হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(২৫) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(২৫)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(৬৩)
ডাক্তার আকরাম সহ বাহির থেকে আগত ২জন সার্জারী বিশেষজ্ঞ মিলে নিলাদ্রের নতুন চেহারা প্রদানের জন্য অপারেশন করছেন ২ঘন্টা হলো। অপারেশন থিয়েটারের বাহিরে চিন্তিত মুখশ্রী নিয়ে পায়চারী করছে কুশল। দরজার সামনে রাখা চেয়ারে বসাবস্থায় তরুনিমা শান্ত কন্ঠে কুশলকে বললো….

—“আপনি একটু স্থির হয়ে বসুন প্লিজ।”

—“আমার খুব টেনশন হচ্ছে নিলাদ্রকে নিয়ে তরুনিমা।”

—“টেনশন করবেন না। ইনশাআল্লাহ নিলাদ্র ভাইয়ার অপারেশন ভালোভাবেই সম্পন্ন হবে। এখন আমার এসে এসে বসুন তো আপনি, আসুন।”

কুশল শান্ত ভঙ্গিতে তরুর পাশের চেয়ারের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বসে কপালের উপর এক হাত ভাঁজ করে চোখ বন্ধ করে নেয়। তরু কুশলের দিকে তাকিয়ে বললো….

—“আপনার কি মাথা ব্য*থা করছে?

কুশল ওভাবে থেকেই প্রতিত্তুর করলো….
—“হুম মাথা কিছুটা ধরেছে।”

—“সময়টাই যাচ্ছে এমন মাথার আর কি বা দো*ষ!”

—“তরুনিমা এই মূহূর্তে তোমার কাছে যদি একটা ছোট্ট আবদার করি রাখবে!”

—“কি ধরণের আবদার?”

কুশল ওর কপালের উপর থেকে হাত নামিয়ে তরুর দিকে শান্ত দৃষ্টি স্থির করে বললো….

—“আমার মাথাটা একটু টি*পে দিবে?”

কুশলের এমন আবদারে তরু বেশ অবাক হয়। কিন্তু মুখ দিয়ে ‘না পারবো না’ বাক্যটি উচ্চারণ করার শক্তি সে পাচ্ছে না। কুশল আরো কিছুসময় তরুর দিকে তাকিয়ে রয়। তরুকে কোনো প্রতিত্তুর করতে না দেখে কুশল বললো….

—“নিরবতাই সম্মতির লক্ষ্মণ।”

এই বলে কুশল তরুকে কিছু বুঝে উঠার সুযোগ না দিয়েই ওর কোলের উপর মাথা রেখে বাকি চেয়ারগুলোর উপর শরীর এলিয়ে দেয়। কুশলের এমন কাজে তরু যেনো অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। কুশল তরুর ডান হাত নিজের কপালের উপর রেখে বললো….

—“এখন যদি তুমি আমাকে নি*র্ল*জ্জ বলো তাতেও আমার কিছু যায় আসবে না। তোমার প্রশ্ন শুনে আমার মাথা ব্য*থা বেড়েছে। দো*ষ যেহেতু তুমি করেছো তাই শা*স্তি সরূপ তোমাকে আমার মাথা টি*পে দিতেই হবে।”

এই বলে কুশল চোখ বুঁজে নেয়। সম্পূর্ণ বিষয়টা হ*জ*ম করে নিয়ে স্বাভাবিক হতে তরুর কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে। অতঃপর তরু কুশলের মাথা টি*পে দিতে শুরু করে। অদ্ভুত বিষয় নিজের এতো কাছে কুশলের অবস্থান বুঝেও তরুর মাঝে কোনোরূপ অ*স্ব*স্তি বোধ হচ্ছে না বরং অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে। যেই অনুভূতির মাঝে নেই কোনো খারাপ লাগা, বি*র*ক্তি বা রাগের চিহ্ন। এটাই বোধ হয় পবিত্র সম্পর্কের মাঝে কাজ করা অদৃশ্য কোনো ভালোলাগার অনুভূতি।

(৬৪)
সন্ধ্যার কেবিনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দরজার উপরিভাগে লাগানো ছোট কাঁচের অংশ ভেদ করে ঘুমন্ত সন্ধ্যার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে সাদিক বললো…..

—“নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে অন্য কাওকে পাগলের মতো ভালোবাইসা নিজের জীবন শে*ষ করতে দেখার মতো জ*ঘ*ন্য অনূভুতি হয়তো পৃথিবীতে আর ২য় কিছুতে হয় না।”

এই বলে সাদিক ওর ডান হাতের উল্টোপিঠ দিয়া চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রুকণাগুলো মুছতে মুছতে স্থান ত্যগ করে।

(৬৫)
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল গেইটের সামনে ফুলের মালা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তমিজ তালুকদার ও তমিজ তালুকদারের পারসোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট রাব্বি। তাদের থেকে কিছুটা দূরে নেভি ব্লু পোশাকধারী ১০ জন গার্ডস ব*ন্দু*ক হাতে দাঁড়িয়ে আছে। সেইসময় কারাগারের মূল দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দু’জন কন্সটেবল দরজা খুলে দিলে বাহিরে বেড়িয়ে আসেন তমিজ তালুকদারের একমাত্র ছেলে তওকির তালুকদার তাহির। দীর্ঘ ৫ বছর পর তাহির কারাগার থেকে মুক্তি পেলো। অগোছালো চুল, গাল ভর্তি দাঁড়ি, চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গিয়েছে তাহিরের। তমিজ তালুকদার তাহিরের কাছে এসে মালা ওর গলায় পড়িয়ে দিয়ে বললেন….

—“আহহহ, আমার টাইগার বেটা অবশেষে জেলখানা থেকে বেড়িয়ে এসেছে। তোকে ছাড়া তালুকদার ভিলা এতোদিন মরুভূমিতে পানিশূন্যতার মতো খাঁ খাঁ করছিলো। আজ তোর পা তালুকদার ভিলাতে পড়ার সাথে সাথে তালুকদার ভিলার প্রাণ ফিরে আসবে। চল বেটা বাড়ি চল। সবাই তোকে দেখার জন্য অপেক্ষা করছে যে।”

তাহির ওর গলা থেকে ফুলের মালাটা খুলে রাব্বির হাতে দিয়ে গম্ভীর স্বরে বললো…

—“হুম চলো বাড়িতে। আমার একটু আরাম করে ঘুমানো প্রয়োজন। তারপর আগামীকাল যাদের কাছে পুরোনো কিছু হিসেব জমা পরে আছে তাদেরকেও আমার দর্শন দিতে যেতে হবে। আর আমার জানপাখিটাকেও দেখার জন্য মন ভিষণ অস্থির হয়ে আছে। এখন তো অনেক বড় হয়ে গিয়েছে সে। বিয়ের বয়স ও হয়েছে নিশ্চয়ই।”

তাহিরের মুখে এমন কথা শুনে তমিজ তালুকদারের চেহারায় চিন্তার ছা*প ফুটে উঠে। অতঃপর ওরা গাড়িতে উঠে বসে তালুকদার ভিলার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে।

(৬৬)
কুশল তরুর কোল থেকে মাথা তুলে উঠে বসে ঘাড় এপাশ-ওপাশ নাড়াতে নাড়াতে বললো…

—“তোমার হাতে কি কোনো জাদু আছে বউ! এইটুকু সময় মাথা টি*পে দিলে এতেই আমার মাথা ব্য*থা পুরোপুরি গা*য়ে*ব হয়ে গেলো। আমি তো ঠিক করেই নিলাম এরপর থেকে যখনি আমার মাথা ব্য*থা করবে তোমার থেকে মাথা টি*পে নিবো।”

তরু চোখ ছোট ছোট করে কুশলের দিকে তাকিয়ে বিরবিরিয়ে বললো…..
—“ইসসস…খা*রু*শের মাথা টিপে দিতে আমার যেনো কতো ঠ্য*কা পড়ে গিয়েছে! আজ ১ম দিয়েছে আজই শেষ এরপর আর কখনও দিতে পারবো না।”

এই বলেই মুখ বাঁ*কিয়ে অন্যদিকে দৃষ্টি স্থির করে তরুনিমা। সেইসময় অপারেশন থিয়েটারের দরজার উপর জ্বলতে থাকা লাল বাতিটা বন্ধ হয়ে যায়। ও.টির দরজা খুলে বেড়িয়ে আসেন ডাক্তার আকরাম সহ বাকি ২জন সার্জন বিশেষজ্ঞ। কুশল আর তরুনিমা বসাবস্থা থেকে উঠে ডাক্তার আকরামের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই তিনি হাসিমুখে বললেন…

—“আল্লাহর অশেষ রহমতে সৌহার্দ্য ইশরাকের অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে। কিছুসময় পর ওনাকে কেবিনে সিফট করা হবে। ওনার সম্পূর্ণ মুখে ব্য*ন্ডে*জ করে রাখা হয়েছে। ২৪ ঘন্টা পর আপনারা ওনার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবেন। ইনশাআল্লাহ ১০দিন পর ওনার মুখের ব্য*ন্ডে*জ খুলে ফেলা যাবে। আর উনি সম্পূর্ণ নতুন চেহারা নিয়ে পুরোপুরি ভাবে সুস্থ জীবন কাটাতে পারবেন।”

ডাক্তার আকরামের মুখে সৌহার্দ্য ইশরাক নামটা শুনে তরুনিমা অবাক দৃষ্টি নিয়ে কুশলের দিকে তাকায়। কুশল ডাক্তার আকরামকে ধন্যবাদ জানায়। অতঃপর ডাক্তার আকরাম স্থান ত্যগ করলে কুশল চেয়ারে বসতে বসতে শান্ত স্বরে বললো….

—“এতো বেশি অবাক হচ্ছো যে! নিলাদ্রের নতুন চেহারা, নতুন নাম-পরিচয় দিতে হবে ভুলে গেলে নাকি! নিলাদ্রের নতুন নামই হলো সৌহার্দ্য ইশরাক। গত পড়শু যখন এই ক্লিনিকে ওকে ভর্তি করিয়েছিলে তখন রিসেপশনের ভর্তি ফর্মে তো নিলাদ্রের আসল নামই লিখেছিলে। নিলাদ্রের জীবন নিয়ে সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত থাকতে আমি রিসেপশনে কাজকৃত মহিলাটিকে মোটা টাকা দিয়ে নিলাদ্রের নতুন নাম ও পরিচয় এডড করিয়ে পুরোনো ডিটেইলস রিমুভ করিয়ে নিয়েছি। তাই আমাদের গোপন শ*ত্রু এই পুরো ক্লিনিকে চিরুনি ত*ল্লা*শি করেও নিলাদ্রকে খুঁজে বের করতে পারবে না।”

কুশলের এতো নিখুঁত পরিকল্পনা শুনে তরুর মুখ অটোমেটিক হা হয়ে গিয়েছে৷ কুশল বাঁকা হেসে বললো….

—“মুখ বন্ধ করো নয়তো মুখের ভিতর মশা-মাছিরা প্রবেশ করে নিজেদের সংসার বসাবে।”

কুশলের এমন কথা শোনামাত্র তরু ঘে*ন্না*য় চোখ-মুখ কুঁচকে নিয়ে বললো….
—“ষ্য*হ…কি বা*জে কথাবার্তা।”

তরুর মুখের অবস্থা আর কথাটুকু শুনে কুশল শব্দ করে হেসে উঠে। তরু আর সেখানে না দাঁড়িয়ে সন্ধ্যার কেবিনের দিকে হাঁটতে শুরু করে।

পরক্ষণেই কুশল হাসি থামিয়ে বসাবস্থা থেকে উঠে ক্লিনিকের বাহিরে চলে আসে। সেইসময় সাদিক কুশলের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো….

—“স্যার…চাষীর মেয়েকে ধ্ব*র্ষ*ণের পর হ*ত্যা*র চেষ্টা করায় আগামী পড়শু মেম্বারের ছেলের বিচারের বৈঠকখানা বসার কথা ছিলো।”

—“মেয়েটার শারীরিক অবস্থা এখন কেমন?”

—“মেয়েটি আগের তুলনায় অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছে। তাই আজই ওকে ক্লিনিক থেকে রিলিজ করে দিবে বলেছেন, স্যার।”

—“আগামীকাল বিকালে আমি গ্রামে যাবো। আর মেয়েটাকেও সাবধানে গ্রামে তার নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করো। ওর বাড়ির চারপাশে গার্ডসদের পাহাড়া দিতে বলবে ২৪ ঘন্টা।”

—“ঠিক আছে, স্যার।”

এই বলে সাদিক চলে যায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here