#সভ্যতার_সভ্য
#সপ্তমাংশ
#NishchupSpriha
==============
আমাদের নিয়ে আমার আকাশ-কুসুম সব ভাবনা, কল্পনা-জল্পনা সব কিছুকে মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়ে আমাদের অ্যানিভার্সারির দিন সকাল ছয়টায় সভ্য আমাকে ফোন করলো।
এখন রাতে আর আমার ঘুম হয়না। ঘুমের ঔষধও কাজ করে না। ভোর রাতের দিকে কয়েক ঘন্টার জন্য চোখ জোড়া বন্ধ হয়।
সারা রাত কেঁদেকেটে ভোর রাতে আমি ঘুমিয়েছি তখন সভ্যর ফোন কল। আমার কান্না করার কারণ হলো সভ্য। প্রায় একবছরের মতো হচ্ছে ওর সাথে আমার সব কিছু কেমন খাপছাড়া।
এই কয়েক মাস আমি নির্লজ্জের মতো সভ্যর পিছনে ঘুরেছি অথচ ও আমাকে জঘন্য ভাবে ইগনোর করেছে। লাস্ট ওয়ান মান্থ সভ্য আমাকে একদম বিশ্রীভাবে ইগনোর করেছে। আমাকে শুধু অপমাণ করাই বাকি রেখেছিল। কিন্তু এই এক মাসে সেটাও করে ফেলেছে। আমাকে পদে পদে বুঝিয়ে দিয়েছে আমি কতটা নির্লজ্জ… কতটা বেহায়া!
সভ্যর ফোন কল দেখে আমি ইচ্ছে করেই রিসিভ করলাম না।
শেষে আমার সিনিয়র একজন রুমমেট, শর্মিদি ধমকে উঠে বললো,
— ‘কিরে সভ্য ফোন রিসিভ করছিস না কেন? তোর এই ফোনের জন্য যে আমাদের ঘুম নরকে যাচ্ছে সেটা বুঝতে পারছিস না? এরপর ফোন রিসিভ না করলে তোকে সহ তোর ফোনকে রুমের বাহিরে বের করে দিবো।’
শর্মিদির ধমক খেয়ে আমি ভাবলাম নেক্সট কল রিসিভ করবো। আমি ভাবতে দেরি কিন্তু কল আসতে দেরি হয়নি। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সভ্যর গলা শুনতে পেলাম। আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম।
আমাকে নিশ্চুপ দেখে সভ্য বললো,
— ‘হ্যালো সুইটহার্ট, আর ইউ দ্যেয়ার? ক্যান ইউ হিয়ার মি, জান?’
আমি মনে মনে বললাম, ‘এহ্! এখন আসছে জান, সুইটহার্ট করতে…কুত্তা, শয়তান, বিলাই।’
কিন্তু মুখে কিছু বললাম না। ওর সাথে কথা বলতে মন খুব করে চাচ্ছে.. কিন্তু পারছি না! এই কয়েক মাসের, বিশেষ করে লাস্ট ওনায় মান্থের কাহিনি শুধু বার বার মনে পড়ছে।
সভ্য আবার বললো,
— ‘ওহ্..সুইটহার্ট…আ’ম স্যরি জান। আই নো ইউ ক্যান হিয়ার মি। প্লিজ জান টক টু মি… প্লিজ! আ’ম রিয়্যালি স্যরি জান… আমি আজকের দিনটায় তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম তাই তোমার সাথে এমন রুডলি বিহেভ করেছি। আই রিগ্রেট ফর মাই রুড বিহ্যাভিয়ার…. জান…. আ’ম স্যরি এগেইন সুইটহার্ট…..আ’ম স্যো স্যরি। প্লিজ টক টু মি জান! না হয় আমি মরে যাবো। তুমি আমার সাথে কথা না বলায় আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে জান….আমি যাস্ট মরে যাবো।’
এবার আমি বললাম,
— ‘কেনো মরে যাবি কেনো? এত দিন কথা না বলে তো ঠিকই বেঁচে ছিলি।’
সভ্য উল্লাসিত গলায় বললো,
— ‘থ্যাঙ্ক গড! অবশেষে—!’
ওকে শেষ করতে না দিয়ে আমি শক্ত গলায় প্রশ্ন করলাম,
— ‘ফোন কেন দিয়েছিস? মেয়ের অভাব পড়ে গেছে?’
সভ্য অবাক হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলো,
— ‘মানে? কি বলছো তুমি?’
— ‘বলেছি যে মেয়ের অভাব পড়ে গেছে? হঠাৎ আমার তলব?’
এবার সভ্য থমথমে গলায় বললো,
— ‘বাজে কথা বলবে না। অন্তত আজ তো নয়ই।’
সভ্যর কথা শুনে আমি ঝাঁজিয়ে উঠে বললাম,
— ‘আমি বাজে কথা বলি? আমি?’
— ‘হ্যাঁ তুমি… অন্ততপক্ষে আজকের দিনে কোন ঝগড়া নয়।’
— ‘কেন? আজকের দিনে কি? কি এমন দিন আজ? কে মরেছে আজকে?’
আমার কথা শুনে সভ্য তীব্র কন্ঠে বললো,
— ‘ছি সভ্যতা! কি এসব? আজকের মতো একটা শুভ দিনে তুমি এমন কথা বললে? আসলে আমার আসায় উচিত হয়নি। থাকো তুমি আমি চলে যাচ্ছি। কিন্তু একটা কথা মনে রেখো সভ্যতা আজকে যদি আমি চলে যাই তাহলে কিন্তু খুব খারাপ কিছু হবে। এন্ড আই মিন ইট।’
ওর কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। কি বলছে এসব! চলে যাই মানে? কই চলে যাবে?
এবার আমি একটু নরম হয়ে প্রশ্ন করলাম,
— ‘এখন কই তুই?’
অসভ্যটা ত্যাড়া গলায় জবাব দিলো,
— ‘সেটা তুমি জেনে কি করবে?’
কেমন ত্যাড়া চ্যেংরা? ওর এমন ঘাউড়ামির জন্য মাঝে মাঝে মন চায় উঠতে বসতে ঝাড়ু পিটা করি। ওউফফো! কি একটা ছেলে আমার কপালে জুটছে!
ওর কথা শুনে এবার আমি ধমকে বললাম,
— ‘এক থাপ্পড় লাগাবো বেয়াদপ চ্যেংড়া… ঢং করিস না?’
আমার কথা শুনে সভ্য মিইয়ে যাওয়া গলায় বললো,
— ‘সিরিয়াসলি সুইটহার্ট…! এগুলা কি বলো, জান? মানুষ শুনলে কি বলবে? আমার প্রেস্টিজ পাংচার করে দিবা তুমি।’
আমি আবার ধমকে বললাম,
— ‘তোর প্রেস্টিজ আমি ওয়াশিংমেশিনে ধুবো… এই ঢং করবি না একদম। এবার কিন্তু সত্যি সত্যি মার খাবি আমার হাতে। কই আছিস ভালোয় ভালোয় বল।’
সভ্য এবার চট করে বললো,
— ‘তোমার ক্যাম্পাসে।’
আমি বুঝতে না পেরে বললাম,
— ‘মানে…! কিহ্?’
— ‘মানে আমি এখন তোমার ক্যাম্পাসে।’
আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম,
— ‘মানে কি? তুই জাহাঙ্গীরনগরে?’
সভ্য ছোট করে জবাব দিলো,
— ‘হুঁ!’
আমি আবার প্রশ্ন করলাম,
— ‘তুই এখানে কি করিস?’
— ‘সেটা তোমার না জানলেও চলবে।’
— ‘বলবি তুই?’
— ‘বাইকে বসে আছি। আমার তো কেউ নাই।’
— ‘সওভ্যওওওও……!’
— ‘আমি তো গরু তাই ঘাস খাইতে আসছি।’
আমি এবার রেগে গিয়ে জঘন্য একটা গালি দিয়ে ফেললাম,
— ‘***!!’ [ লেখার অযোগ্য ]
আমার কথা শুনে অসভ্যটা ঠাট্টার স্বরে বললো,
— ‘হোয়াট ওয়াজ দ্যাট, জান? আমি কি সত্যি শুনলাম! মানে তুমি…! গড! তুমি নিজের ভবিষ্যৎ স্বামীকে এই গালি দিতে পারলা?’
— ‘ফাজলামি রেখে বলবি তুই? না হয় আমি ফোন রেখে দিলাম।’
— ‘হুঁ, রাখো। তাহলে আজকেই আমি তোমার ডিপার্টমেন্টের একটা জুনিয়র পটাবো। ইভেন তোমার রুমমেট যে মেয়েটা আছে ওকেই পটাবো।’
আমি এবার অধৈর্য হয়ে বললাম,
— ‘উফ! সভ্য! কি হচ্ছে কি?’
— ‘কিছুই হচ্ছে না।’
— ‘তাহলে যে? তুই আমার ক্যাম্পাসে কি করিস?’
— ‘কি করবো মানে? আমার বউয়ের ক্যাম্পাস এটা…তোমার কি?’
— ‘সভ্যর বাচ্চা….’
— ‘রঙ্গ সুইটহার্ট… এখনো হয়নি… ভবিষ্যৎতে হবে… ইভেন তুমি চাইলে এখনই হতে পারে… বাট তুমি তোহ্ চুমুই খাইতে দেও না।’
আমি আবার রেগে গিয়ে গালাগাল শুরু করলাম। কতটা ফাজিল এই ছেলে? একটা বছর আমাকে কষ্ট দিয়ে এখন এসে ফাজলামো করা হচ্ছে?
আমার গালাগাল শুনে সভ্য হো হো করে হেসে ফেললো।
আমি রেগেই বললাম,
— ‘বায়, আমি ফোন রেখে দিচ্ছি।’
অসভ্যটা হাসতে হাসতে বললো,
— ‘নো নো নো সুইটহার্ট… ওকে আমি থেমে যাচ্ছি… আর ফাজলামো করবো না। কিন্তু জান এত ইউনিক গালি গুলো কোথা থেকে শিখলে?’
— ‘সওভ্যওওওও.. আমি কিন্তু ফোন রেখে দিব!’
— ‘এই না না প্লিজ…. প্লিজ ফোন রেখো না।’
— ‘তুই কি বলবি যে কেনো এসেছিস?’
— ‘আজকের দিনটা ভুলে গেছো?’
— ‘না ভুলিনি, তো?’
— ‘তো কিছু না। আমি তোমার হল থেকে হাফ কিলোমিটার দূরে বাইকে বসে আছি। তোমাকে রেডি হওয়ার জন্য অনলি টেন মিনিটস দিলাম। দশ মিনিটের মধ্যে তুমি তোমার হলের গেটে আসবে।’
ওর কথা শুনে বিস্মিত হয়ে বললাম,
— ‘মানে? কি বলছিস এগুলো?’
— ‘আপনি যা শুনেছেন তাই বলেছি। অলসের মতো তো এখনো বিছানায় আছেন। দয়া করে এখন উঠেন। আপনার রেডি হওয়ার সময় অনলি টেন মিনিটস। গেট রেডি সুইটহার্ট… হারি আপ… ইয়োর টাইম স্টার্টস নাউ… ‘
আমি সাথে সাথে বললাম,
— ‘মানে? মাত্র দশ মিনিটে কিভাবে রেডি হব?’
— ‘আই ডোন্ট নো, সুইটহার্ট। আমি আপনাকে দশ মিনিটের মধ্যে আপনার হলের গেটে চাই। আর হ্যাঁ আপনি অবশ্যই একটা লাল শাড়ি পড়বেন।’
বলেই আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে দিলো।
আমি কিছুক্ষণ থম মেরে বসে রইলাম, আমাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে শর্মিদি বললো,
— ‘কিরে এমনে তব্দা খায়া বয়া আছোস ক্যালা?’
হঠাৎ করে শর্মিদির কথা শুনে আমি চমকে উঠে বললাম,
— ‘তুমি ঘুমোওনি, শর্মিদি?’
— ‘বালকামা তোর জ্বালায় ঘুমান যায়নি? যেমনে পোলাডারে ধুইলি! বাপ্রে বাপ! তোরই কপাল বইন, এই যুগের অরিজিনাল সভ্যরে পাইছোস। নামের সাথে পোলা এক্কেরে খাপেখাপ। বইন রে বইন তর তো রাজকপাল।’
শর্মিদির কথায় আমি লজ্জা পেলাম.. মনে মনে বললাম, ‘ও দি তুমি তো জানো না। নাম সভ্য হলে কি হবে ছেলেটা তো চরম অসভ্য। সামান্য একটা চুমুর জন্য একটা বছর আমাকে কষ্ট দিয়েছে।’
আমাকে চুপ দেখে শর্মিদি আবার বললো,
— ‘কাইল তো কাইন্দাকাইটা বালিশ ভিজাইলি! আর আইজ পোলাডার লগে এমনে ঝগড়া করলি? তা কি বললো ও?’
এবার আমি বললাম,
— ‘রেডি হয়ে দশ মিনিটের মধ্যে নিচে যেতে বললো।’
আমার কথা শুনে শর্মিদি উচ্ছসিত কন্ঠে বললো,
— ‘আবে ***! তো এমনে তব্দা মাইরা বয়া আছোস ক্যালা? তর দশ মিনিট ফুরাইতে আর দুই মিনিট আছে ছাগলি। যা জলদি গোসল কইরা আয়।’
শর্মিদির কথা শুনে আমি তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমের দিকে ছুটলাম।
কালো পাড়ের লাল রংয়ের বুটিদার হাফ সিল্ক জামদানি পড়লাম। পুরো জমিনে কালো জরির সুতা দিয়ে ছোট ছোট ফুলের নকশা। এটা সভ্যর কাছ থেকে পাওয়া উপহার…
শাড়ির সাথে মিলিয়ে লাল আর কালো কাচের চুড়ি, কানে কালো পাথরের দুল, কপালে লাল আর কালোর মিশ্রণে মাঝারি একটা টিপ, আর চোখে গাঢ় কালো কাজল। চুল ভেজা হওয়ার কারণে ছেড়ে দিলাম। শেষ! আ’ম রেডি!
পার্স আর ফোন নিয়ে বের হওয়ার আগে বিনি আমার আরেক রুমমেট, ও আমার ডিপার্টমেন্টের জুনিয়র, ও আমাকে থামিয়ে দিলো।
আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম,
— ‘কি? অনেক দেড়ি হয়ে গেছে রে। কি বলবি জলদি বল।’
— ‘আরে আপু থামো তো। যে জিনিস ছেলেদের দূর্বল করে সেটাই তো বাদ দিয়েছো। দ্যা মোস্ট ইম্পরট্যান্ট থিংগ ইন আওয়ার লাইফ।’
আমি ব্যস্ত গলায় বললাম,
— ‘হেয়ালি না করে জলদি বল মেরি মা! ও অনেক্ষণ থেকে অপেক্ষা করছে।’
বিনি হেসে বললো,
— ‘থোরা রুকিয়ে মাহ্তারমা! ইতনাভি জালদি কিস বাতকি!’
শর্মিদি হেসে বললো,
— ‘এই বিনি ছাড় তো ওকে। ছেলেটা অনেক্ষণ যাবত ওর জন্য দাঁড়ায় আছে।’
— ‘আরে দি থামো তোহ্। ভাইয়াকে ঘায়েল করার ঔষধ আগে দিয়ে দেই।’
বিনির কথা শুনে আমার সিনিয়র, আরেক রুমমেট মিতু আপু বললো,
— ‘ওর বয়ফ্রেন্ড তোর ভাইয়া হবে নারে গাধি। তোর ফ্রেন্ড হবে।’
বিনি অবাক হয়ে বললো,
— ‘মানে? কি বলো মিতুপু?’
— ‘জ্বী আমি ঠিক বলছি। আপনার সভ্যপুর বিএফ তার থেকে তিন বছরের জুনিয়র এবং আপনার বয়সি।’
বিনি বিস্মিত গলায় আমাকে প্রশ্ন করলো,
— ‘সভ্যপু সত্যি?’
আমি হাসতে হাসতে মাথা ঝাঁকালাম। শর্মিদি আবার বলে উঠলো,
— ‘অ্যাই বিনি ফিনি এবার তো ওকে যেতে দে।’
— ‘আরে দাঁড়াও অনলি ফর টু মিনিটস!’
বলেই একটা লাল লিপস্টিক নিয়ে আমার সামনে এসে বললো,
— ‘মেইন জিনিস দেয়াই তো ভুলে গেছো আপি!’
বলেই ও নিজে আমাকে লিপস্টিক দিয়ে দিলো।
আবার বললো,
— ‘নাউ ইউ লুক পারফেক্ট।’
ওর কথা শুনে আমি হেসে বললাম,
— ‘আব ক্যেয়া ম্যেয় যা সাকতি হু রাণিসাহেবা? মুঝে যানেকা ইজাজাত দি জিয়ে। ম্যেরি হোনেওয়ালে পাতি ম্যেরে লিয়ে বাহার ইনতেজার কার রাহিহে।’
বিনিও হেসে বললো,
— ‘জ্বী হ্যাঁ মাহ্তারমা আভি আপ যা সাকতি হ্যেয়। আই হোপ…আপকা ওঠো ম্যে জো লিপস্টিক হ্যায় উসকা ফ্লেবার জিজুকো জারুর পাছান্দ অ্যায়্যেগি।’
বিনির কথা শুনে আমি কৃত্রিম গম্ভীরতা নিয়ে ওর কাঁধে চাপড় মেরে বললাম,
— ‘অ্যাই অসভ্য মেয়ে আমি তোর সিনিয়র না? বেশি তেড়িবেড়ি করলে র্যাগ দিবো কিন্তু।’
আমার কথা শুনে বিনি হেসে হেসেই বললো,
— ‘কি র্যাগ দিবা শুনি? অ্যাই বিনু আমার ফোনটা একটু খুঁজে দে তো, অ্যাই বিনু আমার এয়ারফোনের প্যাঁচ খুলে দে তো, অ্যাই বিনু এক গ্লাস পানি দে তো, অ্যাই বিনু মাথাটা একটু টিপে দে তো, অ্যাই বিনু আমার ল্যাপটপ চার্জে দে তো… নাকি অন্য কিছু??’
ওর কথা শুনে আমরা সবাই একসঙ্গে হেসে ফেললাম।
===============
আমার বের হতে হতে পঁয়তাল্লিশ মিনিট পার হয়ে গেলো। অথচ ও আমাকে শুধুমাত্র দশ মিনিট দিয়েছিল!
গেট থেকে বের হয়ে ওকে ফোন করলাম। ফোন রিসিভ করে ও চুপ করে আছে।
ওকে চুপ দেখে আমি বললাম,
— ‘সভ্য?’
ও ছোট করে বললো,
— ‘হুঁ!’
— ‘কথা বলছো না কেনো?’
— ‘দেখছি তোমাকে।’
— ‘কই তুমি? আমি গেটে।’
— ‘হুঁ, দেখেছি।’
— ‘কই আমি তো তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না? আমি আর কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবো?’
— ‘যাচ্ছি জান।’
ফোন রাখার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সভ্য বাইক নিয়ে এসে আমার সামনে দাঁড়ালো। সভ্যকে দেখেই আমি আমার হার্টবিট মিস করে ফেললাম। কত দিন পর দেখলাম ওকে? প্রায় আড়াই মাস তো হবেই! ছেলেটা আরো বেশি হ্যান্ডসাম হয়েছে!
ওর পড়নে কালো রংয়ের পাঞ্জাবি। পাঞ্জাবির বুকের কাছে লাল সুতা দিয়ে হালকা কাজ করা। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, চোখে সানগ্লাস, চুল জেল দিয়ে ব্যাক ব্রাশ করা। হাতা গুলো ফোল্ড করে রেখেছে। ডান হাতে কালো রংয়ের মেটাল বেল্টের রোলেক্স সাবমেরিনের রিস্টওয়াচ।
ওহ! গড! আমার বয়ফ্রেন্ড এত হ্যান্ডসাম কেন!
সভ্যই আগে বললো,
— ‘কেমন আছো, সুইটহার্ট?’
আমি কিছু বললাম না… মানে বলতেই পারলাম না। মুগ্ধ চোখে ওকে দেখছিলাম।
— ‘কি হয়েছে, জান?’
আমাকে চুপ দেখে সভ্য আবার প্রশ্ন করলো।
আমি মাথা নেড়ে বললাম,
— ‘কিছু না।’
— ‘তাহলে কি দেখছো এভাবে?’
— ‘তোমাকে..’
সভ্য মিটমিট করে হেসে বললো,
— ‘জান, আজ তোমাকে খুব খুব খুব সুন্দর লাগছে।’
— ‘ধন্যবাদ, তোমাকেও আজ দারুণ লাগছে।’
— ‘থ্যাংকস, সুইটহার্ট।’
আমি আমার ডান হাতের অনামিকায় নিজের চোখ থেকে একটু কাজল নিয়ে ঝট করে সভ্যর কানের পিছনে লাগিয়ে দিলাম।
সভ্য বিস্মিত হয়ে বলল,
— ‘এটা কি করলে? কি ছিল এটা?’
আমি বললাম,
— ‘ইভল আই প্রটেক্টর।’
— ‘এটা আমাকে প্রটেক্ট করবে?’
— ‘যদি সেই বিশ্বাস এটার প্রতি রাখো তো অবশ্যই করবে।’
সভ্য আমার কথা শুনে হেসে ফেলে বললো,
— ‘সব এই হিন্দি সিরিয়ালের সাইড ইফেক্ট। আমাকে কে নজর দেবে যে তুমি আমার ফ্রেশ স্কিনে কালি লাগায় দিলা!’
— ‘কত গুলো পেত্নি’স।’
সভ্য হা হা করে হেসে বললো,
— ‘কারা সেই পেত্নি? আমি জানতে চাই।’
— ‘তোমার জুনিয়র, ক্লাসমেট আর সিনিয়র আপুরা।’
এবার সভ্য ঠাট্টার স্বরে বললো,
— ‘তাই বুঝি? তাহলে তুমি আমার কি হও?’
আমি বুঝতে না পেরে বললাম,
— ‘মানে?’
সভ্য কিছু না বলে মিটমিট করে হাসছে। কিছুক্ষণের মাঝেই বুঝে ফেললাম ওর কথার অর্থ কি।
আমি কটমট চোখে তাকিয়ে বললাম,
— ‘ওহ আচ্ছা! আমি তো সিনিয়র আপু! তাই না?’
আমার কথায় সভ্য হাসতে হাসতে মাথা ঝাকালো।
তা দেখে আমি বললাম,
— ‘আমার ডিপার্টমেন্টের এক সিনিয়র ভাই আছে। দুই বছর ধরে আমার পিছনে পড়ে আছে। এখন ইকোনমিক ক্যাডার। ভাবছি ওনাকে হ্যাঁ বলে দিবো।’
সভ্য হাসতে হাসতেই বললো,
— ‘তাই না! দেও দেখি তোমার ওই ভাইয়ের ঠিকানাটা দেও।’
আমি হেসে বললাম,
— ‘কেন? বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে যাবা নাকি?’
সভ্য ভ্রু নাচিয়ে বললো,
— ‘আজ্ঞে না। তোমার ওই ভাইকে ডেকে এনে ইচ্ছা মতো ঝাল মিটাবো। তারপর সব হাড্ডি গুড়া করে বুড়িগঙ্গায় ভাসায় দিবো। সাহস কেমনে হয় আমার বউয়ের দিকে চোখ দেয়ার??’
— ‘কেন? আমি না তোমার সিনিয়র আপু হই! বিয়েটা করেই ফেলি কি বলো? বিয়ের বয়স তো হয়েই গেছে।’
— ‘খুব বিয়ে করার শখ হইছে দেখছি? চল তোমার বিয়ের শখটা মিটিয়ে দেই।’
— ‘তাই নাকি! কই পাত্র কই?’
— ‘চোখ কি হলের রুমে রেখে আসছো? চোখের সামনে অতি সুদর্শন যুবক থাকতে পাত্র খুঁজো?’
— ‘বাহ্! নিজের প্রশংসা দেখি নিজেই করছো?’
— ‘তা ছাড়া উপায় আছে?? তুমি তো কালে ভাদ্রে করো।’
আমি কোনরকমে আমার হাসি আটকে বললাম,
— ‘বিয়ের বয়স হয়েছে তো স্যার?’
— ‘আবার জিগায়!’
— ‘তা আপনার একুশ কবে হল শুনি!’
— ‘এই শোনো বিয়ের জন্য একুশ লাগে নাহ বুঝছো।’
— ‘তা কি লাগে শুনি?’
— ‘সেটা তোমার না জানলেও চলবে। আমি ইচ্ছা করলে পনেরতেই তোমাকে বিয়ে করতাম। বাট…’
আমি ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করলাম,
— ‘বাট হোয়াট?’
— ‘মানে..’
— ‘কি?’
— ‘মানে তখন সব কিছু একটু জলদি হয়ে যেত এই আরকি। আর আমাদের ক্যারিয়ার ছিল। বছর না ঘুরতেই তুমি মা হয়ে যেতে আর আমি বাবা। তাই দেরি করলাম।’
সভ্যর কথা শুনে আমার হাসি পেলো! হাসি আটকিয়ে বললাম,
— ‘অসভ্য একটা ছেলে।’
— ‘জ্বী ম্যাম আমি জানি। তা আমরা কি আজ সারা দিন এখানেই কাটাবো?’
— ‘তো? কোথায় যাবো?’
— ‘বাইকে উঠেন তারপর জানতে পারবেন। আর হ্যাঁ চুল বেঁধে ফেলো।’
— ‘কেন? চুল কেন বাঁধবো?’
— ‘দরকার আছে তাই।’
আমি আর কিছু না বলে চুল বেঁধে ফেললাম।
উঠার সময় সভ্য বললো,
— ‘জান সাবধানে। আঁচল ভালোভাবে নাও আর কোন সমস্যা হলে অবশ্যই আমাকে বলবে… লং জার্নি কিন্তু। হেলমেট ভালোভাবে চেক করে নাও।’
ওর কথা শুনে আমি বললাম,
— ‘আচ্ছা ভাই ঠিক আছে… অল ওকে। এখন বল আমরা যাচ্ছি কই?’
আমার কথা শুনে সভ্য থমথমে গলায় বললো,
— ‘লিসেন সুইটহার্ট, আ’ম নট ইয়োর ব্রাদার।’
ওর কথা শুনে আমি হেসে ফেললাম হাসতে হাসতে বললাম,
— ‘হুম হুম। জানি জানি.. স্যরি ভুল হয়ে গেছে!’
— ‘এতই যখন জানো তাহলে অলওয়েজ এই কথাই কেনো বলো?’
ওর কথায় এবার আমি হা হা করে হেসে ফেললাম, তারপর বললাম,
— ‘ওকে সোনা আ’ম স্যরি। কিন্তু এখন তো বলো আমরা যাচ্ছি কোথায়?’
— ‘গেলেই বুঝতে পারবে।’
এতদিনের রাগ, অভিমান কোথায় গায়েব হয়ে গেলো কে জানে!
===============
আমি সভ্যর পিঠে মাথা রেখে, দুই হাতে ওকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে রাখলাম। কোথায় যাবে যাক… পৃথিবীর তিন জন পুরুষের কাছে নিজেকে সব থেকে বেশি সুরক্ষিত মনে হয়, তার মধ্যে সভ্য একজন! সভ্য কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমি জানি না। শুধু জানি ওর সাথে থাকলে আমি নিরাপদ। কোন বাজে কিছু আমাকে স্পর্শ করতে পারবে না।
প্রায় ঘন্টা খানেক পরে সভ্য দাঁড়ালো। ওকে থামতে দেখেই আমি মাথা তুলে চারপাশ দেখে অবাক হয়ে গেলাম। নেমে সভ্যর দিকে প্রশ্ন চোখে তাকাতেই ও মাথা নাড়িয়ে চোখের ইশারায় হ্যাঁ বললো।
আমি অবাক হয়ে বললাম,
— ‘এত দূর! কিভাবে! তাও আবার বাইকে!’
সভ্য হেসে বললো,
— ‘কোন ব্যাপার না, জান। তুমি চোখে মুখে একটু পানি দিয়ে নাও। ঘুম পেলে সমস্যা। এটা তো গাড়ি না, এটা বাইক। তাই এখানে ঘুমোনো যাবে না।’
— ‘বাসায় জানে??’
— ‘হ্যাঁ, আমার বড়মা আর আপনার ছোটমা জানে।’
সভ্যর কথা শুনেই আমি হেসে ফেললাম। আমার সাথে সাথে ও-ও হেসে দিলো।
দুজনেই চোখে মুখে পানি দিয়ে আবার রওনা হলাম। প্রায় ছয় ঘন্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর, সূর্য যখন পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে আর আমাদের জানান দিচ্ছে যে কয়েক ঘন্টা পরে সে ডুবে যাবে, তখন আমরা আমাদের গন্তব্যস্থানে পৌঁছালাম।
সভ্যকে বললাম,
— ‘এখানে কেনো?’
সভ্য বললো,
— ‘কারণ আছে।’
— ‘ফ্রেশ হয়ে আসতে পারতাম।’
— ‘না, চলো… সবাই অপেক্ষা করছে।’
— ‘সবাই মানে? কারা?’
— ‘এত প্রশ্ন করো কেনো? চলো গেলেই দেখতে পারবে।’
— ‘আমি অনেক ক্লান্ত..! এত লং জার্নি তাও বাইকে! গড! আর তোমার এখন রেস্ট নেয়া প্রয়োজন।’
— ‘প্লিজ জান! কয়েক ঘন্টা মাত্র!’
— ‘আচ্ছা চলো।’
আমরা এখন একটা রিসোর্টে আছি। আর এই রিসোর্ট আমাদের শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে গ্রামের দিকে অবস্থিত। এখানে এর আগেও বেশ কয়েকবার আসা হয়েছে আমাদের। সভ্য আর আমি একা একাও এসেছিলাম কয়েক বার। বাপি-মাম্মাম, ছোটমা-ছোটবাবা সহও এসেছিলাম আমরা।
এই রিসোর্টের পাশ দিয়ে একটা নদী বয়ে গেছে। নদীর ধারে অসম্ভব সুন্দর একটা জায়গা তৈরি করেছে রিসোর্টের মালিক। সভ্য আমার হাত ধরে সেদিকেই নিয়ে গেলো।
এখানে যে আমার জন্য কত বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিল সেটা আমি জানতাম না।
নদীর পাড়ে এসে আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম। এখানে সভ্য আর আমার সব কাজিন উপস্থিত প্লাস সভ্যর কিছু বন্ধু-বান্ধব। আমি অবাক হয়ে সভ্যর দিকে তাকাতেই ও আমাকে চোখের ইশারায় সামনে যেতে বললো।
আমার কাজিনরা সবাই একে একে এসে আমাকে হাগ করে উইশ করলো। আজ বুঝতে পারলাম আমাদের রিলেশনের ব্যাপারটা আমাদের কাজিন গ্রুপের সবাই জানে। আর সভ্যই বিষয়টা সবার মধ্যে ফাটিয়েছে।
ওউফফো! ছেলেরা এমন কেন? ছেলেরা যে পেটে কোন কথা রাখতে পারে না সেটা সভ্যকে দেখলেই বোঝা যায়।
এত সবার ভীরে যে সভ্য কোথায় চলে গেলো আমি আর ওকে খুঁজে পেলাম না। সবার সামনে ওকে ফোন করতেও লজ্জা লাগছিল। প্রায় আধা ঘন্টা পর সভ্যকে দেখলাম। ও ওর ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিল। আমি আমাদের কাজিন রুশা আপুর সাথে ছিলাম।
এখানে আসার পর যে জিনিসটা আমাকে সবচেয়ে বেশি অবাক করেছে তা হল ‘‘ভাবিপু’’। আমার সব জুনিয়র কাজিন প্লাস সভ্যর ফ্রেন্ডরা আমাকে ভাবিপু বলে ডাকছে। আমি যে সভ্যকে কিছু বলবো সেটারও সুযোগ পাচ্ছিলাম না।
আমরা সবাই মিলে মোট ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ জনের মতো হবো। আমাদের কিছু কাজিন তাদের গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ডকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে। আর সভ্যর প্রতিটি ফ্রেন্ড কাপল।
রাস্তায় আমি আর সভ্য বেশ কয়েক বার থেমে চিপ্স, চকলেট, পানি, সফট্ ড্রিংক খেয়েছি যার ফলে খুদা আর নেই।
যারা ঢাকা থেকে বা অন্য জায়গা অথবা দূরে থেকে এসেছে তাদের জন্য রিসোর্টেই রুম বুক করা হয়েছে থাকার জন্য। আমাদের জন্যও করা হয়েছে কিন্তু থাকা যাবে না। অলরেডি মাম্মাম আর ছোটমা ফোন করে মাথা নষ্ট করে ফেলেছে। তাই আমি আর সভ্য বাসায় চলে যাবো। আমাদের সঙ্গে রুশাপু আর আপুর কাজিন ফাইয়াজ ভাইয়াও যাবে। মাম্মাম আর ছোটমা বার বার করে বলে দিয়েছে এদের দুজনকে নিয়ে যেতে।
সন্ধ্যা সাতটার একটু পরেই আমরা ডিনার অর্ডার করে দিলাম। ডিনার শেষে নদীর পাড়ে ঘাসের উপর বসে আমরা সবাই গল্প-আড্ডায় মেতে উঠলাম।
কিছুক্ষণ পরে কয়েক জন ওয়েটার এসে আমাদের কেক দিয়ে গেলো খাওয়ার জন্য। আর এই কেকের মধ্যেই আমি আজকের দিনের সব কিছুর মূল উদ্দেশ্য পেয়ে গেলাম। এই এক বছরের কষ্ট এক নিমেশই গায়েব হয়ে গেলো। প্লাটিনামের ‘হিস এন্ড হার’ কাপল রিংয়ের স্ত্রীসুলভ রিংটা কেকের মধ্যে।
সভ্যর দিকে তাকাতেই আমাকে ফোন চেক করতে বললো। আমি ফোন হাতে নিতেই ম্যাসেজ টিউন বেজে উঠলো।
সভ্য ম্যাসেজ দিয়েছে,
‘‘As God created Eve for Adam, he created you just for me. Will you accept your fate? Will you be mine forever, Jan? Will you marry me, sweetheart?’’
ম্যাসেজটা পড়ে আমি টোটালি স্পিচলেস!! কি বলবো আমি?
প্রপোজ ফর ম্যারেজ….!
আমি ওর দিকে তাকাতেই দেখলাম সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সভ্যকে বলার মতো কোন ভাষা আমি খুঁজে পেলাম না। দুই হাতে মুখ চেপে ধরে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললাম। কেনো যে এত কান্না পাচ্ছে! আমি নিজেই জানি না। এটা কোন দুঃখের কান্না না, এটা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সুখের কান্না গুলোর মধ্যে একটি। আমার জীবনে সুখের অভাব কখনো হয়নি। শুধুমাত্র মেডিকেল বাদে সব কিছু চাওয়ার আগেই পেয়েছি । কিন্তু এত এত অতিরিক্ত সুখ আমি খুব কম পেয়েছি।
সভ্য আমার বিপরীতে বসে ছিল, আমাকে কাঁদতে দেখে আমার কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বললো,
— ‘হোয়াট হ্যাপেন্ড জান? এনিথিং রং উইথ ইউ?’
আমি কিছুই বলতে পারলাম না। সভ্যর বুকে মুখ গুঁজে কান্না করেই যাচ্ছিলাম। এই এত এত পরিচত অপরিচিত মানুষের সামনে যে আমি সভ্যকে এভাবে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলাম সেদিকে আমার কোন খেয়ালই ছিল না।
………………………..
(চলব)