হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(১৮) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(১৮)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(৪৪)
কুশল তরুকে পাজাকোলে নিয়ে ওয়াশরুমের ভিতরে প্রবেশ করে বেসিনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ওকে নামিয়ে দেয়। তরু ছো*টার চেষ্টা করলে কুশল বেসিনের পানির নল ছেড়ে দিয়ে জোর করে তরু হাত পানির নিচে রাখে। অতঃপর কুশল তরুর কানের কাছে নিজের মুখ এগিয়ে নিয়ে গিয়ে শান্ত স্বরে বললো……

—“এই লাল রং শুধু ঠোঁটেই মানায় হাতে নয়। তুমি যে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে নিজের লিপস্টিক উঠিয়ে হাতে লাগিয়ে নিয়ে পরমূহূর্তেই স্বইচ্ছায় সুটকেইসের ঢাকনাটি নিজের হাতে উপর ফেলেছিলে তোমার এই সম্পূর্ণ কার্যকলাপ আমি আয়না দিয়ে লক্ষ্য করেছিলাম।”

কুশলের মুখে এরূপ কথাগুলো শুনে তরু শান্ত হয়ে যায়।কুশল তরুর আঙুলের গিঁ*ট গুলো থেকে লিপস্টিক এর রং পরিষ্কার করে পানির নল বন্ধ করে দিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে যায়। কিছুসময় পর তরুনিমা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ওয়ারড্রবের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে কুশলকে প্রশ্ন করলো….

—“আপনি কি সুটকেইসে নিজের জামা-কাপড় নিয়ে ব*ন*বাসে চলে যাবেন বলে ঠিক করেছেন?”

—“গ্রামে যাবো, কিছু জরুরী কাজ আছে।”

—“কি কাজ!”

—“আমি আমার কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত সেই বিষয়ে কাওকে বলি না।”

তরুনিমা চোখ ছোট ছোট করে কুশলের দিকে তাকিয়ে বললো….
—“আমাকে কি আপনার শ*ত্রু পক্ষের সঙ্গী বলে মনে হয় যে আমি আপনার কাজ সম্পর্কে জানতে পারলে সে কাজ সম্পন্ন হওয়ার পথে বাধার সৃষ্টি করবো!”

—“কাজের বিষয়ে আমি আমার নিজের ছায়াকেও বিশ্বাস করি না। আর মেয়ে মানুষের পেটের ভিতর লম্বা সময় ধরে কথা ধরে রাখার ক্ষমতা নেই বললেই চলে।”

এই বলে কুশল নিজের সুটকেইস নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। তরু কুশলের যাওয়ার পানে ফ্য*ল ফ্য*ল দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থেকে বললো….

—“উনি কি কোনো ভাবে আমাকে অ*প*মা*ন করলেন?”

পরক্ষণেই তরুনিমাও রুম থেকে বেড়িয়ে কুশলের পিছন পিছন যেতে শুরু করে।

(৪৫)
আলমারী থেকে একের পর এক শাড়ি ও জামা বের করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের উপর ধরে ধরে দেখছে আর মেঝের উপর ফেলছে সন্ধ্যা। কোন জামাটি বা কোন শাড়িটা পড়লে তাকে সবথেকে বেশি সুন্দর লাগবে তা কিছুতেই সে চূড়ান্ত করতে পারছে না। সন্ধ্যা ক্লান্তি আর বিরক্তি নিয়ে ধপ করে মেঝেতে বসে পরে বললো….

—“কোনটা যে পড়বো! ভালো লাগছে না কিছু ধ্য*ত।”

পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে সন্ধ্যা বসাবস্থা থেকে উঠে দাড়িয়ে নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে নিলাদ্রের রুমের দিকে হাঁটা ধরে। কিছুসময় হাঁটার পর নিলাদ্রের রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়াতেই সন্ধ্যা দেখে নিলাদ্র শার্ট, প্যন্ট পড়ে রেডি হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল চিরুনি করছে। আয়নায় দরজায় দাড়ানো সন্ধ্যার প্রতিচ্ছবি দেখামাত্র নিলাদ্র চিরুনিটা রেখে হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বললো….

—“কি রে কিছু বলবি?”

সন্ধ্যা রুমের ভিতরে প্রবেশ করতে করতে বললো….
—“কিছু বলার নেই কিন্তু আপনাকে দিয়ে আমার একটা কাজ করানোর আছে, এক্ষুণি একবার আসুন তো আমার সাথে।”

নিলাদ্র সন্ধ্যার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করলো…..
—“কি কাজ শুনি?”

—“সেটা আমার সাথে গেলেই বুঝতে পারবেন।”

নিলাদ্র নিজের মধ্যে কিছুটা ভাব নিয়ে বললো….
—“এই যা তো এখান থেকে, আমি এখন তোর কোনো কাজ করতে পারবো না। আমার কিছু কাজ আছে তাই বাহিরে যেতে হবে এখন।”

নিলাদ্রের এমন কথায় সন্ধ্যা নিজের চেহারায় হালকা রাগ ভাব ফুটিয়ে বিরবিরিয়ে বললো….
—“আমার সাথে ভাব নিচ্ছে এখন ডে*ভি*ল টা। দ্বারা দেখাচ্ছি মজা।”

পরক্ষণেই নিলাদ্রকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সন্ধ্যা নিলাদ্রের হাত ধরে টানতে টানতে রুমের বাহিরে নিয়ে যেতে শুরু করে। নিলাদ্র সন্ধ্যার সাথে যেতে যেতে বললো….

—“দেখ সন্ধ্যা এখন আমি তোর কোনো কাজ করে দিতে পারবো না কিন্তু।”

—“আপনি পারবেন না মানে আপনার ঘাড় শুদ্ধ পারবে। আর সবার কাছে গিয়ে নিজের এই ভাব দেখাইয়েন আমার কাছে না।”

সন্ধ্যার এমন কথায় নিলাদ্র মিটিমিটি হাসে। নিলাদ্র তো সবসময় এটাই চায় সন্ধ্যা যেনো তাকে বুঝে, তার ভালোবাসা বুঝে। নিলাদ্র যেমন কারণে অকারণে সন্ধ্যার কাছে নিজের ভালোবাসা নিয়ে হাজির হয় ঠিক তেমনি সন্ধ্যাও যেনো নিলাদ্রের ভালোবাসা গ্রহন করে তার উপর জোর খাটায়।

সন্ধ্যা নিলাদ্রকে নিজের রুমে আসতেই নিলাদ্র রুমের বে*হাল অবস্থা দেখে হা হয়ে যায়। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে নিলাদ্র সন্ধ্যার মাথার পিছনে হালকা ভাবে চ*ড় দিয়ে বললো….

—“এটা কি কোনো মেয়ে মানুষের রুম নাকি আবর্জনার স্তূপ রে! এ কি দূ*র্দ*শা করে রেখেছিস তুই রুমের! এখন কি আমাকে দিয়ে এই সব কাপড় গুছিয়ে নেওয়ার জন্য এখানে নিয়ে আসলি তুই? এই তোর কাজ?”

সন্ধ্যা নিজের মাথার পিছনে হাত বুলাতে বুলাতে রুমের মাঝ বরাবর কাপড় গুলোর মাঝে বাবু সাহেবের মতো করে বসে নিলাদ্রের দিকে অসহায় মুখশ্রী নিয়ে তাকিয়ে বললো….

—“এখান থেকে আমায় একটা শাড়ি বা জামা সিলেক্ট করে দিন প্লিজ। আমি অনেক সময় ধরে আলমারী থেকে সব জামা-কাপড় বের করে নিজের উপর একটা একটা করে ধরে ধরে দেখেও কোনো একটাতে মনঃস্থির করতে পারি নি।”

নিলাদ্র সন্ধ্যাকে আর কিছু না বলে মেঝেতে পড়ে থাকা জামা আর শাড়িগুলো দেখতে শুরু করে। কিছুসময় দেখার পর নিলাদ্র সাদা সুতোর কারুকাজে তৈরি গাড় লাল রংয়ের একটা শাড়ি হাতে তুলে নিয়ে বললো….

—“উঠে দাঁড়া তো।”

সন্ধ্যা উঠে দাঁড়ায়। নিলাদ্র সন্ধ্যার হাত ধরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাতে থাকা শাড়িটা সন্ধ্যার কাঁধের উপর রেখে আয়নার মাঝে সন্ধ্যার প্রতিচ্ছবির উপর দৃষ্টি স্থির করে ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি ফুটিয়ে বললো….

—“এই শাড়িটা পড়লে তোকে সবথেকে সুন্দর লাগবে। আজ রাতে এই শাড়িটা পরে খুব সুন্দর ভাবে সেজে আমার জন্য ছাদে অপেক্ষা করিস! আমি এসে তোর অপেক্ষা অবসান ঘটাবো। তারপর তোর মুখ থেকে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ দু’টি শুনে নিজের অশান্ত মনটাকে শান্ত করবো।”

নিলাদ্রের কথায় সন্ধ্যা নিজের চেহারায় লজ্জাভাব ফুটিয়ে মাথা নিচু করে নেয়। নিলাদ্র সন্ধ্যার লজ্জা ভাব দেখে বললো…

—“এভাবে লজ্জা পেয়ে আমাকে আর য*ন্ত্র*ণা দিস না।”

সন্ধ্যা আরো বেশি লজ্জা পেয়ে পিছন ঘুরে নিলাদ্রকে ঠেলে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে বললো….

—“এই আপনি এখন যান তো, আপনার না কি যেনো কাজ আছে। যান গিয়ে সেই কাজ শেষ করুন।”

নিলাদ্র আর কিছু না বলে প্যন্টের দুই পকেটে দু’হাত রেখে হাসতে হাসতে সন্ধ্যার রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।

(৪৬)
কুশল গাড়ির পিছনে এসে দাঁড়িয়ে ডিকিটা খুলে সেখানে নিজের সুটকেইসটা রেখে দেয়। ইতিমধ্যে পশ্চিমাকাশে সূর্য ঢলে পড়তে শুরু করেছে। সূর্যের শেষ লালচে আভায় পুরো পরিবেশে এক অন্যরকম সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়েছে। পরমূহূর্তে কুশল ডিকিটা বন্ধ করে ড্রাইভিং সিটের দরজা খুলতেই দেখে পাশের সিটে তরুনিমা পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। কুশল ড্রাইভিং সিটে বসতে বসতে তরুকে প্রশ্ন করলো….

—“তুমি এখানে কি করছো?”

—“আমিও গ্রামে যাবো। বহুবছর হলো গ্রাম সাইডে যাওয়া হয় না। হঠাৎই কেনো জানি না গ্রামের মনমুগ্ধকর সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য মনের মাঝে প্রবল ইচ্ছে জাগলো। আপনি যেহেতু গ্রামে যাচ্ছেন ই তাই ভাবলাম আপনার সাথেই চলে যাই।”

কুশল গাড়ির দরজা আটকে দিয়ে তরুর দিকে কিছুটা ঝুঁকে ওর সিটবেল্ট লাগিয়ে দিতে দিতে বললো….

—“সরাসরি বললেই পারো আমার একলা গ্রামে যাওয়া নিয়ে তুমি ভরসা পাচ্ছো না। তাই এতো সুন্দর বাহানা তৈরি করে আমার সাথেই গ্রামে যাবে বলে মনঃস্থির করেছো।”

কুশলের নিজের এতো কাছাকাছি আসার জন্য তরু যেনো নিঃশ্বাস ফেলতেই ভুলে গিয়েছে। কুশল নিজের সিটে ভালোভাবে বসে ঠোঁটে স্মিত হাসি ফুটিয়ে বললো…

—“আমাদের সন্তানদের পটি পরিষ্কার করার ভ*য়ে কি নিঃশ্বাস ফেলা বন্ধ করে নিজেকে শে*ষ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করলে তুমি!”

কুশলের মুখে এমন কথা শুনে তরুর মুখ অটোমেটিক হা হয়ে যায়। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে তরু জানালার পাশে মুখ ঘুরিয়ে বিরবিরিয়ে বললো….

—“কতো বড় খ*চ্চ*ড় এই মানুষটা ভাবা যায়!”

তরুর রিয়াকশন দেখে কুশল হাসতে হাসতে গাড়ি স্টার্ট করে।

২ ঘন্টার রাস্তা অতিক্রম করার পর হঠাৎ একটা ব্রিজের সামনে আসতেই রাস্তার মাঝে অনেক মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কুশল গাড়ির ব্রেক ক*ষে। তরুও সামনের দিকে লক্ষ করার পর কুশলকে বললো….

—“কি হয়েছে সামনে এতো লোকের ভিড় কেনো?”

কুশল নিজের সিটবেল্ট খুলতে খুলতে বললো…
—“তুমি গাড়ি থেকে নেমো না। আমি দেখছি কি হয়েছে।”

তরু জেদী স্বরে বললো….
—“আমি একা একা গাড়িতে বসে কি করবো? আমিও দেখতে চাই কি হয়েছে ওখানে।”

—“আচ্ছা নামো গাড়ি থেকে।”

তরু নিজের সিটবেল্ট খুলে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। কুশল ও গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির দরজা লক করে তরুর কাছে এসে ওর হাত শক্ত করে ধরে সামনের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। কিছুটা পথ অগ্রসর হওয়ার পর দু’জন লোক তরুদের পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে কুশল তাদের উদ্দেশ্য করে বললো….

—“সামনে এতো লোকের ভি*ড় কেনো ভাই? কি হয়েছে ওখানে?”

লোক দু’জনের মাঝে একজন আফসোসের কন্ঠে বললো….
—“রাজপুত্তুরের মতো একটা পোলা গো, বয়স ২৭-২৮ হইবো। না জানি কোন গাড়ি আইসা পোলাটারে ধা*ক্কা দিছে। সম্পূর্ণ মুখের অবস্থা বি*কৃ*ত হইয়া গেছে। চেহারা দেইখা চেনার কোনো উপায় নাই। সম্পূর্ণ শরীর আর রাস্তা র*ক্ত দিয়া ভাইসা গেছে। মনে হয় না পোলাটা বাঁইচা আছে এখনও। না জানি কোন বাপ-মায়ের কোল সন্তান হা*রা হইয়া গেলো।”

এই বলে লোক দু’জন চলে যায়। তরুর হাত-পা ইতিমধ্যেই কাঁ*পতে শুরু করেছে। মনের ভিতর অজানা ভ*য় কাজ করছে। কুশল তরুর হাত ধরে আবারও সামনের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে।

চলবে ইনশাআল্লাহ…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here