স্বপ্নচারিণী,পর্বঃ১

স্বপ্নচারিণী,পর্বঃ১
লেখিকা: সামান্তা সিমি

গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরমে গ্রামের মাঠ-ঘাট উত্তপ্ত হয়ে আছে।মধ্যদুপুরের গনগনে রোদের তেজে গাছপালা যেন ঝলসে উঠতে চাইছে।মাঝে মাঝে ভাপসা গরম বাতাস মাঠের সবুজ ফসলের গায়ে দোলা দিয়ে যায়।এতে গরমের তেজ না কমলেও গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।গ্রামটির নাম রসুলপুর।
মাঠের পাশের আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে উনিশ-বিশ বছরের একটি মেয়ে।গায়ে কম দামি রঙ উঠে যাওয়া একটি থ্রি-পিস। উড়নাটা এমনভাবে জড়িয়ে রেখেছে যে গরমে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। মাঝেমাঝে ইচ্ছে করছে একটানে উড়নাটা ফেলে দেয়।বামহাতে আধছেঁড়া বইয়ের ব্যাগটা কাঁধে চেপে ডানহাত দিয়ে একটু পরপর কপালে-মুখে জমা হওয়া ঘামের বিন্দুগুলো মুছে নিচ্ছে। পায়ে স্যান্ডেল থাকা সত্বেও গরমের তাপে পা যেন তেতে উঠছে।বিরক্তমুখে চিকন পথটা পেরিয়ে সামনের বড় রাস্তায় গিয়ে উঠল সে।
কিছুদূর এগিয়ে যেতেই একটা কালো প্রাইভেট কার এসে তাঁর পাশে থামল।গাড়ির জানালার গ্লাসটা নামানোর পর তাঁর বয়সী একটা সুশ্রী মেয়েকে দেখা গেল।আনন্দিত গলায় সেই মেয়েটি বলল,

—যূথী! চলে এসো গাড়িতে।এই গরমে হেঁটে যেতে কষ্ট হচ্ছে তোমার।

একটু মলিন হাসলো যূথী।তাঁর কাছে কথাটা খুবই হাস্যকর লেগেছে।এসব কষ্ট কি গ্রামের মানুষদের কাবু করে?এগুলো তো নিত্যদিনের ব্যাপার।

—না সিথি।আমি হেঁটেই যেতে পারব।এইতো আরেকটু গেলেই আমার বাড়ি।

মুখ কাল করে ফেলল সিথি।কয়েকদিনের পরিচয়ে যূথীকে যতখানি চিনেছে তাতে বুঝে গেছে মেয়েটা একটু একগুঁয়ে টাইপের।যেটাতে না বলবে সেটা না-ই।গ্রামে বেড়াতে এসে এই একটা মেয়ের সাথেই সিথির ভাব জমে উঠেছে।কোনো কুটিলতা নেই মনে।নদীর ঢেউয়ের মত সহজ স্বাভাবিকভাবে কথা বলে যূথী যা তাঁকে সবসময় মুগ্ধ করে।

—ঠিক আছে।হেঁটেই বাড়ি যাও তুমি।আজ বিকেলে তোমার বাড়িতে ঘুরতে যাব।মনে থাকে যেন।

—অবশ্যই! অপেক্ষায় থাকব আমি।

হাত নাড়িয়ে যূথীর দিকে বিদায়ের ভঙ্গি দেখিয়ে সিথি চলে গেল।গাড়ির চাকার সাথে উড়ে উঠা বালু হাত দিয়ে ঝাড়তে ঝাড়তে সিথির যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে যূথী।গ্রামের চেয়্যারম্যানের মেয়ে সিথি।ছোটবেলা থেকেই শহুরে পরিবারে বেড়ে উঠেছে।পোশাক-আশাকে, চেহারায় এবং ব্যবহারে আধুনিকতার ছোঁয়া।যূথীর কাছে বেশ লাগে মেয়েটিকে।গ্রামে বেড়াতে আসলেই সর্বপ্রথম যূথীর খোঁজ নিবে।সিথির কলেজে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা ধৈর্য্য ধরে বসে শুনতে হয় যূথীকে।তবে তাঁর কাছে খারাপ লাগে না।তাঁর জীবনে সঙ্গী -সাথীর বড়ই অভাব।তাই সিথির উপস্থিতি সে খুব উপভোগ করে।

বাড়ির কাছে পৌঁছতেই নজর গেল মাটিতে পোঁতা গোলাপের চারাগুলোর দিকে।পানির অভাবে কেমন নেতিয়ে পরেছে গাছগুলো।মাত্র কয়েক সপ্তাহ হলো বাইরে দরজার দুপাশে শখ করে চারাগুলো লাগিয়েছে যূথী।এর মাঝেই কলি আসা শুরু করে দিয়েছে।
ঘরে ঢুকতেই বিছানায় শুয়ে থাকা তাঁর মায়ের দিকে তাকাল।আধবোজা চোখ দেখে বুঝা যাচ্ছে না ঘুমিয়ে আছে নাকি জেগে আছে।যূথী কাছে গিয়ে আস্তে করে ডাকল,

—মা! ঘুমিয়ে গেছো?

যূথীর মা পিটপিট করে চোখ খোলার চেষ্টা করল।দুর্বল গলায় বলে উঠল,

—এসে গেছিস! কলেজে থেকে আসার সময় পথে কোনো সমস্যা হয় নি তো মা?

—না।কাসেম গুন্ডাটা এখন গ্রামে নেই।তাই একটু শান্তিতে চলাফেরা করতে পারছি।

হঠাৎই যূথীর মা কেঁদে উঠল।তাঁর মায়ের এই জিনিসটা সে একদমই পছন্দ করে না।দেখা গেছে এই ভালো কথা বলছে আবার এই ডুকরে কেঁদে উঠছে।
যূথী ঝাঁঝাল গলায় বলে উঠল,

—তুমি একটুও কথা শুনো না মা।কতবার এভাবে কাঁদতে বারণ করেছি তোমায়!

—খুব শখ ছিল জানিস একটা ভালো ছেলে দেখে তোর বিয়ে দেব।কিন্তু আল্লাহ আমার এই আশা পূরণ করবে না বোধ হয়।দেখ না সারা দিন রাত এভাবে বিছানায় শুয়ে থাকছি আর তোকে যন্ত্রণায় ফেলছি।

—ছিঃ মা! এভাবে বলবে না।আমি কি পর?আমি থাকতে কখনো কষ্ট পেতে দেব না তোমায়।

দুইহাতে মায়ের চোখের জল মুছে দিল যূথী।কাঁধের ব্যাগটা পাশের টেবিলে রাখতে রাখতে বলল,

—লতিফা চাচী বলেছিল কলেজ থেকে এসে যেন তাঁদের বাড়িতে একবার যাই।আমি ফিরে এসে রান্না চড়িয়ে দেব কেমন!

—সাবধানে যাস্ মা।

ঘুণে ধরা দরজার পাল্লাটা হালকা ভিড়িয়ে পথে নেমে এল যূথী।হাঁটতে হাঁটতে তাঁর ছোটবেলার সবচেয়ে বিস্ময়কর দিনটার কথা মনে পরে গেল।
তখন যূথীর বয়স মাত্র পাঁচ।সন্ধ্যে নামার মুখে বন্ধুদের সাথে খেলা শেষ করে যখন বাড়ি ফিরল তখন দেখল উঠোনে গ্রামের অনেকেই গোল হয়ে জটলা বেঁধে আছে।কৌতুহলী হয়ে ভিড় ঠেলে সে ভেতরে ঢুকে এক অদ্ভুত ব্যাপার দেখল।তাঁর মা চোখ বন্ধ করে একটা খাটিয়ায় শুয়ে আছে।পাশেই তাঁর বাবা জসীম মিয়া হাত-পা ছুঁড়ে কাঁদছে।যূথীর একটু রাগ হলো।মায়ের যদি ঘুম পায় তো ঘরে গিয়ে ঘুমালেই হয়।আর বাবা-ই বা এমন পাগলের মত কাঁদছে কেনো?
এত ভিড়ের মাঝে কেউ যূথীকে লক্ষ্যই করল না।যখন তাঁর মাকে কয়েকজন কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছে তখনও সে চুপচাপ বেড়ার গা ঘেষে দাঁড়িয়ে ছিল।চোখের সামনে ঘটা এসব কিছুই তাঁর ছোট্ট মাথায় ঢুকছিল না।ময়লা খেলার পুতুলটা হাতে নিয়ে দরজার চৌকাঠে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে রইল।
দূরের রাস্তায় যখন তাঁর বাবাকে আসতে দেখল ছুটে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,

—মা’কে তোমারা কোথায় নিয়ে গেছো বাবা?

যূথীর কথার কোনো উত্তর না দিয়ে জসীম মিয়া মেয়েকে দুইহাতে আঁকড়ে ধরে কেঁদে উঠেছিল সেদিন।এভাবে একদিন দুইদিন যাওয়ার পরও যখন যূথীর মা ফিরে আসলো না তখন সে মা’কে খুঁজে খুঁজে পাগলপ্রায়।তাঁর বাবা সারাদিন আকাশের পানে তাকিয়ে থাকত।যূথী বারবার বলত,

—মা’কে এনে দাও বাবা।তুমি শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকো কেনো?মা কি আকাশে আছে?চলো আমরাও যাই।

যূথী যখন বুঝে গেছিল তাঁর মা আর ফিরবে না তখন সে কেমন বদলে যেতে লাগল।চুল উসকোখুসকো, জামা অগোছালো হয়ে থাকত,চেহারা মলিন।
একদিন দুপুরে যূথী দরজার চৌকাঠে বসে দূরের রাস্তার দিকে তাকিয়ে ছিল।তখনই দেখল তাঁর বাবা তাঁর মায়ের বয়সী একজন রমণীকে নিয়ে এগিয়ে আসছে।মেয়েটির পরনে চকচকা রঙিন শাড়ি।
জসীম মিয়া কাছে এসে যূথীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

—এই নে তোর মা! এখন থেকে তোর আর কোনো কষ্ট থাকবে না।

যূথী শান্ত চোখে মেয়েটির দিকে তাকালে মেয়েটি তাঁকে কাছে ডাকল।সে এগিয়ে যেতেই গালে চুমু খেয়ে বলল,

—আজ থেকে আমি তোমার নতুন মা।

সেই থেকে এই নতুন মা’কেই যূথী তাঁর মায়ের আসনে বসিয়েছে।কত আদর-যত্ন ভালোবাসায় তাঁকে ছোট থেকে বড় করেছে।পুরো দুনিয়া একদিকে অন্যদিকে তাঁর মা।
যূথীর বাবা মারা গেছে আজ থেকে প্রায় ছয় বছর আগে।তখন থেকেই যত দুর্দশা।তবে না খেয়ে কখনো থাকতে হয় নি।যূথীর মা মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালিয়ে নিচ্ছিলো।কিন্তু আজ ছয়মাস যাবত তাঁর মা বিছানায় অসুস্থ অবস্থায় শুয়ে আছে।ডাক্তাররা বলছে আয়ু আর বেশিদিন নেই।
সংসার চালানোর দায়ে যূথী সেলাই কাজ শিখে নিয়েছিল।এখান থেকেই যা আয় হয় তা দিয়েই কলেজে পরার খরচ, মায়ের ওষুধ, খাওয়া-পরার খরচ চলে যায়।শত কঠিন সময়েও সে পড়ালেখা ছাড়েনি।

যূথী পুরনো দিনের কথা ভাবতে ভাবতে পৌঁছে গেল লতিফা চাচীর বাড়ি।সুন্দর একতলা দালান।এই বাড়িতে আসলেই তাঁর মন ভাল হয়ে যায়।
যূথীকে ঘরে ঢুকতে দেখেই লতিফা চাচী হেসে বললেন,

—আয়! তোর জন্যই অপেক্ষা করছি।

সোফার কাছে যেতেই তাঁর নজরে পরল সুন্দর সিল্কের শাড়ি পরা একজন মধ্য বয়সী মহিলা বসে আছে।মহিলাটির চেহারায় আভিজাত্যের ছোঁয়া।
অচেনা মানুষের সামনে যূথীর এক ধরনের জড়তা কাজ করে।তাই সে সোফায় বসবে কি বসবে না ইতস্তত করতে লাগল।যূথীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মহিলাটি বলল,

—এখানে বসো মা।আমি তোমার লতিফা চাচীর খালাতো বোন।লতিফা থেকে তোমার কথা শুনেছি আমি।

মহিলাটির মার্জিত ব্যবহারে যূথী মুগ্ধ হয়ে গেল।দেখে তো মনে হয় কোনো বড় শহর থেকে এসেছে।অথচ কি মিষ্টি কথাবার্তা।
হাতে বড় একটা টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে লতিফা চাচী বলল,

—এই নে!এখানে তোদের মা -মেয়ের খাবার আছে।তুই তো মা’কে ফেলে খাবি না।তাই বক্সে দিয়ে দিলাম।বাড়িতে গিয়ে খেয়ে নিস।

—চাচী শুধু শুধু কেনো খাবার দিতে গেলে!আমি বাড়িতে গিয়ে রান্না করে নিতাম।

—আচ্ছা বুঝেছি। আর শোন ইনি হচ্ছেন আমার খালাতো বোন নীলুফা আপা।ঢাকা থেকে কয়েকদিনের জন্য বেড়াতে এসেছে।তুই তো আগে দেখিসনি।তাই পরিচয় করিয়ে দিলাম।

যূথী মিষ্টি হেসে বলল,

—আমাদের বাড়ি থেকে একবার ঘুরে আসবেন নীলুফা চাচী।মা সারাদিন একা থাকে তো।কেউ গেলে খুব খুশি হয়।

—যাব।তুমি এসে আমাকে নিয়ে গেলে অবশ্যই যাব।

—কাল আমি কলেজ শেষ করে আপনাকে নিতে আসব চাচী।

কিছুক্ষণ আলাপ শেষে দুইজনকে সালাম দিয়ে যূথী উঠে পরল।লতিফা চাচী আপন মানুষ না হয়েও যূথী এবং তাঁর মায়ের জন্য যা করে সেটা সত্যি অতুলনীয়। তাই যূথীও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কিছু করে চাচীকে সাহায্য করে।

_______________

বিকেলে সিথিকে নিয়ে নদীর পাড়ে বেড়াতে গেল যূথী।পশ্চিম দিকে হেলে যাওয়া সূর্যের আলো টলমল পানির সাথে খেলা করে যাচ্ছে।দুইজন নদীর পাশের উঁচু ঢিবিটায় হাত ধরাধরি করে বসে আছে।অন্যান্য দিন সিথি তাঁর গল্পের ঝুড়ি মেলে দেয় কিন্তু আজ চুপচাপ বসে আছে।কাল সে শহরে ফিরে যাবে হয়তোবা এই কারণে তাঁর মন ভার।তাই যূথীও তাঁকে বিরক্ত না করে নদীর শান্ত পানির দিকে তাকিয়ে আছে।নীরবতা ভঙ্গ করে সিথি বলল,

—যূথী তুমি দেখতে খুব মায়াবী।

পানি থেকে দৃষ্টি না ফিরিয়েই যূথী জবাব দিল,

—তাই নাকি।তবে অন্যরা যে বলে আমি কালো।

—কালো নও।তুমি শ্যাম বর্ণের।কেউ যদি তোমাকে গভীর দৃষ্টিতে লক্ষ্য করে তাহলে সে তোমার চেহারার অথৈ মায়ায় ডুবে যাবে।

—হাহা!খুব সুন্দর কথা বলোতো তুমি! কিন্তু এই দুনিয়া সুন্দরের পূজারী।আমাদের মত মেয়েদের চেহারায় কেউ শখ করে মায়া খুঁজতে যায় না।

—স্টপ যূথী! ইউ নো আমার এই ধরনের কথাবার্তা একটুও পছন্দের না।

যূথী মলিন হেসে বলল,

—দুঃখিত! আর বলব না।আবার কবে আসবে গ্রামে?

—আই ডোন্ট নো।হয়তোবা ঈদে আসতে পারি।তুমিও আমার সাথে চলো যূথী।বাবাকে বলে তোমার যাওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলব।কখনো তো শহরে যাওনি।

—যাই নি।আর মা’কে ফেলে কোথাও যাওয়ার কথা আমি ভাবতেও পারি না।

—ওকে।কি আর করা।আচ্ছা চলো বাড়ি ফিরে যাই।সন্ধ্যে নেমে এসেছে।

সবুজ ঘাসের চাদর মাড়িয়ে দুইজন বাড়ির দিকে হাঁটা দিল।

* রাতে মায়ের পাশে শুয়ে যূথী নানান চিন্তায় ডুবে আছে।এই সময়টা তাঁর কাছে বেশ লাগে।অন্ধকারে মশার ভনভন আওয়াজ,পাশের ঝোপ থেকে আসা ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক, রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া লোকদের কথার আওয়াজ সব মিলিয়ে পরিবেশটা তাঁর কাছে অদ্ভুত সুন্দর লাগে।প্রতিদিন খোলা জানালা দিয়ে চাঁদ দেখতে দেখতে ঘুমানো তাঁর অভ্যেসে পরিণত হয়ে গেছে।
পাশ ফিরে মা’কে জড়িয়ে ধরে বলল,

—ঘুমিয়ে গেছো মা?

—না রে।তুই এখনো ঘুমাসনি কেনো?

—আসছে না।

যূথীর মা মেয়ের মাথায় সযত্নে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,

—এবার ঘুমিয়ে পর।

যূথী মা’য়ের পাশে আরেকটু চেপে আসলো।বড্ড ভালোবাসে মা’কে।লোকমুখে শোনা যায় সৎ মা’য়েরা নাকি কখনো আপন হয় না।কিন্তু যূথী কোনোদিনও বলতে পারবে না তাঁর নতুন মা কখনো তাঁকে ফুলের টোকা দিয়েছে কিনা।চরম দারিদ্র্যতায় বড় হলেও মা’য়ের ভালোবাসার কোনো কমতি ছিল না।ডাক্তারের কথা মনে করে যূথী খুব আশংকায় থাকে।মা’কে ছাড়া সে বাঁচবে কি নিয়ে? এই কথা মনে করে কত রাত যে চোখের জলে বালিশ ভিজিয়েছে। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে সে প্রার্থনা করে,

—হে আল্লাহ! আমার মা’য়ের যেন কিছু না হয়।

* পরেরদিন ক্লান্ত শরীর নিয়ে কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছে যূথী।মধ্যদুপুরে রাস্তায় বেশি একটা লোকজন দেখা যাচ্ছে না।তাই বড় বড় পা ফেলে সে নির্জন মাঠটা পার হতে লাগল।
যূথী বাড়ি গিয়ে কি কি কাজ শেষ করবে তা মনে মনে সাজিয়ে নিচ্ছে।সকালবেলা কলেজ যাওয়ার সময় দেখে গেছে মা’য়ের শরীরটা খুব খারাপ। ঘরে ঢুকেই আগে মা’কে ভাত খাইয়ে ঘুম পাড়াবে।তারপর অন্য কাজ।মাঠ পেরিয়ে ঝোপঝাড়ে ঢাকা রাস্তায় পৌঁছাতেই সামনের মানুষটাকে দেখে থেমে গেল যূথী।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here