#সুখ_পাখি #Ayrah_Rahman #part:-34

#সুখ_পাখি
#Ayrah_Rahman
#part:-34

কি ভেবেছিলেন মিস্টার অনিল হায়দার আপনি দিনের পর দিন এসব অকাজ কুকাজ করতে ই থাকবেন,,আর আমি টের ই পাব না? নিজের প্রতিপক্ষ কে এত দুর্বল ভাবলে চলে নাকি? একটা কথা কি জানেন,,আপনি যতই শক্তি শালী হন না কেন যখন ই নিজের প্রতিপক্ষকে দুর্বল ভাবতে থাকবেন সেখানে আপনার পরাজয় সুনিশ্চিত।

সেই ছোট্ট বেলা থেকে আপনাকে বাবার মতো শ্রদ্ধা করি,,বাবার মতোই ভালোবাসি,,মনে করতাম অভ্রের বাবা তো আমার ও বাবা,,কিন্তু হায় আফসোস যে নিজের ছেলেকে দাবার গুটি বানিয়ে দেয় সে আমাকে তো আঙুলের টোকা দিয়ে ফেলে দেবে,,

জানেন তো আংকেল,, সরি সরি আপনাকে আমার এখন আংকেল বলতেও ঘৃণা হচ্ছে,,

প্রথম যেদিন আপনার সম্পর্কে এসব শুনেছিলাম,, এক মুহূর্তের জন্য ও আমার মনে হয় নি আপনি এমন কোন কাজের সাথে যুক্ত থাকতে পারেন।শুধু ওর কথায় আমি একটু ঘেটে দেখার ট্রাই করেছিলাম।

আফসোস আমার,, আপনি সত্যি সত্যি ই এই জঘন্য কাজের সাথে উতপ্রত ভাবে জড়িত। সেদিন আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরেছিলো,,বারবার শুধু মাত্র অভ্রের মুখটাই চোখের সামনে ভেসে উঠেছিলো,,কখনো বন্ধু হিসেবে দেখি নি,,সবসময় ভাই ভেবে এসেছি,,আজও ভাই ভাবি,,

আপনি তো জানতেন মিস্টার অনিল হায়দার অভ্রের মা নেই,,আপনিই ওর বাবা আপনি ই ওর মা,,তবে কেন করলেন এমন?

নিজের কপালে রিপ্লভার দিয়ে স্লাইড করতে করতে শুভ্র কথা গুলো একটানা বলেই অনিল হায়দার এর দিকে তাকালো,,

ঘন্টা দুয়েক আগেই শুভ্র মিস্টার অনিল কে নিজের গোপন ডেরায় এনে একটা চেয়ারের সাথে বেধে রাখে,,নিজেও সামনের চেয়ারে বসে পরে,,

অনিল হায়দার চুপ করে আছে,,কি বলবে সে,,কিই বা বলার আছে তার,,

অনিল হায়দার এর নিরবতা দেখে শুভ্র মুচকি হাসলো,,

একটা কথা কি জানেন তো পাপ বাপকেও ছাড়ে না।

কিছুক্ষন চুপ থেকে হঠাৎ শুভ্র বলে উঠলো,,

আচ্ছা,, অভ্রের মা মানে আন্টি কি করে মারা যান,,বলুন তো মিস্টার অনিল হায়দার।

হঠাৎ শুভ্রের এমন প্রশ্নে চমকে উঠলেন অনিল,,অসম্ভব রকমের ঘামছেন তিনি,,কপালের ঘাম চুইয়ে চুইয়ে গাল বেয়ে পড়ছে,,

হাত দুটি ও পিছনে বাঁধা,

অনিল হায়দার এর এমন অবস্থা দেখে শুভ্র হাসলো,,

— কি হয়েছে কিছু তো বলুন আংকেল!,,আপনার হাত বাধা মুখ তো বাঁধা না,,

— কককি বলব?

— মিসেস হায়দার কিভাবে মারা গেলেন?

— আআআমি কি বলব,,অভ্রের মা তো ঘুমের মাঝে হার্ট অ্যাটাক করেছে,,

— মিথ্যে কথা,,আন্টি কে খুন করা হয়েছে,,

— আমি জানি না আমি কিচ্ছু জানি না,,( ভীত গলায়)

— আর খুন টা আপনি করেছেন,,

— নাআআ,, আমি কিছু করি নি আমি কিছু জানিনা,, ছেড়ে দাও আমায়,,

— আপনি কি সত্যি ই কিছু জানেন না? মিস্টার অনিল হায়দার. ।

–না না না

শুভ্র বাঁকা হাসি দিয়ে,, অনিল হায়দার এর পা বরাবর গুলি করে,, গুলি করার সাথে সাথে ই ওনার পা দিয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরতে শুরু করে,,

— এখন ও সময় আছে,,সত্যি টা স্বীকার করুন,,

— না না আমি জানি না,,( কাতরাতে কাতরাতে)

— আমি আর একবার জিজ্ঞেস করব,,আপনি যদি না বলেন আপনার মাথা বরাবর শুট করতে আমার কিন্তু হাত একবার ও কাঁপবে না,,

–………………

— কি হয়েছে বলুন,,চুপ করে আছেন কেন? বলুন( চিৎকার করে)

— বববলছি,,হ্যা আমি আমিই আমার স্ত্রী কে হত্যা করেছি,,আমিই অভ্রকে মা হারা করেছি,,

— কারণ কি?

— আসলে অভ্রের মা আমার ব্যবসা সম্পর্কে সব কিছু জেনে গিয়ে ছিল,, আমাকে অনেক বার বাঁধা ও দিয়েছে কিন্তু আমি শুনিনি,,উল্টো ওর ওপর অত্যাচার করেছি,,মারধর করেছি,,ও আমাকে হুমকি দিয়েছিলো,,
যে সবকিছু পুলিশ কে জানিয়ে দেবে সব প্রমান ও জোগাড় করে ছিল,, তাই এসব থেকে বাঁচতে আমি ওকে রাতে বালিস চাপা দিয়ে মেরে ফেলি আর সবাই জানে ও ঘুমের মাঝে হার্ট অ্যাটাক করে,,

শুভ্র খুব মনোযোগ দিয়ে কথা গুলো শুনল আর ভাবতে লাগলো মানুষ কিভাবে এত নিচে নেমে আসতে পারে,, অথচ তার মাঝে কোন অনুশোচনা নেই,, নেই কোন আফসোস,, হাহ্

বাহ্ বাহ্ বাহ্ মিস্টার অনিল হায়দার অরোফে মিনহাজ হায়দার কি সুন্দর করে ই না বললেন নিজের কুকীর্তি গুলো,,,

পিছন থেকে কারো হাতের তালি শুনে শুভ্র পিছনে তাকালো,,

অনিল হায়দার ও মাথা তুলে সামনে র মানুষ টাকে দেখে নিলো,,

— অভ্র তুই? এখানে?

অভ্র আর তরু দরজায় দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের কথা গুলো শুনছিলো,,

— আমি জানতাম তুই এখানেই থাকবি,,এই অপরাধী কে নিয়ে,, কিন্তু কে জানত এসেই আমার নিজের বাবার মুখে তারই কুকীর্তি গুলো শুনতে হবে,, ছিহ ছিহ ছিহ মানুষ কতটা জঘন্য হতে পারে তোমাকে না দেখলে বুঝতে ই পারতাম না,,আজ তোমার উপর না নিজের উপর চরম ঘৃনা হচ্ছে,, আমি কিভাবে তোমার মতো একটা পশু র ঘরে জন্ম নিলাম,,( অনিল হায়দার এর দিকে তাকিয়ে)

শুভ্র অভ্রের মনের অবস্থা বুঝতে পারলো,,

— অভ্র অভ্র ভাই আমার শান্ত হহ,,অপরাধী চরম শাস্তি পাবে,,

— শাস্তি.. হা হা হা( অভ্র পাগলের মতো হাসতে লাগলো)

আচ্ছা শুভ্র,, এই ওনাকে শাস্তি দিলেই কি আমার মা ফিরে আসবে? বলতে পারিস তুই?

জানি পারবি না,,আসবে না আসবে আমার মা,,ৃা ছাড়া দুনিয়ায় চলা যে কত কষ্ট সেটা তো যার মা নেই সেই বুঝে তুই কি বুঝবি,,

অভ্র ধীর পায়ে অনিলের সামনে গিয়ে দাড়ালো,,

— আচ্ছা মিস্টার অনিল হায়দার,, আমার মা কি এমন দোষ করেছিলো যার জন্য আপনি তাকে মেরেই ফেললেন,, এই আমাকে এতিম করলেন,,জানেন আপনি? কত টা কষ্ট ভোগ করতে হয় একজন এতিম মা হারা সন্তান কে,,আমাকে মায়ের আদর থেকে কেন বঞ্চিত করলেন আপনি? জানেন.. আমাকে না কেউ ভালোবাসে নি আপনি ও না,,নিজের টাকার দিকে আপনার সবসময় নজর ছিলো,,আমাকে দেখার সময় কোথায় আপনার,,আমাকে তো কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পারিয়ে দেই নি,,কখনো কষ্ট পেয়ে কান্না করলে কেউ তো বুকে জরিয়ে ধরেনি,,খেতে ইচ্ছে না হলে কেউ তো জোর করে খাইয়ে দেই নি,,আমার আবদার গুলো শুনার মতো তো কেউ ছিল না মা ছাড়া,, আমাকে তো কেউ ঘুম পাড়ানি গান ও শোনাই নি সেই ছোট্ট বেলা থেকে একা একা বড় হয়েছি,,কখনো কি আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করেছেন যে আমি খেয়েছি কিনা? করেননি,,নিজের সাথে যুদ্ধ করতে করতে আজ আমি এভাবে এমন ভাবে আছি,,

আমার কোন প্রশ্নের উত্তর কি আপনার কাছে আছে? মিস্টার অনিল হায়দার?

অনিল হায়দার মাথা নীচু করে বসে আছে,,কিছু বলছে না,,কিি বা বলবে,,অভ্রের একটা প্রশ্নের উত্তর ও তো তার জানা নেই,,বুকের পাশ টা কেমন জানি চিনচিন ব্যথা করছে,,ছেলেটা তার কত কষ্টে বড় হয়েছে,, অথচ একবার ও কাছে টেনে আদর করার সময় তার হয়নি,,

অনিলের নিরবতা দেখে অভ্র তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো,,

— জানি আমি,,আমার করা একটা প্রশ্নের উত্তর ও আপনার কাছে নেই,,মিস্টার অনিল হায়দার,,

আপনাকে আমি কোন শাস্তি দেবো না তবে কখনো ক্ষমা করব না,,

বলেই অভ্র ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো,,

অভ্রের পিছনে পিছনে তরুও বের হয়ে গেলো,,,,

শুভ্র এতক্ষণ অভ্রের কথা গুলো শুনছিলো,, তার চোখের কোনায় লেগে থাকা পানি মুছে অনিল হায়দার এর সামনে দাড়ালো,,

— কি বুঝলেন?

— কি?

— আপনার ছেলেও তো আজ মুখ ফিরিয়ে নিলো,,

–………………..

— আপনার কুকীর্তি র সব প্রমান আমার কাছে আছে কিছুক্ষন বাদেই পুলিশ চলে আসবে ততক্ষণ আপনি এভাবেই থাকেন,,আর বাইরে আমার লোকজন আছে,,পুলিশ এলে আমাকে খবর ই দেবে,,,এখন আসি আংকেএএএএএল
বলেই শুভ্র মুচকি হেসে বাইরে চলে গেলো,,,

_____________________
.এদিকে…
অভ্র দাড়াও অভ্র,,আমার কথাটা শুনো…

অভ্র কোন কথা না বলে সোজা গাড়িতে উঠে বসে পরে,,

তরুও তড়িঘড়ি করে গাড়িতে বসে,,,

অভ্র কোন দিকে না তাকিয়ে ড্রাইভ করা শুরু করে,,

তরু বুঝতে পারলো অভ্রের মনে কি পরিমাণ ঝড় উঠেছে,,,

হঠাৎ ব্রেক কষাই তরু তাল সামলাতে না পেরে সামনে ঝুকে পরে,,ঠিক তখনই সামনে এক হাতের অস্তিত্ব টের পাই,,তরু তাকিয়ে দেখে অভ্র একহাত তার সামনে রাখা যেন কপালে ব্যথা না পাই,,

— নামো…

— কোথায় এসেছি আমরা?

–তোমাকে নামতে বলেছি নামো প্রশ্ন করছো কেন?

তরু গাড়ি থেকে নেমে গেলো সাথে অভ্র ও,

তরু সামনে তাকিয়ে দেখে একটা নদী আর সবুজ ঘাস,,
এটা অভ্রের খুব প্রিয় একটা জায়গা,,যখবই অভ্রের মন খারাপ থাকে তখনই অভ্র এখানে আসে,,
তরু আর অভ্র খানিকটা সামনে এগিয়ে যায়,,

— আচ্ছা তরু আজ আমার মা বেচে থাকলে কি করতো? নিশ্চয়ই তোমাকে দেখে খুব খুশি হতেন তাই না?

অভ্র সামনে র দিকে তাকিয়ে তরুকে প্রশ্নটা করলো,,

তরু অভ্রের দিকে তাকিয়ে বলে..

— হুম,,

তরু আর কিছু না বলে,, অভ্রের কাঁধে হাত রাখে,,

ভরসার একটা জায়গা পেয়ে অভ্র তরুকে জরিয়ে ধরে,,

তরু তার কাঁধে পানির অস্তিত্ব টের পেলো,,

অভ্র কাদছে,, সব কষ্ট কে উজার করে কাদছে,,এতদিনে এতদিনের চাপা কষ্ট আজ বুক ছিরে বেরিয়ে আসতে চাইছে,,,

চলবে…….

[ দেরি করে দেওয়ার জন্য সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থি,,প্লিজ সবাই রিয়েক্ট আর মন্তব্য করবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here