ে স্যার বলেই গালে গাল ছুঁয়িয়ে হাগ করলো।
ইমন দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,
— মিস রিতিয়া বিহেইভ ইউর সেল্ফ।

রিতিয়া জিভে কামড় দিয়ে ওঠে পড়লো।

— সসরি স্যার আসলে আপনাকে যা লাগছে জাষ্ট অসাধারণ। আপনি একদম তামিল হিরোদের মতো না না তাঁর থেকেও বেশী।

ইমন বিরক্তি নিয়ে ডানপাশে ঘুরতেই হকচকিয়ে গেলো।
মুসকানের চোখ দুটো দিয়ে যেনো এবার বিস্ফোরণ হবে। গাল দুটো ফুলিয়ে কড়া চোখে চেয়ে আছে সে।
রিতিয়া তাঁর প্রশংসা করতেই থাকলো।
ইমন আস্তে করে সেখান থেকে সরে গিয়ে দিহান কে ফোন করলো।
,
ওই মেয়েটা কে ওনাকে জরিয়ে ধরেছিলো।
আর ওনিও কিছু বললো না। ওনি তো অফিসের লোকদের সাথে এসেছে। তাহলে ওনিও কি অফিসে জব করে?? অফিসে জব করলে ওনাকে জরিয়ে ধরলো কেনো?? আর কেউ তো এমন করেনি।
আর ওনিও কিছু বললো না রাগ,অভিমান নিয়ে মুসকান সকলের মাঝ থেকে চলে গেলো।
বুকে ফেটে কান্না আসছে তাঁর। অন্য একটা মেয়ে ইমনকে জরিয়ে ধরেছে তা সে সহ্য করতে পারছে না। খুব কষ্ট হচ্ছে তাঁর মন চাচ্ছে মেয়েটার চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলতে কিন্তু এতো লোকের ভীড়ে কিছু করতেও পারবে না । রুমে বসে সমানে কেঁদে যাচ্ছে।
ইমন সারাবাড়ি মুসকানকে খুঁজতে খুঁজতে হয়রান।
সায়রী,দিহান এসেছে সুপ্তি মুসকানের কাছে যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে।

সব জায়গায় খোঁজা শেষে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো ইমন।
রুমে ঢুকতেই কারো ফুঁপানির আওয়াজ ভেসে এলো। তাঁর আর বুঝতে বাকি রইলো না তাঁর মহারানী কাঁদছে।
লাইট অন করে মুসকানের দিকে এগিয়ে গেলো।
এক হাত পকেটে রেখে গম্ভীর গলায় বললো,,,

— এখানে কি হচ্ছে।

মুসকান ইমনের কথা শুনেও শুনলো না নাক টেনে টেনে কাঁদতে লাগলো।

ইমন নিচু স্বরে একটা ধমক দিয়ে বললো,,,

— কি ব্যাপার বোকার মতো কাঁদছো কেনো??

মুসকান অভিমানে আরো জোরে কেঁদে ফেললো।

— হ্যাঁ আমি তো বোকাই। বোকা বলেই তো আমার স্বামীকে অন্য মেয়েরা এসে জরিয়ে ধরে।
ঐ মেয়েটা আপনার অফিসে কাজ করে তাইনা।
তাই তো আপনি সারাদিন অফিসে থাকেন।
আর কলেজে যাওয়ার সময় ও আপনার হয় না।
সেদিন গার্ডিয়ান দের নিয়ে মিটিং হলো আপনি যান নি। অফিসে কাজ ছিলো, থাকবে নাই বা কেনো?
অমন সুন্দরী মেয়েরা যেখানে আছে কাজ তো থাকবেই। এসে আবার জরিয়ে ধরে বলেই শব্দ করে কাঁদতে লাগলো।

ইমনের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে রিতিয়ার ওপর।
মুসকানের ওপর ও রাগ হচ্ছে এই সাধারণ বিষয় নিয়ে কেমন কান্না জুরেছে।

— স্টপ ইট! কান্না থামাও বলছি নিচে চলো সায়রী এসেছে।

মুসকান আরো জোরে কেঁদে ফেললো।

— আপনি আমাকে ধমক দিচ্ছেন। আর ঐ মেয়েকে কিছুই বলেননি ঐ মেয়ে আপনাকে জরিয়ে ধরার পরও আপনি শান্ত ছিলেন। হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো মুসকান।
ইমন তারাতাড়ি গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিলো।
কেউ এসে পড়লে বাজে পরিস্থিতি তৈরী হবে।
বিছানায় এসে মুসকানের পাশে বসলো ইমন।
একহাত দিয়ে টেনে নিজের অনেকটা কাছে নিয়ে এলো। চোখের পানি গুলো আলতো হাতে মুছতে মুছতে বললো। এততো জেলাস হওয়ার কিছু নেই।
ঐ মেয়েটা অমনই আর আজ হুট করে এমনটা করে ফেলেছে। এমনিতে ধারে কাছে আসার সাহস করেনা কাজ ছাড়া। যা হয়েছে ঠিক হয়নি আমার বউকে কষ্ট দেওয়া একদম উচিত হয়নি ওর।
আর কখনো হবে না ওকে ক্ষমা করে দাও।
মুসকান ইমনের দিকে রাগি চোখে তাকালো।
— ওর হয়ে আপনি ক্ষমা চাইছেন কেনো।
আপনার কিসের দায় ওর প্রতি।

ইমনের রাগ ওঠে গেলো। কাউকে মানানোর বিষয় টা সে জানে না বুঝে না, আর না মানাতে চায়।
ওকে মানাচ্ছে তবুও এমন প্যাচাচ্ছে।

— চুপ এততো বেশী বুঝো কেনো।
যা বলছি তাই শুনো চুপচাপ নিচে আসো।

মুসকান মুখ ফুলিয়ে আবারো কাঁদতে শুরু করলো।
আওয়াজ যেনো এবার চার দেয়াল ভেদ করে বাইরে চলে যাবে।
ইমন উপায় না পেয়ে মুসকানের পিঠে শক্ত করে চেপে নিজের কাছে নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।
অনেকক্ষন পর ঠোঁট জোরা ছেড়ে একহাতে বুকে জরিয়ে আরেক হাতে চোখের পানি মুছে দিলো।
মুসকান জোরে শ্বাস নিচ্ছে সেই শ্বাস বাড়ি খাচ্ছে ফুঁপানি তে।
ইমন কপালে চুমু খেলো তারপর গালে তারপর ঠোঁটে আলতো ঠোঁট ছুয়িয়ে বললো — বোকার মতো কাঁদার

কিছু হয় নি মুসকান।
আমাকে শান্ত থাকতে দাও। আমাকে ক্ষেপিও না তাহলে কিন্তু নিজে ঠিক থাকতে পারবে না।
কি হয়েছে হুম,,,তোমার মানুষ টা তোমারই আছে।
কারো সাধ্য আছে তোমার মতো বাঘিনীর থেকে আমাকে কেড়ে নেওয়ার।

মুসকান কিছুটা শান্ত হয়ে ওঠে সোজা হয়ে বসলো।

— আপনি একটু চোখ দুটো বন্ধ করুন।
কান্নামিশ্রিত গলায় কথাগুলো বললো মুসকান।
ইমন চোখ ইশারা করে বললো,,,

— কেনো??

মুসকান কেঁদে দিলো।

ইমন এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করলো।
মুসকান দ্রুত বাথরুম গিয়ে মগে পানি হাতে তয়ালে নিয়ে এলো। তয়ালে ভিজিয়ে চিপে ইমনের গালে মুছে দিতে লাগলো।
ইমন হতভম্ব হয়ে মুসকানের দিকে তাকালো।
হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না।
“কখনো মনে হয় মেয়েটা খুব ম্যাচিওর ”
“কখনো মনে হয় একেবারেই আনম্যাচিওর”
“একটা অবুঝ নিষ্পাপ প্রান যেনো এখন তাঁর সামনে রয়েছে ”
গালে মুছা শেষে অনুরোধ স্বরে বললো এবার এই পোশাকটা পাল্টে নিন ।

— এততো হিংসে কোথায় ছিলো হুম।

— জানিনা আপনি পোশাক পাল্টে নিচে চলে আসুন।

মুসকান যেতে নিতেই ইমন মুসকানের একহাতে ধরে হেচকা টান দিয়ে নিজের কাছে এনে কোলের ওপর বসিয়ে গাল গাল ছুঁয়িয়ে বললো,,,

— ইমন চৌধুরী কে আদেশ করছো??
আদেশ তো মানবোই কিন্তু আমায় রিটার্ন কিছু দিতে হবে।

মুসকান শিউরে ওঠলো বুকের ভিতর ধুরুধুরু করতে লাগলো তাঁর। মিনমিনিয়ে বললো কি??

কানের কাছে নাক ঠেকিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ফিসফিস করে বললো,,,

— আজ রাতেই টের পাবে।

মুসকান চোখ দুটো বড় বড় করে বললো,,,

— কিহ,,,

ইমন মুসকান কে ছেড়ে দিয়ে বললো,,,

— পোশাক পাল্টাবো কাবার্ড থেকে পোশাক বের করে আমার হাতে দিয়ে নিচে যাও ওরা ওয়েট করছে।

মুসকান কিছু প্রশ্ন করতে তাকাতেই ইমন চোখ গরম করলো।
তা দেখে সে মাথা নিচু করে কাবার্ডের দিকে এগিয়ে গেলো।
ইমন বাঁকা হাসলো।
,

চলবে………

হৃদপিন্ড
জান্নাতুল নাঈমা
পর্ব-৩২

দিহান, ইমন ছাদে আড্ডা দিচ্ছে।
সাথে আরো কয়েক জন রয়েছে।
মুসকান সহ সকলেই নিচে। নদী আজ সকলের সামনে মুসকান কে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে তাঁর ছোট বোনের মেয়ে এবং ইমনের বউ হিসেবে।
রিতিয়া সমানেই ছিলো সব শুনে তাঁর চোখে পানি চলে এলো।

— ইশ আজ এই জায়গায় আমার থাকার কথা ছিলো। ইমন তুমি যদি একটা বার আমায় গ্রহন করে নিতে আজ এই দিন দেখতে হতো না।
কি আছে এই মেয়ের মাঝে যা আমার মাঝে নেই??
কেনো একটা বার সুযোগ দিলে না আমায়।
শুধু তোমার ফুপুর মেয়ে বলেই তুমি তাঁকে গ্রহন করে নিলে তাইনা,,,
চোখের পানি মুছে সকলের আড়ালে চলে গেলো রিতিয়া।
,
খাওয়া-দাওয়া শেষে সকলেই বসে আড্ডা দিচ্ছে।
এমন সময় ইয়াশফার ফোনে ফোন এলো ইভানের।
— হ্যাঁ ভাইয়া বল??

— কিছুক্ষন পর মোড়ের দিকে আয় তোদের ফুঁসকা খাওয়াবো সবাই আসবি কিন্তু। চারজনই চলে আয় কেমন।

— তুই কোথায় ভাইয়া??

— এই তো বাসার সামনে আছি।

— ওও থ্যাংকিউ ভাইয়া। এতো সুন্দর একটা ব্যবস্থা করার জন্য রাতের বেলা বাইরে গিয়ে ফুসকা খাওয়ার মজাই আলাদা আমি সবাইকে বলছি।

ইভান বাঁকা হাসলো,,, জনি মুখে মাস্ক পড়া।
জনিকে নিয়েই বাড়ির ভিতরে চলে এলো ইভান বাকি সবাই বাড়ির আশেপাশে রয়েছে।
ড্রয়িং রুমে সকলেই একসাথে বসে আছে।
মুসকান নদীর পাশে বসেছিলো।
ইয়াশফা ইয়ানা,নিপ্রাকে খুঁজছে কিন্তু পেলো না।
সোফার কাছে এসে মুসকান এর পাশে বসে বললো
শুনো আমরা কিছুক্ষন পর ফুসকা খেতে যাবো।
ওরা দুজন কোথায়??
ইভান মুসকানের দিকে আঙুল দেখিয়ে জনিকে দেখালো। জনি রহস্যময় হাসি হেসে ইভানকে নিয়েই বেরিয়ে গেলো।

— কাজ করা মাএই চলে যাবি ভিসা রেডিই আছে আমি গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করবো নিজ দায়িত্বে তোদের পৌঁছে দিবো নো টেনশন।

— মেয়েটা কে কি করবো??

— মেরে দিবি।

— কি বলছিস খুন করবো??

— আচ্ছা যা কষ্ট করে আমাদের এটা করতে হবে না।
যা হবে নিজেই নিজেকে শেষ করে দেবে।
,
রাত দশটা ছুঁই ছুঁই। দিহান সায়রী সহ ইমনের সব বন্ধু -বান্ধব ফিরে গেলো।
রিক্তা সমানে ফোন করে যাচ্ছে ইমনকে।
ইমন ফোন রিসিভ না করে কেটে দিলো।
নদীকে ফোন করে কিছু একটা বলে বাইরে গাড়িতে গিয়ে বসলো।
,
— মামনি আমি কোথায় যাবো?? তাহলে নিপ্রা আপুকেও যেতে বলো, ইয়াশফা,ইয়ানা আপু ওরাও আসুক।

— মুসকান,,,এমন বায়না করো না তুমি তারাতারি বের হও। ছেলেটা ওয়েট করছে তো। আবার রেগে যাবে তখন কেমন হবে।
বাড়িতে এতো মেহমান আজ তোমাদের রুম ফাঁকা থাকলে আমরা সেখানে থাকবো বাকি মেহমান রা এই রুমে থাকতে পারবে। এটাকে বলে সেক্রিফাইস।
এটুকু সেক্রিফাইস তো তোমার মতো লক্ষী মেয়ে করতেই পারে তাইনা।
বুঝিয়ে শুনিয়ে নদী মুসকান কে পাঠিয়ে দিলো।
,
ইয়াশফা সবাইকে খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত।
অবশেষে সবার দেখা মিললো শুধু মুসকান বাদে।

— ভাইয়া তো মুসকানকে এমনিতেও দেখতে পারেনা।
থাক আমরা তিনজনই যাই।
চলো,চলো সবাই ভাইয়া ওয়েট করছে ফুসকা খেতে যাবো আমরা।

নিপ্রা বললো,,,

— মুসকান কোথায়?? ইয়ানা ওকে ডেকে নিয়ে আসসো।
ইয়াশফা বললো,,,
— থাক এমনিতেও ইভান ভাইয়া ওকে তেমন পছন্দ করেনা। আর দাদা ভাই ও হয়তো মুসকান কে বেরুতে দিবে না চলো আমরাই যাই। বড় জানলে আমাদেরও বেরুতে দেবেনা।
,
ইভান ইয়াশফাকে ফোন করে বললো,,,
— আমি একটা কাজে আটকে গেছি তোরা ফুঁসকা খেয়ে বাড়ি চলে যা। আর শোন বাড়ি গিয়েই আমাকে একবার ফোন করে দিবি।

— আচ্ছা।
,
— শোন ওখানে কিন্তু আমার বোনরা রয়েছে যাকে দেখিয়েছি তাঁকে ছাড়া অন্য কারো গায়ে যেনো টোকাও পড়ে না তাহলে জানে মেরে দিবো।

— আরে সোফায় বসা মেয়েটাই তো তাইনা চিন্তা করিস না সব ঠিক ঠাক হয়ে যাবে।

,
মুসকান মুখ টা গম্ভীর করে গাড়িতে বসে আছে।
ইমন তাঁর দৃষ্টি সামনের দিকে স্থির রেখে ড্রাইভ করছে।
বেশ বুঝছে মুসকান এভাবে নিয়ে আসাটা মোটেই পছন্দ করেনি।

— এনি প্রবলেম???

আড় চোখে একবার চেয়ে মুখটা গম্ভীর করে জিগ্যাস করলো ইমন।

— আপনি কোথায় যাচ্ছেন এতো রাতে?

— আমার বাড়ি। আজ ও বাড়ি অনেক মানুষ রাতে ঘুমাতে সমস্যা হতো। এছাড়াও আজকের দিন টা আমি মাটি করতে চাই না।

— তাহলে আপনিই যেতেন অভ্র, ভাইয়া, নিলয় ভাইয়াকে নিয়ে যেতেন আমাকে কেনো??

ইমন কড়া চোখে একবার চেয়ে বললো,,,

— আমি কি করবো না করবো তোমার থেকে শুনে করতে হবে। মুখটা এমন করে রেখেছো কেনো?
কি সমস্যা হচ্ছে তোমার??

মুসকান মাথা টা নিচু করে ফেললো।

— ওদের সাথে থাকলে মজা হতো।
কতো গল্প করতে চেয়েছি আজ।

ইমন বাঁকা হাসলো।
কিছু বললো না আর।
,
রাত এগারোটায় ইমন মুসকান পৌঁছালো তাঁদের বাড়িটায়। ইমন তাঁর ফোন বের করে অফ করে দিলো। আজকের রাতটায় সে আর কোন দিকে,কোন কাজে মন দিতে চায় না।
আজ রাতটা পুরোটাই সে তাঁর মুসকান কে দিতে চায় এবং মুসকানের থেকেও পুরোটা সময় নিয়ে নিতে চায়। বাসার কেউ ফোন করবেনা, যেহেতু এতো বড় বিজনেসম্যান কাজের জন্যই অনেকে ফোন করবে তাই সে রাতের জন্য ফোনটা অফ রাখলো।
কাজ ছাড়া কোন জরুরি ফোন আসবে না সিওর।

ভিতরে আসতেই মুসকান চমকে গেলো রিক্তা সহ আরো কয়েকজন কে দেখে।
রিক্তা দ্রুত মুসকান কে টেনে নিয়ে এক রুমে চলে গেলো। ইমনের কেনা শাড়িটা পড়িয়ে দিয়ে চুলটা বেঁধে দিলো।
মুসকান এসবের কিছুই বুঝছে না। আর না কিছু জানতে চাইলে কেউ বলছে,,,
সব শেষে রিক্তা সহ সকলেই বিদায় নিয়ে গেলো।
যাওয়ার আগে সবাই মুসকানকে বেষ্ট অফ লাক জানিয়ে গেলো। মুসকানের এবার রাগ হচ্ছে ভীষণ রুম ছেড়ে বেরুতে নিবে তখনি ইমন এসে আলতো করে হাতটা চেপে ধরে সামনে এগুতে লাগলো।

— আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি আপনারা সবাই কি করছেন বলুন তো।

নিজের রুমে নিয়ে হাতটা ছাড়লো ইমন।
মুসকান প্রশ্ন করা বাদ দিয়ে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

— এসব কি???
ইমন মুসকানের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো,,,
— ফুলসজ্জার ঘর পছন্দ হয়নি??

যেহেতু ফুলসজ্জা জীবনের একটি বিশেষ দিন সেই কারণেই এই দিনের সাজসজ্জায় কোনও কমতি রাখা উচিত নয় একেবারেই। এই দিনের জন্য ছোট ছোট বিষয় গুলিও খেয়াল রাখা উচিত।
তাই সেভাবেই ব্যবস্থা করেছি। পছন্দ হয়নি??

মুসকান অবাক হয়েই চেয়ে রয়েছে।
এতো সুন্দর সজ্জিত ঘর সে জীবনে দেখেনি।
নাটক সিনেমাতেও এমন সুন্দর করে ঘর সাজানো দেখেছে কিনা তাঁর মনে পড়ছে না।
পুরো ঘরে অ্যারোমা ক্যান্ডেল দিয়ে সাজানো।
বিছানায় সাধারণ বালিশের বদল হার্টের মত দেখতে দুটো কুশল রাখা রয়েছে।
ধবধবে সাদা চাদরে মোড়ানো বিছানার মাঝ বরাবর লাল গোলাপের পাপড়ি দিয়ে লাভ সাজানো।
তাঁর মাঝে গোলাপী পাপড়িতে লেখা E❤M ।
তাঁর এতোটা ভালো লাগছে যা বলে প্রকাশ করার মতো না। খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো সে।
তাঁর সেই আত্মহারা খুশিতে যেনো ডুবে রইলো ইমন।

— আপনি ইয়ানা আপু, নিপ্রা,ইয়াশফা আপুকে ফোন করুন ওরাও অনেক খুশি হবে এসব দেখলে। ওয়াও কি সুন্দর,,,এখুনি ওদের ফোন করুন না।

ইমন হকচকিয়ে গেলো। তাঁর সব আনন্দ যেনো উড়ে গেলো নিমিষেই। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে চেয়ে বললো,,,
— আর ইউ ম্যাড??

মুসকান মুখটা মলিন করে বললো,,,
— কেনো আমি কি ভুল কিছু বলেছি।
ওরাও তো অনেক খুশি হতো মজা হতো অনেক।

পকেট থেকে হাত বের করে মাথার চুলগুলো আঙুলের ফাঁকে ঢুকিয়ে পিছন দিক নিয়ে নিলো।
খানিকটা এগিয়ে বললো,,,
— লিসেন,,,ওরা আমার বোন। আমি এমন একটা রোমান্টিক পরিবেশ শুধু মাএ আমার বউয়ের জন্য তৈরী করেছি। এটা আমি আর তুমি ছাড়া কেউ ফিল করতে পারবে না। আর ফুলশয্যার ঘর বোনদের এনে দেখানোর মতো স্টুপিড তুমি হতে পারো আমি না।

এতোক্ষনে হুঁশ ফিরলো মুসকানের।
আনন্দে খেয়ালই করেনি ইমন কি বলছে।
লজ্জার চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলো।
হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেলো কয়েকগুন।
ইমন বাঁকা হেসে আরেকটু এগিয়ে গেলো।
কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,,,
— আজ আঠারো বছর পূর্ণ হলো তোমার।
হ্যাপি বার্থডে মুসকান,,,

মুসকান চমকে গেলো। মায়ের মৃত্যুর পর তাঁর জন্মদিনের কথা কেউ মনে রাখেনি আর না সে এই দিন নিয়ে কোন আশা রেখেছে।
এ কয়েকবছর ইমনও এ ব্যাপারে কিছু জিগ্যাস করেনি। তাহলে কি সে এতোদিন জানতো না??
আজি জেনেছে তাঁর জন্মদিন। তাই এইভাবে সারপ্রাইজ দিয়েছে।
সুখে অঝড়ে কাঁদতে লাগলো মুসকান।
ইমনের বুক আঁকড়ে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো।
ইমন চোখ দুটো বন্ধ করে এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দুহাতে গভীরভাবে জরিয়ে নিলো মুসকান কে।
কান্না টা যখন কমে এলো ইমন বললো,,,
এতো দিন তো বাচ্চা ছিলে তাই কাঁদলে সেটা মানিয়েছে। এখন কিন্তু মানাচ্ছে না।

মুসকান চুপ হয়ে মাথা তুলে তাকালো।
ইমন বাঁকা হেসে দুগালে আলতো করে ছুঁয়ে বুড়ো আঙুলে পানি মুছে দিতে দিতে বললো,,,

— আজ থেকে তোমায় আরো অনেক দায়িত্ববান হতে হবে। নিজেকে সব দিক থেকে স্ট্রং রাখতে হবে।
“আজ তোমার আঠারো বছর পূর্ণ হয়েছে
আমি চাই আমাদের সম্পর্কেরও পূর্ণতা পাক”
স্বামী -স্ত্রীর সম্পর্ক খুবই পবিএ একটা সম্পর্ক।
আর এই সম্পর্কের পূর্ণতা দেওয়াটা আমাদের দুজনেরই দায়িত্ব।
আমি এই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম মুসকান,,,
আমাদের সম্পর্ক নিয়ে অনেক লোকের অনেক কৌতুহল। আশে পাশের মানুষ জন তোমায় কম কথা শোনায়নি। আমি এসব কেয়ার না করলেও তুমি করেছো । কষ্ট পেয়েছে, যন্ত্রণা হয়েছে তোমার।
আমরা সুখের সংসার গড়ে তুলবো মুসকান।
আমাদের ঘর আলো করে ছোট ছোট পুচকো,পুচকি আসবে।
সবাইকে দেখিয়ে দিতে চাই “ভালোবাসার মাঝে
সম্পর্কের মাঝে বয়স টা কখনোই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারেনা ”
ইতিহাস গড়ে দিতে চাই যেখানে লিখা থাকবে চৌদ্দ বছরের এক কিশোরীর আগমনের কথা,,,
ঊনত্রিশ বছর বয়সি এক প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের চৌদ্দ বছরের কিশোরীর প্রেমে পড়ার কথা।
বাচ্চা একটা মেয়ের মাঝে মুগ্ধতায় ডুবে থাকার কথা
একটু একটু করে দুটো হৃদয় কাছে আসার গল্প।
যেখানে ছিলো না শারীরিক কোন চাহিদা,
যেখানে ছিলো না স্বার্থ হাসিল করার ধ্যান-ধারনা।
একজন চেয়েছিলো অসহায় এক বাচ্চা মেয়ের পাশে দাঁড়াতে। আরেকজন চেয়েছিলো নিজের কর্ম দ্বারা ছোট্ট একটা আশ্রয়ের।

“আমাদের সমাজে যখন কোন মেয়েকে তাঁর বাবা – মা তাঁর থেকে দ্বিগুণ বয়সি ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয় তখন মেয়েটার মধ্যে একটা ভুল ভাবনা কাজ করে তা হলো – তাঁর বাবা – মা তাঁর জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। আশে পাশের মানুষ এমনকি তাঁর নিজ বন্ধু বান্ধব রাও বলা শুরু করে,,,
ওমা তোর বরের বয়স তো অনেক বেশী,,,
আল্লাহ,,, তোর বাবা – মা এমন একটা ছেলের হাতে তোকে তুলে দিলো?? টাকা-পয়সা দেখে লোভ সামলাতে পারেনি নারে??
আশে পাশের মানুষ রা যখন এসব কথা বলতে থাকে তখন মেয়েটার মাঝে অনেক রকম ভ্রান্ত ধারণা তৈরী হয়। মন ভেঙে যায়, মন ওঠে যায় সংসার থেকে,মন ওঠে যায় তাঁর স্বামীর থেকে মন ওঠে যায় তাঁর বাবা -মার থেকে৷ মেয়েটা ডিপ্রেশনে চলে যায়।
ডিপ্রেশন থেকে সে নিজে নিজের ভালো করতে গিয়ে স্বামী কে ডিভোর্স দিয়ে দেয়।
ডিভোর্সের পর সেই আত্মীয়, বন্ধু বান্ধব রাই আবার বলা শুরু করে, হায় হায় এটা তুই কি করলি।
মেয়ে মানুষ বিয়ে জীবনে একটাই। স্বামী যেমনই হোক সে তো তোর স্বামী। কাজটা ঠিক করিসনি একদম এখন কি করবি কোথায় যাবি।
তখন মেয়েটা বুঝতে পারে তাঁর দ্বারা কতো বড় ভুল হয়ে গেছে বাবা- মা মুখ ফিরিয়ে নেয় আশে পাশের মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেয়। যে স্বামীকে ডিভোর্স করে ছেড়ে এসেছে তাঁর কাছে যাওয়ারও উপায় থাকে না।
এমন প্রতিকূল পরিস্থিতি তে পড়ে মেয়েটা আত্মহত্মার পথ বেছে নেয়।
শেষ হয়ে যায় একটা প্রাণ। কিন্তু কেনো??
এর জন্য কারা দায়ী?? আমাদেরই আশেপাশের মানুষ। সমাজে বসবাসরত কিছু বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ রাই।

বিয়ে জিনিসটা পবিএ, মানবজীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় হলো ছেলে মেয়ের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া।
বিয়েটা আল্লাহ প্রদত্ত। কার সাথে কার ভাগ্যজুরে দেওয়া হয়েছে তা একমাএ আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন।
“নারী-পুরুষের বিয়ে আল্লাহ তাআলার এক মহা নেয়ামত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নাত। পরিপূর্ণ ঈমানের অন্যতম আলামত। চারিত্রিক আত্মরক্ষা ও উন্নতির অন্যতম উপায়। আদর্শ পরিবার গঠন ও যুবক-যুবতির চরিত্র গঠনের অনুপম হাতিয়ারও এ বিয়ে”
“আর ইসলামের কোথাও লিখা নেই যে বিয়েতে বয়সটা গুরুত্বপূর্ণ। ছেলের বয়স বেশী হয়ে গেলে সে কম বয়সী মেয়ে বিয়ে করতে পারবে না। বা মেয়ে বেশী বয়স হয়ে গেলে সে কম বয়সী ছেলে বিয়ে করতে পারবে না। এমন কোন ধরাবাঁধা নিয়ম ইসলামের কোথাও লিখা নেই।
এইসব ফালতু কথা, ফালতু নিয়ম দুনিয়ায় বাস করা মানুষ রাই বানিয়েছে, রটিয়েছে।
নিজের থেকে জুনিয়র ছেলে বিয়ে করে নিলেও একটা মেয়েকে কম কথা শুনতে হয় না।
আসলে সমস্যাটা হলো,,,
সমাজের মানুষ রা কারো ভালো,বা কারো দ্বারা কারো উপকার সহ্য করতে পারেনা।
আজকে একজন বিধবা নারীকে কম বয়সি এক যুবক বিয়ে করুক দেখা যাবে আশে পাশের মানুষ রা ছিঃ ছিঃ শুরু করে দেবে।
কিন্তু তাঁরা একবারো এটা বলবে না যে, যাক ভালো হয়েছে ছেলেটা অসহায় মেয়েটার পাশে দাঁড়িয়েছে।
সুখে থাকুক। এমন কথা কেউ বলবে না।
কারন আমাদের সমাজে পজেটিভ ভাবনা ভাবার মতো মস্তিষ্ক কারো নেই।
তুমি মন খারাপ করোনা আমি জানি, বুঝি।
তবুও আজকের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ দিনে আমি তোমাকে বলতে চাই।
“কেউ কারো ভালো টা সহ্য করতে পারেনা”
“কারো কথায় কান দেওয়া যাবে না”
“সব সময় নিজের মনের কথা শুনতে হবে”
“নিজের অনুভূতির দাম দিতে হবে”
“তোমার স্বামী বুড়ো হোক বা কঁচি খোকা হোক সেটা তোমার সমস্যা বাইরের কারো না ”
“তুমি বুড়োর সাথে বা কঁচি খোকার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে কিনা সেটা তুমি ডিসাইড করবে,কেউ যদি তোমায় এ বিষয় নিয়ে জ্ঞান দিতে আসে মাথা নিচু না করে জবাব দিতে হবে”
“অন্যের বুদ্ধি তে চলা মানে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা”
“তোমার বিয়ে যদি আমার সাথে না লিখে অন্যকারো সাথে লিখতো তাহলে অন্যকারো সাথেই হতো আমার সাথে নয় ”

চমকে ওঠে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো মুসকান।
ইমন ও জরিয়ে নিলো গভীরভাবে। আলতো হেসে বললো,,,
“আমাদের সাথে যখন কিছু ঘটে যায় তখন বুঝতে হবে উপরওয়ালার এটাই ইচ্ছে ছিলো তাই হাসি মুখে সেটা গ্রহন করে নেওয়া উচিত”

ইমন থেমে গেলো বেশ কিছু ক্ষন চললো পিনপতন নীরবতা। নিরবতা ভেঙে ইমন ডাকলো,,,
মুসকান,,,

— হুমহ,,,

আওয়াজ টায় কি যেনো ছিলো।
যা ইমনকে ঘায়েল করার জন্য যথেষ্ট।
সে আর এক মূহুর্তও দেরী না করে পাজাকোল করে নিলো মুসকান কে।
মুসকান আবারো চমকে ওঠে তাকালো ইমনের দিকে।
ঘোর লাগা সে চোখে চোখ রাখতে পারলো না মুসকান। চোখ সরিয়ে নিলো।
মনটা হঠাৎই বেশ অশান্ত হয়ে গেলো তাঁর।
ইমনকেও তাঁর বড় অশান্ত লাগছে।
বিছানায় নিয়ে বসিয়ে নিজের পরিহিত কোর্ট টা খুলতে লাগলো।
মুসকানের বুকটা ধক করে ওঠলো। গলা শুকিয়ে গেলো তাঁর। এক ঢোক গিলে গলাটা ভিজিয়ে নিলো।
ইমন কোর্ট টা টেবিলের ওপর রেখে বিছানায় বসে মুসকানের দিকে এগুতেই মুসকান বিছানা ছেড়ে লজ্জায় সরে যেতে নিতেই ইমন তাঁর আঁচল টেনে ধরলো।
পারপেল কালারের শাড়িতে বেশ সুন্দর লাগছে মুসকানকে। চুলগুলো খোঁপা করায় পিঠটা উন্মুক্ত হয়ে আছে। পিঠের তিলটায় চোখ পড়তেই বুকের ভিতর শীতল শিহরন বয়ে গেলো।
শাড়ির আঁচল হাতে পেঁচিয়ে এক টান দিতেই মুসকান একদম ইমনের ওপর এসে পড়লো।
মুসকানের ঘন শ্বাস ইমনের কানে পড়ছে ক্রমাগত যা তাঁকে আরো দ্বিগুন পাগল করে দিচ্ছে ।
একহাতে জরিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,,,
— পালাচ্ছো কোথায়??
আমার থেকে তুমি পালাতে পারবে না।
“প্রথম দেখায় আমার হৃদপিন্ডে যে আঘাত তুমি করেছো তা শুধে আসলে ফেরত দিবো আজ তোমায়”
“বার বার আঘাত শুধু তুমিই করবে এবার তো বুঝতে হবে আমিও পারি আঘাত করতে”,,,বিষাক্ত আঘাত।
“যে আঘাতে থাকবে ভালোবাসার বিষ মেশানো”
“সেই বিষে মরন হবে তোমার,,, ভালোবাসার মরন”

মুসকান চোখ দুটো বন্ধ করে ইমনের কথা গুলো শুনে যাচ্ছে। ভয়,লজ্জায় তাঁর যেনো আজ সত্যি মরন হবে। শক্তহাতে আঁকড়ে ধরলো ইমনের শার্ট।

“আমার চোখে আজ তোমার মরন দেখতে চাই”
বলেই ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিলো।
মুসকানের শরীর কাঁপতে শুরু করলো।
ভয়ে ভয়ে খুব কষ্টে বললো শুনুন,,,
ইমন থেমে গেলো চোখ তুলে চেয়ে জিগ্যেস করলো কি,,,
মুসকান এক ঢোক গিলে নিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে ফেললো- আপনাকে কেমন অস্বাভাবিক লাগছে,,,
সারাদিন অনেক ব্যাস্ততায় মনে হয় আপনি ক্লান্ত।
চলুন ঘুমিয়ে পড়ি।
কথাটা শোনা মাএই ইমন তাঁকে আরো চেপে নিলো নিজের সাথে ঘাড়ে হাত দিয়ে মুখটা আরো কাছে নিয়ে ভারী আওয়াজে বললো,,,
— আমি একদম ঠিক আছি। ছলচাতুরী করে কোন লাভ নেই ম্যাম,,,

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here