#সম্মোহনী_সেই_মেয়েটি
#পর্বঃ২৩,২৪
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি
পর্বঃ২৩
সকাল বেলা চড়ুইপাখির কলরব,শালিকের জুটি গুঞ্জন তুলছে এদিক-সেদিক।সুর্যের তেজস্বী স্বচ্ছ কাঁচের ন্যায় রোদ গড়িয়ে পড়ছে অন্দরে।সকালের রোদ হলেও যেনো তেজ দ্বিপ্রহরের ন্যায়।নীরদ বরণে চোখ ঝলসানো রোদ্দুর খেলা করছে আপন মনে।অনিলার চোখ মুখ কুচকে এলো এতে।ঘুমের রেশ কেটে যেতেই বুঝলো আজকে অনেকটা বেলা হয়ে গেছে।জুনইদের ক্লাস ও আছে আজকে দেরিতে।অনিলা সরাসরি ওয়াশরুমে চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে নিয়ে একটা প্লাজো,কুর্তি সেট পরে ব্রেকফাস্ট তৈরি করার জন্য কিচেনে চলে আসে।ব্রেকফাস্ট তৈরি হয়ে গেলে অনিলা খাবার গুলো টেবিলে সাজাচ্ছে।এমন সময় কলিং বেল টা বেজে উঠলো।অনিলা গিয়ে দরজাটা খুলতেই তার বয়সি একটা সুদর্শণা তরুনীকে দেখতে পেলো।অনিলা চিনতে না পেরে তার পরিচয় জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেই তার নাম তাহরিমা।বাকিটা ভেতরে এসে বলতে চাইলো।মেয়েটার এরকম উত্তরে অনিলা অনেক টা অবাক হয়ে যায়।
তাহরিমা নামের মেয়েটি দরজা থেকে সোজা হেটে এসে জুনইদ কে জড়িয়ে ধরে।জুনইদ উঠে ফ্রেশ হয়ে চলেও এসেছে ব্রেকফাস্ট টেবিলে।তাহরিমার এমন আচমকা জ’ড়ি’য়ে ধরাতে জুনইদ একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।এদিকে অনিলা তো এই দৃশ্য দেখে পুরাই ‘থ’।জুনইদ কোনো রকমে তাহরিমার পিঠে আলতো করে হাত রেখে ওঁকে সরিয়ে দিলো নিজের থেকে।
এতক্ষনে তাহরিমা বলে উঠলো,”হ্যেই হাউ আর ইউ?”
জুনইদ আড় চোখে একবার অনিলাকে পরখ করে নিলো।বেশ বুঝেছে মেয়েটা হেব্বি চটেছে তাহরিমা জড়িয়ে ধরায়।সে মিলিয়ে যাওয়া মুখে জোর পুর্বক হেসে বলে,”ইয়াহ আ’ম ফাইন।
এর মধ্যে জুনইদের মা এসে দাঁড়ালো।তাহরিমাকে দেখে তো জুনইদের মা ও অবাক।শান্তা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলেন,”তুমি তাহরিমা না?”
তাহরিমা বলে,”একদম ঠিক চিনেছো আন্টি।”
“ঠিক আছে এসো বসো।তা এতো দিন পর।সব কিছু ঠিক ঠাক আছে তো?”
“হ্যাঁ আন্টি সব ঠিক আছে।”
“তোমার মুখ টা এতো শুকনো লাগছে কেন মা?”
“ডায়েটে আছি তো তাই আন্টি।”
তাহরিমার ডায়েটের কথা শুনে শান্তা বললেন,
“আজকাল ছেলে মেয়েদের খালি ডায়েট আর ডায়েট।”
“আপনার শরীর ভালো তো আন্টি।আপনিও অনেক শুকিয়ে গেছেন।খাওয়া দাওয়া করছেন না তাই না ঠিক করে?”তাহরিমা কিছুটা আহ্লাদী কন্ঠে প্রশ্ন করলো শান্তা বেগম কে।
শান্তা বেগম কিছু টা প্রসন্ন বোধ করে বললেন,
“হ্যাঁ ভালো আছি মা।শরীরের আর কি দোষ। বয়স হচ্ছে তো তাই।”
“কি যে বলেন না আন্টি।আপনাকে এখনো সুইট সিক্সটিন লাগে।এখনো রুপ যেনো উপচে পড়ছে!”
শান্তা কিছুটা লজ্জা পেলেন।তাহরিমার কথায় খুশিও হলেন একটু।এতো দিন পর কেউ তো একটু তাকে সুন্দর বললো।
অনিলা ভেতরে ভেতরে ক্ষোভে ফেটে পরছে এসব আদিখ্যেতা দেখে।প্রথমে তারই সামনে তারই স্বামীকে জড়িয়ে ধরলো এই মেয়েটা।এখন আবার তার উপর তার শাশুড়ীর সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে।তার শাশুড়ী শুধুই তার সাথে এভাবে কথা বলবে এই মেয়ের সঙ্গে এতো কি কথা।তার শাশুড়ীকে এই মেয়ে টা পটানোর চেষ্টা করছে না তো যাতে ছেলের বউ হতে পারে।ফুসফুস করে উঠলো ভেতর টা রাগে।সবে তার শাশুড়ীর সঙ্গে একটু ভাব হয়েছে তার।সে তো জুনইদ কে দেখে নেবে পরে কিন্তু সে তো আর শাশুড়ীর মধ্যে ভাগ বসাতে দেবে না এই মেয়েকে।কিছুতেই না।রাগে তার মনে হচ্ছে মেয়েটার চু’ল কা*চি দিয়ে কে*টে কু*চি কু*চি করে দিতে।অনিলা বিরবির করলো, “আবার আদিখ্যেতা দেখিয়ে জড়িয়ে ধরছে দেখো কিভাবে।তার শাশুড়ী মা সে এখনো এভাবে মিশতে পারলো না আর বাইরের একটা মেয়ে কিভাবে, অবশ্য তাকে হইতো এখনো মেনেই নিতে পারেন নি তার শাশুড়ী মা।”
শান্তা খেয়াল করলেন অনিলা কিভাবে যেনো তাকিয়ে আছে তাহরিমার দিকে আর বিরবির করছে।উনি ভাবছেন,এই মেয়েটা কি তাহরিমা দেখে রাগ করছে নাকি আমার সঙ্গে কথা বলছে বলে।তিনি অনিলাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,”ওহ তুমি তো আগে তাহরিমাকে দেখো নি।ও হচ্ছে জুনইদের বাবার বন্ধুর মেয়ে।
ভদ্রতা বজায় রাখতে অনিলা বলে উঠলো,”ওওওও আচ্ছা।হাই তাহরিমা!কেমন আছো?”
তাহরিমা শুধু অনিলার দিকে তাকিয়ে প্রতিউত্তরে হাসলো।রমিজ আহমেদ, আলতাফ আহমেদ, নিশা ব্রেকফাস্ট এর জন্য নিচে এলো।
নিশা বলে উঠলো,”এটা আমি কাকে দেখছি?তুমি তাহরিমা না?
“হ্যাঁ! সবাই দেখছি আমাকে খুব ভালো করেই মনে রেখেছে।”
আসলে তাহরিমাকে কয়েক বছর আগে দেখেছে তাই চিনতে একটু দেরি হচ্ছিলো।চেহেরাটাও একটু খারাপ হয়ে পরিবর্তন এসেছে ওর।এভাবে সবাই কথা বলতে বলতে ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে পরলো।কথায় কথায় রমিজ আহমেদ তাহরিমার এখানে আসার কারণ জিজ্ঞেস করলে তাহরিমা জানায় যে এখানে ও কিছুদিন থাকতে এসেছে।তাহরিমা এক্সপ্লেইন করে বলে,
“একচ্যুয়েলি বাড়ি থেকে কলেজ এটেন্ড করাটা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।কলেজের কাছাকাছি হোস্টেলের কথা বলেছি যদি সেটা না হয় তাহলে ভাড়া বাড়ি দেখতে হবে।কলেজ টা যেহেতু এখান থেকেই কাছাকাছি হয় সেহেতু নতুন বাড়ি না হওয়া অব্দি এখানেই থাকতে হবে।তোমাদের কোনো অসুবিধা হবে না তো?”
রমিজ আহমেদ বলেন, এটা কোনো কথা হলো নাকি।আর তুমি ভাড়া বাড়ি কেন খুজতে যাবে?আমরা কি তোমার কেউ হয় না?তোমার বাবা নেই বলে কি আমাদের কি কোনো দায়িত্ব নেই বুঝি?সোহান তো কত দিন থেকেই যেতে এখানে।কোনো ভাড়া বাড়ি খুজতে হবে না।যতদিন কলেজ কমপ্লিট না হয় তুমি এখানে থেকেই পড়াশোনা করবে।”
“হুম বাবা তো বলেই গেছিলো এই শহরে যেকোনো রকম অসুবিধা হলেই তোমাকে যেনো জানায়।”
“একদম ঠিক করেছো তুমি।”
অনিলা ভ্রু সংকুচিত করে বললো,”বাবা বলে গেছিলো মানে?”
জুনইদ নরম গলায় বললো,”তাহরিমার বাবা নেই।আসলে মাস ছয়েক আগে তাহরিমার বাবা একটা এক্সিডেন্টে মারা গেছেন।
অনিলার একটু খারাপ লাগলো।সে ছোট্ট করে বললো, “ওহ! আ’ম সো স্যরি!”
ব্রেকফাস্ট কমপ্লিট হয়ে গেলে জুনইদ ঘরে চলে আসে এটা ভেবে যে অনিলা হইতো একবার আসবে।কিন্তু অনিলা ঘরে না গিয়ে ডাইনিং এ বসে তাহরিমা ও নিশার সঙ্গে কথা বলতে থাকে।তাহরিমা একের পর এক এতো কথা বলছে যে জুনইদ এর চিন্তা ওর মাথারতেই আসে নি।জুনইদ বিরক্ত হয়ে অনিলার নাম্বারে কল করে দেখে অনিলা ফোন টা ঘরেই ফেলে রেখে গেছে।জুনইদ ভাবছে একবার অনিলা ঘরে এলে ওঁকে একবার হা’গ করে গুড বাই বলে তারপর বেরোবে।কিন্তু অনিলা না আসাতে জুনইদ রেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।এমন কি বেরিয়ে যাওয়ার সময় ওর পাশ দিয়ে গেলেও ওর দিকে একবারও না তাকিয়ে,মা আসছি বলে বেরিয়ে গেলো।সেটা অনিলা সহ তাহরিমার ও চোখে পরলো।এটা দেখে অনিলার একটু অবাক লাগলো।প্রতি দিন সকালে হা’গ করে, কপালে একটা চু’মু একে দিয়ে তবেই যায় জুনইদ।এর আগে তো জুনইদ ওঁকে বলেই যেতো তাহলে আজ কি হলো।অনিলার মন খারাপ হলো।মনে জমা হলো অভিমান।
দুপুরে জুনইদ খেয়েছে কিনা জানার জন্য অনিলা কল করতে গিয়ে দেখে জুনইদ এর মিসড কল সকাল দশটাই।তার মানে সে যখন গল্প করছিলো তখন জুনইদ তাকে কল করেছিলো।এর জন্যই তবে সকালে ওইভাবে বেরিয়ে গেলো।অনিলা জুনইদ কে কল করে কথা বললো।জুনইদ ফোনের অপার থেকে বলে উঠলো,
“হ্যা বলো?”
“লাঞ্চ হয়েছে আপনার?”
“নাহ!তুমি করে নাও।”বলেই ফোন টা কেটে দিলো জুনইদ।
অনিলা ফোন কান থেকে নামিয়ে বলে,
“ওরেহ বাপরে এতো রাগ।আপনি কতক্ষণ রাগ করে থাকতে পারেন সেটাও দেখছি।অনিলা স্ট্রুয়ার্ট এর কাছে গিয়ে বলে, ”দেখলি স্ট্রুয়ার্ট আমার বর টা কত্তো রাগী!ঠিক তোর মতো।যেভাবে তুইও একটুতেই এত্তো বড় বড় রাগ করিস আমার উপর।”
স্ট্রুয়ার্ট মিহি শব্দে বলে উঠলো,”ভালোবাসা, ভালোবাসা, এটাই ভালোবাসা!”
“ওরেহ বাপরে খুব পেকেছিস তুই দেখছি।এসব কথা নিশ্চয়ই তোকে আমার বর ই শিখিয়েছে তাই না।”
“ছেলেটা, সেই ছেলেটা,”
অনিলা হেসে দিলো স্ট্রুয়ার্ট এর কথায়।
সন্ধ্যা বেলা জুনইদ অফিস থেকে বাড়ি ফিরলে অনিলাও ঘরে চলে আসে।জুনইদ অনিলার দিকে না তাকিয়েই বিছানায় শার্ট টা খুলে রেখে ওয়াশরুমে চলে গেলো।অনিলা সেটা দেখে জুনইদ কে আর একটু রাগানোর জন্য বলে উঠলো,”ওকে আমি বাইরে গেলাম।আপনার কিছু লাগলে বলবেন কিন্তু ডেকে।”
জুনইদ ওয়াশ রুমে থেকে বলে উঠলো,
“তোমাকে লাগবে!”
“কিহ! কি লাগবে?”
“কানে শুনতে পাও না?টাওয়াল টা দাও।”
“টাওয়াল তো ভেতরেই আছে।আমি তো অন্য কিছু শুনলাম।”অনিলা দুষ্টুমি করে বললো।
“এটা ভিজে গেছে।আরেকটা নিয়ে আসো।”
অনিলাও আর কিছু না বলে বলে,”ঠিক আছে আমি নিয়ে আসছি।”
ওয়াশরুমের দরজা টা জাষ্ট লাগানো ছিলো।তাই অনিলাও অন্য দিকে তাকিয়ে দরজাটা একটু ফাঁক করে টাওয়াল হাতে নিয়ে হাত টা এগিয়ে দিলো।জুনইদ ও এটার ই অপেক্ষা করছিলো যেনো।অনিলা হাত দিতেই এক টান দিয়ে অনিলাকে সোজা শাওয়ারের নিচে দাঁড় করিয়ে দিলো।শাওয়ার টা অনই ছিলো।আর অনিলা ভি’জে গেলো।হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো জুনইদের দিকে।এরকম কিছু করবে জুনইদ অনিলার ভাবনার ও বাইরে ছিলো।জুনইদ ওর দুই বা’হু চেপে ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে।অনিলা কটমট করে বললো,
“এটা কি হলো।আপনার মনে এই ছিলো।ছাড়ুন আমাকে।ঠান্ডা লেগে যাবে তো আমার ভোর সন্ধ্যায় এভাবে ভিজলে।”
“লাগুক।আজ আর ছাড়ছি না।”
“আপনি সকালে ওই ভাবে পালিয়ে গেলেন কেন?গেলেনই যখন আর লাঞ্চ টাইমে আর আসা হলো না।
“তুমিও তো ঘরে আসো নাই গল্প করছিলে।খুব ভালো লাগে বুঝি আমাকে কষ্ট দিতে!”
“আচ্ছা স্যরি।বুঝতে পারিনি!”
“শুকনো স্যরি তে কাজ চলবে না মেডাম!কি’স মি!”বলে জুনইদ ও শাওয়ারের নিচে অনিলার সঙ্গে চে’পে দাঁড়িয়ে ভি’জতে লাগলো।
অনিলার মুখ থেকে রা’ টিও বের হচ্ছে না।অবাক হয়ে বলে উঠলো,
“হোয়াট?”
“ইয়েস!ইউ হ্যাভ ডু কি’স মি ফার্স্ট!”
লজ্জায় মুর্ছে গেলো অনিলা।এমন খাপছাড়া কথা শুনে।এমন বেলাজ কবে হলো লোক টা।নির্বিশেষে চোখ বন্ধ করে নিলো অনিলা।মনে হচ্ছে এক্ষুনি দেয়ালের সঙ্গে মিশে যেতে পারলে ভালো হতো।
জুনইদ অপলক নয়নে তাকিয়ে আছে অনিলার ভে’জা মুখশ্রীর পানে।এই মুখের দিকে তাকালেই তার সব ক্লান্তি দূর হয়ে যেতে বাধ্য।এই মেয়েটি বুঝি তাকে এভাবেই তার এমন মায়াময়রূপ,সম্মোহনী রুপে পা*গল করে মে’রেই ফেলবে।জুনইদ মিচকে হেসে বললো,
“কি হলো?কি’স করবে না-কি এভাবেই ভে”জা শরীরে আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবা।”
জুনইদের কথা শুনে অনিলার ছুটে বেরিয়ে যেতে ইচ্ছে হলো কিন্তু ও জানে এখন জুনইদ তাকে কিছু তেই ছাড়বে না।তাই কিছুটা বাধ্য হয়েই অনিলা সিদ্ধান্ত নিলো জুনইদ কে কি’স করবে।অনিলা সবে মাত্র মুখ টা এগিয়েছে ওমনি বাইরে তাহরিমার গলার আওয়াজ পেয়ে দুজনেরই হুস ফিরলো।
“জুনইদ তুমি কি ঘরে আছো?”
জুনইদ বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো,”ওহ শিট!এই মেয়েটা আর আসার সময় পেলো না।একবারে সারে বারোটা বাজিয়ে দিলো আমার রো’মান্সের!”
আর অনিলা কুটকুট করে হাসছে জুনইদের মুখের এক্সপ্রেশন দেখে।মুখে হাত চে’পে হেসে একেবারে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে অনিলা।যদি পারতো একেবারে ঘর ফাটিয়ে হাসত এখন সে।কিন্তু এটা করলে তাকেই ভীষণ ল’জ্জায় পরতে হবে।
#চলবে
আসসালামু আলাইকুম।নামাজ কায়েম করুন।
#সম্মোহনী_সেই_মেয়েটি
#পর্বঃ২৪
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি
সাঁঝ নেমেছে পশ্চিমাকাশে।কমলাটে নীরদদেশে ছেঁয়ে পড়েছে কালচে আঁধার। বাতাবরণ নিরুত্তাপ, নিরুপম। শুক্লপক্ষের পঞ্চমী আজ, নিদারুণ চন্দ্রমার আবির্ভাব মধ্যভাগে।বসন্তের বাতাসে ভাসছে মিষ্টতা।এতো মধুর পরিবেশেও অনিলার মুখে তিক্ততা ছেয়ে আছে তার একটাই কারণ সেটা হলো তাহরিমা জুনইদের পাশে পাশে হাটছে আর ইচ্ছে করেই ওর গায়ের সঙ্গে নিজের গা লাগাচ্ছে।আর জুনইদও আপন মনে ওর সঙ্গে হেটেই যাচ্ছে। নিশার সঙ্গে অনিলা হাটছে।আসলে এখন তারা যাচ্ছে শপিং মলে।ওই তাহরিমার কি কি কসমেটিকস নাকি কেনার আছে।তখন এই কথা বলতেই গেছিলো জুনইদ কে।এখন সন্ধ্যা সাত টা।যদিও অনিলা কিছুতেই আসবে না বলে জেদ করেছিলো কিন্তু জুনইদ কিছুতেই ছাড়বে না অনিলাকে সাথে নেবেই।পরে তারা চারজন আসে শপিং করার জন্য।যেহেতু শপিং মল বাড়ি থেকে দশ মিনিট হাটলেই যাওয়া যায় সেহেতু তারা আর গাড়ি নেই নি সাথে।পায়ে হেটে যাবে বলেই ঠিক করে।কিন্তু ওরা এমন ভাব করছে যেনো ওদের সঙ্গে আর কেউই নেই।
এবার যেনো আর সহ্য করতে পারছে না অনিলা।তাহরিমা জুনইদের হাত চেপে ধরে হাটছে।জুনইদ নানা রকম ভাবে হাত টা ছাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাহরিমা সেটা যেনো বুঝেও অবুঝের মতো করছে।নিশাও সেটা লক্ষ্য করছে কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।এইভাবেই পুরো রাস্তায় হেটে গেলো তাহরিমা।কেনাকাটা করে ফেরার সময় নিশা গিয়ে ওর ভাইয়ার এক হাতে শপিং ব্যাগ আর অন্য হাত টা নিজেই ধরে ফেলে।জুনইদ তো নিশার এরকম কান্ড দেখে মনে মনে খুব হাসছে।তার বোন টা পারেও বটে।
আর অনিলা তো রেগে বোম হয়ে আছে।সে ঠিক করেই নিয়েছে কিছু তেই কথা বলবে না আজ জুনইদ এর সাথে।তবে কিছুই বলছে না।রাগ হজম করে নিচ্ছে এখন সে।তাহরিমা এবার অনিলার পাশাপাশি হেটে আসছে।জুনইদ একটুও বুঝতে পারেনি যে অনিলা তার উপর রেগে লাল হয়ে আছে।
ডিনার কমপ্লিট করে সবাই সবার রুমে চলে গেছে।অনিলা এসে বিছানায় মুখ গুমরা করে বসে আছে।তার হঠাৎ মনে পরলো জুনইদের সঙ্গে ফেবু তে চ্যাটিং করার কথা।আচ্ছা সেদিন তো জুনইদ বলেছিলো সে কাউকে ভালোবাসে আর তার নাম্বার টা দিতেও চেয়েছে।সেই মেয়েটা কোনো ভাবে এই তাহরিমা নয় তো।হটাৎ করেই জুনইদ এসে অনিলার ক’মো’ড় চেপে ধরে ওর পে’টে মুখ গুজে দিয়ে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো।অনিলা আক্রোশ ভরা কন্ঠে বললো,
“ছাড়ুন আমাকে!”
“নাহ ছাড়বো না!’
“ভালো লাগছে না কিছুই ছাড়ুন।”
“তাহলে যেটা ভালো লাগবে সেটা করতে হবে।”
অনিলা তেছড়া কন্ঠে বললো, “সেটাই তো করে বেরাচ্ছেন!”
জুনইদ অবাক কন্ঠে বললো,”মানে?কি মীন করছো তুমি?”
অনিলা শুয়ে পরতে পরতে বললো,
“কিছু না ঘুমান।”
আজব তো!বলবে না কি হয়েছে?তোমার মুড অফ কেন?”
“আমার মুড আপনাকে দেখতে হবে না।”
“তো কে দেখবে শুনি অন্য লোকে?”
অনিলা নিশ্চুপ।এবার জুনইদ অনিলাকে জোর করে নিজের দিকে ঘোরালো।এরপর অনিলাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
“এবার বলো কি হয়েছে?না হলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
তবুও অনিলা অন্য দিকে ফিরে বলে,”কিছু হয়নি তো কি বলবো বলুন?”
জুনইদ এবার অধৈর্য্য হয়ে বলে উঠলো,
“আরে বাবা কেউ কিছু বলেছে তোমাকে?”
“হুম।”
“কে কি বলেছে বলো?আমি আজ দেখাবো মজা তাকে!তুমি শুধু একবার বলো নাম টা।এই তুমি আমার সঙ্গে ইয়ার্কি মারছো?”
“আমার কথা তো এখন আপনার কাছে ইয়ার্কিই মনে হবে তাই না।”
“ওও আল্লাহ!আচ্ছা এবার তো বলো কি হয়েছে?কে কি বলেছে বলো শুধু?”
“নিশা বললো যে মানে,ও বললো যে,না মানে!”
“হুম মানে টাই তো জানতে চাইছি।মানে মানে না করে মানে টা বলোই না?”
“নিশা ফেরার সময় আমাকে আপনার হাত ধরতে বলেছিলো।কেন?”
“হোয়াট নিশা তোমাকে আমার হাত ধরতে বলেছিলো?এটা কখন বললো ও?”
“মার্কেট থেকে বেরোনোর সময় বলেছিলো।এখন যান গিয়ে ওঁকে ব’কে আসুন!”
“আচ্ছা,আচ্ছা,জেলাসনেস!জেলাসনেস কাজ করছে তাহলে?ইটস মাই প্লেজার মেডাম!তুমি আমার হাত টা ধরো নি কেন?”
“আমার মধ্যে না ওই তাহরিমার মতো ওতো বেহায়া পনা নেই যে রাস্তার মধ্যে হাত ধরবো।প্রথমে তো বাড়িতে এসেই সবার সামনে জড়িয়ে ধরলো।তারপর আবার আপনার হাত ধরে মার্কেটে গেলো।সেজন্যই নিশা আমাকে বলেছিলো আপনার হাত ধরতে।আর ওসব জেলাস টেলাস কিচ্ছু না ওকে!”
“আরে তুমি ভুল ভাবছো তাহরিমাকে।ওর মাইন্ড ওরকম না।হয়তো এমনি ধরেছে!এটা নিয়ে তুমি কিছু মনে করো না।”
“শুধু আমার মনে হলে না হয় বুঝতাম।কিন্তু দেখুন নিশার ও কিন্তু মনে হয়েছে মেয়েটা গা’য়ে প’রা।তাছাড়া সকাল বেলা এসে তো নিশাকেও হা’গ করতে পারতো কিন্তু ও এসেই আপনাকে জ’ড়িয়ে ধরলো।কাকে কি বলছি আপনার তো ভালোই লেগেছে।হাতের লক্ষী কেউ পায়ে ঠেলে নাকি!”
“অনিলা এসব কি কথা?কিসের লক্ষী হ্যাহ।পাগল নাকি!আর লক্ষী অলক্ষী যাহ হোক সবটা জুড়ে শুধুই তুমি!যাকে ভালোবাসার পর অন্য কাউকে ভালোবাসা ইচ্ছেই মরে যায়। যাকে ছোয়ার পর অন্য কাউকে ছোয়ার ইচ্ছে টাই আর থাকে না,তুমি আমার সেই অনুভুতি!কখনো ভুল বুঝো না আমায় প্লিজ।”
“আ’ম সো স্যরি।তাহরিমা প্রত্যেকটা এক্টিভিটস খুব অদ্ভুত লাগছিলো আমার কাছে।”
“ঠিক আছে আর কথা নয়।এখন শুধু ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে!বুঝলে মেডাম।”
•
সকালবেলা জুনইদ কাজে বেরোবে তখনই রমিজ আহমেদ জুনইদ কে সহ অনিলাকেও ডেকে পাঠালে দুজনেই চলে আসে তার রুমে।
“বাবা ডেকেছো?”
রমিজ আহমেদ আজকে অফিস যাবেন না।তাই ঘরে বসেই বই পড়ছিলেন।জুনইদের কথা শুনে বই টা রেখে দিলেন তিনি,
“হ্যাঁ আসো।একটা ইম্পোর্টেন্ট কথা বলার আছে।
ওরা দুজনেই রুমে ঢুকলো।তারপর তিনি বললেন,
“তোমার বাবা ফোন করেছিলেন অনিলা।তোমার বাবার উপর যে বা যারা এটাক করেছিলেন তাদের কে শনাক্ত করা গেছে।কিন্তু তোমার বাবা ভালো লয়ার পাচ্ছেন না।তাই তোমাদের কে একজনের কাছে যেতে হবে।এডভোকেট সৃজন উনার এড্রেস টা রাখো।এই এড্রেস অনুযায়ী চলে যাবে।আর জুনইদ তোমার এখন অনিলার সঙ্গে থাকা উচিত।একদিন অফিস আর কলেজ না করলে কোনো ক্ষতি হবে না।”
“ঠিক আছে বাবা আমরা চলে যাবো।আর আমি এমনিতেও অনিলাকে একা ছাড়তাম না বাবা!যদি কোনো বিপদ হয় ওর।”
“ঠিক আছে তোমরা সাবধানে যাবে।”
দুজনেই বেরিয়ে এলো রমিজ আহমেদ এর রুম থেকে।ড্রয়িংরুমে অনিলা আর জুনইদ বসে আছে।জুনইদ অনিলার মুখোমুখি অপজিট সাইডে বসেছে।তাহরিমা আর নিশা এলো সে সময়।তাহরিমা এসেই জুনইদ এর পাশে বসে ওর এক হাত চেপে ধরলো।আর নিশা বসলো অনিলার পাশে।জুনইদ তাহরিমার হাত ছাড়াতে চেষ্টা করলো।তাহরিমা জিজ্ঞেস করলো,
“আংকেল তোমাদের কি কথা বলার জন্য ডেকেছিলেন জুনইদ?”
জুনইদ হাত টা মুচড়ে ছাড়িয়ে নিলো,”ওই একটা কেসের ব্যাপারে কথা বলতেই ডেকেছিলো।”
“ওহ আচ্ছা।আর তোমার হাতে ওটা কিসের চিরকুট অনিলা?”
অনিলা কপট রেগে গিয়ে বলে,”বউদি বলো তাহরিমা।আর জুনইদ কি হ্যাঁ। ও তো তোমার বড় ভাই হয় ওঁকে ভাইয়া ডাকবা।আর যেটার কথা জিজ্ঞেস করছো এটা একটা এড্রেস।”
অনিলার উত্তর শুনে নিশা ঠোঁট টিপে হাসছে। তাহরিমা তো অনিলার কথায় ফাটাল বেলুনের মতো চুপসে গেলো।মিইয়ে যাওয়া গলায় জিজ্ঞেস করলো, “কার এড্রেস এটা?”কই দেখি।”বলেই অনিলার হাত থেকে এক প্রকার ছিনিয়ে নিলো চিরকুট টা।
জুনইদ বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো,”ওটা দেখে তুমি কি করবে।”
”হ্যাঁ এটা দেখে তুমি কি করবা তাহরিমা?আর তুমি এভাবে ছিনিয়ে নিলে কেন আমার হাত থেকে কাগজ টা।যদি ছিড়ে যেতো ওটা আমাদের দরকারি জিনিস।”
তাহরিমা মুখ কালো করে অনিলার হাতে আবার চিরকুট টা গুজে দিলো।অনিলাকে আস্তে আস্তে নিশা বলে, “সবে তেই এই মেয়ের এতো বারাবাড়ি কেন বুঝি না।আগে কিন্তু এমন ছিল না জানো তো!”
“আরে ছাড় তো এসব!”
এরপর তাহরিমা হঠাৎ করেই উঠে চলে গেলো।এটা তে জুনইদ তো হাফ ছেড়ে বাচলো।এরপর জুনইদ আর অনিলা রেডি হয়ে নিলো।বেলা এগারো টা বেজে গেলো।ওরা এক সাথে বেরিয়ে এলো। ওরা চিরকুট এ লেখা ঠিকানা অনুযায়ী এডভুকেট সৃজন এর বাড়ি চলে আসে।ওরা গিয়ে কয়েকবার বেল চাপলো তারপর ও কেউ দরজা খুলে দিলো না। জুনইদ কয়েকবার টোকা দিতেই বুঝা গেল দরজা টা খোলা।তাই একটু ইতস্তত করেই ওরা দুজনেই ঘরের ভেতর ঢুকলো।জুনইদ আগে থেকেই যেতে চাইলে অনিলা বলে উঠলো,
“ঘরটা তো এভাবে খোলা থাকার কথা নয়।আমার মনে হচ্ছে কিছু একটা গন্ডগোল আছে।”
“হতে পারে কিন্তু এখান থেকে তো ঘুরে যাওয়া মানায় না।চলো ভেতরে গিয়ে দেখি কেউ আছে কিনা।”
জুনইদ আগে আগে আর পিছনে পিছনে অনিলা ঢুকলো।হঠাৎ করেই কেউ পেছন থেকে কেউ অনিলার মুখে রোমাল চাপা দিয়ে ধরলো। জুনইদ পিছনে কি হচ্ছে কিছু বুঝে উঠতে পারার আগেই জুনইদ এর মাথায় কেউ পেছন থেকে ভারী ধাতব্য কিছু দিয়ে জোরে আঘাত করলো।জুনইদ কিছু বুঝে উঠার আগেই জ্ঞান শুন্য হয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পরলো।
#চলবে
আসসালামু আলাইকুম। নামাজ কায়েম করুন।
গত ২৩ পর্বে আমি লে’জ’বি’হী’ন বা’নর লিখেছিলাম।কখন যে হ-ঈ–ী কেটে লে’জ’বি’ন হয়ে গেছে দেখিনি।
আর এটার জন্য কয়েকজন আমার ইনবক্সে এতো বা’জে গা’লি দিয়েছে যে মুড টাই খারাপ হয়ে যায়।ভেবেছিলাম আর লিখবো না। কিন্তু আমি যে লেখা ছাড়তে পারি না।🙂🙂🙂