হৃদপিন্ড,পর্ব-২৪,২৫
জান্নাতুল নাঈমা
পর্ব-২৪
মুসকান ফুঁপিয়ে কেঁদেই চলেছে ইমনের কথা তাঁর কানে পৌঁছিয়েও পৌঁছায় নি বা অভিমানের পাল্লা বেশীই ভারী হয়ে গেছে।
ইমন এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। সাতপাঁচ ভাবার আর সময় নিলো না সে। আর যাই হোক তাঁর মুগ্ধময়ীকে ভালোবাসা, আদরের অভাবে ভুগতে দেবে না সে।
এছাড়া মুসকান তো টাকা -পয়সা ভালো কাপড় ভালো খাবাড়ের পাগল নয়। সে শুধু আদর ভালোবাসার জন্য পাগলামি করছে। পরপুরুষের কাছেও নয় তাঁর স্বামীর কাছে এটাতো তাঁর অপরাধ নয়। আমি একটু বেশীই চিন্তা করছি বোধহয় ওর ভালো করতে গিয়ে ওর ক্ষতিই করে ফেলছি যা মানসিকভাবে ভীষণ আঘাত করছে ওকে।
মাথাটা কেমন করে ওঠলো তাঁর। শরীর জুরে উষ্ণ হাওয়া বয়ে গেলো। মুসকানের ফুঁপানির শব্দ কানে ভাসতেই মোহময় দৃষ্টি তে চেয়ে রইলো কতোক্ষন।
ঘোর লাগা গলায় বললো “যার জন্য তুমি এভাবে ভেঙে পড়ছো তাঁর থেকেও হাজার গুন দিতে প্রস্তুত আমি”
আজকের পর থেকে তোমার চাওয়ার মাএার ওপর আমার ভালোবাসা নির্ভর করবে না। আমার ভালোবাসা নির্ভর করবে আমার আমার দেওয়ার ওপর।
একহাতে মুসকানকে জাগালো ইমন একদম নিজের কোলের ওপর বসাতেই মুসকান চমকে ওঠলো।
কান্না থেমে গেছে তাঁর আচমকাই এমন কিছু হয়ে যাবে ভাবতে পারেনি। অবাক নয়নে চেয়ে রইলো সে।
ইমনও তাঁর মোহময় দৃষ্টি তে চেয়ে আছে।
হঠাৎ ই কোমড়টাকে একহাতে শক্ত করে চেপে নিজের খুব কাছে নিয়ে এলো। মুসকানের বুকের ভিতর হঠাৎই শীতলতায় ভরে গেলো। হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো দ্বিগুণ ভাবে। একহাতে চুলের মুঠোয় শক্ত করে চেপে কপালে কপাল ঠেকিয়ে ঘোর লাগা গলায় বললো যেখানে সবার কাছে তোমার প্রাউড ফিল করার কথা সেখানে তুমি মাথা নিচু করে কেনো থাকো মুসকান,,,
কেনো বুঝোনা কিছু মানুষ তোমার মতো হতে পারেনা, তোমার জায়গায় আসতে পারেনা বলেই হিংসে থেকে অনেক রকমের কথা বলে।
“ইমন চৌধুরীর মতো সুপুরুষের অর্ধাঙ্গিনী হওয়ার ভাগ্য নিয়ে সবাই জন্মায় না কিন্তু অধিকাংশ মেয়েই তাঁর অর্ধাঙ্গিনী হওয়ার স্বপ্ন দেখে”
তোমায় ওদের বলতে হবে না তোমার স্বামী কেমন।তোমার স্বামীর ভালোবাসার গভীরতা কেমন।
কিন্তু আজকের পর তুমি নিজেই অনুভব করতে পারবে তোমার বন্ধুদের ভাষায় বুড়ো জামাই তাই তো। এই বুড়ো জামাই তোমায় যা দিতে পারে আর পারবে ওদের কম বয়সি, যুবক জামাই ও তা দিতে পারবেনা।
ইমনের ভারী নিশ্বাস মুসকানের মুখে পড়তেই তাঁর শ্বাস ভারী হয়ে এলো। শরীর টা অবশ হয়ে আসছে কেমন, অতিরিক্ত কান্নার ফলে চোখ দুটোও বুজে আসছে। মুখ দিয়ে একটা আওয়াজ ও বেরুলো না তাঁর। ভয় হতে লাগলো কথা না বলাতে বোধ হয় ইমন রেগে যায় কিন্তু ইমন তো আজ রাগবে না। সে তাঁর গভীর ভালোবাসায় মত্ত করে রাখবে তাকে।
সুখের ডুব ডাগরে ডুবিয়ে মারবে তাঁকে। তা কি সে টের পাচ্ছে,,,
ঘাড়ে ঠোঁট ছুয়াতেই কেঁপে ওঠলো মুসকান।
ইমন আরো গভীর ভাবে নিজের সাথে জরিয়ে নিলো। মুসকান আধো চোখে এক পলক ইমনকে দেখেই চোখ বুজে ফেললো।
ইমনের এই অস্থিরতার রূপ, দেখার সাহস তাঁর হলো না।
আগুনে ঘি ঢেলে দিলে যেমন আগুন হুট করে ফুঁসে ওঠে ইমনেরও সেই অবস্থা। আজ মুসকান শত বাঁধা দিলেও ইমনকে আটকাতে পারবে না।
গলায় অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে ইমন। প্রত্যেকটা স্পর্শেই কেঁপে কেঁপে ওঠছে মুসকান।গলা থেকে মুখ ওঠিয়ে ঠোঁট জোরা আঁকড়ে ধরলো।
মুসকানকে ওভাবেই কোলে তুলে ঘাড়ে মুখ ডুবিয়েই বিছানার দিকে এগোতে লাগলো। অজান্তেই হাত দুটো শক্ত ভাবে আঁকড়ে ধরে আছে ইমনের পিঠে।
দুজনের হৃদস্পন্দনই আজ একসাথে স্পন্দিত হচ্ছে।
মুসকানকে বিছানায় শুইয়িয়ে ইমন ওঠে গিয়ে লাইট অফ করে দিলো ড্রিম লাইটের আলোতে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সব কিছু। সেই সাথে মুসকানের শরীরের হালকা কাঁপুনি খুব করে টের পাচ্ছে।
নিজের শার্টটা খুলে ফেললো ইমন বিছানায় যেতেই মুসকান ইমনের দিকে চেয়ে নিচু স্বরে বললো আপনি রাতে খাবেন না??
ইমন সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ধীরে ধীরে এগুতে লাগলো। মুসকানের গলা শুকিয়ে এসেছে, ইমনকে তাঁর বড্ড অচেনা লাগছে, এই অস্বাভাবিক রূপ আগে কখনো দেখেনি সে। কেমন অচেনা ভয় এসে আঁকড়ে ধরেছে তাঁকে।
সফটলিভাবে স্পর্শ করলো ইমন কোমড় চেপে ধরে কাঁধে মাথা রেখে একহাতে জামার চেইনে এক টান দিলো মূহুর্তেই আঁতকে ওঠলো মুসকান ভয়, লজ্জা দু’টোই গভীর ভাবে আঘাত করলো তাকে। শক্ত ভাবে জরিয়ে ধরলো ইমনকে। যেনো আর ছাড়বেই না ছাড়লেই লজ্জায় মরন হবে তাঁর ।
ইমন যতো তাঁর স্পর্শ দিচ্ছে মুসকান ততো শক্ত করে জরিয়ে নিচ্ছে। পুরো শরীর প্রবলভাবে কাঁপছে, তাঁর এই কাঁপুনি ইমনকে যেনো দ্বিগুণ পাগল করে দিচ্ছে।
পাগলের মতো চুমু খাচ্ছে গলায়,ঘাড়ে, পিঠে।
পুরো শরীরে হাত বিচরন করছে মুসকানের চোখ দিয়ে সমানে পানি ঝড়ছে। অতি সুখে মরে যেতে ইচ্ছে করছে তাঁর ।
ইমন যেনো আজ তাঁকে সুখে মেরেই ফেলবে।
পিছন দিক ঘুরিয়ে পিঠে অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে।
একহাতে পেট চেপে কখনো ঘাড়ে, কখনো পিঠে ঠোঁট ছোঁয়াচ্ছে। সুখ, ভালো লাগার অসহ্য সীমানায় পৌঁছে গেছে মুসকান। ইমন এবার মুসকানকে ঘুরিয়ে নিলো গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো। মুসকানের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে ইমনের কপালে ঠেকলো। ইমন এক নজর মুসকানকে দেখে ধীরে ধীরে নিচের দিকে নেমে গেলো নাভীতে ঠোঁট ছোঁয়াতেই মুসকান খামচে ধরলো তাঁর চুল।
মসৃন পেটটায় খুব সফটলি চুমু খেতে লাগলো।
কাঁপতে কাঁপতে এবার বেহুশ হবার অবস্থা তাঁর।
সাপের মতো মোড়ামুড়ি করতে শুরু করলো সে।
যার ফলশ্রুতিতে ইমন গভীর ভাবে মুখ ডুবিয়ে দিলো। এবার সত্যি সত্যিই অতি সুখে সে বেহুশ হয়ে গেলো।
হঠাৎ করে মুসকানের ছটফটানি থেমে যাওয়া। কোন রেসপন্স বা আনাড়িপনা না পেতেই ইমন চোখ তুলে তাকালো। অনুভূতি শূন্য বুঝতেই ওঠে গিয়ে গাল দুটো স্পর্শ করলো। কোন রেসপন্স পেলো না। চোখ দুটো পরখ করতে গিয়েই বুঝলো সে জ্ঞান হারিয়েছে।
যা বুঝে তাজ্জব বনে গেলো সে। মনে মনে বেশ বকলো মুসকান কে। রাগ ও হলো ভীষণ ইচ্ছে হলো মেয়েটাকে চিবিয়ে খেতে এমন একটা মূহুর্তে এসে এমনটা না করলেও পারতো। কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ে পড়লো। অশান্ত মনকে শান্ত করার তীব্র চেষ্টা করতে লাগলো। পুরো শরীর ঘেমে একাকার অবস্থা শীতের মৌসুমে এমন ঘেমে যাওয়া মানেই প্রচন্ড অস্থিরতার ফল।
“অভিযোগ করার বেলায় ষোল আনা।
অথচ আমার আদর সহ্য করার ক্ষমতাই নেই”
“সবেতো সুখের সমুদ্রে পা ডুবিয়েছি মিসেস এখুনি এই অবস্থা যখন সাঁতার কাটবো তখন কি অবস্থা হবে ”
বাঁকা হাসলো ইমন।
কপালে আলতো করে চুমু একে দিয়ে একটু উঁচিয়ে জামার চেইন টা লাগিয়ে দিলো।
রাগের মাথায় খিদে না পেলেও এখন বেশ খিদে পাচ্ছে। মুসকান কে জাগাতে হবে ভেবেই গ্লাস টা নিয়ে কিছুটা পানি চোখে মুখে ছিটিয়ে দিলো।
হালকা আওয়াজ করে ওঠলো মুসকান। ইমন একটু ঝুকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো কি হয়েছে,,,
চোখ খুলতেই ইমনকে খুব কাছে পেলো সে। কিছুক্ষন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা মনে পড়তেই শিউরে ওঠলো সে লজ্জায় মিইয়ে গেলো একদম।
বুকটা ধড়ফড় ধড়ফড় করতে লাগলো।
কি করে বোঝাবে সে তাঁর অনুভূতি গুলো। এতো গভীর স্পর্শ যে সে সইতে পারছে না। তাঁর কেমন পাগল পাগল লাগছে লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে যে মৃত্যুর নাম হবে সুখ মৃত্যু, অতি সুখে যে তাঁর মরন হবে।
তাঁর শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ইমনের প্রত্যেকটা স্পর্শ ছেয়ে গেছে প্রথম কোন পুরুষের গভীর ছোঁয়া অনুভব করছে সে। যে ছোঁয়া তে রয়েছে পবিএতা।
এই ছোঁয়ার জন্য কি বেহায়ার মতোই না কাঁদছিলো সে ইশ লজ্জায় চোখ দুটো বুঝে ফেললো।
ইমন মুসকানের মনের অবস্থা বুঝতে পারলো।
প্রথম ফিলিং গুলো বোধ হয় এমনি হওয়া উচিত।
যা প্রত্যেকটা পুরুষের মনেই বড্ড আনন্দ দেয়।
মুসকান বড্ড বেশীই লাজুক, অন্যসব মেয়ের মতো সে স্মার্টলি বিহেইভ করে না। সে যা করে মন থেকে ন্যাচারালি আর এই জিনিসটাই বড্ড ভালো লাগে তাঁর ।
কানের কাছে মুখ নিয়ে মৃদু স্বরে বললো
–“অমন একটা কঠিন সময় এভাবে সেন্সলেস হওয়াটা বড্ড বেমানান” খুব তো অভিযোগ করছিলে,, আমাকে উন্মাদ বানিয়ে নিজে জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়লে কেনো? এটুকু সহ্য করতে পারলে না? এখনোতো কিছুই করিনি।
মুসকান চোখ দুটো মেললো ভয়, লজ্জা দুটোই আকড়ে ধরেছে তাঁকে,কান দুটো দিয়ে যেনো গরম হাওয়া বেরুচ্ছে।মুসকানের মুখ ভঙ্গিতে ইমন রহস্যময় হাসি হেসে মুখে গম্ভীর্য ভাব নিয়ে বললো খিদে পেয়েছে খাবাড়ের ব্যবস্থা করো ঠান্ডা খাবাড় খেতে পারিনা সো কাজে লেগে পড়ে অনেক বোঝা হয়েছে আমার, কতোটা কি পারবে বলেই ওঠে পড়লো।
মুসকান কয়েকদফা শ্বাস নিয়ে জগ থেকে গ্লাসে পানি ভরে ঢকঢক করে খেয়ে নিলো।
ইমন শার্ট টা গায়ে চেপে বাথরুম চলে গেলো।
,
খাবাড় গরম করছে আর ভারী শ্বাস ফেলছে কিছুতেই নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারছে না।
ইমনের সামনে পড়তেও প্রচন্ড লজ্জা লাগছে কিন্তু তাঁর সামনে না গিয়েও তো উপায় নেই।
,
ইমন খাচ্ছে মুসকান সামনে বসে আছে। তাঁর আজ খিদে নেই সে খাবে না।
কিন্তু ইমন অর্ধেক খাওয়া শেষ করে বাকিটা মুসকান কে খেতে বলে চলে গেলো।
মুসকানের খেতে ইচ্ছে না করলেও জোর করেই খাবাড়টা শেষ করলো। একটু স্বাভাবিকতায় এসে গেছে সে। স্বস্থি লাগছে এখন ঘুমটাও পেয়ে বসেছে কেমন।
বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা করলো ইমনের জন্য কিন্তু এলো না। তাই একপাশে চুপটি করে শুয়ে পড়লো।
খানিকবাদে ইমন রুমে ঢুকে সিটকেরী লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় এলো তাঁর ও ঘুম ধরেছে কিন্তু আজ সে বালিশে ঘুমাবে না। কারো ছোট্ট হৃদয়ে কান পেতে সারারাত তাঁর হৃদয়ের কথা হৃদস্পন্দন শুনতে শুনতে ঘুমাতে ইচ্ছে হলো। যেই ভাবা সেই কাজ ইমন চৌধুরীর ইচ্ছে পূরন হবে না তাই কখনো হয়।
বিছানায় গা এলিয়ে আলতো করে মুসকান কে টেনে নিলো অনেকটা কাছে। মুসকানের হাত পা আবারো কাঁপতে শুরু করলো।
কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছে না গলাটা যেনো কেউ চেপে ধরেছে।
ইমন ওর মতো মুসকানকে গুছিয়ে তাঁর বুকে মাথা রাখতেই মুসকান শিউরে গেলো একটু সরতে নিতেই ইমন বললো”উহুম ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।
দুকোমড় পেঁচিয়ে বুকে মাথা রেখে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো। দাঁড়ির খোঁচায় হালকা ব্যাথা লাগছিলো তবুও চুপ করে রইলো।এই চুপ করাটায় বরাবর ইমনের রাগের কারন হলেও এবার বেশ মজা পেলো। ঘুমানোর আগে তাঁর মুগ্ধময়ী কে একটু জ্বালানোটা মন্দ নয় ভেবেই খানিকটা দাঁড়ির ঘষা দিলো ইচ্ছে করেই মুসকান আহ করতেই ইমন মুচকি হেসে গভীরভাবে জরিয়ে মুখ গুঁজে রইলো।
পুরো শরীরের ভাড় না দিলেও আর্ধেক ভাড়েই মুসকান অস্থির হয়ে গেছে কিন্তু কিছু করার নেই সারারাত এভাবেই কাটাতে হবে তাঁকে।
,
সাজিয়া বেগমের প্ল্যানটা কার্যকর হলো না।
তাই সে তাঁর দ্বিতীয় পদক্ষেপটা নিবে এবার।
ইভান লন্ডনে গিয়েছে একমাসের বেশী হলো আর তিনদিনপরই ফিরবে আর সাথে আসবে রিতিশা।
তারপর এই মেয়ের ব্যাবস্থা নেওয়া যাবে ভেবেই শয়তানি হাসি হাসলো।
–ছেলের বউ থাকতে কাজের লোকের কাছে চা,কফি খেতে হয় আমার এর থেকে বড় দুঃখ আর কি হতে পারে।
মুসকান দাদীকে পান বানিয়ে দিচ্ছিলো এমন সময় সাজিয়া গলা বাজিয়ে কথাগুলো বললো।
দাদী বললো– যা তো কফি বানিয়ে খাওয়িয়ে আয়।
মুসকান খুব খুশি হলো যাক তাঁর শাশুড়ী মা তাকে ছেলের বউ হিসেবে স্বীকার তো করেছে।
কফি বানিয়ে খুব উৎফুল্ল হয়ে শাশুড়ী কে দিলো মুসকান। সাজিয়া পেপার পড়ছিলো কফিটা হাতে নিয়ে পেপার টা পাশে রাখলো।
মুসকান চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
সাজিয়া কফিতে চুমুক দিয়ে আবারো পেপার দেখায় মনোযোগ দিলো।
মুসকান বোঝার চেষ্টা করছে কফিটা সাজিয়ার কাছে কেমন লেগেছে সে তো ইমনের জন্য যেভাবে বানায় সেভাবেই বানিয়েছে। অভ্র এই কফি খেয়ে তো খুব প্রশংসা করেছে তাই শাশুড়ীর কাছেও প্রশংসা পাওয়ার জন্য মনটা উৎসুক করতে লাগলো।
–মা কফিটা ঠিক হয়েছে??
সাজিয়া মুসকানের মুখে মা ডাক শুনে প্রচন্ড রেগে গেলো। তাঁর জন্য ইভানের খাওয়া মার গুলোর কথা মনে পড়তেই মনের ভিতর কেমন হিংস্রতা কড়া নাড়লো। কফির মগটা সোজা মুসকানের গায়ে ছুঁড়ে বললো খুবই বিশ্রি হয়েছে একটা কফিই বানাতে পারিস না। ছোটলোকের বাচ্চা।
গরম কফি শরীরে পড়তে মুসকান চাপা আর্তনাদ করে ওঠলো সাজিয়া সেই আর্তনাদে তোয়াক্কা না করে হনহন করে চলে গেলো।
–দাদী বললো কিরে কি হলো।
মুসকান একহাতে নিজের মুখটা চেপে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলো।
দাদী যদি জানতে পারে খুব অশান্তি করবে। আর ইমনের কানে গেলে আর রক্ষে থাকবে না। তাই সে কাঁপা আওয়াজে বললো কিছু না দাদী পায়ে একটু হোচট খেয়েছি তুমি পান খাও আমি পড়তে বসবো এখন।
তাঁর জন্য আর কোন অশান্তি হোক এ বাড়িতে সেটা সে চায় না।নিজের যন্ত্রণা গুলো একান্তই নিজের করে নিয়ে উপরে চলে গেলো সে।
বাথরুমে ঢুকে পাগলের মতো পানি দিতে লাগলো শরীরে। বুকের অনেকটুকুই পুরে গেছে মূহুর্তেই ফোস্কা পড়ে গেছে পানি দেওয়ায় ভালো লাগছে না দিলেই যন্ত্রণা হচ্ছে।
প্রচন্ড কাঁদছে সে, খুব কষ্ট হচ্ছে চাপা আর্তনাদ গুলো বাথরুমে গিয়ে যে গলা ফেটে বেরিয়ে আসতে চাইছে।
মনের ভিতর ভয় জমলো ইমন দেখে ফেলবে না তো বুঝে ফেলবে না তো??
–নাহ কিছুতেই বুঝতে দেওয়া যাবে না। ওনার সামনে স্বাভাবিক থাকলেই চলবে। কিন্তু যদি,,,আমার কাছে আসে। নাহ আসবে না।
মনে মনে আল্লাহ কে ডাকতে লাগলো। যাতে ইমন কোনভাবেই বুঝতে না পারে।
,
“সবার থেকে আড়াল করতে পারলেও সে কি ইমন চৌধুরীর থেকে আড়াল করতে পারবে তাঁর ব্যাথা তাঁর যন্ত্রণা”???
চলবে……
হৃদপিন্ড
জান্নাতুল নাঈমা
পর্ব-২৫
সাজিয়া বেগম রাগের মাথায় এমন একটা কাজ করে ফেললেন এবার একটু ভয় হচ্ছে তাঁর।
পুরো রুম জুরে পায়চারি করছে আর ভাবছে মুসকান ইমনের কাছে নালিশ জানালে কি বলবে না বলবে।
–বজ্জাত মেয়েটা না জানি ইমনের কাছে কি বলে আজ। শয়তান মেয়ে বড় লোকের ছেলেকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছিস রাজরানি হওয়ার খুব শখ তাইনা।
দিনরাত সকলের প্রশংসা কুড়োতে ব্যাস্ত থাকে অসহ্য গাঁ পিত্তি জ্বলে যায় একদম।
“দিয়েছি না প্রশংসা কুড়োনোর শখ মিটিয়ে ”
বির বির করতে করতে রুম ছেড়ে বেরুতে নিতেই
কারো বিশাল দেহের সাথে মাথাটা বাড়ি খেলো।
উপর দিকে তাকাতেই গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো।
এক ঢোক গিলে খানিকটা দূরে গিয়ে আমতা আমতা করতে করতে বললো,
— আমি কিছু করিনি ঐ মেয়ে সব মিথ্যা বলেছে,আমি শুধু কফি খেতে চেয়েছিলাম। আর ঐ মেয়েটা অসাবধানতার জন্য নিজের গায়ে ঢেলেছে আমার কোন দোষ নেই।
কি বলেছে ঐ মেয়ে মিথ্যাবাদী, ছোটলোকের সন্তান দের ঘরের বউ করলে এই এক সমস্যা।
ইমন রহস্যময় এক হাসি দিলো।
–ইয়েস ইউ আর এবসিলিউটলি রাইট।
মিথ্যাবাদী, ছোটলোক ঘরের সন্তান দের ঘরের বউ করলে এই এক সমস্যা।
সাজিয়া বেগম খুশিতে গদগদ হয়ে বললেন –হ্যাঁ বাবা ঠিক বলেছো বলেই আরো কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই ইমন বলে ফেললো।
–যেমনটা আপনার জন্য এই পরিবারটা আজ ধ্বংসের পথে। ছোট লোক ফ্যামিলি থেকে ওঠে এসেছেন বলেই বাড়ির বউ এর গায়ে গরম কফি ছুঁড়ে দিতে আপনার বিবেকে বাঁধে নি।
ছোট লোক ঘর থেকে ওঠে এসেছেন বলেই নিজে অপরাধ করে সেই অপরাধ ধামা চাপা দিতে গিয়ে মিথ্যার ঝুড়ি খুলে বসেছেন।
–ইমনন,,,
— ডোন্ট শাউট। গলাটা নামিয়ে, আপনি ভুলে যাবেন না আপনি কার সাথে কথা বলছেন। আপনি একরামুল চৌধুরীর সামনে নয় আপনি ইমন চৌধুরীর সামনে রয়েছেন।
আপনার মতো আমি বা মুসকান যদি ছোট লোক ঘরের সন্তান হতাম তাহলে আপনার অসভ্যতামির জন্য আপনার সাথে কি করে ফেলতাম ভেবেও পাচ্ছেন না। আর হ্যাঁ বলা আর করা একি কথা হলো তাই এই অসম্মান টা মাথায় রাখবেন।
আর কি বললেন মুসকান ছোটলোক তাইনা,,,
এ বাড়িতে মুসকানের জায়গা টা ঠিক কি সেটা আপনি কল্পনাও করতে পারছেন না। যতোটা সম্মানিত ব্যাক্তির সন্তান এই ইমন চৌধুরী তাঁর থেকেও বেশী গুরুত্বপূর্ণ মানুষের সন্তান মুসকান চৌধুরী।
সাজিয়া বেগম চমকে ওঠলো কথাটা শুনে। কিন্তু এর কোন কোল কিনারা পেলো না। মুখে বিরক্তিমাখা, রাগ, চিন্তার ছাপ রেখেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
দরজার বাইরে ইয়ানা,ইয়াশফা, অভ্র অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দাদী নিচ থেকে চেচামেচি করছে ইমনের হুংকার শুনে।
–কি ভেবেছেন আপনি? বাড়িতে কি ঘটছে না ঘটছে কিছুই আমি জানতে পারবো না। যে মেয়েটা শুধুমাএ আমাকে ভরসা করে আমার ওপর নির্ভর করে এ বাড়িতে রয়েছে তাঁর কোন সিকিউরিটিই আমি দেবো না? হ্যাঁ একটু ক্ষতি হয়েছে ওর কিন্তু নেক্সট এটুকু করার সুযোগ কেউ পাবে না ।
পুরো বাড়িতে মুসকান যেখানে যেখানে অবস্থান করে সেখানেই আমি সিসি ক্যামেরা সেটআপ করেছি এমনি এমনি না। বাড়িতে যখন স্বার্থপর, বেঈমান, পশু সমতুল্য মানুষের বসবাস তখন তো আমাকে এই পদক্ষেপটা নিতেই হতো।
সাজিয়ার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো।
ইমনের কাছে মুসকান গুরুত্বপূর্ণ জানতো তাই বলে এতোটা তা ভাবার বাহিরে ছিলো।
রাগের মাথায় ইমন গোপন কিছু প্রকাশ করে ফেলেছে। এটাই আবার কাল হয়ে দাঁড়াবে না তো তাঁদের জীবনে???
,
ইমন রুম ছেড়ে বেরুতে নিতেই তিনজন ভয়ে দৌড়ে সরে গেলো।
দাদীর চেচামেচি শুনে ইমন উপর থেকেই বললো –দাদী সব ঠিক আছে তুমি রুমে যাও। পরে তোমার সাথে দেখা করছি আমি।
,
ইমন প্রতিদিন রাত দশটা এগারোটায় আসে। আজ সাতটায়ই চলে আসবে মুসকান জানতো না। শরীর খারাপ লাগছিলো বুকে জ্বালাও হচ্ছিল তাই বিছানায় চোখ বুজে শুয়ে আছে।
ইমন রুমে ঢুকতেই রুমটা অন্ধকারাচ্ছন্ন দেখতে পেলো। লাইট অন করতেই মুসকান ধড়ফড়িয়ে ওঠে বসলো ইমনকে দেখেই চট করে বিছানা ছেড়ে নেমে পড়লো।
–আপনি আজ এতো তারাতারি এসে পড়েছেন।
ফ্রেশ হয়ে নিন আমি খাবাড় রেডি করি গিয়ে প্রচন্ড তারাহুরোয় কথা গুলো বলে দরজার দিকে যেতে নিতেই ইমন হাত আটকে ধরলো তাঁর।
–মানুষ যখন কারো থেকে কিছু লুকাতে চায় তখন এমন দ্রুত কথা বলে। আর তুমি যেহেতু এই স্বভাবের নয় তাই তুমি এতো চঞ্চলতার সাথে কথা বলে এভাবে চোরের মতো পালাতে চাইলে অবশ্যই বুঝতে হবে তুমি কিছু লুকাতে চাইছো।
আঁতকে ওঠলো মুসকান ভয়ে তাঁর বুকটা হুহু করে কেঁদে ওঠলো। জোর পূর্বক হেসে বললো–কই না তো। আপনার খিদে পেয়েছে তো আসুন খেতে দিবো।
–আমার খিদে পায় নি,,,
ইমনের ধমকে কেঁপে ওঠলো মুসকান। চোখ দুটো পানিতে টলমল করছে।
ইমন মুসকান কে একটানে বিছানায় নিয়ে বসালো।
না কোন কথা না কোন তাকানো সোজা জামার চেইন টান দিলো।
মুসকান ভয়ার্ত স্বরে বললো কি করছেন??
–জাষ্ট স্যাট আপ,,, আমাকে হাত তুলতে বাধ্য করো না মুসকান।
বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে ওঠলো মুসকানের।
–ওনি কি সব জেনে গেছেন। কে বলেছে উনাকে। ভয়ে কাঁপতে শুরু করলো সে।
ইমন জামাটা পুরোই খুলে ফেললো। লজ্জায় চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো এমন পরিস্থিতি তে পড়বে সে ভাবতেও পারেনি। পুরো শরীরে কাঁপুনি ধরে গেলো।
ইমন মুসকানকে পিছন দিক ঘুরিয়ে মুসকানের পিঠ তাঁর বুকে ঠেকালো। পকেট থেকে বার্নার ক্রিম বের করে মুসকানের কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে ফোস্কা পড়া জায়গায় ক্রিম লাগাতে লাগলো।
মুসকানের যতোটা না যন্ত্রণা হচ্ছিল তাঁর থেকেও বেশী লজ্জা লাগছিলো,ভয় লাগছিলো । পুরো শরীরে শিহরন জাগাচ্ছিলো ভীষনভাবে।
ইমনের মুখের সম্পূর্ন শ্বাস তাঁর গলায় পড়ছিলো।
ইমন তাঁর চোখ দিয়ে তাঁকে এ অবস্থায় দেখছে, ফোস্কার জায়গা গুলোতে হাত বিচরন করছে ভাবতেই শিউরে ওঠলো এক হাতে খামচে ধরলো বিছানার চাদর,আরেক হাতে খামচে ধরলো ইমনের এক হাত।
বার বার হাতে বাঁধা সৃষ্টি করায় ইমন গম্ভীর গলায় বললো “স্টপ দিস ননসেন্স ”
–তোমার সাথে এখানে আমি তামাশা করছি না।
আমাকে আমার কাজ করতে দাও ।
কাজ শেষে ওড়না দিয়ে ঢেকে কাবার্ড থেকে একটা শার্ট বের করে আনলো ইমন। ওড়নাটা সড়াতেই মুসকান দুহাতে নিজেকে ঢাকার প্রানপন চেষ্টা করতে লাগলো। লজ্জায় যেনো সে মাটির সাথে মিশে যাবে পারলে।
–হেই ইউ,,, প্রবলেম টা কোথায়? দাদী এতো কিছু শিখিয়েছে এতো কিছু বুঝিয়েছে এটা বোঝায়নি তোমার সবটাতে তোমার থেকেও বেশী অধিকার আমার রয়েছে। আমার সামনে লজ্জা পাচ্ছো কেনো। তোমায় আমি কিছু করছি না শুধু ট্রিটমেন্ট দিচ্ছি।
বলতে বলতেই শার্ট টা পড়িয়ে দিয়ে বোতামগুলো খোলাই রাখলো ওড়নাটা সামনে মেলে দিয়ে বললো–ধীরে ধীরে আরাম পাবে এবার।
মুসকান অবাক নয়নে চেয়ে রইলো।
–মানুষ টা এতো ভালো কেনো?
এই মানুষ টার মতো করে কেউ এতোটা আগলে রাখেনি আমায় সত্যি আমি খুবই ভাগ্যবতী।
পরোক্ষনেই চমকে ওঠলো।
–ওনি কিভাবে জানলো সব,,,
ইমন শার্ট পালটে টি শার্ট পড়ে নিলো। বাথরুম যাবে তখনি মুসকান ওঠে বললো আপনার খাবাড় রেডি করতে হবে তো। আমি কাপড় পাল্টে নেই ।
এবার যেনো ইমন ফুঁসে ওঠলো।
নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে পিছন ঘুরে এক লাফ দিয়েই মুসকানের দুকাধ আঁকড়ে ধরলো।
–কিচ্ছু করতে হবে না তোমায় চুপচাপ রুমে বসে থাকবে। এক পা এদিক ওদিক হলে তোমায় আমি কি করবো নিজেও জানিনা।
–আপনি এতো রাগ করছেন কেনো? আসলে কফি বানাতে গিয়ে একটু লেগে গেছে।
–হোয়াট! মিথ্যে বলছো আমায় তুমি? হাউ ডেয়ার ইউ মুসকান।
মুসকান এক ঢোক গিলে ভয় চোখে তাকালো ইমনের দিকে।
–কাকে বাঁচাতে মিথ্যে বলছো তুমি। ঐ সেলফিশ মহিলা কে?
মুসকান চমকে ওঠলো। ভয়ার্ত দৃষ্টি তে চেয়ে ভয়ার্ত কন্ঠে বললো প্লিজ আপনি মা কে কিছু বলবেন না।
ওনি ইচ্ছে করে করেনি হঠাৎ ই হয়ে গেছে।
প্লিজ আপনি রাগ করবেন না প্লিজ।
ভুল হয়ে গেছে আমার বলেই কাঁদতে লাগলো।
মুসকানের অজস্র চোখের পানিতে ইমন রেগে গেলো।
–মুসকান,,,এতোটা নির্বোধ হওয়া মানায় না। তুমি চার,পাঁচ বছরের বাচ্চা নও যে কেউ তোমার সাথে অন্যায় করলে তুমি প্রতিবাদ করতে পারবে না।
কেউ তোমায় ব্যাথা দিলে সেটা লুকিয়ে রেখে গোপনে কষ্ট পেয়ে তুমি কোন মহৎ ব্যাক্তি হয়ে যাবে না। তুমি কোন গল্পের নায়িকা না,বা তুমি কোন নাটক,সিনেমার হিরোইন না যে, যে কেউ এসে যখন তখন তোমাকে যা খুশি তাই বলে যাবে, যে কেউ এসে তোমাকে আঘাত করে যাবে আর তুমি সিনেমার হিরোইনদের মতো সবটা সহ্য করে নেবে।
মুসকানের দু কাধে ধরে মাথাটা একটু ঝুকিয়ে চোখে চোখ রেখে কড়া গলায় বললো —
লিসেন,,,ইউ আর মাই প্রপার্টি, ইয়েস ইউ আর মাই ওয়াইফ,ইমন চৌধুরীর অর্ধাঙ্গিনী তুমি।
কেঁপে ওঠলো মুসকান ভয় ভয়ে চেয়ে রইলো ইমনের দিকে।
–তোমাকে আঘাত করার রাইট কারো নেই।
তোমাকে ভালোবাসার অধিকার সবার থাকলেও তোমাকে আঘাত করার অধিকার আমি কাউকে দেইনি।
এ বাড়িতে তোমার সাথে কখন কি হচ্ছে না হচ্ছে সবটা আমি জানতে পারি, সবটা আমি এই দুচোখে দেখতে পারি। মুসকানন,,,কি মনে করো তুমি আমায়? ইমন চৌধুরী তাঁর ওয়াইফকে বিনা সিকিউরিটি তে রেখে সারাদিন বিজনেসে মুখ গুঁজে থাকে? এতোটা দায়িত্ব জ্ঞান হীন সে?
“যেখানে, যে বাড়িতে আমিই দুদন্ড শান্তি পাইনি সেই বাড়িতে আমি বিহীন তুমি শান্তিতে স্বস্তিতে থাকবে”?
আমার কথা সেটাতে নয় আমার কথা হচ্ছে তুমি এতোটা স্টুপিট কেনো, হোয়াই??
“ইমন চৌধুরীর ওয়াইফকে এটা মানায় না”
“সারা দুনিয়ার কাছে যেমন ইমন চৌধুরী বাঘের মতো বেঁচে আছে তাঁর ওয়াইফকেও বাঘিনী হয়েই বাঁচতে হবে”
“শুধু আমার জন্য নয় নিজের জন্যও প্রতিবাদী হয়ে ওঠতে হবে ”
একটা কথা মাথায় রেখো তোমার নির্মল স্বভাবটা শুধুই আমার জন্য বাকিদের জন্য নয়।আমার সামনে তুমি যতোটাই কোমলপ্রাণ থাকবে বাইরের মানুষ দের সাথে ততোটাই কঠিনপ্রান হয়ে বাঁচতে হবে।
“মিথ্যাকে সকলের সামনে মিথ্যা বলার সাহস দেখাতে হবে।সত্যি কে সকলের সামনে সত্যি বলতে হবে ”
“অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে তোমায়”
নয়তো সকলেই সুযোগ নিবে নরম মাটি পেয়ে প্রত্যেকটা লোকই সেখানে আঘাত হানবে।
এটা শুধু তোমার ক্ষতি করবে না মুসকান তোমার এই স্বভাবের জন্য আজ তুমি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছো। কাল আমি হবো ভবিষ্যতে আমাদের সন্তান রা হবে।
পারিবারিক, সামাজিক সব দিক দিয়েই আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হবো।
“দুনিয়াটা কি হয়ে গেছে মুসকান এখন আর কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করে না।
” চোখ থাকতে অন্ধ মুখ থাকতে বোবা হয়ে বসবাস করে মানুষ ”
“সময়মতো যদি অন্যায়ের প্রতিবাদ করা না হয়, তাহলে এর ফল গোটা জাতিকে ভোগ করতে হয়। তাই সমাজে কোনো অন্যায়-অনাচার দেখা দিলে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে তা প্রতিহত করা আবশ্যক।
কিন্তু আমাদের সমাজে এখন আর অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে অনেকে আগ্রহ দেখায় না। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া হাজারো অন্যায়কে ঠাণ্ডা মাথায় এড়িয়ে চলে। অন্যায়ের প্রতিবাদকে তারা অযথা ঝামেলায় জড়ানোই মনে করে। এতে মানুষ নিজেদের অজান্তেই গোটা জাতির ওপর আরো বড় বিপদ ডেকে আনে”
“আর এসব মানুষের কাতারে আমি আমার ওয়াইফকে ফেলতে চাইনা”
“মুসকান,,, যে নিজের প্রতি করা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে না, লড়াই করতে পারেনা সে কি করে অন্যদের জন্য লড়বে??
“একটা মেয়ে মানেতো শুধু তাঁর একার জীবন নয়”
“একটা মেয়ে মানে তাঁর সাথে অনেক গুলো জীবন জরিয়ে থাকে” মা,বাবা,ভাই -বোন,স্বামী,সন্তান আরো অনেকেই। আর কারো জন্য না হলেও এমন একটা সময় আসবে নিজের সন্তানের জন্য লড়তে হবে তোমায় আর এ জন্য তোমাকে মানসিকভাবে,শারীরিক ভাবে প্রিপেয়ার হতে হবে।
স্ট্রং পার্সোনালিটির অধিকারী হতে হবে তোমায়।
এখন সময় এসেছে নিজেকে স্ট্রং ভাবে তৈরী করার।
এসময়টা নিজেকে তৈরী করতে না পারলে আর কখনোই পাবেনা।
–“অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সয় সেও সমান অপরাধী ”
ইয়েস আমার চোখে তুমি আজ অপরাধী।
মুসকানের চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়লো।
ইমন মুসকানকে ছেড়ে বিছানায় গিয়ে বসলো।
চোখ দুটো বন্ধ করে এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কোমল দৃষ্টি তে তাকালো সে মুসকানের দিকে।
নিজের রাগটাকে সংযত রেখে শান্ত গলায় বললো —
নামাজ তো পড়ো আমি নামাজ পড়িনা তাই মনে মনে রাগ ও হয় তোমার। নামাজ যখন পড়ো অবশ্যই ইসলাম ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান থাকা অতি জরুরি।
আজ যেসব কথা আমি রেগে ধমকে বলছি এসব কথা বহুবছর পূর্বেই একজন বলে গেছেন।
আমার ওপর অভিমান না করে ঐ গবরযুক্ত মাথায় একটু কথাগুলো ঢুকিয়ে নাও দেখবে আমার প্রতি রাগ অভিমান কিচ্ছু হচ্ছে না।
–“রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষ যখন কোনো অত্যাচারীকে দেখেও অন্যায় থেকে তার হাতকে প্রতিরোধ করবে না, শিগগিরই আল্লাহ তাদের সবার ওপর ব্যাপক আজাব নাজিল করবেন।’ (তিরমিজি ও আবু দাউদ)
সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূল করতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার কোনো বিকল্প নেই। একটা সমাজে অপরাধ তখনই বেড়ে যায়, যখন অপরাধী বারবার অপরাধ করে পার পেয়ে যায়। তাই মহান আল্লাহ সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! ন্যায়বিচারে তোমরা অটল থেকো, আল্লাহর পক্ষে সাক্ষ্য প্রদানকারীরূপে যদিও নিজেদের প্রতিকূলে যায় অথবা পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের, সে ধনী বা গরিব হোক, আল্লাহই উভয়ের জন্য উত্তম অভিভাবক। সুতরাং তোমরা ন্যায়বিচার করতে নিজ নিজ খেয়ালখুশির (পক্ষপাতিত্বের) বশীভূত হয়ো না।’ (সুরা আন-নিসা)
আয়াত-১৩৫।
মুসকানের কান্না থেমে গেলো। অবাক নয়নে ইমনের দিকে চাইলো। যে মানুষ টা নামজ পড়েনা প্রায় রোজই নামাজের সময় তাঁকে ডাকে কিন্তু সে রাগ দেখিয়ে দেয় এক হাঁড়ি।
অভিমান করে আর ডাকেও না। তাঁর মুখে এসব কথা বেশ অবাক হলো সে।
তাহলে কি দাদীর কথাই ঠিক মানুষ টা উপরওয়ালার সাথেও অভিমান করেছে। কিন্তু এটা তো ঠিক না।
ওনাকে তো তাহলে আমায় বোঝাতে হবে।
এই মহা বিশ্বে, সকল মানবজাতির সাথে যাই ঘটে যাক না কেনো কখনোই নিরাশ হওয়া যাবে না।
উপরওয়ালার উপর সব-সময় ভরসা করতে হবে বিশ্বাস রাখতে হবে।
–“আপনি যেমন আমায় বুঝালেন আমিও আপনাকে বোঝাবো ”
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটাই যে এমন। যেই ভুল করুক না কেনো? যেই ভুল পথে যাক না কেনো একে অপরের ভুলগুলো ভাঙিয়ে দিয়ে পাশে থাকতে হবে।
একে অপরের পরিপূরক হয়ে ওঠতে হবে।
এটাই যে নিয়ম,,,
“দাদী বলেছে স্বামী সেবা, স্বামীর আদেশ নিষেধ মান্য করাতেও পূন্য”
“তাহলে অবশ্যই স্ত্রীর কথা মানাও পূন্য আদেশ না করতে পারি আমি না হয় অনুরোধই করবো”
চলবে…..