স্বর্ণাভ_সুখানুভূতি। (পর্ব-২৮)

#স্বর্ণাভ_সুখানুভূতি। (পর্ব-২৮)
আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা

সমুদ্রের বুক থেকে রক্তিম সূর্য উঁকি দিচ্ছে। অর্ধাংশ আকাশ,অর্ধাংশ সমুদ্রের বুকে। সমুদ্র তীর থেকে এমনটাই মনে হচ্ছে। দিগন্তের শেষের আকাশটা দেখা যাচ্ছে, যতদূর চোখ যাচ্ছে যতদূর ঢেউ খেলানো সমুদ্র চোখে পড়ছে। হিমেল হাওয়া গায়ে মাখিয়ে সমুদ্র তীরে বসে আছে মুশরাফা। মুগ্ধ নয়নে পরখ করছে সূর্যোদয়। কানে ইয়ার ফোন গুজানো, তাতে বাজছে সুরা আর রাহমান। আল্লাহর সৃষ্টি সৌন্দর্যের সাথে তাল মিলিয়ে যেন বলে উঠছে, “ফাবি আইয়্যি আ-লা-ই রাব্বিকুমা তুকাজ্জিবান। (অর্থ্যাৎ তোমার আল্লাহর কোন কোন নেয়ামতকে অস্বীকার করবে?’)

পাশে বসা জাওয়াদ, মুশরাফার মাথাটা ওর কাধে। ওর কানে ও একটা ইয়ার ফোন গুজানো। দুজনে এক ইয়ারফোন শেয়ার করছে। তেলাওয়াত শোনার ফাঁকে দেখছে সূর্যোদয়। কী চমৎকার দৃশ্য! কতদিনের স্বপ্ন ছিল ওর! এভাবে সূর্যোদয় দেখবে। অবশেষে পুরণ হলো। সুখের মাতম বইছে মনে।
জাওয়াদ চুপচাপ বসে আছে। আকাশ থেকে চোখ ফিরিয়ে খানিক পরপর তাকাচ্ছে স্ত্রীর দিকে, একটা মিস্ট্রি বক্সের দিকে। যার ভেতর থেকে প্রতিনিয়ত বেরিয়ে আসছে চমকপ্রদ তথ্য। যে ওকে প্রেম শেখাচ্ছে, শেখাচ্ছে জীবনের মানে।

মুশরাফা মুখ টিপে হেসে বলল,
‘আমাকে তো বেলা গড়ালেও দেখতে পারবেন। এখন সূর্যোদয় দেখুন। কী সুন্দর আল্লাহর সৃষ্টি! সুবহানাল্লাহ ! বেলা গড়ালে কিন্তু এটা দেখা যাবে না।’

কী পাজি মেয়ে! এভাবে কেউ বলে! বেয়াদব। জাওয়াদ রেগে তাকাল ওর দিকে। মুশরাফা চোখে চোখে রেখেই হাসল। বলল,
‘ আচ্ছা, আপনার আপত্তি থাকলে সূর্যোদয় দেখবেন না। আমি সূর্যোদয় দেখি, আপনি বরং আমাকে দেখুন। আমি কিছু মনে করব না।’

জাওয়াদ রেগে প্রতিবাদ করে উঠল, ‘তোমার রূপ বেয়ে বেয়ে পড়ছে না যে আমি তোমাকে দেখব?যত্তসব উদ্ভট কথাবার্তা। সরো আমার কাধ থেকে।’

জাওয়াদ দূরে সরে গেল। ও রেগে যাচ্ছে বুঝতে পেরে মুশরাফা অনুতাপ্ত হয়ে বলল,
‘ আচ্ছা স্যরি। আপনি আমাকে লুকিয়ে দেখেন আর সরাসরি দেখেন, আমি কখনো টের পাব না। দেখে ও না দেখার ভান করব, আপনাকে বলব ও না। তাও কাধে মাথা রাখতে দিন।’

জাওয়াদ গম্ভীরমুখে বলল, ‘আমি পটছিনা। দূরে যাও।’

মুশরাফা নিজ উদ্যমে এগিয়ে গিয়ে ওর কাধে মাথা রাখল। হেসে বলল, ‘ আপনি, আপনার সবকিছু আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। এখন দূরাদূরের কোন ব্যাপার আসবে না। যা আসবে তা হলো কাছাকাছি, পাশাপাশি আর ভালোবাসা বাসি।’

ইতঃপূর্বে জাওয়াদের ধারণা ছিল, ও সহজে মানুষকে পটাতে পারে। একটা মেয়েকে পটাতে ওর বেশিদিন লাগতো না। কথার জালে জড়িয়ে নিজের বশে করে ফেলতো। ওর গার্লফ্রেন্ডরা ওর উপর বেশিক্ষন রেগে থাকতে পারতো না,যত রাগই হোক পাঁচ মিনিট কথা বললে রাগ নিঃশেষ হয়ে যেত।
কিন্তু এই ক্ষণে এসে মনে হচ্ছে, এ দিক দিয়ে মুশরাফা ওকে হার মানায়। পাঁচ মিনিট না পাঁচ সেকেন্ডে মানুষকে বশে আনার ক্ষমতা রাখে এই মেয়ে। কীসব সংলাপ ছাড়ে, রাগ করে থাকাই যায় না। মেয়েটা সুবিধার না। বেয়াদব।

সকাল তখন দশটা। ওরা বিচে বসা ছিল। সূর্যোদয় দেখে জাওয়াদ দুটো কিটকট ভাড়া করে নিয়েছিল। ছায়াতলে আরামে বসে সমুদ্র দেখছিল। আকস্মিক জাওয়াদের ফোন বেজে উঠল। ফোন হাতে নিয়ে দেখল মা। নাম্বারটা ভালো করে দেখল, মায়মুনার কল। ও ভীত ঢোক গিলল। এখন নিশ্চিত ঝাড়ি শুনতে হবে ওর। জাওয়াদ মুশরাফার সামনে কল ধরতে চাইল না, উঠে দাঁড়াল। নিজের মাথায় পরে থাকা হ্যাট খুলে কিটকটের উপর রেখে বলল,
‘ আমি কথা বলে আসছি। তুমি খেয়াল রেখো, কেউ যেন না বসে। কেউ এলে বলবে, এটা বুক। ঠিক আছে?’

মুশরাফা সায় জানাল। জাওয়াদ ফোন নিয়ে রৌদ্রদগ্ধ বিচের বালিতে নামল। ফোন রিসিভ করে কানে দিতেই মায়মুনার স্বর ভেসে এলো,
‘ হ্যালো। জাওয়াদ?’
জাওয়াদ নরম স্বরে বলল, ‘হ্যাঁ মা। ভালো আছো?’
‘আছি। তুই ভালো আছিস?’ মায়মুনার স্বর নরম ছিল। ক্ষণে ক্ষণে রাগের আভা ফুটে উঠছে।

জাওয়াদ ধীর স্বরে বলল, ‘আছি।’

মায়মুনা এবার তেজী স্বরে বললেন, ‘থাকবিই তো। এখন বউ পেয়ে গিয়েছিস না? বউ নিয়ে হানিমুন করছিস। একটা বার বলার প্রয়োজন মনে করলি না। বউ পেয়ে মাকে ভুলে গেছিস। ভালো তো থাকবিই।’

জাওয়াদ ভীত ঢোক গিলল। নরম গলায় বলল, ‘ এসব কী বলছো মা? দু’দিনের বউয়ের জন্য মাকে ভুলে যাব? অসম্ভব। আমি পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি তো তোমাকেই ভালোবাসি। বউ টউ বাদ।’

মায়মুনার স্বর কিছুটা নরম হলো। অভিমানী স্বরে বললেন, ‘ দেখছি কেমন ভালোবাসিস। মাকে না বলেই এতদূর চলে গেলি।’

জাওয়াদ বিরসমুখে বলল,
‘ বিশ্বাস করো মা, আমার একটু ও ইচ্ছে ছিল না আসার। হানিমুন প্যাকেজ মামা দিয়েছেন। আমাকে না বলেই সব এরেঞ্জ করে ফেলেছেন। সব ঠিকঠাক করে বাসের টিকেট ধরিয়ে দিয়ে বললেন, আজ রাতে তোমাদের বাস। কেমন লাগে বলো? আমি কত অনুনয় বিনয় করে ক্যান্সেল করতে বললাম। কিন্তু মামা শুনলেন না।
আমি শুনেছি সন্ধ্যায়। এত তাড়া ছিল যে, আমি আমার কাপড় ও আনতে পারি নি। তাড়াহুড়ায় বেরিয়ে গিয়েছি। ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে তোমাকে জানাতে পারিনি। চার্জার ও আনিনি। কাল রাতে চার্জার কিনে চার্জ দিয়ে সবে ওপেন করেছি। তোমাকে কল দিব ভাবছিলাম, তখনই তুমি কল দিয়েছো। স্যরি মা।’

জাওয়াদের স্বরে অনুতাপ। চার্জার না আনার ব্যাপারটা মিথ্যা নয়। ছেলের দুঃখী দুঃখী ভাব দেখে মায়মুনা বিশ্বাস করলেন ছেলের কথা। কোমল স্বরে বলল,
‘এখন আছিস কই?’

‘বাইরে। রোদে রোদে হাঁটছি।’

মায়মুনা রয়েসয়ে বললেন, ‘তোর বউ কই?’

জাওয়াদ মুশরাফার মুখোমুখি অনেকটা দূরে দাঁড়ানো। কথা বলার ফাঁকে ওর দিকে নজর রাখছে। ওর দিকে তাকিয়ে বিরসমুখে বলল,
‘ হোটেলে রেখে এসেছিলাম সকালে। এখন কই আছে জানি না। ‘ ওর স্বরে বিতৃষ্ণা।

মায়মুনা ছেলের ভাবে খুশি হলেন। জিজ্ঞেস করলেন,
‘কিছু খেয়েছিস?’
‘না। ‘

দুঃখ ঝরে গেল জাওয়াদের মুখ থেকে। মায়মুনা তিক্ত গলায় বললেন,
‘এই মেয়ে তোকে তাবিজ করছে। পাগল বানিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরানোর ধান্দায় নেমেছে। দেখো, কেমন নাওয়া খাওয়া ছেড়ে রোদে রোদে হাঁটছে আমার ছেলে! শুধু মেয়ে না, ওর পুরো গুষ্ঠি এর সাথে জড়িত।’

জাওয়াদ দূর থেকে মুশরাফার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চেপে হাসল। দুঃখী গলায় বলল,
‘ঠিক বলেছো মা। না হয়, আমি হুটহাট বাড়ি ছেড়ে কক্সবাজার চলে আসি! আমার ও তাই মনে হচ্ছে। মা তুমি এক কাজ করো, কোন গুণিনের খবর নাও। আমি এসেই তোমার সাথে যাব। আমি লণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছি। আমার চিকিৎসা দরকার। ‘

লাই পেয়ে মায়মুনা খুশি হলেন। স্বর থেকে রাগ চলে গেল। উৎফুল্ল হয়ে বলল,
‘ঠিক আছে। তুই এলেই আমি তোকে নিয়ে যাব বাবার কাছে। ওই মেয়ের আছর কাটলেই তোকে আবার বিয়ে করাব।’

জাওয়াদ বাধ্য ছেলের মতো বলল, ‘তুমি যা বলবে, তাই হবে। ওই মেয়ের বশ থেকে ছাড়া পেলেই আমি আবার বিয়ে করব। তোমার জন্য একটা কেন, চারটা বিয়ে করতে ও রাজি। বউ গেলে বউ আসবে, মা গেলে আসবে না। আমার তো একটাই মা।’

মায়মুনা খুশিতে গদগদ হয়ে গেলেন। বললেন,
‘তুই কবে আসবি? আজই চলে আয়। ওই মেয়ে থাকুক ওর মামার প্যাকেজ নিয়ে।’

জাওয়াদ আফসোসের ভান করে বলল, ‘ পারলে তো আমি আজই চলে আসি। কিন্তু আরও দুইদিন থাকতে হবে। ভেবে দেখো মা, এখন গেলে মুশরাফা সন্দেহ করবে। এবার আমার চুল, নখ দিয়ে মগদের দ্বারা আরও কঠিন কালাজাদু করবে। ওগুলো না কি সমুদ্রের নিচে ফেললে তোলাও যায়না। তখন আমি চিরতরে বশ হয়ে যাব। তাই বলি কি, মামার দেয়া প্যাকেজ শেষ হলেই ফিরি? আমরা যে ওদের প্ল্যান ধরে ফেলেছি, তা বুঝতে না দিই। আমি ফিরেই সব সমাধান করে ফেলব।’

মায়মুনা ভাবলেন। তারপর সায় জানালেন, ‘আসোলেই তো। আমি এটা ভেবে দেখিনি। আচ্ছা তাহলে তুই ঠিক সময়ে আয়। আমি গুণিণের খোঁজ নিই। ‘

‘আচ্ছা, মা। রাখি?’

‘আচ্ছা। নিজের খেয়াল রাখিস। এখন গিয়ে কিছু খেয়ে নে। রোদে রোদে ঘুরিস না। ‘

‘আচ্ছা যাচ্ছি। দোয়া করো মা। ‘ মায়মুনা সন্তুষ্ট মনেই ফোন রাখলেন। জাওয়াদ হাফ ছাড়ল।

জাওয়াদ কিটকটের দিকে হাঁটা ধরল। মিনিট দুয়েক পরে ফোন আবার বেজে উঠল। এবার বাবার নাম্বার থেকে। জাওয়াদ চাপা শ্বাস ফেলল। তারপর দূরে গিয়ে ফোন ধরল। অপাশ থেকে জয়নাল আবেদীন রেগে বললেন,

‘ তোর মা এসব কী বলছে? তুই না কি মুশরাফাকে একা ফেলে চলে গেছিস? মায়মুনার কথা মেনে নিয়ে আবার বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিস? মুশরাফাকে না কি ছেড়ে দিবি? এগুলো যদি সত্য হয়, আর তোর মনে যদি এই খেয়াল রাখে তবে শুনে রাখ, আমি তোকে তাজ্যপুত্র করব। আমার বংশে বউদের উপর এত অন্যায়ের কোন স্থান নাই। এক বউ রেখে আরেক বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলে, তোরা মা ছেলে আলাদা হয়ে যাবি। জীবনে ও আমার সাথে যোগাযোগ রাখবিনা। বেয়াদব। ‘

জয়নাল আবেদীন রেগে চিৎকার করে যাচ্ছেন। জাওয়াদের মুখটা কাঁদোকাঁদো হয়ে গেল। বেচারা ফেঁসেছে ভালো করেই। তারপর লম্বা শ্বাস ফেলে ধীর গলায় বলল,
‘বাবা আমাকে কথাটা শুনুন।’

জয়নাল আবেদীন আবার ধমকালেন, ‘কী শুনব তোর কথা? কী শুনার বাকি রেখেছিস তুই? মায়ের কথা ধরে বউ বিদায় করার ফন্দি আঁটছিস। আবার এসব কেচ্ছা শুনাতে এসেছিস! বেয়াদব ছেলে। এখনো অমানুষই রয়ে গেলি, মানুষ হলি না।’

মুশরাফার মতো এবার জাওয়াদ মনে মনে বলল, ‘আল্লাহ আমাকে ধৈর্যধারণ করার তাওফিক দাও। ‘

নিজেকে ধাতস্থ করে ধীর স্বরে বলল,
‘ বাবা বুঝার চেষ্টা করুন। আগুনে ঘি ঢাললে আগুন কমে না বরং বাড়ে। আগুন থামাতে হলে ঘি নয়, পানি ঢালতে হয়। মা এমনিতেই রেগে আছে। আমি যদি এখন বলতাম, আমি মুশরাফার সাথে ঘুরছি । বা মায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে বলতাম, আমি নিজ উদ্যোগে হানিমুনে এসেছি। ওরা তাবিজ করেনি, তুমি ভুল বুঝছো। এসব কিছু না।
মা তো বুঝতোই না। উলটো ভুল বুঝতো। মা ভাবতো, আমি পর হয়ে গেছি। আরও ক্ষেপে যেত। মুশরাফাকে অভিশাপ দিত। আমাদের তৎক্ষনাৎ ফিরতে বাধ্য করতো। সংসারে আরেক অশান্তি শুরু হতো। এই অশান্তি থেকে বাঁচতে আর মাকে ঠান্ডা করার জন্যই আমি মায়ের হ্যাঁ তে হা মিলিয়েছি। এতে মা মনে করবে, আমি এখনো পর হইনি। তার কথা শুনছি। এতে আমরা এখানে শান্তিতে থাকতে পারব, কোন ঝামেলা হবে না। মা কোন অশান্তি করবে না।
একজন স্বামী হিসেবে আপনার জানার কথা, বউ আর মাকে শান্ত রাখতে হলে দু’জনের হ্যাঁ তে হ্যাঁ মেলাতে হয় এবং দুজনকে নিজের মতো বুঝাতে হয়। মায়েরটা মাকে, বউয়েরটা বউকে। প্লিজ বাবা, শান্ত হন। আমাকে ভুল বুঝবেন না!’

এক নাগাড়ে কথা বলে থামল জাওয়াদ। জয়নাল সাহেব কথা মাঝেই থেমে গেছেন। ছেলের কথা শুনে অবাক হলেন। ছেলের বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করলেন মনে মনে। তার পাগলাটে ছেলের মাথায় এত বুদ্ধি! ছেলেটা মানুষ হতে শুরু করেছে তবে। ক্রেডিটটা অবশ্য দিলেন মুশরাফাকে। ভালো সাথে থাকলে ভালো তো হবেই। রাগ উবে গেল তার। ধীর স্বরে বললেন,
‘মুশরাফা কোথায় এখন?’

জাওয়াদ গিয়ে কিটকটে বসল। ফিসফিস করে বলল,
‘আমার সাথেই আছে। কথা বলবেন?’

জয়নাল আবেদীন বললেন, ‘দে। ‘

জাওয়াদ ফিসফিসিয়ে বলল, ‘ আপনি যদি মায়ের সামনে থেকে থাকেন। তবে সরে যান। আপনাকে ওর সাথে কথা বলতে শুনলে মা আমাকে ভুল বুঝবেন। আবার কষ্ট পাবেন।’

জয়নাল আবেদীন আকস্মিক হেসে ফেললেন। ছেলেটা কি আগেই এত বুদ্ধিমান ছিল, না নয়া নয়া হয়েছে? কে জানে। জাওয়াদ অর্থ দয়ালু, ন্যায়বান দানশীল। নাম মানুষের জীবনে অনেক প্রভাব ফেলে। বলা হয়ে থাকে, একটা মানুষের স্বভাব তার নামের অর্থের সাথে মিলে। তাই বড্ড আশা নিয়ে জয়নাল আবেদীন ছেলের নাম ‘জাওয়াদ ‘রেখেছিলেন। কিছু ছেলে বড়ো হতেই তিনি হতাশ হলেন, এই ছেলের মাঝে মায়াদয়া, ন্যায় কিছুই নেই। এই ছেলে অন্যায়ের সাথে থাকে।
এই ক্ষণে এসে তার মনে হলো, ছেলের নামের অর্থ সত্যিই প্রভাব ফেলতেছে। ছেলে ন্যায়ের পক্ষে চলছে। মা, বউ কাউকেই কষ্ট দিতে অপারগ যে। জয়নাল সাহেবের মন খুশিতে ভরে উঠল।

তিনি হেসে বললেন,
‘আমি অফিসে। তোর মা আমাকে ফোন দিয়ে বলেছিল। সে খুশিতে বাড়ি মাথায় তুলছে। আচ্ছা, দে মুশরাফাকে। আর শুন?’

‘বলুন বাবা।’

‘ একজায়গায় গিয়েছিস। ইচ্ছেমতো ঘুর। মুশরাফাকে কিছু কিনে টিনে দিস। টাকা আছে তোর কাছে? আমি পাঠাব?’ থেমে থেমে বললেন জয়নাল আবেদীন। ছেলেটা বড্ড বেহিসাবি। টাকা হাতে পেলেই উড়িয়ে ফেলে। হাতে থাকে না। এই শঙ্কা থেকেই জিজ্ঞেস করা। বাবার কথায় হেসে ফেলল জাওয়াদ। বলল,
‘আমি আর ছোটো নেই বাবা। এখন চাকরি করি, আয় করি। পকেট খালি থাকে না। আপনার মনে রাখা উচিত।’

জয়নাল আবেদীন হেসে বললেন, ‘লাগলে বলিস। আর ওকে ফোন দে।’

জাওয়াদ ফোনটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিল, ‘বাবা কথা বলবে তোমার সাথে। ‘

মুশরাফা ফোন হাতে নিয়ে কথা বলছে। সালাম দিয়ে হেসে হেসে কথা বলছে। ওদের কথা শুনে মনে হচ্ছে বাবা মেয়ে কথা বলছে। ব্যাপারটা জাওয়াদের ভালো লাগল। বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ হলো। মেয়েটা বাবা মাকে পায়নি। শ্বাশুড়িকে ও পেল না। অন্তত বাবার মতো একটা শ্বশুর তো পেল!

ও হাফ ছাড়ল। কিটকটে গা এলিয়ে দিয়ে নিজমনে বলল,
‘ দুই মায়ের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, প্রেম করে বউ নিয়ে পালিয়ে এসেছি। গতকাল সকালে একজন ফোন দিয়ে ঝাড়ি দিল, আজ সকালে আরেকজন। ‘
থেমে বলল,
‘একদিক দিয়ে পালিয়েই এসেছি। দুই মায়ের ভয়ে। আহ্ এক মেয়ের ফাঁদে পড়ে কত কী করতে হচ্ছে!”

মুশরাফা কথা শেষ করে ফোন বাড়িয়ে দিল। জাওয়াদ ফোন হাতে নিয়ে বলল,
‘মা বলেছে, তুমি না কি আমাকে তাবিজ করে বশ করে ফেলেছো? ঘটনা কি সত্য না কি!’

মুশরাফা মুখ কুঁচকাল,
‘আসতাগফিরুল্লাহ। গনক জ্যোতিষী, যে সব সমস্যা ঠিক করে দেয়, এবং আগাম বানী দেয় তাদের কাছে যাওয়াও গুনাহ।
নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন- ‘যে জ্যোতিষীর কাছে আসবে ও তার কথা বিশ্বাস করবে, সে যেন মুহাম্মদের ওপর নাজিলকৃত ধর্মকে অস্বীকার করল।’ মুসলিম শরিফের অন্য এক হাদিসে বলা হয়েছে- ‘যে-ই গণকের কাছে এসে কোনো বিষয় জানতে চাইবে এবং তার কথা বিশ্বাস করবে, সেই ব্যক্তির ৪০ দিনের নামাজ কবুল হবে না।’

আরেক হাদিসে আছে,
‘শিরকি শব্দ, কুফরি কালাম বা অনর্থক লেখা সম্বলিত তাবিজ ব্যবহার করা বৈধ নয়। (মুসলিম, হাদিস : ২২০০, তাকমিলা : ৪/৩২৬, মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৬৬৯৬, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ১/৬৪৩-৬৪৪

আমি আপনাকে বশ করার জন্য জ্যোতিষীর কাছে যাব! এত গুনাহ কাধে নিয়ে কাউকে পাওয়া আমার রীতিবিরুদ্ধ। আমি তাকেই চেয়েছি, যে আমার জন্য সম্পূর্ণ বৈধ, হালাল। যাতে কোন হারাম থাকবেনা। এসব তাবিজ, যাদুটোনার আশ্রয় তারাই নেয়, যাদের আল্লাহর উপর ভরসা নেই। আমার আল্লাহর উপর ভরসা আছে। আমি সেই ভরসা বলে পেয়েছি আপনাকে। ‘

জাওয়াদ ঠোঁট চেপে হেসে বলল, ‘ এর মানে আমাকে তাবিজ করে বশ করার ইচ্ছে নেই তোমার? ‘

মুশরাফা ও হেসে বলল, ‘ যে আমার ভেজা চুল আর কাজল টানা চোখে চোখ রাখতেই বশ হয়ে যায়, যে আমার আলতো কথায় বশ হয়ে যায় তাকে বশ করতে তাবিজের মতো নাজায়েজ পন্থা অবলম্বন করব কেন?’

ভারি সাংঘাতিক মেয়ে। ওকে জব্দ করতে গিয়ে নিজেই জব্দ হয়ে গেল জাওয়াদ । তাও দমল না। চোখ ছোটো ছোটো করে বলল,
‘ তুমি কিসে বশ হয়েছো তবে? আমি তো শাড়ি ও পরি না, কাজল ও দিই না। তাও আমাকে দেখলেই কিভাবে তাকিয়ে থাকো।’

মুশরাফ ভ্রু কুঁচকাল, ‘কখন তাকিয়েছি?’

জাওয়াদ বিজয়ী হেসে বলল, ‘আমি যখন ফোনে কথা বলছিলাম। তুমি আমার দিকে কিভাবে তাকিয়ে ছিলে, আমি দেখিনি মনে করেছো?’

মুশরাফা স্বাভাবিক স্বরে বলল, ‘ দেখার জিনিস দেখব না? অধিকার থাকলে ওমন এক আধটু দেখতে হয়। এই দেখাতে ও সাওয়াব আছে। ‘

জাওয়াদ ভ্রু বাঁকিয়ে বলল, ‘তোমার নজরে নজরেই আমি শেষ হয়ে যাব। সকাল বিকেল নিয়ম করে পানি পড়া দিবে আমাকে। অধৈর্য মেয়ে!’

পরপরই বলল, ‘আমার বন্ধু সমাজে গিয়ে আমার সম্পর্কে জেনে এসো। তারপর টের পাবে আমি আমার ফর্মে চলে গেলে কী হবে তোমার। আমার লজ্জাটজ্জা নেই একবারে, আমি কতটা অধৈর্য তুমি কল্পনা ও করতে পারবেনা। তাই বলি কি, আমার থেকে একটু রয়েসয়ে থাকো।’

মুশরাফা গাল লাল করে উঠে গেল। জাওয়াদের দিকে রাগী চোখে এক পলক তাকিয়ে হাটা ধরল হোটেলের দিকে। জাওয়াদ বিজয়ী হাসি দিল। অবশেষে জব্দকারীকে ও জব্দ করা গেল।

ওখান থেকে হোটেলে ফিরল ওরা। নাস্তা করা হয়নি তখনো। গ্র‍্যান্ড ফ্লোরে পৌঁছে জাওয়াদ বলল,
‘ এখানে নাস্তা করতে পারবে? না রুমে অর্ডার করব?’

মুশরাফা ধীর স্বরে বলল,
‘ আমার নিকাবের নিচে খাওয়া দেখতে যদি আপনার কপাল কুঁচকে না যায়, তবে এখানে বসে খেতে পারি। ‘

জাওয়াদ বুঝতে পারল, মুশরাফা বিয়ের পরেরদিনকে ইঙ্গিত করছে। ও খাবার টেবিলের দিকে এগিয়ে বলল,
‘আসো।’

খাবার আসার পর জাওয়াদ চুপচাপ খাচ্ছে। মুশরাফাও নোজ নিকাব তুলে একটু একটু মুখে নিচ্ছে। সচেতনতার সাথে পরোটা আর মাংস মুখে নিচ্ছে, একটু ও পড়ে যাচ্ছে না। জাওয়াদ ওর খাওয়া দেখল। এক সময় নিজেই টের পেল, প্রথমদিনের মতো মুশরাফার এই পোশাকটা একে বিরক্ত করছে না, রাগের জন্ম দিচ্ছে না। পানি খাবার সময় সামান্য একটু পানি মুশরাফার বোরকায় পড়েছিল। জাওয়াদ টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘ সাবধানে খাও। নাকে উঠবে। ‘

মুশরাফা পার্থক্যটা ধরতে পারল। হাসল কেবল।দুপুরে পর হিমছড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। ওখানে ঝর্ণা দেখল। পাহাড়ি সিড়ি বেয়ে উপরে উঠল। পাহাড়ের উপর মাচায় বসে সূর্যাস্ত দেখল। নামার সময় আঁধার ঘনিয়ে এলো। বোরকা সামলিয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে হিমসিম খাচ্ছিল মুশরাফা। জাওয়াদ ওর হাত শক্ত করে ধরে বলল,
‘আমি পথ দেখছি, তুমি বোরকা সামলিয়ে হাঁটো।’

জাওয়াদের পরিবর্তনটা ক্ষণে ক্ষণে প্রকাশ পাচ্ছে। পরদিন ওরা ইনানি বিচ ঘুরে এসে বার্মিজ মার্কেট গেল। জাওয়াদ মার্কেটের প্রবেশপথে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
‘বাবা বলেছে তোমাকে কিছু কিনে দিতে, নয়তো ঘরে ঢুকতে দিবে না। পরিবারে আমার সদস্যপদ বহাল রাখার জন্য হলেও কিছু কিনো।’

মুশরাফা হাসল। এটাকে বাহানাই ধরে নিল। শাড়ি দোকানে গিয়ে শাড়ি দেখার সময় মুশরাফা বলল,
‘মায়ের জন্য নিই?’

জাওয়াদ নিষ্পাপ ভঙিমায় বলল,
‘ মাকে যদি শাড়ি নিজের হাতে তুলে দেয়ার সাহস থাকে তবে নিতে পারো। ‘

মুশরাফা ভীত স্বরে বলল,
‘ আমি দিলে মা নিবে?’

জাওয়াদ ভ্রু কুঁচকাল, ‘ শ্বাশুড়িকে যদি একটা উপহার নেয়ার জন্য মানাতে না পারো, তবে তোমার বউ হওয়া বৃথা। তুমি পছন্দ করে নিলে তুমিই দিবে, আমি এসবের মাঝে নেই। আগেই বলে দিচ্ছি।’

মুশরাফা দ্বিধান্বিত মনেই সায় জানাল। লোকটা এমন দায়সারা ব্যবহার করছে কেন কে জানে? নিজেই পছন্দ করে একটা তাঁতের শাড়ি নিল। তারপর বলল,
‘শুধু মায়ের জন্য নিলে খারাপ দেখা যাবে, ভাবি আর আপুর জন্য ও নিই?’

জাওয়াদ সায় জানাল আবারও। মুশরাফা জা আর ননাশের জন্য শাড়ি পছন্দ করায় ব্যস্ত হয়ে গেল। জাওয়াদ ভ্রু কুঁচকে দেখে গেল কেবল। মানুষ সবার আগে নিজের জন্য ভাবে। এই মেয়ে সবার জন্য ভাবছে নিজেকে ছাড়া। মুশরাফা ঝায়ের জন্য লেমন কালারের নিল, আর জেরিনের জন্য মেজেন্টা। জাওয়াদ নিজে এগিয়ে এসে শাড়ি উলটে পালটে দেখল। একটা নীল শাড়ি দেখিয়ে বলল,

‘এটা তোমার জন্য নাও।’ মুশরাফা অবাক হয়েই তাকাল। ওকে দিগুন অবাক করে দিয়ে জাওয়াদ বলল,
‘মামী আর ফাবিহা আপুর জন্য ও নাও। কখনো কোন কিছু নিলে একার নয়, আমাদের দুই পরিবারের জন্য নিবে। ‘

জামাতার দায়িত্ব পালনের শুরুটা বোধহয় এখানেই। মামীকে স্মরণে রাখায় মুশরাফা খুশি হলো। জাওয়াদকে আজ নতুনরূপে দেখছে যেন ও। কেমন দায়িত্ববান স্বামীর মতো।

শাড়ি কেনা শেষে ওরা গেল ব্যাগ দোকানে। মুশরাফা বলল,
‘মা ব্যাগ পছন্দ করে?’

জাওয়াদ বলল, ‘ করে। ‘

তারপর এর থেকে কিছুটা দূরে স্বরে মাকে ফোন দিল। রিসিভ হতেই ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ মা, মুশরাফা তোমার জন্য শাড়ি কিনেছে। ব্যাগ কিনতে চাইছে। তোমার জন্য কত কী কিনতে চাইছে। তোমার পছন্দের কথা জিজ্ঞেস করছে আমাকে। আমি কী বলব? তুমি কি নিবে ও কিছু দিলে, দেখো না নিলে আগেই বলো। নয়তো শুধু শুধু আমার টাকা নষ্ট হবে ।’

ব্যাগের প্রতি দুর্বল মায়মুনা। ব্যাগ জমানোর শখ তার। গেলোবার কক্সবাজার এসে বার্মিজ মার্কেটে একটা ব্যাগ পছন্দ হয়েছিল, কেনার আগে আরেকজন এসে নিয়ে গেছে। সেই না কেনা ব্যাগের আফসোস এখনো করেন মাঝেমাঝে। জাওয়াদ জানে ব্যাপারটা। মায়মুনা তৎক্ষনাৎ উত্তর দিলেন না। রয়েসয়ে বললেন,
‘লাগবে না ওই মেয়ের দেয়া কিছু। আমি নিব না। ওকে বলে দে।’

জাওয়াদ আবার বলল, ‘ ও কিন্তু ভাবি আর আপুর জন্য ও নিচ্ছে। ভাবির জন্য একটা নকঁশী কাথার ব্যাগ নিতে দেখলাম। আমাকে জিজ্ঞেস করছে, তোমার জন্য এমন নিবে কি না। আমি তাহলে না বলে দিই কেমন? নিবে না যেহেতু কিনে কী লাভ? ‘

মায়মুনা স্বর ধীর হয়ে এলো, ‘এই মেয়ে চালাক। জিনিসপত্র দিয়ে আমাকে মানাতে চাইছে। আমি নিব না।’

জাওয়াদ আফসোসের সুরে বলল, ‘ তাহলে কী আর করার, আমি না বলে দিই।
তবে হ্যাঁ ব্যাগগুলো আসলেই সুন্দর। ওই যে সেবার কিনতে পারলে না সেটাও আছে। ‘

জাওয়াদ কল কেটে দিল। একটা ব্যাগ দেখিয়ে মুশরাফাকে বলল,
‘এটা নিয়ে মাকে দিও।’

ওর ফোন বাজল আবার ও। মায়ের নাম্বার থেকে। জাওয়াদ বিজয়ী হাসি দিল। মায়ের স্বভাব ওর অজানা নয়। স্বভাবসুলভ তিনি নরম সুরে বললেন,
‘এই শুন, ও পরের মেয়ে। ওই মেয়ের পছন্দ করা জিনিস নিব না। তুই তো আমার ছেলে। তুই কিনলে নিব। ওই ব্যাগটা থাকলে তুই কিনে নে আমার জন্য।’

জাওয়াদ স্পষ্ট বলল, ‘টাকা আমার হলে ও জিনিস কিন্তু ওর হাতে। ও সবার জন্য একে একে পছন্দ করে নিচ্ছে। তোমাকে ওর কাছ থেকেই নিতে হবে। এসব তোমরা বউ শ্বাশুড়ি বুঝবে। মাঝে আমাকে টানবে না। আমার দায়িত্ব শুধু টাকার দেয়ার, আমি দিচ্ছি। আমার দায়িত্ব শেষ। রাজি হলে বলো। ‘

মায়মুনা খানিক ভেবে বললেন, ‘সে দেখা যাবে। তুই একবার ব্যাগটা নিয়ে নে।’

জাওয়াদ বিজয়ী হেসে ফোন রাখল। উপহার মানুষের মন জয় করার একটা উত্তম উপায়। শুরুটা এখান থেকেই হোক। একটা স্বামী, মা এবং স্ত্রীর মাঝে সেতুবন্ধন হয়ে থাকে। দুটোকে দুই হাতে আটকে রেখে সংসার ধরে রাখায় দায় কিন্তু তারই। জাওয়াদ আকস্মিক নিজের উপরই অবাই হলো। ইতঃপূর্বে কোন দায়িত্ব পালন করেনি সে, দায়িত্বের বোঝা ও কাধে অনুভব করেনি। সে ছিল দায়সারা। হুট করেই আজ ও অনুভব করছে ওর কাধে অনেক দায়িত্ব। দুটো পরিবারের দায়িত্ব, একটা পরিবার রক্ষার দায়িত্ব, মা আর বউয়ের একে অপরের কাছে মান রাখানোর দায়িত্ব।
সে তো এমন ছিল না, এত দায়িত্ববোধ এলো কখন, কেমন করে! টেরই পেল না।

হঠাৎ মনে পড়ল, তার বাবার কথা। তিনি একদিন বলেছিলেন, আজ তুই দায়সারা। তোকে বলে বলেও কোন কাজ করানো যাচ্ছে না। যেদিন তুই বাস্তবতার সম্মুখীন হবি, একটা সম্পর্কের কর্ণধার হবি। দায়িত্ব এসে কাধে চেপে বসবে। সেদিন দেখবি তুই কারো বলার অপেক্ষায় বসে থাকবি না। নিজ থেকে দায়িত্ব পালন করতে থাকবি, দায়িত্ব পালন না করে শান্তি পাবিনা। মনে হবে এটাই তোর কাজ, তোর এটাই করা উচিত। পরিস্থিতি মানুষকে দায়িত্ববান বানিয়ে দেয়। তোকে ও বানাবে একদিন।

আজ বোধহয় সেইদিন এসে গেছে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here