#সভ্যতার_সভ্য
#দশমাংশ
#NishchupSpriha
==============
আপু হলুদে ডিজাইনার লেহেঙ্গা পড়েছে। আপুর লেহেঙ্গার নিচের অংশটা জলপাই রংয়ের, তার মধ্যে সোনালি সুতো দিয়ে কারুকাজ কাজ করা। আর উপরের অংশটা লাল রংয়ের, হাতায়ও সোনালি সুতো দিয়ে কাজ করা। ওড়নাটা হলো কন্ট্রাস্ট কালারের।
গহনা হিসেবে আপুর পড়নে তাজা ফুল আর পার্ল। অর্কিডের সাথে পার্লের কম্বিনেশনটাও বেশ মানিয়েছে। আপুর পায়ে এক জোড়া স্নিকারস, আর চোখে একটি নকশা করা সানগ্লাস। ব্যাস, হলুদের ফিউশন সাজে বধূ একেবারেই প্রস্তুত!
রুশাপু বাদে হলুদে মেয়েদের ড্রেস কোড হল কাতান শাড়ি। আপু নিজে অর্ডার দিয়ে আমাদের সবার জন্য একই রকম শাড়ি আনিয়েছে, আর ছেলেদের ড্রেস কোড পাঞ্জাবী।
আমরা প্রায় বিশজনের মতো মেয়ে, জলপাই রংয়ের কাতান পড়েছি। শাড়িটা অসম্ভব সুন্দর, সোনালি সুতো দিয়ে সম্পূর্ণ শাড়িতে কাজ করা। আর আমাদের সাজ বলতে মেকাপ তোহ্ কমন, সাথে সবার খোঁপায় অর্কিড আর চোখে নকশা করা সানগ্লাস।
ছেলেরাও সবাই জলপাই রংয়ের পাঞ্জাবী পড়েছে। সাথে আছে তাদের হিরো ওয়ালা লুক।
সভ্যকে দেখেই আমার ছোট খাটো একটা হার্ট অ্যার্টাক হওয়ার মতো অবস্থা! ওউ! আমার বয়ফ্রেন্ড এত হ্যান্ডসাম কেন? কেন? কেন? তাকে যে সব মেয়ে গুলো কেমন গিলে খায়, সেটা কি সে জানে? না, জানে না। জানলে তার ভাব আরো বেড়ে যাবে।
সভ্যকে দেখে আমি সরে পড়লাম। কারণ এখন ওর সামনে গেলে আমি নিজেই সবার সামনে খুব বিশ্রী একটা কাজ করে ফেলবো।
হলুদের অনুষ্ঠানে খাবারের তালিকায় রাখা হয়েছে চটপটি, ফুচকা, গরম গরম জিলাপি আর ঝালমুড়ির মতো মজাদার সব খাবার, সাথে মেইন ডিশ হিসেবে তেহারি। আর স্টেজে রাখা হয়েছে এক থালা ছোট ছোট মিষ্টি, রুশাপুর পছন্দের রেড ভেলভেট কেক, কাবাব আর মজাদার গুড়ের পায়েস।
আমি ফুচকা খাওয়া শুরু করলাম। সভ্যকে আমার কাছে আসতে দেখে বিরবির করে বললাম, ‘সে এত সুদর্শন কেন? সে যে আমাকে পাগল করে ছাড়বে!’
ওকে দেখেই আমি তাড়াতাড়ি আবার সরে গেলাম।
কিছুক্ষণ পরেই আমার ফোনের ম্যাসেজ টিউন বেজে উঠলো, সভ্য ম্যাসেজ করেছে,
— ‘Dove sei?😒’ [ কোথায় তুমি? ]
আমি রিপ্লাই দিলাম,
— ‘perché?😧’ [ কেনো? ]
রিপ্লাই এলো,
— ‘Ti ho perso..☺ Aspetta, vado da te..😘’ [ তোমাকে পেয়েছি.. দাঁড়াও আমি যাচ্ছি তোমার কাছে। ]
ওর রিপ্লাই দেখে আমি দ্রুত লিখলাম,
— ‘no no. non venire da me.😶’ [ না না, আমার কাছে এসো না। ]
— ‘Perché?😑’ [ কেনো? ]
— ‘questo è tutto.🤐’ [ এমনি। ]
— ‘Tutto ok.😏’ [ আচ্ছা, ঠিক আছে। ]
আমি আর রিপ্লাই করলাম না।
কিছুক্ষণ পর আবার ম্যাসেজ এলো,
— ‘Come ti sembro?😉’ [ আমাকে দেখতে কেমন লাগছে? ]
ওকে দেখে আমি হার্টবিট মিস করেছি আর ও কিনা আমাকে এই প্রশ্ন করছে? গড!
আমি রিপ্লাই দিলাম,
— ‘incredibilmente bello..😍’ [ অসম্ভব সুদর্শন.. ]
রিপ্লাই এলো,
— ‘Grazie.. 😘 stai benissimo oggi..😍😘’ [ ধন্যবাদ.. তোমাকে আজ দারুণ লাগছে! ]
ওর ম্যাসেজ দেখে আমি হেসে রিপ্লাই দিলাম,
— ‘grazie anche a te..💕’ [ তোমাকেও ধন্যবাদ ]
— ‘😘💘’
এর কিছুক্ষণ পরেই সভ্য আমার কাছে এসে বললো,
— ‘জান!’
আমি ওর দিকে না তাকিয়েই বললাম,
— ‘হুঁ!’
— ‘এদিকে তাকাও।’
— ‘নো ওয়ে..’
— ‘হোয়াই? ওহ্! তখন যা করেছি সেই ভয়ে দেখছো না তো?’
বলেই হেসে ফেললো।
ওর কথা শুনে আমি চোখ ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকালাম। ও হেসে আমার মাথা ডান দিকে ঘুরিয়ে দিলো।
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
— ‘কি?’
ও আমাদের একটা কাজিনকে দেখালো।
আমি কিছু না বুঝে বললাম,
— ‘কি? বলবে তো?’
— ‘মাহফুজ ভাইকে দেখো।’
— ‘কি দেখবো?’
— ‘দেখো ভাই কি সুন্দর ওর মেয়েকে কোলে নিয়ে আছে।’
ওর এমন অর্থহীন কথা শুনে আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
— ‘স্যো হোয়াট?’
ও আমার ডান হাত ওর দু’হাতের মাঝে নিয়ে, সুন্দর করে হেসে বললো,
— ‘যাস্ট ইম্যাজিন! আমার টুয়েন্টি ফাস্ট বার্থডের পরের দিন বিয়েটা করে ফেললে আজ আমাদেরও এমন একটা প্রিন্সেস থাকতো। শি ইজ স্যো কিউট! ইজ’ন্ট শি?’
ওর এমন অর্থহীন কথা শুনে আমার মেজাজ চটে গেলো।
আমি ওর থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,
— ‘ওহ্ সভ্য! প্লিজ স্টপ! আজেবাজে কথা না বলে এখান থেকে যাও তো। তুমি আর আমার কাছে আসবে না।’
— ‘কেনো? তোমার কাছে আসলে কি হচ্ছে?’
— ‘কিছুই হচ্ছে না। তুমি যাও।’
অসভ্যটা মিটমিট করে হেসে বললো,
— ‘আই নো দ্যাট! কন্ট্রোল হচ্ছে না তাই তো?’
ইশ্! কতটা বেহায়া আর অসভ্য এই ছেলে!
আমি রেগে বললাম,
— ‘অসভ্য.. নো নো.. অসভ্যয়েস্ট… চরম অসভ্য ছেলে একটা…’
বলেই আমি নিজেই ওর থেকে সড়ে এলাম।
অসভ্যটা ওখানে দাঁড়িয়েই হো হো করে হাসতে শুরু করলো। গড! এই ছেলের কাছে থাকলে আমি পাগল হয়ে যাবে!!
===============
আপুর হলুদ শেষ হয়েছে, কিন্তু এখনো ভাইয়ার হলুদ হয়নি। আরেহ্! আজ হলুদের সময় তো ফাইয়াজ ভাইয়াকে একবারো দেখিনি! ভাইয়া কোথায়?
সভ্য হয়তো বলতে পারবে ভাইয়া কোথায়! সভ্যকে খোঁজা শুরু করলাম।
এই ছেলে হচ্ছে আরেক জ্বালা! কাজের সময় কখনোই ওকে খুঁজে পাবো না! ফোন দিচ্ছি, ছেলেটা ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছে! এতক্ষণ আমার পিছন পিছন ছিল আর এখন খুঁজে পাচ্ছি না? উওফ! গড!
বাংলোর ব্যাক সাইডে পুকুর পারে এসে দেখি এখানেই সবাই। পুকুর পারটা অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আর সবাই এখানে আসর পেতে বসেছে। সভ্যও সবার সাথে আছে। ফাইয়াজ ভাইয়াও আছে। যাক! দু’জনকেই একসাথে পেয়ে গেলাম।
একটু এগিয়ে যেতেই বুঝতে পারলাম, ভাইয়ার হাতে গিটার। আমি যেয়ে দাঁড়াতেই ভাইয়া গান শুরু করলো,
‘‘খোলা জানালা,
দখিনের বাতাসে…
ঢেকে যায় পর্দার আড়ালে…
কখন তুমি হেসে বলে দাও,
আছি তোমার পাশে…
বহুদূর পথ ভীষণ আঁকাবাঁকা,
চলতে ভীষণ ভয়…
তুমি এসে বলে দাও,
আছি আমি পাশে…
করোনা কিছুতেই ভয়…
কখনও ভাবিনি চলে যাবে তুমি…
আমাকে এভাবে কাঁদিয়ে…
কখনও বুঝিনি ফিরে আসবেনা,
আমার পৃথিবী রাঙিয়ে….’’
ভাইয়ার গান শুনে আমি স্তব্ধ! আজ তো ভাইয়ার খুশির দিন তাহলে আজ এই গান কেনো?
এরপর সভ্য গান শুরু করলো,
‘‘ ক্রমশ এ গল্পে আরো পাতা জুরে নিচ্ছি…
দু’মুঠো বিকেল যদি চাও ছুঁড়ে দিচ্ছি…
আরো কিছুক্ষণ যোগাযোগ ধরে রাখছি…
আঙুলে আঙুল যেন ভুল করে ডাকছি…
এ ছেলেমানুষী তুলি দিয়ে আঁকছি…
[ ব্যাকগ্রাউন্ডে সবাই মিউজিক দিলো ]
তোমায় ছোঁবে বলে,
আদর করবে বলে,
উড়ে উড়ে আসে এলোমেলো কিছু গান…
ডেকে যায় তোমার আঁচল ধরে…
তুমি ছুঁলে জল আমি বৃত্ত হয়ে থাকছি…
দু’মুঠো বিকেল যদি চাও ছুঁড়ে দিচ্ছি… ’’
একটা জিনিস খেয়াল করলাম সেটা হল কেউ সম্পূর্ণ গান গাচ্ছে না। কেউ শুরু থেকে আবার কেউ মাঝে থেকে শুরু করছে।
রুশাপু এসে আমার পাশে দাঁড়ালো, বললো,
— ‘কিরে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? চল ওখানে যেয়ে বসি।’
আপুর সাথে আমিও যেয়ে বসলাম। আমরা যেয়ে বসতেই আমাদের এক জোড়া কাপল কাজিন, আদিব আর মিথি ডুয়েট গান শুরু করলো,
‘‘ জানিস, আমি ইচ্ছে করে খুব রাগ দেখাই
তুই মানিয়ে নিবি বলে…
জানিস আমি অকারণে খুব কষ্ট পাই
তুই কাছে টেনে নিবি বলে… [ মিথি ]
জানিস, এই মনটা আর আমার নেই
শুধু তোর কথা বলে…
কোনো অচেনা দেশের অচেনা পথ
তোর সাথে গেছে চলে… [ আদিব ]
ক্ষনিকের আলাপে মন ভরে না…
তোর দিকে তাকালে চোখ সরে না… [ মিথি ]
ক্ষনিকের আলাপে মন ভরে না…
তোর দিকে তাকালে চোখ সরে না… [ আদিব ]
একি মায়াজালে বেঁধে দিলি রে, বল..
তোকে ছাড়া আর
কে আছে আমার
তুই সাথে সাথে থাক
আর হাতে রাখ হাত
তোকে ছাড়া আর
কে আছে আমার
তুই সঙ্গে সঙ্গে চল
আর সামলে নিবি বল
প্লিজ প্লিজ সামলে নিস
তুই আজ আমায় প্লিজ সামলে নিস…’’ [ ডুয়েট ]
ওদের গান শেষ হতেই, সবাই আমার আর রুশাপুর দিকে তাকালো।
আমি ওদের মুখ দেখেই বলে উঠলাম,
— ‘অসম্ভব! আমি আজ পারবো না!’
রুশাপুও বললো,
— ‘আমিও.. আ’ম স্যো টায়ার্ড..’
কিন্তু কে শুনে কার কথা? অবশেষে ঠিক হলো আমি আর রুশাপু একটাই গান গাইবো কিন্তু ডুয়েট। এরপরে আরেক সমস্যা দেখা দিলো। যে গান আমার রেডি.. সেটায় আপুর সমস্যা, আবার আপুর যেটা রেডি সেটায় আমার সমস্যা।
অবশেষে দুজনে একসাথে শুরু করলাম,
‘‘ বর্নে গন্ধে ছন্দে গীতিতে… হৃদয়ে দিয়েছো দোলা…
রঙেতে রাঙিয়ে রাঙাইলে মোরে… একি তব হরি খেলা…
তুমি যে ফাগুন… রঙেরও আগুন… তুমি যে রসেরও ধারা…
তোমার মাধুরী… তোমার মদিরা… করে মোরে দিশাহারা…
মুক্তা যেমন শুক্তিরও বুকে… তেমনি আমাতে তুমি…
আমার পরাণে প্রেমের বিন্দু…
তুমি শুধু তুমি…
প্রেমের অনলে জ্বালি যে প্রদীপ… সে দীপেরও শিখা তুমি…
জোনাকি পাখায় ঝিকিমিকি নেচে… এ রীতি নাচালে তুমি…
আপনও হারায়… উদাসী প্রাণের… লহগো প্রেমাঞ্জলি…
তোমারে রচিয়ে ভরেছি আমার
বাউল গানের ঝুলি..’’
আমরা শেষ করতেই সভ্য গিটারে সুর তুলে শুরু করলো,
‘‘ আমার প্রাণ ধরিয়া মারো টান
মনটা করে আনচান… ’’
সভ্য শুরু করতেই, সবাই ওর সাথে গলা মিলালো।
সবার গান শেষ হতেই ফাইয়াজ ভাইয়া গিটারে টুং টাং করে আবার শুরু করলো,
‘‘ আজ… ঠোঁটের কোলাজ…
থামলো কাজ…
মন, তোমাকে ছুঁয়ে দিলাম…
নাম… বুকের বোতাম… হারানো খাম…
আজ কেনো যে খুঁজে পেলাম…
দিন… এখনও রঙিন…
এই দিন… এখনও রঙিন…
তাকে আদরে তুলে রাখলাম…
আজ… ঠোঁটের কোলাজ…
থামালো কাজ…
মন, তোমাকে ছুঁয়ে দিলাম… ’’
এভাবেই গানের পর গান চললো অনেক রাত অবধি।
===============
রাতে ঘুমোনোর সময় আমি রুশাপুকে প্রশ্ন করলাম,
— ‘আপু বরের হলুদ হলো না যে?’
আপু বললো,
— ‘বরের বাসায় বরের হলুদ হয়েছে..’
আমি অবাক হয়ে বললাম,
— ‘মানে? কই? কখন? ফাইয়াজ ভাইয়ার হলুদ তো হয়নি!!’
আপু নির্বিকার কন্ঠে বললো,
— ‘ফাইয়াজের হলুদ কেনো হবে?’
আমি বিস্মিত! কি বলছে আপু!
আমি বিস্মিত গলায় বললাম,
— ‘ ওমা! তোমার সাথেই তো ভাইয়ার বিয়ে! তাহলে তো ভাইয়ারও হলুদ হবে।’
— ‘ফাইয়াজের সাথে আমার বিয়ে না।’
— ‘মানে? কি বলো এগুলো? কেনো? তাহলে কার সাথে?’
— ‘ব্রেকাপ হয়ে গেছে।’
আপুর কথা শুনে আমি হতভম্ব!
হতভম্ব গলায় বললাম,
— ‘কিহ্!! কবে? কখন?’
আপু উদাসীন গলায় বললো,
— ‘যখন তোর পরিক্ষা চলছিলো তখন।’
— ‘আমাকে বলোনি কেনো?’
— ‘তুই এক্সামের টেনশানে ছিলি, তাই আর নিউ কোন প্যারা দিতে চাইনি।’
— ‘তাই বলে তুমি আমাকে বলবে না?’
— ‘এখন তো বললাম।’
— ‘ব্রেকাপ কেনো হল?’
— ‘সবার রিলেশনে কিছু পার্সোনাল বিষয় থাকে, যা কাউকে বলা যায় না। তোর আর সভ্যর মধ্যেও নিশ্চই আছে? কি নেই? সব কি সবাইকে বলতে পারিস?’
হ্যাঁ, আপু ঠিক বলেছে.. সবার রিলেশনে কিছু পার্সোনাল বিষয় থাকে.. যা কাউকে বলা যায় না। আমার আর সভ্যর মধ্যেও আছে এমন কিছু বিষয়।
এটা নিয়ে আমি আর কিছু বললাম না, অন্য প্রশ্ন করলাম,
— ‘তাহলে কাকে বিয়ে করছো?’
— ‘আমার স্যো কল্ড বাপের থেকেও একটা নিকৃষ্ট মানুষকে। মজার বিষয় কি জানিস? যার সাথে আমার বিয়ে, সে হচ্ছে আমার বাপের মিস্ট্রেসের ভাতিজা। তাহলে ভাব ছেলে কেমন হবে?’
আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম,
— ‘মানে কি বলছো এগুলো?’
আপুর নির্লিপ্ত জবাব,
— ‘যা শুনেছিস তাই।’
আপুর এমন নির্লিপ্ততা দেখে আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
— ‘হোয়াট দ্যা হেল আর ইউ টকিং, আপু? আমার যাস্ট সহ্য হচ্ছে না।’
আমার কথা শুনে রুশাপু হেসে দিলো, হাসতে হাসতে বললো,
— ‘আমি বিয়েটা কেনো করছি জানিস?’
আমি বিরক্ত হয়েই বললাম,
— ‘না জানি না।’
আপু একহাতে আমার গাল ছুঁয়ে বললো,
— ‘রাগ করিস না, সোনাপাখি। জানিস আমি সবাইকে শিক্ষা দেয়ার জন্য বিয়েটা করছি।’
আপুর এমন কথা শুনে আমি অবাক হয়ে বললাম,
— ‘মানে? বুঝলাম না।’
— ‘মানে আমার নামে মাত্র বাপ, তার মিস্ট্রেস আর তোর ফাইয়াজ ভাইয়াকে এই বিয়ের মাধ্যমে শিক্ষা দিবো।’
— ‘আপু! আমি তোমার কোন কথার, কিছুই বুঝতে পারছি না। তুমি অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করবে, আমি সেটাও মানতে পারছি না। তুমি যে ভাইয়াকে বিয়ে করবে না, এটা আমি আগে জানলে কখনোই আসতাম না তোমার বিয়েতে।’
— ‘এই জন্যই তোকে আগে বলিনি। সভ্যর আসলেই অনেক বুদ্ধি।’
— ‘মানে? সভ্য জানে সবকিছু?’
— ‘হুম, সব জানে।’
— ‘কি ফাজিল ছেলে! আমাকে কিছুই বলেনি! খবর আছে ওর..’
— ‘তোর পরিক্ষা ছিল, এজন্য আমিই বলতে মানা করেছিলাম।’
— ‘আচ্ছা, তাহলে এভাবে কেনো হলুদ করলে? এটা তো ভাইয়ার সাথে করার কথা ছিল।’
— ‘আরেহ্ পাগলি! জীবনে তো একটাই হলুদ! আর কি কখনো বিয়ে করবো নাকি? এখন তোর ভাই না থাকলে কি আমি আমার বিয়েতে মজা করতে পারবো না?’
— ‘উফ! আপু যাস্ট অসহ্য। কই দেখি তোমার বরের ছবি দেখাও।’
— ‘ওকে তুই চিনিস… খুব ভালো করেই চিনিস… আরেকটা মজার কথা শুনবি? কাল আমি বিয়েটা করবো না… পালাবো।’
আপুর কথা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে বললাম,
— ‘মানে? কি বলছো কি? পালাবে মানে?’
আপু কিছু না বলে হাসলো।
আমি এবার অধৈর্য হয়ে বললাম,
— ‘আপু আমার মাথা যাস্ট ফেটে যাচ্ছে! তুমি কি বলছো এসব? ভাইয়াকে বিয়ে করবে না। আবার কাল বিয়েও করবে না। পালাবে মানে? আবার কি সব শিক্ষা দিবে! হেয়ালি না করে সব খুলে বলো তো।’
আপু হেসে বললো,
— ‘দাঁড়া সব বলছি। পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে নেই। অনেক কথাতো তাই। একটা বিষয় শিওর থাক, আমি জীবনে ফাইয়াজকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবো না।’
পানি খেয়ে আপু বলা শুরু করলো, ‘শোন, তোর ফাইয়াজ ভাইয়া নিজে আমাকে বিয়ে করবে না। ও নিজে আমার থেকে দূরে সরে গেছে। কাল আমার বিয়ের পরই ও ক্যানাডা চলে যাবে। সারা জীবনের জন্য। তুই যাস্ট চিন্তা কর বিষয়টা? আমি ওর জন্য বেঁচে আছি আর ও কিনা আমাকে ছেড়ে সারা জীবনের জন্য ক্যানাডা চলে যাবে? ভাবতে পারিস? ও কি বলে জানিস? বলে কিনা, আমি তোমার লাইফে থাকলে তোমাকে অনেক সাফার করতে হবে। আমি দূরে গেলে তুমি হ্যাপি থাকবে রুশা। আরেহ্ ও আমাকে বুঝে না কেন বলতো? ও না থাকলে আমি যাস্ট মরে যাবো রে! জানিস ও আমাকে খুলেও বলছে না যে ওর কি সমস্যা। ও আরো কি বলেছে জানিস?? বলে কিনা ও আমাকে ভালোবাসে না। এতদিন আমাকে যাস্ট ইউজ করছে। ও বললেই আমি বিশ্বাস করবো যে ও আমাকে ভালোবাসে না?’
বলেই আপু হুঁ হুঁ করে কেঁদে ফেললো।
আমি কি বলবো? বলার মতো কিছুই খুঁজে পেলাম না। কতটা কষ্টে আছে আপু! আর আজ সারাদিন সবার সাথে মুখে প্লাস্টিকের হাসি নিয়ে কথা বলেছে। আপুর কাছে যেয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। ভাইয়া এমন করছে কেনো?
আপু একটু শান্ত হয়ে আবার বললো, ‘জানিস ও আমাকে এগুলো বলে আর সভ্যর কাছে যেয়ে সেন্টি খায়া পড়ে থাকে। যে ছেলে সিগারেটের ধারেকাছে যায় না, অথচ এখন ওর ঠোঁটে সব সময় সিগারেট থাকে। ও যে ক্যানাডা চলে যাবে আমি জানতাম না। সভ্য আমাকে সব বলেছে। ও কেনো ক্যানাডা চলে যাচ্ছে জানিস? কে আছে ওর ওখানে বল? আমার সবকিছু যেমন ও, তেমনি ওর সব কিছুই আমি। আমি ছাড়া ওর আপন বলতে কেউ নেই। শুধুমাত্র আমার থেকে দূরে যাওয়ার জন্য ও ক্যানাডা চলে যাচ্ছে। ও যদি আমাকে ভালো নাই বাসে তাহলে আমাকে কেনো অন্য কারো সাথে দেখতে পারবে না বল? আবার সভ্যকে কি বলেছে জানিস? সভ্যকে বলেছে ও যেন এগুলোর কিছুই আমাকে না বলে। কতটা বেহায়া দেখেছিস? নিজে কষ্ট পাচ্ছে, সাথে আমাকেও কষ্ট দিচ্ছে। আমি এর সব শোধ তুলবো।’
বলেই রুশাপু আবার কেঁদে দিলো।
এবার আমি বললাম,
— ‘ভাইয়া কেনো এমন করছে বলেছে কিছু?’
রুশাপু ফুপিয়ে বললো,
— ‘না, কিছু বলেনি।’
— ‘সভ্য কিছু বলেনি? মানে ভাইয়া সভ্যকে কিছু বলেছে কি?’
— ‘না সভ্যকেও বলেনি। সভ্য অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু ওর পেট থেকে কোন কথা বের করতে পারেনি।’
— ‘চিন্তা করো না আপু। সব ঠিক হয়ে যাবে।’
— ‘জানিস, এই জন্যই আমি বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দেখি ও কি করে।’
এবার আমি বললাম,
— ‘কিন্তু তুমি তো বিয়ে করবে না।’
— ‘হ্যাঁ, করবো না। আমার বাপ আর তার মিস্ট্রেসকে শিক্ষা দিবো। আর তোর ভাইকে কাল এয়ারপোর্টে ব্যান্ড বাজাবো। জানিস ও কি করেছে? ওর ভিসা, পাসপোর্ট, টিকিট সব রেডি। কাল রাতে ওর ফ্লাইট। মজার বিষয় কি জানিস? ও যখন এসবকিছু রেডি করছিলো তখনই সভ্য আমাকে সব জানিয়েছে। আমি সব বুঝতে পেরে, আমিও আমার সব কিছু রেডি করেছি। আরেকটা মজার বিষয় শুনবি? ওর টিকিট সভ্য বুক করেছে। ফ্লাইটে ওর পাশের সিটটাই কিন্তু আমার। ও এসবের কিছুই জানে না। আমাকে কষ্ট দেয়ার ফল ওর থেকে সুদে আসলে তুলব। দারুণ না?’
আপুর কথা শুনে আমি হেসে বললাম,
— ‘হুম, দারুণ। কিন্তু আপু সবকিছু তো তুমি এমনিতেই করতে পারতে, বিয়ের নাটক করার কোন দরকার ছিল না।’
— ‘দেশ ছাড়ার আগে কয়েক জনের মুখোশ খুলে তারপর দেশ ছাড়বো।’
— ‘মানে? বুঝলাম না আপু।’
— ‘তোর মনে হয়নি যে, যে ডাইনি আমার লাইফ শেষ করছে আর ও কিনা আমাকে তার নিজের ভাতিজার সাথে বিয়ে দিবে?’
— ‘হুম, আমিও ভেবেছি। তোমাকে প্রশ্ন করতাম। কিন্তু তার আগেই তুমি বললে।’
— ‘ওই ছেলে হচ্ছে একটা নিকৃষ্ট জানোয়ার। ইভেন জানোয়ারও ভালো আছে। কত মেয়ের লাইফ যে ও নষ্ট করেছে, ও নিজেই বলতে পারবে না। ওর জন্য ৩ টা মেয়ে সুইসাইড করেছে। ও কি করে জানিস? ও মেয়েদের সাথে প্রেমের অভিনয় করে, সেক্স করে সেটার ভিডিও বানিয়ে ব্লাকমেইল করে। ওর সব ডিটেলস সভ্য আমাকে এনে দিয়েছে। জানিস ওই ডাইনি কেনো আমাকে ওই ছেলের সাথে বিয়ে দিবে? যাতে আমাকে ধ্বংস করতে পারে। আমার বাপের সব কিছুর মালিক আমি। ওই ডাইনি সব কিছু নিজের নামে করে নিতে চায়। আরেহ্ আমার পা ধরলেও আমি ওই লোকের থেকে কিছু নিবো না। আর আমার বাপকে দ্যাখ! একটা স্লাটের কথায় উঠে বসে। জানিস ওই স্লাট আমার বাপকে কি বলেছে? বলেছে যে আমি নাকি পেট বাধাঁয়া বাচ্চা ফেলছি। আর আমার বাপও ওটা শুনে লাফানো শুরু করছে। ভাবতে পারিস উনি কেমন বাবা? ওনার কি নিজের মেয়ের প্রতি বিশ্বাস নেই? ওনার কি উচিত ছিল না এই কথা শোনার পর ওই ডাইনিকে থাপ্পড় লাগানো? উনি মান-সম্মানের ভয়ে আমাকে একটা কুলাজ্ঞার সাথে বিয়ে দিচ্ছে। আমি কিছুই বলিনি, কারণ এর সব হিসাব-নিকাস করবো। একটা কথা আছে জানিস তো সভ্যতা? ‘‘কারমা ইজ অ্যা বিচ্। ইট নেভার লিভস এনিওয়ান।’’ ‘
আমি বললাম,
— ‘কাল কি করবে আপু?’
— ‘সেটা কাল দেখবি। আজ তোকে একটা গল্প শোনাবো। যে গল্প এই পৃথিবীর কেউ জানে না।’
— ‘কি গল্প আপু?’
— ‘দাঁড়া বলছি।’
বলেই আপু থামলো…
কিছুক্ষণ পর আপু বলা শুরু করলো, ‘একটা রাজা ছিল। রাজার একটা রাণি ছিল, আর ছিল একটা নিষ্পাপ রাজকন্যা। নিষ্পাপ কেনো বললাম জানিস? কারণ রাজকন্যা এই পৃথিবীর অন্ধকার জগৎ সম্পর্কে কিছুই জানতো না। রাজকন্যা জানতো তার বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা, কিন্তু রাজকন্যা ছোট থেকেই ভুল জানতো। রাজা ছিল একজন জঘন্য মানুষ। রাজা, রাণিকে সব সময় কষ্ট দিত। আচ্ছা, আমি রাজা-রাণি বলছি কেনো? এটা তো আমার গল্প। শোন আমার বাপ মায়ের মধ্যকার সম্পর্ক আমি জানতাম না। ওরা দুজনেই আমার থেকে সেটা লুকিয়ে রেখেছিল। প্রতি রাতে আমি আম্মুর কান্নার আওয়াজ পেতাম। কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পেতাম না। আম্মু যেদিন মারা যায় সেদিন আমি স্কুলে না, বাসায় ছিলাম। ফাইয়াজ একা স্কুলে ছিল। আমি একটু অসুস্থ হওয়ার কারণে কয়েকদিন থেকে স্কুলে যাইনি। আমরা তখন আমাদের আগের বাড়িটায় থাকতাম। বাসায় সেদিন আমি আর আম্মু। আমার বাপ তখন অফিসে আর ফাইয়াজ স্কুলে। আগের রাতে কিন্তু আমার বাপ বাড়ি আসেনি। দুপুরের পর আমি টিভি দেখছিলাম, আর আম্মু ছাদে গেছে আচার আনার জন্য গেছে। তখন ওই ডাইনি আমাদের বাসায় আসে। এসে জিজ্ঞেস করে আম্মু কই? আমি বলেছি, আম্মু ছাদে। ও সাথে সাথে ছাদে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর ছাদ থেকে চিল্লাচিল্লির আওয়াজ পেয়ে আমি ছাদে যেয়ে দেখি ওই ডাইনি শাড়ির আঁচল আম্মুর গলায় পেঁচিয়ে, আম্মুকে ছাদের কিনারায় নিয়ে গেছে। আম্মুকে ওভাবে দেখে আমি চিৎকার করে শেষবার ডেকেছিলাম, ‘আম্মু!’ ওটায় ছিল আম্মুর সাথে আমার শেষ দেখা। জানিস আমি আম্মু বলে শেষ করতে পারিনি, তার আগেই ওই ডাইনি আমার আম্মুকে ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়েছে। আমি নিচে আম্মুর কাছে যেতে যেতে, আম্মু ছটফট করতে করতে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, সারাজীবনের জন্য। আমার পাশে কেউ ছিল না। কেউ না। ওই ডাইনি আমার আম্মুকে খুন করছে।’
বলতে বলতে আপু আবার কান্না করে দিলো।
আমারও চোখ ভিজে এসেছে। এতদিন আমি কি জানতাম! আর আজ কি শুনছি?
আমি অনেক কষ্টে বললাম,
— ‘আপু তুমি কাউকে বলোনি?’
— ‘হুঁ, বলেছিলাম। আব্বুকে বলেছিলাম। কিন্তু তার প্রতিদান হিসেবে আব্বু সবার সামনে আমাকে থাপ্পড় মেরেছে।’
একটু থেমে আপু আবার বলা শুরু করলো, ‘আম্মু মারা যাওয়ার তিনদিন পর ওই ডাইনি আমাদের বাসায় আসে। ওখানে আব্বুর অনেক বন্ধু-বান্ধব আর অফিসের লোক ছিল। তখন আব্বুকে বলেছিলাম, ‘আব্বু এই ডাইনি আমার সামনে আম্মুকে ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়েছে।’ আব্বু আমার কথা শুনে আমাকে বুঝাচ্ছিলো আমি ভুল দেখেছি। কিন্তু আমি জেদ শুরু করলাম। তারপর আব্বু রেগে যেয়ে সবার সামনে জীবনে প্রথমবার আমাকে থাপ্পড় মারে। আম্মু মারা যাওয়ার পর পুলিশ কেস হয়নি কেনো জানিস? কারণ আমার বাপ টাকা দিয়ে সব বন্ধ করে দিয়েছে। আম্মু মারা যাওয়ার পর ওরা সবাইকে বলেছে, আম্মু নাকি দাম্পত্য জীবনে অসুখী ছিল। আমার বাপকে দিয়ে নাকি হচ্ছিলো না। এজন্য বাড়িতে যে ড্রাইভার ছিল তার সাথে আম্মুর পরকীয়া ছিল। আম্মু মারা যাওয়ার আগের দিন আব্বু নাকি দুপুরে বাসায় এসে দেখে আম্মু আর ওই ড্রাইভার অন্তরঙ্গভাবে বিছানায় আছে। আব্বুকে দেখে নাকি ড্রাইভার পালিয়ে যায়। এরপর আব্বু নাকি রাগারাগি করে বাড়ি থেকে চলে যায়। রাতে ফিরে না। আম্মুর পাপ ধরা পড়ে যাওয়ায়, ভয় পেয়ে পরেরদিন আম্মু সুইসাইড করে। অথচ আমি কিন্তু বাসায় ছিলাম। সেদিন এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। ভাবতে পারিস কতটা জঘন্য ওরা? আমাকে থাপ্পড় মারার পর আব্বু কয়েকদিন বাসায় আসেনি। তখন ফাইয়াজের সাথে আমার এত মিল ছিল না। আমি ওকে হিংসা করতাম। কারণ আমার মনে হত আম্মু ওকে আমার থেকে বেশি আদর করতো। জানিস আমি কখনো একা ঘুমাইনি। আম্মু আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিত। একা একা আমি অনেক ভয় পেতাম, ঘুমাতে পারতাম না। ভাবতাম আব্বু এসে আমাকে আদর করবে। থাপ্পড় মারার জন্য স্যরি বলবে। কিন্তু এসবের কিছুই হয়নি। এর কিছুদিন পর অনেক রাতে আব্বু বাসায় এলো। কিন্তু আব্বু একা আসেনি। সাথে ঐ ডাইনিও ছিল।
তারপর একদিন আব্বুর সাথে ওই ডাইনিকে অন্তরঙ্গভাবে দেখে ফেললাম। আমি জানতাম না সেদিন ওই ডাইনি আমাদের বাসায় আছে। আমি আব্বুর কাছে গিয়েছিলাম, রেজাল্ট কার্ডে গার্ডিয়ান সাইন নিতে। যেয়ে তাদের এক বিছানায় দেখি। আমি অতটাও ছোট ছিলাম না যে ওসব বুঝবো না। তারপর থেকেই ওই ডাইনির আমাদের বাসায় আসা যাওয়া চলতে থাকলো। একসময় আমাদের বাসায় পার্মানেন্ট থাকা শুরু করলো। আমার আম্মুর সব কিছুতে ভাগ বসানো শুরু করলো। একটা মজার কথা কি জানিস? আমার বাপ কিন্তু এখনো ওই ডাইনিরে বিয়ে করে নাই। ওই ডাইনি আমার বাপের মিস্ট্রেস।’
আপুর কথা শুনে আমি বাকরুদ্ধ! পৃথিবীতে এমন কিছু হতে পারে? হ্যাঁ, পারে। আমার কাছের মানুষের সাথেই এমন হয়েছে।
আমি কিছু না বলে, আপুর কাছে যেয়ে, ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। আপু কাঁদছিল, কিন্তু কোন শব্দ হচ্ছিলো না। কান্নার চোটে আপু মাঝে মাঝে কেঁপে কেঁপে উঠছিলো।
………………………..
(চলব)